১
আল ফাতিহা
৭ আয়াত
২
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
৩
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
৪
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
৫
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
৬
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
৭
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
৮
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
৯
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত
আয়াত
১১ ) তাদের রসূলুরা তাদেরকে বলে, “যথার্থই আমরা তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নই। কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। ২১ আর তোমাদের কোন প্রমাণ এনে দেবো, এ ক্ষমতা আমাদের নেই। প্রমাণ তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে আসতে পারে এবং ঈমানদারদের আল্লাহরই ওপর ভরসা রাখা উচিত।
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِن نَّحْنُ إِلَّا بَشَرٌۭ مِّثْلُكُمْ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ يَمُنُّ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۖ وَمَا كَانَ لَنَآ أَن نَّأْتِيَكُم بِسُلْطَـٰنٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ١١
১২ ) আর আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করবো না কেন, যখন আমাদের জীবনের পথে তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন? তোমরা আমাদের যে যন্ত্রণা দিচ্ছো তার ওপর আমরা সবর করবো এবং ভরসাকারীদের ভরসা আল্লাহরই ওপর হওয়া উচিত।”
وَمَا لَنَآ أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى ٱللَّهِ وَقَدْ هَدَىٰنَا سُبُلَنَا ۚ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلَىٰ مَآ ءَاذَيْتُمُونَا ۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُتَوَكِّلُونَ ١٢
১৩ ) শেষ পর্যন্ত অস্বীকারকারীরা তাদের রসূলদের বলে দিল, “হয় তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মিল্লাতে ২২ আর নয়তো আমরা তোমাদের বের করে দেবো আমাদের দেশ থেকে।” তখন তাদের রব তাদের কাছে অহী পাঠালেন, “আমি এ জালেমদের ধ্বংস করে দেবো
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُم مِّنْ أَرْضِنَآ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا ۖ فَأَوْحَىٰٓ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٣
১৪ ) এবং এদের পর পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করবো। ২৩ এটা হচ্ছে তার পুরস্কার, যে আমার সামনে জবাবদিহি করার ভয় করে এবং আমার শাস্তির ভয়ে ভীত।”
وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِهِمْ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِى وَخَافَ وَعِيدِ ١٤
১৫ ) তারা ফায়সালা চেয়েছিল (ফলে এভাবে তাদের ফায়সালা হলো) এবং প্রত্যেক উদ্ধত সত্যের দুশমন ব্যর্থ মনোরথ হলো। ২৪
وَٱسْتَفْتَحُوا۟ وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍۢ ١٥
১৬ ) এরপর সামনে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তাকে পান করতে দেয়া হবে গলিত পুঁজের মতো পানি,
مِّن وَرَآئِهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّآءٍۢ صَدِيدٍۢ ١٦
১৭ ) যা সে জবরদস্তি গলা দিয়ে নামাবার চেষ্টা করবে এবং বড় কষ্টে নামাতে পারবে। মৃত্যু সকল দিক দিয়ে তার ওপর ছেয়ে থাকবে কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং সামনের দিকে একটি কঠোর শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে।
يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ وَيَأْتِيهِ ٱلْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍۢ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍۢ ۖ وَمِن وَرَآئِهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٌۭ ١٧
১৮ ) যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করলো তাদের কার্যক্রমের উপমা হচ্ছে এমন ছাই-এর মতো, যাকে একটি ঝনঝাক্ষুব্ধ দিনের প্রবল বাতাস উড়িয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের কোনই ফল লাভ করতে পারবে না। ২৫ এটিই চরম বিভ্রান্তি।
مَّثَلُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِرَبِّهِمْ ۖ أَعْمَـٰلُهُمْ كَرَمَادٍ ٱشْتَدَّتْ بِهِ ٱلرِّيحُ فِى يَوْمٍ عَاصِفٍۢ ۖ لَّا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا۟ عَلَىٰ شَىْءٍۢ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلضَّلَـٰلُ ٱلْبَعِيدُ ١٨
১৯ ) তুমি কি দেখছো না, আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন? ২৬ তিনি চাইলে তোমাদের নিয়ে যান এবং একটি নতুন সৃষ্টি তোমাদের স্থলাভিসিক্ত হয়।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ ۚ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍۢ جَدِيدٍۢ ١٩
২০ ) এমনটি করা তাঁর জন্য মোটেই কঠিন নয়। ২৭
وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ بِعَزِيزٍۢ ٢٠
২১.
অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আমি তো মানুষই। তবে আল্লাহ সত্যের তত্বজ্ঞান ও পূর্ণ অন্তরদৃষ্টি দান করে তোমাদের মধ্য থেকে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন। এখানে আমার সামর্থ্যর কোন ব্যাপার নেই। এ তো আল্লাহর পূর্ণ ইখতিয়ারের ব্যাপার। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যা ইচ্ছা দেন। আমার কাছে যা কিছু এসেছে তা আমি তোমাদের কাছে পাঠাতে বলতে পারি না এবং আমার কাছে যে সত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে তা থেকে আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিতেও পারি না।
২২.
এর মানে এ নয় যে, নবুওয়াতের মর্যাদায় সমাসীন হবার আগে নবী গণ নিজেদের পথভ্রষ্ট সম্প্রদয়ের মিল্লাত বা ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতেন। বরং এর মানে হচ্ছে, নবুওয়াত লাভের পূর্বে যেহেতু তাঁরা এক ধরনের নীরব জীবন যাপন করতেন, কোন ধর্ম প্রচার করতেন না এবং প্রচলিত কোন ধর্মের প্রতিবাদও করতেন না তাই তাঁদের সম্প্রদায় মনে করতো তাঁরা তাদেরই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারপর নবুওয়াতের কাজ শুরু করে দেয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে দোষারোপ করা হতো যে, তাঁর বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করেছেন। অথচ নবুওয়াত লাভের আগেও তাঁরা কখনো মুশরিকদের ধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। যার ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মচ্যুতির অভিযোগ করা যেতে পারে।
২৩.
অর্থাৎ ভীত হয়ো না, এরা বলছে, তোমরা এ দেশে থাকতে পারবে না কিন্তু আমি বলছি এখন আর এরা এ দেশে থাকতে পারবে না। এখন যারা তোমাকে মানবে তারাই এখানে থাকবে।
২৪.
মনে রাখা দরকার, এখানে এ ঐতিহাসিক ধারা বিবরণীর আকারে আসলে মক্কার কাফেরদের কথার জবাব দেয়া হচ্ছে, যা তারা নবী (সা.) কে বলতো। আপাতদৃষ্টিতে অতীতের নবীগণ এবং তাঁদের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলী উল্লেখ করা হচ্ছে, কিন্তু তা প্রযুক্ত হচ্ছে এ সূরা নাযিলের সময় যেসব ঘটনা ঘটে চলছিল তার ওপর। এ স্থানে মক্কার কাফেরদেরকে বরং আরবের মুশরিকদেরকে যেন পরিষ্কার ভাষায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের ভবিষ্যত এখন নির্ভর করবে তোমরা মুহাম্মাদী দাওয়াতের মোকাবেলায় যে মনোভাব ও কর্মনীতি অবলম্বন করবে তার ওপর। যদি এ দাওয়াত গ্রহণ করো তাহলে আরব ভূখণ্ডে থাকতে পারবে আর যদি তা প্রত্যাখ্যান করো তাহলে এখান থেকে তোমাদের নাম-নিশানা মুছে যাবে। কার্যত ঐতিহাসিক ঘটনাবলী একথাটিকে একটি প্রমাণিত সত্যে পরিণত করে দিয়েছে। এ ভবিষ্যত বাণীর পর পুরো পনের বছর পার হতে না হতেই দেখা গেলো সমগ্র আরব ভূখণ্ডে একজন মুশরিকেরও অস্তিত্ব নেই।
২৫.
অর্থাৎ যারা নিজেদের রবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, অবিশ্বস্ততা, অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারমূলক আচরণ, নাফরমানী ও বিদ্রোহাত্মক কর্মপন্থা অবলম্বন করলো এবং নবীগণ যে আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করার দাওয়াত নিয়ে আসেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ড এবং সারা জীবনের সমস্ত আমল শেষ পর্যন্ত এমনি অর্থহীন প্রমাণিত হবে যেমন একটি ছাই-এর স্তূপ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় জমা হতে হতে তা এক সময় একটি বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র একদিনের ঘুর্ণিঝড়ে তা এমনভাবে উড়ে গেলো যে তার প্রত্যেকটি কণা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। তাদের চাকচিক্যময় সভ্যতা, বিপুল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, বিস্ময়কর শিল্প-কল-কারখানা, মহা প্রতাপশালী রাষ্ট্র, বিশালায়তন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চারুকলা-ভাস্কর্য-স্থাপত্যের বিশাল ভাণ্ডার, এমনকি তাদের ইবাদাত-বন্দেগী, বাহ্যিক সৎকার্যাবলী এবং দান ও জনকল্যাণমূলক এমন সব কাজ-কর্ম যেগুলোর জন্য তারা দুনিয়ায় গর্ব করে বেড়ায়, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ছাই-এর স্তূপে পরিণত হবে। কিয়ামতের দিনের ঘুর্ণিঝড় এ ছাই-এর স্তূপকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং আখেরাতের জীবনে আল্লাহর মীযানে রেখে সামান্যতম ওজন পাওয়ার জন্য তার একটি কণাও তাদের কাছে থাকবে না।
২৬.
ইতিপূর্বে যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছিল এটি হচ্ছে তার সপক্ষে যুক্তি। এর মানে হচ্ছে, একথা শুনে তোমরা অবাক হচ্ছো কেন? তোমরা কি দেখছো না এ যমীন ও আসমানের বিরাট সৃষ্টি কারখানা মিথ্যার ওপর নয় বরং সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত? এখানে যে জিনিসটি সত্য ও যথার্থতার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় না বরং নিছক একটি ধারণা-অনুমানের ওপর যার ভিত রাখা হয় সেটি কখনো স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না। তার প্রতিষ্ঠা ও মজবুতী- লাভের কোন সম্ভাবনা থাকে না। তার ওপর ভরসা করে যে ব্যক্তি কাজ করে সে কখনো নিজের ভরসার ক্ষেত্রে সফল-কাম হতে পারে না। যে ব্যক্তি পানির ওপর নকশা কাটে এবং বালির বাঁধ নির্মাণ করে, সে যদি মনে করে, তার এ নকশা স্থায়ী হবে এবং এ বাঁধ কায়েম থাকবে তাহলে তার এ আশা কখনো পূর্ণ হতে পারে না। কারণ পানির প্রকৃতিই এমন যে তাতে কোন নকশা টিকে থাকে না এবং বাঁধের জন্য যে মজবুত বুনিয়াদের প্রয়োজন তা সরবরাহ করার ক্ষমতা বালির নেই। কাজেই সত্যতা ও বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে যে ব্যক্তি মিথ্যা আশা-আকাংখার ওপর কর্মের ভিত্ গড়ে তোলে তার ব্যর্থতা অনিবার্য। একথা যদি তোমরা বুঝতে পেরে থাকো তাহলে একথা শুনে তোমরা অবাক হচ্ছো কেন যে, আল্লাহর এ বিশ্ব-জাহানে যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য মুক্ত মনে করে কাজ করবে অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে (যার আসলে কোন সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নেই) জীবন যাপন করবে তার জীবনের সমস্ত কাজ নষ্ট হয়ে যাবে? যখন মানুষ এখানে যথার্থই স্বাধীন নয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর বান্দাও নয় তখন এ মিথ্যা ও অবাস্তব কল্পনার ওপর নিজের সমগ্র চিন্তা ও কর্মের ভিত্তি স্থাপনকারী মানুষ যদি তোমাদের মতে পানির ওপর নকশা অংকনকারী নির্বোধের পরিণাম না ভোগে তাহলে তার জন্য তোমরা আর কোন ধরনের পরিণাম আশা করো?
২৭.
দাবীর সপক্ষে যুক্তি পেশ করার সাথে সাথেই উপদেশ হিসেবে এ বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে এবং এ সাথে ওপরের দ্ব্যর্থহীন কথা শুনে মানুষের মনে যে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে তা দূর করার ব্যবস্থাও এতে রয়েছে। কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে এ আয়াতগুলোতে যে কথা বলা হয়েছে তাই যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে প্রত্যেক মিথ্যাপূজারী ও দৃষ্কৃতকারী ধ্বংস হয় না কেন? এর জবাব হচ্ছে, হে নির্বোধ! তুমি কি মনে করো তাকে ধ্বংস করা আল্লাহর জন্য তেমন কোন কঠিন কাজ অথবা আল্লাহর সাথে তার কোন আত্মীয়তা আছে যে কারণে তার দুষ্কৃতি সত্ত্বেও নিছক স্বজন প্রীতির বশে বাধ্য হয়ে আল্লাহ তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন? যদি এমনটি না হয়ে থাকে এবং তুমি নিজে জানো এমন কোন ব্যাপার নেই তাহলে তোমার অবশ্যি বুঝা উচিত, একটি মিথ্যাপূজারী ও দুস্কৃতিকারী জাতি সবসময় তাকে সরিয়ে দেয়ার এবং তার জায়গায় অন্য কোন জাতিকে কাজ করার সুযোগ দেয়ারআশঙ্কা করে থাকে। এআশঙ্কার বাস্তবে রূপ নিতে দেরী হয়ে থাকলে আদতেআশঙ্কার কোন অস্তিত্বই নেই এ ধরনের বিভ্রান্তির নেশায় মত্ত হয়ে যাওয়া উচিত নয়। অবকাশের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে মূল্যবান মনে করো এবং নিজের মিথ্যা চিন্তা ও কর্ম ব্যবস্থার অস্থায়িত্ব অনুভব করে তাকে দ্রুত স্থায়ী বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করো।