১১ ) হে নবী (সা.) ! বদ্দু আরবদের ২০ মধ্যে যাদেরকে পিছনে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল এখন তারা এসে অবশ্যই তোমাকে বলবেঃ “আমাদেরকে আমাদের ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততিদের চিন্তা-ই ব্যস্ত রেখেছিল, আপনি আমাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করুন।” এ লোকেরা নিজেদের মুখে সেসব কথা বলছে যা তাদের অন্তরে থাকে না। ২১ তাদেরকে বলো ঠিক আছে। ইহাই যদি সত্য হয়ে থাকে তা হলে তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালাকে কার্যকর হওয়া থেকে বাধাদানের সামান্য ক্ষমতা কি কারো আছে যদি তিনি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে চান ; অথবা চান কোন কল্যাণ দান করতে? তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে তো আল্লাহই ভালভাবে অবহিত ২২
سَيَقُولُ لَكَ ٱلْمُخَلَّفُونَ مِنَ ٱلْأَعْرَابِ شَغَلَتْنَآ أَمْوَٰلُنَا وَأَهْلُونَا فَٱسْتَغْفِرْ لَنَا ۚ يَقُولُونَ بِأَلْسِنَتِهِم مَّا لَيْسَ فِى قُلُوبِهِمْ ۚ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ لَكُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا إِنْ أَرَادَ بِكُمْ ضَرًّا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ نَفْعًۢا ۚ بَلْ كَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًۢا ١١
১২ ) (কিন্তু আসল কথা তো তা নয় যা তোমরা বলছো) ; বরং তোমরা মনে করি নিয়েছ যে, রসূল ও মু’মিনগণ নিজেদের ঘরে কখনই ফিরতে পারবে না। এ খেয়ালটা তোমাদের অন্তরে খুব ভাল লেগেছিল ২৩ এবং তোমরা খুবই খারাপ ধারণা মনে স্থান দিয়েছো, আসলে তোমরা খুবই খারাপ মন-মানসিকতার লোক। ২৪
بَلْ ظَنَنتُمْ أَن لَّن يَنقَلِبَ ٱلرَّسُولُ وَٱلْمُؤْمِنُونَ إِلَىٰٓ أَهْلِيهِمْ أَبَدًۭا وَزُيِّنَ ذَٰلِكَ فِى قُلُوبِكُمْ وَظَنَنتُمْ ظَنَّ ٱلسَّوْءِ وَكُنتُمْ قَوْمًۢا بُورًۭا ١٢
১৩ ) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি যারা ঈমান আনেনি এমন কাফেরদের জন্য আমরা দাউ দাউ করে জ্বলা অগ্নি কুণ্ডলি তৈরী করে রেখেছি। ২৫
وَمَن لَّمْ يُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ فَإِنَّآ أَعْتَدْنَا لِلْكَـٰفِرِينَ سَعِيرًۭا ١٣
১৪ ) আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর বাদশাহীর (প্রভুত্ব ও প্রশাসন ক্ষমতা) একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। আল্লাহ-ইক্ষমাশীল ও করুণাময়। ২৬
وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا ١٤
১৫ ) তোমরা যখন গনীমতের মাল লাভ করার জন্য যেতে থাকবে তখন এ পিছনে রেখে যাওয়া লোকেরা তোমাকে অবশ্যই বলবে যে, আমাদেরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও। ২৭ এরা আল্লাহর ফরমান পরিবর্তন করে দিতে চায়। ২৮ এদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দাওঃ ‘তোমরা কখনই আমাদের সাথে যেতে পারো না, আল্লাহ তো আগেই একথা বলে দিয়েছেন।” ২৯ এর বলবেঃ “না, তোমরাই বরং আমাদের প্রতি হিংসা পোষণ কর।” (অথচ এটা কোন হিংসার কথা নয়) আসলে এরা সঠিক কথা খুব কমই বুঝে।
سَيَقُولُ ٱلْمُخَلَّفُونَ إِذَا ٱنطَلَقْتُمْ إِلَىٰ مَغَانِمَ لِتَأْخُذُوهَا ذَرُونَا نَتَّبِعْكُمْ ۖ يُرِيدُونَ أَن يُبَدِّلُوا۟ كَلَـٰمَ ٱللَّهِ ۚ قُل لَّن تَتَّبِعُونَا كَذَٰلِكُمْ قَالَ ٱللَّهُ مِن قَبْلُ ۖ فَسَيَقُولُونَ بَلْ تَحْسُدُونَنَا ۚ بَلْ كَانُوا۟ لَا يَفْقَهُونَ إِلَّا قَلِيلًۭا ١٥
১৬ ) এ পিছনে রেখে যাওয়া বদ্দু আরবদেরকে বলে দাওঃ “খুব শীঘ্রই তোমাদেরকে এমন সব লোকের সাথে লড়াই করার জন্য ডাকা হবে যারা বড়ই শক্তি সম্পন্ন।” তোমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, কিংবা তারা অনুগত হয়ে যাবে। ৩০ সে সময় তোমরা জিহাদের নির্দেশ পালন করলে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম সওয়াব দিবেন। আর যদি তোমরা পিছনে হটে যাও যেমন পূর্বে হটে গিয়েছিলে, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি দেবেন।
قُل لِّلْمُخَلَّفِينَ مِنَ ٱلْأَعْرَابِ سَتُدْعَوْنَ إِلَىٰ قَوْمٍ أُو۟لِى بَأْسٍۢ شَدِيدٍۢ تُقَـٰتِلُونَهُمْ أَوْ يُسْلِمُونَ ۖ فَإِن تُطِيعُوا۟ يُؤْتِكُمُ ٱللَّهُ أَجْرًا حَسَنًۭا ۖ وَإِن تَتَوَلَّوْا۟ كَمَا تَوَلَّيْتُم مِّن قَبْلُ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًۭا ١٦
১৭ ) যদি অন্ধ, পংগু ও রোগাক্রান্ত লোক জিহাদে না আসে তাহলে কোন দোষ নেই। ৩১ যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে সেসব জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেসবের নিম্নদেশে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহমান থাকবে। আর যে মুখ ফিরিয়ে থাকবে আল্লাহ তাকে মর্মান্তিক আযাব দেবেন।
لَّيْسَ عَلَى ٱلْأَعْمَىٰ حَرَجٌۭ وَلَا عَلَى ٱلْأَعْرَجِ حَرَجٌۭ وَلَا عَلَى ٱلْمَرِيضِ حَرَجٌۭ ۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدْخِلْهُ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ وَمَن يَتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَابًا أَلِيمًۭا ١٧
১৮ ) আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিলো। ৩২ তিনি তাদের মনের অবস্থা জানতেন। তাই তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন, ৩৩ পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন।
۞ لَّقَدْ رَضِىَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِى قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَـٰبَهُمْ فَتْحًۭا قَرِيبًۭا ١٨
১৯ ) এবং প্রচুর গনীমতের সম্পদ দান করেছেন যা তারা অচিরেই লাভ করবে। ৩৪ আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।
وَمَغَانِمَ كَثِيرَةًۭ يَأْخُذُونَهَا ۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًۭا ١٩
২০ ) আল্লাহর তোমাদরকে অঢেল গনীমতের সম্পদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যা তোমরা লাভ করবে। ৩৫ তিনি তোমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিজয় দিয়েছেন ৩৬ এবং তোমাদের বিরুদ্ধে মানুষের হাত উত্তোলনকে থামিয়ে দিয়েছেন ৩৭ যাতে মু’মিনদের জন্য তা একটি নিদর্শন হয়ে থাকে। ৩৮ আর আল্লাহ তোমাদেরকে সোজা পথের হিদায়াত দান করেন। ৩৯
وَعَدَكُمُ ٱللَّهُ مَغَانِمَ كَثِيرَةًۭ تَأْخُذُونَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هَـٰذِهِۦ وَكَفَّ أَيْدِىَ ٱلنَّاسِ عَنكُمْ وَلِتَكُونَ ءَايَةًۭ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَٰطًۭا مُّسْتَقِيمًۭا ٢٠
২০.
এটা মদীনার আশেপাশের সেসব লোকদের কথা যাদেরকে উমরা যাত্রার প্রস্তুতিকালে রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাথে রওনা হবার আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঈমানের দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও তারা বাড়ী ছেড়ে শুধু এ কারণে বের হয়নি যে, নিজেদের প্রাণ ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, এরা ছিল আসলাম, মুযাইনা, জুহাইন, গিফার, আশজা, দ্বীন প্রভৃতি গোত্রের লোক।
২১.
এর দু’টি অর্থ। একটি হচ্ছে, তোমার মদীনায় পৌঁছার পর এসব লোক এখন থেকে উমরা যাত্রায় শরীক না হওয়ার যে অজুহাত পেশ করবে তা হবে একটি মিথ্যা বাহানা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে কি কারণে তারা যায়নি তা তারা খুব ভাল করেই জানে। অপরটি হচ্ছে, আল্লাহর রসূলের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করা মৌখিক জমা খরচ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে তারা যেমন নিজেদের এ আচরণের জন্য লজ্জিত নয়, তেমনি তাদের এ অনুভূতিও নেই যে, আল্লাহর রসূলকে সহযোগিতা না করে তারা কোন গোনাহর কাজ করেছে। এমনকি তাদের অন্তরে ক্ষমতা লাভের কোন আকংখাও নেই। নিজেরা কিন্তু মনে করে যে, এ বিপজ্জনক সফরে না গিয়ে তারা যারপর নেই বুদ্ধিমত্তার কাজ করেছে। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ক্ষমার পরোয়াই যদি তারা করতো তাহলে বাড়ীতে বসে থাকতে পারতো না।
২২.
অর্থাৎ তোমাদের আমলের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহর যে জ্ঞান, সে জ্ঞানের ভিত্তিতেই তিনি ফয়সালা করবেন। তোমাদের আমল যদি শাস্তি পাওয়ার মত হয় আর আমি তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করি তাহলেও আমার দোয়া আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবে না। আর তোমাদের আমল যদি শাস্তি পাওয়ার মত না হয় আর আমি তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া না করি তাহলে আমার দোয়া না করায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আমার নয় আল্লাহর। কারো মুখের কথা তাকে প্রতারিত করতে পারে না। তাই আমি যদি তোমাদের বাহ্যিক কথাবার্তাকে সত্য বলে স্বীকার করেও নেই এবং তার ভিত্তিতে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়াও করি তাতেও কোন ফায়দা নেই।
২৩.
অর্থাৎ তোমরা এই ভেবে খুশী হয়েছো, যে রসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহায্যকারী ঈমানদারগণ যে বিপদের মুখে এগিয়ে যাচ্ছেন তা থেকে তোমরা নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছো। তোমাদের মতে এটা ছিল খুবই বুদ্ধিমত্তার কাজ। তাছাড়া একথা ভেবে খুশী হতে তোমাদের একটুও লজ্জাবোধ হলো না যে, রসূল ও ঈমানদারগণ এমন এক অভিযানে যাচ্ছেন যা থেকে জীবিত আর ফিরে আসতে পারবেন না। ঈমানের দাবীদার হয়েও তোমরা এতে উদ্বিগ্ন হলে না। বরং নিজেদের এ আচরণ তোমাদের এতই ভাল মনে হলো যে, তোমরা অন্তত রসূলের সাথে এ বিপদের মধ্যে নিজেদেরকে নিক্ষেপ করোনি।
২৪.
মূল আয়াতাংশ হচ্ছে كُنْتُمْ قَوْمًا بُورًا ।
بُور শব্দটি
بائر শব্দের বহুবচন।
بائر শব্দের দু’টি অর্থ। একটি অর্থ হচ্ছে পাপী ও বিকৃত ব্যাক্তি যে কোন ভাল কাজের যোগ্য নয়, যার উদ্দেশ্যে অসৎ ও বিকৃত। অপরটি হচ্ছে, ধ্বংসকারী, মন্দ পরিণাম এবং ধ্বংসের পথগামী।
২৫.
আল্লাহ এখানে সুস্পষ্ট ভাষায় এমন সব মানুষকে কাফের ও ঈমানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন যারা আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে একনিষ্ঠ নয় এবং পরীক্ষার সময় দ্বীনের জন্য নিজের প্রাণ, সম্পদ ও স্বার্থের ঝুঁকি এড়িয়ে চলে। কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে যে, এটা এমন কুফরী নয় যার ভিত্তিতে এ পৃথিবীতে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। এটা বরং এমন ধরনের কুফরী যার কারণে সে আখেরাতে বেঈমান বলে ঘোষিত হবে। এর প্রমাণঃ এ আয়াত নাযিলের পরেও যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছিলো রসূলুল্লাহ ﷺ সেসব লোককে ইসলাম থেকে খারিজ ঘোষনা করেননি কিংবা কাফেরদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা যায় সে রকম আচরণও করেননি।
২৬.
ওপরে উল্লেখিত চরম সাবধান বানীর পর আল্লাহর-‘গাফুর’ (ক্ষমাশীল) ও ‘রাহীম’ (পরম দয়ালু) হওয়ার উল্লেখের মধ্যে উপদেশের একটি সূক্ষ্ম দিক বিদ্যমান। এর অর্থ হচ্ছে, এখনো যদি তোমরা নিজেদের অসৎ ও নিষ্ঠাহীন আচরণ পরিত্যাগ করে সৎ ও নিষ্ঠার পথে আস তাহলে দেখবে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি তোমাদের অতীত ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেবেন এবং নিজেদের নিষ্ঠার কারণে তোমরা যে আচরণ পাওয়ার যোগ্য হবে ভবিষ্যতে তিনি তোমাদের সাথে সেই আচরণই করবেন।
২৭.
অর্থাৎ অচিরেই এমন সময় আসছে যখন এসব লোক-যারা আজ তোমার সঙ্গে এ বিপজ্জনক অভিযানে অংশ গ্রহণ এড়িয়ে গেল-তোমাকে এমন এক অভিযানে যেতে দেখবে যাতে তারা সহজ বিজয় এবং প্রচুর গনীমতের সম্পদ হস্তগত হচ্ছে বলে মনে করবে। তখন তারা নিজেরাই দৌড়ে এসে বলবে, আমাদেরকেও সাথে নিয়ে চলুন। বস্তুত হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তির তিন মাস পরই সে সুযোগ আসলো যখন রসূলুল্লাহ ﷺ খায়বারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অতি সহজেই তা দখল করে নিলেন। সে সময় প্রত্যেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো, কুরাইশদের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদনের পর এখন শুধু খায়বারই নয়, তায়ামা, ফাদাক ওয়াদিউল কুরা এবং উত্তর হিজাযের অন্য সব ইহুদীও মুসলমানদের শক্তির মোকাবিলা করতে পারবে না। এসব জনপদ এখন পাকা ফলের মতো সহজেই মুসলমানদের দখলে চলে আসবে। তাই আল্লাহ তা’আলা এসব আয়াতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আগেই এ মর্মে সতর্ক করে দিলেন যে, মদীনার আশেপাশের সুযোগ সন্ধানী লোকেরা এসব সহজ বিজয় অর্জিত হতে দেখে তাতে ভাগ বসানোর জন্য এসে হাজির হবে। কিন্তু তুমি তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেবে যে, তোমাদেরকে এতে ভাগ বসানোর সুযোগ দেখা কখনো দেয়া হবে না। এটা তাদের প্রাপ্য যারা বিপদ-মুসিবতের মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসেছিলো।
২৮.
আল্লাহর ফরমান অর্থ খায়বার অভিযানে নবীর ﷺ সাথে কেবল তাদেরকেই যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে যারা হুদাইবিয়া অভিযানেও তাঁর সাথে গিয়েছিলেন এবং বাইয়াত রিদওয়ানেও তাঁর সাথে শরীক হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা খাইবারের গনীমতের সম্পদ তাদের জন্যই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। পরবর্তী ১৮ আয়াতে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
২৯.
“আল্লাহ পূর্বেই একথা বলেছেন”, কথাটি দ্বারা লোকের মনে এ মর্মে একটি ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, এ আয়াতের আগে এ বিষয়বস্তু সম্বলিত আরো কোন নির্দেশ নাযিল হয়ে থাকবে। এখানে সে দিকেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আর যেহেতু এ সূরার মধ্যে এ বিষয় সম্বলিত কোন নির্দেশ এর আগে পাওয়া যায় না। তাই তারা কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে তা অনুসন্ধান করতে শুরু করে এবং সূরা তাওবার ৮৪ আয়াতে তারা পেয়ে যায় যাতে আরেকটি প্রসঙ্গে এ একই বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃপক্ষে ঐ আয়াত এ ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়। কারণ, ঐ আয়াত তাবুক যুদ্ধের প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছিলো। আর তা নাযিল হয়েছিলো সূরা ফাতহ নাযিল হওয়ার তিন বছর পর। প্রকৃত ব্যাপার হলো, এ আয়াতটিতে এ সূরারই ১৮ ও ১৯ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আর “ইতিপূর্বেই আল্লাহ বলছেন” কথাটির অর্থ এ আয়াতের পূর্বে বলা নয়, বরং পেছনে রেখে যাওয়া লোকদের সাথে এ কথাবার্তা হতে যাচ্ছিলো-যে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আগেই দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে-খায়বার অভিযানে যাওয়ার সময়। অথচ সম্পূর্ণ সূরাটির-যার মধ্যে ১৮ ও ১৯ আয়াত আছে-তার তিন মাস পূর্বে হুদাইবিয়া থেকে ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে নাযিল হয়েছিলো। বক্তব্যের ধারা যদি পাঠক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন, আল্লাহ তা’আলা এখানে তাঁর রসূলকে এই বলে নির্দেশনা দিচ্ছেন যে, তোমার মদীনায় ফিরে যাওয়ার পর পিছনে থেকে যাওয়া এসব লোক যখন তোমার কাছে এসে এসব ওজর পেশ করবে তখন তাদেরকে এ জবাব দিবে এবং খায়বার অভিযানে যাত্রাকালে যখন তারা তোমার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবে তখন তাদের একথা বলবে।
৩০.
মূল আয়াতে ব্যবহৃত বাক্যাংশ হচ্ছে أَوْ يُسْلِمُونَ । এর দু’টি অর্থ হতে পারে এবং এখানে দু’টি অর্থই উদ্দেশ্য। একটি অর্থ হচ্ছে, তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। অপরটি হচ্ছে, তারা ইসলামী সরকারের বশ্যতা স্বীকার করবে।
৩১.
অর্থাৎ জিহাদে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির সামনে প্রকৃতই কোন ওজর প্রতিবন্ধক হবে তার কোন দোষ নেই। কিন্তু সুঠাম ও সবলদেহী মানুষ যদি ছল-ছুতার ভিত্তিতে বিরত থাকে তাহলে তাকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান বলে স্বীকার করা যায় না। তাকে এ সুযোগও দেয়া যায় না যে, সে মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে, কিন্তু যখন ইসলামের জন্য কুরবানী পেশ করার সময় আসবে তখন নিজের জান ও মালের নিরাপত্তার চিন্তায় বিভোর হবে।
এখানে জেনে নেয়া দরকার যে, শরীয়াতে যাদেরকে জিহাদে অংশ গ্রহণ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে তারা দু’ধরনের মানুষ। এক, যারা দৈহিকভাবে যুদ্ধের উপযুক্ত নয়। যেমন অপ্রাপ্ত বয়স্ক, বালক, নারী, পাগল, অন্ধ, সামরিক সেবা দিতে অক্ষম এমন রোগগ্রস্ত লোক এবং হাত পা অকেজো হওয়ার কারণে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে অক্ষম ব্যক্তিরা। দুই, অন্য কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণে যাদের পক্ষে জিহাদে অংশ গ্রহণ কঠিন। যেমন: ক্রীতদাস, কিংবা এমন লোক যারা যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত, কিন্তু যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করতে অক্ষম। অথবা এমন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, অতি সত্বর যার ঋণ পরিশোধ করা দরকার এবং ঋণদাতা যাকে অবকাশ দিচ্ছে না। অথবা এমন ব্যক্তি যার পিতা-মাতা বা তাদের কোন একজন জীবিত আছে এবং তারা তার সেবা-যত্নের মুখাপেক্ষী। এক্ষেত্রে এ বিষয়টিও স্পষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন যে, পিতা-মাতা যদি মুসলমান হয় তাহলে তাদের অনুমতি ছাড়া সন্তানের জিহাদে যাওয়া উচিত নয়। তবে তারা যদি কাফের হয়, তাহলে তাদের বাধা দেয়ায় কারো জিহাদ থেকে বিরত থাকা জায়েজ নয়।
৩২.
হুদাইবিয়া নামক স্থানে সাহাবায়ে কিরামের কাছে যে বাইয়াত নেয়া হয়েছিল এখানে পুনরায় তার উল্লেখ করা হচ্ছে। এ বাইয়াতকে “বাইয়াতে রিদওয়ান” বলা হয়ে থাকে। কারণ, এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সুসংবাদ দান করেছেন যে, যারা এ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে জীবন বাজি রাখতে সমান্য দ্বিধাও করেনি এবং রসূলের হাতে হাত দিয়ে জীবনপাত করার বাইয়াত করে ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ পেশ করেছে তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। সময়টি ছিল এমন যে, মুসলমানগণ শুধুমাত্র একখানা করে তরবারি নিয়ে এসেছিলেন এবং সংখ্যায় ছিলেন মাত্র চৌদ্দ শ’। তাদের পরিধানেও সামরিক পোশাক ছিল না বরং ইহরামের চাদর বাধা ছিল। নিজেদের সামরিক কেন্দ্র (মদীনা) থেকে আড়াই শ’ মাইল এবং শত্রুদের দূর্গ থেকে মাত্র ১৩ মাইল দূরে ছিল যেখান থেকে শত্রুরা সব রকমের সাহায্য লাভ করতে পারতো। আল্লাহ ও তাঁর রসূল এবং তাঁর দ্বীনের প্রতি এ মানুষগুলোর মনে যদি আন্তরিকতার সামান্য ঘাটতিও থাকতো তাহলে তারা এ চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিত্যাগ করে চলে যেতো এবং ইসলাম বাতিলের সাথে লড়াইয়ে চিরদিনের জন্য হেরে যেতো। আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতা ছাড়া বাইরের এমন কোন চাপ তাদের ওপর ছিল না যা তাদেরকে এ বাইয়াত গ্রহণে বাধ্য করতে পারতো। আল্লাহর দ্বীনের জন্য সবকিছু করতে সে মুহূর্তেই তাদের প্রস্তুত হয়ে যাওয়া স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, তাঁরা তাদের ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী ও আন্তরিক এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ব্যাপারে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে পূর্ণতার স্তরে উন্নীত। এ কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সন্তুষ্টির এ সনদ দান করেছেন। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার পর কেউ যদি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয় কিংবা তাদেরকে তিরস্কার করার সাহস করে তাহলে তাদের বুঝাপড়া তাদের সাথে নয়, আল্লাহর সাথে। এক্ষেত্রে যারা বলে, যে সময় আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে সন্তুষ্টির এ সনদ দান করেছিলেন তখন তাঁরা আন্তরিক ছিলেন ঠিকই, কিন্তু পরে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য হারিয়ে ফেলেছেন, তারা সম্ভবত আল্লাহ সম্পর্কে এ কুধারণা পোষণ করে যে, এ আয়াত নাযিল করার সময় তিনি তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতেন না। তাই শুধু এ সে সময়কার অবস্থা দেখে তিনি তাদেরকে এ সনদ পত্র দিয়ে ফেলেছেন। আর সম্ভবত এ না জানার কারণেই তাঁর পবিত্র কিতাবেও তা অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাতে পরে যখন এরা অবিশ্বাসী হয়ে যাবে তখনো দুনিয়ার মানুষ তাদের সম্পর্কে এ আয়াত পড়তে থাকে এবং আল্লাহ তা’আলার ‘গায়েবী ইলম’ সম্পর্কে বাহবা দিতে থাকে যিনি (নাউযুবিল্লাহ) ঐ অবিশ্বাসীদেরকে সন্তুষ্টির এ সনদপত্র দান করেছিলেন।
যে গাছর নীচে এ বাইয়াত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সেটি সম্পর্কে হযরত ইবনে উমরের আযাতকৃত ক্রীতদাস নাফের এ বর্ণনাটি সাধারণভাবে ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে যে, লোকজন সেখানে গিয়ে নামায পড়তে শুরু করেছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে হযরত উমর (রা.) লোকদের তিরস্কার করেন এবং গাছটি কাটিয়ে ফেলেন। (তাবকাতে ইবনে সাদ ২য় খন্ড পৃঃ ১০০) কিন্তু এর বিপরীতমুখী কয়েকটি বর্ণনাও রয়েছে। হযরত নাফে, থেকেই তাবকাতে ইবনে সা’দে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে যে, বাইয়াতে রিদওয়ানের কয়েক বছর পর সাহাবায়ে কিরাম ঐ গাছটি তালাশ করেছিলেন কিন্তু চিনতে পারেননি এবং সে গাছটি কোনটি সে ব্যাপারে মতভেদ সৃষ্টি হয়ে যায় (পৃঃ ১০৫) দ্বিতীয় বর্ণনাটি বুখারী, মুসলিম ও তবকাতে ইবনে সা’দে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েবের। তিনি বলেনঃ আমার পিতা বাইয়াতে রিদওয়ানে শরীক ছিলেন। তিনি আমাকে বলেছেন পরের বছর আমরা যখন উমরাতুল কাযার জন্য গিয়েছিলাম তখন গাছটি হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনুসন্ধান করেও তার কোন হদিস করতে পারিনি। তৃতীয় বর্ণনাটি ইবনে জারীরের। তিনি বলেন, হযরত উমর (রা.) তাঁর খিলাফত কালে যখন হুদাইবিয়া অতিক্রম করেন তখন জিজ্ঞেস করেন, যে গাছটি নিজে বাইয়াত হয়েছিলো তা কোথায়? কেউ বলে, অমুক গাছটি এবং কেউ বলেন অমুকটি। তখন হযরত উমর (র) বলেন, এ কষ্ট বাদ দাও, এর কোন প্রয়োজন নেই।
৩৩.
এখানে سَّكِينَةَ অর্থ মনের সে বিশেষ অবস্থা যার ওপর নির্ভর করে কোন ব্যক্তি কোন মহত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ঠাণ্ডা মনে পূর্ণ প্রশান্তি ও তৃপ্তি সহ নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয় এবং কোন ভয় বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ফলাফল যাই হোক না কেন এ কাজ করতেই হবে।
৩৪.
এটা খায়বার বিজয় ও সেখানকার গনীমতের সম্পদের প্রতি ইঙ্গিত। আর এ আয়াত এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে, আল্লাহ তা’আলা এ পুরস্কারটি কেবল তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন যারা বাইয়াতে রিদওয়ানে শরীক ছিলেন। এ বিজয় ও গনীমতের সম্পদে তাদের ছাড়া আর করো শরীক হওয়ার অধিকার ছিল না। এ কারণে ৭ম হিজরী সনের সফর মাসে রসূলুল্লাহ ﷺ খায়বার আক্রমণের জন্য যাত্রা করলেন তখন তিনি কেবল তাদেরকেই সঙ্গে নিলেন। এতে সন্দেহ নেই যে, পরে নবী (সা.) হাবশা থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মুহাজির এবং দাওস ও আশয়ারী গোত্রের কোন কোন সাহাবীকেও খায়বারের গনীমতের মাল থেকে কিছু অংশ দিয়েছিলেন। তবে তা হয় খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) থেকে নয়তো বাইয়াতে রিদওয়ানে অংশ গ্রহণকারীদের সম্মতিক্রমে দিয়েছিলেন। কাউকে তিনি ঐ সম্পদের হকদার বানাননি।
৩৫.
খায়বার বিজয়ের পর মুসলমানরা ক্রমাগত আর যেসব বিজয় লাভ করে এর দ্বারা সেসব বিজয়কে বুঝানো হয়েছে।
৩৬.
এর অর্থ হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি। এ চুক্তিকেই সূরার প্রারম্ভে ফাকহে মুবীন’ (সুস্পষ্ট বিজয়) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
৩৭.
অর্থাৎ তিনি কাফের কুরাইশদের এতটা সাহস দেননি যে, হুদাইবিয়াতে তারা তোমাদের সাথে লড়াই বাধিয়ে বসতে পারতো। অথচ সমস্ত বাহ্যিক অবস্থার দিক থেকে তারা অনেক ভাল অবস্থানে ছিল এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে তোমাদের পাল্লা তাদের চেয়ে অনেক বেশী দুর্বল বলে মনে হচ্ছিলো। এছাড়াও এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে, সে সময় কোন শত্রুশক্তি মদীনার ওপর আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। অথচ যুদ্ধক্ষম চৌদ্দ শ’ যোদ্ধা পুরুষ মদীনার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে মদীনার যুদ্ধক্ষেত্র অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলো এবং ইহুদী ও মুশরিক ও মুনাফিকরা এ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারতো।
৩৮.
অর্থাৎ যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের নীতিতে স্থির সংকল্প থাকে এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা করে ন্যায় ও সত্যের পক্ষ অবলম্বনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। আল্লাহ তাদের কতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দান করেন পুরস্কৃত করেন তার নিদর্শন।
৩৯.
অর্থাৎ তোমরা আরো দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করবে। ভবিষ্যতেও এভাবেই আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে ন্যায় ও সত্যের পথে অগ্রসর হতে থাকবে। আর এসব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাদান করবে যে, আল্লাহর দ্বীন যে পদক্ষেপের দাবী করছে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মু’মিনের কাজ। আমার শক্তি কতটা এবং বাতিলের শক্তি কত প্রবল এ বাছ বিচার ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে যেন সে পড়ে না থাকে।