وَلِلَّهِ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ فَٱدْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا۟ ٱلَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِىٓ أَسْمَـٰٓئِهِۦ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
ভাল নামগুলো ১৪১ আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। সুতরাং ভাল নামেই তাঁকে ডাকো এবং তাঁর নাম রাখার ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন কর। তারা যা কিছু করে এসেছে, তার ফল অবশ্যি পাবে। ১৪২
১৪১
এখন ভাষণ শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই উপসংহারে উপদেশ ও তিরষ্কার মিশ্রিত পদ্ধতিতে লোকদেরকে তাদের কয়েকটি প্রধান প্রধান গোমরাহীর ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। এই সঙ্গে নবীর দাওয়াতের মোকাবিলায় তারা যে অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান ও বিদ্রূপাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করেছিল, তার ভুল বুঝিয়ে দিয়ে তার অশুভ পরিণাম সম্পর্কেও তাদেরকে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে।
১৪২
মানুষের মনে বিভিন্ন জিনিসের যে ধারণা থাকে এবং বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে মানুষ যেসব কল্পনা করে থাকে, তারই ভিত্তিতে নিজের ভাষায় সে তাদের নাম রাখে। ধারণা ও কল্পনায় গলদ থাকলে তা নামের মধ্যেও ফুটে উঠে। আবার নামের ভ্রান্তি, ধারণা ও কল্পনার ভ্রান্তির কথাই প্রকাশ করে। তারপর বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে মানুষের মনে যে ধারণা থাকে, তারই ভিত্তিতে তার সাথে তার সম্পর্কও গড়ে উঠে এবং সেই হিসেবে তার সাথে সে ব্যবহারও করে। ধারণা ও কল্পনার ত্রুটি, সম্পর্ক ও ব্যবহারের ত্রুটির আকারে আত্মপ্রকাশ করে। আবার ধারণা ও কল্পনা নির্ভুল হলে, পারস্পরিক সম্পর্কও নির্ভুল ও সঠিক রূপ নেয়। একথা দুনিয়ার অন্যান্য সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে যেমন সত্য, তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও সত্য। মানুষ আল্লাহর নাম (তাঁর সত্তা সম্পর্কিত হোক বা গুণবাচক নাম হোক) স্থির করার ব্যাপারে যে ভুল করে থাকে, তা হয় আসলে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কিত তার আকীদা বিশ্বাসের ফলশ্রুতি। তারপর আল্লাহ সম্পর্কে নিজের ধারণা ও আকীদার মধ্যে মানুষ যতটুকু ও যে ধরণের ভুল করে, ঠিক ততটুকু ও সেই ধরণের ভুল তার নিজের জীবনের সমগ্র নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মনীতি গড়ে তোলার ব্যাপারেও সংঘটিত হয়ে যায়। কারণ মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে এবং আল্লাহর সাথে নিজের ও বিশ্বজাহানের সম্পর্কের ব্যাপারে যে ধারণা গড়ে তোলে, পুরোপুরি তারই ভিত্তিতে তার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠে। তাই বলা হয়েছে, আল্লাহর নাম রাখার ব্যাপারে ভুল করা থেকে দূরে থাকো। ভাল নামই আল্লাহর উপযোগী এবং তার সাহায্যেই তাঁকে স্মরণ করা উচিত। তার নাম ঠিক করার ব্যাপারে ‘ইলহাদ’ তথা বিদ্রোহাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।
“ভাল ভাল নাম” বলতে এমন সব নাম বুঝায়, যার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব, তাঁর পাক-পবিত্রতা ও তাঁর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর প্রকাশ ঘটে। কুরআনে উল্লেখিত ‘ইলহাদ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, মধ্যবর্তী স্থান থেকে সরে যাওয়া এবং সোজা-সরল দিক থেকে বিপথগামী হয়ে যাওয়া। তীর যখন সোজা নিশানায় না লেগে অন্য কোনো দিকে লাগে, তখন আরবীতে বলা হয় الحد السهم الهدف অর্থাৎ তীর নিশানা থেকে ইহলাদ করেছে। অর্থাৎ লক্ষভ্রষ্ট হয়েছে। আল্লাহর নাম রাখার ব্যাপারে ‘ইহলাদ’ হচ্ছে এই যে, আল্লাহর এমনভাবে নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়, যা তাঁর আদবের পরিপন্থী হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোনো প্রকার ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর উপযোগী, সৃষ্টি জগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইহলাদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর কুরআনের আয়াতে যে বলা হয়েছে “আল্লাহর নাম রাখার ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় (ইহলাদ করে) তাদেরকে বর্জন কর। এর অর্থ হচ্ছে, সোজাভাবে বুঝাবার পর যদি তারা না বোঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হবার তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভুগবে।