আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

ইবরাহীম

৫২ আয়াত

২১ ) আর এরা যখন সবাই একত্রে আল্লাহর সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে, ২৮ সে সময় এদের মধ্য থেকে যারা দুনিয়ায় দুর্বল ছিল তারা যারা নিজেদেরকে বড় বলে জাহির করতো তাদেরকে বলবে, “দুনিয়ায় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদের বাঁচাবার জন্যও কিছু করতে পারো? তারা জবাব দেবে, “আল্লাহ যদি আমাদের মুক্তিলাভের কোন পথ দেখাতেন তাহলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদেরও দেখিয়ে দিতাম। এখন তো সব সমান, কান্নাকাটি করো বা সবর করো- সর্বাবস্থায় আমাদের বাঁচার কোন পথ নেই।” ২৯
وَبَرَزُوا۟ لِلَّهِ جَمِيعًۭا فَقَالَ ٱلضُّعَفَـٰٓؤُا۟ لِلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًۭا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ ٱللَّهِ مِن شَىْءٍۢ ۚ قَالُوا۟ لَوْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ لَهَدَيْنَـٰكُمْ ۖ سَوَآءٌ عَلَيْنَآ أَجَزِعْنَآ أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍۢ ٢١
২২ ) আর যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে, “সত্যি বলতে কি আল্লাহ‌ তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করে ছিলেন তা সব সত্যি ছিল এবং আমি যেসব ওয়াদা করেছিলাম তার মধ্য থেকে একটিও পুরা করিনি। ৩০ তোমাদের ওপর আমার তো কোন জোর ছিল না, আমি তোমাদের আমার পথের দিকে আহ্বান জানানো ছাড়া আর কিছুই করিনি এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। ৩১ এখন আমার নিন্দাবাদ করো না, নিজেরাই নিজেদের নিন্দাবাদ করো। এখানে না আমি তোমাদের অভিযোগের প্রতিকার করতে পারি আর না তোমরা আমার। ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কতৃত্বের শরীক করেছিলে ৩২ তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত।
وَقَالَ ٱلشَّيْطَـٰنُ لَمَّا قُضِىَ ٱلْأَمْرُ إِنَّ ٱللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ ٱلْحَقِّ وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ۖ وَمَا كَانَ لِىَ عَلَيْكُم مِّن سُلْطَـٰنٍ إِلَّآ أَن دَعَوْتُكُمْ فَٱسْتَجَبْتُمْ لِى ۖ فَلَا تَلُومُونِى وَلُومُوٓا۟ أَنفُسَكُم ۖ مَّآ أَنَا۠ بِمُصْرِخِكُمْ وَمَآ أَنتُم بِمُصْرِخِىَّ ۖ إِنِّى كَفَرْتُ بِمَآ أَشْرَكْتُمُونِ مِن قَبْلُ ۗ إِنَّ ٱلظَّـٰلِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ٢٢
২৩ ) অপরদিকে যারা দুনিয়ায় ঈমান এনেছে এবং যারা সৎ কাজ করেছে তাদেরকে এমন বাগীচায় প্রবেশ করানো হবে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হবে। সেখানে তারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে চিরকাল বসবাস করবে। সেখানে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানো হবে শান্তি ও নিরাপত্তার মোবারকবাদ সহকারে। ৩৩
وَأُدْخِلَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ ۖ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَـٰمٌ ٢٣
২৪ ) তুমি কি দেখছো না আল্লাহ‌ কালেমা তাইয়েবার ৩৪ উপমা দিয়েছেন কোন্‌ জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে যেমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে। ৩৫
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًۭا كَلِمَةًۭ طَيِّبَةًۭ كَشَجَرَةٍۢ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌۭ وَفَرْعُهَا فِى ٱلسَّمَآءِ ٢٤
২৫ ) প্রতি মুহূর্তে নিজের রবের হুকুমে সে ফলদান করে। ৩৬ এ উপমা আল্লাহ‌ এ জন্য দেন যাতে লোকেরা এর সাহায্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে।
تُؤْتِىٓ أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍۭ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ ٱللَّهُ ٱلْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ٢٥
২৬ ) অন্যদিকে অসৎ বাক্যের ৩৭ উপমা হচ্ছে, একটি মন্দ গাছ, যাকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়, যার কোন স্থায়িত্ব নেই। ৩৮
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍۢ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ ٱجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ ٱلْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍۢ ٢٦
২৭ ) ঈমানদারদেরকে আল্লাহ‌ একটি শাশ্বত বাণীর ভিত্তিতে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে প্রতিষ্ঠা দান করেন। ৩৯ আর জালেমদেরকে আল্লাহ‌ পথভ্রষ্ট করেন। ৪০ আল্লাহ যা চান তাই করেন।
يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱلْقَوْلِ ٱلثَّابِتِ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ ٱللَّهُ ٱلظَّـٰلِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ ٢٧
২৮ ) তুমি দেখেছো তাদেরকে, যারা আল্লাহর নিয়ামত লাভ করলো এবং তাকে কৃতঘ্নতায় পরিণত করলো আর (নিজেদের সাথে) নিজেদের সম্প্রদায়কেও ধ্বংসের আবর্তে ঠেলে দিল-
۞ أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ بَدَّلُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ كُفْرًۭا وَأَحَلُّوا۟ قَوْمَهُمْ دَارَ ٱلْبَوَارِ ٢٨
২৯ ) অর্থাৎ জাহান্নাম, যার মধ্যে তাদেরকে ঝল্‌সানো হবে এবং তা নিকৃষ্টতম আবাস-
جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا ۖ وَبِئْسَ ٱلْقَرَارُ ٢٩
৩০ ) এবং আল্লাহর কিছু সমকক্ষ বানিয়ে নিল, যাতে তারা তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করে দেয়। এদেরকে বলো, ঠিক আছে, মজা ভোগ করে নাও, শেষ পর্যন্ত তোমাদের তো ফিরে যেতে হবে দোজখের মধ্যেই
وَجَعَلُوا۟ لِلَّهِ أَندَادًۭا لِّيُضِلُّوا۟ عَن سَبِيلِهِۦ ۗ قُلْ تَمَتَّعُوا۟ فَإِنَّ مَصِيرَكُمْ إِلَى ٱلنَّارِ ٣٠
২৮.
মূল শব্দ ‘বারাযা’ মানে শুধু বের হয়ে সামনে আসা এবং উপস্থাপিত হওয়া নয় বরং এর মধ্যে প্রকাশ হয়ে যাওয়া এবং খুলে যাওয়ার অর্থও রয়েছে। তাই আমি এ অনুবাদ করেছি সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে বান্দা তো সবসময় তার রবের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন নিজের রবের সামনে পেশ হওয়ার সময় যখন সবাই আল্লাহর আদালতে হাযির হবে তখন তারা নিজেরাও জানবে যে, তারা সকল বিচারপতির শ্রেষ্ঠ বিচারপতি এবং শেষ বিচার দিনের সর্বময় কর্তার সামনে একেবারে অনাবৃত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং তাদের কোন কাজ বরং কোন চিন্তাও হৃদয়ের গহন কোণে লুকানো কোন ইচ্ছাও তাঁর কাছে গোপন নেই।
২৯.
এটি এমন সব লোকের জন্য সতর্কবাণী যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী জালেমদের আনুগত্য করে। তাদের জানানো হচ্ছে, আজ যারা তোমাদের নেতা, কর্মকর্তা ও শাসক হয়ে আছে আগামীকাল এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে সামান্যতম নিষ্কৃতিও দিতে পারবে না। কাজেই আজই ভেবে নাও, তোমরা যাদের পেছনে ছুটে চলছো অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছো তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।
৩০.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ সত্যবাদী ছিলেন এবং আমি ছিলাম মিথ্যেবাদী তোমাদের এতটুকুন অভিযোগ ও দোষারোপ যে পুরোপুরি সত্যি এতে কোন সন্দেহ নেই। একথা আমি অস্বীকার করছি না। তোমরা দেখতেই পাচ্ছো, আল্লাহর প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি ও হুমকি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আমি তোমাদের যেসব আশ্বাস দিয়েছিলাম, যেসব লাভের লোভ দেখিয়েছিলাম, যেসব সুদৃশ্য আশা-আকাংখার জালে তোমাদের ফাঁসিয়েছিলাম এবং সর্বাগ্রে তোমাদের মনে যে বিশ্বাস স্থাপন করিয়েছিলাম যে, ওসব আখেরাত টাখেরাত বলে কিছুই নেই, ওগুলো নিছক প্রতারণা ও গাল-গল্প, আর যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে, তাহলে অমুক বুযুর্গের বদৌলতে তোমরা সোজা উদ্ধার পেয়ে যাবে, কাজেই তাদের খেদমতে নযরানা ও অর্থ-উপাচারের উৎকোচ প্রদান করতে থাকো এবং তারপর যা মন চায় তাই করে যেতে থাকো আমি তোমাদের এই যেসব কথা নিজে এবং আমার এজেন্টদের মাধ্যমে বলেছিলাম, এগুলো সবই ছিল নিছক প্রতারণা।
৩১.
অর্থাৎ আপনারা যদি এ মর্মে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন যে, আপনারা নিজেরা সত্য-সঠিক পথে চলতে চাচ্ছিলেন এবং আমি জবরদস্তি আপনাদের হাত ধরে আপনাদেরকে ভুল পথ থেকে টেনে নিয়েছিলাম তাহলে অবশ্যি তা দেখান। এর যা শাস্তি হয় আমি মাথা পেতে নেবো। কিন্তু আপনারা নিজেরাও স্বীকার করবেন, আসল ঘটনা তা নয়। আমি হকের আহবানের মোকাবিলায় বাতিলের আহবান আপনাদের সামনে পেশ করেছি। সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যার দিকে আপনাদেরকে ডেকেছি। সৎকাজের মোকাবেলায় অসৎকাজ করার জন্য আপনাদেরকে আহবান জানিয়েছি। এর বেশি কিছুই করিনি। আমার কথা মানা না মানার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনাদের ছিল। আপনাদেরকে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা আমার ছিল না। এখন আমার এ দাওয়াতের জন্য নিঃসন্দেহে আমি নিজে দায়ী ছিলাম এবং এর শাস্তিও আমি পাচ্ছি। কিন্তু আপনারা যে এ দাওয়াতে সাড়া দিয়েছেন, এর দায়ভার কেমন করে আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছেন? নিজেদের ভুল নির্বাচন এবং নিজেদের ক্ষমতার অসৎ ব্যবহারের দায়ভার পুরোপুরি আপনাদের বহন করতে হবে।
৩২.
এখানে আবার বিশ্বাসগত শিরকের মোকাবিলায় শিরকের একটি স্বতন্ত্র ধারা অর্থাৎ কর্মগত শিরকের অস্তিত্বের একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। একথা সুস্পষ্ট, বিশ্বাসগত দিক গিয়ে শয়তানকে কেউই আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে শরীক করে না এবং কেউ তার পূজা, আরাধনা ও বন্দেগী করে না। সবাই তাকে অভিশাপ দেয়। তবে তার আনুগত্য ও দাসত্ব এবং চোখ বুজে বা খুলে তার পদ্ধতির অনুসরণ অবশ্যি করা হচ্ছে। এটিকেই এখানে শিরক বলা হয়েছে। কেউ বলতে পারেন, এটা তো শয়তানের উক্তি, আল্লাহ‌ এটা উদ্ধৃত করেছেন মাত্র। কিন্তু আমরা বলবো, প্রথমত তার বক্তব্য যদি ভুল হতো তাহলে আল্লাহ‌ নিজেই তার প্রতিবাদ করতেন। দ্বিতীয়ত কুরআনে কর্মগত শিরকের শুধু এ একটিমাত্র দৃষ্টান্ত নেই বরং পূর্ববর্তী সূরাগুলোয় এর একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সামনের দিকে আরো পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইহুদী ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগঃ তারা আল্লাহ‌ ছাড়া নিজেদের “আহবার” (উলামা) ও “রাহিব”দেরকে (সংসার বিরাগী সন্যাসী) রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। [ সূরা আত্ তওবাঃ ৩১ ] জাহেলিয়াতে আচার অনুষ্ঠান উদ্ভাবনকারীদের সম্পর্কে একথা বলাঃ তাদের অনুসারীরা তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে নিয়েছে। [ আল আন’ আমঃ ১৩৭ ] প্রবৃত্তির কামনা বাসনার পূজারীদের সম্পর্কে বলাঃ তারা নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। (আল ফুরকানঃ ৪৩) নাফরমান বান্দাদের সম্পর্কে এ উক্তিঃ তারা শয়তানের ইবাদাত করতে থেকেছে। (ইয়াসীনঃ ৬০) মানুষের গড়া আইন অনুযায়ী জীবন যাপন কারীদেরকে এ বলে ভর্ৎসনা করাঃ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া যারা তাদের জন্য শরীয়াত প্রণয়ন করেছে তারা হচ্ছে তাদের “শরীক।” (আশ্-শূরাঃ ২১) এগুলো সব কি কর্মগত শিরকের নজীর নয়? এ নজীরগুলো থেকে একথা পরিষ্কার জানা যায় যে, কোন ব্যক্তি আকীদাগতভাবে কোন গাইরুল্লাহকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে শরীক করলো, শিরকের শুধুমাত্র এ একটিই আকৃতি নেই। এর আর একটি আকৃতিও আছে। সেটি হচ্ছে, আল্লাহর অনুমোদন ছাড়াই অথবা আল্লাহর বিধানের বিপরীত কোন গাইরুল্লাহর অনুসরণ ও আনুগত্য করতে থাকা। এ ধরনের অনুসারী বা আনুগত্যকারী যদি নিজের নেতার বা যার আনুগত্য করছে তার ওপর লানত বর্ষণ করা অবস্থায়ও কার্যত এ আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করে তাহলে কুরআনের দৃষ্টিতে সে তাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের শরীক করছে। শরীয়াতের দৃষ্টিতে আকীদাগত মুশরিকদের জন্য যে বিধান তাদের জন্য সেই একই বিধান না হলেও তাতে কিছু আসে যায় না। (আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আন’আমের ৮৭ ও ১০৭ টীকা এবং সূরা আল কাহাফের ৫০ টীকা)
৩৩.
মূল শব্দ تَحِيَّة এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া। কিন্তু পারিভাষিক অর্থে আরবী ভাষায় এ শব্দটিকে সম্বর্ধনা ও অভ্যর্থনা সূচক শব্দ বা স্বাগত বচন হিসেবে বলা হয়ে থাকে। লোকেরা পরস্পর মুখোমুখি হলে সবার আগে একজন অন্যজনের উদ্দেশ্যে এ শব্দটিই উচ্চারণ করে। আমাদের ভাষায় এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে, “সালাম” বা “সালাম কালাম”। কিন্তু প্রথম শব্দটি ব্যবহার করলে অনুবাদ যথাযর্থ হয় না এবং দ্বিতীয় শব্দটি হালকা হয়ে যায়। তাই আমি এর অনুবাদে “অভ্যর্থনা” শব্দ ব্যবহার করেছি।

تَحِيَّتُهم শব্দের মানে এও হতে পারে যে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক অভ্যর্থনার পদ্ধতি এ হবে। আবার এ মানেও হতে পারে যে, তাদের অভ্যর্থনা এভাবে হবে। তাছাড়া سَلَامٌ শব্দের মধ্যে নিরাপত্তার দোয়ার অর্থ রয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য মোবারকবাদও রয়েছে। পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমি এখানে অনুবাদে উল্লেখিত অর্থ গ্রহণ করেছি।

৩৪.
“কালেমা তাইয়েবা”র শাব্দিক অর্থ “পবিত্র কথা” কিন্তু এ শব্দের মাধ্যমে যে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, এমন সত্য কথা এবং এমন পরিচ্ছন্ন বিশ্বাস যা পুরোপুরি সত্য ও সরলতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ উক্তি ও আকীদা কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে অপরিহার্যভাবে এমন একটি কথা ও বিশ্বাস হতে পারে যার মধ্যে রয়েছে তাওহীদের স্বীকৃতি, নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের স্বীকৃতি এবং আখেরাতের স্বীকৃতি। কারণ কুরআন এ বিষয়গুলোকেই মৌলিক সত্য হিসেবে পেশ করে।
৩৫.
অন্য কথায় এর অর্থ হলো, পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা যেহেতু এমন একটি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত যার স্বীকৃতি একজন মু’মিন তার কালেমা তাইয়েবার মধ্যে দিয়ে থাকে, তাই কোন স্থানের প্রাকৃতির আইন- এর সাথে সংঘর্ষ বাধায় না, কোন বস্তুর আসল, স্বভাব ও প্রাকৃতিক গঠন একে অস্বীকার করে না এবং কোথাও কোন প্রকৃত সত্য ও সততা এর সাথে বিরোধ করে না। তাই পৃথিবী ও তার সমগ্র ব্যবস্থা তার সাথে সহযোগিতা করে এবং আকাশ তথা সমগ্র মহাশূন্য জগত তাকে স্বাগত জানায়।
৩৬.
অর্থাৎ সেটি একটি ফলদায়ক ও ফলপ্রসূ কালেমা। কোন ব্যক্তি বা জাতি তার ভিত্তিতে জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুললে প্রতি মুহূর্তে সে তার সূফল লাভ করতে থাকে। সেটি চিন্তা ধারায় পরিপক্কতা ও পরিচ্ছন্নতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, এ জীবন ধারায় মজবুতী, চরিত্রে পবিত্রতা, আত্মায় প্রফুল্লতা ও স্নিগ্ধতা, শরীরে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা, আচরণে মাধুর্য, ব্যবহার ও লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, ওয়াদা ও অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন যাপনে সদাচার, কৃষ্টিতে ঔদার্য ও মহত্ব, সভ্যতায় ভারসাম্য, অর্থনীতিতে আদল ও ইনসাফ, রাজনীতিতে বিশ্বস্ততা, যুদ্ধে সৌজন্য, সন্ধিতে আন্তরিকতা এবং চুক্তি ও অঙ্গীকারে বিশ্বস্ততা সৃষ্টি করে। সেটি এমন একটি পরশ পাথর যার প্রভাব কেউ যথাযথভাবে গ্রহণ করলে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়।
৩৭.
এটি কালেমা তাইয়েবার বিপরীত শব্দ। যদিও প্রতিটি সত্য বিরোধী ও মিথ্যা কথার ওপর এটি প্রযুক্ত হতে পারে তবুও এখানে এ থেকে এমন প্রতিটি বাতিল আকীদা বুঝায়, যার ভিত্তিতে মানুষ নিজের জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এ বাতিল আকীদা নাস্তিক্যবাদ, নিরীশ্বরবাদ, ধর্মদ্রোহিতা, অবিশ্বাস, শিরক, পৌত্তলিকতা অথবা এমন কোন চিন্তাধারাও হতে পারে যা নবীদের মাধ্যমে আসেনি।
৩৮.
অন্য কথায় এর অর্থ হলো, বাতিল আকীদা যেহেতু সত্য বিরোধী তাই প্রাকৃতিক আইন কোথাও তার সাথে সহযোগিতা করে না। বিশ্ব জগতের প্রতিটি অণুকণিকা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। পৃথিবী ও আকাশের প্রতিটি বস্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। জমিতে তার বীজ বপন করার চেষ্টা করলে জমি সবসময় তাকে উদগীরণ করার জন্য তৈরী থাকে। আকাশের দিকে তার শাখা প্রশাখা বেড়ে উঠতে থাকলে আকাশ তাদেরকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। পরীক্ষার খাতিরে মানুষকে যদি নির্বাচন করার স্বাধীনতা ও কর্মের অবকাশ না দেয়া হতো তাহলে এ অসৎজাতের গাছটি কোথাও গজিয়ে উঠতে পারতো না। কিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহ‌ আদম সন্তানকে নিজের স্বাধীন ইচ্ছা ও প্রবণতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দান করেছেন, তাই যেসব নির্বোধ লোক প্রাকৃতিক আইনের বিরুদ্ধে লড়ে এ গাছ লাগাবার চেষ্টা করে তাদের শক্তি প্রয়োগের ফলে জমি একে সামান্য কিছু জায়গা দিয়েও দেয়, বাতাস ও পানি থেকে সে কিছু না কিছু খাদ্য পেয়েই যায় এবং শূন্যও তার ডালপালা ছড়াবার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু জায়গা তাকে দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু যতদিন এ গাছ বেঁচে থাকে ততদিন তিতা, বিস্বাদ ও বিষাক্ত ফল দিতে থাকে এবং অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথেই আকস্মিক ঘটনাবলীর এক ধাক্কাই তাকে সমূলে উৎপাটিত করে।

পৃথিবীর ধর্মীয়, নৈতিক, চিন্তাগত ও তামাদ্দুনিক ইতহাস অধ্যয়নকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই কালেমায়ে তাইয়েবা তথা ভালো কথা এবং মন্দ কথার এ পার্থক্য সহজে অনুভব করতে পারে। সে দেখবে, ইতিহাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ভালো কথা একই থেকেছে। কিন্তু মন্দ কথা সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য। ভালো কথাকে কখনো শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলা যায়নি। কিন্তু মন্দ কথার তালিকা হাজারো মৃত কথার নামে ভরে আছে। এমনকি তাদের অনেকের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আজ ইতিহাসের পাতা ছাড়া আর কোথাও তাদের নাম নিশানাও পাওয়া যায় না। স্ব স্ব যুগে যেসব কথার প্রচণ্ড দাপট ছিল আজ সে সব কথা উচ্চারিত হলে মানুষ এই ভেবে অবাক হয়ে যায় যে, একদিন এমন পর্যায়ের নির্বুদ্ধিতাও মানুষ করেছিল।

তারপর ভালো কথাকে যখনই যে জাতি বা ব্যক্তি যেখানেই গ্রহণ করে সঠিক অর্থে প্রয়োগ করেছে সেখানেই তার সমগ্র পরিবেশ তার সুবাসে আমোদিত হয়েছে। তার বরকতে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি বা জাতিই সমৃদ্ধ হয়নি বরং তার আশপাশের জগতও সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু কোন মন্দ কথা যেখানেই ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে শিকড় গেড়েছে সেখানেই তার দুর্গদ্ধে সমগ্র পরিবেশ পুতিগন্ধময় হয়ে উঠেছে এবং তার কাঁটার আঘাত থেকে তার মান্যকারীরা নিরাপদ থাকেনি এবং এমন কোন ব্যক্তিও নিরাপদ থাকতে পারেনি যে তার মুখোমুখি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একথা উল্লেখ্য যে, এখানে উপমার মাধ্যমে ১৮ আয়াতে যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছিল সেটিই বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ১৮ আয়াতে বলা হয়েছিল, নিজের রবের সাথে যারা কুফরী করে তাদের দৃষ্টান্ত এমন ছাই-এর মতো যাকে ঝনঝা বিক্ষুব্ধ দিনের প্রবল বাতাস উড়িয়ে দিয়েছে। এ একই বিষয়বস্তু ইতিপূর্বে সূরা আর রা’দ-এর ১৭ আয়াতে অন্যভাবে বন্যা ও গলিত ধাতুর উপমার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে।

৩৯.
অর্থাৎ এ কালেমার বদৌলতে তারা দুনিয়ায় একটিস্থায়ী দৃষ্টিভংগী, একটি শক্তিশালী ও সুগঠিত চিন্তাধারা এবং একটি ব্যাপকভিত্তিক মতবাদ ও জীবন দর্শন লাভ করে। জীবনের সকল জটিল গ্রন্থীর উন্মোচনে এবং সকল সমস্যার সমাধানে তা এমন এক চাবির কাজ করে যা দিয়ে সকল তালা খোলা যায়। তার সাহায্যে চরিত্র মজবুত এবং নৈতিক বৃত্তিগুলো সুগঠিত হয়। তাকে কালের আবর্তন একটুও নড়াতে পারে না। তার সাহায্যে জীবন যাপনের এমন কতগুলো নিরেট মূলনীতি পাওয়া যায় যা একদিকে তাদের হৃদয়ে প্রশান্তি ও মস্তিষ্কে নিশ্চিন্ততা এনে দেয় এবং অন্যদিকে তাদেরকে প্রচেষ্টা ও কর্মের পথে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াবার, দ্বারে দ্বারে ঠোকর খাওয়ার এবং অস্থিরতার শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। তারপর যখন তারা মৃত্যুর সীমানা পার হয়ে পরলোকের সীমান্তে পা রাখে তখন সেখানে তারা বিস্ময়াভিভূত, হতবাক ও পেরেশান হয় না। কারণ সেখানে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সবকিছু হতে থাকে। সে জগতে তারা এমনভাবে প্রবেশ করতে থাকে যেন সেখানকার আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি সম্পর্কে তারা পূর্বাহ্ণেই অবহিত ছিল। সেখানে এমন কোন পর্যায় উপস্থাপিত হয় না যে সম্পর্কে তাদের পূর্বাহ্ণে খবর দেয়া হয়নি এবং যে জন্য তারা পূর্বেই প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন করে রাখেনি। তাই সেখানে প্রত্যেক মনযিলই তারা দৃঢ়পদে অতিক্রম করে যায়। পক্ষান্তরে কাফের ব্যক্তি মৃত্যুর পরপরই নিজের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত অকস্মাৎ এক ভিন্ন অবস্থার মুখোমুখি হয়। তার অবস্থা মু’মিন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়।
৪০.
অর্থাৎ যেসব জালেম কালেমায়ে তাইয়েবা বাদ দিয়ে কোন মন্দ কালেমার অনুসরণ করে আল্লাহ‌ তাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও মন-মানসকে দিশেহারা করে দেন এবং তাদের প্রচেষ্টাবলীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তারা কোন দিক দিয়েও চিন্তা ও কর্মের সঠিক পথে পাড়ি জমাতে পারে না। তাদের কোন তীরও সঠিক লক্ষ্যস্থলে লাগে না।
অনুবাদ: