আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আত তওবা

১২৯ আয়াত

১০১ ) তোমাদের আশেপাশে যেসব বেদুইন থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মুনাফিক। অনুরূপভাবে মদীনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে এমন কিছু মুনাফিক, যারা মুনাফিকীতে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। তোমরা তাদেরকে চিন না, আমি চিনি তাদেরকে। ৯৭ শীঘ্রই আমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেবো। ৯৮ তারপর আরো বেশী বড় শাস্তির জন্য তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
وَمِمَّنْ حَوْلَكُم مِّنَ ٱلْأَعْرَابِ مُنَـٰفِقُونَ ۖ وَمِنْ أَهْلِ ٱلْمَدِينَةِ ۖ مَرَدُوا۟ عَلَى ٱلنِّفَاقِ لَا تَعْلَمُهُمْ ۖ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ ۚ سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٍۢ ١٠١
১০২ ) আরো কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের কাজকর্ম মিশ্র ধরনের কিছু ভাল, কিছু মন্দ। অসম্ভব নয়, আল্লাহ‌ তাদের প্রতি আবার মেহেরবান হয়ে যাবেন। কারণ, তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَءَاخَرُونَ ٱعْتَرَفُوا۟ بِذُنُوبِهِمْ خَلَطُوا۟ عَمَلًۭا صَـٰلِحًۭا وَءَاخَرَ سَيِّئًا عَسَى ٱللَّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيْهِمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌ ١٠٢
১০৩ ) হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো, (নেকীর পথে) তাদেরকে এগিয়ে দাও এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো। তোমার দোয়া তাদের সান্তনার কারণ হবে। আল্লাহ‌ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةًۭ تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٌۭ لَّهُمْ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣
১০৪ ) তারা কি জানে না, আল্লাহই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ‌ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়?
أَلَمْ يَعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ ٱلتَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِۦ وَيَأْخُذُ ٱلصَّدَقَـٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤
১০৫ ) আর হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাকো। আল্লাহ‌ তাঁর রসূল ও মুমিনরা তোমাদের কাজের ধারা এখন কেমন থাকে তা দেখবেন। ৯৯ তারপর তোমাদের তাঁর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে সবকিছু জানেন এবং তোমরা কি করতে তা তিনি তোমাদের বলে দেবেন। ১০০
وَقُلِ ٱعْمَلُوا۟ فَسَيَرَى ٱللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُۥ وَٱلْمُؤْمِنُونَ ۖ وَسَتُرَدُّونَ إِلَىٰ عَـٰلِمِ ٱلْغَيْبِ وَٱلشَّهَـٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ١٠٥
১০৬ ) অপর কিছু লোকের ব্যাপার এখনো আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় আছে, তিনি চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আবার চাইলে তাদের প্রতি নতুন করে অনুগ্রহ করবেন। আল্লাহ‌ সবকিছু জানেন তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। ১০১
وَءَاخَرُونَ مُرْجَوْنَ لِأَمْرِ ٱللَّهِ إِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَإِمَّا يَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ ١٠٦
১০৭ ) আরো কিছু লোক আছে, যারা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে (সত্যের দাওয়াতকে) ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, (আল্লাহর বন্দেগী করার পরিবর্তে) কুফরী করার জন্য মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং (এ বাহ্যিক ইবাদতগাহকে) এমন এক ব্যক্তির জন্য গোপন ঘাটি বানাবার উদ্দেশ্যে যে ইতিপূর্বে আল্লাহ‌ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। তারা অবশই কসম খেয়ে বলবে, ভালো ছাড়া আর কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। কিন্তু আল্লাহ‌ সাক্ষী, তারা একেবারেই মিথ্যেবাদী।
وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ مَسْجِدًۭا ضِرَارًۭا وَكُفْرًۭا وَتَفْرِيقًۢا بَيْنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًۭا لِّمَنْ حَارَبَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ مِن قَبْلُ ۚ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَآ إِلَّا ٱلْحُسْنَىٰ ۖ وَٱللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَـٰذِبُونَ ١٠٧
১০৮ ) তুমি কখনো সেই ঘরে দাঁড়াবে না। যে মসজিদে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তেতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই মসজিদটি দাঁড়ানোরই (ইবাদতের জন্য) তোমার পক্ষে অধিকতর সমীচীন। সেখানে এমন লোক আছে যারা পাক-পবিত্র থাকা পছন্দ করে এবং আল্লাহ‌ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন। ১০২
لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًۭا ۚ لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقْوَىٰ مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌۭ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا۟ ۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُطَّهِّرِينَ ١٠٨
১০৯ ) তাহলে তুমি কি মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ‌ ভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের উপর নিজের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করলো সে ভাল, না যে ব্যক্তি তার ইমারতের ভিত উঠালো একটি পতাকার স্থিতিহীন ফাঁপা প্রান্তের ওপর ১০৩ এবং তা তাকে নিয়ে সোজা জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়লো? এ ধরনের জালেমদের কে আল্লাহ‌ কখনো সোজা পথ দেখান না। ১০৪
أَفَمَنْ أَسَّسَ بُنْيَـٰنَهُۥ عَلَىٰ تَقْوَىٰ مِنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٍ خَيْرٌ أَم مَّنْ أَسَّسَ بُنْيَـٰنَهُۥ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٍۢ فَٱنْهَارَ بِهِۦ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ ١٠٩
১১০ ) তারা এই যে ইমারত নির্মাণ করেছে এটা সবসময় তাদের মনে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে (যার বের হয়ে যাওয়ার আর কোন উপায়ই এখন নেই) যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ১০৫ আল্লাহ অত্যন্তসচেতন, জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
لَا يَزَالُ بُنْيَـٰنُهُمُ ٱلَّذِى بَنَوْا۟ رِيبَةًۭ فِى قُلُوبِهِمْ إِلَّآ أَن تَقَطَّعَ قُلُوبُهُمْ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ١١٠
৯৭.
অর্থাৎ নিজেদের মুনাফিকী গোপন করার ব্যাপারে তারা এতই দক্ষতা অর্জন করেছে যে, নবী (সা.) নিজেও তাঁর অসাধারণ অন্তরদৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা সত্ত্বেও তাদেরকে চিনতে পারতেন না।
৯৮.
দ্বিগুণ শাস্তি মানে হচ্ছে, একদিকে যে দুনিয়ার প্রেমে মত্ত হয়ে তারা ঈমান ও আন্তরিকতার পরিবর্তে মুনাফিকী, ভণ্ডামী ও বিশ্বাসঘাতকতার নীতি অবলম্বন করেছে তা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং তারা ধন-সম্পদ, মর্যাদাও প্রতিপত্তি লাভের পরিবর্তে বরং শোচনীয় অমর্যাদা, লাঞ্ছনা ও ব্যর্থতার শিকার হবে। অন্যদিকে তারা যে সত্যের দাওয়াতকে ব্যর্থ ও অসফল দেখতে এবং নিজেদের চালবাজীর মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিতে চায় তা তাদের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের চোখের সামনে উন্নতি ও বিকাশ লাভ করতে থাকবে।
৯৯.
এখানে মিথ্যা ঈমানের দাবীদার ও গোনাহগার মু’মিনের পার্থক্য, পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তি ঈমানের দাবী করে, কিন্তু আসলে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিদের জামায়াতের ব্যাপারে আন্তরিক নয়, তার এ আন্তরিকতাহীনতার প্রমাণ যদি তার কার্যকলাপের মাধ্যমে পাওয়া যায়, তাহলে তার সাথে কঠোর ব্যবহার করা হবে। আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য সে কোন সম্পদ পেশ করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। সে মারা গেলে কোন মুসলমান তার জানাযার নামায পড়বে না এবং তার গোনাহ মাফের জন্য দোয়াও করবে না, সে তার বাপ বা ভাই হলেও। অন্যদিকে যে ব্যক্তি সত্যিকার মু’মিন কিন্তু এ সত্ত্বেও সে এমন কিছু কাজ করে বসেছে যা তার আন্তরিকাতাহীনতার প্রমাণ করে, এক্ষেত্রে সে যদি নিজের ভুল স্বীকার করে নেয় তাহলে তাকে মাফ করে দেয়া হবে। তার সদকা, দান-খয়রাত গ্রহণ করা হবে এবং তার ওপর রহমত নাযিলের জন্য দোয়াও করা হবে। এখন কোন ব্যক্তির আন্তরিকতাবিহীন কার্যকলাপের পরও তাকে নিছক একজন গোনাহগার মু’মিন গণ্য করতে হলে তাকে তিনটি মানদণ্ডে যাচাই করতে হবে। আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত এ মানদণ্ডগুলোর নিম্নরূপঃ

(১) নিজের ভুলের জন্য সে খোঁড়া অজুহাত ও মনগড়া ব্যাখ্যা পেশ করবে না। বরং যে ভুল হয়ে গেছে সহজ সরলভাবে তা মেনে নেবে।

(২) তার আগের কার্যকলাপ দেখা হবে। সে আন্তরিকতাহীনতার দাগী ও অপরাধী কিনা তা যাচাই করা হবে। যদি আগে সে ইসলামের জামায়াতের এক সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে এবং তার জীবনের সমস্ত কার্যকলাপে আন্তরিক সেবা, ত্যাগ, কুরবানী ও ভালো কাজে অগ্রবর্তী থাকার রেকর্ড থেকে থাকে, তাহলে ধরে নেয়া হবে যে, বর্তমানে যে ভুল সে করেছে তা ঈমান ও আন্তরিকতাহীনতার ফল নয় বরং তা নিছক সাময়িক সৃষ্ট একটি দুর্বলতা বা পদস্খলন ছাড়া আর কিছুই নয়।

(৩) তার ভবিষ্যত কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা হবে। দেখতে হবে, তার ভুলের স্বীকৃতি কি নিছক মৌখিক, না তার মধ্যে লজ্জার গভীর অনুভূতি রয়েছে। যদি নিজের ভুল সংশোধনের জন্য তাকে অস্থির ও উৎকণ্ঠিত দেখা যায় এবং তার প্রতিটি কথা থেকে এ কথা প্রকাশ হয় যে, তার জীবনে যে ঈমানী ত্রুটির চিত্র ভেসে উঠেছিল তাকে মুছে ফেলার ও তা সংশোধন করার জন্য সে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে যথার্থই লজ্জিত হয়েছে বলে মনে করা হবে। এ লজ্জা ও অনুশোচনাই হবে তার ঈমান ও আন্তরিকতার প্রমাণ।

মুহাদ্দিসগণ এ আয়াতগুলো নাযিলের পটভূমী হিসেবে যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা থেকে এ বিষয়বস্তুটি আয়নার মতো স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। তাঁরা বলেন, এ আয়াতগুলো আবু লুবাবাহ ইবনে আবদুল মুনযির ও তাঁর ছ'জন সাথীর প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছিল। হিজরতের আগে আকাবার বাইআতের সময় যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আবু লুবাবাহ ছিলেন তাদের একজন। বদর, ওহোদ ও অন্যান্য যুদ্ধে তিনি বরাবর অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময় মানসিক দুর্বলতার তার ওপর প্রধান্য বিস্তার করে এবং কোন প্রকার শরয়ী ওযর ছাড়াই তিনি ঘরে বসে থাকেন। তার অন্য সাথীরাও ছিলেন তারই মতো আন্তরিকতা সম্পন্ন। তারাও এ একই প্রকার দুর্বলতার শিকার হন। নবী (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন এবং যারা পিছনে থেকে গিয়েছিল তাদের সম্পর্কে আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের মতামত কি তা তারা জানতে পারলেন তখন তারা ভীষণভাবে অনুতপ্ত হলেন। কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদের আগেই তারা নিজেদেরকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে নেন এবং বলেন, আমাদের মাফ না করে দেয়া পর্যন্ত আমাদের জন্য আহার নিদ্রা হারাম। এ অবস্থায় আমাদের প্রাণ বায়ু বের হয়ে গেলেও আমরা তার পরোয়া করবো না। কয়েক দিন পর্যন্ত এভাবেই তারা বাঁধা অবস্থায় অনাহার অনিদ্রায় কাটান। এমনকি একদিন তারা বেহুশ হয়ে পড়ে যান। শেষে তাদের জানানো হলো, আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূল তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন। তারা নবী (সা.) কে বলেন, ঘরের যে আরাম আয়েশ আমাদের ফরয থেকে গাফেল করে দিয়েছিল তা এবং নিজেদের সমস্ত ধন-সম্পদ আমরা আল্লাহর পথে দান করে দেবো, এটাও আমাদের তাওবার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নবী (সা.) বলেন, সমস্ত ধন-সম্পদ দান করে দেবার দরকার নেই, শুধুমাত্র এক তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। তদনুসারে তখনই তারা সেগুলো আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দেন। এ ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার জানা যায়, কোন ধরনের দুর্বলতা আল্লাহ‌ মাফ করেন। উল্লিখিত মহান সাহাবীগণ এ ধরনের আন্তরিকতাহীন আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন না। বরং তাদের বিগত জীবনের কার্যকলাপ তাদের ঈমানী নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার দৃষ্টান্তে পরিপূর্ণ ছিল। এবারেও রসূল ﷺ এর নিকট তাদের কেউ মিথ্যা অজুহাত পেশ করেননি। বরং নিজেদের ভুলকে নিজেরাই অকপটে ভুল হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তাঁরা ভুলের স্বীকারোক্তি সহকারে নিজেদের কার্য ধারার মাধ্যমে একথা প্রমাণ করে দিয়েছের যে, তারা যথার্থই লজ্জিত হয়েছেন এবং নিজেদের গোনাহ মাফ করাবার জন্য অত্যন্ত অস্থির ও উদ্ধিগ্ন।

এখানে আলোচ্য আয়াতটিতে আর একটি মূল্যবান কথা বলা হয়েছে। সে কথাটি হচ্ছে, গোনাহ মাফের জন্য মুখ ও অন্তর দিয়ে তাওবা করার সাথে সাথে বাস্তব কাজের মাধ্যমেও তাওবা করতে হবে। আর আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ দান করা হচ্ছে বাস্তব তাওবার একটি পদ্ধতি। এভাবে নফসের মধ্যে যে দূষিত ময়লা আবর্জনা লালিত হচ্ছিল এবং যার কারণে মানুষ গোনাহে লিপ্ত হয়েছিল তা দূর হয়ে যায় এবং ভালো ও কল্যাণের দিকে ফিরে যাবার যোগ্যতা বেড়ে যায়। গোনাহ করার পর তা স্বীকার করার ব্যাপারটি এমন যেমন এক ব্যক্তি গর্তের মধ্যে পড়ে যায় এবং নিজের পড়ে যাওয়াটা সে অনুভব করতে পারে। তারপর নিজের গোনাহের ওপর তার লজ্জিত হওয়াটা এ অর্থ বহন করে যে, এ গর্তকে সে নিজের অবস্থানের জন্য বড়ই খারাপ জায়গা মনে করে এবং

১০০.
এর অর্থ হচ্ছে, চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিটি বিষয় সম্পূর্ণরূপে স্বয়ং আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। আর আল্লাহ‌ এমন এক সত্তা যার কাছে কোন কিছু গোপন থাকতে পারে না। এ জন্য কোন ব্যক্তি দুনিয়ায় তার ভন্ডামী ও মুনাফিকী গোপন করতে সক্ষমও হয় এবং মানুষ যেসব মানদণ্ডে কারোর ঈমান ও আন্তরিকতা পরখ করতে পারে সেসবগুলোতে পুরোপুরি উত্তির্ণ হলেও একথা মনে করা উচিত নয় যে, সে মুনাফিকীর শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে গেছে।
১০১.
এদের ব্যাপারটি ছিল সন্দেহ পূর্ণ। এদেরকে না মুনাফিক বলে চিহ্নিত করা যেতো আর না বলা যেতো গোনাহগার মু’মিন। এ দু’টি জিনিসের কোনটিরই আলামত তখনো তাদের মধ্যে পুরোপরি ফুটে উঠেনি। তাই আল্লাহ‌ তাদের ব্যাপারটি মুলতবী রাখেন। মুলতবী রাখার অর্থ এই নয় যে, আসলে আল্লাহর কাছেও তাদের ব্যাপারটি সন্দেহ পূর্ণ ছিল। বরং এর অর্থ এই যে, কোন ব্যক্তি বা দলের ব্যাপারে মুসলমানদের নিজেদের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে অতিমাত্রায় তাড়াহুড়া করা চাই না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এমন ধরনের আলামতের মাধ্যমে তার অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে যায়, যা অদৃশ্য জ্ঞান দিয়ে নয় বরং যুক্তি ও অনুভূতি দিয়ে পরখ করা যেতে পারে, ততক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত।
১০২.
নবী (সা.) মদীনায় আগমনের আগে খাযরাজ গোত্রে আবু আমের নামে এক ব্যক্তি ছিল। জাহেলী যুগে সে খৃস্টান রাহেবের (সাধু) মর্যাদা লাভ করেছিল। তাকে আহলে কিতাবদের আলেমদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তি গণ্য করা হতো। অন্যদিকে সাধুগিরির কারণে পন্ডিত সুলভ মর্যাদার পাশাপাশি তার দরবেশীর প্রভাবও মদীনা ও আশেপাশের এলাকার অশিক্ষিত আরব সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। নবী (সা.) যখন মদীনায় পৌঁছলেন তখন সেখানে বিরাজ করছিল আবু আমেরের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কর্তৃত্বের রমরমা অবস্থা। কিন্তু এ জ্ঞান, বিদ্যাবত্তা ও দরবেশী তার মধ্যে সত্যানুসন্ধিৎসা ও সত্যকে চেনার মতো ক্ষমতা সৃষ্টি করার পরিবর্তে উল্টো তার জন্য একটি বিরাট অন্তরাল সৃষ্টি করলো। আর এ অন্তরাল সৃষ্টির ফলে রসূলের আগমনের পর সে নিজে ঈমানের নিয়ামত থেকে শুধু বঞ্চিতই রইল না। বরং রসূলকে নিজের ধর্মীয় পৌরোহিত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং নিজের দরবেশী ও সাধু বৃত্তিক কর্মকান্ডের শত্রুমনে করে তার ও তার সমুদয় কার্যক্রমের বিরোধিতায় নেমে পড়লো। প্রথম দু'বছর তার আশা ছিল কুরাইশী কাফেরদের শক্তি ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হবে। কিন্তু বদরের যুদ্ধে কুরাইশরা চরমভাবে পরাজিত হলো। এ অবস্থায় সে আর নীরব থাকতে পারলো না। সেই বছরই সে মদীনা থেকে বের হয়ে পড়লো। সে কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্রের মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করলো। যেসব কুচক্রীর চক্রান্ত ও যোগসাজশে ওহোদ যুদ্ধ বাধে, তাদের মধ্যে এ আবু আমেরও অন্যমত। বলা হয়ে থাকে ওহোদের যুদ্ধের ময়দানে সে অনেকগুলো গর্ত খুঁড়েছিল। এরই একটির মধ্যে পড়ে গিয়ে নবী (সা.) আহত হয়েছিলেন। তারপর আহযাব যুদ্ধের সময় চারদিকে থেকে যে সেনাবাহিনী মদীনার ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল তাকে আক্রমণে উস্কে দেয়ার ব্যাপারেও তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এরপর হুনাইন যুদ্ধ পর্যন্ত আরব মুশরিক ও মুসলমানদের মধ্যে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, সব গুলোতেই এ ঈসায়ী দরবেশ ইসলামের বিরুদ্ধে মুশরিক শক্তির সক্রিয় সহয়ক ছিল। শেষ পর্যন্ত আরবের কোন শক্তি ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে পারবে বলে তার আর আশা রইল না। কাজেই সে আরব দেশ ত্যাগ করে রোমে চলে যায় এবং আরব থেকে যে “বিপদ” মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে সে কাইসাকে (সীজার) অবহিত করে। এ সময়ই মদীনায় খবর পৌঁছে যে, কাইসার আরব আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এরই প্রতিবিধান করার জন্য নবী (সা.) কে তাবুক অভিযান করতে হয়।

ঈসায়ী রাহেব আবু আমেরের এ ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় তার সাথে শরীক ছিল মদীনার মুনাফিক গোষ্ঠির একটি দল। আবু আমেরকে তার ধর্মীয় প্রভাব ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে রোমের কাইসার ও উত্তরাঞ্চলের খৃস্টান আরব রাজ্যগুলোর সামরিক সাহায্য লাভ করতেও এ মুনাফিকরা তাকে পরামর্শ দেয় ও মদদ যোগায়। যখন সে রুমের পথে রওয়ানা হচ্ছিল তখন তার ও এ মুনাফিকদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হলো। এ চুক্তি অনুযায়ী স্থির হলো, যে মদীনায় তারা নিজেদের একটি পৃথক মসজিদ তৈরী করে নেবে। এভাবে সাধারণ মুসলমানদের থেকে আলাদা হয়ে মুনাফিক মুসলমানদের এমন একটি স্বতন্ত্র জোট গড়ে উঠবে যা ধর্মীয় আলখেল্লায় আবৃত থাকবে। তার প্রতি সহজে কোন প্রকার সন্দেহ করা যাবে না। সেখানে শুধু যে, মুনাফিকরাই সংঘটিত হবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য পরামর্শ করবে তা নয়। বরং আবু আমেরের কাছ থেকে যেসব এজেন্ট খবর ও নির্দেশ নিয়ে আসবে তারাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে নিরীহ ফকীর ও মুসাফিরের বেশে এ মসজিদে অবস্থান করতে থাকবে। এ ন্যাক্করজনক ষড়যন্ত্রটির ভিত্তিতেই এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এবং এরই কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে।

মদীনায় এ সময় দু’টি মসজিদ ছিল। একটি মসজিদে কুবা। এটি ছিল নগর উপকণ্ঠে। অন্যটি ছিল মসজিদে নববী। শহরের অভ্যন্তরে ছিল এর অবস্থান। এ দু’টি মসজিদ বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় একটি মসজিদ নির্মাণ করার কোন প্রয়োজনই ছিল না। আর এটা কোন যুক্তিহীন ধর্মীয় আবেগের যুগ ছিল না যে, প্রয়োজন থাকুক ব না থাকুক মসজিদ নামে নিছক একটি ইমারত তৈরী করে দিলেই তখন নেকীর কাজ বলে মনে করা হবে। বরং একটি নতুন মসজিদ তৈরী করার অর্থই ছিল মুসলমানদের জামায়াতের মধ্যে অনর্থক বিভেদ সৃষ্টি করা। একটি সত্যনিষ্ঠা ইসলামী ব্যবস্থা কোন ক্রমেই এটা বরদাশত করতে পারে না। তাই তারা নিজেদের পৃথক মসজিদ তৈরী কারার আগে তার প্রয়োজনের বৈধতা, প্রমাণ করতে বাধ্য ছিল। এ উদ্দেশ্যে তারা নবী (সা.) এর সামনে এ নতুন নির্মাণ কাজের প্রয়োজন পেশ করে। এ প্রসঙ্গে তারা বলে, বৃষ্টি বাদলের জন্য এবং শীতের রাতে সাধারণ লোকদের বিশেষ করে উল্লেখিত দু’টি মসজিদ থেকে দূরে অবস্থানকারী বৃদ্ধ, দুর্বল ও অক্ষম লোকদের প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে হাজিরা দেয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই আমরা শুধুমাত্র নামাযীদের সুবিধার্থে এ নতুন মসজিদটি নির্মাণ করতে চাই।

মুখে এ পবিত্র ও কল্যাণমূলক বাসনার কথা উচ্চারণ করে যখন এ “দ্বিরার”, (ক্ষতিকর) মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হলো তখন এ দুর্বৃত্তরা নবী (সা.) এর দরবারে হাযির হলো এবং সেখানে একবার নামায পরিয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করার জন্য তার কাছে আবেদন জানালো। কিন্তু আমি এখন যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আছি এবং শীঘ্রই আমাকে একটি বড় অভিযানে বের হতে হবে, সেখান থেকে ফিরে এসে দেখা যাবে, একথা বলে তিনি তাদের আবেদন এড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাবুক রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং তার রওয়ানা হওয়ার পর এ মুনাফিকরা এ মসজিদে নিজেদের জোট গড়ে তূলতে এবং ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগলো।

এমন কি তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল ওদিকে রোমানদের হাতে মুসলমানদের মুলোৎপাটনের সাথে সাথেই এদিকে এরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মাথায় রাজ মুকূট পরিয়ে দেবে। কিন্তু তবুকের যা ঘটলো তাতে তাদের সে আশার গুড়ে বালি পড়লো। ফেরার পথে নবী (সা.) যখন মদীনার নিকটবর্তী “যী আওয়ান” নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন এ আয়াত নাযিল হলো। তিনি তখনই কয়েকজন লোককে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন। তাদেরকে দায়িত্ব দিলেন, তার মদীনায় পৌঁছার আগেই যেন তারা দ্বিরার মসজিদটি ভেঙ্গে ধুলিস্মাত করে দেয়।

১০৩.
এখানে কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে,جرف(জুরুফ)। আরবী ভাষায় সাগর বা নদীর এমন কিনারাকে জুরুফ বলা হয় স্রোতের টানে যার তলা থেকে মাটি সরে গেছে এবং ওপরের অংশ কোন বুনিয়াদ ও নির্ভর ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। যারা আল্লাহকে ভয় না করা এবং তার সন্তুষ্টির পরোয়া না করার ওপর নিজেদের কার্যক্রমের ভিত গড়ে তোলে, তাদের জীবন গঠনকে এখানে এমন একটি ইমারতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যা এমনি ধরনের একটি অন্তঃসরা শূন্য অস্থিতিশীল সাগর কিনারে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি একটি নজিরবিহীন উপমা। এর চাইতে সুন্দরভাবে এ অবস্থার আর কোন চিত্র, আকা সম্ভব নয়। এর সমগ্র অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে বুঝে নিতে হবে যে, দুনিয়ার জীবনের যে উপরিভাগের ওপর মু’মিন, মুনাফিক কাফের, সৎকর্মশীল, দুষ্কৃতকারী তথা সমস্ত মানুষ কাজ করে, তা মাটির উপরিভাগের স্তরের মতো যার ওপর দুনিয়ার সমস্ত ইমারত নির্মাণ করা হয়ে থাকে। এ স্তরের মধ্যে কোন স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নেই। বরং এর নীচে নিরেট জমি বিদ্যমান থাকার ওপরই এর স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। যে স্তরের নীচের মাটির কোন জিনিসের যেমন নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে তার ওপর যদি কোন মানুষ (যে মাটির প্রকৃত অবস্থা জানে না) বাহ্যিক অবস্থায় প্রতারিত হয়ে নিজের গৃহ নির্মাণ করে তাহলে তা তার গৃহসহ ধ্বসে পড়বে এবং সে কেবল নিজেই ধ্বংস হবে না। বরং এ অস্থিতিশীল ভিতের ওপর নির্ভর করে নিজের জীবনের যা কিছু পুঁজিপাট্রা সে সংশ্লিষ্ট গৃহের মধ্যে জমা করেছিল সবই এ সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়ার জীবনের এ বাহ্যিক স্তরটিরও এ উপমাটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। এ স্তরটির ওপরই আমরা সবাই আমাদের জীবনের যাবতীয় কার্যক্রমের ইমারত নির্মাণ করি। অথচ এর নিজের কোন স্থিতি ও স্থায়িত্ব নেই। বরং আল্লাহর ভয়তার সামনে জবাবদিহির অনুভূতি এবং তার ইচ্ছা ও মর্জি মতো চলার শক্ত ও নিরেট পাথর খণ্ড তার নীচে বসানো থাকে, এরই ওপর তার মজবুতী ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। যে অজ্ঞ ও অপরিণামদর্শী মানুষ নিছক দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকের ওপর ভরসা করে আল্লাহর ভয়ে ভীত না হয়ে এবং তার সন্তোষ লাভের পরোয়া না করে দুনিয়ায় কাজ করে যায় সে আসলে নিজের জীবন গঠনের বুনিয়াদ নীচে থেকেই অন্তঃসার শূন্য করে দেয়। তার শেষ পরিণতি এছাড়া আর কিছুই নয়, যে ভিত্তিহীন যে উপরি স্তরের ওপর সে তার সারা জীবনের সঞ্চয় জমা করেছে। একদিকে অকস্মাৎ তা ধ্বসে পড়বে এবং তাকে তার জীবনের সমস্ত সম্পদসহ ধ্বংস ও বরবাদ করে দেবে।
১০৪.
সোজা পথ অর্থাৎ যে পথে মানুষ সফলকাম হয় এবং যে পথে অগ্রসর হয়ে সে যথার্থ সাফল্যের মনযিলে পৌঁছে যায়।
১০৫.
অর্থাৎ তারা মুনাফিক সুলভ ধোঁকা ও প্রতারণার বিরাট অপরাধ করে নিজেদের অন্তরকে চিরকালের জন্য ঈমানী যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করেছে। বেঈমানী ও নাফরমানীর রোগ তাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুপ্রবেশ করেছে। যতদিন তাদের এ অন্তর থাকবে ততদিন এ রোগ ও সেখানে অবস্থান করবে। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার জন্য যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে মন্দির নির্মাণ করে অথবা তার দ্বীনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ব্যারিকেড ও ঘাটি তৈরী করে তার হেদায়াত ও কোন না কোন সময় সম্ভব। কারণ তার মধ্যে স্পষ্টবাদিতা, আন্তরিকতা ও নৈতিক সাহসের সূক্ষ্মতার উপাদান মৌলীক ভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। আর এ উপাদান সত্য ও ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার জন্য ঠিক তেমনিভাবে কাজে লেগে যেমন মিথ্যা ও অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার জন্য কাজে লাগে। কিন্তু যে কাপুরুষ, মিথ্যুক ও প্রতারক আল্লাহর নাফরমাণী ও হুকুম অমান্য করার জন্য মসজিদে নির্মাণ করে এবং আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আল্লাহর প্রশস্তির প্রতারণামূলক পেষাক পরিধান করে, মুনাফিকীর ঘুণে তার চরিত্র কুরে কুরে খেয়ে ফেলেছে। আন্তরিকতার সাথে ঈমানের বোঝা বহন করার ক্ষমতা সে কোথা থেকে পাবে?
অনুবাদ: