এগুলো হচ্ছে বাসোপযোগিতার কয়েকটি দিক মাত্র। এগুলোর বদৌলতে ভূ-পৃষ্ঠ তার বর্তমান মানব প্রজাতির জন্য অবস্থান স্থলে পরিণত হয়েছে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই এসব বিষয় সামনে রেখে চিন্তাভাবনা করলে এক মুহূর্তের জন্যও একথা ভাবতে পারে না যে, কোন পূর্ণ জ্ঞানময় স্রষ্টার পরিকল্পনা ছাড়া এসব উপযোগিতা ও ভারসাম্য নিছক একটি আকস্মিক ঘটনার ফলে আপনা আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং একথাও ধারণা করতে পারে না যে, এ মহাসৃষ্টি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং একে বাস্তবরূপ দান করার ব্যাপারে কোন দেব-দেবী বা জিন অথবা নবী-ওলী কিংবা ফেরেশতার কোন হাত আছে।
(وَعَلَامَاتٍ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ-(ايت-16)
এরপর সামনের দিকে দেখা যাক। জীবন নিছক একটি একক অমিশ্রিত অবস্থায় নেই বরং অসংখ্য বিচিত্র আকৃতিতে তাকে পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রাণীর মধ্যে প্রায় দশ লাখ এবং উদ্ভিদের মধ্যে প্রায় দু’লাখ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ লাখো লাখো প্রজাতি নিজেদের আকার-আকৃতি ও শ্রেণী বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে পরস্পর থেকে এত সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত পার্থক্যের অধিকারী এবং জানা ইতিহাসের প্রাচীনতম যুগ থেকে তারা নিজেদের পৃথক শ্রেণী আকৃতিকে অনবরত এমনভাবে অক্ষুন্ন রেখে আসছে যার ফলে এক আল্লাহর সৃষ্টি পরিকল্পনা (Design) ছাড়া জীবনের এ মহা বৈচিত্রের অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা করা কোন এক ডারউইনের পক্ষে সম্ভব নয়। আজ পর্যন্ত কোথাও দু’টি প্রজাতির মাঝখানে এমন এক শ্রেণীর জীব পাওয়া যায়নি যারা এক প্রজাতির কাঠামো, আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ভেদ করে বের হয়ে এসেছে এবং এখনো অন্য প্রজাতির কাঠামো আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত পৌঁছাবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কংকালের (Fossils) সমগ্র বিবরণীতে এ পর্যন্ত এর কোন নজির পাওয়া যায়নি এবং বর্তমান প্রাণী জগতে কোথাও এ ধরনের ‘হিজড়া’ শ্রেণী পাওয়া কঠিন। আজ পর্যন্ত সর্বত্রই সকল প্রজাতির সদস্যকেই তার পূর্ণ শ্রেণীতে বৈশিষ্ট্য সহকারেই পাওয়া গেছে। মাঝে-মধ্যে কোন হারিয়ে যাওয়া শ্রেণী সম্পর্কে যেসব কাহিনী শুনতে পাওয়া যায়, কিছুকাল অতিবাহিত হবার পর প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয়ে তার অসারতা ফাঁস করে দেয়। বর্তমানে এটি একটি অকাট্য সত্য যে, একজন সুবিজ্ঞ কারিগর, একজন সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও চিত্রকরই জীবনকে এতসব বৈচিত্রময় রূপদান করেছেন।
এ তো গেলো সৃষ্টির প্রথম অবস্থার কথা। এবার সৃষ্টির পুনরাবৃত্তির কথাটা একবার চিন্তা করা যাক। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের গঠনাকৃতি ও গঠন প্রণালীর মধ্যে এমন বিস্ময়কর কর্মপদ্ধতি (Mechanism) রেখে দিয়েছেন যা তার অসংখ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে ঠিক একই শ্রেণীর আকৃতি, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হাজারো প্রজন্মের জন্ম দিয়ে থাকে। কখনো মিছামিছিও এ কোটি কোটি ছোট ছোট কারখানায় এ ধরনের ভুলচুক হয় না, যার ফলে একটি প্রজাতির কোন বংশ বৃদ্ধি কারখানায় অন্য প্রজাতির কোন নমুনা উৎপাদন করতে থাকে। আধুনিক বংশ তত্ত্ব (Genetics) পর্যবেক্ষণ এ ব্যাপারে বিস্ময়কর সত্য উদঘাটন করে। প্রত্যেকটি চারাগাছের মধ্যে এমন যোগ্যতা রাখা হয়েছে যার ফলে সে তার নিজের প্রজন্মকে পরবর্তী বংশধররা তার যাবতীয় প্রজাতির বৈশিষ্ট্য, আচরণ ও গুণের অধিকারী হয় এবং তার প্রত্যেক ব্যক্তিসত্তাই অন্যান্য সকল প্রজাতির ব্যক্তিবর্গ থেকে শ্রেণীগত বিশিষ্টতা অর্জন করে। এ প্রজাতি ও প্রজন্ম রক্ষার সরঞ্জাম প্রত্যেকটি চারার প্রতিটি কোষের (Cell) একটি অংশে সংরক্ষিত থাকে। অত্যন্ত শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে একে দেখা যেতে পারে। এ ক্ষুদ্র প্রকৌশলীটি পূর্ণ সুস্থতা সহকারে চারার সার্বিক বিকাশকে চূড়ান্তভাবে তার শ্রেণীগত আকৃতির স্বাভাবিক পথে পরিচালিত করে। এরই বদৌলতে একটি গম বীজ থেকে আজ পর্যন্ত দুনিয়ার বুকে যেখানেই যত গমের চারা উৎপন্ন হয়েছে তা সব গমই উৎপাদন করেছে। কোন আবহাওয়ায় এবং কোন পরিবেশে কখনো ঘটনাক্রমে একটি বীজের বংশ থেকে একটি যব উৎপন্ন হয়নি। মানুষ ও পশুর ব্যাপারেও এই একই কথা। অর্থাৎ তাদের মধ্য থেকে কারো সৃষ্টিই একবার হয়েই থেমে যায়নি। বরং কল্পনাতীত ব্যপকতা নিয়ে সর্বত্র সৃষ্টির পুনরাবর্তনের একটি বিশাল কারখানা সক্রিয় রয়েছে। এ কারখানা অনবরত প্রতিটি শ্রেণীর প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে একই শ্রেণীর অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ উৎপাদন করে চলেছে। যদি কোন ব্যক্তি সন্তান উৎপাদন ও বংশ বিস্তারের এ অনুবীক্ষণীয় বীজটি দেখে, যা সকল প্রকার শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্য ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত গুণাবলীকে নিজের ক্ষুদ্রতম অস্তিত্বেরও নিছক একটি অংশে ধারণ করে থাকে এবং তারপর দেখে অংগ প্রত্যংগের এমন একটি চরম নাজুক ও জটিল ব্যবস্থা এবং চরম সূক্ষ্ম ও জটিল কর্মধারা (Progresses), যার সাহায্যে প্রত্যেক শ্রেণীর প্রত্যেক ব্যক্তির বংশধারার বীজ একই শ্রেণীর নবতর ব্যক্তিকে উৎপন্ন করে, তাহলে একথা সে এক মুহূর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারে না যে, এমন নাজুক ও জটিল কর্মব্যবস্থা কখনো আপনা আপনি গড়ে উঠতে পারে এবং তারপর বিভিন্ন শ্রেণীর শত শত কোটি ব্যক্তির মধ্যে তা আপনা আপনি যথাযথভাবে চালুও থাকতে পারে। এ জিনিসটি কেবল নিজের সূচনার জন্যই একজন বিজ্ঞ স্রষ্টা চায় না বরং প্রতি মুহূর্তে নিজের সঠিক ও নির্ভুল পথে চলতে থাকার জন্যও একজন পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী সত্তার প্রত্যাশী হয়, যিনি এক মুহূর্তের জন্যও এ কারখানাগুলোর দেখা-শুনা, রক্ষণ ও সঠিক পথে পরিচালনা থেকে গাফিল থাকবেন না।
এ সত্যগুলো যেমন একজন নাস্তিকের আল্লাহকে অস্বীকার করার প্রবণতার মূলোচ্ছেদ করে তেমনি একজন মুশরিকের শিরককেও সমূলে উৎপাটিত করে দেয়। এমন কোন নির্বোধ আছে কি যে একথা ধারণা করতে পারে যে, আল্লাহর বিশ্ব পরিচালনার এ কাজে কোন ফেরেশতা, জিন, নবী বা অলী সামান্যতমও অংশীদার হতে পারে? আর কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বিদ্বেষ ও স্বার্থশূন্য মনে একথা বলতে পারে যে, এ সমগ্র সৃষ্টি কারখানা ও সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি এ ধরনের পরিপূর্ণ বিজ্ঞতা ও নিয়ম-শৃংখলা সহকারে ঘটনাক্রমেই শুরু হয় এবং আপনা আপনিই চলছে?
কে কল্পনা করতে পারে, এ বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা একজন ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া এমনিই ঘটনাক্রমে হতে পারে? এবং বুদ্ধি সচেতন অবস্থায় কে একথা চিন্তা করতে পারে যে, এ ব্যবস্থাপনায় কোন জিন, ফেরেশতা বা কোন মহা মনীষীর আত্মার কোন হাত আছে?
এখানে মূলে “গায়েব” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। গায়েব মানে প্রচ্ছন্ন লুকানো অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভাষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে জানার উপায়-উপকরণগুলো দ্বারা আয়ত্ব করা যায় না। দুনিয়ায় এমন বহু জিনিস আছে যা এককভাবে কোন কোন লোক জানে এবং কোন কোন লোক জানে না। আবার এমন অনেক জিনিস আছে যা সামগ্রিকভাবে সমগ্র মানবজাতি কখনো জানতো না, আজকেও জানে না এবং ভবিষ্যতেও কখনো জানবে না। জিন, ফেরেশতা ও অন্যান্য সৃষ্টির ব্যাপারেও এই একই কথা। কতক জিনিস তাদের কারো কাছে প্রচ্ছন্ন এবং কারো কাছে প্রকাশিত। আবার অসংখ্য জিনিস এমন আছে যা তাদের সবার কাছে প্রচ্ছন্ন ও অজানা। এসব ধরনের অদৃশ্য জিনিস একমাত্র একজনের কাছে দৃশ্যমান। তিনি হচ্ছেন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তাঁর কাছে কোন জিনিস অদৃশ্য নয়। সবকিছুই তাঁর কাছে সুস্পষ্টভাবে পরিদৃশ্যমান।
উপরে বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা, ব্যবস্থাপক এবং খাদ্য যোগানদাতা হিসেবে আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করার জন্য প্রশ্নের যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, আল্লাহর অদৃশ্য জ্ঞান সংক্রান্ত তথ্য বর্ণনা করার জন্য সে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, পূর্বোক্ত গুণগুলো প্রত্যেকটি মানুষ দেখছে, সেগুলোর চিহ্ন একদম সুস্পষ্ট। কাফের ও মুশরিকরাও সেগুলো সম্পর্কে আগেও একথা মানতো এবং এখনো মানে যে, এসব একমাত্র আল্লারই কাজ। তাই সেখানে যুক্তি প্রদানের পদ্ধতি ছিল নিম্নরূপঃ এ সমস্ত কাজ যখন আল্লাহরই এবং তাদের কেউ যখন এসব কাজে তাঁর অংশীদার নয়, তখন তোমরা কেমন করে সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অন্যদেরকে অংশীদার করে নিয়েছো এবং কিসের ভিত্তিতেই বা তারা ইবাদাত লাভের অধিকারী হয়ে গেছে? কিন্তু আল্লাহর সর্বজ্ঞতা সংক্রান্ত গুণটির এমন কোন অনুভব যোগ্য আলামত নেই, যা আংগুল দিয়ে দেখানো যায়। এ বিষয়টি শুধুমাত্র চিন্তা-ভাবনা করেই বুঝতে পারা যেতে পারে। তাই একে প্রশ্নের পরিবর্তে দাবী আকারে পেশ করা হয়েছে। এখন প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তির একথা ভেবে দেখা উচিত যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে একথা কি বোধগম্য? অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানে যেসব অবস্থা, বস্তু ও সত্য কখনো ছিল বা এখন আছে কিংবা ভবিষ্যতে হবে, সেগুলো কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জানা সম্ভব! আর যদি অন্য কেউ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী না হয়ে থাকে এবং সে জ্ঞান লাভের ক্ষমতা ও যোগ্যতা আর কারো না থেকে থাকে তাহলে যারা প্রকৃত সত্য ও অবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞাত নয় তাদের মধ্য থেকে কেউ বান্দাদের ফরিয়াদ শ্রবণকারী, অভাব মোচনকারী ও সংকট নিরসনকারী হতে পারে, একথা কি বুদ্ধি সম্মত?
ইবাদত-উপাসনা ও সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়া এবং অদৃশ্য জ্ঞানের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য অতি প্রাচীনকাল থেকে মানুষ যার ভেতরেই উপাস্য বা দেবতা বা বিশ্ববিধাতা সুলভ সর্বময় কর্তৃত্বের কোন গন্ধ ও অনুমান করেছে তার সম্পর্কে একথা অবশ্যই ভেবেছে যে, তার কাছে সবকিছুই সুস্পষ্ট ও আলোকিত এবং কোন জিনিস তার অগোচরে নেই। অর্থাৎ মানুষের মন এ সত্যটি সুস্পষ্টভাবে জানে যে, ভাগ্যের ভাংগা-গড়া, ফরিয়াদ শোনা, প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং প্রত্যেক সাহায্য প্রার্থীকে সাহায্য করা কেবলমাত্র এমন এক সত্তার কাজ হতে পারে যিনি সব কিছু জানেন এবং যার কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। এই কারণে তো মানুষ যাকেই সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পন্ন মনে করে তাকে অবশ্যই অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারীও মনে করে। কারণ তার বুদ্ধি নিঃসন্দেহে সাক্ষ্য দেয়, জ্ঞান ও ক্ষমতা পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত একটির জন্য অন্যটি অনিবার্য। এখন যদি এটি সত্য হয়ে থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ স্রষ্টা, ব্যবস্থাপক, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও রিযিকদাতা নেই, যেমন উপরের আয়াতে প্রমাণিত হয়েছে, তাহলে সাথে সাথে এটিও সত্য যে, আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন সত্তা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারীও নয়। কোন্ বুদ্ধি সচেতন ব্যক্তি একথা কল্পনা করতে পারে যে, কোন ফেরেশতা, জ্বিন, নবী, অলী বা কোন সৃষ্টি সাগরের বুকে, বাতাসের মধ্যে এবং মৃত্তিকার বিভিন্ন স্তরে ও তার উপরিভাগে কোথায় কোথায় কোন্ কোন্ প্রকারের কত প্রাণী আছে? মহাশূন্যের অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্রের সঠিক সংখ্যা কত? তাদের প্রত্যেকের মধ্যে কোন কোন্ ধরনের সৃষ্টি বিরাজ করছে এবং এ সৃষ্টিগুলোর প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অবস্থান কোথায় এবং তার প্রয়োজনসমূহ কি কি তা জানে? এসব কিছু আল্লাহর অপরিহার্যভাবে জানা থাকতে হবে। কারণ তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁকেই তাদের যাবতীয় ব্যাপার পরিচালনা এবং তাদের যাবতীয় অবস্থা দেখা-শুনা করতে হয় আর তিনিই তাদের জীবিকা সরবরাহকারী। কিন্তু অন্য কেউ তার নিজের সীমাবদ্ধ অস্তিত্বের মধ্যে এই ব্যাপক ও সর্বময় জ্ঞান কেমন করে রাখতে পারে? সৃষ্টি ও জীবিকাদানের কর্মের সাথে তার কি কোন সম্পর্ক আছে যে, সে এসব জিনিস জানবে?
আবার অদৃশ্য জ্ঞানের গুণটি বিভাজ্যও নয়। উদাহরণস্বরূপ কেবলমাত্র পৃথিবীর সীমানা পর্যন্ত এবং শুধুমাত্র মানুষের ব্যাপারে কোন মানুষ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হবে---এটা সম্ভব নয়। আল্লাহর সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, স্থিতিস্থাপক ও প্রতিপালক হওয়ার গুণগুলো যেমন বিভক্ত হতে পারে না। তেমনি এ গুণটিও বিভক্ত হতে পারে না। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানুষ দুনিয়ায় জন্ম নিয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত জন্ম নেবে মাতৃ জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার হওয়ার সময় থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের সবার সকল অবস্থা ও পরিস্থিতি জানতে পারে এমন মানুষটি কে হতে পারে? সে মানুষটি কেমন করে এবং কেন তা জানবে? সে কি এ সীমা সংখ্যাহীন সৃষ্টিকূলের স্রষ্টা? সে কি তাদের পিতৃপুরুষদের বীর্যে তাদের বীজানু উৎপন্ন করেছিল? সে কি তাদের মাতৃগর্ভে তাদের আকৃতি নির্মাণ করেছিল? মাতৃগর্ভের সেই মাংসপিণ্ডটি জীবিত ভুমিষ্ট হওয়ার নিশ্চিত ব্যবস্থা কি সে করেছিল? সে কি তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগ্য তৈরী করেছিল? সে কি তাদের জীবন-মৃত্যু, রোগ-স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি, দারিদ্র ও উত্থান পতনের ফায়সালা করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল? এসব কাজ কবে থেকে তার দায়িত্বে এসেছে? তার নিজের জন্মের আগে, না পরে? আর কেবল মানুষের মধ্যে এ দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হতে পারে কেমন করে? একাজ তো অনিবার্যভাবে পৃথিবী ও আকাশের বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। যে সত্তা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন তিনিই তো মানুষের জন্ম-মৃত্যু, তাদের জীবিকার সংকীর্ণতা ও স্বচ্ছলতার এবং তাদের ভাগ্যের ভাংগা গড়ার জন্য দায়িত্বশীল হতে পারেন।
তাই আল্লাহ ছাড়া আর কেউ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নয়, এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আলাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কোন অদৃশ্য বা কতগুলো অদৃশ্য জিনিসকে তার সামনে উন্মুক্ত করে দেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না এবং “আলেমুল গায়েব” অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে সংশিষ্ট। আল্লাহ বলেনঃ
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
“আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিগুলো, সেগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।” (আন’আম ৫৯ আয়াত)তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ
“একমাত্র আল্লাহই রাখেন কিয়ামতের জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কি (লালিত) হচ্ছে, কোন প্রাণী জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কোন প্রাণী জানে না কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে।” (লুকমান ৩৪ আয়াত)তিনি আরো বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ
“তিনি জানেন যা কিছু সৃষ্টির সামনে আছে এবং যা কিছু আছে তাদের অগোচরে। আর তাঁর জ্ঞানের কিছুমাত্র অংশও তারা আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যে জিনিসটির জ্ঞান তাদেরকে দিতে চান, দেন।” (আল বাকারাহ ২৫৫ আয়াত)কোন সৃষ্টি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে এ ধারণা কুরআন সর্বতোভাবে নাকচ করে দেয়। এমনকি বিশেষভাবে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং স্বয়ং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারেও এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে, তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন এবং তাঁকে অদৃশ্যের কেবলমাত্র ততটুকু জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে যতটুকু রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। সূরা আন’আম ৫০ আয়াত, সূরা আ’রাফ ১৮৭ আয়াত, সূরা তাওবাহ ১০১ আয়াত, সূরা হূদ ৩১ আয়াত, সূরা আহযাব ৬৩ আয়াত, সূরা আহকাফ ৯ আয়াত, সূরা তাহরীম ৩ আয়াত এবং সূরা জিন ২৬ আয়াত এ ব্যাপারে কোন প্রকার অনিশ্চয়তা ও সংশয়ের অবকাশই রাখেনি।
কুরআনের এ সমস্ত সুস্পষ্ট ভাষণ আলোচ্য আয়াতটির বক্তব্য সমর্থন ও ব্যাখ্যা করে, এরপর এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা এবং যা কিছু আছে ও যা কিছু হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো আছে। এ কথা মনে করা পুরোপুরি একটি অনৈসলামী বিশ্বাস। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইমাম আহমদ, ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতেম নির্ভুল বর্ণনা পরম্পরায় আয়েশা (রা.) থেকে উদ্ধৃত করেছেনঃ
مَنْ زَعَمَ أَنَّهُ (اى النبى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) يَعْلَمُ مَا يكون فِى غَدٍ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلاَّ اللَّهُ-
“যে ব্যক্তি দাবী করে, নবী ﷺ আগামীকাল কি হবে তা জানেন, সে আল্লাহর প্রতি মহা মিথ্যা আরোপ করে। কারণ আল্লাহ তো বলেন, হে নবী! তুমি বলে দাও আল্লাহ ছাড়া আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে আর কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না।”
ইবনুল মুনযির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) প্রখ্যাত শিষ্য ইকরামা থেকে বর্ণনা করেছেনঃ এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, “হে মুহাম্মাদ! কিয়ামত কবে আসবে? আমাদের দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকায় বৃষ্টি কবে হবে? আর আমার গর্ভবতী স্ত্রী ছেলে না মেয়ে প্রসব করবে? আর আজ আমি কি উপার্জন করেছি তাতো আমি জানি কিন্তু আগামীকাল আমি কি উপার্জন করবো? আর আমি কোথায় জন্মেছি তাতো আমি জানি কিন্তু আমি মরবো কোথায়?” এ প্রশ্নগুলোর জবাবে নবী ﷺ ইতিপূর্বে আমাদের উল্লেখিত সূরা লুকমানের আয়াতটি শুনিয়ে দেন। এছাড়া বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের একটি বহুল পরিচিত হাদীসও এর সমর্থন করে, যাতে বলা হয়েছেঃ সাহাবীগণের সমাবেশে জিব্রীল মানুষের বেশে এসে নবীকে যে প্রশ্ন করেছিলেন তার একটি এও ছিল যে, কিয়ামত কবে হবে? নবী (সা.) জবাব দিয়েছিলেন,
مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ
“যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে এ ব্যাপারে বেশী জানে না।”
তারপর বলেন, এ পাঁচটি জিনিসের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। এ সময় তিনি উল্লেখিত আয়াতটি পাঠ করেন
আখেরাত সংক্রান্ত এ বক্তব্যটি এর আগের আয়াতের নিন্মোক্ত বাক্যাংশ থেকে বের হয়েছেঃ “তারা জানে না, কবে তাদেরকে উঠানো হবে।” এ বাক্যাংশে এ কথা বলে দেয়া হয়েছিল যে, যাদেরকে উপাস্য করা হয়--- আর ফেরেশতা, জিন, নবী, অলী সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের কেউই আখেরাত কবে আসবে জানে না। এরপর এখন সাধারণ কাফের ও মুশরিকদের সম্পর্কে তিনটি কথা বলা হয়েছে। প্রথমতঃ আখেরাত কোনদিন আদৌ হবে কিনা তা তারা জানেই না। দ্বিতীয়তঃ তাদের এ অজ্ঞতা এজন্য নয় যে, তাদেরকে কখনো এ ব্যাপারে জানানো হয়নি। বরং এর কারণ হচ্ছে তাদেরকে যে খবর দেয়া হয়েছে তা তারা বিশ্বাস করেনি বরং তার নির্ভুলতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতে থেকেছে। তৃতীয়তঃ আখেরাত অনুষ্ঠিত হওয়া সম্পর্কে যেসব যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে তারা কখনো সেগুলো যাচাই করার প্রয়াস চালায়নি। বরং তারা সেদিক থেকে চোখ বন্ধ করে থাকাকেই প্রাধান্য দিয়েছে।
প্রথম যুক্তিটি হচ্ছে, দুনিয়ার যেসব জাতি আখেরাতকে উপেক্ষা করেছে তারা অপরাধী না হয়ে পারেনি। তারা দায়িত্ব জ্ঞান বর্জিত হয়ে গেছে। জুলুম নির্যাতনে অভ্যস্ত হয়েছে। ফাসেকী ও অশ্লীল কাজের মধ্যে ডুবে গেছে। নৈতিক চরিত্র বিনষ্ট হবার ফলে শেষ পর্যন্ত তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি মানুষের ইতিহাসের একটি ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা। দুনিয়ার দিকে দিকে বিধ্বস্ত জাতিসমূহের ধ্বংসাবশেষগুলো এর সাক্ষ্য দিচ্ছে। এগুলো পরিষ্কারভাবে এ কথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, আখেরাত মানা ও না মানার সাথে মানুষের মনোভাব ও কর্মনীতি সঠিক কিনা, তার অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাকে মেনে নিলে এ মনোভাব ও কর্মনীতি সঠিক থাকে এবং তাকে না মানলে তা ভুল ও অশুদ্ধ হয়ে যায়। একে মেনে নেয়া যে প্রকৃত সত্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল, এটি এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। এ কারণে একে মেনে নিলেই মানুষের জীবন সঠিক পথে চলতে থাকে। আর একে অস্বীকার করলে প্রকৃত সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করাই হয়। ফলে রেলগাড়ি তার বাঁধানো রেলপথ থেকে নেমে পড়ে।
দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে, ইতিহাসের এ সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অপরাধীর কাঠগড়ায় প্রবেশকারী জাতিসমূহের ধ্বংস হয়ে যাওয়া এ চিরায়ত সত্যটিই প্রকাশ করছে যে, এ বিশ্ব-জাহানে চেতনাহীন শক্তিসমূহের অন্ধ ও বধির শাসন চলছে না বরং এটি বিজ্ঞ ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা, যার মধ্যে সক্রিয় রয়েছে একটি অভ্রান্ত প্রতিদান ও প্রতিবিধানমূলক আইন। বিশ্বের বিভিন্ন জাতির উপর পুরোপুরি নৈতিকতার ভিত্তিতে সে তার শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। কোন জাতিকে এখানে অর্থাৎ কাজ করার জন্য স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয় না। একবার কোন জাতির উত্থান হবার পর সে এখানে চিরকাল আয়েশ-আরাম করতে থাকবে এবং অবাধে জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে যেতে থাকবে এমন ব্যবস্থা এখানে নেই। বরং একটি বিশেষ সীমায় পৌঁছে যাবার পর একটি মহাশক্তিশালী হাত এগিয়ে এসে তাকে পাকড়াও করে লাঞ্ছনা ও অপমানের গভীরতম গহ্বরে নিক্ষেপ করে। যে ব্যক্তি এ সত্যটি অনুধাবন করবে সে কখনো এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে পারে না যে, এ প্রতিদান ও প্রতিবিধানের আইনই এ দুনিয়ার জীবনের পরে অন্য একটি জীবনের দাবী করে। সেখানে ব্যক্তিবর্গ ও জাতিসমূহ এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র বিশ্ব মানবতার প্রতি ইনসাফ করা হবে। কারণ শুধুমাত্র একটি জালেম জাতি ধ্বংস হয়ে গেলেই ইনসাফের সমস্ত দাবী পূর্ণ হয়ে যায় না। এর ফলে যেসব মজলুমের লাশের ওপর সে তার মর্যাদার প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল তাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচারের কোন প্রতিবিধান হয় না। ধ্বংস আসার পূর্বে যেসব যেসব জালেম লাগামহীন জীবন উপভোগ করে গেছে তারাও কোন শাস্তি পায় না। যেসব দুষ্কৃতিকারী বংশ পরম্পরায় নিজেদের পরে আগত প্রজন্মের জন্য বিভ্রান্তি ও ব্যভিচারের উত্তরাধিকার রেখে চলে গিয়েছিল তাদের সেসব অসৎকাজেরও কোন জবাবদিহি হয় না। দুনিয়ায় আযাব পাঠিয়ে শুধুমাত্র তাদের শেষ বংশধরদের আরো বেশী জুলুম করার সূত্রটি ছিন্ন করা হয়েছিল। আদালতের আসল কাজ তো এখনো হয়ই নি। প্রত্যেক জালেমকে তার জুলুমের প্রতিদান দিতে হবে। প্রত্যেক মজলুমের প্রতি জুলুমের ফলে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তাকে তার ক্ষতিপূরণ করে দিতে হবে। আর যেসব লোক অসৎকাজের এ দুর্বার স্রোতের মোকাবিলায় ন্যায়, সত্য ও সততার পথে অবিচল থেকে সৎকাজ করার জন্য সর্বক্ষণ তৎপর থেকেছে এবং সারাজীবন এ পথে কষ্ট সহ্য করেছে তাদেরকে পুরস্কার দিতে হবে। অপরিহার্যভাবে এসব কাজ কোন এক সময় হতেই হবে। কারণ দুনিয়ায় প্রতিদান ও প্রতিবিধান আইনের নিরবিচ্ছিন্ন কার্যকারিতা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে, মানুষের কার্যাবলীকে তার নৈতিক মূল্যমানের ভিত্তিতে ওজন করা এবং পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান করাই বিশ্ব পরিচালনার চিরন্তন রীতি ও পদ্ধতি। এ দু’টি যুক্তির সাথে সাথে আলোচ্য আয়াতে আরো একটি উপদেশ রয়েছে। সেটি এই যে, পূর্ববর্তী অপরাধীদের পরিণতি দেখে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো এবং আখেরাত অস্বীকার করার যে নির্বোধসুলভ বিশ্বাস তাদেরকে অপরাধীতে পরিণত করেছিল তার উপর টিকে থাকার চেষ্টা করো না।