আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

ক্বাফ

৪৫ আয়াত

২১ ) প্রত্যেক ব্যক্তি এমন অবস্থায় এসে হাজির হলো যে, তাদের সাথে হাঁকিয়ে নিয়ে আসার মত একজন এবং সাক্ষ্য দেয়ার মত একজন ছিল। ২৫
وَجَآءَتْ كُلُّ نَفْسٍۢ مَّعَهَا سَآئِقٌۭ وَشَهِيدٌۭ ٢١
২২ ) এ ব্যাপারে তুমি অজ্ঞ ছিলে। তাই তোমার সামনে যে আবরণ ছিল তা আমি সরিয়ে দিয়েছি। তাই আজ তোমার দৃষ্টি অত্যন্ত প্রখর। ২৬
لَّقَدْ كُنتَ فِى غَفْلَةٍۢ مِّنْ هَـٰذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَآءَكَ فَبَصَرُكَ ٱلْيَوْمَ حَدِيدٌۭ ٢٢
২৩ ) তার সাথী বললোঃ এতো সে হাজির আমার ওপরে যার তদারকীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ২৭
وَقَالَ قَرِينُهُۥ هَـٰذَا مَا لَدَىَّ عَتِيدٌ ٢٣
২৪ ) নির্দেশ দেয়া হলোঃ “জাহান্নামে নিক্ষেপ করো, ২৮ প্রত্যেক কট্টর কাফেরকে ২৯ ---যে সত্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো,
أَلْقِيَا فِى جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٍۢ ٢٤
২৫ ) কল্যাণের প্রতিবন্ধক ৩০ ও সীমালংঘনকারী ছিল, ৩১ সন্দেহ সংশয়ে নিপতিত ছিল ৩২
مَّنَّاعٍۢ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍۢ مُّرِيبٍ ٢٥
২৬ ) এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে বসেছিল। নিক্ষেপ কর তাকে কঠিন আযাবে। ৩৩
ٱلَّذِى جَعَلَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَـٰهًا ءَاخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِى ٱلْعَذَابِ ٱلشَّدِيدِ ٢٦
২৭ ) তার সহগামী আরয করলোঃ হে প্রভু, আমি তাকে বিদ্রোহী করিনি বরং সে নিজেই চরম গোমরাহীতে ডুবে ছিল। ৩৪
۞ قَالَ قَرِينُهُۥ رَبَّنَا مَآ أَطْغَيْتُهُۥ وَلَـٰكِن كَانَ فِى ضَلَـٰلٍۭ بَعِيدٍۢ ٢٧
২৮ ) জবাবে বলা হলোঃ আমার সামনে ঝগড়া করো না। আমি আগে তোমাদেরকে মন্দ পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলাম। ৩৫
قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا۟ لَدَىَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُم بِٱلْوَعِيدِ ٢٨
২৯ ) আমার কথার কোন রদবদল হয় না। ৩৬ আর আমি আমার বান্দাদের জন্য অত্যাচারী নই। ৩৭
مَا يُبَدَّلُ ٱلْقَوْلُ لَدَىَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّـٰمٍۢ لِّلْعَبِيدِ ٢٩
৩০ ) সেদিনের কথা স্মরণ করো, যখন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবো যে, তোমার পেট কি ভরেছে? সে বলবে, “আরো কিছু আছে নাকি?” ৩৮
يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ ٱمْتَلَأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِن مَّزِيدٍۢ ٣٠
২৫.
সম্ভবত এর দ্বারা সেই দু’জন ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে যারা পৃথিবীতে ঐ ব্যক্তির সমস্ত কথা ও কাজের রেকর্ড প্রস্তুত করতে নিযুক্ত ছিল। কিয়ামতের দিন সিংগায় ফুৎকারের আওয়াজ উত্থিত হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক মানুষ যখন তার কবর থেকে উঠবে তৎক্ষণাৎ উক্ত দু’ফেরেশতা এসে তাকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেবে। একজন তাকে আল্লাহ তা’আলার আদালতের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে এবং অন্যজন তার ‘আমলনামা’ সাথে নিয়ে যাবে।
২৬.
অর্থাৎ এখন তুমি খুব ভাল করেই দেখতে পাচ্ছ যে, আল্লাহর নবী তোমাকে যে খবর দিতেন তার সব কিছুই আজকে এখানে বিদ্যমান।
২৭.
মুফাসসিরদের কেউ কেউ এর অর্থ বর্ণনা করেছেন এই যে, সাথী অর্থ ২১ আয়াতে বর্ণিত সাক্ষ্যদাতা ফেরেশতা। সে বলবেঃ এইতো এ ব্যক্তির ‘আমলনামা’ আমার কাছে প্রস্তুত আছে। অপর কিছু সংখ্যক মুফাস্সির বলেনঃ যে শয়তান পৃথিবীতে তার সাথে অনুক্ষণ লেগেছিল সাথী অর্থ সেই শয়তান। সে বলবে, এ ব্যক্তি সে-ই যাকে আমি আমার কব্জায় রেখে জাহান্নামের জন্য প্রস্তুত করেছি এখন সে আপনার সামনে হাজির। তবে কাতাদা ও ইবনে যায়েদ থেকে উদ্ধৃত ব্যাখ্যাই এর পূর্বাপর প্রসঙ্গের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তারা বলেন, সাথী বলতে বুঝানো হয়েছে সে ফেরেশতাকে যে তাকে হাঁকিয়ে নিয়ে আসবে এবং সে নিজেই আল্লাহর আদালতে হাজির হয়ে আরয করবে, এ ব্যক্তি আমার তত্ত্বাবধানে ছিল। এখন সে মহান প্রভুর দরবারে হাজির।
২৮.
মূল আয়াতের বাক্যাংশ হচ্ছে أَلْقِيَا فِي جَهَنَّمَ “তোমরা দু’জন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো।” বক্তব্যের ধারাবাহিকতাই বলে দিচ্ছে যে, কবর থেকে উঠতেই অপরাধীকে যে দু’জন ফেরেশতা গ্রেফতার করেছিলো এবং আদালতে হাজির করেছিলো তাদের লক্ষ্য করে এ নির্দেশ দেয়া হবে।
২৯.
মূল আয়াতে كَفَّارٍ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দটির দু’টি অর্থ। একটি অর্থ হচ্ছে চরম অকৃজ্ঞ। অপরটি হচ্ছে, চরম সত্য প্রত্যাখানকারী।
৩০.
আরবী ভাষায় خير শব্দটি সম্পদ অর্থেও ব্যবহৃত হয় এবং কল্যাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। প্রথম অর্থটি গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ থেকে বান্দা ও আল্লাহ কারো হকই আদায় করতো না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে আয়াতের অর্থ হবে, তারা কল্যাণের পথ থেকে নিজেরাই যে কেবল বিরত থাকতো তাই নয় বরং অন্যদেরকেও তা থেকে বিরত রাখতো। তারা পৃথিবীর কল্যাণের পথে বাঁধা হয়েছিলো। কোনভাবেই যেন কল্যাণ ও সুকৃতি বিস্তার লাভ করতে না পারে এ উদ্দেশ্যেই তারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেছিলো।
৩১.
অর্থাৎ নিজের প্রতিটি কাজে নৈতিকতার সীমালংঘনকারী। নিজের স্বার্থ, উদ্দেশ্যাবলী ও আশা-আকাংখ্যার জন্য যে, কোন কাজ করতে সে প্রস্তুত থাকতো। হারাম, পন্থায় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করতো এবং হারাম পথেই তা ব্যয় করতো। মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতো। না তার মুখ কোন বাধ্য-বাধকতায় সীমাবদ্ধ ছিল, না তার হাত কোন প্রকার জুলুম ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকতো। কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকেই সে যথেষ্ট মনে করতো না, বরং আরো অগ্রসর হয়ে সততা ও কল্যাণের পথের অনুসারীদেরকে সে উত্যক্ত করতো এবং কল্যাণের জন্য যারা কাজ করতো তাদের ওপর নির্যাতন চালাতো।
৩২.
মূল আয়াতে مُرِيبٍ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ শব্দটির দু’টি অর্থ। এক, সন্দেহ পোষণকারী। দুই, সন্দেহের মধ্যে নিক্ষেপকারী। এখানে দু’টি অর্থই গ্রহণীয়। অর্থাৎ নিজেও সন্দেহের মধ্যে পতিত ছিলো এবং অন্যদের মনেও সন্দেহ সৃষ্টি করতো। তার কাছে আল্লাহ, আখেরাত, ফেরেশতা, অহী এক কথায় ইসলামের সব সত্যিই ছিল সন্দেহজনক। নবী-রসূলের পক্ষ থেকে ন্যায় ও সত্যের যে কথাই পেশ করা হতো তার ধারণায় তা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তাই সে আল্লাহর অন্য বান্দাদের মধ্যেও এ রোগ ছড়িয়ে বেড়াতে। সে যার সাথেই মেলামেশার সুযোগ পেতো তার অন্তরেই কোন না কোন সন্দেহ এবং কোন না কোন দ্বিধা-সংশয় সৃষ্টি করে দিতো।
৩৩.
যেসব বিষয় মানুষকে জাহান্নামের উপযুক্ত বানায় এ আয়াত ক’টিতে আল্লাহ তা’আলা সেগুলো নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেনঃ (১) সত্যকে অস্বীকার, (২) আল্লাহর প্রতি অকৃজ্ঞতা, (৩) সত্য ও সত্যপন্থীদের সাথে শত্রুতা, (৪) কল্যাণের পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো, (৫) নিজের অর্থ-সম্পদ দ্বারা আল্লাহ ও বান্দার হকসমূহ আদায় না করা।, (৬) নিজের আচার-আচরণে সীমালংঘন করা, (৭) মানুষের ওপর জুলুম ও বাড়াবাড়ি করা, (৮) ইসলামের বিধানসমূহের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা, (৯) অন্যদের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা এবং (১০) প্রভুত্বে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা।
৩৪.
এখানে বক্তব্যের ধরন থেকে স্বতঃই প্রকাশ পাচ্ছে যে, ‘সাথী’ অর্থ শয়তান--যে পৃথিবীতে তার পেছনে লেগেছিলো। বক্তব্যের ধরণ থেকে একথারও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ঐ ব্যক্তি ও তার শয়তান উভয়ে আল্লাহর আদালতে পরস্পর ঝগড়া করছে। সে বলছে, জনাব, এ জালেম আমার পেছনে লেগেছিলো এবং শেষ পর্যন্ত সে-ই আমাকে পথভ্রষ্ট করে ক্ষান্ত হয়েছে। সুতরাং শাস্তি পাওয়া উচিত তার। শয়তান তার জবাবে বলছেঃ জনাব, আমার তো তার ওপরে কোন হাত ছিল না যে, সে বিদ্রোহী হতে না চাইলেও আমি জোর করে তাকে বিদ্রোহী বানিয়ে দিয়েছি। এ দুর্ভাগার তো নিজেরই সৎকাজের প্রতি ঘৃণা এবং মন্দকাজের প্রতি আসক্তি ছিলো। তাই নবী-রসূলদের কোন কথাই তার মনোপুত হয়নি এবং আমার প্ররোচনায় সে ক্রমাগত বিপথগামী হয়েছে।
৩৫.
অর্থাৎ তোমাদের দু’জনকেই আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম যে, তোমাদের মধ্যে যে অন্যকে বিভ্রান্ত করবে সে কি শাস্তি পাবে এবং যে বিভ্রান্ত হবে তাকে কি পরিণাম ভোগ করতে হবে। আমার এ সতর্কবাণী সত্ত্বেও তোমরা উভয়েই যখন অপরাধে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত হওনি তখন এ মুহূর্তে ঝগড়া করে কি লাভ। এখন বিভ্রান্ত ও বিভ্রান্তকারী উভয়কে হওয়া ও বিভ্রান্ত করার শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।
৩৬.
অর্থাৎ আমার কাছে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই। তোমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের যে নির্দেশ আমি দিয়েছি তা এখন প্রত্যাহার করা যেতে পারে না। তাছাড়া বিপথগামী করার ও বিপথগামী হওয়ার শাস্তি আখেরাতে কি হবে সে বিষয়ে আমি পৃথিবীতে যে নিয়মের ঘোষণা দিয়েছিলাম তাও আর এখন পরিবর্তন করা যেতে পারে না।
৩৭.
মূল আয়াতে ظَلَّامٍ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ চরম অত্যাচারী। একথার অর্থ এ নয় যে, আমি আমার বান্দার ব্যাপারে চরম অত্যাচারী নই বরং অত্যাচারী। এর অর্থ বরং এই যে, সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হয়ে যদি আমি আমার প্রতিপালিত সৃষ্টির ওপরে জুলুম করি সেক্ষেত্রে আমি হবো চরম জালেম। তাই আমি আমার বান্দার ওপরে আদৌ কোন জুলুম করি না। যে শাস্তি তোমাকে আমি দিচ্ছি তা ঠিক ততখানি যার উপযুক্ত তুমি নিজেই নিজেকে বানিয়েছো। তোমার প্রাপ্য শাস্তির চাইতে সামান্য অধিক শাস্তিও তোমাকে দেয়া হচ্ছে না। আমার আদালত নির্ভেজাল ও পক্ষপাতিহীন ইনসাফের আদালত। কোন ব্যক্তি এখানে এমন কোন শাস্তি পেতে পারে না আসলেই সে যার উপযুক্ত নয় এবং নিশ্চিত সাক্ষ্য দ্বারা যা প্রমাণ করা হয়নি।
৩৮.
এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, এখন আমার মধ্যে আর অধিক মানুষের স্থান সংকুলানের অবকাশ নেই। অপরটি হচ্ছে, আরো যত অপরাধী আছে তাদের নিয়ে আসুন। প্রথম অর্থ গ্রহণ করলে একথা থেকে যে ধারণা পাওয়া যায় তাহলো অপরাধীদেরকে এমন গাদাগাদি করে জাহান্নামে ভরা হয়েছে যে, সেখানে একটি সুঁচ পরিমাণ স্থানও আর অবশিষ্ট নেই। তাই জাহান্নামকে যখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তোমার উদর কি পূর্ণ হয়েছে? তখন সে বিব্রত হয়ে জবাব দিচ্ছে এখনো কি আরো মানুষ আছে? দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করলে মনে এরূপ একটি ধারণা সৃষ্টি হয় যে, সে সময় জাহান্নাম অপরাধীদের প্রতি এমন ভীষণভাবে রুষ্ট থাকবে যে, সে ‘আরো কেউ আছে কি’ বলে চাইতে থাকবে এবং সেদিন যেন কোন অপরাধী রেহাই না পায় তাই কামনা করবে।

এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় যে, আল্লাহ তা’আলার এ প্রশ্ন এবং জাহান্নামের এ জবাবের ধরণ কি হবে? এটা কি শুধু রূপক বর্ণনা? না কি বাস্তবে জাহান্নাম প্রাণ সত্তাধারী বাকশক্তি সম্পন্ন কোন বস্তু যাকে সম্বোধন করা যেতে পারে এবং সে-ও কথার জবাব দিতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাপারে অকাট্যভাবে কোন কিছু বলা যেতে পারে না। হতে পারে এটা একটা রূপক কথা। পরিস্থিতির সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য প্রশ্নোত্তর আকারে জাহান্নামের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন কোন লোক যদি বলে, আমি গাড়ীকে বললাম, তুমি চলছো না কেন? সে জবাব দিল, আমার মধ্যে পেট্রোল নেই। তবে এটাও পুরোপুরি সম্ভব যে, কথাটি বাস্তব ভিত্তিকই হবে। কারণ, পৃথিবীর যেসব জিনিস আমাদের কাছে অচেতন জড় পদার্থ এবং বাকশক্তিহীন যেসব জিনিস সম্পর্কে আমাদের এ ধারণা পোষণ করা ঠিক নয় যে, তা আল্লাহর কাছেও অবশ্যই তদ্রুপ অচেতন জড় ও বাকশক্তিহীন পদার্থ হবে। স্রষ্টা তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির সাথে কথা বলতে পারেন এবং তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি তাঁর কথার জবাবও দিতে পারে। তার ভাষা আমাদের কাছে যতই দুর্বোধ্য হোক না কেন।

অনুবাদ: