১ ) হে নবী, আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি ১
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًۭا مُّبِينًۭا ١
২ ) যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে দেন, ২ তোমার জন্য তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণতা দান করেন, ৩
لِّيَغْفِرَ لَكَ ٱللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنۢبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُۥ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَٰطًۭا مُّسْتَقِيمًۭا ٢
৩ ) তোমাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন ৪ এবং অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে সাহায্য করেন। ৫
وَيَنصُرَكَ ٱللَّهُ نَصْرًا عَزِيزًا ٣
৪ ) তিনিই তো সে সত্তা যিনি মু’মিনদের মনে প্রশান্তি নাযিল করেছেন ৬ যাতে তারা নিজেদের ঈমান আরো বাড়িয়ে নেয়। ৭ আসমান ও যমীনের সমস্ত বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তিনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী। ৮
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ فِى قُلُوبِ ٱلْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوٓا۟ إِيمَـٰنًۭا مَّعَ إِيمَـٰنِهِمْ ۗ وَلِلَّهِ جُنُودُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًۭا ٤
৫ ) (এ কাজ তিনি এ জন্য করেছেন) যাতে ঈমানদার নারী ও পুরুষদেরকে ৯ চিরদিন অবস্থানের জন্য এমন জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তাদের মন্দ কর্মসমূহ দূর করবেন। ১০ এটা আল্লাহর কাছে বড় সফলতা।
لِّيُدْخِلَ ٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عِندَ ٱللَّهِ فَوْزًا عَظِيمًۭا ٥
৬ ) আর যেসব মুনাফিক নারী ও পুরুষ এবং মুশরিক নারী ও পুরুষ আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে ১১ তাদের শাস্তি দেবেন। তারা নিজেরাই অকল্যাণর চক্রে পড়ে গিয়েছে। ১২ আল্লাহর গযব পড়েছে তাদের ওপর তিনি লা’নত করেছেন তাদেরকে এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন-যা অত্যন্ত জঘন্য জায়গা।
وَيُعَذِّبَ ٱلْمُنَـٰفِقِينَ وَٱلْمُنَـٰفِقَـٰتِ وَٱلْمُشْرِكِينَ وَٱلْمُشْرِكَـٰتِ ٱلظَّآنِّينَ بِٱللَّهِ ظَنَّ ٱلسَّوْءِ ۚ عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ ٱلسَّوْءِ ۖ وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلَعَنَهُمْ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَهَنَّمَ ۖ وَسَآءَتْ مَصِيرًۭا ٦
৭ ) আসমান ও যমীনের সকল বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। তিনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী। ১৩
وَلِلَّهِ جُنُودُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا ٧
৮ ) হে নবী, আমি তোমাকে সাক্ষ্যদানকারী, ১৪ সুসংবাদ দানকারী এবং সতর্ককারী ১৫ হিসেবে পাঠিয়েছি-
إِنَّآ أَرْسَلْنَـٰكَ شَـٰهِدًۭا وَمُبَشِّرًۭا وَنَذِيرًۭا ٨
৯ ) যাতে হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন, তাঁকে সাহায্য কর, তাঁর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখাও এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর। ১৬
لِّتُؤْمِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةًۭ وَأَصِيلًا ٩
১০ ) হে নবী যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিলো প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিলো। ১৭ তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত। ১৮ যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে। আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, ১৯ আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন।
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ ۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ ۖ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِمَا عَـٰهَدَ عَلَيْهُ ٱللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًۭا ١٠
১.
হুদাইবিয়ার সন্ধির পরে বিজয়ের এ সুসংবাদ শুনানো হলে লোকজন বিস্মিত হলো এই ভেবে যে, এ সন্ধিকে বিজয় বলা যায় কি করে? ঈমানের ভিত্তিতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে নেয়া ভিন্ন কথা। কিন্তু তাকে বিজয় বলাটা করোরই বোধগম্য হচ্ছিলো না। এ আয়াতটি শুনে হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল, এটা কি বিজয়? নবী (সা.) বললেনঃ হাঁ (ইবনে জারীর)। অন্য একজন সাহাবীও নবীর ﷺ কাছে এসে একই প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ إِى وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّهُ لَفَتْحٌ সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের ﷺ প্রাণ, এটা অবশ্যই বিজয়। (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ) মদীনায় ফেরার পর আরো এক ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বললো, “এটা কেমন বিজয়? বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে আমাদের বাধা দেয়া হয়েছে, আমাদের কুরবানীর উটগুলোও আর সামনে অগ্রসর হতে পারেনি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুদাইবিয়াতেই থামতে হয়েছে এবং এ সন্ধির ফলেই আমাদের দু’মজলুম ভাই আবু জানদাল ও আবু বাসীরকে জালেমদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। “একথাটি নবী (সা.) এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ এটা অত্যন্ত ভুল কথা। প্রকৃতপক্ষে এটা বিরাট বিজয়। তোমরা একেবারে মুশরিকদের বাড়ীর দরজায় গিয়ে হাজির হয়েছিলে এবং তারা আগামী বছর উমরা করতে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তোমাদের ফিরে যেতে সম্মত করেছিল। যুদ্ধ বন্ধ করা এবং সন্ধি করার জন্য তারা নিজেরাই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। অথচ তাদের মনে তোমাদের প্রতি যে শত্রুতা রয়েছে তা অজানা নয়। আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয় দান করেছেন। সেদিনের কথা কি ভুলে গেলে উহুদে যেদিন তোমরা ছুটে পালাচ্ছিলে আর আমি পশ্চাত দিক থেকে চিৎকার করে তোমাদের ডাকছিলাম? সেদিনের কথা কি ভুলে গেলে যেদিন আহযাবের যুদ্ধে শত্রুরা সব দিক থেকে চড়াও হয়েছিল এবং তোমাদের শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল? (বায়হাকীতে উরওয়া ইবনে যুবায়ের বর্ণনা) কিন্তু এ সন্ধি যে প্রকৃতই বিজয় তা কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রকাশ পেতে থাকলো এবং সব শ্রেণীর মানুষের কাছে একথা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, প্রকৃতপক্ষে হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকেই ইসলামের বিজয়ের সূচনা হয়েছিলো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ এবং হযরত বারা ইবনে আযেব এ তিন সাহাবী থেকে প্রায় একই অর্থে একটি কথা বর্ণিত হয়েছে যে, লোকেরা মক্কা বিজয়েকেই প্রকৃত বিজয় বলে থাকে। কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই প্রকৃত বিজয় মনে করি। (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে জারীর)।
২.
যে পরিবেশ পরিস্থিতিতে একথাটি বলা হয়েছে তা মনে রাখলে স্পষ্ট বুঝা যায়, ইসলামের সাফল্য ও বিজয়ের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে মুসলমানগণ বিগত ১৯ বছর ধরে যে চেষ্টা-সাধনা করে আসছিলেন তার মধ্যে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা রয়ে গিয়েছিলো এখানে সেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি কি তা কোন মানুষের জানা নেই। বরং মানবীয় বিবেক-বুদ্ধি এ চেষ্টা-সাধনার মধ্যে কোন ত্রুটি ও অপক্কতা খুঁজে পেতে একেবারেই অক্ষম। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার দৃষ্টিতে পূর্ণতার যে অতি উচ্চ মানদণ্ড রয়েছে তার বিচারে ঐ চেষ্টা সাধনার মধ্যে এমন কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল যার কারণে মুসলমানগণ আরবের মুশরিকদের বিরুদ্ধে এত দ্রুত চূড়ান্ত বিজয় লাভ করতে পারতেন না। আল্লাহ তা’আলার বাণীর তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা যদি ঐ সব ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে চেষ্টা সাধনা করতে তাহলে আরব বিজিত হতে আরো দীর্ঘ সময় দরকার হতো। কিন্তু এসব দুর্বলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে কেবল নিজের মেহেরবানী দ্বারা আমি তোমাদের অপূর্ণতা দূর করেছি এবং হুদাইবিয়া নামক স্থানে তোমাদের জন্য সে বিজয় ও সফলতার দ্বার উন্মক্ত করে দিয়েছি যা স্বাভাবিকভাবে তোমাদের প্রচেষ্টা দ্বারা অর্জিত হতো না।
এখানে একথাটিও ভালভাবে উপলব্ধি করা দরকার যে, কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে দল চেষ্টা-সাধনা চালাচ্ছে তার ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য সে দলের নেতাকে সম্বোধন করা হয়। তার অর্থ এ নয় যে, ঐ সব ত্রুটি ও দুর্বলতা উক্ত নেতার ব্যক্তিগত ত্রুটি ও দুর্বলতা। গোটা দল সম্মিলিত ভাবে যে চেষ্টা-সাধনা চালায় ঐ সব ত্রুটি ও দুর্বলতা সে দলের সম্মিলিত চেষ্টা-সাধনার। কিন্তু নেতাকে সম্বোধন করে বলা হয়, আপনার কাজে এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্তমান।
তা সত্ত্বেও যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর পূর্বপর সব ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাই সাধারণভাবে এ শব্দগুলো থেকে এ বিষয়টিও বুঝা যায় যে, আল্লাহর কাছে তাঁর রসূলের সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি (যা কেবল তাঁর উচ্চ মর্যাদার বিচারে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল) ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। এ কারণে সাহাবায়ে কিরামের যখন নবীকে ﷺ ইবাদাতের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক রকমের কষ্ট করতে দেখতেন তখন বলতেন, আপনার পূর্বাপর সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি তো ক্ষমা করা হয়েছে। তারপরও আপনি এত কষ্ট করেন কেন? জবাবে নবী (সা.) বলতেনঃ) أَفَلاَ أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا “আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দাও হবো না? ” (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)।
৩.
নিয়ামতকে পূর্ণতা দানের অর্থ হচ্ছে মুসলমানরা স্বস্থানে সব রকম ভয়-ভীতি, বাধা-বিপত্তি এবং বাইরের সব রকম হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থেকে পুরোপুরি ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইসলামী আইন-কানুন অনুসারে জীবন যাপনের স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর বিধানকে উঁচু করে তুলে ধরার শক্তি লাভ করবে। কূফর ও পাপাচারের আধিপত্য যা আল্লাহর দাসত্বের পথে বাধা এবং আল্লাহর বিধানকে সমুন্নত করার প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় তা ঈমানদারদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। কুরআন এ বিপদকেই ফিতনা বলে আখ্যায়িত করে। এ ফিতনা থেকে মুক্তি পেয়ে যখন তারা এমন একটি শান্তি ও আবাস লাভ করে যেখানে আল্লাহর দ্বীন পূর্ণরূপে হুবহু বাস্তবায়িত হতে পারে এবং সাথে সাথে এমন উপায়-উপকরণও লাভ করে যার দ্বারা আল্লাহর যমীনে কুফর ও পাপাচারের স্থানে ঈমান ও তাকওয়ার শাসন চালু করতে পারে তখন তা হয় তাদের জন্য আল্লাহর নিয়ামতের পরিপূর্ণতা দান। মুসলমানরা যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমেই আল্লাহর এ নিয়ামত লাভ করেছিলো, তাই আল্লাহ তা’আলা নবীকে ﷺ সম্বোধন করেই বলছেনঃ আমি তোমার জন্য আমার নিয়ামতকে পরিপূর্ণতা দান করতে চাচ্ছিলাম, আর সে জন্যই তোমাকে এই বিজয় দান করেছি।
৪.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোজা পথ দেখানোর অর্থ এখানে তাঁকে বিজয় ও সাফল্যের পথ দেখানো। অন্য কথায় এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা হুদাইবিয়া নামক স্থানে সন্ধিচুক্তি করিয়ে নবীকে ﷺ ইসলামের বিরুদ্ধে বাধাদানকারী শক্তিসমূহকে পরাভূত করার পথ সহজ করে দিয়েছেন এবং সেজন্য কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন।
৫.
আরেকটি অনুবাদ এও হতে পারে যে, “তোমাকে অভূতপূর্ব বা বিরল সাহায্য দান করেছেন।” মূল আয়াতে نَصْرًا عَزِيزًا ব্যবহৃত হয়েছে।
عَزِيزًا শব্দের অর্থ যেমন পরাক্রমশালী তেমনি নজীরবিহীন অতুলনীয় এবং বিরলও। প্রথম অর্থের বিচারে এ আয়াতাংশের তাৎপর্য হচ্ছে, এ সন্ধির মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা নবীকে ﷺ যে সাহায্য করেছেন তার কারণে তাঁর শত্রুরা অক্ষম হয়ে পড়বে। দ্বিতীয় অর্থটির বিচারে এর তাৎপর্য হচ্ছে, মানুষ বাহ্যত যে জিনিসটিকে শুধু একটি সন্ধিচুক্তি হিসেবে দেখছিলো-তাও আবার অবদমিত হয়ে মেনে নেয়া সন্ধি-তা-ই একটি চূড়ান্ত বিজয়ে রূপান্তরিত হবে, কাউকে সাহায্য করার এমন অদ্ভুত পন্থা খুব কমই গ্রহণ করা হয়েছে।
৬.
سكِينَةَ আরবী ভাষায় স্থিরতা, প্রশান্তি ও দৃঢ় চিত্ততাকে বুঝায়। এখানে আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদের অন্তরে তা নাযিল করাকে হুদাইবিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানগণ যে বিজয় লাভ করেছিলো তার গুরুত্ব পূর্ণ কারণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সে সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে সামান্য চিন্তা-ভাবনা করলেই বুঝা যায় তা কি ধরনের প্রশান্তি ছিল যা ঐ পুরো সময়টা ধরেই মুসলমানদের হৃদয় মনে অবতীর্ণ করা হয়েছিল আর কিভাবে তা এ বিজয়ের কারণ হয়েছিল। যে সময় রসূলুল্লাহ ﷺ উমরা আদায়ের জন্য মক্কা শরীফ যাওয়ার সংকল্প প্রকাশ করেছিলেন মুসলমানগণ যদি সে সময় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তেন এবং মুনাফিকদের মত মনে করতেন যে এতো স্পষ্টত মৃত্যুর মুখের মধ্যে চলে যাওয়া কিংবা পথে যখন খবর পাওয়া গেল কাফের কুরাইশরা যুদ্ধ করতে সংকল্প করেছে তখন যদি মুসলমানরা হতবুদ্ধি ও অস্থির হয়ে পড়তেন যে, যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম ছাড়াই কিভাবে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করবো আর এ কারণে তাদের মধ্যে বিশৃংখলার সৃষ্টি হতো তাহলে হুদাবিয়াতে যে ফলাফল অর্জিত হয়েছিল তা কখনো অর্জিত হতো না। তাছাড়া কাফেররা হুদায়িবিয়ায় যখন মুসলমানদের আক্রমণ হতে বাধা দিয়েছিল, যখন আকস্মিক হামলা চালিয়ে এবং রাতের অন্ধাকারে আক্রমণ করে করে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিল, যখন হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত লাভের খবর পাওয়া গিয়েছিল, যখন আবু জানদাল অত্যাচারিতের মূর্ত ছবি হয়ে মুসলমানদের জনসমাবেশের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তখন যদি মুসলমানগণ উত্তেজিত হয়ে রসূল্লাল্লাহ ﷺ যে শৃংখলা ও সংযম প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা নষ্ট করতেন তাহলে সবকিছুই ভুন্ডল হয়ে যেতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মুসলমানদের গোটা সংগঠনের কাছে সন্ধিচুক্তির যেসব শর্ত অত্যন্ত অপছন্দনীয় ছিল রসূলুল্লাহ ﷺ যখন তা মেনে নিয়েই চুক্তি সম্পাদন করতে যাচ্ছিলেন তখন যদি সাহাবীগণ নবীর ﷺ নির্দেশ অমান্য করে বসতেন তাহলে হুদাইবিয়ার এ বিরাট বিজয় বিরাট পরাজয়ে রূপান্তরিত হতো। এসব নাজুক মুহূর্তে রসূলের নেতৃত্ব ও পথপ্রদর্শন সম্পর্কে, ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে এবং নিজেদের আদর্শিক কর্ম-তৎপরতার ন্যায় ও সত্য হওয়া সম্পর্কে মুসলমানদের মনে যে পূর্ণ আস্থা ও প্রশান্তি ছিল তা সরাসরি আল্লাহর মেহেরবানী। এ কারণে তারা ধীরে স্থীর মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল যে, আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে যাই ঘটুক না কেন তা সবই শিরধার্য। এ করণে তারা ভয়-ভীতি, অস্থিরতা, উস্কানী এবং নৈরাশ্য সবকিছু থেকে মুক্ত ছিলেন। এর কল্যাণেই তাঁদের শিবিরে পূর্ণ শৃংখলা ও সংযম বজায় ছিল এবং সন্ধির শর্তসমূহ সম্পর্কে অত্যন্ত অবনত মস্তকে মেনে নিয়েছিলেন। এটাই সেই প্রশান্তি যা আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদের মনে নাযিল করেছিলেন। এর কারণেই উমরা আদায়ের সেই বিপদসংকুল উদ্যোগটি সর্বোত্তম সাফল্যের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল।
৭.
অর্থাৎ তাদের যে ঈমান এ অভিযানের পূর্বে ছিল, তার সাথে আরো ঈমান তারা অর্জন করলো এ কারণে যে, এ অভিযান চলাকালে একের পর এক যত পরীক্ষা এসেছে তার প্রত্যেকটিতে তারা নিষ্ঠা, তাকওয়া ও আনুগত্যের নীতির ওপর দৃঢ়পদ থেকেছে। যেসব আয়াত থেকে বুঝা যায় ঈমান কোন স্থির, জড় ও অপরিবর্তনীয় অবস্থার নাম নয়। বরং ঈমান হ্রাস বৃদ্ধি ও ওঠানামা আছে, এ আয়াতটি তার একটি। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে মু’মিনদের জীবনের পদে পদে এমন সব পরীক্ষা আসে যখন তাকে এ সিদ্ধান্তকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় যে, আল্লাহর দ্বীনের জন্য সে তার জান-মাল আবেগ-অনুভূতি, আশা-আকাংখা, সময়, আরাম আয়েশ এবং স্বার্থ কুরবানী করতে প্রস্তুত আছে কিনা। এরূপ প্রতিটি পরিক্ষার সময় যদি সে কুরবানী ও ত্যাগের পথ অনুসরণ করে তাহলে তার ঈমান উন্নতিও সমৃদ্ধিলাভ করে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার ঈমান থমকে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত এমন এক সময়ও আসে যখন তার ঈমানের প্রাথমিক ও পুঁজিও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে, যা নিয়ে সে ইসলামের গণ্ডিতে প্রবেশ করেছিল। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আনফাল, টীকা ২; আল আহযাব, টীকা ৩৮)।
৮.
অর্থাৎ আল্লাহর কাছে এমন বাহিনী আছে, যার সাহায্যে তিনি যখন ইচ্ছা কাফেরদের ধ্বংস করে দিতে পারেন। কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইচ্ছা করেই তিনি ঈমানদারদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন যাতে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে চেষ্টা-সাধনা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করেন। এ কাজের দ্বারাই তাদের মর্যাদা উন্নত এবং আখোতের সাফল্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়। পরের আয়াত এ কথারই প্রতিধ্বনি করছে।
৯.
কুরআন মজীদে সাধারণত ঈমানদারদের পুরস্কারের উল্লেখ সামষ্টিকভাবে করা হয়ে থাকে। নারীও পুরুষের কথা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু এখানে একত্রে উল্লেখ করলে যেহেতু এরূপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারতো যে, এ পুরস্কার হয়তো শুধু পুরুষদের জন্যই। তাই আল্লাহ তা’আলা মু’মিন নারীদের সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তারাও মু’মিন পুরুষদের সাথে এ পুরস্কারে সমভাবে অংশীদার। এর কারণ স্পষ্ট। যেসব দ্বীনদার ও আল্লাহভীরু মহিলা তাদের স্বামী, পুত্র, ভাই ও পিতাকে এ বিপজ্জনক সফরে যেতে বাধা দেয়া এবং মাতম ও বিলাপ করে নিরুৎসাহিত করার পরিবর্তে সাহস যুগিয়েছেন, যারা তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের বাড়ীঘর ও সন্তান-সন্তুতি, তাদের সহায়-সম্পদ, তাদের সম্ভ্রম এবং তাদের সন্তানদের সংরক্ষক হয়ে এ ব্যাপারে তাদেরকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রেখেছেন। একযোগ চৌদ্দশ সাহাবীর চলে যাওয়ার পর আশেপাশের কাফের ও মুনাফিকরা শহরের ওপর আক্রমণ করে না বসে এ আশঙ্কায় যারা কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করে দেয়নি তারা বাড়ীতে অবস্থান করা সত্ত্বেও সওয়াব ও পুরস্কারের ক্ষেত্রে তারা যে তাদের পুরুষদের সাথে সমান অংশীদার হবেন-এটাই স্বাভাবিক।
১০.
অর্থাৎ মানবিক দূর্বলতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতিই তাদের দ্বারা হয়েছে তা মাফ করে দেবেন, জান্নাতে প্রবেশের পূর্বেই ঐ সব ত্রুটি-বিচ্যুতির সব রকম প্রভাব থেকে তাদের পবিত্র করবেন এবং এমনভাবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে যে, তাদের দেহে কোন কালিমা থাকবে না যার কারণে সেখানে তাদেরকে লজ্জিত হতে হবে।
১১.
এ যাত্রায় মদীনার আশেপাশের মুনাফিকদের ধারণা ছিল যে, রসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণ এ সফর থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারবেন না। পরবর্তী ১২ আয়াতে একথাটিই বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া মক্কার মুশরিক এবং তাদের সহযোগী কাফেররা মনে করেছিল যে, রসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সঙ্গীগণকে উমরা আদায় করা থেকে বিরত রেখে তারা তাঁকে পরাজিত ও অপমানিত করতে সক্ষম হয়েছে। ঐ দু’টি গোষ্ঠীর এসব চিন্তার মূলে প্রকৃতপক্ষে যে জিনিসটি কার্যকর ছিল তাহলো আল্লাহ সম্পর্কে তাদের এই কুধারণা যে, তিনি তাঁর নবীকে সাহায্য করবেন না এবং হক ও বাতিলের এ সংঘাতে হকের আওয়াজকে অবদমিত করার অবাধ সুযোগ দেবেন।
১২.
অর্থাৎ যে মন্দ পরিণাম থেকে তারা রক্ষা পেতে চাচ্ছিল এবং যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা এসব কৌশল অবলম্বন করেছিল তারা নিজেরাই সে ফাঁদে আটকা পড়েছে। তাদের সেসব কৌশলই তাদের মন্দ পরিণাম ত্বরান্বিত করার কারণ হয়েছে।
১৩.
এ কথাটিকে এখানে আরেকটি উদ্দেশ্যে পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে। ৪ নম্বর আয়াতে কথাটি যে উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল তা হচ্ছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর অতি প্রাকৃতিক বাহিনীকে কাজে লাগানোর পরিবর্তে মু’মিনদের দ্বারাই তা করিয়েছেন। কারণ, তিনি মু’মিনদের পুরস্কৃত করতে চাচ্ছিলেন। আর এখানে এ বিষয়টিকে পুনরায় বর্ণনা করেছেন এ জন্য যে, আল্লাহ যাকে শাস্তি দিতে চান তার মূলোৎপাটনের জন্য তিনি নিজের সৈন্যবাহীনির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারেন। কারো এ ক্ষমতা নেই যে, নিজের কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার জোরে তাঁর শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে।
১৪.
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (র) شاهد শব্দের অনুবাদ করেছেন
اظهار حق كننده সত্য প্রকাশকারনী এবং অন্যান্য অনুবাদকগণ অনুবাদ করেছেন, “সাক্ষ্যদানকারী।” শাহাদাত শব্দটি এ দু’টি অর্থই বহন করে। ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আহযাবের তাফসীর, টীকা, ৮২।
১৫.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আহযাবের তাফসীর, টীকা ৮৩।
১৬.
কোন কোন মুফাস্সির বলেছেন
تُعَزِّرُوهُ ও
تُوَقِّرُوهُ শব্দ দু’টির (হু) সর্বনাম দ্বারা রসূলুল্লাহ ﷺ এবং
تُسَبِّحُوهُ শব্দের (হু) সর্বনাম দ্বারা আল্লাহ তা’আলাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তাদের মতে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, “তোমরা রসূলকে সহযোগিতা দান করো এবং তাকে সম্মান ও মর্যাদা দেখাও আর সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকো। “কিন্তু একই বাক্যের মধ্যে সর্বনামসমূহ দ্বারা কোন ইঙ্গিত ছাড়াই দু’টি আলাদা সত্তাকে বুঝানো হবে তা সঠিক হতে পারে না। একারণে আরেক দল মুফাস্সিরের মতে সবগুলো সর্বনাম দ্বারা আল্লাহ তা’আলাকেই বুঝানো হয়েছে। তাঁদের মতে বাক্যের অর্থ হচ্ছে, “তোমরা আল্লাহর সাথে থাকো, তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা দেখাও এবং সকাল সন্ধ্যায় তাঁরই পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকো। “
সকাল সন্ধ্যায় পবিত্রতা বর্ণনা করার অর্থ শুধু সকাল সন্ধ্যায় নয়, বরং সর্বক্ষণ পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকা। এটা ঠিক তেমনি যেমন আমরা বলে থাকি অমুক জিনিসটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জুড়ে প্রসিদ্ধ। এর অর্থ এই নয় যে, শুধু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মানুষই বিষয়টি জানে, বরং এর অর্থ হচ্ছে সারা পৃথিবীতেই তা পরিচিত ও আলোচিত।
১৭.
পবিত্র মক্কা নগরীতে হযরত উসমানের (রা.) শহীদ হয়ে যাওয়ার খবর শুনে রসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবায়ে কিরাম থেকে হুদাইবিয়া নামক স্থানে যে বাইয়াত নিয়েছিলেন সেই বাইয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক বর্ণনা অনুসারে এ মর্মে বাইয়াত নেয়া হয়েছিলো যে, আমরা যুদ্ধের ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবো না। প্রথম মতটি হযরত সালামা ইবনে আকওয়া থেকে বর্ণিত হয়েছে আর দ্বিতীয়টি বর্ণিত হয়েছে ইবনে উমর, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ এবং মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকে। দু’টিরই প্রতিপাদ্য বিষয় এক। সাহাবীগণ এ সংকল্প নিয়ে রসূলুল্লাহর ﷺ হাতে বাইয়াতে গ্রহণ করেছিলেন যে, তারা সবাই এখানে এ মুহূর্তেই কুরাইশদের সাথে বুঝাপড়া করবেন, এমনকি পরিণামে সবাই নিহত হলেও। প্রকৃতই হযরত উসমান শহীদ হয়েছেন না জীবিত আছেন এক্ষেত্রে তা যেহেতু নিশ্চিত জানা ছিল না তাই রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর পক্ষ থেকে নিজের একহাত অন্য হাতের ওপর রেখে বাইয়াত করলেন। এখানে হযরত উসমান (রা.) এ অসাধারণ মর্যাদা লাভ করলেন যে, নবী (সা.) নিজের পবিত্র হাতকে তাঁর হাতের স্থলাভিষিক্ত করে তাঁকে বাইয়াতে অংশীদার করলেন। হযরত উসমানের ﷺ পক্ষ থেকে নবীর ﷺ নিজের বাইয়াত করার অনিবার্য অর্থ হলো তাঁর প্রতি নবীর ﷺ এ মর্মে আস্থা ছিল যে, তিনি যদি উপস্থিত থাকতেন তাহলে অবশ্যই বাইয়াত করতেন।
১৮.
অর্থাৎ সে সময় লোকেরা যে হাতে বাইয়াত করেছিলো তা ব্যক্তি রসূলের হাত ছিল না, আল্লাহর প্রতিনিধির হাত ছিল এবং রসূলের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাথে এ বাইয়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো।
১৯.
এখানে একটি অতি সূক্ষ্ম বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। আরবী ভাষায় সাধারণ নিয়ম অনুসারে এখানে عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ পড়া উচিত ছিল। কিন্তু এ সাধারণ নিয়ম পরিত্যাগ করে এখানে
عَلَيْهُ اللَّهَ পড়া হয়ে থাকে। আল্লামা আলূসী অস্বাভাবিকভাবে এ
اعراب দেয়ার দু’টি কারণ বর্ণনা করেছেন। একটি হচ্ছে, এ বিশেষ ক্ষেত্রে যে মহান সত্তার সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছিলো তাঁর মর্যাদা ও জাঁকজমক প্রকাশ উদ্দেশ্য। তাই এখানে
عليه এর পরিবর্তে
عليه ই বেশী উপযুক্ত। অপরটি হচ্ছে,
عليه এর হা সর্বনাম প্রকৃতপক্ষে
هو এর স্থলাভিষিক্ত। আর এর মূল
اعراب পেশ; যের নয়। তাই এর মূল
اعراب চুক্তি পূরণের বিষয়ের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।