আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল কাসাস

৮৮ আয়াত

৬১ ) আচ্ছা, যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এবং সে তা পেতে যাচ্ছে, সে ব্যক্তি কি কখনো এমন ব্যক্তির মতো হতে পারে, যাকে আমি কেবলমাত্র দুনিয়ার জীবনের সাজ-সরঞ্জাম দিয়েছি এবং তারপর কিয়ামতের দিনের শাস্তির জন্য তাকে হাজির করা হবে? ৮৪
أَفَمَن وَعَدْنَـٰهُ وَعْدًا حَسَنًۭا فَهُوَ لَـٰقِيهِ كَمَن مَّتَّعْنَـٰهُ مَتَـٰعَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ثُمَّ هُوَ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ مِنَ ٱلْمُحْضَرِينَ ٦١
৬২ ) আর (তারা যেন ভুলে না যায়) সে দিনটি যখন তিনি তাদেরকে ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, “কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা আমার শরীক বলে মনে করতে?” ৮৫
وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَآءِىَ ٱلَّذِينَ كُنتُمْ تَزْعُمُونَ ٦٢
৬৩ ) এ উক্তি যাদের ওপর প্রযোজ্য হবে ৮৬ তারা বলবে, “হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই এ লোকদেরকেই আমরা গোমরাহ করেছিলাম। এদেরকে ঠিক সেভাবেই গোমরাহ করেছিলাম যেভাবে আমরা নিজেরা গোমরাহ হয়েছিলাম। আমরা আপনার সামনে দায় মুক্তির কথা প্রকাশ করছি। ৮৭ এরা তো আমাদের বন্দেগী করতো না।” ৮৮
قَالَ ٱلَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلْقَوْلُ رَبَّنَا هَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَغْوَيْنَآ أَغْوَيْنَـٰهُمْ كَمَا غَوَيْنَا ۖ تَبَرَّأْنَآ إِلَيْكَ ۖ مَا كَانُوٓا۟ إِيَّانَا يَعْبُدُونَ ٦٣
৬৪ ) তারপর তাদেরকে বলা হবে, এবার তোমরা যাদেরকে শরীক বানিয়েছিলে তাদেরকে ডাকো। ৮৯ এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদের কোন জবাব দেবে না এবং এরা আযাব দেখে নেবে। হায়! এরা যদি হিদায়াত গ্রহণকারী হতো!
وَقِيلَ ٱدْعُوا۟ شُرَكَآءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا۟ لَهُمْ وَرَأَوُا۟ ٱلْعَذَابَ ۚ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَهْتَدُونَ ٦٤
৬৫ ) আর তারা (যেন না ভুলে যায়) সেদিনের কথা যেদিন তিনি ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, “যে রসূল পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে তোমরা কি জবাব দিয়েছিলে?”
وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ مَاذَآ أَجَبْتُمُ ٱلْمُرْسَلِينَ ٦٥
৬৬ ) সেদিন তাদের কোন জবাব থাকবে না, তারা নিজেদের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে না।
فَعَمِيَتْ عَلَيْهِمُ ٱلْأَنۢبَآءُ يَوْمَئِذٍۢ فَهُمْ لَا يَتَسَآءَلُونَ ٦٦
৬৭ ) তবে যে ব্যক্তি আজ তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে সে-ই সাফল্য লাভের আশা করতে পারে।
فَأَمَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا فَعَسَىٰٓ أَن يَكُونَ مِنَ ٱلْمُفْلِحِينَ ٦٧
৬৮ ) তোমার রব যা চান সৃষ্টি করেন এবং (তিনি নিজেই নিজের কাজের জন্য যাকে চান) নির্বাচিত করে নেন। এ নির্বাচন তাদের কাজ নয়। ৯০ আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যে শিরক করে তার অনেক ঊর্ধ্বে।
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخْتَارُ ۗ مَا كَانَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ ۚ سُبْحَـٰنَ ٱللَّهِ وَتَعَـٰلَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ ٦٨
৬৯ ) তোমার রব জানেন যা কিছু তারা মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে এবং যা কিছু তারা প্রকাশ করে। ৯১
وَرَبُّكَ يَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُورُهُمْ وَمَا يُعْلِنُونَ ٦٩
৭০ ) তিনিই এক আল্লাহ‌ যিনি ছাড়া ইবাদাতের আর কোন হকদার নেই। তাঁরই জন্য প্রশংসা দুনিয়ায়ও, আখেরাতেও। শাসন কর্তৃত্ব তাঁরই এবং তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।
وَهُوَ ٱللَّهُ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ ٱلْحَمْدُ فِى ٱلْأُولَىٰ وَٱلْـَٔاخِرَةِ ۖ وَلَهُ ٱلْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ٧٠
৮৪.
এটা হচ্ছে তাদের আপত্তির চতুর্থ জবাব। এ জবাবটি বুঝতে হলে প্রথমে দু’টি কথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবেঃ

একঃ দুনিয়ার বর্তমান জীবন। এর সময়কাল কারো জন্যই কতকগুলো বছরের বেশী হয় না। এটি নিছক একটি সফরের সাময়িক পর্যায় মাত্র। আসল জীবনটি হবে চিরস্থায়ী। সেটি সামনের দিকে আসছে। বর্তমান সাময়িক জীবনে মানুষ যতই সহায়-সম্পদ জমা করুক না কেন এবং কয়েক বছরের এ জীবনে যতই আয়েশ-আরাম করুক, এ জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবেই এবং এখানকার সমস্ত বিত্ত-বৈভব সবকিছুই এখানে রেখেই তাকে চলে যেতে হবে। এ সংক্ষিপ্ত জীবনকালের আয়েশ-আরামের বিনিময়ে যদি মানুষকে আগামীর অন্তহীন জীবনে চিরকালীন দুরবস্থা ও বিপদের মধ্যে কাটাতে হয়, তাহলে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ ক্ষতির সওদা করতে পারে না। এর মোকাবিলায় একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এখানে কয়েক বছর বিপদ আপদের মধ্যে জীবন কাটিয়ে দেয়াকে প্রাধান্য দেবে। সে এর মাধ্যমে এমন সব কল্যাণ ও নেকী উপার্জন করতে চাইল, যা পরবর্তী অন্তহীন জীবনে তার চিরকালীন আয়েশ-আরামের কারণ হবে।

দুইঃ আল্লাহর দ্বীন মানুষের কাছে দাবী করে না যে, সে এ দুনিয়ার জীবনোপকরণ থেকে লাভবান হতে পারবে না এবং এখানকার রূপ সৌন্দর্য অযথা পদদলিত করে তাকে এগিয়ে যেতে হবে। তার দাবী শুধু এতটুকু যে, দুনিয়ার জীবনের ওপর তাকে আখেরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ দুনিয়া ধ্বংসশীল এবং আখেরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়ার ভোগ-তৃপ্তি নিম্ন পর্যায়ের। পক্ষান্তরে আখেরাতের ভোগ-তৃপ্তি উচ্চ ও উন্নত পর্যায়ের। তাই মানুষকে দুনিয়ার এমন সম্পদ ও সৌন্দর্য করায়ত্ত করতে হবে যা আখেরাতের চিরন্তন জীবনে তাকে সফলকাম করবে অথবা কমপক্ষে সেখানকার চিরন্তন ক্ষতির সাগরে তাকে ভাসিয়ে দেবে না। কিন্তু যেখানে মোকাবিলার ব্যাপার এসে যায় অর্থাৎ দুনিয়ার সাফল্য ও আখেরাতের সাফল্য পরস্পর বিরোধী হয়ে দাঁড়ায় সেখানে মানুষের কাছে সত্য দ্বীনের দাবী এবং ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবীও এটিই যে, মানুষ দুনিয়াকে আখেরাতের জন্য উৎসর্গ করে দিক এবং এ দুনিয়ার সাময়িক সম্পদ সৌন্দর্যের জন্য সে কখনো এমন পথ অবলম্বন না করুক যার ফলে তার পরকাল চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়।

এ দু’টি কথা সামনে রেখে দেখুন উপরের বাক্যগুলোতে আল্লাহ‌ মক্কার কাফেরদেরকে কি বলছেন। তিনি একথা বলছেন না যে, তোমরা নিজেদের ব্যবসায় গুটিয়ে নাও, কারবার খতম করে দাও এবং আমার নবীকে মেনে নিয়ে ফকির দরবেশ হয়ে যাও। বরং তিনি বলছেন, দুনিয়ার যে ধন সম্পদের জন্য তোমরা পাগলপারা তা অতি সামান্য সম্পদ এবং দুনিয়ার জীবনে মাত্র সামান্য ক’দিনের জন্য তোমরা তা থেকে লাভবান হতে পারো। অন্য দিকে আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা এর তুলনায় গুণগত ও পরিমাণগত (Quality and Quantity) দিক দিয়েও ভালো এবং চিরন্তন স্থায়িত্বের অধিকারী। তাই যদি তোমরা এ সাময়িক জীবনের সীমাবদ্ধ নিয়ামত দ্বারা লাভবান হবার উদ্দেশ্যে এমন নীতি অবলম্বন করো যার ফল আখেরাতে চিরন্তন ক্ষতির আকারে ভোগ করতে হয়, তাহলে এর চেয়ে বড় বোকামি আর কী হতে পারে? এক ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের রবের খিদমত করে এবং তারপর চিরকালের জন্য তাঁর পুরস্কার লাভ করে ধন্য হয়। আর এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে আল্লাহর আদালতে অপরাধী হিসেবে আনীত হয় এবং গ্রেফতারীর পূর্বে সে নিছক কয়েকদিন হারাম সম্পদের মজা লুটবার সুযোগ পায়। এ দু’জনের মধ্যে কে সফলকাম হলো? তোমরা নিজেরাই তুলনা করে দেখে নাও।

৮৫.
এ ভাষণটিও চতুর্থ জবাবের সাথেই সংশ্লিষ্ট। উপরের আয়াতের শেষ অংশের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, নিছক নিজেদের পার্থিব স্বার্থের খাতিরে শিরক, মূর্তিপূজা ও নবুওয়াত অস্বীকারের যে গোমরাহীর ওপর তারা জোর দিচ্ছে, তার জন্য আখেরাতের চিরন্তন জীবনে তাদের কেমন অশুভ পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে। যে অনুভূতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, মনে করো, দুনিয়ায় তোমাদের কোন বিপদের সম্মুখীন হতে না হলেও এবং এখানকার সংক্ষিপ্ত জীবনকালে তোমরা দুনিয়ার জীবনের সম্পদ ও সৌন্দর্য খুব বেশি উপভোগ করলেও যদি আখেরাতে এর পরিণাম খারাপ হওয়াই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে নিজেই ভেবে দেখো তোমরা যা কিছু করছো তা লাভজনক ব্যবসায় না ক্ষতির ব্যবসায়?
৮৬.
এখানে জিন ও মানবজাতির শয়তানদের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে দুনিয়ায় আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছিল, যাদের কথার মোকাবিলায় আল্লাহও রসূলের কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল এবং যাদের ওপর ভরসা করে সরল সঠিক পথ পরিত্যাগ করে জীবনের ভুল পথ অবলম্বন করা হয়েছিল। এ ধরণের লোকদের কেউ ইলাহ ও রব বলুক বা না বলুক মোট কথা যখন তাদের আনুগত্য এমনভাবে করা হয়েছে যেমন আল্লাহর আনুগত্য হওয়া উচিত। তখন অবশ্যই তাদেরকে আল্লাহর সার্বভৌম কতৃর্ত্বে শরীক করা হয়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আল কাহ্‌ফ ৫০ টীকা)
৮৭.
আমরা জোর করে এদেরকে গোমরাহ করিনি। আমরা এদের দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি ছিনিয়ে নিইনি। এদের চিন্তা ও অনুধাবন শক্তিও কেড়ে নিইনি এবং এমন অবস্থারও সৃষ্টি করিনি যে, এরা সঠিক পথের দিকে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু আমরা হাত ধরে টেনে জোর করে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিলাম। বরং আমরা যেমন স্বেচ্ছায় ভুল পথ অবলম্বন করেছিলাম, তেমনি এদের সামনেও আমরা ভুল পথ পেশ করেছিলাম এবং এরা স্বেচ্ছয় তা গ্রহণ করেছিল। কাজেই আমরা এদের দায়িত্ব গ্রহণ করছি না। আমরা নিজেদের কাজের জন্য দায়ী এবং এরা এদের নিজেদের কাজের জন্য দায়ী।

এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় প্রণিধানযোগ্য। সেটি হচ্ছে আল্লাহ‌ যদিও প্রশ্ন করবেন যারা শরীক করতো তাদেরকে। কিন্তু তারা কিছু বলার আগেই জবাব দিতে আরম্ভ করবে তাদের সেই উপাসিতরা যাদেরকে শরীক করা হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, যখন সাধারণ মুশরিকদেরকে এ প্রশ্ন করা হবে তখন তাদের নেতৃবর্গ অনুভব করবে, এবার আমাদের সর্বনাশের পালা এসে গেছে এবং আমাদের সাবেক অনুসারীরা নিশ্চয়ই এবার বলতে শুরু করবে এরাই আমাদের পথভ্রষ্টতার জন্য মূলত দায়ী। তাই অনুসারীদের বলার আগেই তারা নিজেরাই এগিয়ে গিয়ে নিজেদের সাফাই পেশ করতে থাকবে।

৮৮.
অর্থাৎ এরা আমাদের নয় বরং এদের নিজেদেরই প্রবৃত্তির গোলাম হয়ে গিয়েছিল।
৮৯.
অর্থাৎ তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকো, দুনিয়ায় তোমরা তাদের প্রতি নির্ভর করে আমার কথা রদ করে দিয়েছিলে। এখন এখানে তাদেরকে আসতে, তোমাদের সাহায্য করতে বলো এবং তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচাতে বলো।
৯০.
আসলে শিরককে খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে এ উক্তি করা হয়েছে। মুশরিকরা আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টিকে তাদের উপাস্য পরিণত করেছে। নিজেদের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিভিন্ন মর্যাদা, পদ ও গুণাবলী দান করা করেছে। এর প্রতিবাদ করে আল্লাহ‌ বলছেন, আমার সৃষ্ট মানুষ, ফেরেশতা, জিন ও অন্যান্য বান্দাদের মধ্য থেকে আমি নিজেই যাকে যেমন চেয়েছি গুণাবলী, যোগ্যতা ও শক্তি দান করেছি এবং যার মাধ্যমে যে কাজ নিতে চাই নিয়ে থাকি। কাজেই আমার বান্দাদের মধ্য থেকে কাউকে নিজেদের ইচ্ছা মতো বিপদ থেকে উদ্ধারকারী, অন্নদাতা ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী ইত্যাদি মনে করার অধিকার মুশরিকরা কেমন করে ও কোথা থেকে লাভ করলো? কিভাবে তারা যাকে ইচ্ছা তাকে বৃষ্টি বর্ষণ, রুজি-রোজগার ও সন্তান দান এবং রোগ ও রোগ নিরাময় করার ক্ষমতা অর্পণ করে? কেমন করে তারা যাকে ইচ্ছা তাকে আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বাধীন এলাকার একটি অংশের শাসনকর্তা নিয়োগ করে? আমার ক্ষমতার মধ্য থেকে যা কিছু যাকে চায় তাকে তারা কেমন করে সোপর্দ করে? কেউ ফেরেশতা, জিন, নবী বা অলী যাই কিছু থাক আমার সৃষ্টির কারণেই আছে। যে গুণাবলীই যে কেউ লাভ করেছে তা আমারই দান। যাকে আমি যে কাজে লাগাতে চেয়েছি লাগিয়ে দিয়েছি। তাদেরকে বিভিন্ন কাজের জন্য এভাবে নির্বাচিত করার এ অর্থ কেমন করে হয়ে গেলো যে, এ বান্দাদেরকে বন্দেগীর স্থান থেকে উঠিয়ে খোদায়ী মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে হবে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিতে হবে, তাদেরকে সাহায্য দান করার জন্য ডাকতে হবে, অভাব পূরণ করার জন্য তাদের কাছে আবেদন জানাতে হবে, তাদেরকে ভাগ্য ভাঙা-গড়ার মালিক এবং আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী আখ্যায়িত করতে হবে?
৯১.
চলমান ভাষণের মধ্যে যে উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে, কোন ব্যক্তি বা দল দুনিয়ার মানুষের সামনে এ দাবী করতে পারে যে, সে যে গোমরাহীতে লিপ্ত হয়েছে বলে মনে করা হয়। তার ভ্রান্তিহীনতার ব্যাপারে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণে সে নিশ্চিন্ত এবং তার বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আর এ গোমরাহীকে সে কোন অসৎ উদ্দেশ্যে নয় বরং পুরোপুরি সৎ উদ্দেশ্যে অবলম্বন করেছে এবং তার সামনে কখনো এমন কোন জিনিস আসেনি যার সাহায্যে তার ভুল তার সামনে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু আল্লাহর সামনে তার এ দাবী চলতে পারে না। তিনি কেবল বাইরেরটা দেখেন না। তাঁর সামনে তো মানুষের মন ও মস্তিস্কের এক একটি অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে। তিনি তাঁর জ্ঞান, অনুভূতি, আবেগ, আকাংখা, সংকল্প, বিবেক তথা প্রত্যেকটি জিনিস সরাসরি জানেন। তিনি জানেন, কোন্‌ ব্যক্তিকে কোন্‌ কোন্‌ সময় কোন্‌ কোন্‌ পন্থায় সতর্ক করা হয়েছে, কোন্‌ কোন্‌ পথে তার কাছে সত্য পৌঁছেছে এবং কোন্‌ কোন্‌ পথে বাতিলের বাতিল হওয়ার বিষয়টি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে মূল কারণগুলোর ভিত্তিতে সে হক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের গোমরাহীকে প্রাধান্য দিয়েছিল সেগুলো কি ছিল তাও তিনি জানেন।
অনুবাদ: