আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আর রূম

৬০ আয়াত

১১ ) আল্লাহ সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই তার পুনরাবৃত্তি করবেন। ১৩ তারপর তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।
ٱللَّهُ يَبْدَؤُا۟ ٱلْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ١١
১২ ) আর যখন সে সময়টি ১৪ সমাগত হবে, সেদিন অপরাধী বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যাবে। ১৫
وَيَوْمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يُبْلِسُ ٱلْمُجْرِمُونَ ١٢
১৩ ) তাদের বানানো শরীকদের মধ্য থেকে কেউ তাদের সুপারিশ করবে না ১৬ এবং তারা নিজেদের শরীকদের অস্বীকার করবে। ১৭
وَلَمْ يَكُن لَّهُم مِّن شُرَكَآئِهِمْ شُفَعَـٰٓؤُا۟ وَكَانُوا۟ بِشُرَكَآئِهِمْ كَـٰفِرِينَ ١٣
১৪ ) যেদিন সেই সময়টি সমাগত হবে সেদিন (সমস্ত মানুষ) পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ১৮
وَيَوْمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍۢ يَتَفَرَّقُونَ ١٤
১৫ ) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা একটি বাগানে ১৯ আনন্দে থাকবে। ২০
فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ فَهُمْ فِى رَوْضَةٍۢ يُحْبَرُونَ ١٥
১৬ ) আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও পরলোকের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলেছে ২১ তাদেরকে আযাবে হাজির রাখা হবে।
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَلِقَآئِ ٱلْـَٔاخِرَةِ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ فِى ٱلْعَذَابِ مُحْضَرُونَ ١٦
১৭ ) কাজেই ২২ আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো ২৩ যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় এবং যখন তোমাদের সকাল হয়।
فَسُبْحَـٰنَ ٱللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ ١٧
১৮ ) আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে তাঁর জন্যই প্রশংসা এবং (তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো) তৃতীয় প্রহরে এবং যখন তোমাদের কাছে এসে যায় যোহরের সময়। ২৪
وَلَهُ ٱلْحَمْدُ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَعَشِيًّۭا وَحِينَ تُظْهِرُونَ ١٨
১৯ ) তিনি জীবিত থেকে মৃত্যুকে বের করেন এবং মৃত থেকে জীবিত কে বের করে আনেন এবং ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। ২৫ অনুরূপভাবে তোমাদেরও (মৃত অবস্থা থেকে) বের করে নিয়ে যাওয়া হবে।
يُخْرِجُ ٱلْحَىَّ مِنَ ٱلْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ ٱلْمَيِّتَ مِنَ ٱلْحَىِّ وَيُحْىِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ وَكَذَٰلِكَ تُخْرَجُونَ ١٩
২০ ) তাঁর ২৬ নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তারপর সহসা তোমরা হলে মানুষ, (পৃথিবীর বুকে) ছড়িয়ে পড়ছো। ২৭
وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍۢ ثُمَّ إِذَآ أَنتُم بَشَرٌۭ تَنتَشِرُونَ ٢٠
১৩.
কথাটি দাবীর ভঙ্গিতে বলা হলেও দাবীর স্বপক্ষে যুক্তিও এর মধ্যে রয়ে গেছে। সুস্পষ্ট বুদ্ধিবৃত্তি একথার সাক্ষ্য দিয়ে থাকে যে, সৃষ্টির সূচনা করা যার পক্ষে সম্ভবপর তাঁর পক্ষে একই সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি করা আরো ভালোভাবেই সম্ভবপর। সৃষ্টির সূচনা তো একটি বাস্তব সত্য, বিষয়টি সবার সামনেই রয়েছে। কাফের ও মুশরিকরাও এটাকে আল্লাহর কাজ বলে স্বীকার করে। এরপর যে আল্লাহ‌ এ সৃষ্টির সূচনা করেন তিনি এর পুনরাবৃত্তি করতে পারেন না, তাদের এ চিন্তা একেবারেই অর্থহীন ও অযৌক্তিক।
১৪ .
অর্থাৎ আল্লাহর দিকে ফিরে যাবার এবং তাঁর সামনে উপস্থিত হবার সময়।
১৫.
মূল শব্দ হচ্ছে اِبْلَاس এর অর্থ হচ্ছে চরম হতাশা ও দুঃখ-বেদনার কারণেকোন ব্যক্তির একেবারে হতবাক ও স্তব্ধ হয়ে যাওয়া। আশার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেখে বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে যাওয়া এবং কোনো যুক্তি ও সমর্থন না পাওয়ার কারণে রুদ্ধশ্বাস হওয়া। এ শব্দটি যখন অপরাধীর জন্য ব্যবহার করা হয় তখন মনের পাতায় তার যে ছবি ভেসে ওঠে তা হচ্ছে এই যে, এক ব্যক্তিকে অপরাধ করার সময় হাতে নাতে পাকড়াও করা হয়েছে। সে পালাবার কোন পথ পাচ্ছে না এবং নিজের সাফাই গাইবার জন্য কোন জিনিস পেশ করে বের হয়ে আসার আশাও রাখে না। তাই তার কণ্ঠরুদ্ধ এবং চরম হতাশা ও মনমরা অবস্থায় সে অবাক বিস্ময়ে থ হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত একথাটাও উপলব্ধি করতে হবে যে, এখানে অপরাধী বলতে কেবল দুনিয়ায় যারা হত্যা, চুরি, ডাকাতি ও এ ধরনের অন্যান্য অপরাধ করে তাদের কথা বলা হয়নি বরং এমন সব লোকের কথা এখানে বলা হয়েছে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তাঁর রসূলদের শিক্ষা ও পথনির্দেশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে এবং আখেরাতে জবাবদিহি করার কথা অস্বীকার করে অথবা সে ব্যাপারে নির্বিকার থেকে এবং দুনিয়ায় আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের অথবা নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব করতে থেকেছে। এ মূল ভ্রষ্টতার সাথে সাধারণ্যে অপরাধ বলা হয়ে থাকে এমন কাজ তারা করলেও বা না করলেও কিছু আসে যায় না। এছাড়াও এমনসব লোকও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে যারা আল্লাহকে মেনে নিয়ে তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনে আখেরাতকে স্বীকার করে নিয়ে তারপর আবার জেনে বুঝে নিজেদের রবের নাফরমানী করেছে এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের বিদ্রোহী নীতিতে অবিচল থেকেছে। এরা নিজেদের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীতে আখেরাতের জগতে হঠাৎ করে জেগে উঠবে এবং দেখবে, সত্যিই তো এখানে সেই পরবর্তী জীবন শুরু হয়ে গেছে, যা অস্বীকার করে অথবা যাকে উপেক্ষা করে তারা দুনিয়ার কাজ করতো। তখন তাদের বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে যাবে এবং তাদের ওপর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যাবে يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ বাক্যাংশে যার ছবি অংকন করা হয়েছে।

১৬.
তিন ধরনের সত্তার ওপর শরীক শব্দটির প্রয়োগ হয়। এক, ফেরেশতা, নবী, আউলিয়া, শহীদ ও পুণ্যবান লোক। মুশরিকরা বিভিন্ন যুগে এদেরকে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী গণ্য করে এদের সামনে বন্দেগী ও পূজার যাবতীয় অনুষ্ঠান পালন করতো। কিয়ামতের দিন তারা পরিষ্কার বলে দেবে, এসব কিছু করেছো তোমরা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বরং আমাদের শিক্ষা ও পথনির্দেশের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করে। তাই তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তোমাদের শাফাআতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে আমরা কিছু আবেদন নিবেদন করবো, এ আশা আমাদের ব্যাপারে করো না। দুই, এমন সব জিনিস যেগুলোর চেতনা নেই অথবা প্রাণ নেই। যেমনঃ চাঁদ, সূর্য, তারকা, গাছ, পাথর ও পশু ইত্যাদি। মুশরিকরা তাদেরকে খোদায় পরিণত করে, এদের পূজা-উপাসনা করে এবং এদের কাছে প্রার্থনা নিবেদন করে। কিন্তু এই জড় ও নির্জীব জিনিসগুলো একথা জানতেই পারে না যে, আল্লাহর প্রতিনিধি মানুষ এসব নজরানা তাদের জন্য উৎসর্গ করছে। একথা সুস্পষ্ট যে, এদের মধ্যে একজনও তাদের সুপারিশের জন্য সামনে অগ্রসর হবে না। তিন, এমন সব বড় বড় অপরাধী যারা নিজেরাই চেষ্টা করে, ধোঁকা ও প্রতারণার পথ অবলম্বন করে, মিথ্যার জাল ছড়িয়ে দিয়ে অথবা শক্তি প্রয়োগ করে দুনিয়ায় আল্লাহর বান্দাদের থেকে নিজেদের বন্দেগী ও পূজা আদায় করে নিয়েছে। যেমন শয়তান, ভণ্ড ও ধর্মীয় নেতা এবং জালেম ও স্বৈরাচারী শাসনকর্তা ইত্যাদি। এরা সবাই সেখানে বিপদের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িতে থাকবে। নিজেদের এ ভক্তবৃন্দের সুপারিশের সামনে অগ্রসর হওয়া তো দূরের কথা বরং তারা নিজেদের আমলনামার বোঝা হালকা করার চেষ্টা করতে থাকবে। হাশরের ময়দানে তারা একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে থাকবে যে, এদের অপরাধের জন্য এরা নিজেরাই দায়ী এবং এদের পথভ্রষ্টতার জন্য আমাদের দুর্ভোগ পোহানো উচিত নয়। এভাবে মুশরিকরা সেখানে কোনো দিক থেকে কোনো প্রকার শাফাআত লাভ করতে সক্ষম হবে না।
১৭.
অর্থাৎ সে সময় মুশরিকরা একথা স্বীকার করবে যে, তাদেরকে আল্লাহর শরীক করে তারা ভুল করেছিল। প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্য থেকে কারো আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে কোনো অংশ নেই, এ সত্যটি তখন তাদের সামনে উন্মোচিত হয়ে যাবে। তাই দুনিয়ায় আজ তারা যে শিরকের ওপর টিকে থাকার জন্য চাপ দিচ্ছে আখেরাতে তাকেই অস্বীকার করবে।
১৮.
অর্থাৎ দুনিয়ায় আজ জাতি, বংশ, গোত্র, স্বদেশ, ভাষা, পরিবার এবং অর্থনৈতিক রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যতগুলো দলীয় বিভক্তি রয়েছে এসবই সেদিন ভেঙ্গে পড়বে। নির্ভেজাল আকীদা-বিশ্বাস ও নৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে নতুন করে এখন ভিন্নতর দল গঠিত হবে। একদিকে সমগ্র মানব জাতির পূর্বের ও পরের সমগ্র প্রজন্মের মধ্য থেকে মু’মিন ও সৎ লোকদেরকে ছেঁটে আলাদা করে নেয়া হবে এবং তাদের সবাই হবে একটি দলভুক্ত। অন্যদিকে এক ধরনের ভ্রান্ত মতবাদ ও বিশ্বাস পোষণকারী এবং এক এক ধরনের অপরাধী মানুষদেরকে সেই বিশাল জনসমুদ্র থেকে ছাঁটাই বাছাই করে আলাদা করে নেয়া হবে এবং তাদের পৃথক পৃথক দল সৃষ্টি হয়ে যাবে। অন্য কথায় এভাবে বলা যায়, ইসলাম যেসব জিনিসকে এ দুনিয়ায় বিভেদ অথবা ঐক্যের ভিত্তি গণ্য করে এবং যেগুলোকে জাহেলিয়াত পন্থীরা এখানে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, আখেরাতে তারই ভিত্তিতে বিভেদও হবে আবার ঐক্যও।

ইসলাম বলে, মানুষদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং পরস্পরের সাথে জুড়ে দেবার আসল জিনিস হচ্ছে তাঁর আকীদা-বিশ্বাস ও নৈতিক চরিত্র। যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর নির্দেশের ওপর তাদের জীবন ব্যবস্থার ভিত গড়ে তোলে তারা সবাই একই দলভুক্ত। তাদের সম্পর্ক বিভিন্ন বংশ ও দেশের সাথেও হতে পারে। অন্যদিকে কুফরী ও ফাসেকীর পথ অবলম্বনকারীরা অন্য একটি দলভুক্ত। তাদের সম্পর্ক যে কোনো বংশ ও দেশের সাথেও হতে পারে। এদের উভয়ের জাতীয়তা এক হতে পারে না। এরা দুনিয়ায় সম্মিলিতভাবে একক জীবনপথ নির্মাণ করে তার ওপর একসাথে চলতে পারে না। ওদিকে আখেরাতেও তাদের পরিণাম একই রকম হতে পারে না। দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত তাদের পথ ও মনযিল পরস্পর থেকে আলাদা হয়। পক্ষান্তরে জাহেলিয়াতপন্থীরা প্রত্যেক যুগে এ ব্যাপারে জোর দিতে থেকেছে এবং আজও তারা এ ব্যাপারে অবিচল যে, বংশ, দেশ ও ভাষার ভিত্তিতে মানুষের দলবদ্ধ হওয়া উচিত। যাদের মধ্যে এ ভিত্তিগুলোর ব্যাপারে একাত্মতা রয়েছে তাদের ধর্ম ও আকীদা-বিশ্বাসের বিভিন্নতা সত্ত্বেও এক জাতিতে পরিণত হয়ে এমনি ধরনের অন্যান্য জাতির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়া উচিত এবং জাতীয়তাবাদের এমন একটি জীবন ব্যবস্থা থাকা উচিত যেখানে তাওহীদ, শিরক ও নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসীরা সবাই একসাথে চলতে পারে। এটিই ছিল আবু জেহেল, আবু লাহাব ও কুরাইশ সরদারদের চিন্তাধারা। তারা বারবার মুহাম্মাদ ﷺ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছিল যে, এ ব্যক্তি এসে আমাদের জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে কুরআন মাজীদ এখানে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করছে যে, এ দুনিয়ার মিথ্যার ভিত্তিতে তোমরা এই যেসব দল গঠন করেছো এগুলো সবই শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়বে। ইসলাম দুনিয়ার এ জীবনে যে বিশ্বাস জীবনাদর্শ ও নৈতিক চরিত্রের ভিত্তিতে পার্থক্য সৃষ্টি করতে চায় মানব জাতির মধ্যে তারি ভিত্তিতে স্থায়ী পার্থক্য গড়ে উঠবে। যাদের গন্তব্য এক নয় তাদের জীবনের পথই বা কেমন করে এক হতে পারে।

১৯.
‘একটি বাগান’ একথাটি এখানে বাগানের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষার মতো আমাদের ভাষায়ও একটি পরিচিত বর্ণনাভঙ্গী রয়েছে।কোন ব্যক্তি কাউকে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে বলে এবং একই সঙ্গে একথাও বলে, যদি তুমি একাজটি করে দাও তাহলে আমি তোমাকে একটি জিনিস দেবো। এখানে একটি জিনিসের অর্থ এ হয় না যে, সংখ্যার দিক দিয়ে তা একটিই হবে। বরং এর উদ্দেশ্য হয়, এর পুরস্কারস্বরূপ তোমাকে একটি অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস দেবো, যা পেয়ে তুমি আনন্দে উৎফুল্ল হবে।
২০.
এখানে يُحْبَرُونَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আনন্দ, স্বাদ, আড়ম্বর, জাঁকজমক ও মর্যাদার ধারণা এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ সেখানে অত্যন্ত মর্যাদা সহকারে রাখা হবে, আনন্দে ও আরাম-আয়েশে থাকবে এবং সব রকম ভোগে পরিতৃপ্ত হবে।
২১.
একথাটি অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য যে, ঈমানের সাথে সৎকাজের কথা বলা হয়েছে, যার ফলে মানুষ মহান মর্যাদা সম্পন্ন পরিণামফল ভোগ করবে। কিন্তু কুফরীর অশুভ পরিণাম বর্ণনা প্রসঙ্গে অসৎকাজের কোনো বর্ণনা দেয়া হয়নি। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় যে, মানুষের পরিণাম নষ্ট করার জন্য কুফরীই যথেষ্ট। অসৎকাজের সাথে তার শামিল হওয়ায় বা না হওয়ায় কিছু যায় আসে না।
২২.
এখানে “কাজেই” শব্দটি এ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে যে, যখন তোমরা জানতে পারলে ঈমান ও সৎকাজের এহেন পরিণাম হবে এবং কুফরী ও মিথ্যা আরোপের এহেন পরিণাম হবে তখন তোমাদের এ ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তাছাড়া “কাজেই” শব্দটির এ অর্থও হয় যে, মুশরিক ও কাফেররা পরকালীন জীবনকে অসম্ভব গণ্য করে আল্লাহকে মূলত অক্ষম ও অপারগ ঘোষণা করছে। কাজেই এর মোকাবিলায় তুমি আল্লাহর প্রশংসা করো, তাঁর মহিমা প্রচার করো এবং এ দুর্বলতা থেকে তিনি মুক্ত একথা ঘোষণা করে দাও। এখানে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাঁর মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে সমগ্র মু’মিন সমাজকে।
২৩ .
আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে এই যে, মুশরিকরা নিজেদের শিরক ও আখেরাত অস্বীকারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি যেসব দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা আরোপ করে থাকে সেই অনন্য মহামহিম সত্ত্বাকে তা থেকে পাক-পবিত্র ঘোষণা করা এবং একথা প্রকাশ করা। এ ঘোষণা ও প্রকাশের সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে নামায। এরই ভিত্তিতে ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ, ইবনে যায়েদ ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে “তাসবীহ পাঠ” তথা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ নামায পড়া। এ তাফসীরের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের এ আয়াতের মধ্যেই রয়ে গেছে অর্থাৎ এখানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার জন্য কয়েকটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট, আল্লাহ‌ সমস্ত দোষ-ত্রুটিমুক্ত-এ আকীদা পোষণ করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে এ জন্য আবার সকাল-সাঁঝে এবং দুপুরে(জোহর) ও রাতের (ঈশা) নামাযের সময় নির্ধারণের প্রশ্নই উঠতো না। কারণ এ আকীদা তো মুসলমানদের সবসময়ই পোষণ করতে হবে। এভাবে যদি শুধুমাত্র মুখেই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলেও এ সময়গুলো নির্ধারণ করার কোন অর্থ হয় না। কারণ মুসলমানকে তো সবসময় এ আকীদা প্রকাশ করতে হবে। এভাবে যদি নিছক কণ্ঠের মাধ্যমে আল্লাহর পবিত্রতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলেও এসময়গুলো নির্ধারণ করা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ মুসলমানকে তো সর্বক্ষণ একথা প্রকাশ করতে হবে। তাই সময় নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে আল্লাহর গুণ ও মহিমা প্রচার করার হুকুম নিঃসন্দেহে তাঁর একটি বিশেষ কার্যকর কাঠামোর প্রতিই ইঙ্গিত করে। আর এ কার্যকর কাঠামোটি নামায ছাড়া আর কিছুই নয়।
২৪.
এ আয়াতে চারটি সময়ের প্রতি ইশারা করা হয়েছেঃ ফজর, মাগরিব, আসর ও যোহর। এছাড়াও নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরো যেসব ইশারা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ

أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ

“নামায কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠ করো।” (বনী ইসরাঈল ৭৮)

وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ

“আর নামায কায়েম করো দিনের দুই মাথায় এবং রাতের কিছু অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর।” (হুদ, ১১৪ আয়াত)

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ

“আর তোমার রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো সূর্য উদিত হবার আগে এবং তার অস্ত যাবার আগে। আর রাতের কিছু সময়ও আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং দিনের প্রান্তভাগেও।” (ত্বাহা, ১৩০ আয়াত)

এর মধ্যে থেকে প্রথম আয়াতটি বলছেঃ নামাযের সময়সীমা হচ্ছে সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ঈশা পর্যন্ত এবং এরপর হচ্ছে ফজরের সময়। দ্বিতীয় আয়াতে দিনের দুই প্রান্ত অর্থ ফজর ও মাগরিবের সময় এবং কিছু রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পরের সময়টি হচ্ছে ঈশার ওয়াক্ত। তৃতীয় আয়াতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে অর্থ ফজরের সময় এবং অস্তমিত হওয়ার পূর্বে অর্থ আসরের সময়। রাতের সময়ের মধ্যে মাগরিব ও ঈশা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। আর দিনের প্রান্ত হচ্ছে তিনটিঃ এক, সকাল। দুই, সূর্য ঢলে পড়া এবং তিন, মাগরিব। এভাবে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা আজ যে পাঁচটি সময়ে নামায পড়ে থাকে কুরআন মাজীদ বিভিন্ন স্থানে সে সময়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছে। কিন্তু একথা স্পষ্ট শুধুমাত্র এ আয়াতগুলো পাঠ করেকোন ব্যক্তিও নামাযের সময় নির্ধারণ করতে পারতো না। মহান আল্লাহর নিযুক্ত কুরআনের শিক্ষক মুহাম্মাদ ﷺ নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে এ ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনা না দিলে তাদের পক্ষে সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া সম্ভবপর ছিল না।

এখানে একটু থেমে হাদীস অস্বীকারকারীদের ধৃষ্ঠতার কথা ভাবুন। তারা “নামায পড়া” কে বিদ্রূপ করে এবং বলে, মুসলমানরা বর্তমানে যে নামায পড়ছে এটা আদতে সে জিনিসই নয় কুরআনে যার হুকুম দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কুরআন তো নামায কায়েম করার হুকুম দেয় এবং তার অর্থ নামায পড়া নয় বরং “রবুবিয়াতের ব্যবস্থা” কায়েম করা। এখন তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করুন, রবুবিয়াতের এ অভিনব ব্যবস্থাটি কোন্ ধরনের যাকে সূর্য উদিত হবার পূর্বেই কায়েম করা যেতে পারে অথবা আবার সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে কিছু রাত অতিবাহিত হওয়া পর্যন্তও কায়েম করা যায়? আর কোন্ ধরনের রবুবিয়াত ব্যবস্থা বিশেষ করে জুমার দিন কায়েম করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে?

إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ

আর বিশেষ ধরনের এমন কি রবুবিয়াত ব্যবস্থা আছে যা কায়েম করার জন্য মানুষ যখন অগ্রসর হয় তখন প্রথমে মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে ফেলে গাঁট পর্যন্ত আর সেই সাথে মাথাও মসেহ করে নেয়, অন্যথায় তাকে কায়েম করা যেতে পারে না?

إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ

আর রবুবিয়াত ব্যবস্থার মধ্যে এমন কি বিশেষত্ব আছে, যার ফলে যদি মানুষ নাপাকির অবস্থায় থাকে, তাহলে যতক্ষণ গোসল না করে নেয় ততক্ষণ তাকে কায়েম করতে পারে না?

لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا

আর এটাই বা কেমন ব্যাপার, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে মিলন করে এবং সেখানে পানি না পাওয়া যায় তাহলে এ অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থাকে কায়েম করার জন্য পাক-পবিত্র মাটিতে হাত ঘসে নিয়ে সেই হাত মুখমণ্ডলের ওপর ঘষতে হবে?

أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ منه-

আর এ কেমন ধরনের অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থা যে, যদি কখনো সফর করতে হয় তাহলে মানুষ তাকে পুরোপুরি কায়েম করার পরিবর্তে অর্ধেকটাই কায়েম করে?

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ

আর এটা কোন্ ধরনের কৌতুকপ্রদ ব্যাপার যে, যদি মুসলিম সেনাদল শত্রুর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তাহলে সেনাদলের অর্ধেক সিপাহী অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে “রবুবিয়াত ব্যবস্থা” কায়েম করতে থাকবে এবং বাকি অর্ধেক ময়দানে শত্রুর মোকাবিলা করতে থাকবে? তারপর যখন প্রথম দলটি ইমামের পেছনে রবুবিয়াত ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে একটি সিজদা করে নেবে তখন উঠে দাঁড়িয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি তাদের জায়গায় এসে ইমামের পেছনে “রবুবিয়াত ব্যবস্থা” কায়েম করতে থাকবে?

وَإِذَا كُنْتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ

কুরআন মাজীদের এ আয়াতগুলো একথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছে যে নামায কায়েম করার অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের নামায কায়েম করা যা সারা দুনিয়ার মুসলমানরা পড়ে থাকে। কিন্তু হাদীস অস্বীকারকারীদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা নিজেরা পরিবর্তিত না হয়ে ইসলামকে পরিবর্তিত করার জন্য চাপ দিয়ে চলছে। আসলে যতক্ষণকোন ব্যক্তি মহান আল্লাহর মোকাবিলায় একেবারেই শঙ্কাহীন ও নির্লজ্জ না হয়ে যায় ততক্ষণ সে তাঁর বাণীর সাথে এ বিদ্রূপাত্মক আচরণ করতে পারে না, যা এরা করছে। অথবা এমন এক ব্যক্তি কুরআনের সাথে এ তামাশা করতে পারে যে নিজের মনে কুরআনকে আল্লাহর কালাম বলে স্বীকৃতি দেয় না এবং নিছক ধোঁকা দেবার জন্য কুরআন কুরআন বলে চিৎকার করে মুসলমানদেরকে গোমরাহ করতে চায়। (এ প্রসঙ্গে সামনের দিকে ৫০ টীকাও দেখে নিন।)

২৫.
অর্থাৎ যে আল্লাহ‌ প্রতিমূহুর্তে তোমাদের সামনে একাজ করছেন তিনি মানুষের মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করতে অক্ষম হতে পারেন কেমন করে? তিনি সবসময় জীবিত মানুষ ও জন্ম-জানোয়ারদের মধ্য থেকে বর্জ্য পদার্থ (Waste Matter) বের করছেন যেগুলোর মধ্যে জীবনের সামান্যতম গন্ধ নেই। তিনি প্রতি মুহূর্তে নিষ্প্রাণ বস্তুর (Dead Matter) মধ্যে জীবনসঞ্চার করে অসংখ্য পশু, উদ্ভিদ ও মানুষ সৃষ্টি করে চলছেন। অথচ যেসব উপাদান থেকে এ জীবন্ত সত্ত্বাগুলোর শরীর গঠিত হচ্ছে তাদের মধ্যে সামান্যতমও জীবনের চিহ্ন নেই। তিনি প্রতি মুহূর্তে তোমাদের এ দৃশ্য দেখিয়ে চলছেন যে, অনুর্বর, অনুন্নত, অনাবাদি পতিত জমিতে বৃষ্টির পানি পড়ার সাথে সাথেই সহসা সেখানে প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনের বিপুল সমারোহ দেখা যায়। এ সবকিছু দেখার পরও যদি কোন ব্যক্তি মনে করে সৃষ্টির এ কারখানা পরিচালনাকারী আল্লাহ‌ মানুষের মৃত্যুর পর তাকে পুনরায় জীবিত করতে অক্ষম, তাহলে আসলে তার বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। তার বাইরের চোখ দু’টি যে বাহ্যিক দৃশ্যাবলী দেখে থাকে, তার বুদ্ধির চোখ তার মধ্যে দৃশ্যমান উজ্জ্বল সত্য দেখতে পায় না।
২৬.
মনে রাখতে হবে এখান থেকে রুকুর শেষ অবধি মহান আল্লাহর যেসব নিদর্শন বর্ণনা করা হচ্ছে, সেগুলো তো একদিকে বক্তব্য পরম্পরার সাথে সম্পর্ক রেখে পরকালীন জীবনের সম্ভাবনা ও অস্তিত্বশীলতার কথা প্রমাণ করে এবং অন্যদিকে এ নিদর্শনগুলোই প্রমাণ করে যে, এ বিশ্ব-জাহান ইলাহ বিহীন নয় বরং এর ইলাহও বহু নয় বরং এক ও একক ইলাহই এর স্রষ্টা, পরিচালক, মালিক ও শাসক। তিনি ছাড়া মানুষের আর কোন মাবুদ হওয়া উচিত নয়। অনুরূপভাবে এ রুকুটি বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে পূর্বের ও পরের উভয় ভাষণের সাথে সম্পৃক্ত।
২৭.
অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি রহস্য এছাড়া আর কি যে, কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার, যেগুলো এ পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায়। যেমন কিছু কার্বন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং এ ধরনের আরো কিছু উপাদান। এগুলোর রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্ত্বা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা-কল্পনার এমন সব অদ্ভূত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খূঁজে পাওয়া যেতে পারে না। তারপর শুধু এতটুকুই নয় যে, হঠাৎ একজন মানুষ এমনি ধরনের এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে বরং তার মধ্যে এমন সব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যার বদৌলতে কোটি কোটি মানুষ সে একই কাঠামো এবং যোগ্যতার অধিকারী হয়ে অসংখ্য উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং সীমাসংখ্যাহীন ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে। তোমার বুদ্ধি কি এ সাক্ষ্য দেয়, এ চূড়ান্ত জ্ঞানময় সৃষ্টি কোনো জ্ঞানী স্রষ্টার সৃষ্টিকর্ম ছাড়াই আপনা আপনিই অস্তিত্বশীল হয়েছে? তুমি কি সজ্ঞানে ও সচেতন অবস্থায় একথা বলতে পারো, মানুষ সৃষ্টির মতো মহত্তম পরিকল্পনা, তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা এবং পৃথিবী ও আকাশের সংখ্যাব্যতীত শক্তিকে মানব জীবন গঠনের উপযোগী করে দেয়া, এগুলো কি বহু ইলাহর চিন্তা ও ব্যবস্থাপনার ফল হতে পারে? আর তোমরা যখন মনে করতে থাকো, যে আল্লাহ‌ মানুষকে নিরেট অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি সেই মানুষকে মৃত্যু দান করার পর পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না তখন তোমাদের মস্তিষ্ক কি সঠিক অবস্থায় থাকে?
অনুবাদ: