১
আল ফাতিহা
৭ আয়াত
২
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
৩
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
৪
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
৫
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
৬
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
৭
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
৮
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
৯
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত
আয়াত
২১ ) যেসব ২৬ লোক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তারা কি মনে করে নিয়েছে যে, আমি তাদেরকে এবং মু’মিন ও সৎকর্মশীলদেরকে সমপর্যায়ভুক্ত করে দেবো যে তাদের জীবন ও মৃত্যু সমান হয়ে যাবে? তারা যে ফায়সালা করে তা অত্যন্ত জঘণ্য। ২৭
أَمْ حَسِبَ ٱلَّذِينَ ٱجْتَرَحُوا۟ ٱلسَّيِّـَٔاتِ أَن نَّجْعَلَهُمْ كَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ سَوَآءًۭ مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ ۚ سَآءَ مَا يَحْكُمُونَ ٢١
২২ ) আল্লাহ আসমান ও যমীনকে সত্যের ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন ২৮ এবং এ জন্য করেছেন যাতে প্রত্যেক প্রাণসত্তাকে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া যায়। তাদের প্রতি কখনো জুলুম করা হবে না। ২৯
وَخَلَقَ ٱللَّهُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ وَلِتُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ٢٢
২৩ ) তুমি কি কখনো সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো যে তার প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে খোদা বানিয়ে নিয়েছে ৩০ আর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও ৩১ আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন, তার দিলে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং চোখে আবরণ সৃষ্টি করেছেন। ৩২ আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাকে হিদায়াত দান করতে পারে? তোমরা কি কোন শিক্ষা গ্রহণ করো না? ৩৩
أَفَرَءَيْتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍۢ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِۦ وَقَلْبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَـٰوَةًۭ فَمَن يَهْدِيهِ مِنۢ بَعْدِ ٱللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٢٣
২৪ ) এরা বলেঃ জীবন বলতে তো শুধু আমাদের দুনিয়ার এই জীবনই। আমাদের জীবন ও মৃত্যু এখানেই এবং কালের বিবর্তন ছাড়া আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না। প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাপারে এদের কোন জ্ঞান নেই। এরা শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে এসব কথা বলে। ৩৪
وَقَالُوا۟ مَا هِىَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهْرُ ۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ ٢٤
২৫ ) যখন এদেরকে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ শুনানো হয় ৩৫ তখন এদের কাছে এছাড়া আর কোন যুক্তিই থাকে না যে, তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে আমাদের বাপ-দাদাদের জীবিত করে দেখাও। ৩৬
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَـٰتُنَا بَيِّنَـٰتٍۢ مَّا كَانَ حُجَّتَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ ٱئْتُوا۟ بِـَٔابَآئِنَآ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ٢٥
২৬ ) হে নবী, এদের বলো, আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেন এবং তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটান। ৩৭ তিনিই আবার সেই কিয়ামতের দিন তোমাদের একত্রিত করবেন যার আগমনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ৩৮ কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না। ৩৯
قُلِ ٱللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٢٦
২৭ ) যমীন এবং আসমানের বাদশাহী আল্লাহর। ৪০ আর যেদিন কিয়ামতের সময় এসে উপস্থিত হবে সেদিন বাতিলপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَيَوْمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍۢ يَخْسَرُ ٱلْمُبْطِلُونَ ٢٧
২৮ ) সে সময় তোমরা প্রত্যেক গোষ্ঠীকে নতজানু দেখতে পাবে। ৪১ প্রত্যেক গোষ্ঠীকে এসে তার আমলনামা দেখার জন্য আহবান জানানো হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যেসব কাজ করে এসেছো তোমাদেরকে তার প্রতিদান দেয়া হবে।
وَتَرَىٰ كُلَّ أُمَّةٍۢ جَاثِيَةًۭ ۚ كُلُّ أُمَّةٍۢ تُدْعَىٰٓ إِلَىٰ كِتَـٰبِهَا ٱلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٢٨
২৯ ) এটা আমাদের তৈরী করানো আমলনামা, যা তোমাদের বিরুদ্ধে ঠিক ঠিক সাক্ষ্য দিচ্ছে। তোমরা যাই করতে আমি তাই লিপিবদ্ধ করাতাম। ৪২
هَـٰذَا كِتَـٰبُنَا يَنطِقُ عَلَيْكُم بِٱلْحَقِّ ۚ إِنَّا كُنَّا نَسْتَنسِخُ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٢٩
৩০ ) যারা ঈমান এনেছিলো এবং সৎকাজ করেছিল তাদের রব তাদেরকে তাঁর রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। এটা সুস্পষ্ট সাফল্য।
فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ فَيُدْخِلُهُمْ رَبُّهُمْ فِى رَحْمَتِهِۦ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْمُبِينُ ٣٠
২৬.
তাওহীদের দিকে আহবান জানানোর পর এখান থেকে আখেরাত সম্পর্কে বক্তব্য শুরু হচ্ছে।
২৭.
আখেরাত সত্য হওয়ার সপক্ষে এটা নৈতিক যুক্তি-প্রমাণ। নৈতিক চরিত্রের ভাল-মন্দ এবং কর্মের মধ্যে সৎ ও অসতের পার্থক্যের অনিবার্য দাবী হলো ভাল মন্দ লোকের পরিণাম এক হবে না বরং এক্ষেত্রে সৎ লোক তার সৎ কাজের ভাল প্রতিদান লাভ করবে এবং অসৎ লোক তার অসৎ কাজের মন্দ ফল লাভ করবে। তা যদি না হয় এবং ভাল ও মন্দের ফলাফল যদি একই রকম হয় সে ক্ষেত্রে নৈতিক চরিত্রের ভাল ও মন্দের পার্থক্যই অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বে-ইনসাফর অভিযোগ আরোপিত হয়। যারা পৃথিবীতে অন্যায়ের পথে চলে তারা তো অবশ্যই চাইবে যেন কোনো প্রকার প্রতিদান ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে। কারণ, এই ধারণাই তাদের আরামকে হারাম করে দেয়। কিন্তু বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর যুক্তিপূর্ণ বিধান ও ন্যায় বিচারের নীতির সাথে এটা আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, তিনি সৎ ও অসৎ উভয় শ্রেণীর মানুষের সাথে একই রকম আচরণ করবেন এবং সৎকর্মশীল ঈমানদার ব্যক্তিগণ পৃথিবীতে কিভাবে জীবন যাপন করেছে আর কাফের ও ফাসেক ব্যক্তিরা কী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তার কিছুই দেখবেন না। এক ব্যক্তি সারা জীবন নিজেকে নৈতিকতার বিধি-বন্ধনে আবদ্ধ রাখলো, প্রাপকদের প্রাপ্য অধিকার দিল, অবৈধ স্বার্থ ও ভোগের উপকরণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখলো এবং ন্যায় ও সত্যের জন্য নানা রকম ক্ষতি বরদাশত করলো। আরেক ব্যক্তি সম্ভাব্য সব উপায়ে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা পূরণ করলো। সে না আল্লাহর অধিকার চিনলো, না বান্দার অধিকার হস্তক্ষেপ থেকে বিরত হল এবং স্বার্থ ও ভোগের উপকরণ যেভাবে সম্ভব দুই হাতে আহরণ করলো। আল্লাহ এই দুই শ্রেণীর মানুষের জীবনের এই পার্থক্য উপেক্ষা করবেন তা কি আশা করা যায়? মৃত্যু পর্যন্ত যাদের জীবন এক রকম হলো না, মৃত্যুর পরে তাদের পরিণাম যদি একই রকম হয় তাহলে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় বে-ইনসাফী আর কী হতে পারে? (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, ইউনুস, টীকা ৯ ও ১০; হূদ, টীকা ১০৬; আন নাহল, টীকা ৩৫; আল হাজ্ব, টীকা ৯; আন নামল, টীকা ৮৬; আর রূম, টীকা ৬ থেকে ৮; সূরা সোয়াদ, আয়াত ২৮, টীকা ৩০)।
২৮.
অর্থাৎ আল্লাহ খেল-তামাশা করার উদ্দেশ্যে পৃথিবী ও আসমান সৃষ্টি করেননি। বরং এটা একটা উদ্দেশ্যমুখী জ্ঞানগর্ভ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় একথা একেবারই অকল্পনীয় যে, যারা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা-ইখতিয়ার ও উপায়-উপকরণ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করে ভাল কাজ করেছে এবং যারা ঐগুলোকে ভ্রান্ত পন্থায় ব্যবহার করে জুলুম ও বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে শেষ পর্যন্ত তারা সবাই মরে মাটিতে পরিণত হবে এবং এই মৃত্যুর পর আর কোন জীবন হবে না এবং সেখানে ইনসাফ মোতাবেক তাদের ভাল ও মন্দ কাজের কোন ভাল বা মন্দ ফলাফলও প্রকাশ পাবে না। যদি তাই হয় তাহলে এই বিশ্ব জাহান তো খেলোয়াড়ের খেলার বস্তু, কোন মহাজ্ঞানীর সৃষ্ট উদ্দেশ্যমুখী ও যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা নয়। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আনয়াম, টীকা ৪৬; ইউনুস, টীকা ১১; ইবরাহীম টীকা ২৬; আন নাহল, টীকা ৬; আল আনকাবূত, টীকা ৭৫ এবং আর রূম, টীকা ৬)।
২৯.
পূর্বাপর আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ আয়াতের পরিষ্কার অর্থ হলো, সৎ মানুষেরা যদি তাদের সৎ কাজের পুরস্কার বা প্রতিদান না পায়, জালেমদেরকে তাদের শাস্তি না দেয়া হয় এবং মজলুমরা কখনো ন্যায় বিচার না পায় তাহলে তা হবে জুলুম। আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ব্যবস্থায় এ ধরনের জুলুম কখনো হতে পারে না। একইভাবে কোন মানুষকে তার প্রাপ্যের তুলনায় কম পুরস্কার দেয়া হবে কিংবা কোন অসৎ মানুষকে তার প্রাপ্যের তুলনায় অধিক শাস্তি দেয়া হবে আল্লাহর বিচারে এ ধরনের কোন জুলুমও হতে পারে না।
৩০.
প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে খোদা বানিয়ে নেয়ার অর্থ ব্যক্তির নিজের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার দাস হয়ে যাওয়া। তার মন যা চায় তাই সে করে বসে যদিও আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তার মন যা চায় না তা সে করে না যদিও আল্লাহ তা ফরয করে দিয়েছেন। ব্যক্তি যখন এভাবে কারো আনুগত্য করতে থাকে তখন তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তার উপাস্য আল্লাহ নয়, বরং সে এভাবে যার আনুগত্য করছে সে-ই তার উপাস্য। সে মুখে তাকে ‘ইলাহা’ এবং উপাস্য বলুক বা না বলুক কিংবা মূর্তি তৈরী করে তার পূজা করুক বা না করুক তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ, দ্বিধাহীন আনুগত্যই তার উপাস্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এভাবে কার্যত শিরক করার পর কোন ব্যক্তি শুধু এই কারণে শিরকের অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারে না যে, সে যার আনুগত্য করছে মুখে তাকে উপাস্য বলেনি এবং সিজদাও করেনি। অন্যান্য বড় বড় মুফাসসিরও আয়াতটির এ ব্যাখ্যাই করেছেন। ইবনে জারীর এর অর্থ বর্ণনা করেছেন এইভাবে যে, সে তার প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। প্রবৃত্তি যা কামনা করেছে সে তাই করে বসেছে। না সে আল্লাহর হারামকৃত বস্তুকে হারাম বলে মনে করেছে, না তার হালালকৃত বস্তুকে হালাল বলে গণ্য করেছে। আবু বকর জাসসাস এর অর্থ বর্ণনা করেছেন, “কেউ যেমনভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে সে ঠিক তেমনিভাবে প্রবৃত্তি আকাঙ্ক্ষার আনুগত্য করে।” যামাখশারী এর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, “সে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার প্রতি অত্যন্ত অনুগত। তার প্রবৃত্তি তাকে যেদিকে আহবান জানায় সে সেদিকেই চলে যায়। সে এমনভাবে তার দাসত্ব করে যেমন কেউ আল্লাহর দাসত্ব করে” (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল ফুরকান, টীকা ৫৬; সূরা সাবার ব্যাখ্যা, টীকা ৬৩; ইয়াসীন, টীকা ৫৩; আশ শূরা, টীকা ৩৮)।
৩১.
মূল বাক্যাংশ হচ্ছে أَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ । এই বাক্যাংশের একটি অর্থ হতে পারে এই যে, জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর পক্ষ থেকে সে ব্যক্তিকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কেননা সে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার দাস হয়ে গিয়েছিলো। আরেকটি অর্থ হতে পারে এই যে, সে তার প্রবৃত্তির ইচ্ছা ও কামনা-বাসনাকে খোদা বানিয়ে বসেছে এ বিষয়টি জেনে আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন।
৩২.
আল্লাহ কর্তৃক কাউকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ, তার মন ও কানের ওপর মোহর লাগিয়ে দেয়া এবং চোখের ওপর আবরণ সৃষ্টি করে দেয়ার ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে এ গ্রন্থের কয়েকটি স্থানে করেছি। দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল বাকারা, টীকা ১০ ও ১৬; আল আনয়াম, টীকা ১৭ ও ২৭; আল আরাফ, টীকা ৮০; আত তাওবা, টীকা ৮৯ ও ৯৩; ইউনুস, টীকা ৭১; আর রা’দ, টীকা ৪৪; ইবরাহীম, টীকা ৬, ৭ ও ৪০; আন নাহল, টীকা ১১০; বনী ইসরাঈল, টীকা ৫১; আর রূম, টীকা ৮৪; ফাতের, আয়াত ৮, টীকা ১৬ ও ১৭ এবং আল মু’মিন, টীকা ৫৪।
৩৩.
যে প্রসঙ্গে এ আয়াতটি এসেছে তাতে আপনা থেকেই একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যারা প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার দাসত্ব করতে চায় প্রকৃতপক্ষে সেই সব লোকই আখেরাতকে অস্বীকার করে এবং আখেরাতে বিশ্বাসকে নিজের স্বাধীনতার পথের অন্তরায় মনে করে। তা সত্ত্বেও তারা যখন আখেরাতকে অস্বীকার করে বসে তখন তাদের প্রবৃত্তির দাসত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং প্রতিনিয়তই তারা আরো বেশী করে গোমরাহীর মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকে। এমন কোন অপকর্ম থাকে না যাতে জড়িত হওয়া থেকে তারা বিরত থাকে। কারো হক মারতে তারা দ্বিধান্বিত হয় না। ন্যায় ও ইনসাফের প্রতি তাদের মনে কোন শ্রদ্ধা থাকে না। তাই কোনো প্রকার জুলুম ও বাড়াবাড়ির সুযোগ লাভের পর তা থেকে তারা বিরত থাকবে এ আশা করা যায় না। যেসব ঘটনা দেখে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেই সব ঘটনা তাদের চোখের সামনে আসে কিন্তু তারা তা থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করে তা হচ্ছে, আমরা যা কিছু করছি ঠিকই করছি এবং এসবই আমাদের করা উচিত। কোন উপদেশ বাণীই তাদের প্রভাবিত করে না। কোন মানুষকে দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখার জন্য যে যুক্তি প্রমাণ ফলপ্রসূ হতে পারে তা তাদের আবেদন সৃষ্টি করে না। বরং তারা তাদের এই লাগামহীন স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি প্রমাণ খুঁজে খুঁজে বের করে। ভাল চিন্তার পরিবর্তে তাদের মন ও মস্তিষ্ক রাত-দিন সম্ভাব্য সকল পন্থায় তাদের নিজেদের স্বার্থ ও কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার চেষ্টায় লেগে থাকে। আখেরাত বিশ্বাসের অস্বীকৃতি যে মানুষের নৈতিক চরিত্রের জন্য ধ্বংসাত্মক এটা তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। মানুষকে যদি মনুষ্যত্বের গণ্ডির মধ্যে কোন জিনিস ধরে রাখতে সক্ষম হয় তাহলে তা পারে কেবল এই অনুভূতি যে, আমরা দায়িত্ব মুক্ত নই, বরং আল্লাহর সামনে আমাদের সকল কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এই অনুভূতিহীন হওয়ার পর কেউ যদি অতি বড় জ্ঞানীও হয় তাহলেও সে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ না করে পারে না।
৩৪.
অর্থাৎ জ্ঞানের এমন কোন মাধ্যমই নেই যার সাহায্যে তারা জেনে নিতে পারে, এই জীবনের পরে মানুষের আর কোন জীবন নেই। তাছাড়া এ কথা জানতেও কোন মাধ্যম নেই যে, কোন খোদার নির্দেশে জান কবজ করা হয় না, বরং শুধু কালের প্রবাহ ও বিবর্তনে মানুষ মরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আখেরাত অবিশ্বাসীরা জ্ঞানের ভিত্তিতে নয়, শুধু ধারণার ভিত্তিতে এসব কথা বলে থাকে। যদি তারা জ্ঞানের ভিত্তিতে কথা বলে তাহলে বড় জোর বলতে পারে যে, “মৃত্যুর পরে কোন জীবন আছে কিনা তা আমরা জানি না।” কিন্তু একথা বলতে পারে না যে, আমরা জানি, এই জীবনের পরে আর কোন জীবন নেই। অনুরূপ জ্ঞান ও যুক্তির ভিত্তিতে তারা একথা জানার দাবী করতে পারে না যে, মানুষের রুহ আল্লাহর হুকুমে বের করে নেয়া হয় না, বরং একটি ঘড়ি যেমন চলতে চলতে বন্ধ হয়ে যায় তেমনি তা মরে নিঃশেষ হয়ে যায়। তারা বড় জোর যা কিছু বলতে পারে তা শুধু এই যে, এ দু’টির মধ্যে কোনটি সম্পর্কেই আমরা জানি না, প্রকৃতই কি ঘটে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের জ্ঞানের সীমা পর্যন্ত মৃত্যুর পরের জীবন হওয়া না হওয়া এবং রুহ কবজ হওয়া অথবা কালের প্রবাহে আপনা থেকেই মরে যাওয়ার সমান সম্ভাবনা যখন বিদ্যমান তখন এসব লোক আখেরাতের সম্ভাবনার দিকটি বাদ দিয়ে আখেরাত অস্বীকৃতির পক্ষে যে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত প্রদান করছে তার কারণ তাহলে কী? প্রকৃতপক্ষে তারা এই বিষয়টি চূড়ান্ত সমাধান যুক্তি-প্রমাণ ভিত্তিতে করে না বরং নিজেরদের কামনা-বাসনার নিরিখে করে থাকে। এছাড়া কি এর আর কোন কারণ থাকতে পারে? যেহেতু তারা মৃত্যুর পরে আর কোন জীবন চায় না এবং মৃত্যু সত্যিকার অর্থে অস্তিত্বহীনতা বা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া না হয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহ কবজ করা হোক এটাও তারা চায় না, তাই নিজেদের মনের চাহিদা অনুসারে তারা আকীদা-বিশ্বাস গড়ে নেয় এবং এর বিপরীত জিনিসটি অস্বীকার করে বসে।
৩৫.
অর্থাৎ যেসব আয়াতে আখেরাতের সম্ভাবনার মজবুত যুক্তিসঙ্গত দলীল প্রমাণ পেশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আখেরাত হওয়া সরাসরি যুক্তি ও ইনাসাফের দাবি। আখেরাত সংঘটিত না হলে এই গোটা বিশ্ব ব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
৩৬.
অন্য কথায়, তাদের এই যুক্তির উদ্দেশ্য ছিল, যখনই কেউ তাদেরকে বলবে, মৃত্যুর পর আরো একটি জীবন হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে তারা একথা মানতে প্রস্তুত নয় যে, মৃত মানুষকে আবার কোন সময় পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে।। অথচ কেউ কখনো তাদেরকে একথা বলেনি যে, মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে এই পৃথিবীতে মৃতদের জীবিত করা হবে। যা কিছু বলা হয়েছে তা হচ্ছে, কিয়ামতের পরে আল্লাহ এক সময় যুগপৎ সমস্ত মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তাদের সবার কৃতকর্ম পর্যালোচনা করে পুরস্কার ও শাস্তি দানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
৩৭.
তারা বলতো, কালের প্রবাহ ও সময়ের বিবর্তনের আপনা থেকেই মৃত্যু আসে। এটা তাদের সেই কথার জবাব। বলা হচ্ছে, না তোমরা আকস্মিকভাবে জীবন লাভ করে থাকো, না আপনা থেকেই তোমাদের মৃত্যু সংঘটিত হয়। একজন আল্লাহ আছেন, যিনি তোমাদের জীবন দান করেন এবং তিনিই তা কেড়ে নেন।
৩৮.
তারা বলতো, আমাদের বাপ-দাদাদের জীবিত করে আনো, এটা তারই জবাব। এতে বলা হচ্ছে, তা এখন হবে না এবং বিচ্ছিন্নভাবেও হবে না। বরং সব মানুষকে একত্রিত করার জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট আছে।
৩৯.
অর্থাৎ অজ্ঞতা এবং চিন্তা ও দৃষ্টির সংকীর্ণতাই মানুষের আখেরাত অস্বীকৃতির মূল কারণ। তা না হলে প্রকৃতপক্ষে আখেরাত সংঘটিত হওয়া নয়, না হওয়াই বিবেক ও যুক্তি-বুদ্ধির পরিপন্থী।কোন ব্যক্তি যদি সঠিকভাবে বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনা ও নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তা করে তাহলে সে আপনা থেকেই অনুভব করবে যে, আখেরাত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
৪০.
পূর্বাপর প্রসঙ্গ সামনে রেখে বিচার করলে আপনা থেকেই এ আয়াতের যে অর্থ প্রকাশ পায় তা হচ্ছে, যে আল্লাহ এই বিশাল বিশ্বজাহান শাসন করছেন তিনি যে মানুষদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন পুনরায় তাদেরকে সৃষ্টি করা তাঁর ক্ষমতার অসাধ্য মোটেই নয়।
৪১.
অর্থাৎ সেখানে হাশরের ময়দানের এবং আল্লাহর আদালতের এমন ভীতি সৃষ্টি হবে যে, বড় বড় অহংকারীদের অহংকারও উবে যাবে। সেখানে সবাই অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নতজানু হবে।
৪২.
কলমের সাহায্যে কাগজের ওপর লেখানোই লিখিয়ে রাখার একমাত্র সম্ভব পদ্ধতি নয়। মানুষের কথা ও কাজ লিপিবদ্ধ করা এবং পুনরায় তা হুবহু পূর্বের মত করে উপস্থাপনের আরো কতিপয় পদ্ধতি এই পৃথিবীতে মানুষ নিজেই উদ্ভাবন করেছে। ভবিষ্যতে মানুষের করায়ত্ত হবে এরূপ আরো কী কী সম্ভাবনা আছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কী কী পন্থায় আল্লাহ মানুষের এক একটি কথা, তার তৎপরতার প্রতিটি জিনিস এবং তার নিয়ত, ইচ্ছা, কামানা-বাসনা ও ধ্যান-ধারণার প্রতিটি গোপন থেকে গোপনীয়তার বিষয় লিপিবদ্ধ করাচ্ছেন এবং কিভাবে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং জাতির গোটা জীবনের সকল কর্মকাণ্ড অবিকল তার সামনে পেশ করবেন তা কার পক্ষে জানা সম্ভব?