২১ ) তারা মৃত, জীবিত নয় এবং তারা কিছুই জানেনা তাদেরকে কবে (পুনর্বার জীবিত করে) উঠানো হবে। ১৯
أَمْوَٰتٌ غَيْرُ أَحْيَآءٍۢ ۖ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ٢١
২২ ) এক ইলাহই তোমাদের আল্লাহ। কিন্তু যারা আখেরাত মানে না তাদের অন্তরে অস্বীকৃতি বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে ডুবে গেছে। ২০
إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌۭ وَٰحِدٌۭ ۚ فَٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱلْـَٔاخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌۭ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ ٢٢
২৩ ) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের সমস্ত কার্যকলাপ জানেন, যা তারা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে। তিনি তাদেরকে মোটেই পছন্দ করেন না যারা আত্মগরিমায় ডুবে থাকে।
لَا جَرَمَ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْتَكْبِرِينَ ٢٣
২৪ ) আর ২১ যখন কেউ তাদেরকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের রব এ কী জিনিস নাযিল করেছেন? তারা বলে, “জ্বী, ওগুলো তো আগের কালের বস্তাপচা গপ্প।” ২২
وَإِذَا قِيلَ لَهُم مَّاذَآ أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۙ قَالُوٓا۟ أَسَـٰطِيرُ ٱلْأَوَّلِينَ ٢٤
২৫ ) এসব কথা তারা এজন্য বলছে যে, কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝা পুরোপুরি উঠাবে আবার সাথে সাথে তাদের বোঝাও কিছু উঠাবে যাদেরকে তারা অজ্ঞতার কারণে পথভ্রষ্ট করছে। দেখো, কেমন কঠিন দায়িত্ব, যা তারা নিজেদের মাথায় নিয়ে নিচ্ছে।
لِيَحْمِلُوٓا۟ أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةًۭ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۙ وَمِنْ أَوْزَارِ ٱلَّذِينَ يُضِلُّونَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ أَلَا سَآءَ مَا يَزِرُونَ ٢٥
২৬ ) তাদের আগেও বহু লোক (সত্যকে খাটো করে দেখাবার জন্য) এমনি ধরনের চক্রান্ত করেছিল। তবে দেখে নাও, আল্লাহ তাদের চক্রান্তের ইমারত সমূলে উৎপাটিত করেছেন এবং তার ছাদ ওপর থেকে তাদের মাথার ওপর ধ্বসে পড়ছে এবং এমন দিক থেকে তাদের ওপর আযাব এসেছে যেদিক থেকে তার আসার কোন ধারণাই তাদের ছিল না।
قَدْ مَكَرَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَأَتَى ٱللَّهُ بُنْيَـٰنَهُم مِّنَ ٱلْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ ٱلسَّقْفُ مِن فَوْقِهِمْ وَأَتَىٰهُمُ ٱلْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ ٢٦
২৭ ) তারপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদেরকে বলবেন, “বলো, এখন কোথায় গেলো আমার সেই শরীকরা যাদের জন্য তোমরা (সত্যপন্থীদের সাথে) ঝগড়া করতে?”---যারা ২৩ দুনিয়ায় জ্ঞানের অধিকারী হয়েছিল তারা বলবে, “আজ কাফেরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা ও দুর্ভাগ্য।”
ثُمَّ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ يُخْزِيهِمْ وَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَآءِىَ ٱلَّذِينَ كُنتُمْ تُشَـٰٓقُّونَ فِيهِمْ ۚ قَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْعِلْمَ إِنَّ ٱلْخِزْىَ ٱلْيَوْمَ وَٱلسُّوٓءَ عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ ٢٧
২৮ ) হ্যাঁ, ২৪ এমন কাফেরদের জন্য, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করতে থাকা অবস্থায় যখন ফেরেশতাদের হাতে পাকড়াও হয় ২৫ তখন সঙ্গে সঙ্গেই (অবাধ্যতা ত্যাগ করে) আত্মসমর্পণ করে এবং বলে, “আমরা তো কোন দোষ করছিলাম না।” ফেরেশতারা জবাব দেয়, “কেমন করে দোষ করছিলে না! তোমাদের কার্যকলাপ আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন।
ٱلَّذِينَ تَتَوَفَّىٰهُمُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ ظَالِمِىٓ أَنفُسِهِمْ ۖ فَأَلْقَوُا۟ ٱلسَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِن سُوٓءٍۭ ۚ بَلَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٢٨
২৯ ) এখন যাও, জাহান্নামের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ো, ওখানেই তোমাদের থাকতে হবে চিরকাল।” ২৬ সত্য বলতে কি, অহংকারীদের এই ঠিকানা বড়ই নিকৃষ্ট।
فَٱدْخُلُوٓا۟ أَبْوَٰبَ جَهَنَّمَ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى ٱلْمُتَكَبِّرِينَ ٢٩
৩০ ) অন্যদিকে যখন মুত্তাকীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কী নাযিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, “সর্বোত্তম জিনিস নাযিল হয়েছে।” ২৭ এ ধরনের সৎকর্মশীলদের জন্য এ দুনিয়াতেও মঙ্গল রয়েছে এবং আখেরাতের আবাস তো তাদের জন্য অবশ্যি উত্তম। বড়ই ভালো আবাস মুত্তাকীদের,
۞ وَقِيلَ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ مَاذَآ أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۚ قَالُوا۟ خَيْرًۭا ۗ لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا۟ فِى هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةٌۭ ۚ وَلَدَارُ ٱلْـَٔاخِرَةِ خَيْرٌۭ ۚ وَلَنِعْمَ دَارُ ٱلْمُتَّقِينَ ٣٠
১৯.
এ শব্দগুলো পরিষ্কার একথা ঘোষণা করছে যে, এখানে বিশেষভাবে যেসব বানোয়াট মাবুদদের প্রতিবাদ করা হচ্ছে তারা ফেরেশতা, জিন, শয়তান বা কাঠ-পাথরের মূর্তি নয় বরং তারা হচ্ছে কবরবাসী। কারণ ফেরেশতা ও শয়তানরা তো জীবিত আছে তাদের প্রতি أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ (জীবিত নয় মৃত) শব্দাবলী প্রযোজ্য হতে পারে না। আর কাঠ-পাথর মূর্তির ক্ষেত্রে তো মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কোন প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ(তারা জানে না তাদের কবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে) ধরনের শব্দাবলীর ব্যবহার তাদেরকেও আলোচনার বাইরে রেখে দেয়। এখন এ আয়াতে وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ (আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব সত্তাকে লোকেরা ডাকে) এর মধ্যে নিশ্চিতভাবে নবী, আউলিয়া, শহীদ, সৎ ব্যক্তিবর্গ ও অন্যান্য অসাধারণ লোকদের কথাই বলা হয়েছে। অতি ভক্তের দল এসব সত্তাকে সংকট নিরসনকারী, অভিযোগের প্রতিকারকারী, দরিদ্রের সহায়, ধনদাতা এবং নাজানি আরো কত কিছু মনে করে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ডাকতে থাকে। এর জবাবে যদি কেউ বলে আরবে এ ধরনের মাবুদ বা দেব-দেবী পাওয়া যেতো না তহলে আমি বলবো এটা তার আরবীয় জাহেলিয়াতের ইতিহাস না জানার প্রমাণ। লেখাপড়া জানা লোকদের কে-ইবা একথা জানে না যে, বারী’আহ, কালব, তাগলাব, কুদা’আহ, কিনানাহ, হারস, কা’ব, কিনদাহ ইত্যাদি বহু আরব গোত্রে বিপুল সংখ্যক খৃস্টান ও ইহুদী ছিল। আর এ দু’টি ধর্মের লোকেরা ব্যাপকভাবে নবী, আউলিয়া ও শহীদদের পূজা করতো। তাছাড়া মৃত লোকরাই ছিল আরব মুশরিকদের অধিকাংশের না হলেও বহু লোকের উপাস্য। পরবর্তী প্রজন্ম পূর্ববর্তী মৃত লোকদেরকে নিজেদের খোদা বানিয়ে নিয়েছিল। ইমাম বুখারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছেঃ ওয়াদ্দা, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াউক, নাসর--- এগুলো ছিল পূর্বকালের সৎ লোকদের নাম। পরবর্তীকালের লোকেরা তাদের দেব মূর্তি নির্মাণ করে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেনঃ ইসাফ ও নায়েলাহ উভয়ই মানুষ ছিল। এ ধরনের বর্ণনা লাত, মানাত ও উযযা সম্পর্কেও পাওয়া যায়। হাদীসে মুশরিকদের এ আকীদাও বর্ণিত হয়েছে যে, লাত ও উযযা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। ফলে তিনি শীতকালটি লাতের কাছে এবং গ্রীষ্মকালটি উযযার কাছে কাটাতেন। سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يَصِفُونَ(আল্লাহর প্রতি তারা যে দোষারোপ করে তা থেকে তিনি মুক্ত ও পবিত্র)।
২০.
অর্থাৎ আখেরাত অস্বীকৃতি তাদেরকে এতই দায়িত্বহীন, বেপরোয়া ও পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাসে মত্ত করে দিয়েছে যে এখন যে কোন সত্য অস্বীকার করতে তারা কুন্ঠিত হয় না। তাদের কাছে কোন সত্যের কদর নেই। তারা নিজেরা কোন নৈতিক বাঁধন মেনে চলতে প্রস্তুত নয়। তারা যে পথে চলছে সেটি সত্য ও ন্যায়সঙ্গত কিনা এ বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা ও বিচার-বিশ্লেষণ করার কোন পরোয়াই তাদের নেই।
২১.
এখান থেকে ভাষণের মোড় ফিরে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের মোকাবিলায় মক্কার কাফেরদের পক্ষ থেকে যেসব শয়তানী কাজ-কারবার চালানো হচ্ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হচ্ছিল, ঈমান না আনার জন্য যেসব বাহানাবাজী করা হচ্ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি আনা হচ্ছিল, ---সবগুলোকে এক একটি করে পর্যালোচনা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে উপদেশ দান, ভয় দেখানো ও নসিয়ত হয়েছে।
২২.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের চর্চা যখন চারদিকে হতে লাগলো তখন মক্কার লোকেরা যেখানেই যেতো সেখানেই তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হতো, তোমাদের ওখানে যে ব্যক্তি নবী হয়ে এসেছেন তিনি কি শিক্ষা দেন? কুরআন কোন্ ধরনের কিতাব তার মধ্যে কি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে মক্কার কাফেররা সবসময় এমন সব শব্দ প্রয়োগ করতো যাতে প্রশ্নকারীর মনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম এবং তিনি যে কিতাবটি এনেছেন সে সম্পর্কে কোন না কোন সন্দেহ জাগতো অথবা কমপক্ষে তার মনে নবীর বা তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারে সকল প্রকার আগ্রহ খতম হয়ে যেতো।
২৩.
আগের বাক্যটি এবং এ বাক্যটির মাঝখানে একটি সূক্ষ্মতর ফাঁক রয়ে গেছে। শ্রোতা নিজেই সামান্য চিন্তা-ভাবনা করে এ ফাঁকটুকু পূর্ণ করতে পারে। এর বিস্তারিত বিবরণ হচ্ছে, মহান আল্লাহ যখন এ প্রশ্ন করবেন তখন হাশরের ময়দানে চারদিকে গভীর নীরবতা বিরাজ করবে। কাফের ও মুশরিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে। তাদের কাছে এ প্রশ্নের কোন জবাব থাকবে না। তাই তারা নির্বাক হয়ে যাবে এবং তত্ব--জ্ঞানীরা পরস্পর এসব কথা বলাবলি করতে থাকবে।
২৪.
তত্ব-জ্ঞানীদের উক্তির সাথে একথাটি বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহ নিজেই ব্যাখ্যামূলকভাবে বলছেন। যারা এটাকেও তত্ব-জ্ঞানীদের উক্তি মনে করেছেন তাদের এক্ষেত্রে বড়ই জটিল ব্যাখ্যা তৈরী করতে হয়েছে এবং তারপরও তাদের কথা পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারেনি।
২৫.
অর্থাৎ মৃত্যুর সময় যখন ফেরেশতারা তাদের রূহগুলো তাদের দেহ পিঞ্জর থেকে বের করে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নেয়।
২৬.
এ আয়াত এবং এর পরবর্তী যে আয়াতে মৃত্যুর পর মুত্তাকী ও ফেরেশতাদের আলাপ আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো কুরআন মজীদের এমন ধরনের আয়াতের অন্যতম যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। হাদীসে “আলমে বর্যখ”--এর জন্য কবর শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে এর অর্থ হয় এমন একটি জগত যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মৃত্যু লাভ করার পর থেকে নিয়ে পরবর্তী পুনরুত্থান লাভ করার প্রাক্কালে পথম ধাক্কা খাওয়া পর্যন্ত মানবিক রূহগুলো অবস্থান করবে। হাদীস অস্বীকারকারীদের জোর বক্তব্য হচ্ছে, এ জগতটি একটি নিরেট শূন্যতার জগত ছাড়া আর কিছুই নয়। এখানে কারো কোন অনুভূতি ও চেতনা থাকবে না এবং কোন আযাব বা সওয়াবও কারো হবে না। কিন্তু এখানে দেখুন, কাফেরদের মৃত্যু হবার পর তাদের রূহগুলো মৃত্যু পারের জগতে দিয়ে সেখানকার অবস্থা নিজেদের প্রত্যাশার বিপরীত পেয়ে হতবাক হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতাদেরকে অভিবাদন করে এ মর্মে নিশ্চয়তা দান করার চেষ্টা করতে থাকে যে, তারা কোন খারাপ কাজ করছিল না। জবাবে ফেরেশতারা তাদেরকে ধমক দেন এবং তাদের জাহান্নামে প্রবেশ করার আগাম খবর দিয়ে দেন। অন্যদিকে মুত্তাকীদের মৃত্যুর পর ফেরেশতারা তাদের রূহকে সালাম করেন এবং তাদেরকে জান্নাতী হবার জন্য আগাম মোবারকবাদ দেন। বরযখের জীবন, অনুভূতি, চেতনা, আযাব ও সওয়াবের জন্য কি এরচেয়ে বেশী প্রমাণের প্রয়োজন আছে? সূরা নিসার ৯৭ নম্বর আয়াতে প্রায় এ একই ধরনের বিষয়বস্তুর আলোচনা এসেছে। সেখানে যেসব মুসলমান হিজরত করেনি তাদের মৃত্যুর পর তাদের রূহের সাথে ফেরেশতাদের কথাবার্তার বিবরণ দেয়া হয়েছে। আবার সূরা মু’মিনের ৪৫-৪৬ আয়াতে এসবের চাইতে বেশী সুস্পষ্ট ভাষায় বরযখের আযাবের কথা বলা হয়েছে সেখানে আল্লাহ ফেরাউন ও ফেরাউনের পরিবারবর্গ সম্পর্কে বলেছেন, “একটি কঠিন আযাব তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। অর্থাৎ সকাল-সাঁঝে তাদেরকে আগুনের সামনে নিয়ে আসা হয়। তারপর যখন কিয়ামতের সময় এসে যাবে তখন হুকুম দেয়া হবে----ফেরাউনের পরিবারবর্গকে কঠিনতম আযাবের মধ্যে ঠেলে দাও।”
মৃত্যু ও কিয়ামতের মাঝখানের অবস্থাটি সম্পর্কে আসলে কুরআন ও হাদীস উভয় থেকে একই চিত্র পাওয়া যায়। এ চিত্রটি হচ্ছেঃ মৃত্যু নিছক দেহ ও রূহের আলাদা হয়ে যাবার নাম,---সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ও নিশ্চহ্ন হয়ে যাবার নাম নয়। দেহ থেকে আলাদা হয়ে যাবার পর রূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না বরং দুনিয়াবী জীবনের অভিজ্ঞতা এবং মানসিক ও নৈতিক উপার্জনের মাধ্যমে যে ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তার সবটুকু সহকারে জীবিত থাকে। এ অবস্থাটি রূহের চেতনা অনুভূতি, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার অবস্থা অনেকটা স্বপ্নের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। একটি অপরাধী রূহকে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ, তারপর তার আযাব ও যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে যাওয়া এবং তাকে দোযখের সামনে উপস্থাপিত করা--- এসব কিছু এমন একটি অবস্থার সাথে সাদৃশ্য রাখে যা একজন খুনের আসামীকে ফাঁসী দেবার তারিখের একদিন আগে একটি ভয়ংকর স্বপ্নের আকারে তার কাছে উপস্থিত হয়। অনুরূপভাবে একটি পবিত্র পরিচ্ছন্ন ও নিষ্কলুষ রূহের সম্বর্ধনা, তারপর তার জান্নাতের সুখবর শোনা এবং জান্নাতের বাতাস ও খোশবুতে আপ্লুত হওয়া---- এসব কিছুও এমন একজন কর্মচারীর স্বপ্নের সাথে মিলে যায় যে সুচারুরূপে নিজের কাজ সম্পন্ন করার পর সরকারের ডাকে হেড কোয়ার্টারে হাযির হয় এং সাক্ষাতকারের জন্য চুক্তিবদ্ধ তারিখের একদিন আগে ভবিষ্যত পুরস্কারের প্রত্যাশাদীপ্ত একটি মধুর স্বপ্ন দেখে। শিংগার দ্বিতীয় ফুৎকারে এ স্বপ্ন হঠাৎ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে এবং অকস্মাৎ নিজেদেরকে দেহ ও রূহ সহকারে হাশরের ময়দানে জীবিত অবস্থায় পেয়ে অপরাধীরা অবাক হয়ে বলবে, يَا وَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ (আরে, আমাদের শয়নগৃহ থেকে আমাদের উঠিয়ে আনলো কে? ) কিন্তু ঈমানদাররা পূর্ণ নিশ্চিন্ততার সাথে বলবে,
وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ
(করুণাময় আল্লাহ এ জিনিসেরই ওয়াদা করেছিলেন এবং রসূলদের বর্ণনা সঠিক ছিল।) অপরাধীদের তাৎক্ষণিক অনুভূতি তখন এ হবে যে, তারা নিজেদের শয়নগৃহে (দুনিয়ায় মৃত্যুর বিছানায় যেখানে তারা প্রাণ ত্যাগ করেছিল।) সম্ভবত ঘণ্টাখানেকের মতো সময় শয়ন করে থাকবে এবং হঠাৎ দুর্ঘটনায় চোখ খোলার সাথে সাথেই কোথাও দৌড়ে চলছে। অন্যদিকে ঈমানদাররা পূর্ণ মানসিক ধৈর্য সহকারে বলবেঃ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْبَعْثِ فَهَذَا يَوْمُ الْبَعْثِ وَلَكِنَّكُمْكُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ“আল্লাহর দফতরে তোমরা তো হাশরের দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে থেকেছো, আর এ সেই হাশরের দিন কিন্তু তোমরা এ জিনিসটি জানতে না।”
২৭.
অর্থাৎ মক্কার বাইরের লোকেরা যখন আল্লাহর ভয়ে ভীত সত্যনিষ্ঠ লোকদেরকে নবী ﷺ এবং তিনি যে শিক্ষা এনেছেন সে সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন তাদের জবাব মিথ্যুক ও অবিশ্বাসী কাফেরদের জবাব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। তারা মিথ্যা প্রচারণা চালায় না। তারা জনগণকে ধোঁকা দেবার ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে না। তারা নবীর এবং তিনি যে শিক্ষা এনেছেন তার প্রশংসা করে এবং সঠিক পরিস্থিতি লোকদেরকে জানায়।