وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ
“আর তোমরা নিজেদের মজলিসে বদকাম করে থাকো।” (২৯ আয়াত)কিন্তু যদি এ শব্দটিকে জ্ঞানহীনতা অর্থে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এর অর্থ হবে, তোমরা নিজেদের এ খারাপ কাজটির পরিণাম জানো না। তোমরা তো একথা জানো, তোমরা যা অর্জন করছো তা প্রবৃত্তিকে তৃপ্তি দান করে। কিন্তু তোমরা জানো না এ চরম অপরাধমূলক ও জঘন্য ভোগ লিপ্সার জন্য শীঘ্রই তোমাদের কেমন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহর আযাব তোমাদের ওপর অতর্কিতে নেমে পড়ার জন্য তৈরী হয়ে আছে। অথচ তোমরা পরিণামের কথা না ভেবে নিজেদের এ জঘন্য খেলায় মত্ত হয়ে আছো।
এভাবে কুরআন তার ভাষণের প্রথম বাক্যেই বিরোধীদেরকে লা জবাব ও অসহায় করে দিয়েছে। এরপর এখন আল্লাহর শক্তিমত্তা এবং তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি বৈচিত্রের প্রতি অংগুলি নির্দেশ করে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, এটা কার কাজ বলো? আল্লাহর সাথে বৈচিত্রের প্রতি কোন ইলাহও কি এ কাজে শরীক আছে? যদি না থেকে থাকে তাহলে তোমরা এই যাদেরকে উপাস্য করে রেখেছো এদের কি সার্থকতা আছে।
হাদীসে বলা হয়েছে নবী ﷺ যখন আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন তখন সঙ্গে সঙ্গেই এর জবাবে বলতেনঃ
بَلِ اللهُ خَيْرٌ وَّاَبْقى وَاَجَلُّ وَّاَكْرَمُ-
“বরং আল্লাহই ভালো এবং তিনিই চিরস্থায়ী, মর্যাদা সম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠ।”
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ-
“যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী সত্তাই এসব সৃষ্টি করেছেন।” (আয্ যুখরুফঃ ৯)
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
“আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ।” (আয্ যুখরুক-৮৭)
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
“আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছে এবং মৃত পতিত জমি কে জীবিত করেছে? তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ।” (আনকাবুতঃ ৬৩ আয়াত)
قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ...................................... وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ
“তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করেন? এ শ্রবণ ও দর্শনের শক্তি কার নিয়ন্ত্রণাধীন? কে সজীবকে নির্জীব এবং নির্জীবকে সজীব করেন? কে এ বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন? তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ।” (ইউনুসঃ ৩১ আয়াত)
আরবের মুশরিকরা এবং সারা দুনিয়ার মুশরিকরা সাধারণত একথা স্বীকার করতো এবং আজও স্বীকার করে যে, আল্লাহই বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা এবং বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনাকারী। তাই কুরআন মজীদের এ প্রশ্নের জবাবে তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি নিতান্ত হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমীর আশ্রয় নিয়েও নিছক বিতর্কের খাতিরেও বলতে পারতো না যে, আমাদের উপাস্য দেবতারা আল্লাহর সাথে এসব কাজে শরীক আছে। কারণ যদি তারা একথা বলতো তাহলে তাদের নিজেদের জাতির হাজার হাজার লোক তাদেরকে মিথ্যুক বলতো এবং তারা পরিষ্কার বলে দিতো, এটা আমাদের আকীদা নয়।
এ প্রশ্ন এবং এর পরবর্তী প্রশ্নগুলোতে শিরকই বাতিল করা হয়নি বরং নাস্তিক্যবাদকেও বাতিল করে দেয়া হয়েছে। যেমন এ প্রথম প্রশ্নেই জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ এই বৃষ্টি বর্ষণকারী এবং এর সাহায্যে সবরকম উদ্ভিদ উৎপাদনকারী কে? এখন চিন্তা করুন, অজস্র রকমের উদ্ভিদের জীবনের জন্য যে ধরনের উপাদান প্রয়োজন, ভূমিতে তার ঠিক উপরিভাগে অথবা উপরিভাগের কাছাকাছি এসব জিনিসের মজুত থাকা এবং পানির মধ্যে ঠিক এমন ধরনের গুণাবলী থাকা যা প্রাণী ও উদ্ভিদ জীবনের প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং এ পানিকে অনবরত সমুদ্র থেকে উঠানো এবং জমির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময় যথা নিয়মে বর্ষণ করা আর মাটি, বাতাস, পানি ও তাপমাত্রা ইত্যাদি বিভিন্ন শক্তির মধ্যে এমন পর্যায়ের আনুপাতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা যার ফলে উদ্ভিদ জীবন বিকাশ লাভ করতে পারে এবং সব ধরনের জৈব জীবনের জন্য তার অসংখ্য প্রয়োজন পূর্ণ করতে সক্ষম হয়, এসব কিছু কি একজন জ্ঞানবান সত্তার পরিকল্পনা ও সুবিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা এবং প্রবল শক্তি ও সংকল্প ছাড়াই আপনা আপনি হয়ে যেতে পারে? আর এ ধরনের আকস্মিক ঘটনা কি অনবরত হাজার বছর বরং লাখো কোটি বছর ধরে যথা নিয়মে ঘটে যাওয়া সম্ভবপর? প্রবল আক্রোশ ও বিদ্বেষে অন্ধ একজন চরম হঠকারী ব্যক্তিই কেবল একে একটি আকস্মিক ঘটনা বলতে পারে। কোন সত্য প্রিয় বুদ্ধি ও বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের অযৌক্তিক ও অর্থহীন দাবী করা এবং তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়।