আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

ফাতের

৪৫ আয়াত

২১ ) না শীতল ছায়া ও রোদের তাপ একই পর্যায়ের
وَلَا ٱلظِّلُّ وَلَا ٱلْحَرُورُ ٢١
২২ ) এবং না জীবিত ও মৃতরা সমান। ৪২ আল্লাহ‌ যাকে চান শুনান কিন্তু (হে নবী!) তুমি তাদেরকে শুনাতে পারো না যারা কবরে শায়িত রয়েছে। ৪৩
وَمَا يَسْتَوِى ٱلْأَحْيَآءُ وَلَا ٱلْأَمْوَٰتُ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُسْمِعُ مَن يَشَآءُ ۖ وَمَآ أَنتَ بِمُسْمِعٍۢ مَّن فِى ٱلْقُبُورِ ٢٢
২৩ ) তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। ৪৪
إِنْ أَنتَ إِلَّا نَذِيرٌ ٢٣
২৪ ) আমি তোমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়ে। আর এমন কোন সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যার মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি। ৪৫
إِنَّآ أَرْسَلْنَـٰكَ بِٱلْحَقِّ بَشِيرًۭا وَنَذِيرًۭا ۚ وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٌۭ ٢٤
২৫ ) এখন এরা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে থাকে তাহলে এদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকেরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল। তাদের কাছে এসেছিল তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ৪৬ সহীফা ও দীপ্তোজ্জল হিদায়াত দানকারী কিতাব ৪৭ নিয়ে।
وَإِن يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ وَبِٱلزُّبُرِ وَبِٱلْكِتَـٰبِ ٱلْمُنِيرِ ٢٥
২৬ ) তারপর যারা মানেনি তাদেরকে আমি পাকড়াও করেছি এবং দেখে নাও আমার শাস্তি ছিল কেমন কঠোর।
ثُمَّ أَخَذْتُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۖ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ ٢٦
২৭ ) তুমি কি দেখো না আল্লাহ‌ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তারপর তার মাধ্যমে আমি নানা ধরনের বিচিত্র বর্ণের ফল বের করে আনি? পাহাড়ের মধ্যেও রয়েছে বিচিত্র বর্ণের সাদা, লাল ও নিকষকালো রেখা।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَخْرَجْنَا بِهِۦ ثَمَرَٰتٍۢ مُّخْتَلِفًا أَلْوَٰنُهَا ۚ وَمِنَ ٱلْجِبَالِ جُدَدٌۢ بِيضٌۭ وَحُمْرٌۭ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَٰنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌۭ ٢٧
২৮ ) আর এভাবে মানুষ, জীব-জনোয়ার ও গৃহপালিত জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের রয়েছে। ৪৮ আসল ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একমাত্র জ্ঞান সম্পন্নরাই তাঁকে ভয় করে। ৪৯ নিঃসন্দেহে আল্লাহ‌ পরাক্রমশালী এবং ক্ষমাশীল। ৫০
وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلْأَنْعَـٰمِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَ ۗ إِنَّمَا يَخْشَى ٱللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ ٱلْعُلَمَـٰٓؤُا۟ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨
২৯ ) যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে, নিঃসন্দেহে তারা এমন একটি ব্যবসায়ের প্রত্যাশী যাতে কোনক্রমেই ক্ষতি হবে না।
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ سِرًّۭا وَعَلَانِيَةًۭ يَرْجُونَ تِجَـٰرَةًۭ لَّن تَبُورَ ٢٩
৩০ ) (এ ব্যবসায়ে তাদের নিজেদের সবকিছু নিয়োগ করার কারণ হচ্ছে এই যে) যাতে তাদের প্রতিদান পুরোপুরি আল্লাহ‌ তাদেরকে দিয়ে দেন এবং নিজের অনুগ্রহ থেকে আরো বেশী করে তাদেরকে দান করবেন। ৫১ নিঃসন্দেহে আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও গুণগ্রাহী। ৫২
لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِۦٓ ۚ إِنَّهُۥ غَفُورٌۭ شَكُورٌۭ ٣٠
৪২.
উপমাগুলোতে মু’মিন ও কাফেরের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। এক ব্যক্তি প্রকৃত সত্য থেকে চোখ বন্ধ করে আছে। সে একবারও দেখছে না বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থা এবং এমনকি তার নিজের অস্তিত্ব কোন্ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করছে। অন্যদিকে আর এক ব্যক্তির চোখ খোলা আছে। সে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে, তার ভেতরের ও বাইরের প্রত্যেকটি জিনিস আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর সামনে মানুষের জবাবাদিহির ওপর সাক্ষ্য দিচ্ছে। একদিকে এক ব্যক্তি জাহেলী কল্পনা ও ভাববাদ এবং ধারণা, আন্দাজ-অনুমানের অন্ধকারে হাতড়ে মরছে এবং নবীর জ্বালানো প্রদীপের কাছাকাছি ঘেসতেও রাজি নয়। অন্যদিকে অপর ব্যক্তির চোখ একদম খোলা। নবীর জ্বালানো আলোর সামনে আসতেই তার কাছে একথা একেবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মুশরিক, কাফের ও নাস্তিক্যবাদীরা যেসব পথে চলছে সেগুলো ধ্বংসের দিকে চলে গেছে এবং সাফল্য ও মুক্তির পথ একমাত্র সেটিই যেটি আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূল দেখিয়েছন। এখন দুনিয়ায় এদের দু’জনের নীতি এক হবে এবং দু’জনে এক সাথে একই পথে চলতে পারবে, এটা কেমন করে সম্ভব? দু’জনের পরিণতি এক হবে, দু’জনই মরে খতম হয়ে যাবে, একজন তার কুপথগামিতার শাস্তি পাবে না এবং অন্যজন সৎপথে চলার জন্য কোন পুরস্কার পাবে না, এটাই বা কেমন করে সম্ভব? “শীতল ছায়া ও রোদের তাপ সমান নয়” ---এর মধ্যে এ পরিণতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন আল্লাহর রহমতের ছায়া আশ্রয় লাভকারী এবং জাহান্নামের উত্তাপে ঝলসানো ব্যক্তি। তোমরা কোন্ উদ্ভট চিন্তায় মেতে আছো, এরা দু’জনা কি একই পরিণাম ভোগ করবে? শেষে মু’মিনকে জীবিতের সাথে এবং হঠকারী কাফেরদেরকে মৃতদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মু’মিন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার মধ্যে অনুভূতি, উপলব্ধি, বিবেচনা, জ্ঞান, বুঝ ও চেতনা আছে এবং তার বিবেক তাকে ভালো ও মন্দের মধ্যকার পার্থক্য থেকে সবসময় সজাগ করছে। এর বিপরীত যে ব্যক্তি কুফরীর অন্ধতায় পুরোপুরি ডুবে গেছে তার অবস্থা এমন অন্ধের চেয়েও খারাপ যে অন্ধকারে পথ হারিয়েছে। তার অবস্থা এমন মৃতের মতো যার মধ্যে কোন অনুভূতিই নেই।
৪৩.
অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপার তো ভিন্ন। তিনি চাইলে পাথরকেও শ্রবণশক্তি দান করেন। কিন্তু যাদের বক্ষদেশে বিবেকের কবর রচিত হয়েছে তাদের হৃদয়ে নিজের কথা বদ্ধমূল করে দিতে পারা এবং যারা কথা শুনতেই চায় না তাদের বধির কর্ণকূহরে সত্যের ধ্বনি পৌঁছিয়ে দেবার সাধ্য রসূলের নেই। তিনি তো কেবলমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারেন যারা যুক্তিসঙ্গত কথা শুনতে চায়।
৪৪.
অর্থাৎ লোকদেরকে সতর্ক করে দেবার চেয়ে বেশী আর কোন দায়িত্ব তোমার নেই। এরপর যদি কেউ সচেতন না হয় এবং নিজের গোমরাহীর মধ্যে ছুটে চলতে থাকে তাহলে এর কোন দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর নেই। অন্ধদের দেখাবার এবং বধিরদের শুনাবার দায়িত্ব তোমার ওপর সোপর্দ করা হয়নি।
৪৫.
একথাটি কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুনিয়ায় এমন কোন জাতি ও সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যাকে সত্য-সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য আল্লাহ‌ কোন নবী পাঠাননি। সূরা রা’আদে বলা হয়েছেঃ

وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ (ايت: 7)

সূরা হিজরে বলা হয়েছেঃ

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ (ايت:10)

সূরা নাহলে বলা হয়েছেঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا (ايت:36)

সূরা শূ’আরায় বলা হয়েছেঃ

وَمَا أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا لَهَا مُنْذِرُونَ (ايت:208)

কিন্তু এ প্রসঙ্গে দু’টি কথা অনুধাবন করতে হবে। তাহলে আর ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না। প্রথমত হচ্ছে, একজন নবীর প্রচারণা যতদূর পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে ততদূর পর্যন্ত তিনিই যথেষ্ট। প্রত্যেকটি জনপদে ও প্রত্যেকটি জাতির মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে নবী পাঠানো মোটেই জরুরী নয়। দ্বিতীয়ত, একজন নবীর দাওয়াত ও হিদায়াতের প্রভাব এবং তাঁর নেতৃত্বের পদাংক যতদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত অন্য কোন নতুন নবীর প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক বংশ ও প্রত্যেক প্রজন্মের (Generation) জন্য আলাদা নবী পাঠানো অপরিহার্য নয়।

৪৬.
অর্থাৎ এমন প্রমাণপত্র যা পরিষ্কারভাবে একথার সাক্ষ্য দিচ্ছিল যে, তাঁরা আল্লাহর রসূল।
৪৭.
সহীফা ও কিতাবের মধ্যে সম্ভবত একটি বড় পার্থক্য থেকে থাকবে। সেটি হচ্ছে এই যে, সহীফা প্রধানত ছিল উপদেশাবলী ও নৈতিক পথনিদের্শনার সমষ্টি। অন্যদিকে কিতাবে বিধৃত থাকতো একটি পূর্ণাংগ শরীয়াত ব্যবস্থা।
৪৮.
এ দ্বারা যে কথা বুঝতে চাওয়া হয়েছে তা এই আল্লাহর সৃষ্ট এ বিশ্ব-জাহানে কোথাও একঘেয়েমি ও বৈচিত্রহীনতা নেই। সর্বত্রই বৈচিত্র। একই মাটি ও একই পানি থেকে বিভিন্ন প্রকার গাছ উৎপন্ন হচ্ছে। একই গাছের দু’টি ফলেরও বর্ণ, দৈহিক কাঠামো ও স্বাদ এক নয়। একই পাহাড়ের দিকে তাকালে তার মধ্যে দেখা যাবে নানা রংগের বাহার। তার বিভিন্ন অংশের বস্তুগত গঠন প্রণালীতে বিরাট পার্থক্য পাওয়া যাবে। মানুষ ও পশুদের মধ্যে একই মা-বাপের দু’টি সন্তানও একই রকম পাওয়া যাবে না। এ বিশ্ব-জাহানে যদি কেউ মেজাজ, প্রকৃতি ও মানসিকতার একাত্মতা সন্ধান করে এবং বিভিন্নতা, বৈচিত্রতা ও বৈষম্য দেখে আতংকিত হয়ে পড়ে, যেদিকে ওপরের ১৯ থেকে ২২ আয়াতে ইশারা করা হয়েছে, তাহলে এটা হবে তার নিজের বোধশক্তি ও উপলব্ধির ত্রুটি। এই বৈচিত্র ও বিরোধই জানিয়ে দিচ্ছে এ বিশ্ব-জাহানকে কোন মহাপরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তা বহুবিধ জ্ঞান ও বিজ্ঞতা সহকারে সৃষ্টি করেছেন এবং এর নির্মাতা একজন নজীরবিহীন স্রষ্টা ও তুলনাবিহীন নির্মাণ কৌশলী। তিনি একই জিনিসের কেবল একটি মাত্র নমুনা নিয়ে বসে পড়েননি। বরং তাঁর কাছে প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য একের পর এক এবং অসংখ্য ও সীমাহীন ডিজাইন রয়েছে। তারপর বিশেষ করে মানবিক প্রকৃতি ও বুদ্ধি বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন ব্যক্তি একথা বুঝতে পারে যে, এটা কোন আকস্মিক ঘটনা নয় বরং প্রকৃতপক্ষে অতুলনীয় সৃষ্টি জ্ঞানের নিদর্শন। যদি জন্মগতভাবে সমস্ত মানুষকে তাদের নিজেদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, প্রবৃত্তি, কামনা, আবেগ অনুভূতি ঝোঁক প্রবণতা ও চিন্তাধারার দিক দিয়ে এক করে দেয়া হতো এবং কোন প্রকার বৈষম্য বিভিন্নতার কোন অবকাশই না রাখা হতো তাহলে দুনিয়ায় মানুষের মতো একটি নতুন ধরনের সৃষ্টি তৈরি করাই হতো পুরাপুরি অর্থহীন। স্রষ্টা যখন এ পৃথিবীতে একটি দায়িত্বশীল ও স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী সৃষ্টিকে অস্তিত্বশীল করার ফায়সালা করেছেন তখন তার কাঠামোর মধ্যে সব রকমের বিচিত্রতা ও বিভিন্নতার অবকাশ রাখা ছিল সে ফায়সালার ধরনের অনিবার্য দাবী। মানুষ যে কোন আকস্মিক দুর্ঘটনার ফল নয় বরং একটা মহান বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার ফলশ্রুতি, এ জিনিসটি এর সবচেয় বড় সাক্ষ্য প্রদান করে। আর একথা সুস্পষ্ট যে, বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই অনিবার্যভাবে তার পেছনে পাওয়া যাবে এক বিজ্ঞানময় সত্তার সক্রিয় সংযোগ। বিজ্ঞানী ছাড়া বিজ্ঞানের অস্তিত্ব কেবলমাত্র একজন নির্বোধই কল্পনা করতে পারে।
৪৯.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর গুণাবলীর ব্যাপারে যতবেশী অজ্ঞ হবে সে তার ব্যাপারে তত বেশী নির্ভীক হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর শক্তিমত্তা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞানময়তা, ক্রোধ, পরাক্রম সার্বভৌম কর্তৃত্ব-ক্ষমতা ও অন্যান্য গুণাবালী সম্পর্কে যে ব্যক্তি যতবেশী জানবে সে ততবেশী তার নাফরমানী করতে ভয় পাবে। কাজেই আসলে এ আয়াতে জ্ঞান অর্থ দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অংক ইত্যাদি স্কুল কলেজে পঠিত বিষয়ের জ্ঞান নয়। বরং এখানে জ্ঞান বলতে আল্লাহর গুণাবলীর জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। এজন্য শিক্ষিত ও অশিক্ষিত হবার প্রশ্ন নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না সে যুগের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হলেও এ জ্ঞানের দৃষ্টিতে সে নিছক একজন মূর্খ ছাড়া আর কিছু নয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর গুণাবলী জানে এবং নিজের অন্তরে তাঁর ভীতি পোষণ করে সে অশিক্ষিত হলেও জ্ঞানী। এ প্রসঙ্গে একথাও জেনে রাখা উচিত যে, আয়াতে উল্লেখিত উলামা শব্দটির অর্থ এমন পারিভাষিক উলামাও নয় যারা কুরআন, হাদীস, ফিকহ ও ইলমে কালামে জ্ঞান রাখার কারণে দ্বীনী আলেম বলে পরিচিত। তারা সঠিক তখনই এ আয়াতটির প্রয়োগ ক্ষেত্রে পরিণত হবে যখন তাদের মধ্যে আল্লাহভীতি থাকবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একথাই বলেছেনঃ

ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية

“বিপুল সংখ্যক হাদীস জানা জ্ঞানের পরিচায়ক নয় বরং বেশী পরিমাণ আল্লাহভীতিই জ্ঞানের পরিচয় বহন করে।”

হযরত হাসান বাসরীও একথাই বলেছেনঃ

العالم من خشى الرحمن بالغيب ورغب فيما رغب الله فيه وزهد فيما سخط الله فيه-

“আল্লাহকে না দেখে যে ভয় করে সেই হচ্ছে আলেম। আল্লাহ‌ যা কিছু পছন্দ করেন সেদিকেই আকৃষ্ট হয় এবং যে বিষয়ে আল্লাহ‌ নারাজ সে ব্যাপারে সে কোন আগ্রহ পোষণ করে না।”

৫০.
অর্থাৎ তিনি এমন পরাক্রমশালী যে, নাফরমানদের যখনই চান পাকড়াও করতে পারেন। তাঁর পাকড়াও মুক্ত হবার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু তাঁর ক্ষমতাগুণের ফলেই জালেমরা অবকাশ পেয়ে চলছে।
৫১.
ঈমানদারদের এ কাজকে ব্যবসায়ের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। কারণ মানুষ ব্যবসায়ে নিজের অর্থ, শ্রম ও মেধা নিয়োগ করে কেবলমাত্র আসল ফেরত পাবার এবং শ্রমের পারিশ্রমিক লাভ করার জন্য নয় বরং বাড়তি কিছু মুনাফা অর্জন করার জন্য। অনুরূপভাবে একজন মু’মিন ও আল্লাহর হুকুম পালন, তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী এবং তাঁর দ্বীনের জন্য সংগ্রাম-সাধনায় নিজের ধন, সময়, শ্রম ও যোগ্যতা নিয়োগ করে শুধুমাত্র এসবের পুরোপুরি প্রতিদান লাভ করার জন্য নয় বরং এই সঙ্গে আল্লাহ‌ তাঁর নিজ অনুগ্রহে বাড়তি অনেক কিছু দান করবেন এই আশায়। কিন্তু উভয় ব্যবসায়ের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ পার্থিব ব্যবসায়ে নিছক মুনাফা লাভেরই আশা থাকে না, লোকসান এবং দেউলিয়া হয়ে যাবার আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু একজন আন্তরিকতা সম্পন্ন বান্দা আল্লাহর সাথে যে ব্যবসায় করে তাতে লোকসান ও ক্ষতির কোন আশঙ্কাই নেই।
৫২.
অর্থাৎ নিজের আন্তরিকতা সম্পন্ন মু’মিনদের সাথে আল্লাহ‌ এমন সংকীর্ণমনা প্রভুর মতো ব্যবহার করেন না, যে কথায় কথায় পাকড়াও করে এবং সামান্য একটি ভুলের দরুন নিজের কর্মচারীর সমস্ত সেবা ও বিশ্বস্ততা অস্বীকার করে। তিনি মহানুভব দানশীল প্রভু। তাঁর বিশ্বস্ত বান্দার ভুল ভ্রান্তি তিনি উপেক্ষা করে যান এবং তার পক্ষে যা কিছু সেবা করা সম্ভব হয়েছে তাকে যথার্থ মূল্য দান করেন।
অনুবাদ: