আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল কাসাস

৮৮ আয়াত

৪১ ) তাদেরকে আমি জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী নেতা করেছিলাম ৫৭ এবং কিয়ামতের দিন তারা কোথাও থেকে কোন সাহায্য লাভ করতে পারবে না।
وَجَعَلْنَـٰهُمْ أَئِمَّةًۭ يَدْعُونَ إِلَى ٱلنَّارِ ۖ وَيَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ لَا يُنصَرُونَ ٤١
৪২ ) এ দুনিয়ায় আমি তাদের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন তারা হবে বড়ই ঘৃণার্হ ও ধিকৃত। ৫৮
وَأَتْبَعْنَـٰهُمْ فِى هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا لَعْنَةًۭ ۖ وَيَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ هُم مِّنَ ٱلْمَقْبُوحِينَ ٤٢
৪৩ ) পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোকে ধ্বংস করার পর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম লোকদের জন্য আত্মজ্ঞান লাভের সহায়ক। পথনির্দেশনা ও রহমত হিসেবে, যাতে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে। ৫৯
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى ٱلْكِتَـٰبَ مِنۢ بَعْدِ مَآ أَهْلَكْنَا ٱلْقُرُونَ ٱلْأُولَىٰ بَصَآئِرَ لِلنَّاسِ وَهُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ٤٣
৪৪ ) (হে মুহাম্মাদ!) তুমি সে সময় পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না। ৬০ যখন আমি মূসাকে এ শরীয়াত দান করেছিলাম এবং তুমি সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না। ৬১
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ ٱلْغَرْبِىِّ إِذْ قَضَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَى ٱلْأَمْرَ وَمَا كُنتَ مِنَ ٱلشَّـٰهِدِينَ ٤٤
৪৫ ) বরং এরপর (তোমার যুগ পর্যন্ত) আমি বহু প্রজন্মের উদ্ভব ঘটিয়েছি এবং তাদের ওপর অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ৬২ তুমি মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও উপস্থিত ছিলে না, যাতে তাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে পারতে ৬৩ কিন্তু আমি সে সময়কার এসব তথ্য জানাচ্ছি।
وَلَـٰكِنَّآ أَنشَأْنَا قُرُونًۭا فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ ٱلْعُمُرُ ۚ وَمَا كُنتَ ثَاوِيًۭا فِىٓ أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَـٰتِنَا وَلَـٰكِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ ٤٥
৪৬ ) আর তুমি তূর পাহাড়ের পাশেও তখন উপস্থিত ছিলে না যখন আমি (মূসাকে প্রথমবার) ডেকেছিলাম। কিন্তু এটা তোমার রবের অনুগ্রহ (যার ফলে তোমাকে এসব তথ্য দেয়া হচ্ছে) ৬৪ যাতে তুমি তাদেরকে সতর্ক করো যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, ৬৫ হয়তো তারা সচেতন হয়ে যাবে।
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ ٱلطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَـٰكِن رَّحْمَةًۭ مِّن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًۭا مَّآ أَتَىٰهُم مِّن نَّذِيرٍۢ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ٤٦
৪৭ ) (আর আমি এজন্য করেছি যাতে) এমনটি যেন না হয় যে, তাদের নিজেদের কৃতকর্মের বদৌলতে কোন বিপদ তাদের ওপর এসে যায়, আর তারা বলে, “হে আমাদের রব! তুমি কেন আমাদের কাছে কোন রসূল পাঠাওনি? তাহলে তো আমরা তোমার আয়াত মেনে চলতাম এবং ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। ৬৬
وَلَوْلَآ أَن تُصِيبَهُم مُّصِيبَةٌۢ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُوا۟ رَبَّنَا لَوْلَآ أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًۭا فَنَتَّبِعَ ءَايَـٰتِكَ وَنَكُونَ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٤٧
৪৮ ) কিন্তু যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের কাছে পৌঁছে গেলো তখন তারা বলতে লাগলো, মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল কেন তাকে সেসব দেয়া হলো না? ৬৭ এর আগে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? ৬৮ তারা বললো, “দু’টোই যাদু, ৬৯ যা একে অন্যকে সাহায্য করে।” আর বললো, “আমরা কোনটাই মানি না।”
فَلَمَّا جَآءَهُمُ ٱلْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُوا۟ لَوْلَآ أُوتِىَ مِثْلَ مَآ أُوتِىَ مُوسَىٰٓ ۚ أَوَلَمْ يَكْفُرُوا۟ بِمَآ أُوتِىَ مُوسَىٰ مِن قَبْلُ ۖ قَالُوا۟ سِحْرَانِ تَظَـٰهَرَا وَقَالُوٓا۟ إِنَّا بِكُلٍّۢ كَـٰفِرُونَ ٤٨
৪৯ ) (হে নবী!) তাদেরকে বলো, “বেশ, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে আনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব, যা এ দু’টির চাইতে বেশী হিদায়াতদানকারী হবে; আমি তারই অনুসরণ করবো।” ৭০
قُلْ فَأْتُوا۟ بِكِتَـٰبٍۢ مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ هُوَ أَهْدَىٰ مِنْهُمَآ أَتَّبِعْهُ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ ٤٩
৫০ ) এখন যদি তারা তোমার এ দাবী পূর্ণ না করে, তাহলে জেনে রাখো, তারা আসলে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? আল্লাহ‌ এ ধরনের জালেমদেরকে কখনো হিদায়াত দান করেন না।
فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا۟ لَكَ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَآءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيْرِ هُدًۭى مِّنَ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ ٥٠
৫৭.
অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তারা একটি দৃষ্টান্ত কায়েম করে গেছে। জুলুম কিভাবে করা হয়, সত্য অস্বীকার করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার ওপর কিভাবে অবিচল থাকা যায় এবং সত্যের মোকাবিলায় বাতিলের জন্য লোকেরা কেমন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, এসব তারা করে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। দুনিয়াবাসীকে এসব পথ দেখিয়ে দিয়ে তারা জাহান্নামের দিকে এগিয়ে গেছে। এখন তাদের উত্তরসূরীরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে সেই মনযিলের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।
৫৮.
মূলে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন তারা “মাকবূহীন”দের অন্তর্ভুক্ত হবে। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। তারা হবে প্রত্যাখ্যাত ও বহিস্কৃত। আল্লাহর রহমত থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে। তাদের অবস্থা বড়ই শোচনীয় করে দেয়া হবে। তাদের চেহারা বিকৃত করে দেয়া হবে।
৫৯.
অর্থাৎ পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলো যখন পূর্বের নবীদের শিক্ষাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার অশুভ পরিণাম ভোগ করেছিল এবং ফেরাউন ও তার সৈন্যরা যে পরিণতি দেখেছিল তাই হলো তাদের শেষ পরিণতি। তখন তার পরে মূসা আলাইহিস সালামকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, যাতে মানবজাতির একটি নব যুগের সূচনা হয়।
৬০.
পশ্চিম প্রান্ত বলতে সিনাই উপদ্বীপের যে পাহাড়ে মূসাকে শরীয়াতের বিধান দেয়া হয়েছিল সেই পাহাড় বুঝানো হয়েছে। এ এলাকাটি হেজাযের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
৬১.
অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের সত্তর জন প্রতিনিধি যাদেরকে শরীয়াতের বিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করার জন্য মূসার সাথে ডাকা হয়েছিল। (সূরা আ’রাফের ১৫৫ আয়াতে এ প্রতিনিধিদের ডেকে নেবার কথা উল্লেখিত হয়েছে এবং বাইবেলের যাত্রা পুস্তকের ২৪ অধ্যায়েও এর আলোচনা করা হয়েছে।)
৬২.
অর্থাৎ সরাসরি এ তথ্যগুলো লাভ করার কোন উপায় তোমাদের ছিল না। আজ দু’হাজার বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পরও যে, তোমরা এ ঘটনাবলীকে এমনভাবে বর্ণনা করছো যেন তোমাদের চোখে দেখা ঘটনা, আল্লাহর অহীর মাধ্যমে এসব তথ্য তোমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া এর আর কোন কারণ নেই।
৬৩.
অর্থাৎ যখন মূসা মাদয়ানে পৌঁছেন, তাঁর সাথে সেখানে যা কিছু ঘটে এবং দশ বছর অতিবাহিত করে যখন তিনি সেখান থেকে রওয়ানা দেন তখন সেখানে কোথাও তোমার কোন পাত্তাই ছিল না। তুমি আজ মক্কার অলিতে গলিতে যে কাজ করে বেড়াচ্ছো সে সময় মাদয়ানে জনবসতিগুলোতে সে কাজ করতেন না। আপনি চোখে দেখে এ ঘটনাবলীর উল্লেখ করছো না বরং আমার মাধ্যমেই তোমরা এ জ্ঞানও লাভ করছো।
৬৪.
এ তিনটি কথাই পেশ করা হয়েছে মুহাম্মাদ (সঃ) এর নবুওয়াতের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে। যখন এ কথাগুলো পেশ করা হয়েছিল তখন মক্কার সমস্ত সরদার ও সাধারণ কাফেররা কোন প্রকারে তাঁকে অ-নবী এবং নাউযুবিল্লাহ নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ইয়াহুদী উলামা ও খৃস্টান ‘রাহিব’ তথা সংসারত্যাগী-যোগী সন্ন্যাসীরাও হেজাযের জনপদগুলোতে উপস্থিত ছিল। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কোন মহাশূন্য থেকে এসে কুরআন শুনিয়ে যেতেন না। বরং তিনি ছিলেন সেই মক্কারই বাসিন্দা। তাঁর জীবনের কোন একটি দিকও তাঁর জনপদ ও গোত্রের লোকদের কাছে গোপন ছিল না। এ কারণেই যখন এ প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের আকারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ এ তিনটি কথা বলা হলো তখন মক্কা, হেজায এবং সারা আরবের কোন এক ব্যক্তিও উঠে এমন বেহুদা কথা বলেনি যা আজকের পাশ্চাত্য প্রাচ্যবিদরা বলছেন। যদিও মিথ্যা তৈরি করার ব্যাপারে তারা এদের চেয়ে কম যেতো না তবুও যে ডাহা মিথ্যা এক মুহূর্তের জন্যও চলতে পারে না তা তারা বলতো কেমন করে। তারা কেমন করে বলতো, হে মুহাম্মাদ, তুমি অমুক অমুক ইহুদী আলেম ও খৃস্টান রাহেবের কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে এনেছো! কারণ সারাদেশে এ উদ্দেশ্যে তারা কোন একজনেরও নাম নিতে পারতো না। তারা কারো নাম নেবার সাথে সাথেই প্রমাণ হয়ে যেত যে, নবী (সঃ) তার কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করেননি। তারা কেমন করে বলতো, হে মুহাম্মাদ! বিগত ইতিহাস এবং সাহিত্য ও যাবতীয় বিদ্যার গ্রন্থরাজি সম্বলিত একটি লাইব্রেরী তোমার আছে! সেই গ্রন্থরাজির সহায়তায় তুমি এসব বক্তৃতা দিচ্ছো। কারণ লাইব্রেরী তো দূরের কথা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেপাশে কোথাও থেকে তারা এসব তথ্য সম্বলিত একটি কাগজের টুকরোও বের করতে সক্ষম ছিল না। মক্কার প্রতিটি শিশুও জানতো, মুহাম্মাদ ﷺ লেখাপড়া জানা লোক নন। আবার কেউ একথাও বলতে পারতো না যে, তিনি কিছু অনুবাদক নিযুক্ত করে রেখেছেন, তারা হিব্রু, সুরিয়ানী ও গ্রীক গ্রন্থরাজি থেকে তরজমা করে তাঁকে দেয়। তারপর তাদের সবচেয়ে বড় বেহায়া লোকটিও এ দাবী করার সাহস করতো না যে, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের বাণিজ্য সফরে গিয়ে আপনি এ তথ্যাবলী সংগ্রহ করে এনেছিলেন। কারণ এ সফরে তিনি একা ছিলেন না। মক্কারই বাণিজ্যিক কাফেলা প্রত্যেক সফরে তাঁর সাথে থাকতো। যদি তখন কেউ এ ধরণের দাবী করতো তাহলে শত শত জীবিত সাক্ষী এ সাক্ষ্য দিতো যে, সেখানে তিনি কারো কাছ থেকে কোন পাঠ নেননি। আর তাঁর ইন্তিকালের পর তো দু’বছরের মধ্যেই রোমানদের সাথে মুসলমানরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। যদি মিথ্যা-মিথ্যাই সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে কোন খৃস্টান রাহেব বা ইহুদী রব্বির সাথে নবী (সঃ) কোন আলাপ আলোচনা করে থেকে থাকতেন তাহলে রোমান সরকার তিলকে তাল করে দিতো এবং এ প্রপাগান্ডা করতে একটুও পিছপাও হতো না যে, মুহাম্মাদ (সঃ) (নাউযুবিল্ল্‌হ) সবকিছু এখান থেকে শিখে গেছেন এবং এখান থেকে মক্কায় গিয়ে নবী সেজে বসেছেন। মোটকথা যে যুগে কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ কুরাইশদের কাফের ও মুশরিকদের জন্য মৃত্যুর বারতা ঘোষণা করতো এবং তাকে মিথ্যা বলার প্রয়োজন বর্তমান যুগের পাশ্চাত্য প্রাচ্যবিদদের তুলনায় তাদের জন্য ছিল অনেক বেশি, সে যুগে কোন ব্যক্তিও কোথাও থেকে এমন কোন উপাদান সংগ্রহ করে আনতে পারেনি যা থেকে একথা প্রমাণ হতে পারতো যে, মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে ওহী ছাড়া এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করার দ্বিতীয় এমন কোন মাধ্যম আছে যার উল্লেখ করা যেতে পারে।

একথাও জেনে রাখা উচিত, কুরআন এই চ্যালেঞ্জ শুধু এখানেই দেয়নি বরং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাহিনী প্রসঙ্গে দিয়েছে। হযরত যাকারিয়া ও হযরত মারয়ামের কাহিনী বর্ণনা করে বলেছেঃ

ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَامَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ

“এ হচ্ছে অদৃশ্য খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমাকে দিচ্ছি। তুমি তাদের আশেপাশে কোথাও ছিলে না যখন তারা মারয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে একথা জানার জন্য তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল। তুমি তখনও উপস্থিত ছিলে না যখন তারা ঝগড়া করছিল। (আলে ইমরানঃ ৪৪)

হযরত ইউসূফের কাহিনী বর্ণনা করার পর বলা হচ্ছেঃ

ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ

“এ হচ্ছে গায়েবের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমাকে দিচ্ছি। তুমি তাদের (অর্থাৎ ইউসূফের ভাইদের) আশেপাশে কোথাও উপস্থিত ছিলে না। যখন তারা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করেছিল এবং যখন তারা ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিল।” (ইউসূফঃ ১০২)

অনুরূপভাবে হযরত নূহের বিস্তারিত কাহিনী বর্ণনা করে বলা হয়েছেঃ

تِلْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَذَا

“এ কথাগুলো গায়েবের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানিয়েছি। তোমার ও তোমার জাতির ইতিপূর্বে এর কোন জ্ঞান ছিল না।” (হুদঃ ৪৯)

এ জিনিসটির বার বার পুনরাবৃত্তি থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন মজীদ যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কিতাব এবং মুহাম্মাদ ﷺ যে আল্লাহর রসূল তার একটি প্রধান যুক্তি এই ছিল যে, শত শত হাজার হাজার বছর আগে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা আসছে একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মুখ থেকে। ওহী ছাড়া সেগুলো জানার কোন উপায় তাঁর করায়ত্ত নেই। যেসব গুরুত্বপূর্ণ কারণের ভিত্তিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন লোকেরা বিশ্বাস করতে চলেছিল যে, যথার্থই তিনি আল্লাহর নবী এবং তাঁর কাছে আল্লাহর ওহী আসে এ জিনিসটি ছিল তাঁর অন্যতম। এখন যে কোন ব্যক্তি নিজেই ধারণা করতে পারে, ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীদের জন্য সে যুগে এ চ্যালেঞ্জের প্রতিবাদ করা কতটা গুরুত্ববহ হয়ে থাকতে পারে এবং তারা এর বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য কিভাবে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া এটাও অনুমান করা যেতে পারে যে, যদি এ চ্যালেঞ্জের মধ্যে সামান্যতমও কোন দুর্বলতা থাকতো তাহলে তাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা সমকালীন লোকদের জন্য কঠিন হতো না।

৬৫.
আরবে হযরত ইসমাঈল ও হযরত শো’আইব আলাইহিমাস সালাম ছাড়া আর কোন নবী আসেননি। প্রায় দু’হাজার বছরের এ সুদীর্ঘ সময়ে বাইরের নবীদের দাওয়াত অবশ্যই সেখানে পৌঁছেছে। যেমন হযরত মূসা, হযরত সুলাইমান ও হযরত ঈসা আলাইহিমুস সালামের দাওয়াত। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কোন নবীর আবির্ভাব সেখানে ঘটেনি।
৬৬.
এ জিনিসটিকেই কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে রসূল পাঠাবার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কিন্তু এ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সঠিক হবে না যে, এ উদ্দেশ্যে সব সময় প্রত্যেক জায়গায় একজন রসূল আসা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ায় একজন রসূলের পয়গাম তার সঠিক আকৃতিতে বিদ্যমান থাকে এবং লোকদের কাছে তা পৌঁছে যাবার মাধ্যমও অপরিবর্তিত থাকে ততক্ষণ কোন নতুন রসূলের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি আগের নবীর আনীত শরীয়াতের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি করার এবং কোন নতুন বিধান দেবার প্রয়োজন হয়, তাহলে নতুন রসূল আসেন। অবশ্যই যখন নবীদের পয়গাম বিলুপ্ত হয়ে যায় অথবা গোমরাহীর মধ্যে এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে যায় যে, তা থেকে হেদায়াত লাভের কোন উপায় থাকে না। তখন লোকদের জন্য এ ওজর পেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় যে, আমাদের হক ও বাতিলের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন করার ও সঠিক পথ দেখাবার কোন ব্যবস্থাই আদতে ছিল না, এ অবস্থায় আমরা কেমন করে হেদায়াত লাভ করতে পারতাম! এ অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করার জন্য মহান আল্লাহ এ ধরণের অবস্থায় নবী পাঠান, যাতে এর পর যে ব্যক্তিই ভুল পথে চলবে তাকে সেজন্য দায়ী করা সম্ভব না হয়।
৬৭.
অর্থাৎ হযরত মূসাকে (আ) যেসব মু’জিযা দেয়া হয়েছিল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে সবগুলো দেয়া হলো না কেন? ইনিও লাঠিকে সাপ বানিয়ে আমাদের দেখাতেন। এঁর হাতও বগল থেকে বের করার পর সূর্যের মতো উজ্জ্বল বিকিরণ করতো। এঁর ইশারায়ও অস্বীকারকারীদের ওপর একের পর এক তুফান এবং আকাশ ও পৃথিবীর বালা-মুসীবত নাযিল হতো। ইনিও পাথরের গায়ে লিখিত বিধান এনে আমাদের দিতেন।
৬৮.
এ হচ্ছে তাদের অভিযোগের জবাব। এর অর্থ হচ্ছে মু’জিযা সত্ত্বেও তোমরা কি মূসা (আঃ) প্রতি ঈমান এনেছিলে? তাহলে আজ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সেগুলোর দাবী করছো কেন? তোমরা নিজেরাই বলছো, মূসাকে এসব মু’জিযা দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারপরও তোমরা তাঁকে নবী বলে মেনে নিয়ে কোনদিন তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করোনি। সূরা সাবার ৩১ আয়াতেও মক্কার কাফেরদের এ উক্তি উদ্বৃত করা হয়েছেঃ “আমরা এই কুরআনও মানবো না, এর আগের কিতাবগুলোকেও মানবো না।”
৬৯.
অর্থাৎ কুরআন ও তাওরাত।
৭০.
অর্থাৎ আমাকে তো হিদায়াতের অনুসরণ করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, তা কারো মনগড়া হলে হবে না। বরং হতে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকৃত ও যথার্থ হিদায়াত। যদি তোমাদের কাছে এমন কোন কিতাব থাকে যা কুরআন ও তাওরাতের চাইতে ভালো পথনির্দেশনা দিতে পারে তাহলে তোমরা তাকে লুকিয়ে রেখেছো কেন? তাকে সবার সামনে নিয়ে এসো। আমি বিনা দ্বিধায় তার বিধান মেনে চলবো।
অনুবাদ: