يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُحَرِّمُوا۟ طَيِّبَـٰتِ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوٓا۟ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন সেগুলো হারাম করে নিয়ো না। ১০৪ আর সীমালংঘন করো না। ১০৫ সীমা-লংঘনকরীদেরকে আল্লাহ ভীষণভাবে অপছন্দ করেন।
১০৪
এ আয়াতে দু’টি কথা বলা হয়েছে। এক, তোমরা নিজেরাই কোন জিনিস হালাল ও হারাম গণ্য করার অধিকারী হয়ে বসো না। আল্লাহ যেটি হালাল করেছেন সেটি হালাল এবং আল্লাহ যেটি হারাম করেছেন সেটি হারাম। নিজেদের ক্ষমতা বলে তোমরা নিজেরা যদি কোন হালালকে হারাম করে ফেলো তাহলে আল্লাহর আইনের পরিবর্তে তোমরা নফসের ও প্রবৃত্তির আইনের অনুগত গণ্য হবে। দুই, খৃস্টীয় সন্ন্যাসী, হিন্দু যোগী, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ইশরাকী তাসাউফ পন্থীদের মতো বৈরাগ্য, সংসার বিমুখতা ও দুনিয়ার বৈধ স্বাধ আস্বাদন পরিহার করার পদ্ধতি অবলম্বন করো না। ধর্মীয় মানসিকতার অধিকারী সৎস্বভাব সম্পন্ন লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে এ প্রবণতা দেখা গেছে যে, শরীর ও প্রবৃত্তির অধিকার আদায় ও চাহিদা পূরণ করাকে তারা আধ্যাত্মিক উন্নতির অন্তরায় মনে করে থাকেন। তাদের ধারণা, নিজেকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করা, নিজের প্রবৃত্তিকে পার্থিব ভোগ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা এবং দুনিয়ার জীবন যাপনের বিভিন্ন উপায়-উপকরণের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা মূলত একটি মহৎ কাজ এবং এছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে না। সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যেও কেউ কেউ এ মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। একবার নবী ﷺ জানতে পারলেন, কোন কোন সাহাবী অঙ্গীকার করেছেনঃ তারা সর্বক্ষণ রোযা রাখবেন, রাতে বিছানায় ঘুমাবেন না বরং সারা রাত জেগে ইবাদাত করবেন, গোশত, তেল, চর্বি, ঘি, ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না, নারীদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। একথা শুনে তিনি একটি ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ “আমাকে এ ধরনের কাজ করার হুকুম দেয়া হয়নি। তোমাদের প্রবৃত্তিরও তোমাদের ওপর অধিকার আছে। রোযা রাখো আবার পানাহারও করো। রাতে জেগে ইবাদাত করো আবার নিদ্রাও যাও। আমাকে দেখো। আমি ঘুমাই আবার রাত জেগে ইবাদাতও করি। রোযা রাখি আবার কখনো রাখিও না। গোশতও খাই আবার ঘিও খাই। কাজেই যে ব্যক্তি আমার রীতিনীতি পছন্দ করে না সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।” তারপর আবার বললেনঃ “লোকদের কি হয়ে গেছে, তারা নারী, ভাল খাবার, সুগন্ধি, নিদ্রা ও দুনিয়ার স্বাদ আনন্দ নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছে? আমি তোমাদের পাদ্রী ও সংসার ত্যাগী হয়ে যাবার শিক্ষা দেইনি। আমি যে দ্বীনের প্রচলন করেছি তাতে নারী ও গোশত থেকে দূরে থাকার কোন অবকাশ নেই এবং সেখানে সংসার ত্যাগ করে বৈরাগ্যবাদী জীবন যাপনেরও কোন সুযোগ নেই আত্মসংযমের জন্য আমার এখানে আছে রোযা। সংসার ত্যাগী জীবনের সমস্ত ফায়দা এখানে লাভ করা হয় জিহাদের মাধ্যমে। আল্লাহর বন্দেগী করো। তার সাথে কাউকে শরীক করো না। হজ্জ ও উমরাহ করো। নামায কায়েম করো, যাকাত দাও ও রমযানের রোযা রাখো। তোমাদের আগে যারা ধ্বংস হয়েছে তারা এ জন্য ধ্বংস হয়েছে যে, তারা নিজেদের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছিল। আর যখন তারা নিজেরা নিজেদের ওপর কঠোরতা আরোপ করলো তখন আল্লাহও তাদের ওপর কঠোরতা আরোপ করলেন। তোমরা গীর্জায় ও খানকাহে যাদেরকে দেখছো এরা হচ্ছে তাদেরই অবশিষ্ট উত্তরসূরী।”
এ প্রসঙ্গে কোন কোন রেওয়ায়াত থেকে এতদূরও জানা যায় যে, একজন সাহাবীর ব্যাপারে নবী ﷺ জানতে পারলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে নিজের স্ত্রী সান্নিধ্য যাচ্ছেন না এবং রাত দিন ইবাদাতে মশগুল থাকছেন। তিনি তাকে ডেকে হুকুম দিলেন, এখনি তোমার স্ত্রীর কাছে যাও। সাহাবী জবাব দিলেন, আমি রোযা রেখেছি। জবাব দিলেন, রোযা ভেঙ্গে ফেলো এবং স্ত্রীর কাছে যাও। হযরত উমরের আমলে জনৈকা মহিলা অভিযোগ করলেন, আমার স্বামী সারাদিন রোযা রাখেন, রাতে ইবাদাত করেন এবং আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন না। হযরত উমর (রা.) তার মামলার নিষ্পত্তির জন্য প্রখ্যাত তাবেঈ বুযর্গ কা’ব ইবনে সাওরুল আযদিকে নিযুক্ত করলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন, এ মহিলার স্বামী তিন রাত ইচ্ছা মতো ইবাদাত করতে পারেন কিন্তু চতুর্থ রাতে অবশ্যি তার স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
১০৫
সীমালংঘন করার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। হালালকে হারাম করা এবং আল্লাহর নির্ধারিত পাক-পবিত্র জিনিসগুলো থেকে এমনভাবে দূরে সরে থাকা যেন সেগুলো নাপাক, এটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। তারপর পাক পবিত্র জিনিসগুলো অযথা ও অপ্রয়োজনে ব্যয় করা, অপচয় ও অপব্যয় করা এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ও প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। আবার হালালের সীমা পেরিয়ে হারামের সীমানায় প্রবেশ করাও বাড়াবাড়ি। এ তিনটি কাজই আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।