إِنَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَـٰبَ بِٱلْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ ٱلنَّاسِ بِمَآ أَرَىٰكَ ٱللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَآئِنِينَ خَصِيمًۭا
হে নবী! ১৪০ আমি সত্য সহকারে এই কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে যে সঠিক পথ দেখিয়েছেন সেই অনুযায়ী তুমি লোকদের মধ্যে ফায়সালা করতে পারো। তুমি খেয়ানতকারী ও বিশ্বাস ভংগকারীদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হয়ো না।
১৪০
এই রুকূ’ এবং এর পরবর্তী রুকূ’তে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যাপারটি সেই যুগেই সংঘটিত হয়। ঘটনার নায়ক হচ্ছে আনসারদের যাফর গোত্রের তা’মাহ্ বা বশীর ইবনে উবাইরিক নামক এক ব্যক্তি। সে এক আনসারির বর্ম চুরি করে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু হলে সে চোরাই মালটি এক ইহুদীর কাছে রাখে। বর্মের মালিক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করে এবং তা’মাহকে সন্দেহ করে। কিন্তু তা’মাহ, তার ভাই বেরাদাররা এবং বনি যাফরের আরো বহু লোক নিজেদের মধ্যে একমত হয়ে সেই ইহুদীটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ইহুদীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে নিজের নির্দোষিতা প্রকাশ করে কিন্তু তা’মাহর পক্ষপাতিরা তার সমর্থনে খুব জোরেশোরে এগিয়ে যায়। তারা বলতে থাকেঃ এই শয়তান ইহুদী, সেতো সত্যকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করে, তার কথা কেমন করে বিশ্বাসেযাগ্য হতে পারে? বরং আমাদের কথা মেনে নেয়া উচিত কারণ আমরা মুসলমান। এই মোকাদ্দমার বাহ্যিক ধারা বিবরণীতে প্রভাবিত হয়ে নবী করীম ﷺ ইহুদীটির বিরুদ্ধে রায় দিতে এবং অভিযোগকারীকে বনী উবাইরিকের বিরুদ্ধে দোষারোপ করার জন্য সতর্ক করে দিতে প্রায় উদ্যত হয়েছিলেন। এমন সময় অহী নাযিল হয় এবং সমস্ত ব্যাপারটির প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে দেয়া হয়।
একজন বিচারপতি হিসেবে বাহ্যিক যুক্তি প্রমাণ ও সাক্ষী সাবুদের ভিত্তিতে মোকদ্দমার মীমাংসা করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য কোন গোনাহের কাজ ছিল না। এ ধরনের অবস্থা বিচারপতিদের সামনে আসেও। অর্থাৎ মিথ্যা প্রমাণ ও সাক্ষী সাবুদের ভিত্তিতে তাদের কাছে থেকে নিজেদের সপক্ষে রায় নিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু সে সময় ইসলাম ও কুফরের মধ্যে একটি প্রচণ্ড সংঘাত চলছিল। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি মোকদ্দমার বাহ্যিক ধারা বিবরণী শুনে সেই অনুযায়ী ইহুদীর বিরুদ্ধে ফয়সালা করে দিতেন তাহলে ইসলাম বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে এবং সমগ্র ইসলামী দল ও ইসলামী দাওয়াতের বিরুদ্ধে একটি মারাত্মক শক্তিশালী নৈতিক হাতিয়ার পেয়ে যেতো। তারা প্রপাগাণ্ডা করতে থাকতোঃ আহা, যাই বলেন না কেন, এখানে হক ও ইনসাফের কোন বালাই নেই। এখানেও তো সেই একই দলপ্রীতি ও অন্ধ গোত্রপ্রীতি কাজ করছে যার বিরুদ্ধে এরা নিজেরাই প্রচার অভিযান চালিয়ে আসছে। এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য আল্লাহ বিশেষ করে এই মোকদ্দমায় হস্তক্ষেপ করেন।
এই রুকূ’তে একদিকে সেসব মুসলমানদের কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করা হয়েছে যারা নিছক অন্ধ গোত্র ও পরিবার প্রীতির কারণে অপরাধীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। অন্যদিকে সাধারণ মুসলমানদের এই মর্মে শিক্ষা দান করা হয়েছে যে, ন্যায় ও ইনসাফের প্রশ্নে কোনো প্রকার অন্ধ বিদ্বেষ ও কওম প্রীতির অবকাশ না থাকাই উচিত। নিজের দলের লোকেরা বাতিলের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের অযথা সমর্থন করতে হবে এবং অন্য দলের লোকেরা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের প্রতি অন্যায় করতে হবে-এ নীতি কখনো ন্যায়সঙ্গত হতেপারে না।