৯১ ) তাদের পেছনে সে চুপিচুপি তাদের দেবতাদের মন্দিরে ঢুকে পড়লো এবং বললো, “আপনারা খাচ্ছেন না কেন?” ৫১
فَرَاغَ إِلَىٰٓ ءَالِهَتِهِمْ فَقَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ ٩١
৯২ ) কি হলো আপনাদের, কথা বলছেন না কেন?”
مَا لَكُمْ لَا تَنطِقُونَ ٩٢
৯৩ ) এরপর সে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং ডান হাত দিয়ে খুব আঘাত করলো।
فَرَاغَ عَلَيْهِمْ ضَرْبًۢا بِٱلْيَمِينِ ٩٣
৯৪ ) (ফিরে এসে) তারা দৌঁড়ে তাঁর কাছে এলো। ৫২
فَأَقْبَلُوٓا۟ إِلَيْهِ يَزِفُّونَ ٩٤
৯৫ ) সে বললো, “তোমরা কি নিজেদেরই খোদাই করা জিনিসের পূজা করো?
قَالَ أَتَعْبُدُونَ مَا تَنْحِتُونَ ٩٥
৯৬ ) অথচ আল্লাহই তোমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যে জিনিসগুলো তৈরি করো তাদেরকেও।”
وَٱللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ ٩٦
৯৭ ) তারা পরস্পর বললো, “এর জন্য একটি অগ্নিকুণ্ডু তৈরি করো এবং একে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দাও।”
قَالُوا۟ ٱبْنُوا۟ لَهُۥ بُنْيَـٰنًۭا فَأَلْقُوهُ فِى ٱلْجَحِيمِ ٩٧
৯৮ ) তারা তাঁর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করেছি। ৫৩
فَأَرَادُوا۟ بِهِۦ كَيْدًۭا فَجَعَلْنَـٰهُمُ ٱلْأَسْفَلِينَ ٩٨
৯৯ ) ইবরাহীম বললো, ৫৪ “আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, ৫৫ তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন।
وَقَالَ إِنِّى ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّى سَيَهْدِينِ ٩٩
১০০ ) হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দাও।” ৫৬
رَبِّ هَبْ لِى مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ١٠٠
৫১.
এ থেকে পরিস্কর জানা যায়, মন্দিরে মূর্তিদের সামনে বিভিন্ন প্রকার খাবার জিনিস রাখা হয়েছিল।
৫২.
এখানে ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। সূরা আল আম্বিয়ায় এর যে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে তাতে বলা হয়েছে, যখন তারা ফিরে এসে তাদের মন্দিরে সমস্ত মূর্তি ভেঙে পড়ে আছে দেখলো তখন চারদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। কিছু লোক বললো, ইবরাহীম নামের এক যুবক মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে নানান কথা বলে বেড়ায়। একথায় জমায়াতের লোকেরা বললো তাকে ধরে আনো। সে অনুসারে একটি দল দৌড়ে তাঁর কাছে এলো এবং তাঁকে সমবেত জনতার সামনে হাজির করলো।
৫৩.
সূরা আল আম্বিয়ার ৬৯ আয়াতের শব্দাবলী হচ্ছেঃ
قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ
“আমি বললাম, হে আগুন! শীতল হয়ে যাও এবং নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য।”
সূরা আল আনকাবূতের ২৪ আয়াতে বলা হয়েছেঃ
فَأَنْجَاهُ اللَّهُ مِنَ النَّارِ (তারপর আল্লাহ তাঁকে আগুন থেকে উদ্ধার করলেন) এ থেকে প্রমাণ হয়, তারা হযরত ইবরাহীমকে (আ) আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন এবং তারপর আল্লাহ তাঁকে তা থেকে সম্পূর্ণ সূস্থ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। “তারা তাঁর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছিল কিন্তু আমি তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করেছি” আয়াতের এ শব্দগুলোকে এ অর্থে গ্রহণ করা যেতে পারে না যে, তারা হযরত ইবরাহীমকে আগুনে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। বরং ওপরে উল্লেখিত আয়াতের সাথে মিলিয়ে দেখলে তার এ অর্থটিই পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তারা তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে চাচ্ছিল কিন্তু তা করতে পারেনি। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাবার ফলে হযরত ইবরাহীমের (আ) শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়ে গেলো এবং মুশরিকদেরকে আল্লাহ হেয় প্রতিপন্ন করলেন। এ ঘটনাটি বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরাইশদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া যে, তোমরা যে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তান হবার গর্ব করে থাকো তাঁর নীতি তা ছিল না যা তোমরা অবলম্বন করেছো বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম যে নীতি অবলম্বন করেছেন সেটিই ছিল তাঁর নীতি। এখন যদি তোমরা তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এমন ধরনের চক্রান্ত করো যা হযরত ইবরাহীমের জাতি তাঁর বিরুদ্ধে করেছিল, তাহলে শেষ পর্যন্ত তোমরাই হেয়প্রতিপন্ন হবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেয়প্রতিপন্ন করার ক্ষমতা তোমাদের নেই।
৫৪.
আগুন থেকে সুস্থ শরীরে স্বাচ্ছন্দে বেরিয়ে আসার পর যখন হযরত ইবরাহীম (আ) দেশ থেকে বের হয়ে যাবার ফায়সালা করলেন তখন চলার সময় একথাগুলো বলেন।
৫৫.
এর অর্থ হচ্ছে, আমি আল্লাহর জন্য বের হয়ে পড়ছি। কারণ আমি আল্লাহর হয়ে গেছি, তাই আমার জাতি আমার শত্রু হয়ে গেছে। নয়তো আমার ও তার মধ্যে কোন দুনিয়াবী ঝগড়া ছিল না এবং এর ভিত্তিতে আমাকে স্বদেশ ত্যাগ করতে হচ্ছে না। তাছাড়া দুনিয়ায় আমার যাবার মতো কোন ঠিকানা নেই। সমগ্র দেহ-প্রাণকে তাকদীরের হাতে ছেড়ে দিয়ে একমাত্র আল্লাহর ভরসায় বের হয়ে পড়ছি। যেদিকে তিনি নিয়ে যাবেন সেদিকেই চলে যাবো।
৫৬.
এ দোয়া থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একথা জানা যায় যে, হযরত ইবরাহীম সে সময় সন্তানহীন ছিলেন। কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে যে অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে জানা যায়, তিনি কেবলমাত্র নিজের এক স্ত্রী ও এক ভাতিজাকে (হযরত লূত) সাথে নিয়ে দেশ থেকে বের হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মনে এ কামনার উদ্ভব হয়ে থাকবে যে, আল্লাহ যেন তাঁকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন, যে এ প্রবাস জীবনে তাঁর দুঃখ লাঘব করতে সাহায্য করবে।