২১ ) এছাড়া তিনি তোমাদেরকে আরো গনীমতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যা তোমরা এখনো পর্যন্ত লাভ করতে পারনি। কিন্তু আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। ৪০ আল্লাহ সবকিছুর ওপরে ক্ষমতাবান।
وَأُخْرَىٰ لَمْ تَقْدِرُوا۟ عَلَيْهَا قَدْ أَحَاطَ ٱللَّهُ بِهَا ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرًۭا ٢١
২২ ) এ মুহূর্তেই এসব কাফের যদি তোমাদের সাথে লড়াই বাধিয়ে বসতো তাহলে অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতো এবং কোন সহযোগী ও সাহায্যকারী পেতো না। ৪১
وَلَوْ قَـٰتَلَكُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَوَلَّوُا۟ ٱلْأَدْبَـٰرَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّۭا وَلَا نَصِيرًۭا ٢٢
২৩ ) এটা আল্লাহর বিধান যা পূর্ব থেকেই চলে আসছে। ৪২ তুমি আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবে না।
سُنَّةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِى قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ ٱللَّهِ تَبْدِيلًۭا ٢٣
২৪ ) তিনিই সেই সত্তা যিনি মক্কা ভূমিতে তাদের হাত তোমাদের থেকে আর তোমাদের হাত তাদের থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের ওপর তোমাদেরকে আধিপত্য দান করার পর। তোমরা যা কিছু করছিলে আল্লাহ তা দেখছিলেন।
وَهُوَ ٱلَّذِى كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُم بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنۢ بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا ٢٤
২৫ ) এরাই তো সেসব লোক যারা কুফরী করেছে, তোমাদেরকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা দিয়েছে এবং কুরবানীর উটসমূহকে কুরবানী গাহে পৌঁছতে দেয়নি। ৪৩ যদি (মক্কায়) এমন নারী পুরুষ না থাকতো যাদেরকে তোমরা চিন না অজান্তে তাদেরকে পদদলিত করে ফেলবে এবং তাদের কারণে তোমরা বদনাম কুড়াবে এমন আশঙ্কা না থাকতো (তাহলে যুদ্ধ থামানো হতো না। তা বন্ধ করা হয়েছে এ কারণে) যে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা যেন তাঁর রহমতের মধ্যে স্থান দেন। সেসব মু’মিন যদি আলাদা হয়ে যেতো তাহলে (মক্কাবাসীদের মধ্যে) যারা কাফের ছিল আমি অবশ্যই তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতাম। ৪৪
هُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَصَدُّوكُمْ عَنِ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ وَٱلْهَدْىَ مَعْكُوفًا أَن يَبْلُغَ مَحِلَّهُۥ ۚ وَلَوْلَا رِجَالٌۭ مُّؤْمِنُونَ وَنِسَآءٌۭ مُّؤْمِنَـٰتٌۭ لَّمْ تَعْلَمُوهُمْ أَن تَطَـُٔوهُمْ فَتُصِيبَكُم مِّنْهُم مَّعَرَّةٌۢ بِغَيْرِ عِلْمٍۢ ۖ لِّيُدْخِلَ ٱللَّهُ فِى رَحْمَتِهِۦ مَن يَشَآءُ ۚ لَوْ تَزَيَّلُوا۟ لَعَذَّبْنَا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا ٢٥
২৬ ) এ কারণেই যখন ঐ সব কাফেররা তাদের মনে জাহেলী সংকীর্ণতার স্থান দিল ৪৫ তখন আল্লাহ তাঁর রসূল ও ঈমানদারদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করলেন ৪৬ এবং তাদেরকে তাকওয়ার নীতির ওপর সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত রাখলেন। তারাই এ জন্য বেশী উপযুক্ত ও হকদার ছিল। আল্লাহ সব জিনিস সম্পর্কেই পরিজ্ঞাত।
إِذْ جَعَلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فِى قُلُوبِهِمُ ٱلْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ ٱلْجَـٰهِلِيَّةِ فَأَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَعَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ ٱلتَّقْوَىٰ وَكَانُوٓا۟ أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًۭا ٢٦
২৭ ) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন- যা ছিল সরাসরি হক। ৪৭ ইনশাআল্লাহ ৪৮ তোমরা পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে। ৪৯ নিজেদের মাথা মুণ্ডন করবে, চুল কাটাবে ৫০ এবং তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। তোমরা যা জানতে না তিনি তা জানতেন। তাই স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করার পূর্বে তিনি তোমাদেরকে এ আসন্ন বিজয় দান করেছেন।
لَّقَدْ صَدَقَ ٱللَّهُ رَسُولَهُ ٱلرُّءْيَا بِٱلْحَقِّ ۖ لَتَدْخُلُنَّ ٱلْمَسْجِدَ ٱلْحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ ۖ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا۟ فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتْحًۭا قَرِيبًا ٢٧
২৮ ) আল্লাহই তো সে মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে সমস্ত দ্বীনের ওপর বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষই যথেষ্ট। ৫১
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ ۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدًۭا ٢٨
২৯ ) মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ৫২ এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ। ৫৩ তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে রুকূ' ও সিজদা এবং আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি কামনায় তৎপর পাবে। তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়। ৫৪ তাদের এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে। ৫৫ আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ করা হয়েছে এই বলে ৫৬ যে, একটি শস্যক্ষেত যা প্রথমে অঙ্কুরোদগম ঘটালো। পরে তাকে শক্তি যোগালো তারপর তা শক্ত ও মজবুত হয়ে স্বীয় কাণ্ডে ভর করে দাঁড়ালো। যা কৃষককে খুশী করে কিন্তু কাফের তার পরিপুষ্টি লাভ দেখে মনোকষ্ট পায়। এ শ্রেণীর লোক যারা ঈমান আনয়ন করছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৫৭
مُّحَمَّدٌۭ رَّسُولُ ٱللَّهِ ۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَىٰهُمْ رُكَّعًۭا سُجَّدًۭا يَبْتَغُونَ فَضْلًۭا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنًۭا ۖ سِيمَاهُمْ فِى وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ ٱلسُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِى ٱلْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْـَٔهُۥ فَـَٔازَرَهُۥ فَٱسْتَغْلَظَ فَٱسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعْجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةًۭ وَأَجْرًا عَظِيمًۢا ٢٩
৪০.
খুব সম্ভবত এখানে মক্কা বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত দান করা হয়েছে। কাতাদাও এ মত পোষণ করেছেন এবং ইবনে জারীরও এটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আল্লাহর একথাটার উদ্দেশ্য যা বুঝা যায় তা হচ্ছে, মক্কা এখনো তোমাদের করায়ত্ত হয়নি। তবে তাকে আল্লাহ পরিবেষ্টিত করে রেখেছেন এবং হুদাইবিয়ার এ বিজয়ের ফলশ্রুতিতে তাও তোমাদের করায়ত্ত হবে।
৪১.
অর্থাৎ হুদাইবিয়াতে যুদ্ধ হলে তোমাদের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আল্লাহ এ জন্য সেখানে যুদ্ধ সংঘটিত হতে দেননি তা নয়, বরং এর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন কিছু যা পরবর্তী আয়াতসমূহে বর্ণনা করা হচ্ছে। সে উদ্দেশ্য ও কৌশল যদি বাধা না হতো এবং আল্লাহর তা’আলা এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হতে দিতেন তাহলে নিশ্চিতভাবে কাফেররাই পরাজয় বরণ করতো এবং পবিত্র মক্কা তখন বিজিত হতো।
৪২.
এখানে আল্লাহর বিধান বলতে বুঝানো হয়েছে, যেসব কাফের আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন এবং তাঁর রসূলকে সাহায্য করেন।
৪৩.
অর্থাৎ ইসলামের জন্য যে আন্তরিকতা নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে তোমরা জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলে এবং বিনা বাক্যে যেভাবে রসূলের আনুগত্য করেছিলে আল্লাহ তা দেখেছিলেন। তিনি এও দেখেছিলেন যে, কাফেররা সত্যিই বাড়াবাড়ি করছে। তোমাদের হাতে তৎক্ষণাৎ সেখানেই তাদেরকে শাস্তি দেয়া ছিল পরিস্থিতির দাবী। কিন্তু এসব সত্ত্বেও একটি বৃহত্তর কল্যাণের জন্য তিনি তোমাদের হাতে তাদের ওপর এবং তাদের হাত তোমাদের ওপর উত্তোলিত হওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন।
৪৪.
আল্লাহ তা’আলা যে উদ্দেশ্য ও কৌশলের কারণে হুদাইবিয়াতে যুদ্ধ হতে দেননি এটাই সে উদ্দেশ্য ও কৌশল। এ উদ্দেশ্য ও কৌশলের দু’টি দিক আছে। একটি হচ্ছে সে সময় মক্কায় এমন অনেক নারী ও পুরুষ বর্তমান ছিলেন। যারা হয় তাদের ঈমান গোপন রেখেছিলেন নয়তো তাদের ঈমান গ্রহণ সম্পর্কে সবার জানা থাকলেও নিজেদের অসহায়ত্বের কারণে হিজরত করতে সক্ষম ছিলেন না এবং জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলো। যদি এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধ সংঘটিত হতো এবং মুসলমানরা কাফেরদেরকে চরমভাবে পর্যুদস্ত করে পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করতো তাহলে অজানা ও অচেনা হওয়ার কারণে কাফেরদের সাথে এ মুসলমানরাও নিহত হতো। এ কারণে মুসলমারা নিজেরও দুঃখ ও পরিতাপে দগ্ধ হতো এবং আরবের মুশরিকরাও একথা বলার সুযোগ পেয়ে যেতো যে, যুদ্ধের ময়দানে নিজেদের দ্বীনি ভাইয়ের হত্যা করতেও এসব লোক দ্বিধাবোধ করেনা। তাই আল্লাহ তা’আলা অসহায় এ মুসলমানদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে এবং সাহাবীদেরকে মনোকষ্ট ও বদনাম থেকে রক্ষার জন্য এক্ষেত্রে যুদ্ধ সংঘটিত হতে দেননি। এ উদ্দেশ্য ও কৌশলের আরেকটি দিক এই যে, আল্লাহ তা’আলা কুরাইশদেরকে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করে মক্কা বিজিত করাতে চাচ্ছিলেন না। বরং তিনি চাচ্ছিলেন, দুই বছরের মধ্যে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে এমন অসহায় করে ফেলবেন যেন কোন প্রতিরোধ ছাড়াই তারা পরাজিত হয় এবং সমগ্র গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রহমের মধ্যে প্রবেশ করে। মক্কা বিজয়ের সময় এ ঘটনাটিই ঘটেছিল।
এক্ষেত্রে একটি আইনগত বিতর্ক দেখা দেয়। যদি আমাদের এ কাফেরদের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে এবং কাফেরদের কব্জায় কিছু সংখ্যক মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ থাকে আর তাদেরকে তারা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামনে নিয়ে আসে কিংবা আমরা কাফেরদের যে শহরের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছি সেখানে কিছু মুসলিম বসতি থেকে থাকে, কিংবা কাফেরদের যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণের পাল্লায় এসে পড়ে এবং কাফেররা তার মধ্যে কিছু সংখ্যক মুসলমানকে রেখে দেয় তাহলে এরূপ পরিস্থিতিতে আমরা কি তাদের ওপর গোলাবর্ষণ করতে পারি? এ প্রশ্নের জবাবে ফকীহগণ যেসব সিদ্ধান্ত ও মতামত দিয়েছেন তা নিম্নরূপঃ
ইমাম মালেক (র) বলেন, এরূপ পরিস্থিতিতে গোলাবর্ষণ না করা উচিত। এ আয়াতটিকে তিনি এর দলীল হিসেবে পেশ করেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের রক্ষার জন্যই তা হুদাইবিয়াতে যুদ্ধ হতে দেননি। (আহকামুল কুরআন-ইবনুল আরাবী)। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা একটা দুর্বল দলীল। আয়াতের মধ্যে এমন কোন শব্দ নেই যা থেকে এ বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, এরূপ পরিস্থিতিতে হামলা করা হারাম ও না জায়েয। এর দ্বারা বড় জোর এতটুকু কথা প্রমাণিত হয় তা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য হামলা করা থেকে বিরত থাকা যেতে পারে, যদি বিরত থাকার ক্ষেত্রে এআশঙ্কা সৃষ্টি না হয় যে, কাফেররা মুসলামানদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করবে, কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় লাভ করার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
ইমাম আবু হানীফা (রা.), ইমাম আবু ইউসূফ (র), ইমাম যুফার (র) এবং ইমাম মুহাম্মাদ (র) বলেন, এ পরিস্থিতিতে গোলাবর্ষণ করা সম্পূর্ণরূপে জায়েয। এমনকি কাফেররা যদি মুসলমানদের শিশুদেরকেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামনে খাড়া করে তবুও তাদের ওপর গোলা বর্ষণ করায় কোন দোষ নেই। এ অবস্থায় যেসব মুসলমান মারা যাবে তাদের জন্য কাফ্ফারা বা রক্তপণও মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব হবে না। (আহকামুল কুরআন-জাসসাস, ইমাম মুহাম্মাদের কিতাবুস সিয়ার, অনুচ্ছেদঃ কাতউল মায়ে আন আহলিল হারব)।
ইমাম আওযায়ী এবং লাইস ইবনে সা’দ বলেন, কাফেররা যদি মুসলমানদের ঢাল বানিয়ে সামনে ধরে তাহলে তাদের ওপর গুলি চালানো উচিত নয়। অনুরূপ আমরা যদি জানতে পারি যে, তাদের যুদ্ধ জাহাজে আমাদের বন্দীও আছে তাহলে সে অবস্থায় উক্ত যুদ্ধ জাহাজ না ডুবানো উচিত। কিন্তু আমরা যদি তাদের কোন শহরের ওপর আক্রমণ চালাই এবং জানতে পারি যে, ঐ শহরে মুসলমানও আছে তাহলেও তাদের ওপর গোলাবর্ষণ করা জায়েয। কারণ, আমাদের গোলা কেবল মুসলমানদের ওপরই পড়বে তা নিশ্চিত নয়। আর কোন মুসলমান যদি এ গোলাবর্ষনের শিকার হয়ও তাহলে তা আমাদের পক্ষ থেকে মুসলমানদের উদ্দেশ্যমূলক হত্যা হবে না, বরং তা হবে আমাদের ইচ্ছা বাইরের একটা দুর্ঘটনা। (আহকামুল কুরআন-জাসসাস)।
এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ীর (র) মাযহাব হলো, এ অবস্থায় যদি গোলাবর্ষণ অনিবার্য না হয় তাহলে ধ্বংসের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার চেষ্টা চালানো উত্তম যদিও এক্ষেত্রে গোলাবর্ষণ করা হারাম নয় তবে নিঃসন্দেহে মাকরূহ। তবে প্রকৃতই যদি গোলাবর্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং সন্দেহ থাকে যে, এরূপ না করা হলে যুদ্ধ পরিস্থিতি কাফেরদের জন্য লাভজনক এবং মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর হবে তাহলে সে ক্ষেত্রে গোলাবর্ষণ করা জায়েয। তবে এ পরিস্থিতিতে ও মুসলমানদের রক্ষা করার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাছাড়া ইমাম শাফেয়ী এ মতও পোষণ করেন যে, যদি কাফেররা যুদ্ধের ময়দানে কোন মুসলমানকে ঢাল বানিয়ে ধরে এবং কোন মুসলমান তাকে হত্যা করে তাহলে তার দু’টি অবস্থা হতে পারেঃ এক, হত্যাকারীর জানা ছিল যে, সে মুসলমান। দুই, সে জানতো না যে, সে মুসলমান। প্রথম অবস্থায় রক্তপণ ও কাফ্ফারা উভয়টিই তার ওপর ওয়াজিব এবং দ্বিতীয় অবস্থায় শুধু কাফ্ফারা ওয়াজিব। (মুগনিউ মুহতাজ)।
৪৫.
জাহেলী সংকীর্ণতা অর্থ হলো, এক ব্যক্তির শুধু তার মর্যাদা রক্ষার জন্য কিংবা নিজের কথার মর্যাদা রক্ষার জন্য জেনে শুনে কোন অবৈধ কাজ করা। মক্কার কাফেররা জানতো এবং মানতো যে, হজ্জ ও উমরার জন্য বায়তুল্লাহর যিয়ারত করার অধিকার সবারই আছে। এ ধর্মীয় কর্তব্য পালনে বাধা দেয়ার অধিকার করো নেই। এটা ছিল আরবের সুপ্রাচীন ও সর্বজন স্বীকৃত আইন। কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদেরকে অন্যায় ও অসত্যের অনুসারী এবং মুসলমানদেরকে সম্পূর্ণ ন্যায় ও সত্যের অনুসারী বলে জানা সত্ত্বেও শুধু নিজেদের মর্যাদা রক্ষার খাতিরে মুসলমানদের উমরা করতে বাধা দান করে। এমনকি মুশরিকদের মধ্যেও যারা সত্যানুসারী ছিল তারাও বলেছিলো যে, যারা ইহরাম অবস্থায় কুরবানীর উট সাথে নিয়ে উমরা পালন করতে এসেছে তাদেরকে বাধা দেয়া একটি অন্যায় কাজ। কিন্তু কুরাইশ নেতারা শুধু একথা ভেবে বাধা দিতে বদ্ধপরিকর ছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ যদি এত বড় দলবল নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন তাহলে সমগ্র আরবে আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। এটাই ছিল তাদের জাহেলী সংকির্ণতা।
৪৬.
এখানে سَّكِينَةَ অর্থ ধৈর্য ও মর্যাদা যা দিয়ে নবী ﷺ এবং মুসলমানগন কাফের কুরাইশদের এ জাহেলী সংকীর্ণতার মোকাবিলা করেছিলেন। তাঁরা তাদের এ হঠকারিতা ও বাড়াবাড়িতে উত্তেজিত হয়ে সংযম হারিয়ে ফেলেছিলেন না এবং তাদের মোকাবিলায় এমন কোন কথাও তারা বলেননি যা ন্যায়ের সীমা ছাড়িয়ে যায় ও সত্যের পরিপন্থী হয় কিংবা যার কারণে কাজ সুন্দর ও সার্থকভাবে সম্পাদিত হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশী এলোমেলো ও বিশৃংখল হয়ে যায়।
৪৭.
যে প্রশ্নটি মুসলমানদের মনে বারবার খটকা সৃষ্টি করেছিলো এটি তারই জবাব। তারা বলতো, রসূলুল্লাহ ﷺ তো স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তিনি মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন। কিন্তু কি হলো, যে, আমরা উমরা আদায় করা ছাড়াই ফিরে যাচ্ছি। এর জবাবে রসূলুল্লাহ ﷺ যদিও বলেছিলেন যে, স্বপ্নে তো এ বছরই উমরা আদায় করার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু না কিছু উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা মুসলমানদের মনের মধ্যে দেখিয়েছিলাম আর তা ছিল পুরোপুরি সত্য এবং নিশ্চিতভাবেই তা পূরণ হবে।
৪৮.
এখানে আল্লাহ তা’আলা নিজে তাঁর প্রতিশ্রুতির সাথে ইনশাআল্লাহ কথাটি ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে যে, আল্লাহ নিজেই যখন এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তখন তাকে আল্লাহর চাওয়ার সাথে শর্তযুক্ত করার অর্থ কি? এর জবাব হচ্ছে, এখানে যে কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ যদি না চান তাহলে তিনি এ প্রতিশ্রুতি পালন করবেন না। বরং যে প্রক্ষিতে এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এর সম্পর্ক তার সাথে। মক্কার কাফেররা যে ধারণার বশবর্তী হয়ে মুসলমানদেরকে উমরা থেকে বিরত রাখার জন্য এ খেলা খেলছিলো তা হচ্ছে আমরা যাকে উমরা করতে দিতে চাইবো সে-ই কেবল উমরা করতে পারবে এবং যখন করতে দিব তখনই মাত্র করতে পারবে। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেছেন, এটা তাদের ইচ্ছার ওপর নয়, বরং আমার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এ বছর উমরা হতে না পারার কারণ এটা নয় যে, মক্কার কাফেররা তাই চেয়েছিলো। বরং তা হয়েছে এ জন্য যে, আমি তা হতে দিতে চাইনি। আমি যদি চাই তাহলে ভবিষ্যতে এ উমরা হবে, কাফেররা তা হতে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করুক না করুক। সাথে সাথে একথার মধ্যে এ অর্থও প্রচ্ছন্ন আছে যে, মুসলমানরা যে উমরা করবে তাও নিজের ক্ষমতায় করবে না। আমি যেহেতু চাইবো যে তারা উমরা করুক তাই তারা উমরা করবে আমার ইচ্ছা যদি এর পরিপন্থী হয় তাহলে নিজেরাই উমরা আদায় করে ফেলবে এতটা শক্তি-সমর্থ তাদের মধ্যে নেই।
৪৯.
পরের বছর ৭ম হিজরীর যুল-কা’দা মাসে এ প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়। ইতিহাসে এ উমরা উমরাতুল কাযা নামে খ্যাত।
৫০.
একথা থেকে প্রমাণিত হয় উমরা ও হজ্জ আদায়ের সময় মাথা মুণ্ডন আবশ্যিক নয়, বরং চুল ছেঁটে নেয়াও জায়েয। তবে মাথা মুণ্ডন উত্তম। কারণ, আল্লাহ তা’আলা তা প্রথমে বর্ণনা করেছেন এবং চুল ছাঁটার কথা পরে উল্লেখ করেছেন।
৫১.
এখানে একথা বলার কারণ হলো যখন হুদাইবিয়াতে সন্ধিচুক্তি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছিলো সে সময় মক্কার কাফেররা নবীর ﷺ সম্মানিত নামের সাথে রসূলুল্লাহ কথাটি লিখতে আপত্তি জানিয়েছিলো, তাদের একগুঁয়েমির কারণে নবী (সা.) নিজে চুক্তিপত্র থেকে একথাটি মুছে ফেলেছিলেন। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমার রসূলের রসূল হওয়া একটি অনিবার্য সত্য, কারোর মানা বা না মানাতে তাতে কোন পার্থক্য সূচিত হয় না। কিছু লোক যদি তা না মানে না মানুক। তা সত্য হওয়ার জন্য আমার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। তাদের অস্বীকৃতির কারণে এ সত্য পরিবর্তিত হয়ে যাবে না। তাদের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও এ রসূল আমার পক্ষ থেকে যে হিদায়াত ও দ্বীন নিয়ে এসেছেন তা অন্য সব দ্বীনের ওপর বিজয় লাভ করবে। তা ঠেকিয়ে রাখার জন্য এসব অস্বীকারকারীরা যত চেষ্টাই করুক না কেন।
‘সব দ্বীন’ বলতে বুঝানো হয়েছে সেসব ব্যবস্থাকে যা দ্বীন হিসেবে গণ্য। আমরা পূর্বেই তাফহীমুল কুরআন সূরা যুমারের ব্যাখ্যায় ৩ টীকায় এবং সূরা শূরার ২০ টীকায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে আল্লাহ তা’আলা যে কথাটি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন তা হচ্ছে শুধু এ দ্বীনের প্রচার করাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল একে দ্বীন হিসেবে গণ্য সমস্ত জীবনাদর্শের ওপর বিজয়ী করে দেয়া। অন্য কথায় জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগের ওপর কোন বাতিল জীবনাদর্শ বিজয়ী হয়ে থাকবে আর বিজয়ী সে জীবনাদর্শ তার আধিপত্যাধীনে এ দ্বীনকে বেঁচে থাকার যতটুকু অধিকার দেবে এ দ্বীন সে চৌহদ্দির মধ্যেই হাত পা শুটিয়ে বসে থাকবে এ উদ্দেশ্যে নবী (সা.) এ দ্বীন নিয়ে আসেননি। বরং তিনি এ জন্য তা এনেছেন যে, এটাই হবে বিজয়ী জীবনাদর্শ। অন্য কোন জীবনাদর্শ বেঁচে থাকলেও এ জীবনাদর্শ যে সীমার মধ্যে তাকে বেঁচে থাকার অনুমতি দেবে সে সীমার মধ্যেই তা বেঁচে থাকবে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা যুমারের তাফসীর, টীকা ৪৮)
৫২.
মূল আয়াতাংশ হচ্ছে أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ । আরবী ভাষায় বলা হয় فُلَانٌ شَدِيْدٌ عَلَيْه নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করা তার জন্য কঠিন। কাফেরদের প্রতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের কঠোর হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তারা কাফেরদের সাথে রূঢ় এবং ক্রুদ্ধ আচরণ করেন, বরং এর অর্থ হচ্ছে, তারা তাদের ঈমানের পরিপক্কতা, নীতির দৃঢ়তার চারিত্রিক শক্তি এবং ঈমানী দূরদর্শিতার কারণে কাফেরদের মোকাবিলায় মজবুত পাথরের মত অনমনীয় ও আপোষহীন। তারা চপল বা অস্থিরমনা নন যে, কাফেররা তাদেরকে যেদিকে ইচ্ছা ঘুরিয়ে দেবে। তারা নরম ঘাস নন যে, কাফেররা অতি সহজেই তাদেরকে চিবিয়ে পিষে ফেলবে। কোন প্রকার ভয় দেখিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করা যায় না। কোন লোভ দেখিয়ে তাদের কেনা যায় না। যে মহত উদ্দেশ্যে তারা জীবন বাজি রেখে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয়েছেন তা থেকে তাদের বিচ্যুত করার ক্ষমতা কাফেরদের নেই।
৫৩.
অর্থাৎ তাদের মধ্যে যতটুকু কঠোরতা আছে তা কাফেরদের জন্য, ঈমানদারদের জন্য নয়। ঈমানদারদের কাছে তারা বিনম্র, দয়া পরবশ, স্নেহশীল, সমব্যাথী ও দুঃখের সাথী। নীতি ও উদ্দেশ্যের ঐক্য তাদের মধ্যে পরস্পরের জন্য ভালবাসা, সাযুজ্য ও গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছে।
৫৪.
সিজদা করতে করতে কোন কোন নামাযীর কপালে যে দাগ পড়ে তা এখানে বুঝানো হয়নি। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে আল্লাহভীরুতা, হৃদয়ের বিশালতা, মর্যাদা এবং মহৎ নৈতিক চরিত্রের প্রভাব যা আল্লাহর সামনে মাথা নত করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই কোন মানুষের চেহারায় ফুটে ওঠে। মানুষের চেহারা একখানা খোলা গ্রন্থের মত যার পাতায় পাতায় মানুষের মনোজগতের অবস্থা সহজেই অবলোকন করা যেতে পারে। একজন অহংকারী মানুষের চেহারা একজন বিনম্র ও কোমল স্বভাব মানুষের চেহারা ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন দুশ্চরিত্র মানুষের চেহারা একজন সচ্চরিত্র ও সৎমনা মানুষের চেহারা থেকে আলাদা করে সহজে চেনা যায়। একজন গুণ্ডা ও দুশ্চরিত্রের চেহারা-আকৃতি এবং একজন সম্ভ্রান্ত ও পবিত্র ব্যক্তির চেহারা-আকৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকে। আল্লাহ তা’আলার এ উক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এসব সঙ্গী-সাথী এমন যে, কেউ তাদের একবার দেখা মাত্রই অনুধাবন করতে পারবে তারা সৃষ্টির সেরা। কারণ তাদের চেহারায় আল্লাহ ভীরুতার দীপ্তি সমুজ্জল। এ বিষয়টি সম্পর্কে ইমাম মালেক (র) বলেন, সাহাবীদের সেনাদল যে সময় সিরীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তখন সিরীয়ার খৃস্টানরা বলেছিলোঃ ঈসার (আ) হাওয়ারীদের চালচলন সম্পর্কে আমরা যা যা শুনে আসছি এদের চালচলন দেখছি ঠিক তাই।
৫৫.
সম্ভবত ‘এখানে বাইবেলের’ দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকের ৩৩ অধ্যায়ের ২ ও ৩ শ্লোকের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে কল্যাণময় শুভ আগমের কথা বলতে গিয়ে তার সাহাবীদের জন্য “পবিত্রদের” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ছাড়া সাহাবায়ে কিরামের আর কোন গুণ বা পরিচয় যদি তাওরাতে বর্ণিত হয়ে থাকে তাহলে তা এখান এ বিকৃত তাওরাতে নেই।
৫৬.
হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সালামের একটি বক্তৃতায় এ উপমাটি বর্ণিত হয়েছে এবং বাইবেলের ‘নুতন নিয়মে’ তা উদ্ধৃত হয়েছে এভাবেঃ “তিনি আরো কহিলেন, ইশ্বরের রাজ্য এইরূপ। কোন ব্যক্তি যেন ভূমিতে বীজ বুনে; পরে রাত দিন নিদ্রা যায় ও উঠে, ইতিমধ্যে যে বীজ অঙ্কৃরিত হইয়া বাড়িয়া উঠে, কিরূপে তাহা সে জানে না। ভূমি আপনা আপনি ফল উৎপন্ন করে; প্রথমে অঙ্কুর পরে শীষে তাহার পর শীষের মধ্যে পূর্ণ শস্য। কিন্তু ফল পাকিলে সে তৎক্ষণাৎ কাস্তে লাগায়। কেননা শস্য কাটিবার সময় উপস্থিত। ……………তাহা একটা সরিষা দানার তুল্য; সেই বীজ ভূমিতে বুনিবার সময় ভূমির সকল বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র বটে, কিন্তু বুনা হইলে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া সকল শাক ইহতে বড় হইয়া ওঠে এবং বড় বড় ডাল ফেলে; তাহাতে আকাশের পক্ষিগণ তাহার ছায়ার নীচে বাস করিতে পারে। “(মার্ক, অধ্যায়, ৪, শ্লোক, ২৬ থেকে ৩২; এই বক্তৃতার শেষাংশ মথি লিখিত সুসমাচারের ১৩ অধ্যায়ের ৩১ ও ৩২ শ্লোকেও বর্ণিত হয়েছে)
৫৭.
একদল এ আয়াতে ব্যবহৃত مِنْهُمْ ও
من
(মিন) শব্দটিকে تبعيض অর্থে (অর্থাৎ তাদের কিছু সংখ্যক লোককে বুঝাতে) ব্যবহার করে আয়াতের অনুবাদ করেন, “তাদের মধ্যে যারা ঈমান গ্রহণ এবং নেক কাজ করেছে তাদেরকে ক্ষমা ও বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। “এভাবে তারা সাহাবায়ে কিরামের (রা.) প্রতি দোষারোপের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং দাবী করে যে, এ আয়াত অনুসারে সাহাবীদের (রা.) মধ্যে অনেকেই মু’মিন ও নেককার ছিলেন না। কিন্তু এ ব্যাখ্যা এ সূরারই ৪, ৫, ১৮ এবং ২৬ আয়াতের পরিপন্থী এবং এ আয়াতের প্রথমাংশের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যারা হুদাইবিয়াতে নবীর ﷺ সাথে ছিলেন ৪ও ৫ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাদের মনে প্রশান্তি নাযিল করা ও তাদের ঈমান বৃদ্ধি করার কথা উল্লেখ করেছেন এবং কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই তাদের সবাইকে জান্নাতে প্রবেশ করার কথা সুখবর দান করেছেন। আর যারা গাছের নীচে নবীর ﷺ কাছে বাইয়াত হয়েছিলেন ১৮ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাদের সবার জন্য তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রমের উল্লেখ নেই। ২৬ আয়াতেও নবীর ﷺ সমস্ত সঙ্গী-সাথীর জন্য মু’মিনীন, শব্দ ব্যবহার করেছেন, তাদের প্রতি তাঁর প্রশান্তি নাযিলের খবর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে এসব লোক তাকওয়ার নীতি অনুসরণের অধিক যোগ্য ও অধিকারী। এখানেও একথা বলা হয়নি যে, তাদের মধ্যে যারা মু’মিন কেবল তাদের জন্যই এ সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এ আয়াতেও প্রথমাংশে যে প্রশংসা বাক্য বলা হয়েছে তা তাদের সবার জন্য বলা হয়েছে যারা আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলেন। কথাটি হচ্ছে যারাই আপনার সাথে আছে এরূপ এবং এরূপ। এরপর আয়াতের শেষাংশে পৌঁছে একথা বলার এমন কি অবকাশ থাকতে পারে যে, তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক ঈমানদার ও নেককার ছিলেন এবং কিছু সংখ্যক লোক তা ছিলো না। তাই এখানে
من মিন শব্দটিকে
تبعيض অর্থে গ্রহণ করা বাক্য বিন্যাসের পরিপন্থী। প্রকৃতপক্ষে এখানে من (মিন) শব্দটিকে স্পষ্ট করে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ (মূর্তিসমূহের অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো)। আয়াতে
تبعيض ن من অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। তা না হলে আয়াতের অর্থ দাঁড়াবে মূর্তিসমূহের যেগুলো অপবিত্র সেগুলো থেকে দূরে থাকো। এর অর্থ হবে এই যে, কিছু মূর্তিকে পবিত্র বলেও ধরে নিতে হবে। আর সেগুলোর পূজা থেকে বিরত থাকা আবশ্যিক হবে না।