۞ وَوَٰعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَـٰثِينَ لَيْلَةًۭ وَأَتْمَمْنَـٰهَا بِعَشْرٍۢ فَتَمَّ مِيقَـٰتُ رَبِّهِۦٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ ۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَـٰرُونَ ٱخْلُفْنِى فِى قَوْمِى وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ ٱلْمُفْسِدِينَ
মূসাকে আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশ দিন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো। ৯৯ যাওয়ার সময় মূসা তার ভাই হারুনকে বললোঃ আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সঠিক কাজ করতে থাকবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথে চলবে না। ১০০
৯৯
মিসর থেকে বের হবার পর বনী ইসরাঈলীদের দাসসুলভ জীবনের অবসান ঘটলো। তারা একটি স্বাধীন জাতির মর্যাদা লাভ করলো। এ সময় বনী ইসরাঈলীদেরকে একটি শরীয়াত দান করার জন্য মহান আল্লাহর হুকুমে মূসা (আ) কে সিনাই পাহাড়ে ডাকা হলো। কাজেই ওপরে যে ডাকের কথা বলা হয়েছে তা ছিল এ ব্যাপারে প্রথম ডাক। আর এর জন্য চল্লিশ দিনের মেয়াদ নির্দিষ্ট করার বিশেষ কারণ ছিল। হযরত মূসা চল্লিশ দিন পাহাড়ের ওপর কাটাবেন। রোযা রাখবেন। দিনরাত ইবাদত-বন্দেগী ও চিন্তা-গবেষণা করে মন-মস্তিষ্ককে একমুখী ও একনিষ্ঠ করবেন এবং এভাবে তাঁর ওপর যে গুরুত্বপূর্ণ বাণী নাযিল হতে যাচ্ছিল তাকে যথাযতভাবে গ্রহণ করার যোগ্যতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারবেন।
হযরত মূসা এ নির্দেশ পালন করার উদ্দেশ্যে সিনাই পাহাড়ে যাবার সময় বর্তমান মানচিত্রে বনী সালেহ ও সিনাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ওয়াদি আল শায়খ (আল শায়খ উপত্যকা) নামে অভিহিত স্থানটিতে বনী ইসরাঈলকে রেখে গিয়েছিলেন। এ উপত্যকার যে অংশে বনী ইসরাঈল তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করেছিল বর্তমানে তার নাম আল রাহা প্রান্তর। উপত্যকার এক প্রান্তে একটি ছোট পাহাড় অবস্থিত। স্থানীয় বর্ণনা অনুযায়ী হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম সামূদের এলাকা থেকে হিজরত করে এখানে এসে অবস্থান করেছিলেন। বর্তমানে সেখানে তাঁর স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে জাবাল-ই-হারুণ নামে আর একটি ছোট পাহাড়। কথিত আছে, হযরত হারুন আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলদের বাছুর পূজায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুদ্ধ হয়ে এখানে এসে বসেছিলেন। তৃতীয় দিকে রয়েছে সিনাইয়ের উঁচু পর্বত! এর ওপরের ভাগ সবসময় মেঘে আচ্ছন্ন থাকে। এর উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট। এ পাহাড়ের শিখর দেশে অবস্থিত একটি গুহা আজো তীর্থ যাত্রীদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়ে আছে। এ গুহায় হযরত মূসা (আ) চিল্লা দিয়েছিলেন অর্থাৎ চল্লিশ দিন রোযা রেখে দিনরাত আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ও চিন্তা-গবেষণায় কাটিয়েছিলেন। এর কাছেই রয়েছে মুসলমানদের একটি মসজিদ ও খৃস্টানদের একটি গীর্জা। অন্যদিকে পাহাড়ের পাদদেশে রোম সম্রাট জস্টিনিনের আমলের একটি খানকাহ আজো সশরীরে বিরাজ করছে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আন নামল ৯-১০ টীকা)।
১০০
হযরত হারুন আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত মূসা আলাইহিস সালামের চেয়ে তিন বছরের বড়। তবুও নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তিনি ছিলেন তাঁর সাহায্যকারী। তাঁর নবুওয়াত স্বতন্ত্র ছিল না। বরং হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়ে তাকে নিজের উজীর নিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কুরআন মজীদের সামনের দিকের আলোচনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।