আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন্ নিসা

১৭৬ আয়াত

৩১ ) তোমরা যদি বড় বড় গোনাহ থেকে দূরে থাকো, যা থেকে দূরে থাকার জন্য তোমাদের বলা হচ্ছে, তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো খারাপ কাজগুলো আমি তোমাদের হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দেবো ৫৩ এবং তোমাদের সম্মান ও মর্যাদার জায়গায় প্রবেশ করিয়ে দেবো।
إِن تَجْتَنِبُوا۟ كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّـَٔاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًۭا كَرِيمًۭا ٣١
৩২ ) আর যা কিছু আল্লাহ‌ তোমাদের কাউকে অন্যদের মোকাবিলায় বেশী দিয়েছেন তার আকাংখা করো না। যা কিছু পুরুষেরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী। আর যা কিছু মেয়েরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী। হ্যাঁ, আল্লাহর কাছে তাঁর ফযল ও মেহেরবানীর জন্য দোয়া করতে থাকো। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ‌ সমস্ত জিনিসের জ্ঞান রাখেন। ৫৪
وَلَا تَتَمَنَّوْا۟ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبُوا۟ ۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبْنَ ۚ وَسْـَٔلُوا۟ ٱللَّهَ مِن فَضْلِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًۭا ٣٢
৩৩ ) আর বাপ-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত ধন-সম্পত্তিতে আমি তাদের হকদার নির্ধারিত করে দিয়েছি। এখন থাকে তারা, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি ও অঙ্গীকার আছে, তাদের অংশ তাদেরকে দিয়ে দাও। নিশ্চিত জেনে রাখো আল্লাহ‌ সব জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। ৫৫
وَلِكُلٍّۢ جَعَلْنَا مَوَٰلِىَ مِمَّا تَرَكَ ٱلْوَٰلِدَانِ وَٱلْأَقْرَبُونَ ۚ وَٱلَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ فَـَٔاتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ شَهِيدًا ٣٣
৩৪ ) পুরুষ নারীর কর্তা। ৫৬ এ জন্য যে, আল্লাহ‌ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন ৫৭ এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। ৫৮ আর যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে বুঝাও, শয়নগৃহে তাদের থেকে আলাদা থাকো এবং তাদেরকে মারধোর করো। ৫৯ তারপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে অযথা তাদের ওপর নির্যাতন চালাবার জন্য বাহানা তালাশ করো না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ ওপরে আছেন, তিনি বড় ও শ্রেষ্ঠ।
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ وَبِمَآ أَنفَقُوا۟ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ ۚ فَٱلصَّـٰلِحَـٰتُ قَـٰنِتَـٰتٌ حَـٰفِظَـٰتٌۭ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُ ۚ وَٱلَّـٰتِى تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهْجُرُوهُنَّ فِى ٱلْمَضَاجِعِ وَٱضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا۟ عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيًّۭا كَبِيرًۭا ٣٤
৩৫ ) আর যদি কোথাও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিগড়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে পুরুষের আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ নির্ধারণ করে দাও। তারা দু’জন ৬০ সংশোধন করে নিতে চাইলে আল্লাহ‌ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ‌ সবকিছু জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ। ৬১
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَٱبْعَثُوا۟ حَكَمًۭا مِّنْ أَهْلِهِۦ وَحَكَمًۭا مِّنْ أَهْلِهَآ إِن يُرِيدَآ إِصْلَـٰحًۭا يُوَفِّقِ ٱللَّهُ بَيْنَهُمَآ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًۭا ٣٥
৩৬ ) আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, ৬২ মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ‌ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে।
۞ وَٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا۟ بِهِۦ شَيْـًۭٔا ۖ وَبِٱلْوَٰلِدَيْنِ إِحْسَـٰنًۭا وَبِذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَـٰمَىٰ وَٱلْمَسَـٰكِينِ وَٱلْجَارِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْجَارِ ٱلْجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلْجَنۢبِ وَٱبْنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًۭا فَخُورًا ٣٦
৩৭ ) আর আল্লাহ‌ এমন লোকদেরকেও পছন্দ করেন না, যারা কৃপণতা করে, অন্যদেরকেও কৃপণতা করার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ‌ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন সেগুলো গোপন করে। ৬৩ এই ধরনের অনুগ্রহ অস্বীকারকারী লোকদের জন্য আমি লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।
ٱلَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ ۗ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَـٰفِرِينَ عَذَابًۭا مُّهِينًۭا ٣٧
৩৮ ) আর আল্লাহ‌ তাদেরকেও অপছন্দ করেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ কেবল মাত্র লোকদেরকে দেখাবার জন্য ব্যয় করে এবং আসলে না আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আর না আখেরাতের দিনের প্রতি। সত্য বলতে কি, শয়তান যার সাথী হয়েছে তার ভাগ্যে বড় খারাপ সাথীই জুটেছে।
وَٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُمْ رِئَآءَ ٱلنَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ ۗ وَمَن يَكُنِ ٱلشَّيْطَـٰنُ لَهُۥ قَرِينًۭا فَسَآءَ قَرِينًۭا ٣٨
৩৯ ) হ্যাঁ, যদি তারা আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনতো এবং যা কিছু আল্লাহ‌ তাদেরকে দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করতো, তাহলে তাদের মাথায় এমন কী আকাশ ভেঙে পড়তো? যদি তারা এমনটি করতো, তাহলে তাদের নেকীর অবস্থা আল্লাহর কাছে গোপন থেকে যেতো না।
وَمَاذَا عَلَيْهِمْ لَوْ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقَهُمُ ٱللَّهُ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِهِمْ عَلِيمًا ٣٩
৪০ ) আল্লাহ কারো ওপর এক অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। যদি কেউ একটি সৎকাজ করে, তাহলে আল্লাহ‌ তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍۢ ۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةًۭ يُضَـٰعِفْهَا وَيُؤْتِ مِن لَّدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًۭا ٤٠
৫৩.
অর্থাৎ আমি সংকীর্ণমনা নই এবং সংকীর্ণ দৃষ্টির অধিকারীও নই। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ধরে আমি বান্দাকে শাস্তি দেই না। তোমাদের আমলনামায় যদি বড় বড় অপরাধ না থাকে তাহলে ছোটখাটো অপরাধগুলোকে উপেক্ষা করা হবে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনাই হবে না। তবে যদি তোমরা বড় বড় অপরাধ করে থাকো, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে মামলা চালানো হবে এবং তাতে ছোটখাটো অপরাধগুলোও ধর্তব্যের গণ্য হবে, সেজন্য পাকড়াও করা হবে।

এখানে বড় গোনাহ ও ছোট গোনাহর মধ্যে নীতিগত পার্থক্য বুঝে নেয়া উচিত। কুরআন ও সুন্নাতের মধ্যে আমি যতটুকু চিন্তা-ভাবনা করতে পেরেছি তাতে আমি এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি (তবে যথার্থ সত্য একমাত্র আল্লাহ জানেন) যে, তিনটি কারণে কোন কাজ বড় গোনাহে পরিণত হয়ঃ

একঃ কারো অধিকার হরণ করা। সে অধিকার আল্লাহর, বাপ-মার, অন্য মানুষের বা হরণকারীর নিজেরও হতে পারে। তারপর যার অধিকার যত বেশী হবে তার অধিকার হরণও ঠিক তত বেশী বড় গোনাহ হবে। এ কারণেই গোনাহকে ‘জুলুম’ও বলা হয়। আর এ জন্য কুরআনে শিরককে জুলুম বলা হয়েছে।

দুইঃ আল্লাহকে ভয় না করা এবং আল্লাহর মোকাবিলায় আত্মম্ভরিতা করা, এর ফলে মানুষ আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের পরোয়া করে না। তাঁর নাফরমানি করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছা করেই এমন কাজ করে যা করতে তিনি নিষেধ করেছেন এবং জেনে বুঝে এমন কাজ থেকে বিরত থাকে যা করার জন্য তিনি হুকুম দিয়েছেন। এই নাফরমানি যে পরিমাণ নির্লজ্জতা, অহমিকা, দুঃসাহস ও আল্লাহভীতির মনোভাবে সমৃদ্ধ হবে গোনাহটিও ঠিক সেই পর্যায়ের কঠিন ও মারাত্মক হবে। এই অর্থের প্রেক্ষিতেই গোনাহের জন্য ‘ফিস্‌ক’ (ফাসেকী) ও ‘মাসিয়াত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনঃ যে সমস্ত সম্পর্কের সুস্থতা ও বলিষ্ঠতার ওপর মানব জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে সেগুলো বিকৃত ও ছিন্ন করা। এ সম্পর্ক বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে এবং বান্দা ও বান্দার মধ্যে হতে পারে। আবার যে সম্পর্ক যত বেশী গুরুত্বপূর্ণ, যা ছিন্ন করলে শাস্তি ও নিরাপত্তার যত বেশী ক্ষতি হয় এবং যার ব্যাপারে যত বেশী নিরাপত্তার আশা করা যেতে পারে, তাকে ছিন্ন করা, কেটে ফেলা ও নষ্ট করার গোনাহ তত বেশী বড় হয়। যেমন যিনা ও তার বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে চিন্তা করুন। এ কাজটি আসলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই এটি মূলত একটি বড় গোনাহ। কিন্তু এর বিভিন্ন অবস্থা গোনাহের ব্যাপারে একটি অন্যটির চাইতে বেশী মারাত্মক। বিবাহিত ব্যক্তির যিনা করা অবিবাহিত ব্যক্তির যিনা করার তুলনায় অনেক কঠিন গোনাহ। বিবাহিত মহিলার সাথে যিনা করা অবিবাহিতা মেয়ের সাথে যিনা করার তুলনায় অনেক বেশী দুষনীয়। প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা অপ্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে যিনা করার তুলনায় বেশী খারাপ। মাহরাম মহিলা যেমন, মা, মেয়ে, বোনের সাথে যিনা করা, অন্য অনাত্মীয় মহিলার সাথে যিনা করার তুলনায় অনেক বেশী পাপ। অন্য কোন জায়গায় যিনা করার তুলনায় মসজিদে যিনা করা কঠিন গোনাহ। ওপরে বর্ণিত কারণের ভিত্তিতে এই দৃষ্টান্তগুলোতে একই কাজের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে গোনাহ হবার দিক দিয়ে পর্যায়ের পার্থক্য সূচিত হয়েছে। যেখানে নিরাপত্তার আশা যত বেশী, যেখানে মানবিক সম্পর্ক যত বেশী সম্মানের অধিকারী এবং যেখানে এই সম্পর্ক ছিন্ন করা যত বেশী বিপর্যয়ের কারণ বলে বিবেচিত হয়, সেখানে যিনা করা তত বেশী বড় গোনাহ। এই অর্থের প্রেক্ষিতে গোনাহের জন্য ‘ফুজুর’ এর পরিভাষা করা হয়।

৫৪.
এই আয়াতে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বিধান দেয়া হয়েছে। এটি সংরক্ষিত এবং যথাযথভাবে কার্যকরী করা হলে সমাজ জীবনে মানুষ বিপুল শান্তি ও নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হবে। আল্লাহ‌ সমস্ত মানুষকে সমান করে তৈরী করেননি। বরং তাদের মধ্যে অসংখ্য দিক দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ সুশ্রী, কেউ কুশ্রী। কেউ সুকন্ঠ, কেউ কর্কশ ভাষী। কেউ শক্তিশালী, কেউ দুর্বল। কেউ পূর্ণাঙ্গ সুগঠিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী, আবার কেউ জন্মগতভাবে পঙ্গু। কাউকে শারীরিক ও মানসিক শক্তির মধ্যে কোন একটি শক্তি বেশী দেয়া হয়েছে আবার কাউকে দেয়া হয়েছে অন্য কোন শক্তি। কাউকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় পয়দা করা হয়েছে আর কাউকে খারাপ অবস্থায়। কাউকে বেশী উপায় উপকরণ দেয়া হয়েছে, কাউকে দেয়া হয়েছে কম। এ তারতম্য ও পার্থক্যের ভিত্তিতেই মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি বৈচিত্রমণ্ডিত হয়েছে। আর এটিই বুদ্ধি ও যুক্তিসম্মত। কিন্তু যেখানেই এই পার্থক্যের স্বাভাবিক সীমানা ছাড়িয়ে মানুষ তার ওপর নিজের কৃত্রিম পার্থক্যের বোঝা চাপিয়ে দেয় সেখানেই এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। আর যেখানে আদতে এই পার্থক্যকেই বিলুপ্ত করে দেবার জন্য প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয় সেখানে আর এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ মানসিকতা দেখা যায়। নিজের চাইতে কাউকে অগ্রসর দেখতে পেলে সে অস্থির হয়ে পড়ে। মানুষের এই মানসিকতা তাই সমাজ জীবনে হিংসা, বিদ্বেষ, রেষারেষি, শত্রুতা, দ্বন্দ্ব, সংঘাত ইত্যাদি সৃষ্টির মূল। এরই ফলে যে অনুগ্রহ সে বৈধ পথে অর্জন করতে পারে না তাকে অবৈধ পথে লাভ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এই মানসিকতা থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহর এই আয়াতে নির্দেশ দিচ্ছেন, তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্যদের প্রতি তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন তুমি তার আকাঙ্ক্ষা করো না। তবে আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের জন্য দোয়া করো। তিনি নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী তোমার জন্য যে অনুগ্রহটি উপযোগী মনে করবেন সেটিই তোমাকে দান করবেন। আর তিনি যে বলেছেন, “যা কিছু পুরুষরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী আর যা কিছু মেয়েরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী” এর অর্থ যতদূর আমি বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে এই যে, পুরুষদের ও মেয়েদের মধ্য থেকে যাকে আল্লাহ‌ যাই কিছু দিয়েছেন তাকে ব্যবহার করে যে যেমন কিছু নেকী বা গোনাহ অর্জন করবে সেই অনুযায়ী অথবা অন্য কথায় সেই জাতীয় জিনিসের মধ্য থেকেই আল্লাহর কাছে সে অংশ পাবে।
৫৫.
আরববাসীদের নিয়ম ছিল, যাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বা ভ্রাতৃত্বের চুক্তি ও অঙ্গীকার হয়ে যেতো, তারা পরস্পরের উত্তরাধিকারী হয়ে যেতো। এভাবে যাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করা হতো, সেও পালক পিতার সম্পত্তির ওয়ারিস হয়ে যেতো। এই আয়াতে জাহেলিয়াতের এই পদ্ধতিটি বাতিল করে বলা হয়েছে, মীরাস তো আমার নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী আত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে, তবে যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি ও অঙ্গীকার আছে তাদেরকে তোমরা নিজেদের জীবদ্দশায় যা চাও দিতে পারো।
৫৬.
কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে, ‘কাওয়াম’। এমন এক ব্যক্তিকে ‘কাওয়াম’ বা ‘কাইয়েম’ বলা হয়, যেকোন ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবস্থাপনার যাবতীয় বিষয় সঠিকভাবে পরিচালনা, তার হেফাজত ও তত্বাবধান এবং তার প্রয়োজন সরবরাহ করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হয়।
৫৭.
এখানে সম্মান ও মর্যাদা অর্থে শ্রেষ্ঠত্ব শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি যেমন সাধারণত আমাদের ভাষায় হয়ে থাকে এবং এক ব্যক্তি এ শব্দটি বলার সাথে সাথেই এর এই অর্থ গ্রহণ করে। বরং এখানে এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ‌ তাদের এক পক্ষকে (অর্থাৎ পুরুষ) প্রকৃতিগতভাবে এমন সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী দান করেছেন যা অন্য পক্ষটিকে (অর্থাৎ নারী) দেননি অথবা দিলেও প্রথম পক্ষের চেয়ে কম দিয়েছেন। এ জন্য পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় পুরুষই ‘কাওয়াম’ বা কর্তা হবার যোগ্যতা রাখে। আর নারীকে প্রাকৃতিক দিক দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে তাকে পুরুষের হেফাযত ও তত্বাবধানে থাকা উচিত।
৫৮.
হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেন, “সেই স্ত্রীই সর্বোত্তম, যাকে দেখলে তোমার মন আনন্দে ভরে যায়। তুমি তাকে কোন আদেশ করলে সে তোমার আনুগত্য করে। আর তুমি ঘরে না থাকলে সে তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার ধন-সম্পদের ও তার নিজের হেফাজত করে।” এ হাদীসটি এই আয়াতের চমৎকার ব্যাখ্যা পেশ করে। কিন্তু এখানে ভালোভাবে একথা বুঝে নিতে হবে যে, স্ত্রীর জন্য নিজের স্বামীর আনুগত্যের চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগণ্য হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য। কাজেই কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে আল্লাহর নাফরমানি করার হুকুম দেয় অথবা আল্লাহর অর্পিত কোন ফরয থেকে তাকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে এক্ষেত্রে তার আনুগত্য করতে অস্বীকার করা স্ত্রীর জন্য ফরয হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় যদি স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করে তাহলে সে গোনাহগার হবে। বিপরীত পক্ষে স্বামী যদি স্ত্রীকে নফল নামায পড়তে বা নফল রোযা রাখতে নিষেধ করে তাহলে স্বামীর কথা মেনে চলা তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নফল ইবাদাত করলে তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না।
৫৯.
তিনটি কাজ একই সঙ্গে করার কথা এখানে বলা হয়নি। বরং এখানে বক্তব্য হচ্ছে, অবাধ্যতা দেখা দিলে এই তিনটি ব্যবস্থা অবলম্বন করার অনুমতি রয়েছে। এখন এগুলো বাস্তবায়নের প্রশ্ন। এক্ষেত্রে অবশ্যি দোষ ও শাস্তির মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ক থাকতে হবে। যেখানে হালকা ব্যবস্থায় কাজ হয়ে যায়, সেখানে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন না করা উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানেই স্ত্রীদের মারার অনুমতি দিয়েছেন, সেখানেই তা দিয়েছেন একান্ত অনিচ্ছায় ও লাচার হয়েই। আবার তারপরও একে অপছন্দ করেছেন। তবুও কোন কোন স্ত্রী এমন হয়ে থাকে যাদেরকে মারধর না করলে সোজা থাকে না। এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হচ্ছে, তাদের মুখে বা চেহারায় মেরো না, নির্দয়ভাবে মেরো না এবং এমন জিনিস দিয়ে মেরো না, যা শরীরে দাগ রেখে যায়।
৬০.
দু’জন বলতে এখানে দু’জন সালিশকে বুঝানো হয়েছে। আবার স্বামী-স্ত্রীকেও বুঝানো হয়েছে। যে কোন ঝগড়া বিবাদের অবশ্যই মীমাংসা হতে পারে। তবে বিবদমান পক্ষ দু’টি মীমাংসা চায় কিনা এবং যারা মাঝখানে থেকে সালিশ করেন তাঁরা আন্তরিকতার সাথে উভয় পক্ষের মধ্যে মিলমিশ করে দিতে চান কিনা, এরই ওপর মীমাংসার সবটুকু নির্ভর করে।
৬১.
এ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিলে বিরোধ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর্যায়ে পৌঁছাবার বা ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়াবার আগেই ঘরেই তার সংশোধন ও মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত। এজন্য এ পদ্ধতি বাতলানো হয়েছে যে, স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়ে দু’জনের একটি সালিশ কমিটি বানাতে হবে। তারা উভয়ে মিলে বিরোধের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবেন। তারপর এক সাথে বসে এর সমাধান ও মীমাংসার পথ বের করবেন। এই সালিশ কে নিযুক্ত করবে? এ প্রশ্নটি আল্লাহ‌ অস্পষ্ট রেখেছেন। এর কারণ হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী চাইলে নিজেদের আত্মীয়দের মধ্য থেকে নিজেরাই একজন করে লোক বাছাই করে আনতে পারে। তারাই তাদের বিরোধ নিস্পত্তি করবে। আবার উভয়ের পরিবারের বয়স্ক লোকেরা এগিয়ে এসে এ ধরনের সালিশ নিযুক্ত করতে পারে। আর ব্যাপারটি যদি আদালতে চলে যায়, তাহলে আদালত নিজেই কোন সিদ্ধান্ত দেবার আগে পারিবারিক সালিশ নিযুক্ত করে এর মীমাংসা করে দিতে পারে।

সালিশদের ক্ষমতা ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ফকীহদের একটি দল বলেন, এই সালিশে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও মীমাংসা চাপিয়ে দেবার ক্ষমতা নেই। তবে তাদের মতে, ঝগড়া মিটমাট করার যে সঙ্গত ও সম্ভাব্য পদ্ধতি হতে পারে সেজন্য তারা সুপারিশ করতে পারে। এই সুপারিশ মেনে নেয়া না নেয়ার ইখতিয়ার স্বামী-স্ত্রীর আছে। তবে স্বামী-স্ত্রী যদি তাদেরকে তালাক বা খুলা তালাক অথবা অন্য কোন ব্যাপারে মীমাংসা করে দেবার জন্য দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত করে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যি তাদের ফয়সালা মেনে নেয়া স্বামী-স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। হানাফী ও শাফেয়ী আলেমগণ এই মত পোষণ করেন। অন্য দলের মতে, উভয় সালিশের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবার এবং ঝগড়া মিটমাট করে আবার একসাথে মিলেমিশে চলার ফয়সালা করার ইখতিয়ার আছে কিন্তু স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা করে দেবার অধিকার তাদের নেই। হাসান বসরী, কাতাদাহ এবং অন্যান্য বেশ কিছু সংখ্যক ফকীহ এই মত পোষণ করেন। তৃতীয় একটি দলের মতে, এই সালিশদ্বয় স্বামী-স্ত্রীকে মিলিয়ে দেবার বা আলাদা করার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখে। ইবনে আব্বাস, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইবরাহীম নাখঈ, সা’বী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন এবং অন্যান্য ফকীহগণ এই মতের প্রবক্তা।

হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলীর (রা.) ফায়সালার যেসব নজীর আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা থেকে জানা যায়, তারা উভয়েই সালিশ নিযুক্ত করার সাথে সাথেই আদালতের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিজেদের ফয়সালা কার্যকর করার প্রশাসনিক ক্ষমতা দান করতেন। তাই হযরত আকীল ইবনে আবু তালেব এবং তাঁর স্ত্রী হযরত ফাতেমা বিনতে উতবাহ ইবনে রাবীআর মামলা যখন হযরত উসমানের আদালতে দায়ের করা হলো তখন তিনি স্বামীর পরিবার থেকে হযরত ইবনে আব্বাসকে এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে হযরত মুআবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ানকে সালিশ নিযুক্ত করলেন এবং তাদেরকে বললেন, আপনারা দু’জন যদি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তাদের স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে তাহলে তা করে দেবেন। অনুরূপভাবে একটি মামলায় হযরত আলী সালিশ নিযুক্ত করেন। তাদেরকে মিলিয়ে দেবার বা আলাদা করে দেবার ইখতিয়ার দান করেন। এ থেকে জানা যায়, সালিশের নিজস্ব কোন আদালতী ক্ষমতা বা ইখতিয়ার নেই। তবে তাদের নিযুক্তির সময় আদালত যদি তাদেরকে ক্ষমতা দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের ফয়সালা আদালতের ফায়সালার ন্যায় প্রবর্তিত হবে।

৬২.
মূল ইবারতে বলা হয়েছেঃ “আস্‌সা-হিবু বিল জানবে।” এর অর্থ অন্তরঙ্গ বন্ধু-বান্ধব হতে পারে আবার এমন লোকও হতে পারে যে জীবন পথে চলার ক্ষেত্রে কোন এক পর্যায়ে সঙ্গ দিয়ে থাকে। যেমন, আপনি বাজারে যাচ্ছেন এবং পথেকোন ব্যক্তি আপনার সাথে চলছে। অথবা কোন দোকানে আপনি সওদা কিনছেন এবং অন্য কোন খরিদ্দারও আপনার পাশে বসে রয়েছে। অথবা সফরের মাঝপথেকোন ব্যক্তি আপনার সফর সঙ্গী হয়ে গেলেন। এই সাময়িক সঙ্গও প্রত্যেক ভদ্র ও শালীন ব্যক্তির ওপর বেশ কিছু অধিকার ও দায়িত্ব অর্পণ করে। যার ফলে সে যথাসম্ভব তার সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং তাকে কষ্ট দিতে বিরত থাকে।
৬৩.
মানুষ যদি এমনভাবে থাকে যাতে মনে হয় আল্লাহ‌ তার ওপর কোন অনুগ্রহ করেননি, তাহলে এটাই হয় আল্লাহর অনুগ্রহকে গোপন করা। যেমন কাউকে আল্লাহ‌ অর্থ-সম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে নিজের সামর্থ্যের তুলনায় অনেক নিম্নমানের জীবন যাপন করে। নিজের ও নিজের পরিবারবর্গের জন্য ব্যয় করে না। মানুষকে আর্থিক সাহায্য করে না। সৎকাজে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে অংশ গ্রহণ করে না। বাইরের কোন লোক তাকে দেখে মনে করে, এ বেচারা বড়ই গরীব। এটা আসলে আল্লাহর প্রতি মারাত্মক পর্যায়ে অকৃতজ্ঞতা। হাদীসে বলা হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃ

إنّ اللَّهَ إذا أنْعَمَ نِعْمَةً على عَبْدٍ احِبُّ اَن يَّظهَرَ أثَرَها عَلَيْهِ

“আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে নেয়ামত দান করেন তখন তিনি সেই নেয়ামতের চিহ্ন বান্দার ওপর প্রকাশিত হওয়া পছন্দ করেন।”

অর্থাৎ তার খাওয়া-দাওয়া, বসবাস করা, লেবাস-পোশাক, গৃহ, আসবাবপত্র, দান-খয়রাত ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের প্রকাশ হতে হবে।

অনুবাদ: