একঃ নিজেদের প্রতি জুলুমকারী। এরা হচ্ছে এমন সব লোক যারা আন্তরিকতা সহকারে কুরআনকে আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর রসূল বলে মানে কিন্তু কার্যত আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাতের অনুসরণের হক আদায় করে না। এরা মু’মিন কিন্তু গোনাহগার। অপরাধী কিন্তু বিদ্রোহী নয়। দুর্বল ঈমানদার, তবে মুনাফিক এবং চিন্তা ও মননের দিক দিয়ে কাফের নয়। তাই এদেরকে আত্মনিপীড়ক হওয়া সত্ত্বেও কিতাবের ওয়ারিসদের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। নয়তো একথা সুস্পষ্ট, বিদ্রোহী, মুনাফিক এবং চিন্তা ও মননের দিক দিয়ে কাফেরদের প্রতি এ গুণাবলী আরোপিত হতে পারে না। তিন শ্রেণীর মধ্য থেকে এ শ্রেণীর ঈমানদারদের কথা সবার আগে বলার কারণ হচ্ছে এই যে, উম্মাতের মধ্যে এদের সংখ্যাই বেশী।
দুইঃ মাঝামাঝি অবস্থানকারী। এরা হচ্ছে এমন লোক যারা এ উত্তরাধিকারের হক কমবেশী আদায় করে কিন্তু পুরোপুরি করে না। হুকুম পালন করে এবং অমান্যও করে। নিজেদের প্রবৃত্তিকে পুরোপুরি লাগামহীন করে ছেড়ে দেয়নি বরং তাকে আল্লাহর অনুগত করার জন্য নিজেদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালায় কিন্তু কখনো তার বাগডোর ঢিলে করে দেয় এবং গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এভাবে এদের জীবনে ভালো ও মন্দ উভয় ধরনের কাজের সমাবেশ ঘটে। এরা সংখ্যায় প্রথম দলের চাইতে কম এবং তৃতীয় দলের চেয়ে বেশী হয়। তাই এদেরকে দু’নম্বরে রাখা হয়েছে।
তিনঃ ভালো কাজে যারা অগ্রবর্তী। এরা হয় কিতাবের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে প্রথম সারির লোক। এরাই আসলে এ উত্তরাধিকারের হক আদায়কারী। কুরআন ও সুন্নাতের অনুসরণের ক্ষেত্রেও এরা অগ্রগামী। আল্লাহর পয়গাম তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবার ক্ষেত্রেও এরা এগিয়ে থাকে। সত্যদ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকারেও এরাই এগিয়ে যায়। তাছাড়া সত্য, ন্যায়, সুকৃতি ও কল্যাণের যে কোন কাজেও এরাই হয় অগ্রবর্তী। এরা জেনে বুঝে গোনাহ করে না। আর অজান্তে কোন গোনাহর কাজ অনুষ্ঠিত হলেও সে সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই এদের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়। প্রথম দু’টি দলের তুলনায় উম্মাতের মধ্যে এদের সংখ্যা কম। তাই এদের কথা সবার শেষে বলা হয়েছে, যদিও উত্তরাধিকারের হক আদায় করার ক্ষেত্রে এরাই অগ্রগামী।
“এটিই অনেক বড় অনুগ্রহ” বাক্যটির সম্পর্ক যদি নিকটতম বাক্যের সাথে ধরে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে, ভালো কাজে অগ্রগামী হওয়াই হচ্ছে বড় অনুগ্রহ এবং যারা এমনটি করে মুসলিম উম্মাতের মধ্যে তারাই সবার সেরা। আর এ বাক্যটির সম্পর্ক পূর্ববর্তী বাক্যের সাথে মিল রেখে করা হলে এর অর্থ হবে, আল্লাহর কিতাবের হওয়া এবং এ উত্তরাধিকারের জন্য নির্বাচিত হওয়াই বড় অনুগ্রহ এবং আল্লাহর সকল বান্দাদের মধ্যে সেই বান্দাই সর্বশ্রেষ্ঠ যে কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান এনে নির্বাচনে সফলকাম হয়েছে।