আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

মুহাম্মদ

৩৮ আয়াত

১১ ) এর কারণ, আল্লাহ‌ নিজে ঈমান গ্রহণকারীদের সহযোগী ও সাহায্যকারী। কিন্তু কাফেরদের সহযোগী ও সাহায্যকারী কেউ নেই। ১৬
ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ مَوْلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَأَنَّ ٱلْكَـٰفِرِينَ لَا مَوْلَىٰ لَهُمْ ١١
১২ ) আল্লাহ ঈমান গ্রহণকারী ও সৎকর্মশীলদের সে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে যায়। আর কাফেররা দুনিয়ার ক’দিনের জীবনের মজা লুটছে, জন্তু-জানোয়ারের মত পানাহার করছে। ১৭ ওদের চূড়ান্ত ঠিকানা জাহান্নাম।
إِنَّ ٱللَّهَ يُدْخِلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ ٱلْأَنْعَـٰمُ وَٱلنَّارُ مَثْوًۭى لَّهُمْ ١٢
১৩ ) হে নবী, অতীতের কত জনপদ তো তোমার সে জনপদ থেকে অধিক শক্তিশালী ছিল, যারা তোমাকে বের করে দিয়েছিল। আমি তাদের এমনভাবে ধ্বংস করেছি যে, তাদের কোন রক্ষাকারী ছিল না। ১৮
وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ هِىَ أَشَدُّ قُوَّةًۭ مِّن قَرْيَتِكَ ٱلَّتِىٓ أَخْرَجَتْكَ أَهْلَكْنَـٰهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ ١٣
১৪ ) এমনকি কখনো হয়, যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট হিদায়াতের ওপর আছে সে ঐ সব লোকের মত হবে যাদের মন্দ কাজকর্মকে সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে গিয়েছে? ১৯
أَفَمَن كَانَ عَلَىٰ بَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّهِۦ كَمَن زُيِّنَ لَهُۥ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ وَٱتَّبَعُوٓا۟ أَهْوَآءَهُم ١٤
১৫ ) মুত্তাকীদের জন্য যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার অবস্থা এই যে, তার মধ্যে স্বচ্ছ ও নির্মল পানির নহর বইতে থাকবে। ২০ এমন সব দুধের নহর বইতে থাকবে যার স্বাদে সামান্য কোন পরিবর্তন বা বিকৃতিও আসবে না, ২১ শরাবের এমন নহর বইতে থাকবে পানকারীদের জন্য যা হবে অতীব সুস্বাদু ২২ এবং বইতে থাকবে স্বচ্ছ মধুর নহর। ২৩ এছাড়াও তাদের জন্য সেখানে থাকবে সব রকমেরফল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে থাকবে ক্ষমা। ২৪ (যে ব্যক্তি এ জান্নাত লাভ করবে সেকি) ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে যে চিরদিন জাহান্নামে থাকবে, যাদের এমন গরম পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে?
مَّثَلُ ٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِى وُعِدَ ٱلْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَآ أَنْهَـٰرٌۭ مِّن مَّآءٍ غَيْرِ ءَاسِنٍۢ وَأَنْهَـٰرٌۭ مِّن لَّبَنٍۢ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُۥ وَأَنْهَـٰرٌۭ مِّنْ خَمْرٍۢ لَّذَّةٍۢ لِّلشَّـٰرِبِينَ وَأَنْهَـٰرٌۭ مِّنْ عَسَلٍۢ مُّصَفًّۭى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَمَغْفِرَةٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ ۖ كَمَنْ هُوَ خَـٰلِدٌۭ فِى ٱلنَّارِ وَسُقُوا۟ مَآءً حَمِيمًۭا فَقَطَّعَ أَمْعَآءَهُمْ ١٥
১৬ ) তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা মনযোগ দিয়ে তোমার কথা শোনে এবং যখন তোমার কাছ থেকে চলে যায় তখন যাদেরকে জ্ঞানের নিয়ামত দান করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করে যে, এই মাত্র তিনি কী বললেন? ২৫ এরাই সেসব লোক যাদের অন্তরে আল্লাহ‌ তা’আলা মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে গিয়েছে। ২৬
وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ حَتَّىٰٓ إِذَا خَرَجُوا۟ مِنْ عِندِكَ قَالُوا۟ لِلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْعِلْمَ مَاذَا قَالَ ءَانِفًا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ طَبَعَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَٱتَّبَعُوٓا۟ أَهْوَآءَهُمْ ١٦
১৭ ) আর যারা হিদায়াত লাভ করেছে আল্লাহ‌ তাদেরকে আরো অধিক হিদায়াত দান করেন। ২৭ এবং তাদেরকে তাদের অংশের তাকওয়া দান করেন। ২৮
وَٱلَّذِينَ ٱهْتَدَوْا۟ زَادَهُمْ هُدًۭى وَءَاتَىٰهُمْ تَقْوَىٰهُمْ ١٧
১৮ ) এখন কি এসব লোক শুধু কিয়ামতের জন্যই অপেক্ষা করছে যে, তা তাদের ওপর অকস্মাৎ এসে পড়ুক। ২৯ তার আলামত তো এসে গিয়েছে। ৩০ যখন কিয়ামতই এসে যাবে তখন তাদের জন্য উপদেশ গ্রহণের আর কি অবকাশ থাকবে?
فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا ٱلسَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةًۭ ۖ فَقَدْ جَآءَ أَشْرَاطُهَا ۚ فَأَنَّىٰ لَهُمْ إِذَا جَآءَتْهُمْ ذِكْرَىٰهُمْ ١٨
১৯ ) অতএব, হে নবী! ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ‌ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয়। নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং মু’মিন নারী ও পুরুষদের জন্যও। ৩১ আল্লাহ তোমাদের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত এবং তোমাদের ঠিকানা সম্পর্কেও অবহিত।
فَٱعْلَمْ أَنَّهُۥ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسْتَغْفِرْ لِذَنۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ ۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَىٰكُمْ ١٩
২০ ) যারা ঈমান আনায়ন করেছে তারা বলছিলো, এমন কোন সূরা কেন নাযিল করা হয় না (যাতে যুদ্ধের নির্দেশ থাকবে) ? কিন্তু যখন সুস্পষ্ট নির্দেশ সম্বলিত সূরা নাযিল করা হলো এবং তার মধ্যে যুদ্ধের কথা বলা হলো তখন তোমরা দেখলে, যাদের মনে রোগ ছিল তারা তোমার প্রতি সে ব্যক্তির মত তাকাচ্ছে যার ওপর মৃত্যু চেপে বসেছে। ৩২ তাদের এ অবস্থার জন্য আফসোস।
وَيَقُولُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَوْلَا نُزِّلَتْ سُورَةٌۭ ۖ فَإِذَآ أُنزِلَتْ سُورَةٌۭ مُّحْكَمَةٌۭ وَذُكِرَ فِيهَا ٱلْقِتَالُ ۙ رَأَيْتَ ٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌۭ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ نَظَرَ ٱلْمَغْشِىِّ عَلَيْهِ مِنَ ٱلْمَوْتِ ۖ فَأَوْلَىٰ لَهُمْ ٢٠
১৬.
ওহুদ যুদ্ধে নবী ﷺ যখন আহত হয়ে কয়েকজন সাহাবীর সাথে পাহাড়ের এক গুহায় অবস্থান করেছিলেন তখন আবু সুফিয়ান চিৎকার করে বললোঃ لَنَا عُزَّى وَلاَ عُزَّى لَكُمْ “আমাদের আছে উযযা দেবতা, তোমাদের তো উযযা নেই।” তখন নবী ﷺ সাহাবীদেরকে বললেনঃ তাকে জবাব দাও اللَّهُ مَوْلاَنَا لاَ مَوْلَى لَكُمْ “আমাদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী আল্লাহ কিন্তু তোমাদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী নেই।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ জবাবটি এ আয়াত থেকেই গৃহীত।
১৭.
অর্থাৎ জীবজন্তু যেভাবে খায় অথচ আদৌ চিন্তা করে না যে, যে রিযিক কোথা থেকে এসেছে, কে তা তৈরী করেছে এবং এ রিযিকের সাথে সাথে তার ওপর রিযিকদাতার কী কী অধিকার বর্তাচ্ছে? ঠিক তেমনি এসব লোকও শুধু খেয়ে চলেছে। চরে বেড়ানোর অধিক আর কোন জিনিসই তাদের চিন্তায় নেই।
১৮.
মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনে বড় দুঃখ ছিল। তিনি যখন হিজরত করতে বাধ্য হলেন তখন শহরের বাইরে গিয়ে তিনি শহরের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “হে মক্কা! আল্লাহর কাছে তুমি দুনিয়ার সব শহরের চেয়ে প্রিয়। আর আল্লাহর সমস্ত শহরের মধ্যে আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি। যদি মুশরিকরা আমাকে বের করে না দিতো তাহলে আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।” এ কারণে বলা হয়েছে যে, তোমাকে বহিষ্কার করে মক্কাবাসীরা মনে করেছে যে, তারা বড় রকমের সফলতা লাভ করেছে। অথচ এ আচরণের দ্বারা তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদের দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছে। আয়াতটির বাচনভঙ্গি স্পষ্ট বলে দিচ্ছে যে, তা অবশ্যম্ভাবী রূপে হিজরতের পরপরই নাযিল হয়ে থাকবে।
১৯.
অর্থাৎ এটা কি করে সম্ভব যে, নবী এবং তাঁর অনুসারীগণ যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা স্পষ্ট ও সোজা পথ লাভ করেছেন এবং পূর্ণ দূরদৃষ্টির আলোকে তাঁরা তার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তখন সেসব লোকদের সাথে চলবেন যারা পুরনো জাহেলিয়াতকে আঁকড়ে ধরে আছে, যারা নিজেদের গোমরাহীকে হিদয়াত এবং কুকর্মকে উত্তম মনে করেছে এবং যারা কোন যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, বরং নিজেদের প্রবৃত্তির ইচ্ছানুসারে কোনটি হক ও কোনটি বাতিল তার ফয়সালা করে থাকে। তাই এ দুই গোষ্ঠির জীবন এখন দুনিয়াতে এক রকম হতে পারে না, তেমনি আখেরাতেও তাদের পরিণাম এক রকম হতে পারে না।
২০.
মূল বাক্যাংশ হচ্ছে مَاءٍ غَيْرِ آسِنٍ اسن বলা হয় এমন পানিকে যার স্বাদ ও বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে অথবা যার মধ্যে কোনভাবে গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত পৃথিবীর সমুদ্র ও নদীর পানি ঘোলা হয়ে থাকে। তার সাথে বালু, মাটি এবং মাঝে মধ্যে নানা রকম উদ্ভিদরাজি মিশে যাওয়ার কারণে বর্ণ ও স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তাতে কিছু না কিছু দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয়। তাই জান্নাতের সমুদ্র ও নদীসমূহের পানির পরিচয় দেয়া হয়েছে এই যে, তা হবে غير اسن অর্থাৎ নির্ভেজাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি। তার মধ্যে কোন প্রকার সংমিশ্রণ থাকবে না।
২১.
মারফূ’ হাদীসে এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এই যে, “তা পশুর বাঁট বা স্তন থেকে নির্গত দুধ হবে না।” অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এ দুধ ঝর্ণার আকারে মাটি থেকে বের করবেন এবং নদীর আকারে প্রবাহিত করবেন। পশুর পালান বা বাঁট থেকে দোহন করে তারপর জান্নাতের নদীসমূহে ঢেলে প্রবাহিত করা হবে এমন নয়। এ কুদরতী দুধের পরিচয়ে বলা হয়েছে, “তার স্বাদ, কোন পরিবর্তন আসবে না।” অর্থাৎ পশুর পালন থেকে নির্গত দুধে যে এক ধরনের গন্ধ থাকে, তার লেশমাত্রও এতে থাকবে না।
২২.
মারফূ’ হাদীসে এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এই যে, “পদদলন বা মাড়ানো দ্বারা ঐ শরাব নির্গত হবে না” অর্থাৎ সে শরাব দুনিয়ার সাধারণ মদের মত ফল পঁচিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নির্গত করা হবে না। বরং এটাও আল্লাহ তা’আলা ঝর্ণার আকারে সৃষ্টি করবেন এবং নদী-নালার আকারে প্রবাহিত করবেন। এর পরিচয় দিতে গিয়ে আরো বলা হয়েছে, “তা হবে পানকারীদের জন্য অতীব সুস্বাদু। ” অর্থাৎ তা দুনিয়ার মদের মত তীব্র এবং গন্ধযুক্ত হবে না। দুনিয়ার মদ তো এমন যে, যত বড় অভ্যস্ত মদখোরই তা পান করুক, মুখ বিকৃত না করে পান করতে পারে না।

সূরা সাফ্ফাতে এর আরো পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছে যে, তা পান করায় শরীরের কোন ক্ষতিও হবে না এবং বুদ্ধি বিভ্রমও ঘটবে না। (আয়াত ৪৭) সূরা ওয়াকিআতে বলা হয়েছে যে, তার কারণে মাথাও ধরবে না কিংবা ব্যক্তির বিবেকও লুপ্ত হবে না। (আয়াত ১৯) এ থেকে জানা গেল যে, তা মাদকতাপূর্ণ হবে না, বরং শুধু স্বাদ ও আনন্দই দান করবে।

২৩.
মারফু’ হাদীসে এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এই যে, তা মৌমাছির পেট থেকে নির্গত মধু হবে না অর্থাৎ ঐ মধুও ঝর্ণা থেকে নির্গত হবে এবং নদী-নালায় প্রবাহিত হবে। সুতরাং তার মধ্যে মোম, মৌচাকের টুকরা এবং মৃত মৌমাছির পা মিশে থাকবে না। বরং তা হবে নিখাদ ও নির্ভেজাল মধু।
২৪.
জান্নাতের এসব নিয়ামতের উল্লেখের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার উল্লেখ করার দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, এসব নিয়ামতের চেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে এই যে, আল্লাহ‌ তাদের ক্ষমা করে দেবেন। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, পৃথিবীতে তাদের দ্বারা যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল জান্নাতে তাদের সামনে কখনো তার উল্লেখ পর্যন্ত করা হবে না। বরং যাতে তারা জান্নাতে লজ্জিত না হন সেজন্য আল্লাহ‌ তাদের ঐ সব ত্রুটি-বিচ্যুতির ওপর চিরদিনের জন্য পর্দা টেনে দেবেন।
২৫.
কাফের, মুনাফিক ও আহলে কিতাবের মধ্যকার যেসব আল্লাহদ্রোহী ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে এসে বসতো, তাঁর বানী ও নির্দেশাবলী এবং কুরআন মজীদের আয়াতসমূহ শুনতো তাদের সম্পর্কেই একথা বলা হয়েছে। নবীর ﷺ পবিত্র মুখ থেকে যেসব বিষয়ে কথাবার্তা উচ্চারিত হতো তার সাথে তাদের যেহেতু দূরতম সম্পর্কও ছিল না, তাই তারা সবকিছু শুনেও যেন শুনতো না। একারণে বাইরে এসেই মুসলমানদের জিজ্ঞেস করতো, এই মাত্র তিনি কী যেন বলছিলেন?
২৬.
তাদের অন্তরের কান যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী শোনার ব্যাপারে বধির হয়ে গিয়েছিল। এটাই ছিল তার প্রকৃত কারণ। তারা ছিল নিজেদের প্রবৃত্তির দাস। অথচ নবী (সা.) যেসব শিক্ষা পেশ করেছিলেন তা ছিল তাদের প্রবৃত্তির দাবীর পরিপন্থী। তাই যদিও কোন সময় তারা নবীর ﷺ মজলিসে এসে তাঁর কথা শোনার ভান করলেও আসলে তাদের ঝুলিতে কিছুই পড়তো না।
২৭.
অর্থাৎ সে একই কথা যা হিদায়াত প্রাপ্ত লোকদের জন্য আরো হিদায়াতের কারণ হতো। অথচ তা শুনে কাফের ও মুনাফিকরা জিজ্ঞেস করতো যে, একটু আগে তিনি কী বলেছেন? যে মজলিসে থেকে এ দুর্ভাগারা অযথা সময় নষ্ট করে উঠে যেতো, এ সৌভাগ্যবানরা সে মজলিস থেকেই জ্ঞানের এক নতুন ভাণ্ডার ভরে নিয়ে যেতো।
২৮.
অর্থাৎ তারা নিজেদের মধ্যে যে তাকওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করে আল্লাহ‌ তা’আলা তাদেরকে সে তাওফীকই দান করেন।
২৯.
অর্থাৎ ন্যায় ও সত্যকে স্পষ্ট করে তুলে ধরার কাজটি তো যুক্তি-প্রমাণ, কুরআনের অলৌকিক বর্ণনা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবন এবং সাহাবায়ে কিরামের জীবনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন দ্বারা অত্যন্ত দ্বিধাহীন পন্থায় করা হয়েছে। এখন ঈমান আনার জন্য এসব লোক কি কিয়ামতকে একেবারে প্রত্যক্ষভাবে দেখে নেয়ার অপেক্ষা করছে?
৩০.
কিয়ামতের আলামত বলতে সেসব আলামতকে বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা প্রকাশ পায় যে, এখন কিয়ামতের আগমনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত হচ্ছে আল্লাহর শেষ নবীর আগমন যার পরে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবে না। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদে হযরত আনাস, হযরত সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী এবং হযরত বুরাইদা বর্ণিত হাদীসসমূহে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী ﷺ তাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা অংগুলি উঠিয়ে বললেনঃ بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ “আমার আগমন ও কিয়ামত এ দু’টি অঙ্গুলির মত।” অর্থাৎ দু’টি আঙ্গুলের মধ্যে যেমন আর কোন আঙ্গুল নেই তেমনি আমার ও কিয়ামতের মাঝে আর কোন নবী পাঠানো হবে না। আমার পরে এখন শুধু কিয়ামতেরই আগমন ঘটবে।
৩১.
ইসলাম মানুষকে যেসব নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছে তার একটি হচ্ছে বান্দা তার প্রভুর বন্দেগী ও ইবাদাত করতে এবং তাঁর দ্বীনের জন্য জীবনপাত করতে নিজের পক্ষ থেকে যত চেষ্টা-সাধনাই করুক না কেন, তার মধ্যে এমন ধারণা কখনো আসা উচিত নয় যে, তার যা করা উচিত ছিল তা সে করেছে। তার বরং মনে করা উচিত যে, তার ওপর তার মালিকের যে দাবী ও অধিকার ছিল তা সে পালন করতে পারেনি। তার উচিত সবসময় দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করা যে, তোমার কাছে আমার যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অপরাধ হয়েছে তা ক্ষমা করে দাও। “হে নবী (সা.) তোমার ত্রুটি-বিচ্যুতি জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো” আল্লাহর এ আদেশের অর্থ এ নয় যে, নবী (সা.) জেনে বুঝে প্রকৃতই কোন অপরাধ করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর সমস্ত বান্দার মধ্যে যে বান্দা তার রবের বন্দেগী বেশী করে করতেন নিজের এ কাজের জন্য তাঁর অন্তরেও গর্ব ও অহংকারের লেশমাত্র প্রবেশ করতে পারেনি। তাঁর মর্যাদাও ছিল এই যে, নিজের এ মহামূল্যবান খেদমত সত্ত্বেও তাঁর প্রভুর সামনে নিজের অপরাধ স্বীকারই করেছেন। এ অবস্থা ও মানসিকতার কারণেই রসূলুল্লাহ ﷺ সবসময় বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আবু দাউদ, নাসায়ী এবং মুসনাদে আহমাদের বর্ণিত হাদীসে নবীর ﷺ এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে, “আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে একশ’ বার ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি।”
৩২.
অর্থাৎ সে সময় মুসলমানরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলো এবং ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে কাফেরদের যে আচরণ ছিল তার কারণে যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বেই মুসলমানদের সাধারণ মতামত ছিল এই যে, এখন আমাদের যুদ্ধের অনুমতি পাওয়া উচিত। তারা ব্যাকুল চিত্তে আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেছিলো এবং বার বার জানতে চাচ্ছিলো যে, এ জালেমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে লড়াই করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না কেন? কিন্তু যারা মুনাফিকীর আবরণে মুসলমানদের দলে শামিল হয়েছিল। তাদের অবস্থা ছিল মু’মিনদের অবস্থা থেকে ভিন্ন। তারা তাদের প্রাণ ও অর্থ-সম্পদকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের চেয়ে অনেক বেশী প্রিয় মনে করতো এবং সে ক্ষেত্রে কোন রকম বিপদের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিল না। যুদ্ধের নির্দেশ আসা মাত্রই তাদেরকে এবং খাঁটি ঈমানদারদেরকে বাছাই করে পরস্পর থেকে আলাদা করে দিন। এ দির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাদের ও ঈমানদারদের মধ্যে বাহ্যিক কোন পার্থক্য দেখা যেতো না। তারা এবং এরা উভয়েই নামায পড়তো। রোযা রাখতেও তাদের কোন দ্বিধা-সংকোচ ছিল না। ঠাণ্ডা প্রকৃতির ইসলাম তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু যখন ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখার সময় আসলো তখন তাদের মুনাফিকী প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং ঈমানের লোক দেখানো যে মুখোশ তারা পরেছিল তা খুলে পড়লো। তাদের এ অবস্থা সূরা নিসায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ “তোমরা কি সে লোকদের দেখেছো যাদের বলা হয়েছিলো, নিজের হাতকে সংযত রাখো, নামায কায়েম করো এবং যাকাত দাও। এখন তাদেরকে যখন যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তখন তাদের এক দলের অবস্থা এই যে, মানুষকে এমন ভয় পাচ্ছে-যে ভয় আল্লাহকে করা উচিত। বরং তার চেয়ে বেশী ভয় পাচ্ছে। তারা বলছেঃ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে যুদ্ধের এ নির্দেশ কেন দিলে? আমাদেরকে আরো কিছু অবকাশ দিলে না কেন?” (আয়াত ৭৭)।
অনুবাদ: