নামকরণ
এ সূরার ৪৬ ও ৪৭নং আয়াতে (পঞ্চম রুকূ’তে) “আসহাবে আ'রাফ” বা আরাফবাসীদের উল্লেখ করা হয়েছে। সেই জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে “আল আ'রাফ।” অন্য কথায় বলা যায়, এ সূরাকে সূরা আল আরাফ বলার তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, যে সূরার মধ্যে আ’রাফের কথা বলা হয়েছে, এটা সেই সূরা।
নাযিলের সময়-কাল
এ সূরার আলোচ্য বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সুস্পষ্টভাবে অনুভূত হয় যে, এ সূরাটি সূরা আন’আমের প্রায় সমসময়ে নাযিল হয়। অবশ্য এটি আগে না আন’আম আগে নাযিল হয় তা নিশ্চয়তার সাথে চিহ্নিত করা যাবে না। তবে এ সূরায় প্রদত্ত ভাষণের বাচনভংগী থেকে এটি যে ঐ সময়ের সাথে সম্পর্কিত তা পরিষ্কার বুঝা যায়। কাজেই এর ঐতিহাসিক পটভূমি অনুধাবন করার জন্য সূরা আন’আমের শুরুতে যে ভূমিকা লেখা হয়েছে তার ওপর একবার নজর বুলিয়ে নেয়া যথেষ্ট হবে।
আলোচ্য বিষয়
এ সূরার ভাষণের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত। আল্লাহ প্রেরিত রসূলের আনুগত্য করার জন্য শ্রোতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করাই এর সমগ্র আলোচনার মৌল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। কিন্তু এ দাওয়াত সতর্ক করার ও ভয় দেখানোর ভাবধারাই ফুটে উঠেছে বেশী করে। কারণ এখানে যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে (অর্থাৎ মক্কাবাসী) তাদেরকে বুঝাতে বুঝাতে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। তাদের স্থুল শ্রবণ ও অনুধাবন শক্তি, হঠকারিতা, গোয়ার্তুমী ও একগুঁয়ে মনোভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। যার ফলে রসূলের প্রতি তাদেরকে সম্বোধন করা বন্ধ করে দিয়ে অন্যদেরকে সম্বোধন করার হুকুম অচিরেই নাযিল হতে যাচ্ছিল। তাই বুঝাবার ভংগীতে নবুয়াত ও রিসালাতের দাওয়াত পেশ করার সাথে সাথে তাদেরকে একথাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, নবীর মোকাবিলায় তোমরা যে কর্মনীতি অবলম্বন করেছো তোমাদের আগের বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ও নিজেদের নবীদের সাথে অনুরূপ আচরণ অবলম্বন করে অত্যন্ত মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিল। তারপর বর্তমানে যেহেতু তাদেরকে যুক্তি প্রমাণ সহকারে দাওয়াত দেবার প্রচেষ্টা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হতে চলেছে। তাই ভাষণের শেষ অংশে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আহলি কিতাবদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। আর এক জায়গায় সারা দুনিয়ার মানুষকে সাধারণভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। এ থেকে এরূপ আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, এখন হিজরত নিকটবর্তী এবং নবীর জন্য তার নিটকতর লোকদেরকে সম্বোধন করার যুগ শেষ হয়ে আসছে।এ ভাষণের এক পর্যায়ে ইহুদিদেরকেও সম্বোধন করা হয়েছে। তাই এই সাথে রিসালাত ও নবুয়াতের দাওয়াতের আর একটি দিকও সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। নবীর প্রতি ঈমান আনার পর তাঁর সাথে মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করার, আনুগত্য ও অনুসৃতির অঙ্গীকার করার পর তা ভংগ করার এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে যাওয়ার পর মিথ্যার প্রতি সাহায্য সহযোগিতা দানের কাজে আপাদমস্তক ডুবে থাকার পরিনাম কি, তাও এতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।