পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

১৭০ আয়াত

১১৬ ) তাহলে তোমাদের পূর্বে যেসব জাতি অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে এমন সব লোক থাকলো না কেন যারা লোকদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাধা দিতো? এমন লোক থাকলেও অতি সামান্য সংখ্যক ছিল। তাদেরকে আমি ঐ জাতিদের থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছি। নয়তো জালেমরা তো এমনি সব সুখৈশ্বর্যের পেছনে দৌঁড়াতে থেকেছে, যার সরঞ্জাম তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে দেয়া হয়েছিল এবং তারা অপরাধী হয়েই গিয়েছিল।
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ ٱلْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُو۟لُوا۟ بَقِيَّةٍۢ يَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْفَسَادِ فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًۭا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ ۗ وَٱتَّبَعَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مَآ أُتْرِفُوا۟ فِيهِ وَكَانُوا۟ مُجْرِمِينَ ١١٦
১১৭ ) তোমার রব এমন নন যে, তিনি জনবসতিসমূহ অন্যায়ভাবে ধ্বংস করবেন, অথচ তার অধিবাসীরা সংশোধনকারী। ১১৫
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ ٱلْقُرَىٰ بِظُلْمٍۢ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ ١١٧
১১৮ ) অবশ্যই তোমার রব চাইলে সমগ্র মানবজাতিকে একই গোষ্ঠীভুক্ত করতে পারতেন, কিন্তু এখন তারা বিভিন্ন পথেই চলতে থাকবে
وَلَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ ٱلنَّاسَ أُمَّةًۭ وَٰحِدَةًۭ ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ ١١٨
১১৯ ) এবং বিপথে যাওয়া থেকে একমাত্র তারাই বাঁচবে যাদের ওপর তোমার রব অনুগ্রহ করেন। এ (নির্বাচন ও ইখতিয়ারের স্বাধীনতার) জন্যই তো তিনি তাদের পয়দা করেছিলেন। ১১৬ আর তোমার রবের একথা পূর্ণ হয়ে গেছে যা তিনি বলেছিলেন--- “আমি জাহান্নামকে জিন ও মানুষ উভয়কে দিয়ে ভরে দেবো।”
إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ ۗ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ ١١٩
১২০ ) আর হে মুহাম্মাদ! এ রসূলদের বৃত্তান্ত, যা আমি তোমাকে শোনাচ্ছি, এসব এমন জিনিস যার মাধ্যমে আমি তোমার হৃদয়কে মজবুত করি। এসবের মধ্যে তুমি পেয়েছো সত্যের জ্ঞান এবং মু’মিনরা পেয়েছে উপদেশ ও জাগরণবাণী।
وَكُلًّۭا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنۢبَآءِ ٱلرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِۦ فُؤَادَكَ ۚ وَجَآءَكَ فِى هَـٰذِهِ ٱلْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌۭ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ ١٢٠
১২১ ) তবে যারা ঈমান আনে না তাদেরকে বলে দাও তোমরা তোমাদের পদ্ধতিতে কাজ করতে থাকো এবং আমরা আমাদের পদ্ধতিতে কাজ করে যাই।
وَقُل لِّلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ ٱعْمَلُوا۟ عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنَّا عَـٰمِلُونَ ١٢١
১২২ ) কাজের পরিণামের জন্য তোমরা অপেক্ষা করো এবং আমরাও অপেক্ষায় আছি।
وَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنَّا مُنتَظِرُونَ ١٢٢
১২৩ ) আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু লুকিয়ে আছে সবই আল্লাহর কুদরাতের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সমস্ত বিষয়ে তাঁরই দিকে রুজু করা হয়। কাজেই হে নবী! তুমি তাঁর বন্দেগী করো এবং তাঁরই ওপর ভরসা রাখো। যা কিছু তোমরা করছো তা থেকে তোমার রব গাফেল নন। ১১৭
وَلِلَّهِ غَيْبُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ ٱلْأَمْرُ كُلُّهُۥ فَٱعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ١٢٣
১ ) আলিফ-লাম-র। এগুলো এমন কিতাবের আয়াত যা নিজের বক্তব্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে।
الٓر ۚ تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ ٱلْمُبِينِ ١
২ ) আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি, যাতে তোমরা (আরববাসীরা) একে ভালোভাবে বুঝতে পারো।
إِنَّآ أَنزَلْنَـٰهُ قُرْءَٰنًا عَرَبِيًّۭا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ٢
.
১১৫.
আগের ছ’টি রুকূ’তে যেসব জাতির ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে এ আয়াতগুলোতে অত্যন্ত শিক্ষণীয় পদ্ধতিতে তাদের ধ্বংসের মূল কারণের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এ ইতিহাসের ওপর মন্তব্য করে বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র এ জাতিগুলোকেই নয় বরং মানবজাতির অতীত ইতিহাসে যতগুলো জাতিই ধ্বংস হয়েছে তাদের সবাইকে যে জিনিসটি অধঃপতিত করেছে তা হচ্ছে এই যে, যখন আল্লাহ নিজের নিয়ামতের দ্বারা তাদেরকে সমৃদ্ধ করেছেন তখন নিজেদের প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির নেশায় মত্ত হয়ে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিতে তৎপর হয়েছে এবং তাদের সামষ্টিক প্রকৃতি এমন পর্যায়ে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, তাদেরকে অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার মতো সৎ লোক তাদের মধ্যে ছিলই না অথবা যদি এমনি ধরনের কিছু লোক থেকেও থাকে তাহলে তাদের সংখ্যা এত কম ছিল এবং তাদের আওয়াজ এতই দুর্বল ছিল যে, অসৎকাজ থেকে তারা বিরত রাখার চেষ্টা করলেও বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত এ জাতিগুলো আল্লাহর গযবের শিকার হয়েছে। নয়তো নিজের বান্দাদের সাথে আল্লাহর কোন শত্রুতা নেই। তারা ভালো কাজ করে যেতে থাকলেও আল্লাহ অযথা তাদেরকে শাস্তি দেন না। আল্লাহর এ বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য এখানে তিনটি কথা মনের মধ্যে গেঁথে দেয়া

একঃ প্রত্যেক সমাজ ব্যবস্থায় ভালো কাজের দিকে আহ্বানকারী ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার মতো সৎলোকের উপস্থিতি অপরিহার্য। কারণ সৎবৃত্তিই আল্লাহর কাছে কাংখিত। আর মানুষের অসৎকাজ যদি আল্লাহ বরদাশত করে থাকেন তাহলে তা শুধুমাত্র তাদের মধ্যকার এ সৎবৃত্তির কারণেই করে থাকেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত করে থাকেন যতক্ষণ তাদের মধ্যে সৎ প্রবণতার কিছুটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোন মানব গোষ্ঠী যখন একেবারেই সৎলোক শূন্য হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে শুধু অসৎলোকই বর্তমান থাকে অথবা সৎলোক বর্তমান থাকলেও তাদের কথা কেউ শোনে না এবং সমগ্র জাতিই একসাথে নৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন আল্লাহর আযাব তাদের মাথার ওপর এমনভাবে ঘুরতে থাকে যেমন পূর্ণ গর্ভবতী নারী, যার গর্ভকাল একেবারে টায় টায় পূর্ণ হয়ে গেছে, কেউ বলতে পারে না কোন্ মুহূর্তে সে সন্তান প্রসব করে বসবে।

দুইঃ যে জাতি নিজের মধ্যে সবকিছু বরদাশত করতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র এমন গুটিকয় হাতে গোনা লোককে বরদাশত করতে পারে না যারা তাকে অসৎকাজ থেকে বিরত রাখার ও সৎকাজ করার দাওয়াত দেয়, সে জাতির ব্যাপারে একথা জেনে নাও যে, তার দুর্দিন কাছে এসে গেছে। কারণ এখন সে নিজেই নিজের প্রাণের শত্রু হয়ে গেছে। যেসব জিনিস তার ধ্বংসের কারণ সেগুলো তার অতি প্রিয় এবং শুধুমাত্র একটি জিনিসই সে একদম বরদাশত করতে প্রস্তুত নয় যা তার জীবনের ধারক ও বাহক।

তিনঃ একটি জাতির মধ্যে সৎকাজ করার আহবানে সাড়া দেবার মতো লোক কি পরিমাণ আছে তার ওপর নির্ভর করে তার আযাবে লিপ্ত হওয়ার ও না হওয়ার ব্যাপারটির শেষ ফায়সালা। যদি তার মধ্যে বিপর্যয় খতম করে কল্যাণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লোকের সংখ্যা এমন পর্যায়ে থাকে যা এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তার ওপর সাধারণ আযাব পাঠানো হয় না। বরং ঐ সৎলোকদেরকেই অবস্থার সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু লাগাতার প্রচেষ্টা ও সাধনা করার পরও যদি তার মধ্যে সংস্কার সাধনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ লোক না পাওয়া যায় এবং এ জাতি তার অঙ্গন থেকে কয়েকটা হীরে বাইরে ছুঁড়ে ফেলার পর নিজের কার্যধারা থেকে একথা প্রমাণ করে দেয় যে, এখন তার কাছে শুধু কয়লা ছাড়া আর কিছুই নেই, তাহলে এরপর আর বেশী সময় হাতে থাকে না। এরপর শুধুমাত্র কুণ্ডে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় যে, যা কয়লাগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন যারিয়াত ৩৪ টীকা)

.
১১৬.
সাধারণত এ ধরনের অবস্থায় তকদীরের নামে যে অবতারণা করা হয়ে থাকে এটি তার জবাব। ওপরে অতীতের জাতিদের ধ্বংসের যে কারণ বর্ণনা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা যেতে পারতো যে, তাদের মধ্যে সৎলোক না থাকা বা অতি অল্প সংখ্যা থাকাও আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যে শামিল ছিল, এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট জাতিদেরকে এজন্য দায়ী করা হচ্ছে কেন? তাদের মধ্যে আল্লাহ বিপুল সংখ্যক সৎলোক সৃষ্টি করে দিলেন না কেন? এর জবাবে মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কিত বাস্তব সত্যটি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পশু, উদ্ভিদ ও অন্যান্য সৃষ্টির মতো মানুষকেও প্রকৃতিগতভাবে একটি নির্দিষ্ট ও গতানুগতিক পথে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হবে এবং এ পথ থেকে সরে গিয়ে অন্য কোন পথে সে চলতে পারবে না, মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ এটা কখনোই চান না। যদি এটাই তাঁর ইচ্ছা হতো তাহলে ঈমানের দাওয়াত, নবী প্রেরণ ও কিতাব নাযিলের কি প্রয়োজন ছিল? সমস্ত মানুষ মু’মিন ও মুসলমান হিসেবে পয়দা হতো এবং কুফরী ও গুণাহগারীর কোন সম্ভাবনাই থাকতো না। কিন্তু মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা আসলে হচ্ছে এই যে, তাকে নির্বাচন ও গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হবে। তাকে নিজের পছন্দ মাফিক বিভিন্ন পথে চলার ক্ষমতা দেয়া হবে। তার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের পথ খুলে দেয়া হবে। তারপর প্রত্যেকটি মানুষকে ও মানুষের প্রত্যেকটি দলকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি পথ নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়ে তার ওপর চলার সুযোগ দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেকে নিজের প্রচেষ্টা ও উপার্জনের ফল হিসেবেই সবকিছু লাভ করবে। কাজেই যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে মানুষকে পয়দা করা হয়েছে তা যখন নির্বাচনের স্বাধীনতা এবং কুফরী ও ঈমানের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তখন যে জাতি নিজে অসৎ পথে এগিয়ে যেতে চায় আল্লাহ তাকে জোর করে সৎ পথে নিয়ে যাবেন এটা কেমন করে হতে পারে? কোন জাতি যখন নিজের নির্বাচনের ভিত্তিতে মানুষ তৈরীর এমন এক কারখানা বানিয়েছে যার ছাঁচ থেকে সবচেয়ে বড় অসৎ, ব্যভিচারী, জালেম ও ফাসেক লোক তৈরী হয়ে বেরিয়ে আসবে, তখন আল্লাহ কেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সেখানে এমন সব জন্মগত সৎলোক সরবরাহ করবেন যারা তার বিকৃত ছাঁচগুলোকে ঠিক করে দেবে? এ ধরনের হস্তক্ষেপ আল্লাহর রীতি বিরোধী। সৎ ও অসৎ উভয় ধরনের লোক প্রত্যেক জাতি নিজেই সরবরাহ করবে। যে জাতি সমষ্টিগতভাবে অসৎ পথ পছন্দ করবে, যার মধ্য থেকে সততার ঝাণ্ডা বুলন্দ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ লোক এগিয়ে আসবে না এবং যে তার সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কার প্রচেষ্টার বিকশিত হওয়া ও সমৃদ্ধি লাভ করার কোন অবকাশই রাখবে না, আল্লাহ তাকে জোর করে সৎ বানাতে যাবেন কেন? তিনি তো তাকে সেই পরিণতির দিকে এগিয়ে দেবেন যা সে নিজের জন্য নির্বাচন করে নিয়েছে। তবে আল্লাহর রহমতের অধিকারী যদি কোন জাতি হতে পারে তাহলে সে হবে একমাত্র সেই জাতি যার মধ্যে এমন বহু লোকের জন্ম হবে যারা নিজেরা সৎকর্মশীলতা, কল্যাণ ও ন্যায়ের দাওয়াতে সাড়া দেবে এবং এ সঙ্গে নিজেদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে সংস্কার সাধনকারীদের কাজ করতে পারার মতো পরিবেশ ও যোগ্যতা টিকিয়ে রাখবে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আনআম ২৪ টীকা)
.
.
.
.
১১৭.
অর্থাৎ কুফর ও ইসলামের এ সংঘাতে সাথে জড়িত উভয় পক্ষ যা কিছু করছে আল্লাহ‌ তা দেখছেন। আল্লাহর রাজত্বে কোন অন্যায় ও দুঃশাসনের স্থান নেই। রাজ্যে যাচ্ছেতাই হতে থাকবে কিন্তু শাসক রাজার তার কোন খবরই থাকবে না এবং তিনি এসবের সাথে কোন সম্পর্কই রাখবেন না, এ ধরনের কোন পরিস্থিতি এখানে নেই। এখানে বিজ্ঞতা, কৌশল ও সহিষ্ণুতার ভিত্তিতে বিলম্ব অবশ্যই হয় কিন্তু অরাজকতা ও অন্যায়ের কোন স্থান নেই। যারা সংশোধনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা বিশ্বাস করুন তাদের পরিশ্রম মাঠে মারা যাবে না। আর যারা বিপর্যয় সৃষ্টি ও তা সম্প্রসারণে লিপ্ত আছে, যারা সংশোধন প্রচেষ্টাকারীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতন চালাচ্ছে এবং সংশোধনের এ কাজকে যেনতেন প্রকারে অগ্রসর হতে না দেয়ার জন্য নিজেদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরও জেনে রাখা উচিত যে, তাদের এসব কার্যকলাপ আল্লাহর জানা আছে এবং এর পরিণাম তাদের অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
.
১.
قٌرأَنٌ হচ্ছে قَراءٌ ক্রিয়াপদের শব্দমূল। এর আসল মানে হচ্ছে ‘পড়া’, শব্দমূলকে যখন কোন জিনিসের জন্য নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন তার অর্থ হয় সংশ্লিষ্ট জিনিসটির মধ্যে তার শব্দমূলের অর্থ পুরোপুরি পাওয়া যায়। যেমন যখন কোন ব্যক্তিকে বীর বলার পরিবর্তে ‘বীরত্ব’ বলা হবে যখন তার মানে হবে, তার মধ্যে সাহসিকতা ও বীর্যবত্তা এমন পূর্ণাঙ্গ পর্যায়ে পাওয়া যায় যেন সে এবং বীরত্ব একই জিনিস হয়ে গেছে। কাজেই এ কিতাবের নাম ‘কুরআন’ (পড়া) রাখার অর্থ হচ্ছে এই যে, এ কিতাব সাধারণ ও অসাধারণ নির্বিশেষে সকলের পড়ার জন্য এবং খুব বেশী বেশী করে পঠিত হবার জিনিস।
২.
এর মানে এ নয় যে, এ কিতাবটি বিশেষভাবে আরববাসীদের জন্য নাযিল করা হয়েছে। বরং এ বাক্যাংশটির আসল বক্তব্য হচ্ছে, “হে আরববাসীরা! এসব কথা তোমাদের ইরানী ও গ্রীক ভাষায় শুনানো হচ্ছে না, তোমাদের নিজেদেরই ভাষায় শুনানো হচ্ছে। কাজেই তোমরা এ ওজর পেশ করতে পারো না যে, এসব কথা তো আমরা বুঝতে পারছি না। আর এ কিতাবে অলৌকিকতার যে দিকগুলো রয়েছে, যা এর আল্লাহর বাণী হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে, সেগুলোও যে তোমাদের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাবে, এটাও সম্ভব নয়।”

কেউ কেউ কুরআন মজীদে এ ধরনের বাক্য দেখে আপত্তি করে থাকেন যে, এ কিতাব তো আরববাসীদের জন্য নাযিল হয়েছে, অনারবদের জন্য নয়। এক্ষেত্রে একে সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত কেমন করে বলা যেতে পারে? কিন্তু এটি নিছক একটি হালকা ও ফাঁকা আপত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আসল সত্য উপলব্ধি করার চেষ্টা না করেই এ আপত্তি উত্থাপন করা হয়। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যে জিনিসই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানব সমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। এ হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় পেশ করছেন প্রথমে তাকে এর শিক্ষাবলী দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছাবার মাধ্যমে পরিণত হবে। কোন দাওয়াত ও আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটিই একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।

অনুবাদ: