আয়াত
৩১ ) চিরন্তন অবস্থানের জান্নাত, যার মধ্যে তারা প্রবেশ করবে, পাদদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নদী এবং সবকিছুই সেখানে তাদের কামনা অনুযায়ী থাকবে। ২৮ এ পুরস্কার দেন আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে।
جَنَّٰتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَآءُونَ كَذَٰلِكَ يَجْزِى ٱللَّهُ ٱلْمُتَّقِينَ ٣١
৩২ ) এমন মুত্তাকীদেরকে, যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতারা যখন মৃত্যু ঘটায় তখন বলে, “তোমাদের প্রতি শান্তি, যাও নিজেদের কর্মকাণ্ডের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করো।”
ٱلَّذِينَ تَتَوَفَّىٰهُمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَٰمٌ عَلَيْكُمُ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٣٢
৩৩ ) হে মুহাম্মাদ! এখন যে এরা অপেক্ষা করছে, এক্ষেত্রে এখন ফেরেশতাদের এসে যাওয়া অথবা তোমার রবের ফায়সালা প্রকাশিত হওয়া ছাড়া আর কী বাকি রয়ে গেছে? ২৯ এ ধরনের হঠকারিতা এদের আগে আরো অনেক লোক করেছে। তারপর তাদের সাথে যা কিছু হয়েছে তা তাদের ওপর আল্লাহর জুলুম ছিল না বরং তাদের নিজেদেরই জুলুম ছিল যা তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর করেছিল।
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن تَأْتِيَهُمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ أَوْ يَأْتِىَ أَمْرُ رَبِّكَ كَذَٰلِكَ فَعَلَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَمَا ظَلَمَهُمُ ٱللَّهُ وَلَٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ٣٣
৩৪ ) তাদের কৃতকর্মের অনিষ্ঠকারিতা শেষ পর্যন্ত তাদের ওপরই আপতিত হয়েছে এবং যেসব জিনিসকে তারা ঠাট্টা করতো সেগুলোই তাদের ওপর চেপে বসেছে।
فَأَصَابَهُمْ سَيِّـَٔاتُ مَا عَمِلُوا۟ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا۟ بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ ٣٤
৩৫ ) এ মুশরিকরা বলে, “আল্লাহ চাইলে তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদাত আমরাও করতাম না, আমাদের বাপ-দাদারাও করতো না এবং তাঁর হুকুম ছাড়া কোন জিনিসকে হারামও গণ্য করতো না।” ৩০ এদের আগের লোকেরাও এমনি ধরনের বাহানাবাজীই চালিয়ে গেছে। ৩১ তাহলে কি রসূলদের ওপর সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব আছে?
وَقَالَ ٱلَّذِينَ أَشْرَكُوا۟ لَوْ شَآءَ ٱللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِۦ مِن شَىْءٍ نَّحْنُ وَلَآ ءَابَآؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن دُونِهِۦ مِن شَىْءٍ كَذَٰلِكَ فَعَلَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَهَلْ عَلَى ٱلرُّسُلِ إِلَّا ٱلْبَلَٰغُ ٱلْمُبِينُ ٣٥
৩৬ ) প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো।” ৩২ এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর ওপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে। ৩৩ তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে। ৩৪
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِى كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱجْتَنِبُوا۟ ٱلطَّٰغُوتَ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ ٱلضَّلَٰلَةُ فَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ ٣٦
৩৭ ) হে মুহাম্মাদ! তুমি এদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য যতই আগ্রহী হও না কেন, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে আর সঠিক পথে পরিচালিত করেন না আর এ ধরনের লোকদের সাহায্য কেউ করতে পারে না।
إِن تَحْرِصْ عَلَىٰ هُدَىٰهُمْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَن يُضِلُّ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ ٣٧
৩৮ ) এরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলে, “আল্লাহ কোন মৃতকে পুনর্বার জীবিত করে উঠাবেন না।” ---কেন উঠাবেন না? এতো একটি ওয়াদা, যেটি পুরা করা তিনি নিজের ওপর ওয়াজিব করে নিয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না,
وَأَقْسَمُوا۟ بِٱللَّهِ جَهْدَ أَيْمَٰنِهِمْ لَا يَبْعَثُ ٱللَّهُ مَن يَمُوتُ بَلَىٰ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٣٨
৩৯ ) আর এটি এজন্য প্রয়োজন যে, এরা যে সত্যটি সম্পর্কে মতবিরোধ করছে আল্লাহ সেটি এদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবেন এবং সত্য অস্বীকারকারীরা জানতে পারবে যে, তারাই ছিল মিথ্যাবাদী। ৩৫
لِيُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِى يَخْتَلِفُونَ فِيهِ وَلِيَعْلَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَٰذِبِينَ ٣٩
৪০ ) (এর সম্ভাবনার ব্যাপারে বলা যায়) কোন জিনিসকে অস্তিত্বশীল করার জন্য এর চেয়ে বেশী কিছু করতে হয় না যে, তাকে হুকুম দিই “হয়ে যাও” এবং তা হয়ে যায়। ৩৬
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَىْءٍ إِذَآ أَرَدْنَٰهُ أَن نَّقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٤٠
২৮.
এ হচ্ছে জান্নাতের আসল সংজ্ঞা। সেখানে মানুষ যা চাইবে তা পাবে। তার ইচ্ছা ও পছন্দ বিরোধী কোন কাজই সেখানে হবে না। দুনিয়ায় কোন প্রধান ব্যক্তি, কোন প্রধান নেতা এবং কোন বিশাল রাজ্যের অধিকারী বাদশাহও কোন দিন এ নিয়ামত লাভ করেনি। দুনিয়ায় এ ধরনের নিয়ামত লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু জান্নাতের প্রত্যেক অধিবাসীই সেখানে আনন্দ ও উপভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। তার জীবনে সর্বক্ষণ সবদিকে সবকিছু হবে তার ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী। তার প্রত্যেকটি আশা সফল হবে, প্রত্যেকটি কামনা ও বাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং প্রত্যেকটি ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে।
২৯.
উপদেশ ও সতর্কবাণী হিসেবে একথা কয়টি বলা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, যতদূর বুঝাবার ব্যাপার ছিল তুমি তো প্রত্যেকটি সত্যকে উন্মুক্ত করে বুঝিয়ে দিয়েছো। যুক্তির সাহায্যে তার সত্যতা প্রমাণ করে দিয়েছো। বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থা থেকে এর পক্ষে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছো। কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শিরকের ওপর অবিচল থাকার কোন অবকাশই রাখোনি। এখন এরাই একটি সরল সোজা কথা মেনে নেবার ব্যাপারে ইতস্তত করছে কেন? এরা কি মউতের ফেরেশতার অপেক্ষায় আছে? এ ফেরেশতা সামনে এসে গেলে তখন জীবনের শেষ মুহূর্তে কি এরা তা মেনে নেবে? অথবা আল্লাহর আযাব সামনে এসে গেলে তার প্রথম আঘাতের পর তা মেনে নেবে?
৩০.
সূরা আন’আমের ১৪৮-১৪৯ আয়াতেও মুশরিকদের এ যুক্তি উত্থাপন করে এর জবাব দেয়া হয়েছে। সেই আয়াতগুলো এবং সেখানে বর্ণিত টীকা সামনে থাকলে এ বিষয়টি অনুধাবন করা বেশী সহজ হবে। (দেখুন সূরা আন’আম ১২৪-১২৬ টীকা)
৩১.
অর্থাৎ এটা কোন নতুন কথা নয়। আজ তোমরা আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অসৎকর্মের কারণ হিসেবে পেশ করছো। এটা অতি পুরাতন যুক্তি। বিভ্রান্ত লোকেরা নিজেদের বিবেককে ধোঁকা দেবার এবং উপদেশদাতাদের মুখ বন্ধ করার জন্য এ যুক্তি আউড়ে আসছে। এটা হচ্ছে মুশরিকদের যুক্তির প্রথম জবাব। এ জবাবটির পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে একথা অবশ্যি মনে রাখতে হবে যে, মাত্র এখনই কয়েক লাইন আগেই “জ্বী ওগুলো তো পুরাতন যুগের বস্তাপচা কাহিনী” বলে কুরআনের বিরুদ্ধে মুশরিকদের প্রচারণার উল্লেখ এসে গেছে। অর্থাৎ নবীর বিরুদ্ধে তাদের যেন এ আপত্তি ছিল যে, ইনি আবার নতুন কথাই বা কি বলছেন, সেই পুরানো কথাই তো বলে চলছেন। নূহের প্লাবনের পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত হাজার বার এ কথা বলা হয়েছে। এর জবাবে তাদের যুক্তি (যাকে তারা বড়ই শক্তিশালী হিসেবে পেশ করতো) উদ্ধৃত করার পর এ সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মহোদয়গণ! আপনারাই বা কোন অত্যাধুনিক? আপনার এই যে চমৎকার যুক্তির অবতারণা করেছেন এতেও আদতেই কোন অভিনবত্ব নেই। এটিও বহুকালের বাসি-বস্তাপচা খোঁড়া যুক্তি। হাজার বছর থেকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্টতা এ একই গীত গেয়ে আসছে। আপনারাও সেই পচা গীতটিই গেয়ে উঠেছেন।
৩২.
অর্থাৎ তোমরা নিজেদের শিরক এবং নিজেদের তৈরী হালাল-হারামের বিধানের পক্ষে আমার ইচ্ছাকে কেমন করে বৈধতার ছাড়পত্র দানকারী হিসেবে পেশ করতে পারো? আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে নিজের রসূল পাঠিয়েছি এবং তাদের মাধ্যমে লোকদেরকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমাদের কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র আমার বন্দেগী করা। তাগুতের বন্দেগী করার জন্য তোমাদের পয়দা করা হয়নি। এভাবে আমি যখন পূর্বাহ্ণেই ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে তোমাদের জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমাদের এসব বিভ্রান্ত কাজ কারবারের পক্ষে আমার সমর্থন নেই তখন এরপর আমার ইচ্ছাকে ঢাল বানিয়ে তোমাদের নিজেদের ভ্রষ্টতাকে বৈধ গণ্য করা পরিষ্কারভাবে একথাই ব্যক্ত করছে যে, তোমরা চাচ্ছিলে আমি উপদেশদাতা রসূল পাঠাবার পরিবর্তে এমন রসূল পাঠাতাম যিনি তোমাদের হাত ধরে ভুল পথ থেকে টেনে সরিয়ে নিতেন এবং জোর করে তোমাদেরকে সত্য সঠিক পথে পরিচালিত করতেন। (আল্লাহর অনুমতিদান ও পছন্দ করার মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করার জন্য সূরা আন’আমের ৮০ এবং সূরা যুমারের ২০ টীকা দেখুন)।
৩৩.
অর্থাৎ প্রত্যেক নবীর আগমনের পর তাঁর জাতি দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একদল তাঁর কথা মেনে নিয়েছে। (আল্লাহ তাদেরকে এ মেনে নেয়ার তাওফীক দিয়েছিলেন) এবং অন্য দলটি নিজেদের গোমরাহীর ওপর অবিচল থেকেছে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আন’আম ২৮ টীকা)।
৩৪.
অর্থাৎ নিশ্চয়তা লাভ করার জন্য অভিজ্ঞতার চাইতে আর কোন বড় নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড নেই। এখন তুমি নিজেই দেখে নাও, মানব ইতিহাসের একের পর এক অভিজ্ঞতা কি প্রমাণ করছে? আল্লাহর আযাব কার ওপর এসেছে--- ফেরাউন ও তার দলবলের ওপর, না মূসা ও বনী ইসরাঈলের ওপর? আল্লাহকে যারা অস্বীকার করেছিল তাদের ওপর, না তাঁকে যারা মেনে নিয়েছিল তাদের ওপর? এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাগুলোর ফল কি এই দাঁড়িয়েছে যে, আমার ইচ্ছার কারণে যারা শিরক করার ও শরীয়াত গঠনের সুযোগ লাভ করেছিল তদের প্রতি আমার সমর্থন ছিল? বরং বিপরীত পক্ষে এ ঘটনাবলী সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণ করছে যে, উপদেশ ও অনুশাসন সত্বেও যারা এসব গোমরাহীর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়ে চলেছে। আমার ইচ্ছাশক্তি তাদেরকে অপরাধ করার অনেকটা সুযোগ দিয়েছে। তারপর তাদের নৌকা পাপে ভরে যাবার পর ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে।
৩৫.
এ বক্তব্য থেকে মৃত্যুর পরের জীবন এবং শেষ বিচারের দিনের প্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক অপরিহার্যতা প্রমাণিত হচ্ছে। দুনিয়ায় যখন থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, সত্য সম্পর্কে অসংখ্য মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এসব মতবিরোধের ভিত্তিতে বংশ গোত্র, জাতি ও পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোরই ভিত্তিতে বিভিন্ন মতাদর্শের ধারকরা নিজেদের জন্য আলাদা আলাদা ধর্ম, সামজ ও সভ্যতা তৈরী অথবা গ্রহণ করে নিয়েছে। এক একটি মতাদর্শের সমর্থন ও পক্ষপাতিত্ব হাজার হাজার লাখো লাখো বিভিন্ন সময় ধন, প্রাণ ইজ্জত-আবরু সবকিছু কুরবানী করে দিয়েছে। আর এ মতাদর্শের সমর্থকদের মধ্যে বহু সময় এমন মারাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে যে, তারা একদল অন্যদলকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবার চেষ্টা করেছে এবং যারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল তারা এ অবস্থায়ও নিজেদের দৃষ্টিভংগী পরিহার করেনি। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর মননশীল মতবিরোধের ক্ষেত্রে বিবেকের দাবী এই যে, এক সময় না এক সময় সঠিক ও নিশ্চিতভাবে প্রতিভাত হোক যথার্থই তাদের মধ্যে হক কি ছিল এবং বাতিল কি ছিল, সে সত্যপন্থী ছিল এবং সে মিথ্যাপন্থী। এ দুনিয়ায় এ যবনিকা সরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই দেখা যায় না। এ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাই এমন যে এখানে সত্য কোনদিন পর্দার বাইরে আসতে পারে না। কাজেই বিবেকের এ দাবী পূরণ করার জন্য ভিন্ন আরেকটি জগতের প্রয়োজন।
আর এটি শুধুমাত্র বিবেক-বুদ্ধির দাবীই নয় বরং নৈতিকতারও দাবী। কেননা, এসব মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব সংঘাতে বহুদল অংশ নিয়েছে। কেউ জুলুম করেছে এবং কেউ জুলুম সহ্য করেছে। কেউ কুরবানী দিয়েছে এবং কেউ সেই কুরবানী আদায় করে নিয়েছে। প্রত্যেকে নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী একটি নৈতিক দর্শন ও একটি নৈতিক দৃষ্টিভংগী অবলম্বন করেছে এবং তা থেকে কোটি কোটি মানুষের জীবন ভালো বা মন্দ প্রভাব গ্রহণ করেছে। শেষ পর্যন্ত এমন একটি সময় অবশ্যি হওয়া উচিত যখন এদের সবার নৈতিক ফলাফল ভালো বা মন্দের আকারে প্রকাশিত হবে। এ দুনিয়ার ব্যবস্থা যদি সঠিক ও পূর্ণাংগ নৈতিক ফলাফলের প্রকাশকে ধারণ করতে অপারগ হয় তাহলে অবশ্যি অন্য একটি দুনিয়া সৃষ্টি হওয়া উচিত যেখানে এ ফলাফলের প্রকাশ সম্ভব হতে পারে।
৩৬.
অর্থাৎ লোকেরা মনে করে, মরার পর মানুষকে পুনর্বার সৃষ্টি করা এবং সামনের পেছনের সমগ্র মানব-কূলকে একই সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত করা বড়ই কঠিন কাজ। অথচ আল্লাহর ক্ষমতা অসীম। নিজের কোন সংকল্প পূর্ণ করার জন্য তাঁর কোন সাজ-সরঞ্জাম, উপায়-উপকরণ ও পরিবেশের আনুকুল্যের প্রয়োজন হয় না। তাঁর প্রত্যেকটি ইচ্ছা শুধুমাত্র তাঁর নির্দেশেই পূর্ণ হয়। তাঁর নির্দেশই সাজ-সরঞ্জামের জন্ম দেয়। তাঁর নির্দেশেই উপায়-উপকরণের উদ্ভব হয়। তাঁর নির্দেশই তাঁর উদ্দেশ্য অনুযায়ী পরিবেশ তৈরী করে। বর্তমানে যে দুনিয়ার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে, এটিও নিছক হুকুম থেকেই অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং অন্য দুনিয়াটিও মুহূর্তকালের মধ্যে শুধুমাত্র একটি হুকুমেই জন্ম লাভ করতে পারে।