৩১ ) হে নবী! আমার যে বান্দারা ঈমান এনেছে তাদেরকে বলে দাও, তারা যেন নামায কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে (সৎপথে) ব্যয় করে ৪১ - সেই দিন আসার আগে যেদিন না বেচা-কেনা হবে আর না হতে পারবে বন্ধু বাৎসল্য। ৪২
قُل لِّعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُنفِقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ سِرًّۭا وَعَلَانِيَةًۭ مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِىَ يَوْمٌۭ لَّا بَيْعٌۭ فِيهِ وَلَا خِلَـٰلٌ ٣١
৩২ ) আল্লাহ তো তিনিই, ৪৩ যিনি এ পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর তার মাধ্যমে তোমাদের জীবিকা দান করার জন্য নানা প্রকার ফল উৎপন্ন করেছেন। যিনি নৌযানকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর হুকুমে তা সাগরে বিচরণ করে এবং নদী সমূহকে তোমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন।
ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَخْرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزْقًۭا لَّكُمْ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلْفُلْكَ لِتَجْرِىَ فِى ٱلْبَحْرِ بِأَمْرِهِۦ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلْأَنْهَـٰرَ ٣٢
৩৩ ) যিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন, তারা অবিরাম চলছে এবং রাত ও দিনকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। ৪৪
وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ دَآئِبَيْنِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ ٣٣
৩৪ ) যিনি এমন সবকিছু তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছো ৪৫ যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গণনা করতে চাও তাহলে তাতে সক্ষম হবে না। আসলে মানুষ বড়ই বে-ইনসাফ ও অকৃতজ্ঞ।
وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ ۚ وَإِن تَعُدُّوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحْصُوهَآ ۗ إِنَّ ٱلْإِنسَـٰنَ لَظَلُومٌۭ كَفَّارٌۭ ٣٤
৩৫ ) স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহীম দোয়া করছিল, ৪৬ “হে আমার রব! এ শহরকে ৪৭ নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো এবং আমার ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচাও।
وَإِذْ قَالَ إِبْرَٰهِيمُ رَبِّ ٱجْعَلْ هَـٰذَا ٱلْبَلَدَ ءَامِنًۭا وَٱجْنُبْنِى وَبَنِىَّ أَن نَّعْبُدَ ٱلْأَصْنَامَ ٣٥
৩৬ ) হে আমার রব! এ মূর্তিগুলো অনেককে ভ্রষ্টতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, ৪৮ (হয়তো আমার সন্তানদেরকেও এরা পথভ্রষ্ট করতে পারে, তাই তাদের মধ্য থেকে) যে আমার পথে চলবে সে আমার অন্তর্গত আর যে আমার বিপরীত পথ অবলম্বন করবে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যি তুমি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। ৪৯
رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلنَّاسِ ۖ فَمَن تَبِعَنِى فَإِنَّهُۥ مِنِّى ۖ وَمَنْ عَصَانِى فَإِنَّكَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٣٦
৩৭ ) হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি। পরওয়ারদিগার! এটা আমি এ জন্য করেছি যে, এরা এখানে নামায কায়েম করবে। কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং ফলাদি দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো, ৫০ হয়তো এরা শোকরগুজার হবে।
رَّبَّنَآ إِنِّىٓ أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِى بِوَادٍ غَيْرِ ذِى زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ ٱلْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجْعَلْ أَفْـِٔدَةًۭ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهْوِىٓ إِلَيْهِمْ وَٱرْزُقْهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ ٣٧
৩৮ ) হে পরওয়ারদিগার! তুমি জানো যা কিছু আমরা লুকাই এবং যা কিছু প্রকাশ করি।” ৫১ - আর ৫২ যথার্থই আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন নেই, না পৃথিবীতে না আকাশে-
رَبَّنَآ إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِى وَمَا نُعْلِنُ ۗ وَمَا يَخْفَىٰ عَلَى ٱللَّهِ مِن شَىْءٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فِى ٱلسَّمَآءِ ٣٨
৩৯ ) “শোকর সেই আল্লাহর, যিনি এ বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাকের মতো পুত্র দিয়েছেন। আসলে আমার রব নিশ্চয়ই দোয়া শোনেন।
ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى وَهَبَ لِى عَلَى ٱلْكِبَرِ إِسْمَـٰعِيلَ وَإِسْحَـٰقَ ۚ إِنَّ رَبِّى لَسَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٩
৪০ ) হে আমার রব! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী করো এবং আমার বংশধরদের থেকেও (এমন লোকদের উঠাও যারা এ কাজ করবে) । পরওয়ারদিগার! আমার দোয়া কবুল করো।
رَبِّ ٱجْعَلْنِى مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِى ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ ٤٠
৪১.
এর মানে হচ্ছে, মু’মিনদের মনোভাব ও কর্মনীতি কাফেরদের মনোভাব ও কর্মনীতি থেকে আলাদা হওয়া উচিত। ওরা তো নিয়ামত অস্বীকারকারী। অন্যদিকে এদের হতে হবে কৃতজ্ঞ। আর এ কৃতজ্ঞতার বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য এদের নামায কায়েম এবং আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
৪২.
অর্থাৎ সেখানে কোন কিছুর বিনিময়ে নাজাত কিনে নেয়া যাবে না এবং আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচবার জন্য কারো বন্ধুত্ব কাজে লাগবে না।
৪৩.
অর্থাৎ সেই আল্লাহ, যাঁর নিয়ামত অস্বীকার করা হচ্ছে, যাঁর বন্দেগী ও আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে, যাঁর সাথে জোর করে অংশীদার বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনিই তো সেই আল্লাহ, এসব এবং ওসব যাঁর দান, যাঁর দানের কোন সীমা-পরিসীমা নেই।
৪৪.
“তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন”কে সাধারণত লোকেরা ভুল করে “তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন”-এর অর্থে গ্রহণ করে থাকেন। তারপর এ বিষয়বস্তু সম্বলিত আয়াত থেকে বিভিন্ন অদ্ভূত ধরনের অর্থ বের করে থাকেন। এমন কি কোন কোন লোক এ থেকে এ ধারণা করে নিয়েছেন যে, পৃথিবী ও আকাশ জয় করা হচ্ছে মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য। অথচ মানুষের জন্য এসবকে অনুগত করে দেয়ার অর্থ এছাড়া আর কিছুই নয় যে, মহান আল্লাহ এদেরকে এমন সব আইনের অধীন করে রেখেছেন যেগুলোর বদৌলতে তারা মানুষের জন্য উপকারী হয়েছে। নৌযান যদি প্রকৃতির কতিপয় আইনের অনুসারী না হতো, তাহলে মানুষ কখনো সামূদ্রিক সফর করতে পারতো না। নদ-নদীগুলো যদি কতিপয় বিশেষ আইনের জালে আবদ্ধ না থাকতো, তাহলে কখনো তা থেকে খাল কাটা যেতো না। সূর্য, চন্দ্র এবং দিন ও রাত যদি বিশেষ নিয়ম কানুনের অধীনে শক্ত করে বাঁধা না থাকতো তাহলে এ বিকাশমান মানব সভ্যতা-সংস্কৃতির উদ্ভব তো দূরের কথা, এখানে জীবনের ষ্ফূরণই সম্ভবপর হতো না।
৪৫.
অর্থাৎ তোমাদের প্রকৃতির সর্ববিধ চাহিদা পূরণ করেছেন। তোমাদের জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করেছেন। তোমাদের বেঁচে থাকা ও বিকাশ লাভ করার জন্য যেসব উপাদান ও উপকরণের প্রয়োজন ছিল তা সবই যোগাড় করে দিয়েছেন।
৪৬.
সাধারণ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করার পর এবার আল্লাহ কুরাইশদের প্রতি যেসব বিশেষ অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলার কথা বলা হচ্ছে। এ সঙ্গে একথাও বলা হচ্ছে যে, তোমাদের প্রপিতা ইবরাহীম (আ) কোন্ ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে তোমাদের এখানে আবাদ করেছিলেন, তাঁর দোয়ার জবাবে আমি তোমাদের প্রতি কোন্ ধরনের অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলাম এবং এখন তোমরা নিজেদের প্রপিতার প্রত্যাশা ও নিজেদের রবের অনুগ্রহের জবাবে কোন ধরনের ভ্রষ্টতা ও দুষ্কর্মের অবতারণা করে যাচ্ছো।
৪৮.
অর্থাৎ আল্লাহর দিক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজের ভক্তে পরিণত করেছে। এ বাক্যটিকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মূর্তি যেহেতু অনেকের পথভ্রষ্টতার কারণ হয়েছে তাই পথভ্রষ্ট করার কাজকে তার কৃতকর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪৯.
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন অবস্থাতেও মানুষকে আল্লাহর আযাবের শিকার দেখতে চান না। বরং শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করার আবেদন জানাতে থাকেন। এটি তাঁর আন্তরিক কোমলতা এবং মানুষের অবস্থার প্রতি চরম স্নেহ-মমতার ফল। জীবিকার ব্যাপারে তো তিনি এতটুকু বলে দিতেও কুন্ঠবোধ করেননি যে-
وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ-
“এর অধিবাসীদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাস করে তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান করো।”-আল বাকারাহঃ ১২৬
কিন্তু যেখানে আখেরাতে পাকড়াও করার প্রশ্ন আসে সেখানে তাঁর কণ্ঠ থেকে একথা ধ্বনিত হয় না যে, আমার পথ ছেড়ে যে অন্য পথে চলে তাকে শাস্তি দিয়ে দিয়ো। বরং তিনি উল্টো একথা বলেন যে, তাদের ব্যাপারে আর কীইবা আবেদন জানাবো, তুমি তো পরম করুণাময় ও ক্ষমাশীল। আর এ আপাদমস্তক স্নেহ ও মমতার পুতলী মানুষটির এ মনোভাব শুধুমাত্র তাঁর নিজের সন্তান ও বংশধরদের ব্যাপারেই নয় বরং যখন ফেরেশতারা লূতের সম্প্রদায়ের মতো দুষ্কৃতকারী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে যাচ্ছিল তখনো মহান আল্লাহ বড়ই প্রীতিপূর্ণ কন্ঠে বলেন, “ইবরাহীম আমার সাথে ঝগড়া করতে লাগলো” (হূদঃ ৭৪) হযরত ঈসা আলাইহিস সালামেরও এ একই অবস্থা। আল্লাহ যখন তাঁর সামনেই খৃস্টবাদীদের ভ্রষ্টতা প্রমাণ করে দেন তখন তিনি আবেদন জানানঃ যদি আপনি তাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আসলে আপনার বান্দা আর যদি ক্ষমা করেন তাহলে আপনি প্রবল প্রতাপান্বিত ও জ্ঞানী।” (আল মায়েদাহঃ ১১৮)
৫০.
এ দোয়ারই বরকতে প্রথমে সমস্ত আরবের লোকেরা হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য মক্কায় ছুটে আসতো আবার এখন সারা দুনিয়ার লোক সেখানে দৌড়ে যাচ্ছে। তারপর এ দোয়ার বরকতেই সব যুগে সব ধরনের ফল, ফসল ও অন্যান্য জীবন ধারণ সামগ্রী সেখানে পৌঁছে থাকে। অথচ এ তৃণপানি হীন অনুর্বর এলাকায় পুশুখাদ্যও উৎপন্ন হয় না।
৫১.
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি মুখে যা কিছু বলছি তা তুমি শুনছো এবং যেসব আবেগ-অনুভূতি আমার হৃদয় অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে তাও তুমি জানো।
৫২.
এটি একটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। হযরত ইবরাহীমের (আ) কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ একথা বলেন।