১
আল ফাতিহা
৭ আয়াত
২
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
৩
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
৪
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
৫
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
৬
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
৭
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
৮
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
৯
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত
আয়াত
১১ ) এটা হচ্ছে বান্দাহদেরকে রিযিক দেয়ার ব্যবস্থা। এ পানি দ্বারা আমি মৃত ভূমিকে জীবন দান করি। ১০ (মৃতু মানুষের মাটি থেকে) বেরিয়ে আসাও এভাবেই হবে। ১১
رِّزْقًۭا لِّلْعِبَادِ ۖ وَأَحْيَيْنَا بِهِۦ بَلْدَةًۭ مَّيْتًۭا ۚ كَذَٰلِكَ ٱلْخُرُوجُ ١١
১২ ) এদের আগে নূহের কওম, আসহাবুর রাস, ১২ সামূদ,
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍۢ وَأَصْحَـٰبُ ٱلرَّسِّ وَثَمُودُ ١٢
১৩ ) আদ, ফেরাউন, ১৩ লূতের ভাই,
وَعَادٌۭ وَفِرْعَوْنُ وَإِخْوَٰنُ لُوطٍۢ ١٣
১৪ ) আইকাবাসী এবং তুব্বা কওমের ১৪ লোকেরাও অস্বীকার করেছিল। ১৫ প্রত্যেকেই রসূলদের অস্বীকার করেছিল ১৬ এবং পরিণামে আমার শাস্তির প্রতিশ্রুতি তাদের জন্য কার্যকর হয়েছে। ১৭
وَأَصْحَـٰبُ ٱلْأَيْكَةِ وَقَوْمُ تُبَّعٍۢ ۚ كُلٌّۭ كَذَّبَ ٱلرُّسُلَ فَحَقَّ وَعِيدِ ١٤
১৫ ) আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করতে অক্ষম ছিলাম? আসলে নতুন করে সৃষ্টির ব্যাপারে এসব লোক সন্দেহে নিপতিত হয়ে আছে। ১৮
أَفَعَيِينَا بِٱلْخَلْقِ ٱلْأَوَّلِ ۚ بَلْ هُمْ فِى لَبْسٍۢ مِّنْ خَلْقٍۢ جَدِيدٍۢ ١٥
১৬ ) আমি ১৯ মানুষকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও তার বেশী কাছে আছি। ২০
وَلَقَدْ خَلَقْنَا ٱلْإِنسَـٰنَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِۦ نَفْسُهُۥ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ ٱلْوَرِيدِ ١٦
১৭ ) (আমার এ সরাসরি জ্ঞান ছাড়াও) দু’জন লেখক তার ডান ও বাঁ দিকে বসে সবকিছু লিপিবদ্ধ করছে।
إِذْ يَتَلَقَّى ٱلْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ ٱلْيَمِينِ وَعَنِ ٱلشِّمَالِ قَعِيدٌۭ ١٧
১৮ ) এমন কোন শব্দ তার মুখ থেকে বের হয় না যা সংরক্ষিত করার জন্য একজন সদা প্রস্তুত রক্ষক উপস্থিত থাকে না। ২১
مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌۭ ١٨
১৯ ) তারপর দেখো, মৃত্যুর যন্ত্রণা পরম সত্য নিয়ে হাজির হয়েছে। ২২ এটা সে জিনিস যা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে। ২৩
وَجَآءَتْ سَكْرَةُ ٱلْمَوْتِ بِٱلْحَقِّ ۖ ذَٰلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ ١٩
২০ ) এরপর শিংগায় ফুৎকার দেয়া হলো। ২৪ এটা সেদিন যার ভয় তোমাদের দেখানো হতো।
وَنُفِخَ فِى ٱلصُّورِ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمُ ٱلْوَعِيدِ ٢٠
১০.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আন নামল, টীকা ৭৩, ৭৪, ৮১; আর রূম, টীকা ২৫, ৩৩, ৩৫; ইয়াসীন, টীকা ২৯।
১১.
যুক্তি হচ্ছে, যে আল্লাহ এ পৃথিবী-গ্রহটিকে জীবন্ত সৃষ্টির বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান বানিয়েছেন, যিনি পৃথিবীর প্রাণহীন মাটিকে আসমানের প্রাণহীন পানির সাথে মিশিয়ে এত উচ্চ পর্যায়ের উদ্ভিদ জীবন সৃষ্টি করেছেন যা তোমরা তোমাদের বাগান ও শস্যক্ষেত রূপে শ্যামলিমায় ভরে উঠতে দেখছো এবং যিনি এ উদ্ভিদরাজিকে মানুষ ও জীব-জন্তু সবার জন্য রিযিকের মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সম্পর্কে তোমাদের এ ধারণা যে, মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নন! এটি নিরেট নির্বুদ্ধিতামূলক ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা নিজের চোখে অহরহ দেখছো, একটি এলাকা একেবারে শুষ্ক ও প্রাণহীন পড়ে আছে, সৃষ্টির একটি বিন্দু পড়া মাত্রই তার ভেতর থেকে অকস্মাৎ জীবনের ঝর্ণাধারা ফুটে বের হয়, যুগ যুগ ধরে মৃত শিকড়সমূহ হঠাৎ জীবন ফিরে পায় এবং মাটির গভীর অভ্যন্তর ভাগ থেকে নানা রকম কীট ও পোকামাকড় বেড়িয়ে এসে নর্তন কুর্দন শুরু করে দেয়। মৃত্যুর পরে জীবন যে আবার অসম্ভব নয় এটা তারই স্পষ্ট প্রমাণ। তোমাদের এ স্পষ্ট পর্যবেক্ষণকে যখন তোমরা মিথ্যা বলতে পার না তখন তোমরা একথা কি করে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে চাও যে, আল্লাহ তা’আলা যখন চাইবেন তখন তোমরা নিজেরাও ঠিক তেমনি মাটির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে যেমনভাবে উদ্ভিদরাজির অঙ্কুর বেরিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে এ কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যে আবর ভূখণ্ডের বহু অঞ্চল এমন যেখানে কোন কোন সময় পাঁচ বছর পর্যন্ত বৃষ্টি হয় না। এমনকি কখনো কখনো তার চেয়েও বেশী সময় চলে যায় কিন্তু আসমান থেকে একবিন্দু বৃষ্টিও ঝরে না। উত্তপ্ত মরুভূমিতে এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঘাসের মূল এবং কীট-পতঙ্গ ও পোকা-মাকড়ের জীবিত থাকা কল্পনাতীত। তা সত্ত্বেও কোন সময় যখন সেখানে সামান্য বৃষ্টিও হয় তখন ঘাস ফুটে বের হয় এবং কীট-পতঙ্গ ও পোকা-মাকড় জীবন লাভ করে। সুতরাং এত দীর্ঘস্থায়ী অনাবৃষ্টির অভিজ্ঞতা যাদের নেই তাদের তুলনায় আরবের লোকেরা আরো ভালভাবে এ যুক্তি উপলব্ধী করতে সক্ষম।
১২.
এর আগে সূরা ফুরকানর ৩৮ আয়াতে ‘আসহাবের রাসসের’ আলোচনা করা হয়েছে। এখানে দ্বিতীয় বারের মত তাদের উল্লেখ করা হচ্ছে। তবে উভয় স্থানেই নবীদের অস্বীকারকারী জাতিসমূহের সাথে কেবল মাত্র তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের কোন বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করা হয়নি। আরবের কিংবদন্তীতে আর রাস নামে দু’টি স্থান সুপরিচিত। একটি নাজদে এবং দ্বিতীয়টি উত্তর হিজাযে। এর মধ্যে নাজদের আর রাস অধিক পরিচিত এবং জাহেলী যুগের কাব্য গাঁথায় এর উল্লেখই বেশী পাওয়া যায়। অসহাবুর রাস এ দু’টি স্থানের কোনটির অধিবাসী ছিল তা এখন নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কোন বর্ণনাতেই তাদের কাহিনীর নির্ভরযোগ্য বিশাদ বিবরণ পাওয়া যায় না। বড় জোর এতটুকু সঠিকভাবে বলা যেতে পারে যে, তারা ছিল এমন এক জাতি যারা তাদের নবীকে কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল। তবে তাদের বিষয়ে কুরআন মজীদে শুধু ইঙ্গিত দিয়েই ক্ষান্ত থাকা হয়েছে। এতে বুঝা যায়, কুরআন নাযিলের সময় আরবরা ব্যাপকভাবে তাদের কাহিনী সম্পর্কে অবহিত ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে এসব বর্ণনা ও কাহিনী ইতিহাসে সংরক্ষিত হতে পারেনি।
১৩.
“ফেরাউনের কওম” বলার পরিবর্তে শুধু নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ সে তার জাতির ঘাড়ে এমনভাবে চেপে বসেছিল যে, তার সামনে তার জাতির কোন স্বাধীন বক্তব্য ও দৃঢ়তা অবশিষ্ট ছিল না। সে যে গোমরাহীর দিকেই অগ্রসর হতো তার জাতিও তার পেছনে ছুটে চলতো। তাই একা ঐ ব্যক্তিকে গোটা জাতির গোমরাহীর জন্য দায়ী করা হয়েছে। যেখানে জাতির মতামত ও কর্মের স্বাধীনতা আছে সেখানে তার কাজ-কর্মের দায়-দায়িত্ব সে জাতি নিজেই বহন করে। আর যেখানে এক ব্যক্তির একনায়কত্ব জাতিকে অসহায় করে রাখে সেখানে সেই এক ব্যক্তিই গোটা জাতির অপরাধের বোঝা নিজের মাথায় তুলে নেয়। এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে, এ বোঝা এক ব্যক্তির ঘাড়ে উত্তোলিত হওয়ার পর জাতি তার দায়-দায়িত্ব থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি পেয়ে যায়। না, সেক্ষেত্রে নিজের ঘাড়ে এক ব্যক্তিকে এভাবে চেপে বসতে দিয়েছে কেন, সেই নৈতিক দুর্বলতার দায়িত্ব জাতির ওপর অবশ্যই বর্তায়। সূরা যুখরূফের ৫৪ আয়াতে এ বিষয়টির প্রতিই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ
“ফেরাউন তার জাতিকে গুরুত্বহীন মনে করে নিয়েছে এবং তারাও তার আনুগত্য করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল ফাসেক।”
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন সূরা, যুখরূফের ব্যাখ্যা, টীকা ৫)
১৪.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা সাবার ব্যাখ্যা, টীকা ৩৭; সূরা দুখান, টীকা ৩২।
১৫.
অর্থাৎ তারা সবাই তাদের রসূলের রিসালাতকে অস্বীকার করেছে এবং মৃত্যুর পরে তাদেরকে পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে তাঁদের দেয়া এ খবরও অস্বীকার করেছে।
১৬.
যদিও প্রত্যেক জাতি কেবল তাদের কাছে প্রেরিত রসূলকেই অস্বীকার করেছিল। কিন্তু তারা যেহেতু এমন একটি খবরকে অস্বীকার করেছিল যা সমস্ত রসূল সর্বসম্মতভাবে পেশ করেছিলেন। তাই একজন রসূলকে অস্বীকার করা প্রকৃতপক্ষে সমস্ত রসূলকেই অস্বীকার করার নামান্তর। তাছাড়া এসব জাতির প্রত্যেকে কেবল তাদের কাছে আগমনকারী রসূলের রিসালাত অস্বীকার করেনি, বরং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মানুষের হিদায়াতের জন্য কোন মানুষ যে আদিষ্ট হয়ে আসতে পারে একথা মানতে তারা আদৌ প্রস্তুত ছিল না। সুতরাং তারা ছিল মূলত রিসালাতেরই অস্বীকারকারী এবং তাদের কারো অপরাধই শুধুমাত্র একজন রসূলের অস্বীকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।
১৭.
এটা আখেরাতের সপক্ষে ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন। এর পূর্বের ৬টি আয়াতে আখেরাতের সম্ভাবনার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। আর এ আয়াতে পেশ করা হয়েছে আখেরাতের বাস্তবতার প্রমাণ। সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আখেরাত সম্পর্কিত যে আকীদা পেশ করেছেন তা যে সম্পূর্ণ সত্য ও বাস্তব তার প্রমাণ হিসেবে এ আয়াতে আরব ও তার আশেপাশের জাতিসমূহের ঐতিহাসিক পরিণতিকে পেশ করা হয়েছে। কারণ যে জাতিই তা অস্বীকার করেছে সে জাতিই চরম নৈতিক বিকৃতির শিকার হয়েছে। এমনকি পরিশেষে আল্লাহর আযাব এসে তাদেরকে পৃথিবী থেকে একেবারেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। আখেরাতের অস্বীকৃতির সাথে নৈতিক বিকৃতির এ অনিবার্যতা যা ইতিহাসের আবর্তনের সাথে সাথে একের পর এক পরিলক্ষিত হয়---একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এ দুনিয়ায় মানুষকে প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বহীন ও কৃতকর্মের জবাবদিহি মুক্ত করে ছেড়ে দেয়া হয়নি, বরং কার্যকাল শেষ হওয়ার পর তাকে তার সমস্ত কাজ-কর্মের জবাব দিতে হবে। এ কারণে যখনই সে নিজেকে দায়িত্বমুক্ত মনে করে দুনিয়ায় কাজ করে তখনই তার গোটা জীবন ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়। যখন কোন কাজের ক্রমাগতভাবে খারাপ ফলাফল দেখা দিতে থাকে তখন তা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, কাজটি বাস্তবতার পরিপন্থী।
১৮.
এটা আখোতের সপক্ষে যৌক্তিক প্রমাণ। যে ব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকার করে না এবং সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত এ বিশ্ব-জাহানে মানুষের সৃষ্টিকে নিছক একটি আকস্মিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করার মত নির্বুদ্ধিতা যাকে পেয়ে বসেনি তার পক্ষে একথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, আল্লাহ তা’আলাই আমাদেরকে এবং পুরো এ বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টি করেছেন। আমরা যে এ দুনিয়ায় জীবিতাবস্থায় বর্তমান এবং দুনিয়া ও আসমানের এসব কাজ-কারবার যে আমাদের চোখের সামনেই চলছে, এটা স্বতই প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ আমাদেরকে এবং এ বিশ্ব-জাহানকে সৃষ্টি করতে অক্ষম ছিলেন না। তা সত্ত্বেও কেউ যদি বলে যে, কিয়ামত সংঘটিত করার পর সেই আল্লাহই আরেকটি জগত সৃষ্টি করতে পারবেন না এবং মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় আমাদের সৃষ্টি করতে পারবেন না তাহলে সে একটি যুক্তি বিরোধী কথাই বলে। আল্লাহ অক্ষম হলে প্রথমবারই তিনি সৃষ্টি করতে অক্ষম থাকতেন। তিনি যখন প্রথমবার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সেই সৃষ্টিকর্মের বদৌলতেই আমরা অস্তিত্ব লাভ করেছি তখন নিজের সৃষ্ট বস্তুকে ধ্বংস করে তা পুনরায় সৃষ্টি করতে তিনি অপরাগ হবেন কেন? এর কি যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে?
১৯.
আখেরাতের সপক্ষে যুক্তি প্রমাণ পেশ করার পর বলা হচ্ছে, তোমরা আখেরাতকে মেনে নাও বা অস্বীকার করো সর্বাবস্থায় তা অবধারিত এবং তা এমন একটি বাস্তব ঘটনা যা তোমাদের অস্বীকার করা সত্ত্বেও সংঘটিত হবে। নবী-রসূলদের অগ্রিম সতর্ক বাণী বিশ্বাস করে সেই সময়ের জন্য পূর্বাহ্ণেই প্রস্তুতি গ্রহণ করলে তোমরা নিজেদেরই কল্যাণ করবে এবং বিশ্বাস না করলে নিজেরাই নিজেদের দুর্ভাগ্য ডেকে আনবে। না মানলে আখেরাতের আগমন থেমে থাকবে না এবং আল্লাহর ন্যায়ের বিধান অচল হয়ে যাবে না।
২০.
অর্থাৎ আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান ভিতর ও বাহির থেকে এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টিত করে আছে যে, আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান তার যতটা নিকটে ততটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও নয়। তার কথা শোনার জন্য আমাকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আমি সরাসরি জানি। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় পাকড়াও করতে হয় তখনও আমাকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। সে যেখানেই থাকুক, সর্বদা আমার আয়ত্বাধীনেই আছে যখন ইচ্ছা আমি তাকে বন্দী করবো।
২১.
অর্থাৎ এক দিকে আমি নিজে সরাসরি মানুষের প্রতিটি গতিবিধি এবং চিন্তা ও কল্পনা সম্পর্কে অবহিত। অপর দিকে প্রত্যেক মানুষের জন্য দু’জন করে ফেরেশতা নিয়োজিত আছে যারা তার প্রত্যেকেটি তৎপরতা লিপিবদ্ধ করছে। তার কোন কাজ ও কথাই তাদের রেকর্ড থেকে বাদ পড়ে না। অর্থাৎ আল্লাহর আদালতে যে সময় মানুষকে পেশ করা হবে তখন কে কি করে এসেছে সে বিষয়ে আল্লাহ নিজ থেকেই অবহিত থাকবেন। তাছাড়া সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য এমন দু’জন সাক্ষীও উপস্থিত থাকবেন যারা তার কাজ-কর্মের লিখিত নথিভুক্ত প্রমাণাদি এনে সামনে পেশ করবেন। লিখিত এ প্রমাণাদি কেমন ধরনের হবে তার সঠিক ধারণা করা আমাদের জন্য কঠিন। তবে আজ আমাদের সামনে যেসব সত্য উদঘাটিত হচ্ছে তা দেখে এ বিষয়টি একেবারে নিশ্চিত মনে হয় যে, যে পরিবেশে মানুষ অবস্থান ও কাজ-কর্ম করে তাতে চতুর্দিকের প্রতিটি অণু-পরমাণুর ওপর তার কণ্ঠস্বর, ছবি ও গতিবিধির ছাপ পড়ে যাচ্ছে। এসব জিনিসের প্রত্যেকটিকে পুনরায় হুবহু সেই আকার-আকৃতি ও স্বরে এমনভাবে পেশ করা যেতে পারে যে, আসল ও নকলের মধ্যে সামান্যতম পার্থক্যও থাকবে না। মানুষ যন্ত্রপাতির সাহায্যে এ কাজটি অত্যন্ত সীমিত মাত্রায় করছে। কিন্তু আল্লাহর ফেরেশতারা এসব যন্ত্রপাতিরও মুখাপেক্ষী নয়, এসব প্রতিবন্ধকতায়ও আবদ্ধ নয়। মানুষের নিজ দেহ এবং তার চারপাশের প্রতিটি জিনিস তাদের জন্য টেপ ও ফিল্ম স্বরূপ। তারা এসব টেপ ও ফিল্মের ওপর প্রতিটি শব্দ এবং প্রতিটি ছবি অতি সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয়সহ অবিকল ধারণ করতে পারে এবং পৃথিবীতে ব্যক্তি যেসব কাজ করতো কিয়ামতের দিন তাকে তার নিজ কানে নিজ কণ্ঠস্বরে সেসব কথা শুনিয়ে দিতে পারে, নিজ চোখে তার সকল কর্মকাণ্ডের এমন জ্বলজ্যান্ত ছবি তাকে দেখিয়ে দিতে পারে যা অস্বীকার করা তার জন্য সম্ভব হবে না।
এখানে একথাটিও ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার যে, আল্লাহ তা’আলা আখেরাতের আদালতে কোন ব্যক্তিকে কেবল নিজের ব্যক্তিগত জ্ঞানের ভিত্তিতে শাস্তি প্রদান করবেন না, বরং ন্যায় বিচারের সমস্ত পূর্বশর্ত পূরণ করে তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। এ কারণে দুনিয়াতেই প্রত্যেক ব্যক্তির সমস্ত কথা ও কাজের পূর্ণাংগ রেকর্ড তৈরী করা হচ্ছে যাতে অনস্বীকার্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রমাণাদি পেশ করা যায়।
২২.
পরম সত্য নিয়ে হাজির হওয়ার অর্থ হচ্ছে মৃত্যুর যন্ত্রণা সেই পরম সূচনা বিন্দু যেখান থেকে দুনিয়ার জীবনে পর্দার আড়ালে লুকানো মহাসত্য উন্মুক্ত হতে আরম্ভ করে। এ সময় মানুষ সেই জগতটিকে স্পষ্ট পায় যার খবর নবী-রসূলগণ দিয়েছিলেন। তখন সে একথাও জানতে পারে যে, আখেরাত পুরোপুরি সত্য। জীবনের এ দ্বিতীয় পর্যায়ে সে সৌভাগ্যবান হিসেবে প্রবেশ করছে, না হতভাগ্য হিসেবে, সে সত্যও সে জানতে পারে।
২৩.
অর্থাৎ এটা সেই চরম সত্য যা মানতে তুমি টালবাহানা করেছিলে। তুমি পৃথিবীতে বন্ধনমুক্ত বলদের মত অবাধে বিচরণ করতে চাচ্ছিলে, আরো চাচ্ছিলে মৃত্যুর পর যেন আর কোন জীবন না থাকে যেখানে তোমার নিজের সমস্ত কাজ-কর্মের পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ কারণে তুমি আখেরাতের ধ্যান-ধারণা থেকে দূরে অবস্থান করতে এবং কোন সময় এ জগত বাস্তব রূপ লাভ করবে তা কোনক্রমেই মানতে প্রস্তুত ছিলে না। এখন দেখো, সেই আরেকটি জগতই তোমার সামনে বাস্তব হয়ে দেখা দিচ্ছে।
২৪.
এর অর্থ শিংগার ফুৎকার। এ ফুৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মৃত লোক দৈহিক জীবন পেয়ে পুনরায় উঠে দাঁড়াবে। ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল আন’আম টীকা ৪৭; ইবরাহীম, টীকা ৫৭; ত্বাহা, টীকা, ৭৮; আল হজ্জ, টীকা ১; ইয়াসীন, টীকা ৪৬ ও ৪৭; আয যুমার, টীকা ৭৯।