আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল মুদ্দাস্সির

৫৬ আয়াত

৩১ ) আমি ১৭ ফেরেশতাদের দোযখের কর্মচারী বানিয়েছি ১৮ এবং তাদের সংখ্যাকে কাফেরদের জন্য ফিতনা বানিয়ে দিয়েছি। ১৯ যাতে আহলে কিতাবদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। ২০ ঈমানদারদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, ২১ আহলে কিতাব ও ঈমানদাররা সন্দেহ পোষণ না করে ২২ আর যাদের মনে রোগ আছে তারা এবং কাফেররা যেন বলে, এ অভিনব কথা দ্বারা আল্লাহ‌ কি বুঝাতে চেয়েছে? ২৩ এভাবে আল্লাহ যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদয়াত দান করেন। ২৪ তোমার রবের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ অবহিত নয়। ২৫ আর দোযখের এ বর্ণনা এছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যই নয় যে, মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে। ২৬
وَمَا جَعَلْنَآ أَصْحَـٰبَ ٱلنَّارِ إِلَّا مَلَـٰٓئِكَةًۭ ۙ وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلَّا فِتْنَةًۭ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِيَسْتَيْقِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ وَيَزْدَادَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِيمَـٰنًۭا ۙ وَلَا يَرْتَابَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْمُؤْمِنُونَ ۙ وَلِيَقُولَ ٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌۭ وَٱلْكَـٰفِرُونَ مَاذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِهَـٰذَا مَثَلًۭا ۚ كَذَٰلِكَ يُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِى مَن يَشَآءُ ۚ وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ ۚ وَمَا هِىَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْبَشَرِ ٣١
৩২ ) কখ্খনো না, ২৭ চাঁদের শপথ,
كَلَّا وَٱلْقَمَرِ ٣٢
৩৩ ) আর রাতের শপথ যখন তার অবসান ঘটে।
وَٱلَّيْلِ إِذْ أَدْبَرَ ٣٣
৩৪ ) ভোরের শপথ যখন তা আলোকোজ্জল হয়ে উঠে।
وَٱلصُّبْحِ إِذَآ أَسْفَرَ ٣٤
৩৫ ) এ দোযখও বড় জিনিসগুলোর একটি। ২৮
إِنَّهَا لَإِحْدَى ٱلْكُبَرِ ٣٥
৩৬ ) মানুষের জন্য ভীতিকর।
نَذِيرًۭا لِّلْبَشَرِ ٣٦
৩৭ ) যে অগ্রসর হতে চায় বা পেছনে পড়ে থাকতে চায় ২৯ তাদের সবার জন্য।
لِمَن شَآءَ مِنكُمْ أَن يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ ٣٧
৩৮ ) প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের কাছে দায়বদ্ধ। ৩০
كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ ٣٨
৩৯ ) তবে ডান দিকের লোকেরা ছাড়া ৩১
إِلَّآ أَصْحَـٰبَ ٱلْيَمِينِ ٣٩
৪০ ) যারা জান্নাতে অবস্থান করবে।
فِى جَنَّـٰتٍۢ يَتَسَآءَلُونَ ٤٠
১৭.
এখান থেকে “তোমার রবের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ অবহিত নয়” পর্যন্ত বাক্যগুলোতে একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। “দোযখের কর্মচারীর সংখ্যা শুধু উনিশ জন হবে” একথা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে শুনে যারা সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছিল এবং কথাটা নিয়ে হাসি-ঠাট্রা করতে শুরু করেছিল প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের মাঝখানে বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় ছেদ টেনে তাদের কথার জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের কাছে একথাটি বিস্ময়কর মনে হয়েছে যে, এক দিকে আমাদের বলা হচ্ছে আদম আলাইহিস সালামের সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ কুফরী করেছে এবং কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছে তাদের সবাইকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। অপরদিকে আমাদের জানানো হচ্ছে যে, এত বড় বিশাল দোযখে অসংখ্য মানুষকে আযাব দেয়ার জন্য মাত্র উনিশ জন কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। একথা শুনে কুরাইশ নেতারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আবু জেহেল বললোঃ আরে ভাই, তোমরা কি এতই অকর্মা ও অথর্ব হয়ে পড়ছো যে, তোমাদের মধ্য থেকে দশ দশ জনে মিলেও দোযখের একজন সিপাইকে কাবু করতে পারবে না? বনী জুমাহ্ গোত্রের এক পলোয়ান সাহেব তো বলতে শুরু করলোঃ সতের জনকে আমি একাই দেখে নেব। আর তোমরা সবাই মিলে অবশিষ্ট দুই জনকে কাবু করবে। এসব কথার জবাব হিসেবে সাময়িকভাবে প্রসঙ্গ পাল্টে একথাগুলো বলা হয়েছে।
১৮ .
অর্থাৎ মানুষের দৈহিক শক্তির সাথে তুলনা করে তাদের শক্তি সম্পর্কে অনুমান করা তোমাদের বোকামী ও নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা মানুষ নয়, বরং ফেরেশতা। তোমাদের পক্ষে অনুমান করাও সম্ভব নয় যে, কি সাংঘাতিক শক্তিধর ফেরেশতা আল্লাহ‌ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন।
১৯.
অর্থাৎ দোযখের কর্মচারীদের সংখ্যা বর্ণনা করার বাহ্যত কোন প্রয়োজনই ছিল না। কিন্তু তাদের সংখ্যা আমি এজন্য উল্লেখ করলাম যাতে তা সেসব লোকের জন্য ফিতনা হয়ে যায় যারা নিজেদের মনের মধ্যে এখনও কুফরী লুকিয়ে রেখেছে। এ ধরনের লোক বাহ্যিকভাবে ঈমানের প্রদর্শনী যতই করুন না কেন তার অন্তরের কোন গভীরতম প্রদেশেও যদি সে আল্লাহর উলুহিয়াত ও তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা কিংবা অহী ও রিসালাত সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহ বা দ্বিধা-দ্বন্দ্বও পোষণ করে থাকে তাহলে আল্লাহর এত বড় জেলখানায় অসংখ্য অপরাধী মানুষ ও জিনকে শুধু উনিশ জন সিপাই সামলে রাখবে এবং আলাদাভাবে প্রত্যেককে শাস্তিও দেবে একথা শোনামাত্র তার লুকিয়ে রাখা কুফরী স্পষ্ট বেরিয়ে পড়বে।
২০.
কোন কোন মুফাস্সির এর এ অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, আহলে কিতাবের (ইয়াহুদ ও খৃস্টান) ধর্মগ্রন্থেও যেহেতু দোযখের ফেরেশতাদের এ সংখ্যাটিই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই একথা শোনামাত্র তাদের দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হবে যে, প্রকৃতপক্ষে এটা আল্লাহর কথাই হবে। কিন্তু আমাদের মতে দু’টি কারণে এ ব্যাখ্যা সঠিক নয়। প্রথম কারণটি হলো, ইয়াহুদ ও খৃস্টানদের যে ধর্মগ্রন্থ বর্তমানে দুনিয়ায় পাওয়া যায় তাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও দোযখের কর্মচারী ফেরেশতার সংখ্যা উনিশ জন একথা কোথাও পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় কারণটি হলো, কুরআনের বহুসংখ্যক বক্তব্য আহলে কিতাবের ধর্মীয় গ্রন্থে বর্ণিত বক্তব্যের অনুরূপ। কিন্তু ইয়াহুদ ও খৃস্টানরা এসব বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে বলে যে, মুহাম্মাদ ﷺ এসব কথা তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে গ্রহণ করেছেন। এসব কারণে আমাদের মতে একথাটির সঠিক অর্থ হলোঃ মুহাম্মাদ ﷺ ভাল করেই জানতেন যে তার মুখে দোযখের কর্মচারী ফেরেশতার সংখ্যা উনিশ, একথা উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে তাঁর প্রতি হাসি-তামাসা ও ঠাট্রা-বিদ্রূপের অসংখ্য বাণ নিক্ষিপ্ত হবে। তা সত্ত্বেও আল্লাহর প্রেরিত অহীতে যে কথা বলা হয়েছে, তা তিনি কোন প্রকার ভয়-ভীতি বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে সবার সামনে পেশ করলেন এবং কোন প্রকার ঠাট্রা-বিদ্রূপের আদৌ পরোয়া করলেন না। জাহেল আরবরা নবীদের মাহাত্ম্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত ছিল না ঠিকই, কিন্তু আহলে কিতাব গোষ্ঠী ভাল করেই জানতো যে প্রত্যেক যুগে নবীদের নীতি ও পদ্ধতি এটাই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে যা কিছু আসতো মানুষ পছন্দ করুন বা না করুক তারা তা হুবহু মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিতেন। তাই আশা করা গিয়েছিল যে, এ চরম প্রতিকূল পরিবেশে রসূলকে ﷺ বাহ্যত অদ্ভূত একথাটি কোন প্রকার দ্বিধা-সংকোচ না করে সারাসরি পেশ করতে দেখে অন্তত আহলে কিতাব গোষ্ঠীর দৃঢ় প্রত্যয় জন্মাবে যে, এটি একজন নবীর কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। এক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় আহলে কিতাব গোষ্ঠীর কাছ থেকে এ আচরণ লাভের প্রত্যাশা ছিল বেশী।

উল্লেখ্য যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে এ কর্মনীতি বেশ কয়েকবার প্রতিফলিত হয়েছে। এর মধ্যে সব চাইতে উল্লেখযোগ্য হলো মি’রাজের ঘটনা। তিনি কাফেরদের সমাবেশে নিসংকোচে ও দ্বিধাহীন চিত্তে মি’রাজের ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। এ বিস্ময়কর ঘটনা শুনে তাঁর বিরোধীরা কত রকমের কাহিনী ফাঁদবে তার এক বিন্দু পরোয়াও তিনি করেননি।

২১.
একথাটি ইতিপূর্বে কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি পরীক্ষার সময় একজন ঈমানদার যদি তার ঈমানে অটল ও অচল থাকে এবং সন্দেহ-সংশয় কিংবা আনুগত্য পরিহার কিংবা দ্বীনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পথ বর্জন করে দৃঢ় প্রত্যয়, আস্থা, আনুগত্য ও অনুসরণ এবং দ্বীনের প্রতি আস্থা পোষণের পথ অনুসরণ করে তাহলে তার ঈমান দৃঢ়তা ও সমৃদ্ধি লাভ করে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৭৩; আল আনফাল, আয়াত ২; টীকা ২; আত্ তাওবা, আয়াত ১৪৪ ও ১৪৫; টীকা ১২৫; আল আহযাব, আয়াত ২২, টীকা ৩৮; আল ফাতাহ, আয়াত ৪; টীকা ৭)।
২২.
কুরআন মজীদে সাধারণত “মনের রোগ” কথাটি মুনাফেকী অর্থে ব্যবহার করা হয়। তাই এক্ষেত্রে এ শব্দটির ব্যবহার দেখে কোন কোন মুফাস্সির মনে করেছেন, এ আয়াতটি মদীনাতে নাযিল হয়েছে। কারণ, মদীনাতেই মুনাফিকদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। কিন্তু এ ধারণা কয়েকটি কারণে ঠিক নয়। প্রথমত এ দাবী ঠিক নয় যে মক্কায় মুনাফিক ছিল না। আমরা তাফহীমুল কুরআন সূরা আনকাবুতের ভূমিকায় এবং ১, ১৩, ১৪, ১৫.ও ১৬নং টীকায় এ ভ্রান্তি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি। দ্বিতীয়ত বিশেষ পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ আয়াতসমূহের কোন একটি আয়াত সম্পর্কে একথা বলা যে, তা অন্য কোন পরিস্থিতিতে নাযিল হয়েছে এবং কোন পূর্বাপর সম্পর্ক ছাড়াই এখানে জুড়ে দেয়া হয়েছে, এভাবে কুরআনের কোন আয়াতের তাফসীর করা আমরা সঠিক মনে করি না। নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতসমূহ থেকেই আমরা সূরা মুফাস্সিরের এ অংশের ঐতিহাসিক পটভূমি জানতে পারি। মক্কী যুগের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে এ অংশটি নাযিল হয়েছিল। ঘটনার সাথে বক্তব্যের ধারাবাহিকতার পুরোপুরি সামঞ্জস্য রয়েছে। যদি এ একটি বাক্য কয়েক বছর পর মদীনাতেই নাযিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে এ বিশেষ বিষয়ের মধ্যে এনে জুড়ে দেয়ার কি এমন অবকাশ বা যুক্তি আছে? এখন একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, “মনের রোগ” বলতে তাহলে কি বুঝানো হয়েছে? এর জবাব হলো, এর অর্থ সন্দেহের রোগ। অকাট্যভাবে এবং নিসংশয়ে আল্লাহ, আখেরাত, অহী, রিসালাত, জান্নাত ও দোযখ অস্বীকার করে এমন লোক শুধু মক্কায় নয় গোটা পৃথিবীতে আগেও যেমন কম ছিল এখনও তেমনি কম আছে। আল্লাহ আছেন কিনা, আখেরাত হবে কি হবে না, ফেরেশতা, জান্নাত ও দোযখ বাস্তাবিকই আছে না কাল্পকাহিনী মাত্র? রসূল কি প্রকৃতই রসূল ছিলেন? তাঁর কাছে কি সত্যই অহী আসতো? প্রত্যেক যুগে এ ধরনের সন্দেহ পোষণকারী লোকের সংখ্যাই অধিক ছিল। এ সন্দেহই অধিকাংশ মানুষকে শেষ পর্যন্ত কুফরীতে নিমজ্জিত করেছে। তা না হলে যারা এসব সত্য অকাট্যভাবে অস্বীকার করে পৃথিবীতে এরূপ নির্বোধের সংখ্যা কোন সময়ই বেশী ছিল না। কেননা যার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ বিবেক-বুদ্ধিও আছে সেও জানে যে, এসব বিষয়ের সত্য ও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করে দেয়া এবং অকাট্যভাবে অসম্ভব ও অবাস্তব বলে সিদ্ধান্ত দেয়ার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।
২৩.
এর অর্থ এ নয় যে, তারা একে আল্লাহর বাণী বলে মেনে নিচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু বিস্ময় প্রকাশ করছিলো এজন্য যে, আল্লাহ তা’আলা একথা বললেন কেন? বরং প্রকৃতপক্ষে তারা বলতে চাচ্ছিলো যে, যে বাণীতে এরূপ বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী ও দুর্বোধ্য কথা বলা হয়েছে তা আল্লাহর বাণী কি করে হতে পারে?
২৪.
অর্থাৎ এভাবে আল্লাহ তা’আলা মাঝে মধ্যে তাঁর বাণী ও আদেশ-নির্দেশে এমন কিছু কথা বলেন যা মানুষের জন্য পরীক্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কথা শুনে একজন সত্যপন্থী, সৎপ্রকৃতির এবং সঠিক চিন্তার লোক সহজ-সরল অর্থ গ্রহণ করে সঠিক পথ অনুসরণ করে একজন হঠকারী বক্রচিন্তাধারী এবং সত্যকে এড়িয়ে চলার মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি সে একই কথার বাঁকা অর্থ করে তাকে ন্যায় ও সত্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটা নতুন বাহানা হিসেবে ব্যবহার করে। প্রথমোক্ত ব্যক্তি নিজে যেহেতু সত্যপন্থী তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে হিদায়াত দান করেন। কারণ, হিদায়াত প্রার্থী ব্যক্তিকে জোর করে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করা আল্লাহর নীতি নয়। শেষোক্ত ব্যক্তি যেহেতু নিজেই হিদায়াত চায় না, বরং গোমরাহীকেই পছন্দ করে তাই আল্লাহ তাকে গোমরাহীর পথেই ঠেলে দেন। কারণ যে ন্যায় ও সত্যকে ঘৃণা করে তাকে জোর করে হকের পথে টেনে আনা আল্লাহর নীতি নয়। (আল্লাহ তা’আলার হিদায়াত দান করা এবং গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করার বিষয়টি সম্পর্কে এ তাফসীর গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ নীচে উল্লেখিত জায়গাসমূহে দেখুন, সূরা আল বাকারাহ, টীকা ১০, ১৬, ১৯ ও ২০; আন নিসা, ১৭৩; আল আন’আম, টীকা ১৭, ২৮ ও ৯০; ইউনুস, টীকা ১৩; আল কাহফ, টীকা ৫৪ এবং আল কাসাস, টীকা ৭১)
২৫.
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এ বিশ্ব-জাহানে ভিন্ন ভিন্ন কত শত রকমের জীব-জন্তু যে সৃষ্টি করে রেখেছেন, তাদের কত রকম শক্তি সামর্থ যে দান করেছেন এবং তাদের দ্বারা কত রকম কাজ যে আঞ্জাম দিচ্ছেন একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। পৃথিবীর মত ক্ষুদ্র একটি গ্রহে বসবাসকারী মানুষ তার সীমাবদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে চার পাশের ক্ষুদ্র পৃথিবীকে দেখে যদিও ভুল ধারণা করে বসে যে, সে তার ইন্দ্রিয়সমূহের সাহায্যে যা কিছু দেখছে ও অনুভব করছে কেবল মাত্র সেগুলোই আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বধীন তাহলে এটা তার মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’আলার সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বধীন এ বিশ্ব-জাহান এত ব্যাপক ও বিশাল যে, মানুষের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এর ব্যাপকতা ও বিশালতার সবটুকু জ্ঞানের স্থান সংকুলান তো দূরের কথা এর কোন একটি জিনিস সম্পর্কেও পুর্ণ জ্ঞান লাভ করা তার সাধ্যাতীত।
২৬ .
অর্থাৎ দোযখের উপযুক্ত হয়ে যাওয়া এবং তার শাস্তি লাভের পূর্বেই লোকেরা যেন তা থেকে নিজেদের রক্ষার চিন্তা করে।
২৭ .
অর্থাৎ এটা কোন ভিত্তিহীন কথা নয় যে তা নিয়ে এভাবে হাসি তামাসা বা ঠাট্রা-বিদ্রূপ করা যাবে।
২৮.
অর্থাৎ চন্দ্র এবং রাত-দিন যেমন আল্লাহর কুদরতের বিরাট বিরাট নিদর্শন ঠিক তেমনি দোযখও আল্লাহর বিশাল সৃষ্টিসমূহের একটি। চাঁদের অস্তিত্ব যদি অসম্ভব না হয়ে থাকে। রাত ও দিনের নিয়মানুবর্তিতার সাথে আগমন তথা আবর্তন যদি অসম্ভব না হয় তাহলে তোমাদের মতে দোযখের অস্তিত্ব অসম্ভব হবে কি কারণে? রাত দিন সব সময় যেহেতু তোমরা এসব জিনিস দেখছো তাই এগুলো সম্পর্কে তোমাদের মনে কোন বিস্ময় জাগে না। অন্যথায় এগুলোর প্রত্যেকটি আল্লাহর কুদরতের একেকটি বিস্ময়কর মু’জিযা। কোন সময় এসব জিনিস যদি তোমরা না দেখতে। আর এ অবস্থায় কেউ যদি তোমাদের বলতো যে, চাঁদের মত একটি জিনিস এ পৃথিবীতে আছে অথবা সূর্য এমন একটি বস্তু যা আড়ালে চলে গেলে দুনিয়া আঁধারে ঢাকা পড়ে এবং আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলে দুনিয়া আলোকোদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তাহলে একথা শুনেও তোমাদের মত লোকেরা অট্টহাসিতে ঠিক তেমনি ফেটে পড়তে যেমন দোযখের কথা শুনে আজ ফেটে পড়ছো।
২৯ .
এর অর্থ হলো, এ জিনিসটি দ্বারা মানুষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ ইচ্ছা করলে এ জিনিসটিকে ভয় করে কল্যাণের পথে আরো এগিয়ে যেতে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে পেছনে সরে যেতে পারে।
৩০ .
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন সূরা তূরের ১৬নং টীকা।
৩১.
অন্য কথায় বাম দিকের লোকেরা তাদের কৃতকর্মের বিনিময়ে পাকড়াও হবে। কিন্তু ডান দিকের লোকেরা দায়বদ্ধ অবস্থা থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে। (ডান বা বাঁ দিকের ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা ওয়াকিয়া, টীকা, ৫ ও ৬)।
অনুবাদ: