আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন্ নিসা

১৭৬ আয়াত

৭১ ) হে ঈমানদারগণ! মোকাবিলা করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকো। ১০১ তারপর সুযোগ পেলে পৃথক পৃথক বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে বের হয়ে পড়ো অথবা এক সাথে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ خُذُوا۟ حِذْرَكُمْ فَٱنفِرُوا۟ ثُبَاتٍ أَوِ ٱنفِرُوا۟ جَمِيعًۭا ٧١
৭২ ) হ্যাঁ, তোমাদের কেউ কেউ এমনও আছে যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে গড়িমসি করে। ১০২ যদি তোমাদের ওপর কোন মুসিবত এসে পড়ে তাহলে সে বলে আল্লাহ‌ আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, আমি তাদের সাথে যাইনি।
وَإِنَّ مِنكُمْ لَمَن لَّيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَـٰبَتْكُم مُّصِيبَةٌۭ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَىَّ إِذْ لَمْ أَكُن مَّعَهُمْ شَهِيدًۭا ٧٢
৭৩ ) আর যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তাহলে সে বলে—এবং এমনভাবে বলে যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোন প্রীতির সম্পর্ক ছিলই না,-হায়! যদি আমিও তাদের সাথে হতাম তাহলে বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।
وَلَئِنْ أَصَـٰبَكُمْ فَضْلٌۭ مِّنَ ٱللَّهِ لَيَقُولَنَّ كَأَن لَّمْ تَكُنۢ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُۥ مَوَدَّةٌۭ يَـٰلَيْتَنِى كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًۭا ٧٣
৭৪ ) (এই ধরনের লোকদের জানা উচিত) আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। ১০৩ তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরস্কার দান করবো।
۞ فَلْيُقَـٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يَشْرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا بِٱلْـَٔاخِرَةِ ۚ وَمَن يُقَـٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًۭا ٧٤
৭৫ ) তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও। ১০৪
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلْوِلْدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا مِنْ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهْلُهَا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّۭا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا ٧٥
৭৬ ) যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। ১০৫ কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল। ১০৬
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱلطَّـٰغُوتِ فَقَـٰتِلُوٓا۟ أَوْلِيَآءَ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۖ إِنَّ كَيْدَ ٱلشَّيْطَـٰنِ كَانَ ضَعِيفًا ٧٦
৭৭ ) তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামায কায়েম করো ও যাকাত দাও? এখন তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশী। ১০৭ তারা বলছেঃ হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেন লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন? তাদেরকে বলোঃ দুনিয়ার জীবন ও সম্পদ অতি সামান্য এবং একজন আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষের জন্য আখেরাতই উত্তম। আর তোমাদের ওপর এক চুল পরিমাণও জুলুম করা হবে না। ১০৮
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوٓا۟ أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ ٱلْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌۭ مِّنْهُمْ يَخْشَوْنَ ٱلنَّاسَ كَخَشْيَةِ ٱللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةًۭ ۚ وَقَالُوا۟ رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا ٱلْقِتَالَ لَوْلَآ أَخَّرْتَنَآ إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ قَرِيبٍۢ ۗ قُلْ مَتَـٰعُ ٱلدُّنْيَا قَلِيلٌۭ وَٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ لِّمَنِ ٱتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا ٧٧
৭৮ ) আর মৃত্যু, সে তোমরা যেখানেই থাকো না কেন সেখানে তোমাদের নাগাল পাবেই, তোমরা কোন মজবুত প্রাসাদে অবস্থান করলেও। যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তাহলে তারা বলে, এতো আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে। আর কোন ক্ষতি হলে বলে, এটা হয়েছে তোমার বদৌলতে। ১০৯ বলে দাও, সবকিছুই হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। লোকদের কী হয়েছে, কোন কথাই তারা বোঝে না।
أَيْنَمَا تَكُونُوا۟ يُدْرِككُّمُ ٱلْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِى بُرُوجٍۢ مُّشَيَّدَةٍۢ ۗ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌۭ يَقُولُوا۟ هَـٰذِهِۦ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌۭ يَقُولُوا۟ هَـٰذِهِۦ مِنْ عِندِكَ ۚ قُلْ كُلٌّۭ مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ ۖ فَمَالِ هَـٰٓؤُلَآءِ ٱلْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًۭا ٧٨
৭৯ ) হে মানুষ! যে কল্যাণই তুমি লাভ করে থাকো তা আল্লাহর দান এবং যে বিপদ তোমার ওপর এসে পড়ে তা তোমার নিজের উপার্জন ও কাজের বদৌলতেই আসে। হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি এবং এরপর আল্লাহর সাক্ষ্য যথেষ্ট।
مَّآ أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍۢ فَمِنَ ٱللَّهِ ۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍۢ فَمِن نَّفْسِكَ ۚ وَأَرْسَلْنَـٰكَ لِلنَّاسِ رَسُولًۭا ۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدًۭا ٧٩
৮০ ) যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের ওপর তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি। ১১০
مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَ ۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًۭا ٨٠
১০১.
উল্লেখ্য এ ভাষণটি এমন এক সময় নাযিল হয়েছিল যখন ওহোদ যুদ্ধের পরাজয়ের পর মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকার গোত্রগুলোর সাহস বেড়ে গিয়েছিল এবং বিপদ আপদ চতুর্দিক থেকে মুসলমানদেরকে ঘিরে ফেলেছিল। সে সময় প্রায় প্রতিদিনই নানান ধরনের দুঃসংবাদ আসতো। উমুক গোত্র বিরূপ হয়ে গেছে। মুসলমানদের সাথে এক নাগাড়ে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছিল। তাদের প্রচারকদেরকে দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে দাওয়াত দিয়ে ধোঁকা দিয়ে হত্যা করা হতো। মদীনার বাইরে তাদের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিল না। এ অবস্থায় এসব বিপদের ঢেউয়ের আঘাতে যাতে ইসলামের তরী ডুবে না যায় সেজন্য মুসলমানদের পক্ষ থেকে একটি জোরদার প্রচেষ্টা ও জীবন উৎসর্গকারী সংগ্রাম পরিচালনার প্রয়োজন ছিল।
১০২.
এর এক অর্থ এও হতে পারে যে, নিজে তো গড়িমসি করেই, এমন কি অন্যদেরকেও হিম্মতহারা করে দেয়, তাদের বুকে ভয় ঢুকিয়ে দেয় এবং জিহাদ বন্ধ করার জন্য এমন ধরনের কথা বলতে থাকে যার ফলে তারা নিজেদের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে।
১০৩.
অর্থাৎ আল্লাহর পথে লড়াই করা দুনিয়ার লাভ ও দুনিয়ার স্বার্থ পূজারী লোকদের কাজ নয়। এটা এমন এক ধরনের লোকের কাজ যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, যারা আল্লাহ‌ ও আখেরাতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে এবং নিজেদের পার্থিব প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির সমস্ত সম্ভাবনা ও সব ধরনের পার্থিব স্বার্থ একমাত্র আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাদের রব যেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং এই দুনিয়ায় তাদের ত্যাগ কুরবানী বিফল হয়ে গেলেও আখেরাতেও যেন বিফলে না যায়।
১০৪.
এখানে এমন সব মজলুম শিশু, নারী ও পুরুষদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা মক্কায় ও আরবের অন্যান্য গোত্রের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিল কিন্তু তাদের হিজরত করার শক্তি ছিল না এবং নিজেদেরকে কাফেরদের জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও ছিল না। এদের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুলুম চালানো হচ্ছিল। কেউ এসে তাদেরকে এই জুলুমের সাগর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে, এই ছিল তাদের দোয়া ও প্রত্যাশা।
১০৫.
এটি আল্লাহর একটি দ্ব্যর্থহীন ফায়সালা। আল্লাহর পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ। যথার্থ ও সত্যিকার মু’মিন এই কাজ থেকে কখনো বিরত থাকবে না। আর আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহ বিরোধী ও আল্লাহদ্রোহীদের রাজত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাগুতের পথে লড়াই করা হচ্ছে কাফেরদের কাজ। কোন ঈমানদার ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না।
১০৬.
অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে শয়তান ও তার সাথীরা বিরাট প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে আসে এবং জবরদস্ত কৌশল অবলম্বন করে কিন্তু তাদের প্রস্তুতি ও কৌশল দেখে ঈমানদারদের ভীত হওয়া উচিত নয়, অবশ্যি তাদের সকল প্রস্তুতি ও কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
১০৭.
এই আয়াতটির তিনটি অর্থ হয়। এই তিনটি অর্থই তাদের নিজস্ব পরিসরে যথার্থ ও নির্ভুলঃ

এর একটি অর্থ হচ্ছে, প্রথমে লোকেরা নিজেরাই যুদ্ধ করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার বলতোঃ আমাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। নিপীড়ন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মারপিট করা হচ্ছে। গালি গালাজ করা হচ্ছে। আমরা আর কতদিন সবর করবো? আমাদের মোকাবিলা করার অনুমতি দেয়া হোক। সে সময় তাদেরকে বলা হতো, সবর করো এবং নামায ও যাকাতের মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করতে থাকো। তখন এই সবর ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করার হুকুম পালন করা তাদের জন্য বড়ই কষ্টকর হতো। কিন্তু এখন লড়াই করার হুকুম দেবার পর সেই লড়াইয়ের দাবীদারদের একটি দল শত্রুদের সংখ্যা ও যুদ্ধের বিপদ দেখে আতংকিত হয়ে পড়েছিল।

দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, যতদিন নামায, রোযা এবং এই ধরনের নির্ঝনঝাট ও ঝুঁকিহীন কাজের হুকুম ছিল এবং যুদ্ধ করে প্রাণ দান করার প্রশ্ন সামনে আসেনি ততদিন এরা খাঁটি দ্বীনদার ও ঈমানদার ছিল। কিন্তু এখন সত্যের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার কাজ শুরু হতেই এরা ভীত ও আতংকিত হয়ে পড়েছে।

এর তৃতীয় অর্থটি হচ্ছে, প্রথমে তো লুটপাট করার ও নিজের স্বার্থোদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাবার জন্য তাদের তরবারী সবসময় কোষমুক্ত থাকতো এবং রাতদিন যুদ্ধ-বিগ্রহই ছিল তাদের কাজ। সে সময় তাদেরকে রক্তপাত থেকে বিরত রাখার জন্য নামায ও যাকাতের মাধ্যমে নফসের সংশোধন করার হুকুম দেয়া হয়েছিল। আর এখন আল্লাহর জন্য তলোয়ার ওঠাবার হুকুম দেবার পর দেখা যাচ্ছে, যারা স্বার্থোদ্ধারের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সিংহ ছিল আল্লাহর জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তারা হয়ে গেছে বুজদিল কাপুরুষ। নফ্‌স ও শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে হাতে ইতিপূর্বে তরবারী ঝল্‌সে উঠেছিল, আল্লাহর পথে তরবারী চালাবার প্রশ্নে সে হাত নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

এ তিনটি অর্থই বিভিন্ন ধরনের লোকদের আচরণের সাথে খাপ খেয়ে যায়। এখানে আয়াতের মধ্যে এমন ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা একই সাথে এই তিনটি অর্থই প্রকাশ করতে সক্ষম।

১০৮.
অর্থাৎ যখন তোমরা আল্লাহর দ্বীনের খেদমত করবে এবং তার পথে প্রাণপাত পরিশ্রম করতে থাকবে তখন আল্লাহর কাছে তোমাদের প্রতিদান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
১০৯.
অর্থাৎ যখন বিজয় ও সাফল্য আসে তখন তাকে আল্লাহর অনুগ্রহ গণ্য করে থাকো এবং একথা ভুলে যাও যে, আল্লাহ‌ তাঁর নবীর মাধ্যমেই এই অনুগ্রহ করেছেন। কিন্তু নিজেদের দুর্বলতা ও ভুলের জন্য কোথাও পরাজয় বরণ করে থাকলে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া পা পিছিয়ে আসতে থাকলে তখন নবীর ঘাড়েই সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হতে চাও।
১১০.
অর্থাৎ তারা নিজেরাই নিজেদের কাজের জন্য দায়ী। তাদের কাজের জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। তোমাকে কেবল এতকুটু কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যে, তুমি আল্লাহর নির্দেশ ও বিধানসমূহ তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। এ কাজটি তুমি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছো। এখন তাদের হাত ধরে জবরদস্তি সত্য-সরল পথে পরিচালিত করা তোমার কাজ নয়। তোমার মাধ্যমে যে হিদায়াত পৌঁছানো হচ্ছে তারা যদি তার অনুসরণ না করে, তাহলে তার কোন দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর থাকবে না। তারা কেন নাফরমানি করেছিল, এর জবাবদিহি করার জন্য তোমাকে পাকড়াও করা হবে না।
অনুবাদ: