আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন্ নিসা

১৭৬ আয়াত

২১ ) আর তোমরা তা নেবেই বা কেমন করে যখন তোমরা পরস্পরের স্বাদ গ্রহণ করেছো এবং তারা তোমাদের কাছ থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছে। ৩১
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُۥ وَقَدْ أَفْضَىٰ بَعْضُكُمْ إِلَىٰ بَعْضٍۢ وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَـٰقًا غَلِيظًۭا ٢١
২২ ) আর তোমাদের পিতা যেসব স্ত্রীলোককে বিয়ে করেছে, তাদেরকে কোনোক্রমেই বিয়ে করো না। তবে আগে যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। ৩২ আসলে এটা একটা নির্লজ্জতাপ্রসূত কাজ, অপছন্দনীয় ও নিকৃষ্ট আচরণ। ৩৩
وَلَا تَنكِحُوا۟ مَا نَكَحَ ءَابَآؤُكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ فَـٰحِشَةًۭ وَمَقْتًۭا وَسَآءَ سَبِيلًا ٢٢
২৩ ) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, ৩৪ কন্যা, ৩৫ বোন, ৩৬ ফুফু, খালা, ভাতিজি, ভাগিনী ৩৭ ও তোমাদের সেই সমস্ত মাকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে এবং তোমাদের দুধ বোন ৩৮ তোমাদের স্ত্রীদের মা ৩৯ ও তোমাদের স্ত্রীদের মেয়েদেরকে যারা তোমাদের কোলে মানুষ হয়েছে, ৪০ -সেই সমস্ত স্ত্রীদের মেয়েদেরকে যাদের সাথে তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অন্যথায় যদি (শুধুমাত্র বিয়ে হয় এবং) স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে (তাদেরকে বাদ দিয়ে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করলে) তোমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না,-এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকেও। ৪১ আর দুই বোনকে একসাথে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। ৪২ তবে যা প্রথমে হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ৪৩
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَـٰتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَٰتُكُمْ وَعَمَّـٰتُكُمْ وَخَـٰلَـٰتُكُمْ وَبَنَاتُ ٱلْأَخِ وَبَنَاتُ ٱلْأُخْتِ وَأُمَّهَـٰتُكُمُ ٱلَّـٰتِىٓ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَٰتُكُم مِّنَ ٱلرَّضَـٰعَةِ وَأُمَّهَـٰتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَـٰٓئِبُكُمُ ٱلَّـٰتِى فِى حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ ٱلَّـٰتِى دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا۟ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَـٰٓئِلُ أَبْنَآئِكُمُ ٱلَّذِينَ مِنْ أَصْلَـٰبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا۟ بَيْنَ ٱلْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا ٢٣
২৪ ) আর (যুদ্ধের মাধ্যমে) তোমাদের অধিকারভুক্ত হয়েছে এমন সব মেয়ে ছাড়া বাকি সমস্ত সধবাই তোমাদের জন্য হারাম। ৪৪ এ হচ্ছে আল্লাহর আইন। এ আইন মেনে চলা তোমাদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করা হয়েছে। এদের ছাড়া বাদ বাকি সমস্ত মহিলাকে অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে লাভ করা তোমাদের জন্য হালাল গণ্য করা হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে, অবাধ যৌন লালসা তৃপ্ত করতে পারবে না। তারপর যে দাম্পত্য জীবনের স্বাদ তোমরা তাদের মাধ্যমে গ্রহণ করো, তার বদলে তাদের মোহরানা ফরয হিসেবে আদায় করো। তবে মোহরানার চুক্তি হয়ে যাবার পর পারস্পরিক রেজামন্দির মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে যদি কোন সমঝোতা হয়ে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ‌ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানী।
۞ وَٱلْمُحْصَنَـٰتُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ ۖ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَآءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا۟ بِأَمْوَٰلِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَـٰفِحِينَ ۚ فَمَا ٱسْتَمْتَعْتُم بِهِۦ مِنْهُنَّ فَـَٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةًۭ ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَٰضَيْتُم بِهِۦ مِنۢ بَعْدِ ٱلْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًۭا ٢٤
২৫ ) আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির সম্ভ্রান্ত পরিবারের মুসলিম মেয়েদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তার তোমাদের অধিকারভুক্ত মুমিন দাসীদের মধ্য থেকে কাউকে বিয়ে করে নেয়া উচিত। আল্লাহ‌ তোমাদের ঈমানের অবস্থা খুব ভালোভাবেই জানেন। তোমরা সবাই একই দলের অন্তর্ভুক্ত। ৪৫ কাজেই তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিয়ে করো এবং প্রচলিত তাদের মোহরানা আদায় করো, যাতে তারা বিয়ের আবেষ্টনীর মধ্যে সংরক্ষিত থাকে, অবাধ যৌন লালসা পরিতৃপ্ত করতে উদ্যোগী না হয় এবং লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম না করে বেড়াই। তারপর যখন তারা বিয়ের আবেষ্টনীর মধ্যে সংরক্ষিত হয়ে যায় এবং এরপর কোন ব্যভিচার করে তখন তাদের জন্য সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের জন্য নির্ধারিত শাস্তির অর্ধেক শাস্তি দিতে হবে। ৪৬ তোমাদের মধ্য থেকে সেইসব লোকের জন্য এ সুবিধা ৪৭ সৃষ্টি করা হয়েছে, যাদের বিয়ে না করলে তাকওয়া বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সবর করলে তা তোমাদের জন্য ভালো। আর আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنكُمْ طَوْلًا أَن يَنكِحَ ٱلْمُحْصَنَـٰتِ ٱلْمُؤْمِنَـٰتِ فَمِن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُم مِّن فَتَيَـٰتِكُمُ ٱلْمُؤْمِنَـٰتِ ۚ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَـٰنِكُم ۚ بَعْضُكُم مِّنۢ بَعْضٍۢ ۚ فَٱنكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَءَاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِٱلْمَعْرُوفِ مُحْصَنَـٰتٍ غَيْرَ مُسَـٰفِحَـٰتٍۢ وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخْدَانٍۢ ۚ فَإِذَآ أُحْصِنَّ فَإِنْ أَتَيْنَ بِفَـٰحِشَةٍۢ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى ٱلْمُحْصَنَـٰتِ مِنَ ٱلْعَذَابِ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِىَ ٱلْعَنَتَ مِنكُمْ ۚ وَأَن تَصْبِرُوا۟ خَيْرٌۭ لَّكُمْ ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٢٥
২৬ ) তোমাদের আগে যেসব সৎলোক চলে গেছে, তারা যেসব পদ্ধতির অনুসরণ করতো, আল্লাহ‌ তোমাদের সামনে সেই পদ্ধতিগুলো সুস্পষ্ট করে দিতে এবং সেই সব পদ্ধতিতে তোমাদের চালাতে চান। তিনি নিজের রহমত সহকারে তোমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে চান। আর তিনি সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময়। ৪৮
يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ وَيَتُوبَ عَلَيْكُمْ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ ٢٦
২৭ ) হ্যাঁ, আল্লাহ‌ তো রহমত সহকারে তোমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে চান। কিন্তু যারা নিজেদের প্রবৃত্তির লালসার অনুসরণ করছে তারা চায় তোমরা ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে দূরে চলে যাও। ৪৯
وَٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيْكُمْ وَيُرِيدُ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلشَّهَوَٰتِ أَن تَمِيلُوا۟ مَيْلًا عَظِيمًۭا ٢٧
২৮ ) আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ হাল্‌কা করতে চান। কারণ মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।
يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمْ ۚ وَخُلِقَ ٱلْإِنسَـٰنُ ضَعِيفًۭا ٢٨
২৯ ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না। লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক রেজামন্দির ভিত্তিতে। ৫০ আর নিজেকে হত্যা করো না। ৫১ নিশ্চিত জানো, আল্লাহ‌ তোমাদের প্রতি মেহেরবান। ৫২
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأْكُلُوٓا۟ أَمْوَٰلَكُم بَيْنَكُم بِٱلْبَـٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَـٰرَةً عَن تَرَاضٍۢ مِّنكُمْ ۚ وَلَا تَقْتُلُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًۭا ٢٩
৩০ ) যে ব্যক্তি জুলুম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি করে এমনটি করবে তাকে আমি অবশ্যি আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়।
وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ عُدْوَٰنًۭا وَظُلْمًۭا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَارًۭا ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا ٣٠
৩১.
পাকাপোক্ত অঙ্গীকার অর্থ বিয়ে। কারণ এটি আসলে বিশ্বস্ততার একটি মজবুত ও শক্তিশালী অঙ্গীকার ও চুক্তি এবং এরই স্থিতিশীলতা ও মজবুতীর ওপর ভরসা করেই একটি মেয়ে নিজেকে একটি পুরুষের হাতে সোপর্দ করে দেয়। এখন পুরুষটি যদি নিজের ইচ্ছায় এ অঙ্গীকার ও চুক্তি ভঙ্গ করে তাহলে চুক্তি করার সময় সে যে বিনিময় পেশ করেছিল তা ফিরিয়ে নেবার অধিকার তার থাকে না। (সূরা বাকারার ২৫১ টীকাটিও দেখুন।)
৩২.
সামাজিক ও তামাদ্দুনিক সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে জাহেলিয়াতের ভ্রান্ত পদ্ধতিগুলোকে হারাম গণ্য করে সাধারণভাবে কুরআন মজীদে অবশ্যি একথা বলা হয়ে থাকেঃ “যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে।” এর দু’টি অর্থ হয়। এক, অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার যুগে তোমরা যে সমস্ত ভুল করেছো, সেগুলো পাকাড়াও করা হবে না। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে এই যে, এখন যথার্থ নির্দেশ এসে যাবার পর তোমরা নিজেদের কার্যকলাপ সংশোধন করে নাও এবং ভুল ও অন্যায় কাজগুলো পরিহার করো, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করো না। দুই, আগের যুগের কোন পদ্ধতিকে যদি এখন হারাম গণ্য করা হয়ে থাকে, তাহলে তা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সঠিক হবে না যে, আগের আইন বা রীতি অনুযায়ী যে কাজ ইতিপূর্বে করা হয়েছে তাকে নাকচ করে দিয়ে তা থেকে উদ্ভূত ফলাফলকে অবৈধ ও তার ফলে যে দায়িত্ব মাথায় চেপে বসেছে তাকে অনিবার্যভাবে রহিত করা হচ্ছে। যেমন এখন বিমাতাকে বিয়ে করা হারাম গণ্য করা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, এ পর্যন্ত যত লোক এ ধরনের বিয়ে করেছে, তাদের গর্ভজাত সন্তানদেরকে জারজ গণ্য করা হচ্ছে এবং নিজেদের পিতার সম্পদ সম্পত্তিতে তাদের উত্তরাধিকার রহিত করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে যদি লেনদেনের কোন পদ্ধতিকে হারাম গণ্য করা হয়ে থাকে, তাহলে তার অর্থ এ নয় যে, এ পদ্ধতিতে এর আগে যতগুলো লেনদেন হয়েছে, সব বাতিল গণ্য হয়েছে এবং এখন এভাবে কোন ব্যক্তি যে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে তা তার থেকে ফেরত নেয়া হবে অথবা ঐ সম্পদকে হারাম গণ্য করা হবে।
৩৩.
ইসলামী আইন মোতাবিক এ কাজটি একটি ফৌজদারী অপরাধ এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখেন। আবু দাউদ, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ এই অপরাধকারীদেরকে মৃত্যুদণ্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার শাস্তি দিয়েছেন। আর ইবনে মাজাহ ইবনে আব্বাস থেকে যে রেয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন তা, থেকে জানা যায় নবী ﷺ এ ব্যাপারে এই সাধারণ নির্দেশটি বর্ণনা করেছিলেনঃ

مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ

“যে ব্যক্তি মুহরিম আত্মীয়ের মধ্য থেকে কারো সাথে যিনা করে তাকে হত্যা করো।”

ফিকাহবিদদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আহমাদের মতে এহেন ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে এবং তার ধন-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈর মতে যদি সে কোন মুহরিম আত্মীয়ার সাথে যিনা করে থাকে, তাহলে তাকে যিনার শাস্তি দেয়া হবে আর যদি বিয়ে করে থাকে, তাহলে তাকে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

৩৪.
মা বলতে আপন মা ও বিমাতা উভয়ই বুঝায়। তাই উভয়ই হারাম এছাড়া বাপের মা ও মায়ের মা-ও এ হারামের অন্তর্ভুক্ত।

যে মহিলার সাথে বাপের অবৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে সে পুত্রের জন্য হারাম কিনা এ ব্যাপার মতবিরোধ রয়েছে। প্রথম যুগের কোন কোন ফকীহ একে হারাম বলেন না। আর কেউ কেউ হারাম বলেছেন। বরং তাদের মতে, বাপ যৌন কামনা সহ যে মহিলার গা স্পর্শ করেছে সে-ও পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে যে মহিলার সাথে পুত্রের অবৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, সে বাপের জন্য হারাম কিনা এবং যে পুরুষের সাথে মা বা মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিল অথবা পরে হয়ে যায়, তার সাথে বিয়ে করা মা ও মেয়ে উভয়ের জন্য হারাম কিনা, এ ব্যাপারেও প্রথম যুগের ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফকীহদের আলোচনা অত্যন্ত দীর্ঘ। তবে সামান্য চিন্তা করলে একথা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে,কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন স্ত্রীলোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, যার ওপর তার পিতার বা পুত্রেরও নজর থাকে অথবা যার মা বা মেয়ের ওপরও তার নজর থাকে, তাহলে এটাকে কখনো সুস্থ ও সৎ সামাজিকতার উপযোগী বলা যেতে পারে না। যে সমস্ত আইনগত চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিবাহ ও অবিবাহ, বিবাহ পূর্ব ও বিবাহ পরবর্তী এবং স্পর্শ ও দৃষ্টিপাত ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য করা হয়, কিন্তু আল্লাহর শরীয়াতের স্বাভাবিক প্রকৃতি তা মেনে নিতে মোটেই প্রস্তুত নয়। সোজা কথায় পারিবারিক জীবনে একই স্ত্রীলোকের সাথে বাপ ও ছেলে অথবা একই পুরুষের সাথে মা ও মেয়ের যৌন সম্পর্ক কঠিন বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ এবং শরীয়াত একে কোনক্রমেই বরদাশ্‌ত করতে পারে না। নবী ﷺ বলেনঃ

مَن نَظَرَ اِلَى فَرجِ امرَأَةٍ حُرِّمَتْ عَلَيْهِ اُمَّهَا وَاِبنَتُهَا

“যে ব্যক্তি কোন মেয়ের যৌন অংগের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তার মা ও মেয়ে উভয়ই তার জন্য হারাম হয়ে যায়।”

তিনি আরো বলেনঃلَايَنظُرُ الله اِلَى رَجُلٍنَظَرَ اِلَى فَرجِ امرَأَةٍوَاِبنَتُهَا

“আল্লাহ সেই ব্যক্তির চেহারা দেখাই পছন্দ করেন না, যে একই সময় মা ও মেয়ে উভয়ের যৌনাংগে দৃষ্টিপাত করে।”

এ হাদীসগুলো থেকে শরীয়াতের উদ্দেশ্য দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

৩৫.
নাতনী ও দৌহিত্রীও কন্যার অন্তর্ভুক্ত। তবে অবৈধ সম্পর্কের ফলে যে মেয়ের জন্ম হয় সেও হারাম কিনা, এ ব্যাপারে অবশ্যি মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু হানীফা (র), ইমাম মালেক (রা.) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের (র) মতে সেও বৈধ কন্যার মতোই মুহরিম। অন্যদিকে ইমাম শাফেঈর (র) মতে সে মুহরিম নয় অর্থাৎ তাকে বিয়ে করা যায়; কিন্তু আসলে যে মেয়েটিকে সে নিজে তার নিজেরই ঔরসজাত বলে জানে, তাকে বিয়ে করা তার জন্য বৈধ, এ চিন্তাটিও সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ বিবেককে ভারাক্রান্ত করে।
৩৬.
সহোদর বোন, মা-শরীক বোন ও বাপ-শরীক বোন-তিন জনই সমানভাবে এ নির্দেশের আওতাধীন।
৩৭.
এ সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেও সহোদয় ও বৈমাত্রের বৈপিত্রেয়ের-ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। বাপ ও মায়ের বোন সহোদর, মা-শরীক বা বাপ-শরীক যে পর্যায়েরই হোক না কেন তারা অবশ্যি পুত্রের জন্য হারাম। অনুরূপভাবে ভাই ও বোন সহোদর, মা-শরীক বা বাপ-শরীক যে কোন পর্যায়েরই হোক না কেন তাদের কন্যারা নিজের কন্যার মতই হারাম।
৩৮.
সমগ্র উম্মাতে মুসলিমা ও ব্যাপারে একমত যে, একটি ছেলে বা মেয়ে যে স্ত্রীলোকদের দুধ পান করে তার জন্য ঐ স্ত্রীলোকটি মায়ের পর্যায়ভুক্ত ও তার স্বামী বাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায় এবং আসল মা ও বাপের সম্পর্কের কারণে যে সমস্ত আত্মীয়তা হারাম হয়ে যায় দুধ-মা ও দুধ-বাপের সম্পর্কের কারণেও সেসব আত্মীয়তাও তার জন্য হারাম হয়ে যায়। এ বিধানটির উৎসমূলে রয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নির্দেশটিঃ

يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ مَا يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ

“বংশ ও রক্ত সম্পর্কের দিক দিয়ে যা হারাম দুধ সম্পর্কের দিক দিয়েও তা হারাম।”

তবে কি পরিমাণ দুধ পানে দুধ সম্পর্কের দিক দিয়ে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায় সে ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালেকের মতে যে পরিমাণ দুধ পান করলে একজন রোযাদারের রোযা ভেঙে যেতে পারে কোন স্ত্রীলোকের সেই পরিমাণ দুধ যদি শিশু পান করে, তাহলে হারামের বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম আহমাদের মতে তিনবার পান করলে এবং ইমাম শাফেঈর মতে পাঁচ বার পান করলে এ হারামের বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কোন্ বয়সে দুধ পান করলে বিবাহ সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় সে ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে ফকীহগণ নিম্নোক্ত মত পোষণ করেন।

একঃ শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের যে স্বাভাবিক বয়স কাল, যখন তার দুধ ছাড়ানো হয় না এবং দুধকেই তার খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয়, সেই সময়ের মধ্যে কোন মহিলার দুধ পান করলে বিবাহ সম্পর্ক হারাম হয়ে যায়। নয়তো দুধ ছাড়ানোর পর কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করলে, তা পানি পান করারই পর্যায়ভুক্ত হয়। উম্মে সালমা (রা.) ও ইবনে আব্বাস (রা.) এ মত পোষন করেছেন। হযরত আলী (রা.) থেকেও এই অর্থে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। যুহ্‌রী, হাসান বসরী কাতাদাহ, ইকরামাহ ও আওযাঈও এ মত পোষণ করেন।

দুইঃ শিশুর দুই বছর বয়স কালের মধ্যে যে দুধ পান করানো হয় কেবল মাত্র তা থেকেই দুধ সম্পর্ক প্রমাণিত হয়। এটি হযরত উমর (রা.), ইবনে মাসউদ (রা.), আবু হুরাইয়া (রা.) ও ইবনে উমরের (রা.) মত। ফকীহগণের মধ্যে ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ও সুফিয়ান সাওরী এই মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানীফারও একটি অভিমত এরই সপক্ষে ব্যক্ত হয়েছে। ইমাম মালিকও এই মতের সমর্থন করেন। কিন্তু তিনি বলেনঃ দু’বছর থেকে যদি এক মাস দু’মাস বেশী হয়ে যায় তাহলে তার ওপরও ঐ দুধ পানের সময় কালের বিধান কার্যকর হবে।

তিনঃ ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম যুফারের বিখ্যাত অভিমত হচ্ছে, দুধপানের মেয়াদ আড়াই বছর এবং এই সময়ের মধ্যে কোন স্ত্রীলোকের দুধ পান করলে দুধ-সম্পর্ক প্রমাণিত হবে।

চারঃ যে কোন বয়সে দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে বয়স নয়, দুধই আসল বিষয়। পানকারী বৃদ্ধ হলেও দুধ পানকারী শিশুর জন্য যে বিধান তার জন্যও সেই একই বিধান জারী হবে। হযরত আয়েশা (রা.) এ মত পোষন করেন। হযরত আলী (রা.) থেকেই এরই সমর্থনে অপেক্ষাকৃত নির্ভুল অভিমত বর্ণিত হয়েছে। ফকীহদের মধ্যে উরওয়াহ ইবনে যুবাইর, আতা ইবনে রিবাহ, লাইস ইবনে সা’দ ও ইবনে হাযম এই মত অবলম্বন করেছেন।

৩৯.
যে মহিলার সাথে শুধু মাত্র বিয়ে হয়েছে তার মা হারাম কি না এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ রাহেমাহুমুল্লাহু তার হারাম হওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে হযরত আলীর (রা.) মতে কোন মহিলার সাথে একান্তে অবস্থান না করা পর্যন্ত তার মা হারাম হবে না।
৪০.
সৎ-বাপের ঘরে লালিত হওয়াই এই ধরনের মেয়ের হারাম হওয়ার জন্য শর্ত নয়। মহান আল্লাহ‌ নিছক এই সম্পর্কটির নাজুকতা বর্ণনা করার জন্য এ শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন। এ ব্যাপারে মুসলিম ফকীহগণের প্রায় ‘ইজমা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে যে, সৎ-মেয়ে সৎ-বাপের ঘরের লালিত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায়ই সে সৎ-বাপের জন্য হারাম।
৪১.
এই শর্তটি কেবলমাত্র এ জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে যে,কোন ব্যক্তি যাকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে, তার বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম নয়। কেবল মাত্র নিজের ঔরস জাত পুত্রের স্ত্রীই বাপের জন্য হারাম। এভাবে পুত্রের ন্যায় প্রপুত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীও দাদা ও নানার জন্য হারাম।
৪২.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ, খালা ও ভাগিনী এবং ফুফু ও ভাইঝিকেও এক সাথে বিয়ে করা হারাম। এ ব্যাপারে একটা মূলনীতি মনে রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, এমন ধরনের দু’টি মেয়েকে একত্রে বিয়ে করা হারাম যাদের একজন যদি পুরুষ হতো তাহলে অন্য জনের সাথে তার বিয়ে হারাম হতো।
৪৩.
অর্থাৎ জাহেলী যুগে তোমরা জুলুম করতে। দুই বোনকে এক সাথে বিয়ে করতে। সে ব্যাপারে আর জবাবদিহি করতে হবে না। তবে শর্ত হচ্ছে, এখন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। (টীকা ৩২ দেখুন) এরই ভিত্তিতে এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, যে ব্যক্তি কুফরীর যুগে দুই সহোদর বোনকে বিয়ে করেছিল তাকে এখন ইসলাম গ্রহণ করার পর এক জনকে রাখতে ও অন্য জনকে ছেড়ে দিতে হবে।
৪৪.
অর্থাৎ যেসব মেয়ে যুদ্ধ বন্দিনী হয়ে এসেছে এবং তাদের স্বামীরা দারুল হার্‌বে (ইসলাম বিরোধী ও ইসলামের শত্রুদের শাসিত দেশ) রয়ে গেছে তারা হারাম নয়। কারণ দারুল হার্‌ব থেকে দারুল ইসলামে আসার পর তাদের বিয়ে ভেঙে গেছে। এই ধরনের মেয়েদের বিয়েও করা যায় আবার যাদের মালিকানায় তারা আছে তারা তাদের সাথে সঙ্গমও করতে পারে। তবে স্বামী-স্ত্রী যদি একই সাথে বন্দী হয়ে আসে, তাহলে এক্ষেত্রে কোন্ ধরনের বিধান গৃহীত হবে, এ ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যে মতবিরোধ আছে। ইমাম্ আবু হানীফা ও তাঁর সাথীগণের মতে, তাদের বিয়ে অপরিবর্তিত থাকবে। অন্যদিকে ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈর মতে তাদের বিয়ে অটুট থাকবে না।

যুদ্ধ বন্দিনী দাসীদের সাথে সঙ্গম করার ব্যাপারে বহু রকমের বিভ্রান্তি লোকদের মধ্যে পাওয়া যায়। তাই এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভালো করে বুঝে নেয়া দরকার।

একঃ যে সমস্ত মেয়ে যুদ্ধে বন্দী হয়, তাদেরকে বন্দী করার সাথে সাথেই যে কোন সৈনিক তাদের সাথে সঙ্গম করার অধিকার লাভ করে না। বরং ইসলামী আইন অনুযায়ী এই ধরনের মেয়েদেরকে সরকারের হাতে সোপর্দ করে দেয়া হবে। সরকার চাইলে তাদেরকে বিনা শর্তে মুক্ত করে দিতে পারে, তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করতে পারে, শত্রুর হাতে যেসব মুসলমান বন্দী হয়েছে তাদের সাথে এদের বিনিময়ও করতে পারে এবং চাইলে তাদেরকে সৈন্যদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেও পারে। এ ব্যাপারে সরকারের পূর্ণ ইখতিয়ার রয়েছে। একজন সৈনিক কেবলমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যে যুদ্ধ বন্দিনীটি দেয়া হয় তার সাথেই সঙ্গম করতে পারে।

দুইঃ যে মেয়েটিকে এভাবে কারো মালিকানায় দেয়া হয়, যতক্ষণ না তার একবার মাসিক ঋতুস্রাব হয় এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে, সে গর্ভবতী নয় ততক্ষণ তার সাথে সঙ্গম করা যেতে পারে না। এর আগে তার সাথে সঙ্গম করা হারাম। আর যদি সে গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগেও তার সাথে সঙ্গম করা অবৈধ।

তিনঃ যুদ্ধ বন্দিনীদের সাথে সঙ্গম করার ব্যাপারে তাদের অবশ্যি আহ্‌লি কিতাব হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন, যাদের মধ্যে তাদেরকে ভাগ করে দেয়া হবে তারা তাদের সাথে সঙ্গম করতে পারবে।

চারঃ যে মেয়েকে যার ভাগে দেয়া হবে একমাত্র সেই তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে। অন্য কারো তার গায়ে হাত দেবার অধিকার নেই। সেই মেয়ের গর্ভে যে সন্তান জন্মাবে সে তার মালিকের বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে। শরীয়াতে আপন ঔরসজাত সন্তানের যে অধিকার নির্ধারিত হয়েছে এই সন্তানের আইনগত অধিকারও তাই হবে। সন্তানের জননী হয়ে যাবার পর এই মেয়েকে আর বিক্রি করা যাবে না এবং মালিক মরে যাওয়ার সাথে সাথেই সে মুক্ত হয়ে যাবে।

পাঁচঃ যে মেয়েটি এভাবে কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন হয়, তাকে তার মালিক যদি দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে মালিক তার থেকে অন্য সমস্ত খেদমত নিতে পারবে কিন্তু তার সাথে যৌন সম্পর্ক রাখার অধিকার তার থাকবে না।

ছয়ঃ শরীয়াত স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে যেমন চারজনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, দাসীদের ব্যাপারে তেমন কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়নি। ধনী লোকেরা বেশুমার বাঁদী কিনে কিনে মহল ভরে ফেলবে এবং বিলাসিতার সাগরে গা ভাসিয়ে দেবে, এটা শরীয়াতের উদ্দেশ্য ছিল ন। বরং আসলে যুদ্ধের অনিশ্চিত অবস্থাই ছিল এ ব্যাপারে সীমা নির্ধারণ না করার মূলীভূত কারন।

সাতঃ সরকার আইনগতভাবে কোন ব্যক্তিকে যুদ্ধবন্দীদের ওপর যে মালিকানা অধিকার দান করেছে মালিকানার অন্যান্য অধিকারের ন্যায় এটিও স্থানান্তর যোগ্য।

আটঃ বিয়ে যেমন একটি আইনসঙ্গত কাজ তেমনি সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে যথারীতি মালিকানা অধিকার দান করাও একটি আইনসঙ্গত কাজ। কাজেই যে ব্যক্তি বিয়ের মধ্যে কোনো প্রকার অন্যায় ও অপ্রীতির ব্যাপার দেখে না, তার ক্রীতদাসীর সাথে সঙ্গম করার মধ্যে খামাখা কোন অন্যায় ও অপ্রীতিকর বিষয় অনুভব করার পেছনে কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ নেই।

নয়ঃ যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে থেকে কোন মেয়েকে কারো মালিকানায় দিয়ে দেবার পর পুনর্বার সরকার তাকে ফেরত নেবার অধিকার রাখে না, ঠিক যেমন কোন মেয়ের অভিভাবক তাকে কারো সাথে বিয়ে দেবার পর আবার তাকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার হারিয়ে ফেলে।

দশঃ কোন সেনাপতি যদি নিছক সাময়িকভাবে তার সৈন্যদেরকে বন্দিনী মেয়েদের মাধ্যমে নিজেদের যৌন তৃষ্ণা মিটাবার অনুমতি দেয় এবং তাদেরকে সৈন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেয়, তাহলে ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে এটা হবে সম্পূর্ণ একটি অবৈধ কাজ। যিনার সাথে এর কোন পার্থক্য নেই। আর যিনা ইসলামী আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। (বিস্তারিত জানার জন্য আমার ‘তাফহীমাত’ ২য় খণ্ড ও ‘রাসায়েল ও মাসায়েল’ ১ম খণ্ড দেখুন।)

৪৫.
অর্থাৎ সমাজ জীবনে মানুষের মধ্যে মর্যাদার যে পার্থক্য দেখা যায় তা নিছক আপেক্ষিক। নয়তো আসলে সব মুসলমান সমান। তাদের মধ্যে যথার্থই পার্থক্য করার মত যদি কোন বিষয় থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান কোন উঁচু ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়। একজন ক্রীতদাসীও ঈমান ও নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে একজন সম্ভ্রান্ত মহিলার চাইতেও ভালো হতে পারে।
৪৬.
আপাত দৃষ্টিতে এখানে একটি জটিলতা দেখা দেয়। খারেজী ও ‌‘রজম’ তথা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুর শাস্তি অস্বীকারকারী অন্যান্য লোকেরা এ থেকে সুযোগ গ্রহণ করেছে। তারা বলেঃ স্বাধীন বিবাহিতা মেয়েদের যিনার শাস্তি ইসলামী শরীয়াতে যদি ‘রজম’ হয়ে থাকে, তাহলে এর অর্ধেক শাস্তি যা ক্রীতদাসীদেরকে দেয়া হবে, তা কি হতে পারে? কাজেই এই আয়াত একথার চূড়ান্ত সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, ইসলামে রজমের শাস্তিই নেই। কিন্তু তারা আসলে কুরআনের শব্দাবলীর ওপর গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করেনি। এই রুকূ’তে ‘মুহসানাত’ (সংরক্ষিত মহিলা) শব্দটি দু’টি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একটি হচ্ছে, “বিবাহিতা মহিলা”, যারা স্বামীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা লাভ করে এবং অন্যটি “সম্ভ্রান্ত মহিলা”, যারা বিবাহিতা না হলেও পরিবারের সংরক্ষণ লাভ করে। আলোচ্য আয়াতে ‘মুহসানাত’ শব্দটি ক্রীতদাসীর মোকাবিলায় সম্ভ্রান্ত মহিলাদের জন্য দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, প্রথম অর্থে নয়। আয়াতে উল্লেখিত বিষয়বস্তু থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে, বিপরীতপক্ষে ক্রীতদাসীদের জন্য ‘মুহসানাত’ শব্দটি প্রথম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যখন তারা বিয়ের সংরক্ষণ ব্যবস্থা লাভ করবে। (فاذا احصن) কেবলমাত্র তখনই তাদের জন্য যিনা করলে উল্লেখিত শাস্তির ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। এখন গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলে একথা একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সম্ভ্রান্ত মহিলারা দু’টি সংরক্ষণ ব্যবস্থা লাভ করে। একটি হচ্ছে, পরিবারের সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এর কারণে তারা বিবাহিতা না হয়েও ‘মুহসিনা’ অর্থাৎ সংরক্ষিত হয়ে যায়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, স্বামীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এর ফলে তারা পরিবারের সংরক্ষণের ওপর আর একটা বাড়তি সংরক্ষণ ব্যবস্থা লাভ করে। বিপরীত পক্ষে ক্রীতদাসী যতদিন ক্রীতদাসী অবস্থায় থাকে ততদিন সে ‘মুহসিনা’ নয়। কারণ সে কোন পরিবারের সংরক্ষণ ব্যবস্থা লাভ করেনি। তবে হ্যাঁ, বিয়ে হবার পর সে কেবল স্বামীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা লাভ করে এবং তাও অসম্পূর্ণ। কারণ স্বামীর সংরক্ষণ ব্যবস্থার আওতায় আসার পরও তারা মালিকের সেবা ও চাকরী থেকে মুক্তি লাভ করেনা এবং সম্ভ্রান্ত মহিলারা সমাজে যে মর্যাদা লাভ সে ধরনের মর্যাদাও তারা লাভ করেনা। কাজেই তাদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে তা হবে সম্ভ্রান্ত পরিবারের অবিবাহিতা মেয়েদের শাস্তির অর্ধাংশ, সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিবাহিতা মেয়েদের শাস্তির অর্ধাংশ নয়। এছাড়াও এখান থেকে একথাও জানা গেছে যে, সূরা নূর-এর আয়াতে কেবলমাত্র অবিবাহিতা সম্ভ্রান্ত মহিলাদের যিনার শাস্তির কথা উল্লেখিত হয়েছে এবং এর মোকাবিলায় এখানে বিবাহিতা ক্রীতদাসীদের শাস্তি অর্ধেক বলা হয়েছে। আর বিবাহিতা সম্ভ্রান্ত মহিলারা তো অবিবাহিতা সম্ভ্রান্ত মহিলাদের তুলনায় কঠিন শাস্তি লাভের যোগ্য। কারণ তারা দু’টি সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে। যদিও কুরআন তাদের ব্যাপারে রজমের শাস্তির বিধান সুস্পষ্ট করেনি তবুও অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সেদিকে ইঙ্গিত করেছে। এ বিষয়টি স্থুল বুদ্ধির লোকদের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যেতে পারে কিন্তু নবীর সূক্ষ্ম ও সুতীক্ষ্ম অন্তরালে থাকা তার পক্ষে সম্ভবপর ছিল না।
৪৭.
অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে কোন ক্রীতদাসীর মালিকের অনুমতিক্রমে তাকে বিয়ে করার সুবিধা।
৪৮.
সূরার শুরু থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত যে নির্দেশ ও বিধান দেয়া হয়েছে এবং এই সূরা নাযিলের পূর্বে সূরা বাকারায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সমস্যাবলী সমাধানের জন্য যে বিধান দেয়া হয়েছিল সেসবের দিকে সামগ্রিকভাবে একটি ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে, মানব সভ্যতার প্রাচীনতম যুগ থেকে প্রতি যুগের নবীগণ ও তাঁদের সৎ ও সত্যনিষ্ঠ অনুসারীগণ সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার এই আইনগুলো কার্যকর করে এসেছেন। আল্লাহ‌ তাঁর অসীম অনুগ্রহের বদৌলতে তোমাদেরকে জাহেলীয়াতের অবস্থা থেকে বের করে সৎ ও সত্যনিষ্ঠ লোকদের জীবনধারার দিকে পরিচালিত করেছেন।
৪৯.
এখানে মুনাফিক, রক্ষণশীল ও প্রাচীন পন্থী মূর্খ এবং মদীনার উপকণ্ঠের ইহুদীদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সমাজ ও সংস্কৃতিতে শত শত বছরের পুঞ্জীভূত জাহেলী বংশ ও গোত্রপ্রীতি এবং রসম-রেওয়াজের বিরুদ্ধে যে সংস্কার অভিযান চলছিল মুনাফিক ও রক্ষণশীলদের কাছে তা ছিল অত্যন্ত অপ্রীতিকর। তারা এটাকে কোনক্রমেই বরদাশত করতে পারছিল না। মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে মেয়েদের অংশ লাভ, শ্বশুর বাড়ির বাঁধন থেকে বিধবাদের মুক্তি পাওয়া এবং ইদ্দত শেষ হবার পর যেকোন ব্যক্তিকে বিয়ে করার ব্যাপারে তাদের স্বাধীন ক্ষমতা লাভ, সৎ-মাকে বিয়ে করা হারাম হওয়া দুই বোনকে একই সাথে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করাকে অবৈধ গণ্য করা, পালকপুত্রকে বিয়ে করা হালাল গণ্য করা এবং এই ধরনের আরো অনেক সংস্কারমূলক কার্যাবলীর প্রত্যেকটির ওপর বয়োবৃদ্ধ ও বাপ-দাদার রীতি-রেওয়াজের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিরা চীৎকার করে উঠছিল। দীর্ঘদিন থেকে এই বিধানগুলোর বিরুদ্ধে নানান কথাবার্তা চলছিল। দুষ্ট লোকেরা নবী ﷺ ও তাঁর সংস্কারমূলক দাওয়াতের বিরুদ্ধে এই বিরূপ কথাগুলো ব্যবহার করে লোকদেরকে উত্তেজিত করে চলছিল। যেমন, ইসলামী শরীয়াত যে ধরনের বিয়েকে হারাম গণ্য করছিল তেমনি ধরনের কোন বিয়ের ফলে ইতিপূর্বে যে ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল তাকে এই বলে উত্তেজিত করা হচ্ছিলঃ “নিন জনাব, আজ যে নতুন বিধান ওখানে এসেছে তার দৃষ্টিতে তো আপনার বাপ ও মায়ের সম্পর্ক অবৈধ গণ্য হয়েছে।” এভাবে সেখানে আল্লাহর বিধানের আওতায় যে সংস্কারমূলক কাজ হচ্ছিল এই নির্বোধ লোকেরা তার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল।

অন্যদিকে ছিল ইহুদীরা। শত শত বছরের অপ্রয়োজনীয় সূক্ষ্ম শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা আল্লাহর শরীয়াতের গায়ে নিজেদের মনগড়া আইন-বিধানের একটি মোটা চামড়া জড়িয়ে দিয়েছিল। শরীয়াতের মধ্যে তারা অসংখ্য বিধি-নিষেধ, সূক্ষ্মতা ও কঠোরতা বৃদ্ধি করেছিল। বহু হালাল জিনিসকে তারা হারাম করে নিয়েছিল। অনেক কল্পনাভিত্তিক কুসংস্কারকে তারা আল্লাহর আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিল। এখন কুরআন যে সহজ-সরল শরীয়াত পেশ করছিল তার মর্যাদা অনুধাবন করা তাদের উলামা ও জনগণ উভয়ের মন-মানস ও রুচির সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। কুরআনের বিধান শুনে তারা অস্থির হয়ে পড়তো। এক একটি বিষয়ের ওপর শত শত আপত্তি উত্থাপন করতো। তাদের দাবী ছিল, যদি কুরআন তাদের ফকীহদের সমস্ত ইজতিহাদ ও তাদের পূর্বপূরুষদের যাবতীয় কাল্পনিক কুসংস্কার ও পৌরানিকতাবাদকে আল্লাহর শরীয়াত হিসেবে গণ্য না করে, তাহলে এটি কখনোই আল্লাহর কিতাব হতে পারে না। যেমন, ইহুদীদের নিয়ম ছিল, মাসিক ঋতুস্রাবের সময় তারা মেয়েদেরকে সম্পূর্ণ নাপাক মনে করতো। তাদের রান্না করা খাবার খেতো না। তাদের হাতের পানি পান করতো না। তাদের সাথে এক বিছানায় বসতো না। এমনকি তাদের হাতে স্পর্শ লেগে যাওয়াকে মকরূহ মনে করা হতো। এই কদিন মেয়েরা তাদের নিজেদের ঘরে নিজেরা ‘অচ্ছুৎ’ হয়ে থাকতো। ইহুদীদের সংস্পর্শে এসে মদীনার আনসারদের মধ্যেও এই রেওয়াজ চালু হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহু ﷺ মদীনায় এলে তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে সূরা বাকারার ২৮ রুকূ’র প্রথম আয়াতটি নাযিল হয়। এই আয়াতের প্রেক্ষিতে নবী ﷺ হুকুম দেন, মাসিক ঋতুস্রাবের সময় স্ত্রীদের সাথে যে সমস্ত সম্পর্ক যেভাবে রাখা হতো সেগুলো ঠিক তেমনিভাবেই এখন তাদের সাথে রাখো। এতে ইহুদীরা হৈ চৈ করতে লাগলো। তারা বলতে থাকলো, এ ব্যক্তি তো কসম খেয়ে বসেছে, আমাদের এখানে যা কিছু হারাম হয়ে আছে সেগুলোকে সে হালাল করেই ছাড়বে এবং যেসব জিনিসকে আমরা নাপাক গণ্য করে এসেছি সেগুলোকে পাক-পবিত্র গণ্য করবেই।

৫০.
“অন্যায়ভাবে” বলতে এখানে এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে যা সত্য ও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়েও শরীয়াতের দৃষ্টিতে নাজায়েয। “লেনদেন” মানে হচ্ছে, পরস্পরের মধ্যে স্বার্থ ও মুনাফার বিনিময় করা। যেমন ব্যবসায়, শিল্প ও কারিগরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেখানে একজন অন্যজনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য পরিশ্রম করে এবং তার বিনিময় দান করে। পারস্পরিক রেজামন্দি অর্থ হচ্ছে, কোন বৈধ চাপ বা ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন হবে না। ঘুষ ও সুদের মধ্যে আপাত রেজামন্দি থাকে কিন্তু আসলে এই রেজামন্দির পেছনে থাকে অক্ষমতা। প্রতিপক্ষ নিজের অক্ষমতার কারণে বাধ্য ও অন্যন্যোপায় হয়ে চাপের মুখে ঘুষ ও সুদ দিতে রাজী হয়। জুয়ার মধ্যেও বাহ্যিক দৃষ্টিতে রেজামন্দিই মনে হয়। কিন্তু আসলে জুয়াতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি একমাত্র সে-ই বিজয়ী হবে এই ভ্রান্ত আশায় এতে অংশগ্রহণে রাজি হয়। পরাজয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ এতে অংশগ্রহণ করে না। প্রতারণা ও জালিয়াতির কারবারেও বাহ্যত রেজামন্দিই দেখা যায়। কিন্তু এখানেই রেজামন্দির পেছনে এই ভুল ধারণা কাজ করে যে, এর মধ্যে প্রতারনা ও জালিয়াতী নেই। দ্বিতীয় পক্ষ যদি জানতে পারে যে, প্রথম পক্ষ তার সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতী করছে তাহলে সে কখনো এতে রাজি হবে না।
৫১.
এ বাক্যটি আগের বাক্যের পরিশিষ্ট হতে পারে আবার একটি স্বতন্ত্র বাক্যও হতে পারে। একে যদি আগের বাক্যের পরিশিষ্ট মনে করা হয় তাহলে এর অর্থ হয়, অন্যের অর্থ-সম্পদ অবৈধ ভাবে আত্মসাত করা আসলে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করার নামান্তর। এর ফলে সমাজ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়। এর অনিষ্টকর পরিণতি থেকে হারামখোর ব্যক্তি নিজেও রক্ষা পেতে পারে না এবং আখেরাতে এর কারণে মানুষ কঠিন শাস্তির অধিকারী হয়। আর যদি একে একটি স্বতন্ত্র বাক্য মনে করা হয় তাহলে এর দু’টি অর্থ হয়। এক, পরস্পরকে হত্যা করো না। দুই, আত্মহত্যা করো না। মহান আল্লাহ‌ এক্ষেত্রে এমন ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং বাক্য এমনভাবে গঠন করেছেন যার ফলে এই তিনটি অর্থই এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে এবং তিনটি অর্থই সত্য।
৫২.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ তোমাদের শুভাকাংখী। তিনি তোমাদের ভালো চান। তিনি তোমাদের এমন কাজ করতে নিষেধ করছেন যার মধ্যে তোমাদের নিজেদের ধ্বংস নিহিত রয়েছে। এটা তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও করুনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অনুবাদ: