এর অর্থ দাঁড়ায়, সাগরের উপর লাঠির আঘাত করার কারণে কেবল সাগরের পানি ফাঁক হয়ে গিয়ে দু’দিকে পাহাড় সমান উঁচু হয়ে যায়নি বরং মাঝখানে যে পথ বের হয় তা শুকনো খটখটেও হয়ে যায় এবং কোথাও এমন কোন কাদা থাকেনি যার উপর দিয়ে হেঁটে চলা সম্ভব নয়। এ সঙ্গে সূরা দু’খানের ২৪ আয়াতের এ শব্দগুলোও প্রণিধানযোগ্য যেখানে আল্লাহ মূসাকে নির্দেশ দেন, সমুদ্র অতিক্রম করার পর “তাকে এ অবস্থার উপর ছেড়ে দাও, ফেরাউনের সেনাদল এখানে নিমজ্জিত হবে।” এ থেকে বুঝা যায় যে, মূসা সমুদ্রের অপর পাড়ে উঠে যদি সমুদ্রের উপর লাঠির আঘাত করতেন, তাহলে উভয় দিকে খাড়া পানির দেয়াল ভেঙ্গে পড়তো এবং সাগর সমান হয়ে যেতো। তাই আল্লাহ তাঁকে এরূপ করতে নিষেধ করেন, যাতে ফেরাউনের সেনাদল এ পথে নেমে আসে এবং তারপর পানি দু’দিক থেকে এসে তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়। এটি একটি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন মু’জিযার বর্ণনা। যারা সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়মের আওতায় এ ঘটনাটির ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন তাদের চিন্তার গলদ এ থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
(আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা তা-হা, ৫৩ টীকা)
آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“আমি ঈমান আনলাম এই মর্মে যে, বনী ইসরাইল যে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।” (ইউনুস ৯০ আয়াত)
অন্যদিকে ঈমানদারদের জন্যও এর মধ্যে রয়েছে নিদর্শন। সেটি হচ্ছে, জুলুম ও তার শক্তিগুলো বাহ্যত যতই সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী হয়ে দেখা দিক না কেন শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য-সহায়তায় সত্য এভাবেই বিজয়ী এবং মিথ্যার শির এভাবেই নত হয়ে যায়।
হযরত ইব্রাহীমের জীবনের এ যুগের ইতিহাস কুরআন মজীদ বিশেষভাবে বারবার সামনে এনেছে। এর কারণ হচ্ছে, আরবের লোকেরা সাধারণভাবে এবং কুরাইশরা বিশেষভাবে নিজেদেরকে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী মনে করতো। এজন্য কুরআন মজীদ বিভিন্ন জায়গায় তাদেরকে এ মর্মে সতর্ক করেছে যে, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যে দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন তা ছিল সেই একই নির্ভেজাল দ্বীন যা আরবীয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ এনেছেন এবং যার সাথে তোমরা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছো। তিনি মুশরিক ছিলেন না। বরং শিরকের বিরুদ্ধেই ছিল তাঁর সংগ্রাম এবং এ সংগ্রামের কারণে তাঁকে নিজের বাপ, পরিবার, জাতি ও দেশ সবকিছু ত্যাগ করে সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং হিজাযে প্রবাসীর জীবন যাপন করতে হয়েছিল। অনুরূপভাবে তিনি ইহুদী ও খ্রিস্টানও ছিলেন না। বরং ইহুদীবাদ ও খৃস্টবাদ তো তাঁর বহু শতাব্দী পরে জন্ম নিয়েছিল। এ ঐতিহাসিক যুক্তির কোন জবাব মুশরিক, ইহুদী ও খৃস্টান কারো কাছে ছিল না। কারণ মুশরিকরাও স্বীকার করতো, আরবের মূর্তি পূজার প্রচলন হয়েছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের কয়েক শত বছর পরে। অন্যদিকে ইহুদীবাদ ও খৃস্টবাদের জন্মের বহু পূর্বে হযরত ইব্রাহীমের যুগ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল, একথা ইহুদী ও খৃস্টানরা অস্বীকার করতো না। এর স্বতস্ফূর্ত ফল স্বরূপ বলা যায়, যেসব বিশেষ আকীদা বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের ওপর তারা বিশ্বাস স্থাপন করে তা প্রথম থেকে প্রচলিত প্রাচীন দ্বীনের অংশ নয় এবং এসব মিশ্রণমুক্ত নির্ভেজাল আল্লাহর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত দ্বীনই সঠিক দ্বীন। এরই ভিত্তিতে কুরআন বলছেঃ
مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آمَنُوا
“ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না এবং খৃস্টানও ছিল না বরং সে একজন একনিষ্ট মুসলিম ছিল। আর সে মুশরিকও ছিল না। আসলে ইব্রাহীমের সাথে সম্পর্ক রাখার সবচেয়ে বেশী অধিকার তাদের, যারা তাঁর পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং (এখন এ অধিকার) এ নবীর এবং এর সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদের।” (আলে ইমরানঃ ৬৭-৬৮)
“এসব কেমন প্রতিমা যেগুলোর প্রতি ভক্তিতে তোমরা গদগদ হচ্ছো?”