আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন্ নাহল

১২৮ আয়াত

১১ ) এ পানির সাহায্যে তিনি শস্য উৎপন্ন করেন এবং জয়তুন, খেজুর, আংগুর ও আরো নানাবিধ ফল জন্মান। এর মধ্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য রয়েছে একটি বড় নিদর্শন।
يُنۢبِتُ لَكُم بِهِ ٱلزَّرْعَ وَٱلزَّيْتُونَ وَٱلنَّخِيلَ وَٱلْأَعْنَـٰبَ وَمِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ۗ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ ١١
১২ ) তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করে রেখেছেন এবং সমস্ত তারকাও তাঁরই হুকুমে বশীভূত রয়েছে। যারা বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগায় তাদের জন্য রয়েছে এর মধ্যে প্রচুর নিদর্শন।
وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ وَٱلنُّجُومُ مُسَخَّرَٰتٌۢ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَعْقِلُونَ ١٢
১৩ ) আর এই যে বহু রং বেরংয়ের জিনিস তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করে রেখেছেন এগুলোর মধ্যেও অবশ্যি নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা শিক্ষাগ্রহণ করে।
وَمَا ذَرَأَ لَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُخْتَلِفًا أَلْوَٰنُهُۥٓ ۗ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يَذَّكَّرُونَ ١٣
১৪ ) তিনিই তোমাদের জন্য সাগরকে করায়ত্ত করে রেখেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তরতাজা গোশত নিয়ে খাও এবং তা থেকে এমন সব সৌন্দর্য সামগ্রী আহরণ করো যা তোমরা অংগের ভূষণরূপে পরিধান করে থাকো। তোমরা দেখছো, সমুদ্রের বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। এসব এজন্য, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো ১১ এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো।
وَهُوَ ٱلَّذِى سَخَّرَ ٱلْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا۟ مِنْهُ لَحْمًۭا طَرِيًّۭا وَتَسْتَخْرِجُوا۟ مِنْهُ حِلْيَةًۭ تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى ٱلْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِهِۦ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ١٤
১৫ ) তিনি পৃথিবীতে পাহাড়সমূহ গেঁড়ে দিয়েছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে হেলে না পড়ে। ১২ তিনি নদী প্রবাহিত করেছেন এবং প্রাকৃতিক পথ নির্মাণ করেছেন, ১৩ যাতে তোমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারো।
وَأَلْقَىٰ فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِىَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَـٰرًۭا وَسُبُلًۭا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ١٥
১৬ ) তিনি ভূপৃষ্ঠে পথনির্দেশক চিহ্নসমূহ রেখে দিয়েছেন ১৪ এবং তারকার সাহায্যেও মানুষ পথনির্দেশ পায়। ১৫
وَعَلَـٰمَـٰتٍۢ ۚ وَبِٱلنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ ١٦
১৭ ) তাহলে ভেবে দেখতো যিনি সৃষ্টি করেন এবং যে কিছুই সৃষ্টি করে না তারা উভয় কি সমান? ১৬ তোমরা কি সজাগ হবে না?
أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ ۗ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ١٧
১৮ ) যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গুণতে চাও তাহলে গুণতে পারবে না। আসলে তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ১৭
وَإِن تَعُدُّوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحْصُوهَآ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٨
১৯ ) অথচ তিনি তোমাদের প্রকাশ্যও জানেন এবং গোপনও জানেন। ১৮
وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ ١٩
২০ ) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব সত্তাকে লোকেরা ডাকে তারা কোন একটি জিনিসেরও স্রষ্টা নয় বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি।
وَٱلَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْـًۭٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ٢٠
১১.
অর্থাৎ হালাল পথে নিজের রিযিক সংগ্রহ করার চেষ্টা করো।
১২.
এ থেকে জানা যায়, ভূপৃষ্ঠে পর্বত শ্রেণী স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠু ও সুশৃংখল হয়। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের এ উপকারিতা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যে সমস্ত উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মুখ্য উদ্দেশ্য।
১৩.
অর্থাৎ নদ-নদীর সাথে যে পথ তৈরী হয়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকাসমূহে এসব প্রাকৃতিক পথের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। অবশ্যি সমতল ভূমিতেও এগুলোর গুরুত্ব কম নয়।
১৪.
অর্থাৎ আল্লাহ সমগ্র পৃথিবীটাকে একই ধারায় সৃষ্টি করেননি। বরং প্রত্যেকটি এলাকাকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করেছেন। এর অন্যান্য বিভিন্ন উপকারিতার মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে এই যে, মানুষ নিজের পথ ও গন্তব্য আলাদাভাবে চিনে নেয়। এ নিয়ামতের মর্যাদা মানুষ তখনই অনুধাবন করতে পারে যখন ঘটনাক্রমে এমন কোন বালুকাময় মরু প্রান্তরে তাকে যেতে হয় যেখানে এ ধরনের বৈশিষ্ট্যমূলক চিহ্নের প্রায় কোন অস্তিত্বই থাকে না এবং মানুষ প্রতি মুহূর্তে পথ হারিয়ে ফেলার ভয় করতে থাকে। সামুদ্রিক সফরে মানুষ এর চেয়ে আরো বেশী মারাত্মকভাবে এ বিরাট নিয়ামতটি অনুভব করতে থাকে। কারণ সেখানে পথের নিশানী প্রায় একেবারেই থাকে না। কিন্তু মরুভূমি ও সমুদ্রের বুকেও আল্লাহ মানুষের পথ দেখাবার জন্য একটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সেখানে প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্তও মানুষ তারকার সাহায্যে পথের সন্ধান করে আসছে।

এখানে আবার তাওহীদ রহমত ও রবুবীয়াতের যুক্তির মাঝখানে রিসালাতের যুক্তির দিকে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ স্থানটি পড়তে গিয়ে মন আপনা আপনি এই বিষয়বস্তুর প্রতি নিবিষ্ট হয়ে যায় যে, যে আল্লাহ তোমাদের বস্তুগত জীবনে পথনির্দেশনার জন্য এতসব ব্যবস্থা করে রেখেছেন তিনি কি তোমাদের নৈতিক জীবনের ব্যাপারে এতই বেপরোয়া হয়ে যেতে পারেন যে, এখানে তোমাদের পথ দেখাবার কোন ব্যবস্থাই করবেন না? একথা সুস্পষ্ট, বস্তুগত জীবনে পথভ্রষ্ট হবার সবচেয়ে বড় ক্ষতি নৈতিক জীবনে পথভ্রষ্ট হবার ক্ষতির তুলনায় অতি সামান্যই বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে বলা যায়, মহান করুণাময় রব যখন আমাদের বৈষয়িক জীবনকে সহজ ও সফল করার জন্য পাহাড়ের মধ্যে আমাদের জন্য পথ তৈরী করেন, সমতল ক্ষেত্রে পথের চিহ্ন স্থাপন করেন, মরুভূমি ও সাগরের বুকে আমাদের দিক-নির্দেশনার জন্য আকাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন তখন তাঁর সম্পর্কে আমরা কেমন করে এ কুধারণা পোষণ করতে পারি যে, তিনি আমাদের নৈতিক সাফল্য ও কল্যাণের জন্য কোন পথই তৈরী করেননি, সেই পথকে সুস্পষ্ট করে করে তোলার জন্য কোন চিহ্নও দাঁড় করান নি এবং তাকে পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেবার জন্য কোন উজ্জ্বল প্রদীপও জ্বালাননি?

১৫.
এ পর্যন্ত বিশ্ব-জাহান ও প্রাণী জগতের বহু নিশানী একের পর এক বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সত্তা থেকে নিয়ে আসমান ও যমীনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্রই যেদিকে চায় দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখুক, সেখানে প্রত্যেকটি জিনিসই নবীর বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে এবং কোথাও থেকেও শিরক ও নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে একটি সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে না। এই যে তিনি নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে বাক শক্তিসম্পন্ন এবং যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করে বিতর্ককারী মানুষ তৈরী করেছেন, তার প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করার জন্য এমন বহু জীব-জানোয়ার সৃষ্টি করেছেন যাদের চুল, চামড়া, রক্ত, দুধ, গোশত ও পিঠের মধ্যে মানবিক প্রকৃতির বহুতর চাহিদা এমনকি তার সৌন্দর্য প্রিয়তার দাবী পুরণের উপাদান রয়ে গেছে। এই যে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করার এবং ভূপৃষ্ঠে নানা জাতের ফুল, ফল, শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছেন, যার অসংখ্য বিভাগ পরস্পরের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে এবং সেগুলো মানুষের প্রয়োজনও পূর্ণ করে। এ রাত ও দিনের নিয়মিত আসা যাওয়া এবং চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির চরম নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃংখল আবর্তন, পৃথিবীর উৎপন্ন ফসল ও মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে যার গভীরতম সম্পর্ক বিদ্যমান। এই যে পৃথিবীতে সমুদ্রের অস্তিত্ব এবং তার মধ্যে মানুষের বহু প্রাকৃতিক ও সৌন্দর্য প্রীতির চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই যে পানির কতিপয় বিশেষ আইনের শৃংখলে বাঁধা থাকা এবং তারপর তার এ উপকারিতা যে মানুষ সমুদ্রের মতো ভয়াবহ বস্তুর বুক চিরে তার মধ্যে নিজের জাহাজ চালায় এবং দেশ থেকে দেশান্তরে সফর ও বাণিজ্য করে। এই যে পৃথিবীর বুকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য তাদের অপরিহার্যতা। এই যে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে অসীম মহাশূন্যের বুক পর্যন্ত অসংখ্য চিহ্ন ও বিশেষ নিশানীর বিস্তার এবং তারপর এসব মানুষের কল্যাণে নিয়েজিত থাকা। এসব জিনিসই পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একটি সত্তাই এ পরিকল্পনা তৈরী করেছেন। তিনি একাই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসবের ডিজাইন তৈরী করেছেন। তিনিই এ ডিজাইন অনুযায়ী তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই প্রতি মুহূর্তে এ দুনিয়ায় নিত্য নতুন জিনিস তৈরী করে করে এমনভাবে সামনে আনছেন যার সমগ্র পরিকল্পনা ও তার নিয়ম-শৃংখলার সামান্যতম ফারাকও আসছে না। আর তিনি একাই পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত এ সুবিশাল কারখানাটি চালাচ্ছেন। একজন নির্বোধ বা হঠকারী ছাড়া আর কে-ই বা একথা বলতে পারে যে, এসব কিছুই একটি আকস্মিক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়? অথবা এ চরম সুশৃংখল, সুসংবদ্ধ ও ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন কাজ বা বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন খোদার সৃষ্ট এবং বিভিন্ন খোদার পরিচালনাধীন?
১৬.
অর্থাৎ যদি তোমরা একথা মানো (যেমন বাস্তবে মক্কার কাফেররাও এবং দুনিয়ার অন্যান্য মুশরিকরাও মানতো) যে, একমাত্র আল্লাহই সব কিছুর স্রষ্টা এবং এ বিশ্বজগতে তোমাদের উপস্থাপিত শরীকদের একজনও কোন কিছুই সৃষ্টি করেনি, তাহলে স্রষ্টার সৃষ্টি করা ব্যবস্থায় অস্রষ্টাদের মর্যাদা কেমন করে স্রষ্টার সমান অথবা কোনভাবেই তাঁর মতো হতে পারে? নিজের সৃষ্ট জগতে স্রষ্টা যেসব ক্ষমতা-ইখতিয়ারের অধিকারী অ-স্রষ্টারাও তার অধিকারী হবে এবং স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিলোকের ওপর যেসব অধিকার রাখেন অ-স্রষ্টারাও তাই রাখবে, এটা কেমন করে সম্ভব? স্রষ্টা ও অ-স্রষ্টার গুণাবলী একই রকম হবে অথবা তারা একই প্রজাতিভুক্ত হবে, এমনকি তাদের মধ্যে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক হবে, এটা কেমন করে কল্পনা করা যেতে পারে?
১৭.
প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্যের মধ্যে একটি বিরাট অকথিত কাহিনী রয়ে গেছে, যা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, সেটি এতই সুস্পষ্ট যে, এখানে তার জের টানার কোন প্রয়োজন নেই। তার প্রতি এ সামান্যতম ইঙ্গিত করে দেয়াই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করার পরপরই তাঁর ক্ষমাশীল ও করুণাময় হবার কথা উল্লেখ করতে হবে। এ থেকে জানা যায়, যে মানুষের সমগ্র সত্তা ও সারাটা জীবন আল্লাহর অনুগ্রহের সূতোয় বাঁধা সে কেমন সব অকৃজ্ঞতা, অবিশ্বস্ততা, বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহাত্মক আচরণের মাধ্যমে নিজের উপকারী ও অনুগ্রহদাতা এমন ধরনের করুণাশীল ও সহিষ্ণু যে, এমন সব কার্যকলাপের পরও তিনি বছরের পর বছর একজন অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে এবং শত শত বছর একটি বিদ্রোহী ও নাফরমান জাতিকে নিজের অনুগ্রহদানে আপ্লুত করে চলেছেন। এখানে দেখা যাবে, এক ব্যক্তি প্রকাশ্য স্রষ্টার অস্তিত্বই অস্বীকার করে এবং তারপরও তার প্রতি প্রবল ধারায় অনুগ্রহ বর্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে আবার এক ব্যক্তি স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকার সব কিছুতেই অ-স্রষ্টা সত্তাদেরকে শরীক করে চলছে এবং দানের জন্য দানকারীর পরিবর্তে অ-দানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এরপরও এখানে দেখা যাবে দাতা-হস্ত দান করতে বিরত হচ্ছে না। এখানে এ দৃশ্যও দেখা যাবে যে, এক ব্যক্তি স্রষ্টাকে স্রষ্টা ও অনুগ্রহদাতা হিসেবে মেনে নেয়ার পরও তাঁর মোকাবিলায় বিদ্রোহ ও নাফরমানী করা নিজের অভ্যাসে পরিণত এবং তাঁর আনুগত্যের শৃংখল গলায় থেকে নামিয়ে দেয়াকে নিজের নীতি ও বিধি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এরপরও সারাজীবন স্রষ্টার অপরিসীম অনুগ্রহের ধারায় সে আপ্লুত হয়ে চলেছে।
১৮.
অর্থাৎ আল্লাহকে অস্বীকার এবং শিরক ও গোনাহের কাজ করা সত্ত্বেও আল্লাহর অনুগ্রহের সিলসিলা বন্ধ না হওয়ার কারণ আল্লাহ লোকদের কার্যকলাপের কোন খবর রাখেন না,----কোন নির্বোধ যেন একথা মনে না করে বসে। এটা অজ্ঞতার কারণে আন্দাজে ভাগ-বাঁটোয়ারা করার বা ভুলে কাউকে দান করে দেবার ব্যাপার নয়। এটা তো সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার ব্যাপার। অপরাধীদের গোপন ভেদ বরং তাদের মনের গহনে লুকিয়ে থাকা সংকল্পগুলোর বিস্তারিত চেহারা জানার পরও এ ধরনের সহিষ্ণুতা ও ক্ষমা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটা এমন পর্যায়ের সৌজন্য, দানশীলতা ও ঔদার্য যে একমাত্র রব্বুল আলামীনের পক্ষেই এটা শোভা পায়।
অনুবাদ: