আয়াত
১১ ) আল্লাহ ২৩ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তারপর শুক্র থেকে ২৪ এরপর তোমাদের জুটি বানিয়ে দিয়েছেন (অর্থাৎ পুরুষ ও নারী)। কোন নারী গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসব করলে কেবলমাত্র আল্লাহর জানা মতেই তা করে থাকে। কোন আয়ু লাভকারী আয়ু লাভ করলে এবং কার আয়ু কিছু কম করা হলে তা অবশ্যই একটি কিতাবে লেখা থাকে। ২৫ আল্লাহর জন্য এসব একদম সহজ। ২৬
وَٱللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ أَزْوَٰجًا وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِۦ وَمَا يُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرٍ وَلَا يُنقَصُ مِنْ عُمُرِهِۦٓ إِلَّا فِى كِتَٰبٍ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌ ١١
১২ ) পানির দু’টি উৎস সমান নয়। ২৭ একটি সুমিষ্ট ও পিপাসা নিবারণকারী সুস্বাদু পানীয় এবং অন্যটি ভীষণ লবণাক্ত যা গলা ছিলে দেয়, কিন্তু উভয়টি থেকে তোমরা তরতাজা গোশত লাভ করে থাকো, ২৮ পরিধান করার জন্য সৌন্দর্যের সরঞ্জাম বের করো ২৯ এবং এ পানির মধ্যে তোমরা দেখতে থাকো নৌযান তার বুক চিরে ভেসে চলছে, যাতে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং তাঁর প্রতি কতৃজ্ঞ হও।
وَمَا يَسْتَوِى ٱلْبَحْرَانِ هَٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهُۥ وَهَٰذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَمِن كُلٍّ تَأْكُلُونَ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُونَ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى ٱلْفُلْكَ فِيهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِهِۦ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ١٢
১৩ ) তিনি দিনের মধ্যে রাতকে এবং রাতের মধ্যে দিনকে প্রবেশ করিয়ে নিয়ে আসেন। ৩০ চন্দ্র ও সূর্যকে তিনি অনুগত করে রেখেছেন। ৩১ এসব কিছু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এ আল্লাহই (এ সমস্তই যাঁর কাজ) তোমাদের রব, রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য যাদেরকে তোমরা ডাকছো তারা তো একটি শুকনো ভূমির ৩২ অধিকারীও নয়।
يُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِى لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ ٱلْمُلْكُ وَٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ ١٣
১৪ ) তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনতে পারে না এবং শুনে নিলেও তোমাদের কোন জবাব দিতে পারে না। ৩৩ এবং কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। ৩৪ প্রকৃত অবস্থান এমন সঠিক খবর একজন সর্বজ্ঞ ছাড়া কেউ তোমাদের দিতে পারে না। ৩৫
إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا۟ دُعَآءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا۟ مَا ٱسْتَجَابُوا۟ لَكُمْ وَيَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ ١٤
১৫ ) হে লোকেরা! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী ৩৬ এবং আল্লাহ তো অভাবমুক্ত ও প্রশংসার্হ। ৩৭
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ أَنتُمُ ٱلْفُقَرَآءُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلْغَنِىُّ ٱلْحَمِيدُ ١٥
১৬ ) তিনি চাইলে তোমাদের সরিয়ে কোন নতুন সৃষ্টি তোমাদের জায়গায় আনবেন।
إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ ١٦
১৭ ) এমনটি করা আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন নয়। ৩৮
وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ بِعَزِيزٍ ١٧
১৮ ) কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা উঠাবে না। ৩৯ আর যদি ভারাক্রান্ত ব্যক্তি নিজের বোঝা উঠাবার জন্য ডাকে, তাহলে তার বোঝার সামান্য একটি অংশ উঠাবার জন্যও কেউ আসবে না, সে তার নিকটতম আত্মীয় স্বজন হলেও। ৪০ (হে নবীঃ) তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারো যারা না দেখে তাদের রবকে ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। ৪১ আর যে ব্যক্তিই পবিত্রতা অবলম্বন করে সে নিজেরই ভালোর জন্য করে এবং ফিরে আসতে হবে সবাইকে আল্লাহরই দিকে।
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَىْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰٓ إِنَّمَا تُنذِرُ ٱلَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِٱلْغَيْبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِۦ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلْمَصِيرُ ١٨
১৯ ) অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়,
وَمَا يَسْتَوِى ٱلْأَعْمَىٰ وَٱلْبَصِيرُ ١٩
২০ ) না অন্ধকার ও আলো সমান পর্যায়ভুক্ত,
وَلَا ٱلظُّلُمَٰتُ وَلَا ٱلنُّورُ ٢٠
২৩.
এখান থেকে আবার কথার মোড় সাধারণ মানুষের দিকে ঘুরে যাচ্ছে।
২৪.
অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি প্রথমে সরাসরি মাটি থেকে করা হয় তারপর তার বংশধারা চালান হয় তার বীর্য থেকে।
২৫.
অর্থাৎ যে ব্যক্তিই দুনিয়ায় জন্মলাভ করে তার সম্পর্কে প্রথমেই লিখে দেয়া হয় সে দুনিয়ায় কত বছর বাঁচবে। কেউ দীর্ঘায়ু হলে তা হয় আল্লাহর হুকুমে এবং স্বল্পায়ু হলেও হয় আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী। কতিপয় অজ্ঞ ও মূর্খ লোক এর জবাবে এ যুক্তি পেশ করে থাকে যে, পূর্বে নবজাত শিশুদের মৃত্যুহার ছিল বেশী এবং বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি এ মৃত্যুহার কমিয়ে দিয়েছে। পূর্বে লোকদের গড় আয়ু ছিল কম, বর্তমানে চিকিৎসা উপকরণ বৃদ্ধির ফলে আয়ূ দীর্ঘায়িত হতে শুরু হয়েছে। কিন্তু এ যুক্তি কুরআন মজীদের এ বর্ণনার প্রতিবাদে কেবলমাত্র তখনই পেশ করা যেতে পারতো যখন কোন উপায়ে আমরা জানতে পারতাম, যেমন উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ অমুক ব্যক্তির আয়ু লিখেছিলেন দু’বছর এবং আমাদের চিকিৎসা উপকরণ তার মধ্যে একদিনের সময় বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এ ধরনের কোন জ্ঞান যদি কারো কাছে না থেকে থাকে, তাহলে সে কোন সঙ্গত ভিত্তিতে কুরআনের এ উক্তির প্রতিবাদ করতে পারে না। সংখ্যাতত্ব ও গণনার দিক দিয়ে শিশু মৃত্যুর হার এখন কমে গেছে অথবা আগের তুলনায় লোকেরা বেশী আয়ুর অধিকারী হচ্ছে, নিছক এই তথ্যের ভিত্তিতে একথা বলা যায় না যে, মানুষ এবার আল্লাহর ফায়সালা বদলে দেবার শক্তি অর্জন করেছে। আল্লাহ বিভিন্ন যুগে জন্মলাভকারী মানুষের আয়ু বিভিন্নভাবে নির্ধারণ করেছেন এতে অযৌক্তিক কি আছে? এবং এটিও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ফায়সালা যে, অমুক যুগে মানুষকে অমুক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা দান করা হবে এবং অমুক যুগে মানুষকে জীবনী শক্তি বৃদ্ধির অমুক উপায় দান করা হবে।
২৬.
অর্থাৎ এত অসংখ্য সৃষ্টির ব্যাপারে এত বিস্তারিত জ্ঞান থাকা এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এত বিস্তারিত বিধান দেয়া ও ফায়সালা করা আল্লাহর জন্য মোটেই কোন কঠিন কাজ নয়।
২৭.
অর্থাৎ পানির একটি উৎস যা সমুদ্রগুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এবং পানির দ্বিতীয় উৎসটি গড়ে উঠেছে নদী, ঝরণা, হ্রদ ইত্যাদির সমন্বয়ে।
২৮.
অর্থাৎ জলজ প্রাণীর গোশত।
২৯.
অর্থাৎ মুক্তা, প্রবাল এবং কোন কোন নদী-সাগর থেকে হীরা ও সোনা।
৩০.
অর্থাৎ দিনের আলো ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকে এবং রাতের আঁধার বেড়ে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি তাকে ঢেকে ফেলে। এভাবে রাতের শেষ দিকে দিগন্তে হালকা আলোর রেখা জেগে ওঠে। তারপর আস্তে আস্তে তা অগ্রসর হতে হতে আলোকোজ্জ্বল দিনে পরিণত হয়।
৩১.
অর্থাৎ একটি নিয়ম ও বিধানের অধীন করে রেখেছেন।
৩২.
মূলে “কিতমীর” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিতমীর বলা হয় খেজুরের আঁটির গায়ে জড়ানো পাতলা ঝিল্লি বা আবরণকে। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, মুশরিকদের মাবুদ ও উপাস্যরা কোন তুচ্ছ ও নগন্য জিনিসেরও মালিক নয়। তাই শাব্দিক তরজমা বাদ দিয়ে আমি এখানে ভাব-তরজমা করেছি।
৩৩.
এর অর্থ এ নয় যে, তারা তোমাদের দোয়ার জবাবে তোমাদের দোয়া কবুল করা হয়েছে বা হয়নি একথা চিৎকার করে বলতে পারে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তারা তোমাদের আবেদনের ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না। কোন ব্যক্তি নিজের আবেদন যদি এমন কোন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেয় যে শাসনকর্তা নয়, তাহলে তার আবেদন ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ তা যার কাছে পাঠানো হয়েছে তার হাতে আদতে কোন ক্ষমতাই নেই। প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ করার কোন ইখতিয়ার তার নেই তবে এই একই আবেদন আবার যদি যথার্থ শাসনকর্তার কাছে পাঠানো হয়, তাহলে এর ভিত্তিতে নিশ্চিতভাবে কোন না কোন পদক্ষেপ গৃহীত হবেই। তা গৃহীতও হতে পারে আবার প্রত্যাখ্যাতও।
৩৪.
অর্থাৎ তারা পরিষ্কার বলে দেবে, আমরা কখনো এদেরকে বলিনি, আমরা আল্লাহর শরীক এবং তোমরা আমাদের ইবাদাত করো। বরং আমরা এও জানতাম না যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে শরীক করছে এবং আমাদের কাছে প্রার্থনা করছে। এদের কোন প্রার্থনা আমাদের কাছে আসেনি এবং এদের কোন নজরানা ও উৎসর্গ আমাদের হস্তগত হয়নি।
৩৫.
সর্বজ্ঞ বলে আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অন্য কোন ব্যক্তি বড় জোর বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি প্রমাণ পেশ করে শিরক খণ্ডন ও মুশরিকদের মাবুদদের শক্তিহীনতা বর্ণনা করবে। কিন্তু আমি সরাসরি প্রকৃত অবস্থা জানি। আমি নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমাদের জানাচ্ছি, লোকেরা যাদেরকেই আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বের মধ্যে স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন করে রেখেছে তারা সবাই ক্ষমতাহীন। তাদের কাছে এমন কোন শক্তি নেই যার মাধ্যমে তারা কারো কোন কাজ সফল বা ব্যর্থ করে দিতে পারে। আমি সরাসরি জানি, কিয়ামতের দিন মুশরিকদের এসব মাবুদরা নিজেরাই তাদের শিরকে প্রতিবাদ করবে।
৩৬.
অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী, তোমরা তাঁকে আল্লাহ বলে মেনে না নিলে তাঁর সার্বভৌম ও একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চলবে না এবং তোমরা তাঁর ইবাদাত ও বন্দেগী না করলে তাঁর কোন ক্ষতি হয়ে যাবে, এ ভুল ধারণা পোষণ করো না। আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি যদি তোমাদের জীবিত না রাখেন এবং যেসব উপকরণের সহায়তায় তোমরা দুনিয়ায় বেঁচে থাকো এবং কাজ করতে পারো সেগুলো তোমাদের জন্য সরবরাহ না করেন, তাহলে তোমাদের জীবন এক মুহূর্তের জন্যও টিকে থাকতে পারে না। কাজেই তাঁর আনুগত্য ও ইবাদাতের পথ অবলম্বন করার জন্য তোমাদেরকে যে তাগিদ দেয়া হয় তা এজন্য নয় যে, আল্লাহর এর প্রয়োজন আছে বরং এজন্য যে, এরই ওপর নির্ভর করে তোমাদের দুনিয়ার ও আখেরাতের সাফল্য। এমনটি না করলে তোমরা নিজেদেরই সবকিছুর সর্বনাশ করে ফেলবে, আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
৩৭.
মূলে বলা হয়েছে “গনী” ও “হামীদ” মানে হচ্ছে, তিনি সবকিছুর মালিক, প্রত্যেকটি জিনিসের অভাবমুক্ত ও অমুখাপেক্ষী। তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন। আর “হামীদ” মানে হচ্ছে, তিনি নিজে নিজেই প্রশংসিত, কেউ তাঁর প্রশংসা করুক বা না করুক প্রশংসা লাভ করার অধিকার একমাত্র তাঁরই আছে। এ দু’টি গুণকে একসাথে বর্ণনা করার কারণ হচ্ছে এই যে, নিছক “গনী” তো এমন ব্যক্তিও হতে পারে যে নিজের ধনাঢ্যতা দ্বারা কারো সাহায্য বা উপকার করে না। এ অবস্থায় সে গনী অবশ্যই হবে কিন্তু হামীদ বা প্রশংসিত হবে না। ‘হামীদ’ সে হতে পারে এমন অবস্থায় যখন সে কারো সাহায্যে নিজে লাভবান হবে না কিন্তু নিজের ধন-সম্পদ থেকে অন্যদেরকে সব ধরনের সহায়তা দান করবে। আল্লাহ যেহেতু এ দু’টি গুণের পূর্ণ আধার তাই বলা হয়েছে, তিনি নিছক ‘গনী’ নন বরং এমন ‘গনী’ যিনি সব রকমের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা লাভের অধিকারী। কারণ তিনি তোমাদের এবং বিশ্ব-জাহানের যাবতীয় জড় ও জীবের প্রয়োজন পূর্ণ করেন।
৩৮.
অর্থাৎ তোমরা নিজেদের শক্তিতে এ পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছো না। তোমাদেরকে এখান থেকে বিদায় দেবার এবং তার জায়গায় অন্য কোন জাতিকে এনে বসাবার জন্য তাঁর একটি ইশারাই যথেষ্ট। কাজেই নিজের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং এমন নীতি অবলম্বন করো না যার ফলে শেষ পর্যন্ত জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন কারো ধ্বংসের ফায়সালা এসে যায় তখন সমগ্র বিশ্ব-জাহানে এমন কোন শক্তি নেই যে তাঁর হাত টেনে ধরতে পারে এবং ফায়সালা কার্যকর হবার পথ রোধ করতে সক্ষম হয়।
৩৯.
“বোঝা” মানে কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের ওপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব আরোপিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচাবার জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে-- এরও কোন সম্ভাবনা নেই। একথা এখানে বলার কারণ হচ্ছে এই যে, মক্কা মু’আযযমায় যারা ইসলাম গ্রহণ করছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয় স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলছিল, আমাদের কথায় তোমরা এই নতুন ধর্ম ত্যাগ করো এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যাও, এজন্য পাপ-পুণ্যের বোঝা আমরা বহন করব।
৪০.
ওপরের বাক্যে আল্লাহর ন্যায়নীতির বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি একজনের পাপে অন্যকে পাকড়াও করবেন না। বরং প্রত্যেককে তার নিজের পাপের জন্য দায়ী করবেন। তাই এখানে এ বাক্যে বলা হয়েছে, আজ যারা বলছে, তোমরা আমাদের দায়িত্বে কুফরী ও গোনাহের কাজ করে যাও কিয়ামতের দিন তোমাদের গোনাহর বোঝা আমরা নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নেব তারা আসলে নিছক একটি মিথ্যা ভরসা দিচ্ছে। যখন কিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখে নেবে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচাবার ফিকিরে লেগে যাবে। ভাই ভাইয়ের থেকে এবং পিতা পুত্রের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।
৪১.
অন্য কথায় হঠকারী ও গোঁয়ারদের ওপর তোমার সতর্কবাণী কার্যকর হতে পারে না। তুমি বুঝালে এমন সব লোক সত্য সঠিক পথে আসতে পারে যাদের দিলে আল্লাহর ভয় আছে এবং যারা নিজের প্রকৃত মালিকের সামনে মাথা নোয়াতে প্রস্তুত।