একঃ পোশাক মানুষের জন্য কোন কৃত্রিম জিনিস নয়। বরং এটি মানব প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী। আল্লাহ মানুষের দেহের বহির্ভাগে পশুদের মত কোন লোমশ আচ্ছাদন জন্মগতভাবে তৈরী করে দেননি। বরং লজ্জার অনুভূতি তার প্রকৃতির মধ্যে গচ্ছিত রেখে দিয়েছেন। তিনি মানুষের যৌন অংগগুলোকে কেবলমাত্র যৌনাংগ হিসেবেই তৈরী করেননি বরং এগুলোকে “সাওআত”ও বানিয়েছেন। আরবী ভাষায় “সাওআত” এমন জিনিসকে বলা হয় যার প্রকাশকে মানুষ খারাপ মনে করে। আবার এ প্রকৃতিগত লজ্জার দাবী পূরণ করার জন্য তিনি মানুষকে কোন তৈরি করা পোষাক দেননি। বরং তার প্রকৃতিকে পোশাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছেন,(أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا) যাতে নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে সে প্রকৃতির এ দাবীটি উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহর সৃষ্ট উপাদান ও উপকরণসমূহ কাজে লাগিয়ে নিজের জন্য পোশাক তৈরী করতে সক্ষম হয়।
দুইঃ এ প্রাকৃতিক ও জন্মগত উপলব্ধির প্রেক্ষিতে মানুষের জন্য পোশাকের নৈতিক প্রয়োজনই অগ্রগণ্য। অর্থাৎ প্রথমে সে “সাওআত” তথা নিজের লজ্জাস্থান আবৃত করবে। আর তার স্বভাবগত চাহিদা ও প্রয়োজন দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত। অর্থাৎ তারপর তার পোশাক তার জন্য “রীশ”, অর্থাৎ তার দৈহিক সৌন্দর্য বিধান করবে এবং আবহাওয়ার প্রভাব থেকে তার দেহ সৌষ্ঠবকে রক্ষা করবে। এ পর্যায়েও মানুষ ও পশুর ব্যাপার স্বভাবতই সম্পূর্ণ ভিন্ন। পশুর শরীরের লোমশ আচ্ছাদন মূলত তার জন্য 'রীশ' অর্থাৎ তার শরীরের শোভা বর্ধন ও ঋতুর প্রভাব থেকে তাকে রক্ষা করে। তার লোমশ আচ্ছাদন তার লজ্জাস্থান ঢাকার কাজ করে না। কারণ তার যৌনাংগ আদতে তার 'সাওআত' বা লজ্জাস্থান নয়। কাজেই তাকে আবৃত করার জন্য পশুর স্বভাবও প্রকৃতিতে কোন অনুভূতি ও চাহিদা থাকে না এবং তার চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে তার জন্য কোন পোশাকও সৃষ্টি করা হয় না। কিন্তু মানুষ যখন শয়তানের নেতৃত্ব গ্রহণ করলো তখন ব্যাপারটি আবার উল্টে গেলো। শয়তান তার এ শিষ্যদেরকে এভাবে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হলো যে, তোমাদের জন্য পোশাকের প্রয়োজন পশুদের জন্য পোশাকের প্রয়োজনের সমপর্যায়ভুক্ত, আর পোশাক দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার ব্যাপারটি মোটেই কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং পশুদের অংগ-প্রত্যংগ যেমন তাদের লজ্জাস্থান হিসেবে বিবেচিত হয় না, ঠিক তেমনি তোমাদের এ অংগ-প্রত্যংগ গুলোও লজ্জাস্থান নয় বরং এগুলো নিছক যৌনাংগ।
তিনঃ মানুষের পোশাক কেবলমাত্র তার লজ্জাস্থান আবৃত করার এবং তার শারীরিক শোভাবর্ধন ও দেহ সংরক্ষণের উপায় হবে, এতটুকুই যথেষ্ট নয়। বরং আসলে এ ব্যাপারে তাকে অন্তত এতটুকু মহত্তর মানে পৌঁছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক তাকওয়ার পোশাকে পরিণত হয়। অর্থাৎ তার পোশাক দিয়ে সে পুরোপুরি “সতর” তথা লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। সৌন্দর্য চর্চা ও সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে তা সীমা অতিক্রম করে যাবে না বা ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্ন মানেরও হবে না। তার মধ্যে গর্ব, অহংকার ও আত্মম্ভরিতার কোন প্রদর্শনী থাকবে না। আবার এমন কোন মানসিক রোগের প্রতিফলনও তাতে থাকবে না। যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসুলভ আচরণ করতে থাকে, নারী করতে থাকে পুরুষসুলভ আচরণ এবং এক জাতি নিজেকে অন্য এক জাতির সদৃশ বানাবার প্রচেষ্টায় নিজেই নিজের হীনতা ও লাঞ্ছনার জীবন্ত প্রতীকে পরিণত হয়। যেসব লোক নবীদের প্রতি ঈমান এনে নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি, তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাংখিত মহত্তর মানে উপনীত হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। যখন তারা আল্লাহর পথনির্দেশনা গ্রহণে অসম্মতি জানায় তখন শয়তানদেরকে তাদের পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক বানিয়ে দেয়া হয় এবং এ শয়তানরা তাদেরকে কোন না কোনভাবে ভুল-ভ্রান্তি ও অসৎকাজে লিপ্ত করেই ছাড়ে।
চারঃ দুনিয়ার চারদিকে আল্লাহর যেসব অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে এবং যেগুলো মহাসত্যের সন্ধান লাভের ব্যাপারে মানুষকে সাহায্য করে, পোশাকের ব্যাপারটিও তার অন্যতম। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে, মানুষের নিজের তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ওপরে আমি যেসব সত্যের দিকে ইঙ্গিত করেছি সেগুলোকে একটু গভীর দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে পোশাক কোন্ দৃষ্টিতে আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন তা সহজেই অনুধাবন করা যেতে পারে।