আল মুদ্দাস্সির

৫৬ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
২১ ) অতঃপর সে মানুষের দিকে চেয়ে দেখলো।
ثُمَّ نَظَرَ ٢١
২২ ) তারপর ভ্রুকুঞ্চিত করলো এবং চেহারা বিকৃত করলো।
ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ ٢٢
২৩ ) অতঃপর পেছন ফিরলো এবং দম্ভ প্রকাশ করলো।
ثُمَّ أَدْبَرَ وَٱسْتَكْبَرَ ٢٣
২৪ ) অবশেষে বললোঃ এ তো এক চিরাচরিত যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।
فَقَالَ إِنْ هَٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ يُؤْثَرُ ٢٤
২৫ ) এ তো মানুষের কথা মাত্র। ১৪
إِنْ هَٰذَآ إِلَّا قَوْلُ ٱلْبَشَرِ ٢٥
২৬ ) শিগগিরই আমি তাকে দোযখে নিক্ষেপ করবো।
سَأُصْلِيهِ سَقَرَ ٢٦
২৭ ) তুমি কি জানো, সে দোযখ কি?
وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا سَقَرُ ٢٧
২৮ ) যা জীবিতও রাখবে না আবার একেবারে মৃত করেও ছাড়বে না। ১৫
لَا تُبْقِى وَلَا تَذَرُ ٢٨
২৯ ) গায়ের চামড়া ঝলসিয়ে দেবে। ১৬
لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ ٢٩
৩০ ) সেখানে নিয়োজিত আছে উনিশ জন কর্মচারী।
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ ٣٠
১৪.
মক্কায় কাফেরদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এখানে সে সম্মেলনে সংঘটিত ঘটনার কথা বলা হচ্ছে। সূরার ভূমিকায় ঘটনাটির যে বিস্তারিত বিবরণ আমরা উল্লেখ করেছি তা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, এ ব্যক্তি মনে প্রাণে যে বিশ্বাস করে নিয়েছিল যে, কুরআন আল্লাহর বাণী। কিন্তু নিজের গোত্রের মধ্যে তার মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য ঈমান আনতে প্রস্তুত ছিল না। কাফেরদের সে সম্মেলনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে কুরাইশ নেতাদের প্রস্তাবিত অভিযোগসমূহ সে নিজেই যখন খণ্ডন করলো তখন আরবের লোকদের মধ্যে রটিয়ে দিয়ে নবীকে (সা.) বদনাম করা যায় এমন কোন অভিযোগ তৈরি পেশ করতে খোদ তাকেই বাধ্য করা হলো। এ সময় সে যেভাবে তার বিবেকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং বেশ কিছু সময় কঠিন মানসিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকার পর পরিশেষে সে যেভাবে একটি অভিযোগ তৈরী করলো, তার একটা পূর্ণাংগ চিত্র এখানে পেশ করা হয়েছে।
১৫.
এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হলো, যাকেই এর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে তাকেই সে জ্বালিয়ে ছাই করে দেবে। কিন্তু জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়েও সে রক্ষা পাবে না। বরং আবার তাকে জীবিত করা হবে এবং আবার জ্বালানো হবে। আরেক জায়গায় কথাটা এভাবে বলা হয়েছেঃ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَى সেখানে সে মরে নিঃশেষ হয়েও যাবে না আবার বেঁচেও থাকবে না (আল আ’লা, ১৩)। এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে এই যে, আযাবের উপযুক্ত কেউ-ই তার কবল থেকে রক্ষা পাবে না। আর যে তার কবলে পড়বে তাকেই আযাব থেকে রেহাই দেবে না।
১৬.
“তা দেহের কোন অংশই না জ্বালিয়ে ছাড়বে না” একথা বলে আবার “চামড়া ঝলসিয়ে দেবে” কথাটি আলাদা করে উল্লেখ করাটা বাহ্যত অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। কিন্তু এ বিশেষ ধরনের আযাবের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করার উদ্দেশ্যে হলো, মূলত মুখমণ্ডল ও দেহের চামড়াই মানুষের ব্যক্তিত্বকে সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরে বা প্রকাশ করে। তাই চেহারা ও গাত্রচর্মের কুৎসিত দর্শন ও কুশ্রী হওয়া তার জন্য সর্বাধিক মানসিক যন্ত্রনার কারণ হবে। শরীরের আভ্যন্তরীণ অংগ-প্রত্যংগে তার যত কষ্ট ও যন্ত্রণাই হোক না কেন সে তাতে ততটা মানসিক যাতনাক্লিষ্ট হয় না। যতটা হয় তার চেহারা কুৎসিত হলে কিংবা শরীরের খোলা মেলা অংশের চামড়া বা ত্বকের ওপর বিশ্রী দাগ পড়লে। কারণ কোন মানুষের চেহারা ও গাত্র চর্মে বিশ্রী দাগ থাকলে সবাই তাকে ঘৃনা করে। তাই বলা হয়েছেঃ এ সুদর্শন চেহারা এবং অত্যন্ত নিটোল ও কান্তিময় দেহধারী যেসব মানুষ নিজেদের ব্যক্তিত্ব গৌরবে আত্মহারা তারা যদি আল্লাহর আয়াতের সাথে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার মত শত্রুতার আচরণ করতেই থাকে তাহলে তাদের মুখমণ্ডল ঝলসিয়ে বিকৃত করে দেয়া হবে আর তাদের গাত্রচর্ম পুড়িয়ে কয়লার মত কালো করে দেয়া হবে।
অনুবাদ: