আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন্ নিসা

১৭৬ আয়াত

৪১ ) তারপর চিন্তা করো, তখন তারা কি করবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন সাক্ষী আনবো এবং তাদের ওপর তোমাকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করাবো ৬৪
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍۭ بِشَهِيدٍۢ وَجِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَـٰٓؤُلَآءِ شَهِيدًۭا ٤١
৪২ ) সে সময় যারা রসূলের কথা মানেনি এবং তাঁর নাফরমানি করতে থেকেছে তারা কামনা করবে, হায়! যমীন যদি ফেটে যেতো এবং তারা তার মধ্যে চলে যেতো। সেখানে তারা আল্লাহর কাছ থেকে নিজেদের কোন কথা লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
يَوْمَئِذٍۢ يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَعَصَوُا۟ ٱلرَّسُولَ لَوْ تُسَوَّىٰ بِهِمُ ٱلْأَرْضُ وَلَا يَكْتُمُونَ ٱللَّهَ حَدِيثًۭا ٤٢
৪৩ ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছে যেয়ো না। ৬৫ নামায সেই সময় পড়া উচিত যখন তোমরা যা বলছো তা জানতে পারো। ৬৬ অনুরূপভাবে অপবিত্র অবস্থায়ও ৬৭ গোসল না করা পর্যন্ত নামাযের কাছে যেয়ো না। তবে যদি পথ অতিক্রমকারী হও, ৬৮ তাহলে অবশ্যি স্বতন্ত্র কথা। আর যদি কখনো তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো, সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ করে থাকো ৬৯ এবং এরপর পানি না পাও, তাহলে পাক–পবিত্র মাটির সাহায্য গ্রহণ করো এবং তা নিজেদের চেহারা ও হাতের ওপর বুলাও। ৭০ নিঃসন্দেহে আল্লাহ‌ কোমলতা অবলম্বনকারী ও ক্ষমাশীল।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَقْرَبُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمْ سُكَـٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا۟ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِى سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغْتَسِلُوا۟ ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰٓ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَآءَ أَحَدٌۭ مِّنكُم مِّنَ ٱلْغَآئِطِ أَوْ لَـٰمَسْتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوا۟ مَآءًۭ فَتَيَمَّمُوا۟ صَعِيدًۭا طَيِّبًۭا فَٱمْسَحُوا۟ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا ٤٣
৪৪ ) তুমি কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে কিতাবের জ্ঞানের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে? ৭১ তারা নিজেরাই গোমরাহীর খরিদ্দার বনে গেছে এবং কামনা করছে যেন তোমরাও পথ ভুল করে বসো।
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ نَصِيبًۭا مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ يَشْتَرُونَ ٱلضَّلَـٰلَةَ وَيُرِيدُونَ أَن تَضِلُّوا۟ ٱلسَّبِيلَ ٤٤
৪৫ ) আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের ভালো করেই জানেন এবং তোমাদের সাহায্য-সমর্থনের জন্য আল্লাহ-ই যথেষ্ট।
وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِأَعْدَآئِكُمْ ۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَلِيًّۭا وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ نَصِيرًۭا ٤٥
৪৬ ) যারা ইহুদী হয়ে গেছে, ৭২ তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা শব্দকে তার স্থান থেকে ফিরিয়ে দেয় ৭৩ এবং সত্য দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রকাশের জন্য নিজেদের জিহ্বা কুঞ্চিত করে বলে, “আমরা শুনলাম” এবং “আমরা অমান্য করলাম” ৭৪ আর “শোনে না শোনার মতো” ৭৫ এবং বলে “রাঈনা।” ৭৬ অথচ তারা যদি বলতো, “আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম” এবং “শোন” ও “আমাদের প্রতি লক্ষ্য করো” তাহলে এটা তাদেরই জন্য ভালো হতো এবং এটাই হতো অধিকতর সততার পরিচায়ক। কিন্তু তাদের বাতিল পরস্তির কারণে তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ পড়েছে। তাই তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে।
مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُوا۟ يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ وَيَقُولُونَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَٱسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍۢ وَرَٰعِنَا لَيًّۢا بِأَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًۭا فِى ٱلدِّينِ ۚ وَلَوْ أَنَّهُمْ قَالُوا۟ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَٱسْمَعْ وَٱنظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًۭا لَّهُمْ وَأَقْوَمَ وَلَـٰكِن لَّعَنَهُمُ ٱللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلَّا قَلِيلًۭا ٤٦
৪৭ ) হে কিতাবধারীগণ! সেই কিতাবটি মেনে নাও যেটি আমি এখন নাযিল করেছি এবং যেটি তোমাদের কাছে আগে থেকে মজুদ ৭৭ কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে ও তার প্রতি সমর্থন জানায়। আর আমি চেহারা বিকৃত করে পেছন দিকে ফিরিয়ে দেবার অথবা শনিবার-ওয়ালাদের মতো তাদেরকে অভিশপ্ত করার আগে ৭৮ এর প্রতি ঈমান আনো। আর মনে রাখো, আল্লাহর নির্দেশ প্রতিপালিত হয়েই থাকে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ ءَامِنُوا۟ بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًۭا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًۭا فَنَرُدَّهَا عَلَىٰٓ أَدْبَارِهَآ أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّآ أَصْحَـٰبَ ٱلسَّبْتِ ۚ وَكَانَ أَمْرُ ٱللَّهِ مَفْعُولًا ٤٧
৪৮ ) আল্লাহ অবশ্যই শিরককে মাফ করেন না। ৭৯ এছাড়া অন্যান্য যত গোনাহর হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। ৮০ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে।
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفْتَرَىٰٓ إِثْمًا عَظِيمًا ٤٨
৪৯ ) তুমি কি তাদেরকেও দেখেছো, যারা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও আত্মপবিত্রতার বড়াই করে বেড়ায়? অথচ শুদ্ধি ও পবিত্রতা আল্লাহ‌ যাকে চান তাকে দেন। আর (তারা যে শুদ্ধি ও পবিত্রতা লাভ করে না সেটা আসলে) তাদের ওপর বিন্দুমাত্রও জুলুম করা হয় না।
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم ۚ بَلِ ٱللَّهُ يُزَكِّى مَن يَشَآءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا ٤٩
৫০ ) আচ্ছা, দেখো তো, এর আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করতে একটুও কুন্ঠিত হয় না। এদের স্পষ্ট গোনাহগার হবার ব্যাপারে এই একটি গোনাহই যথেষ্ট।
ٱنظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ ۖ وَكَفَىٰ بِهِۦٓ إِثْمًۭا مُّبِينًا ٥٠
৬৪.
অর্থাৎ প্রত্যেক যুগের নবী তাঁর যুগের লোকদের ব্যাপারে আল্লাহর আদালতে সাক্ষী দিবেন। তিনি এই মর্মে সাক্ষী দেবেন, হে আল্লাহ! জীবনের সোজা-সরলপথ এবং চিন্তা ও কর্মের সঠিক ও নির্ভুল পদ্ধতির যে শিক্ষা তুমি আমাকে দিয়েছিলে তা আমি এদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর এই সাক্ষ্য মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর যুগের লোকদের ব্যাপারেও পেশ করবেন। আর কুরআন থেকে জানা যায়, তাঁর আগমন কাল থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র সময়-কালই তাঁর যুগ। (আলে ইমরানের ৬৯ টীকা দেখুন)।
৬৫.
এটি মদ সম্পর্কে দ্বিতীয় নির্দেশ। প্রথম নির্দেশটি সূরা বাকারার ২১৯ আয়াতে দেয়া হয়েছে। সেখানে কেবল একথা বলেই শেষ করা হয়েছিল যে, মদ খারাপ জিনিস। আল্লাহ‌ এটি পছন্দ করেন না। একথা বলার পর মুসলমানদের একটি দল মদ পরিহার করেছিল। কিন্তু তখনো অনেক লোক আগের মতোই মদ পান করে চলছিল। এমনকি অনেক সময় নেশায় মাতাল অবস্থায় তারা নামাযে শামিল হয়ে যেতো এবং নামাযে যা পড়ার তা ছাড়া অন্য কিছু পড়ে ফেলতো। সম্ভবত চতুর্থ হিজরীর গোড়ার দিকে এই দ্বিতীয় নির্দেশটি নাযিল হয়। এখানে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। লোকদের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তারা নিজেদের মদপানের সময় বদলে ফেলে। যখন নেশা থাকা অবস্থায় নামাযের সময় হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকতো তখন তারা মদপান থেকে বিরত থাকতো। এর কিছুকাল পরে মদপানের বিরুদ্ধে চরম নিষেধাজ্ঞা আসে। মদপান হারাম হবার এ নির্দেশটি এসেছে সূরা মায়েদার ৯০-৯১ আয়াতে। এখানে একথাও প্রণিধানযোগ্য যে, আয়াতে ‘সুকর’ এবং ‘নেশা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এ নির্দেশটি কেবল মদের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল না বরং প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুর সাথেই এর সম্পর্ক। এ নির্দেশটি আজও পুরোপুরি কার্যকর। একদিকে নেশাকর বস্তু ব্যবহার করা হারাম এবং অন্যদিকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়া দ্বিগুণ এবং আরও অনেক বড় গোনাহ।
৬৬.
এ জন্যই নবী ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন, যখন ব্যক্তির ওপর ঘুমের আক্রমণ হয় এবং নামায পড়তে গিয়ে সে বারবার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন তার নামায রেখে ঘুমিয়ে পড়া দরকার। কোন কোন লোক এই আয়াত থেকে এই মর্মে প্রমাণ পেশ করেছেন যে, যে ব্যক্তি নামাযে পঠিত আরবী ইবারতের অর্থ বোঝে না তার নামায হবে না। কিন্তু এটা আসলে একটা অযথা কাঠিন্য ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআনের শব্দাবলীও এর সমর্থন করে না। কুরআনে ‘হাত্তা তাফ্‌কাহু’ বা ‘হাত্তা তাফহামু মা তাকূলূন’ (অর্থাৎ যতক্ষণ তোমরা যা বলো তা তোমরা হৃদয়ঙ্গম না করো অথবা বুঝতে না পারো) বলা হয় নি। বরং বলা হয়েছে, ‘হাত্তা তা’লামূ মা তাকূলূন’। অর্থাৎ নামাযে এক ব্যক্তিকে এতটুকুন সজাগ থাকতে হবে যে, সে নিজের মুখে কি কথা বলছে, তা তাকে অবশ্যি জানতে হবে। সে নামায পড়তে দাঁড়িয়ে যেন গজল গাইতে শুরু না করে দেয়।
৬৭.
কুরআনে উল্লেখিত মূল শব্দ হচ্ছে, ‘জুনুবান’। এর মানে হচ্ছে, দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা। এ থেকে ‘আজনবী’ (অপরিচিত) শব্দটি বের হয়েছে। শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত অর্থ হচ্ছে, যৌন প্রয়োজন পূর্ণ করার এবং স্বপ্নের মধ্যে বীর্যপাত হবার ফলে যে, ‘নাজাসাত’ বা নাপাকী সৃষ্টি হয়। কারণ এর ফলে মানুষ তাহারাত বা পবিত্রতা শূন্য হয়ে পড়ে।
৬৮.
ফকীহ ও মুফাস্‌সিরগণের একটি দল এই আয়াতের অর্থ এভাবে গ্রহণ করেছেন যে, জুনুব (নাপাক) অবস্থায় মসজিদে না যাওয়া উচিত। তবে কোন কাজে মসজিদের মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস ইবনে মালিক, হাসান বসরী, ইবরাহীম নাখঈ প্রমুখ ফকীহগণ এই মত অবলম্বন করেছেন। অন্য এক দলের মতে এর অর্থ হচ্ছে সফর। অর্থাৎ যদি কেউ সফরে থাকে এবং এ অবস্থায় সে জুনুবী হয়ে পড়ে তাহলে তায়াম্মুম করতে পারে। আর মসজিদের ব্যাপারে তাদের মত হচ্ছে এই যে, জুনুবীর জন্য অযু করে মসজিদে বসে থাকা জায়েয। এই মত অবলম্বন করেছেন হযরত আলী, ইবনে আব্বাস, সাঈদ ইবনে জুবাইর এবং অন্যান্য কতিপয় ফকীহ। যদিও এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত যে, কোন ব্যক্তি যদি সফল অবস্থায় জুনুবী হয়ে পড়ে এবং তার পক্ষে গোসল করা সম্ভবপর না হয়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারে। কিন্তু প্রথম দলটি এ বিষয়টি গ্রহণ করে হাদীস থেকে আর দ্বিতীয় দলটি এর ভিত্তি রাখেন কুরআনের উপরোল্লিখিত আয়াতের ওপর।
৬৯.
এখানে কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে ‘লামাস’। ‘লামাস’ অর্থ স্পর্শ করা। ফকীহগণ এই ‘স্পর্শ করা’ শব্দটির অর্থ গ্রহণের ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন। হযরত আলী, ইবনে আব্বাস, আবু মূসা আশআরী, উবাই ইবনে কা’ব, সাইদ ইবনে জুবাইর, হাসান বসরী এবং বিভিন্ন ইমামদের মতে এর অর্থ হচ্ছে সহবাস। ইমাম আবু হানীফা, তাঁর শাগরিদবৃন্দ ও ইমাম সুফিয়ান সওরীও এই মতটি অবলম্বন করেছেন। এর বিপরীত মত গ্রহণ করেছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর। এছাড়াও কোন কোন রেওয়ায়াত থেকে জানা যায়, হযরত উমর ইবনে খাত্তাবেরও এই অভিমত ছিল। অর্থাৎ তিনি এর অর্থ কেবল মাত্র ‘স্পর্শ করা’ বা ‘হাত লাগানো’ নিয়েছেন। ইমাম শাফেঈও এ মতটি গ্রহণ করেছেন। আবার কোন কোন ইমাম মাঝামাঝি পথও অবলম্বন করেছেন। যেমন ইমাম মালেকের মতে, যদি নারী বা পুরুষ পরস্পরকে স্পর্শ করে যৌন আবেগ সহকারে, তাহলে তাদের অযু ভেঙে যাবে এবং নামাযের জন্য নতুন করে অযু করতে হবে। কিন্তু যৌন আবেগের তাড়না ছাড়াই যদি তাদের দেহ পরস্পরকে স্পর্শ করে তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই।
৭০.
এই নির্দেশটির বিস্তারিত অবস্থা হচ্ছে এই যে, যদি কোন ব্যক্তি অযুবিহীন অবস্থায় থাকে অথবা তার গোসলের প্রয়োজন হয় এবং পানি না পাওয়া যায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারে। যদি সে অসুস্থ হয় এবং গোসল বা অযু করলে তার জন্য ক্ষতিরআশঙ্কা থাকে, তাহলে পানি থাকা সত্ত্বেও সে তায়াম্মুমের অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

তায়াম্মুম অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা পাওয়া গেলেও তার ব্যবহার সম্ভব না হয়, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি ব্যবহার করার সংকল্প করা।

তায়াম্মুমের পদ্ধতির ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। একটি দলের মতে এর পদ্ধতি হচ্ছে, একবার মাটির ওপর দুই হাত ঘসে নিয়ে মুখ মণ্ডলের ওপর বুলিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার দুই হাত ঘসে নিয়ে তা দুই হাতের কুনই পর্যন্ত বুলিয়ে নিতে হবে। এটিই ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালেক এবং অধিকাংশ ফকীহের মাযহাব। আর সাহাবা ও তাবেঈদের মধ্যে থেকে হযরত আলী, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, হাসান বসরী, শা’বী সালেম ইবনে আবদুল্লাহ এবং আরো অনেকে এই মত পোষন করতেন। দ্বিতীয় দলের মতে, মাটিতে কেবলমাত্র একবার হাত ঘসে নেয়াই যথেষ্ট, সেই হাত মুখমণ্ডলের ওপর বুলানো যাবে এবং তারপর কব্জি পর্যন্ত দুই হাতের ওপরও বুলানো যাবে। কনুই পর্যন্ত বুলাবার প্রয়োজন হবে না। এটি আতা, মাকহূল, আওযাঈ ও আহমাদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ ফকীহগণের মাযহাব। সাধারণত আহলে হাদীসগণও এই মতের প্রবক্তা।

তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত ঘসা অপরিহার্য নয়। যে জায়গার ওপর ধূলো পড়ে আছে এবং শুকনো মাটি সম্বলিত যেকোনো জায়গায় হাত ঘসে নেয়া এজন্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে।

অনেকে প্রশ্ন করেন, এভাবে মাটিতে হাত ঘসে সেই হাত চেহারা ও হাতের ওপর বুলালে তাহারাত তথা পাক-পবিত্রতা অর্জিত হয় কিভাবে? কিন্তু আসলে এটি মানুষের মধ্যে তাহারাতের অনুভূতি এবং নামাযের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্বিক কৌশল বিশেষ। এতে যে লাভটুকু অর্জিত হয় তা হচ্ছেঃ দীর্ঘদিন পর্যন্ত পানি ব্যবহার সমর্থ্য না হলেও মানুষের মধ্যে তাহারাতের অনুভূতি জাগ্রত থাকবে। শরীয়াত পাক-পবিত্রতার যে আইন প্রবর্তন করেছে সে বরাবর তা মেনে চলবে। তার মন থেকে নামায পড়ার যোগ্য হবার অবস্থা ও নামায পড়ার যোগ্য না হবার অবস্থায় মধ্যকার পার্থক্যবোধ কখনো বিলুপ্ত হবে না।

৭১.
আহ্‌লি কিতাবদের আলেম সমাজ সম্পর্কে কুরআন অনেক ক্ষেত্রে এ বক্তব্য পেশ করেছে যে, “তাদেরকে কিতাবের জ্ঞানের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে।” এর কারণ হচ্ছে এই যে, প্রথমত তারা আল্লাহর কিতাবের একটি অংশ হারিয়ে ফেলেছিল। তারপর আল্লাহর কিতাবের যা কিছু তাদের কাছে ছিল তার প্রাণসত্তা এবং তার উদ্দেশ্য ও মূল বক্তব্য বিষয়ও তাদের কাছে অপরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাদের সমস্ত আগ্রহ কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল শাব্দিক বিতর্ক, বিধান ও নির্দেশাবলীর খুঁটিনাটি আলোচনা এবং আকীদা-বিশ্বাসের দার্শনিক জটিলতার মধ্যে। এ কারণেই তারা দ্বীনের তাৎপর্য ও সারবস্তুর সাথে অপরিচিত ছিল। তাদের মধ্যে যথার্থ দ্বীনদারীর চিহ্নমাত্রও ছিল না। অথচ তাদেরকে ধর্মীয় আলেম ও জাতির নেতা বলা হতো।
৭২.
‘যারা ইহুদী’ না বলে বলেছেন, ‘যারা ইহুদী হয়ে গেছে’। এর কারণ প্রথম তারাও মুসলমানই ছিল, যেমন প্রত্যেক নবীর উম্মাত আসলে মুসলমান হয়। কিন্তু পরে তারা কেবলমাত্র ইহুদী হয়েই রয়ে গেছে।
৭৩.
এর তিনটি অর্থ হয়। এক, তারা আল্লাহর কিতাবের শব্দের মধ্যে হেরফের করে দেয়। দুই, তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যার সাহায্যে কিতাবের আয়াতের অর্থের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন আনে। তিন, তারা মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর অনুসারীদের সাহচর্যে এসে তাদের কথা শোনে এবং সেখান থেকে ফিরে গিয়ে লোকদের সামনে তাঁদের সম্পর্কে বানোয়াট কথা বলে। একটি কথা একভাবে বলা হয় এবং তারা নিজেদের শয়তানী মনোবৃত্তি ও দুষ্টবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়ে তাকে ভিন্নরূপ দিয়ে লোকদের সামনে এনে হাজির করে। এভাবে তারা নবী ও তাঁর অনুসারীদের দুর্নাম করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ইসলামী দাওয়াত থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে।
৭৪.
অর্থাৎ তাদেরকে আল্লাহর বিধান শুনানো হলে তারা উচ্চস্বরে বলে ওঠে, “সামে’না” (আমরা শুনেছি) এবং নীচু স্বরে বলে, “আসাইনা” (আমরা অমান্য করলাম)। অথবা তারা “আতা’য়না” (আমরা আনুগত্য করলাম) শব্দটি এমনভাবে নিজেদের কণ্ঠ বাঁকিয়ে ওলটপালট করে উচ্চারণ করে যার ফলে তা “আসাইনা” (আমরা অমান্য করলাম) হয়ে যায়।
৭৫.
অর্থাৎ কথাবার্তার মাঝখানে যখন তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোন কথা বলতে চায় তখন বলে, “ইস্‌মা” (শুনুন)। আবার সাথে সাথেই বলে ওঠে, “গাইরা মুসমাঈন।” এই “গাইরা মুসমাঈন” শব্দের দুই অর্থ হতে পারে। এর একটি অর্থ হতে পারেঃ আপনি এমনি একজন সম্মানিত বুযর্গ, যাকে তার ইচ্ছা বিরোধী কোন কথা শুনানো যেতে পারে না। এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারেঃ তোমাকে কেউ কিছু শুনাবে এমন যোগ্যতা তোমার নেই। এর আর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ‌ করুন তুমি যেন বধির হয়ে যাও।
৭৬.
এর ব্যাখ্যার জন্য সূরা বাকারার ১০৮ টীকা দেখুন।
৭৭.
এর ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আলে ইমরানের ২ টীকা।
৭৮.
সূরা বাকারার ৮২ ও ৮৩ টীকা দেখুন।
৭৯.
একথা বলার কারণ হচ্ছে, এই যে, আহ্‌লি কিতাবগণ নবী ও আসমানী কিতাবের অনুসৃতির দাবী করলেও তারা শিরকের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল।
৮০.
এর অর্থ এ নয় যে, মানুষ কেবলমাত্র শিরক করবে না এবং বাদবাকি গোনাহ এন্তার করে যেতে থাকবে প্রাণ খুলে। বরং এ থেকে একথা বুঝানো হয়েছে যে, শিরকের গোনাহকে তারা মামুলি গোনাহ মনে করে এসেছে। অথচ এটিই সবচেয়ে বড় গোনাহ। এমন কি অন্য সমস্ত গোনাহ মাফ হতে পারে কিন্তু এই গোনাহটি মাফ করা হবে না। ইহুদী আলেমরা শরীয়াতের ছোট ছোট বিধি-নিষেধ পালনের ওপর বড় বেশী গুরুত্ব দিতেন। বরং তাদের সমস্ত সময় এসব ছোটখাটো বিধানের পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাইয়ে অতিবাহিত হতো। তাদের ফকীহগণ এই খুঁটিনাটি বিধানগুলো বের করেছিলেন ইজতিহাদের মাধ্যমে। কিন্তু তাদের চোখে শিরক ছিল একটি হালকা ও ছোট গোনাহ। তাই এই গোনাহটির হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা কোন প্রকার চিন্তা ও প্রচেষ্টা চালাননি। নিজেদের জাতিকে মুশরিকী কার্যকলাপ থেকে বাঁচাবার জন্য কোন উদ্যোগও তারা নেননি। মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতাও তাদের কাছে ক্ষতিকর মনে হয়নি।
অনুবাদ: