আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আর রহমান

৭৮ আয়াত

৩১ ) ওহে পৃথিবীর দুই বোঝা ২৯ তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমি অতি শীঘ্রই তোমাদের প্রতি একাগ্রভাবে মনোনিবেশ করবো। ৩০
سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَ ٱلثَّقَلَانِ ٣١
৩২ ) (তারপর দেখবো) তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে অস্বীকার করো? ৩১
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٣٢
৩৩ ) হে জ্বীন ও মানব গোষ্ঠী, তোমরা যদি পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলের সীমা পেরিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে পার তাহলে গিয়ে দেখ। পালাতে পারবে না, এ জন্য বড় শক্তি প্রয়োজন। ৩২
يَـٰمَعْشَرَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ إِنِ ٱسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوا۟ مِنْ أَقْطَارِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ فَٱنفُذُوا۟ ۚ لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَـٰنٍۢ ٣٣
৩৪ ) তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অসীম ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٣٤
৩৫ ) (যদি পালানেরা চেষ্টা করো তাহলে) তোমাদের প্রতি আগুনের শিখা এবং ধোঁয়া ৩৩ ছেড়ে দেয়া হবে তোমরা যার মোকাবিলা করতে পারবে না।
يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌۭ مِّن نَّارٍۢ وَنُحَاسٌۭ فَلَا تَنتَصِرَانِ ٣٥
৩৬ ) হে জ্বীন ও মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٣٦
৩৭ ) অতঃপর (কি হবে সেই সময়) যখন আসমান ফেটে চৌচির হয়ে যাবে এবং লাল চামড়ার মত লোহিত বর্ণ ধারণ করবে? ৩৪
فَإِذَا ٱنشَقَّتِ ٱلسَّمَآءُ فَكَانَتْ وَرْدَةًۭ كَٱلدِّهَانِ ٣٧
৩৮ ) হে জ্বীন ও মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ ক্ষমতা অস্বীকার করবে? ৩৫
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٣٨
৩৯ ) সে দিন কোন মানুষ ও কোন জিনকে তার গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হবে না। ৩৬
فَيَوْمَئِذٍۢ لَّا يُسْـَٔلُ عَن ذَنۢبِهِۦٓ إِنسٌۭ وَلَا جَآنٌّۭ ٣٩
৪০ ) তখন (দেখা যাবে) তোমরা দুই গোষ্ঠী তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করো। ৩৭
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٠
২৯.
মূল আয়াতে ছাকালান ثقلان শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মূল ধাতু ثقلثقل অর্থ বোঝা। আর ثقل বলা হয় এমন বোঝাকে যা সওয়ারী বা বাহনের ওপর চাপানো হয়েছে ثقل শব্দের শাব্দিক অনুবাদ হবে “দুই বোঝা” এখানে এ শব্দটি জ্বীন ও মানুষকে বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, এ দু’টি জাতিকেও পৃথিবী পৃষ্ঠে বোঝা হিসেবে চাপানো হয়েছে এবং পূর্ব থেকে সেই সব জ্বীন ও মানুষকে উদ্দেশ্য করেই কথা বলা হচ্ছে, যারা তাদের রবের আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাছাড়া পরবর্তী ৪৫ আয়াতেও তাদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। সেজন্য তাদেরকে ايها الثقلان বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ স্রষ্টা যেন তাঁর এই দু’টি অযোগ্য সৃষ্টিকে বলছেনঃ তোমরা যারা আমার পৃথিবীর ওপর বোঝা হয়ে আছ, তোমাদের সাথে বুঝাপড়ার জন্য অবসর গ্রহণ করবো।
৩০.
এখন আল্লাহ‌ তা’আলা এমন ব্যস্ত যে এসব অবাধ্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করার অবকাশ তিনি পান না, একথার অর্থ তা নয়। প্রকৃতপক্ষে একথার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ‌ একটি বিশেষ সময়সূচী নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সেই সময়সূচী অনুসারে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তিনি এ পৃথিবীতে মানুষ ও জিনদের বংশের পর বংশ সৃষ্টি করতে থাকবেন এবং তাদেরকে পৃথিবীর এ পরীক্ষাগারে এনে কাজ করার সুযোগ দেবেন। তারপর একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার এ ধারা হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হবে এবং সে সময়ে বিদ্যমান সমস্ত জ্বীন ও মানুষকে একই সময়ে হঠাৎ ধ্বংস করে দেয়া হবে। তারপর মানব ও জিন উভয় জাতির জবাবদিহির জন্য তার কাছে আরো একটি সময় নির্দিষ্ট করা আছে। সেই সময় জ্বীন ও মানব জাতির সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ লোকদেরকে পুনরায় জীবিত করে একই সময় একত্রিত করা হবে। এ সময়সূচীর প্রতি লক্ষ রেখে বলা হয়েছে, এখনো আমি প্রথম পর্যায়ের কাজ করছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের সময় এখনো আসেনি। তাই তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করার কোন প্রশ্নই আসে না। তবে ঘাবড়াবেন না। খুব শীঘ্রই সে সময়টি এসে যাচ্ছে যখন আমি তোমাদের খবর নেয়ার জন্য অবসর নেব। এখানে অবসরহীনতার অর্থ এই নয় যে, এখন কোন কাজ আল্লাহ‌ তা’আলাকে এমনভাবে ব্যস্ত রেখেছে যে, অন্য কাজ করার অবকাশই তিনি পাচ্ছেন না। বরং এর ধরন ও প্রকৃতি হচ্ছে, যেমন কেউ বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য একটি সময়সূচী প্রস্তুত করে রেখেছেন এবং সেই অনুসারে যে কাজের সময় এখনো আসেনি সে কাজ সম্পর্কে বলছেন, আমি সে কাজের জন্য আদৌ প্রস্তুত নই।
৩১.
এখানে الاء শব্দটিকে “অসীম ক্ষমতা” অর্থেও গ্রহণ করা যেতে পারে। বক্তব্যের ধারাবাহিকতার প্রতি লক্ষ করলে আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে এ দু’টি অর্থই সঠিক বলে মনে হয়। একটি অর্থগ্রহণ করলে তার সারকথা দাঁড়ায় এই যে, আজ তোমরা আমার নিয়ামতের নাশোকরী করছো এবং কুফর, শিরক, নাস্তিকতা, পাপাচার ও নাফরমানীর বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নানা রকমের নেমকহারামী করে চলেছো। কিন্তু কাল যখন জবাবদিহির পালা আসবে তখন দেখবো আমার কোন কোন নিয়ামতকে তোমরা আকস্মিক দুর্ঘটনা কিংবা নিজেদের যোগ্যতার ফল বা কোন দেব-দেবী অথবা বুযুর্গের অনুগ্রহের দান বলে প্রমাণ করো। অন্য অর্থটি গ্রহণ করলে তার সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, আজ তোমরা কিয়ামত, হাশর-নাশর, হিসেব-নিকেশ এবং জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে হাসি-তামাশা ও ঠাট্রা-বিদ্রূপ করছো এবং নিজ থেকেই এ অমূলক ধারণা নিয়ে বসে আছ যে, এরূপ হওয়া সম্ভবই নয়। কিন্তু আমি যখন তোমাদেরকে পরিবেষ্ঠিত করে ধরে আনবো এবং আজ যা তোমরা অস্বীকার করছো তা সবই তোমাদের সামনে এসে হাজির হবে সে সময় আমি দেখে নেব তোমরা আমার কোন কোন অসীম ক্ষমতাকে অস্বীকার করে থাকো।
৩২.
যমীন ও আসমান অর্থ গোটা সৃষ্টিজগত অথবা অন্য কথায় আল্লাহর প্রভুত্ব। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা পাওয়ার সাধ্য তোমাদের নেই। যে জবাবদিহি সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা হচ্ছে তার সময় যখন আসবে তখন তোমরা যেখানেই থাক না কেন পাকড়াও করে আনা হবে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তোমাদেরকে আল্লাহর প্রভুত্বাধীন এলাকা থেকে চলে যেতে হবে। কিন্তু সে ক্ষমতা তোমাদের নেই। তোমরা যদি মনে এ ধরনের অহমিকা পোষণ করে থাক তাহলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে দেখ।
৩৩.
মূল আয়াতে شواظنحاس শব্দ দু’টি ব্যবহৃত হয়েছে। এমন নিরেট অগ্নি-শিখাকে شواظ বলা হয় যার মধ্যে ধোঁয়া থাকে না আর এমন নিরেট ধোঁয়াকে (نحاس বলা হয় যার মধ্যে অগ্নিশিখা থাকে না। জ্বীন ও মানুষ যখন আল্লাহ‌ তা’আলার সামনে জবাবদিহি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করবে তখন তাদের প্রতি একের পর এক এ দু’টি জিনিস নিক্ষেপ করা হবে।
৩৪.
এখানে কিয়ামতের দিনের কথা বলা হয়েছে। আসমান বিদীর্ণ হওয়ার অর্থ মহাকাশ বা মহাবিশ্বের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ না থাকা, মহাকাশের সমস্ত সৌরজগতের বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া, মহাজগতের সময় নিয়ম-শৃংখলা ধ্বংস হয়ে যাওয়া। আরো বলা হয়েছে, সে সময় আসমান লাল চামড়ার মত বর্ণধারণ করবে। অর্থাৎ সেই মহাপ্রলয়ের সময় যে ব্যক্তি পৃথিবী থেকে আসমানের দিকে তাকাবে তার মনে হবে গোটা উর্ধজগতে যেন আগুন লেগে গিয়েছে।
৩৫.
অর্থাৎ আজ তোমরা বলছো কিয়ামত সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের মতে আল্লাহ‌ তা’আলা কিয়ামত সংঘটিত করতে সক্ষম নন। কিন্তু যখন তা সংঘটিত হবে এবং আজ তোমাদেরকে যে খবর দেয়া হচ্ছে নিজের চোখে তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন আল্লাহর কোন কোন ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
৩৬.
পরবর্তী আয়াতের অর্থাৎ “চেহারা দেখেই সেখানে অপরাধীদের চেনা যাবে” কথাটিই এর ব্যাখ্যা। অর্থাৎ সেই মহাসমাবেশে সমস্ত পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানুষকে একত্রিত করা হবে। অপরাধীদের চেনার জন্য সেখানে জনে জনে একথা জিজ্ঞেস করার দরকার হবে না যে, তারা কে কে অপরাধী কিংবা কোন জ্বীন ও মানুষকে সে অপরাধী কিনা একথা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়বে না। অপরাধীদের শুষ্ক ম্লানমুখ ভীতি ভরা দু’টি চোখ, অস্থির অপ্রস্তুত ভাবভঙ্গি এবং ঘর্মসিক্ত হওয়াই তাদের অপরাধী হওয়ার গোপন রহস্য উদঘাটিত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। অপরাধী ও নিরপরাধ ও উভয় শ্রেণীর লোকের একটি দল যদি পুলিশের কবলে পড়ে তাহলে নিরপরাধ লোকদের চেহারা প্রশান্তি ও নিরুদ্বিগ্নতা এবং অপরাধীদের চেহারার অস্থিরতা ও উদ্বিগ্নতা প্রথম দর্শনেই বলে দেবে ঐ দলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ। দুনিয়াতে এ নিয়ম কোন কোন সময় ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। কারণ দুনিয়ার পুলিশের ন্যায় নিষ্ঠতার ব্যাপারে মানুষ আস্থা রাখতে পারে না। তাদের হাতে বরং অপরাধীদের চেয়ে নিরপরাধরাই বারবার বেশী করে হয়রানির শিকার হয়। তাই পৃথিবীতে পুলিশের কবলে পড়ে ভদ্র ও নিরপরাধ লোকদের অধিক ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়া সম্ভব। কিন্তু আখেরাতে আল্লাহ‌ তা’আলার ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিটি ভদ্র ও নিরপরাধ ব্যক্তিরই পূর্ণ আস্থা থাকবে। এ ধরনের অস্থিরতা ও উদ্বেগ থাকবে কেবল তাদেরই যাদের নিজের বিবেকই তাদের অপরাধী সম্পর্কে অবহিত থাকবে। হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়া মাত্র তারা এ ব্যাপারে স্থির নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, এখন তাদের সেই দুর্ভাগ্য এসে গিয়েছে যাকে তারা অসম্ভব ও সন্দেহজনক মনে করে দুনিয়াতে অপরাধ করে বেড়িয়েছে।
৩৭.
কুরআনের দৃষ্টিতে অপরাধের প্রকৃত ভিত্তি হলো, বান্দা আল্লাহর দেয়া যেসব নিয়ামত ভোগ করছে সেসব নিয়ামত সম্পর্কে তার এ ধারণা পোষণ যে, তা কারো দেয়া নয়, বরং সে এমনিই তা লাভ করেছে। কিংবা এসব নিয়ামত আল্লাহর দান নয়, বরং নিজের যোগ্যতা ও সৌভাগ্যের ফল। অথবা একথা মনে করা যে, এসব নিয়ামত আল্লাহর দান বটে, কিন্তু সেই আল্লাহর তাঁর বান্দার ওপর কোন অধিকার নেই। অথবা আল্লাহ‌ নিজে তার প্রতি এসব অনুগ্রহ দেখাননি। বরং অন্য কোন সত্তা তাকে দিয়ে তা করিয়েছেন। এসব ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে মানুষ আল্লাহ‌ বিমুখ এবং তাঁর আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে পৃথিবীতে এমন সব কাজ-কর্ম করে আল্লাহ‌ যা করতে নিষেধ করেছেন এবং সেসব কাজ করে না, আল্লাহ‌ যা করতে আদেশ দিয়েছেন। এ বিচারেই প্রতিটি অপরাধ ও প্রতিটি গোনাহর মূলগতভাবে আল্লাহ‌ তা’আলার দান ও অনুগ্রহের অস্বীকৃতি ও অবমাননা। এক্ষেত্রে কেউ মুখে তা মানুক বা অস্বীকার করুক তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু প্রকৃতই যে ব্যক্তি অস্বীকৃতি ও অবমাননার ইচ্ছা ও মনোবৃত্তি পোষণ করে না, বরং তার মনের গভীরে তার সত্য হওয়ার বিশ্বাস সদা, বর্তমান, মানবিক দুর্বলতার কারণে কোন সময় তার দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেলে সে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তা থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। এ জিনিসটি তাকে অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়া আর সব অপরাধীই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিয়ামতসমূহ অবিশ্বাসকারী এবং তাঁর দয়া ও অনুগ্রহসমূহ অস্বীকারকারী। এ কারণে আল্লাহ‌ তা’আলা বলেছেনঃ যখন তোমরা অপরাধী হিসেবে ধরা পড়বে তখন আমি দেখবো তোমরা আমার কোন কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করছো। একথাটিই সূরা “তাকাসূরে” এভাবে বলা হয়েছেঃ () তোমাদেরকে যেসব নিয়ামত দেয়া হয়েছিল সেদিন ঐ গুলো সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অর্থাৎ জিজ্ঞেস করা হবে, আমিই তোমাদেরকে এসব নিয়ামত দিয়েছিলাম কিনা! ঐ সব নিয়ামত লাভ করার পর তোমরা তোমাদের অনুগ্রহকারীর প্রতি কি আচরণ করেছিলে, আর ঐ সব নিয়ামতকে কিভাবে কাজে লাগিয়েছিলে?
অনুবাদ: