আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আন নামল

৯৩ আয়াত

১১ ) তবে হ্যাঁ, যদি কেউ ভুল-ত্রুটি করে বসে। ১৪ তারপর যদি সে দুষ্কৃতির পরে সুকৃতি দিয়ে (নিজের কাজ) পরিবর্তিত করে নেয় তাহলে আমি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ১৫
إِلَّا مَن ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسْنًۢا بَعْدَ سُوٓءٍۢ فَإِنِّى غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ١١
১২ ) আর তোমার হাতটি একটু তোমার বক্ষস্থলের মধ্যে ঢুকাও তো, তা উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই। এ (দু’টি নিদর্শন) ন’টি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ফেরাউন ও তার জাতির কাছে (নিয়ে যাবার জন্য) ১৬ তারা বড়ই বদকার।”
وَأَدْخِلْ يَدَكَ فِى جَيْبِكَ تَخْرُجْ بَيْضَآءَ مِنْ غَيْرِ سُوٓءٍۢ ۖ فِى تِسْعِ ءَايَـٰتٍ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَقَوْمِهِۦٓ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًۭا فَـٰسِقِينَ ١٢
১৩ ) কিন্তু যখন আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের সামনে এসে গেলো তখন তারা বলল, এতো সুস্পষ্ট যাদু।
فَلَمَّا جَآءَتْهُمْ ءَايَـٰتُنَا مُبْصِرَةًۭ قَالُوا۟ هَـٰذَا سِحْرٌۭ مُّبِينٌۭ ١٣
১৪ ) তারা একেবারেই অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্যের সাথে সেই নিদর্শনগুলো অস্বীকার করলো অথচ তাদের মন মগজ সেগুলোর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। ১৭ এখন এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল দেখে নাও।
وَجَحَدُوا۟ بِهَا وَٱسْتَيْقَنَتْهَآ أَنفُسُهُمْ ظُلْمًۭا وَعُلُوًّۭا ۚ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ ١٤
১৫ ) (অন্যদিকে) আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করলাম ১৮ এবং তারা বললো, সেই আল্লাহর শোকর যিনি তাঁর বহু মু’মিন বান্দার ওপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ১৯
وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا دَاوُۥدَ وَسُلَيْمَـٰنَ عِلْمًۭا ۖ وَقَالَا ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى فَضَّلَنَا عَلَىٰ كَثِيرٍۢ مِّنْ عِبَادِهِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ١٥
১৬ ) আর দাউদের উত্তরাধিকারী হলো সুলাইমান ২০ এবং সে বললো, “হে লোকেরা আমাকে শেখানো হয়েছে পাখিদের ভাষা ২১ এবং আমাকে দেয়া হয়েছে সব রকমের জিনিস। ২২ অবশ্যই এ (আল্লাহর) সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।”
وَوَرِثَ سُلَيْمَـٰنُ دَاوُۥدَ ۖ وَقَالَ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ عُلِّمْنَا مَنطِقَ ٱلطَّيْرِ وَأُوتِينَا مِن كُلِّ شَىْءٍ ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلْفَضْلُ ٱلْمُبِينُ ١٦
১৭ ) সুলাইমানের জন্য জিন, মানুষ ও পাখিদের সৈন্য সমবেত করা হয়েছিল ২৩ এবং তাদেরকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো।
وَحُشِرَ لِسُلَيْمَـٰنَ جُنُودُهُۥ مِنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ وَٱلطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ ١٧
১৮ ) (একবার সে তাদের সাথে চলছিল) এমন কি যখন তারা সবাই পিঁপড়ের উপত্যকায় পৌঁছুল তখন একটি পিঁপড়ে বললো, “হে পিঁপড়েরা! তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো। যেন এমন না হয় যে, সুলাইমান ও তাঁর সৈন্যরা তোমাদের পিশে ফেলবে এবং তারা টেরও পাবে না।” ২৪
حَتَّىٰٓ إِذَآ أَتَوْا۟ عَلَىٰ وَادِ ٱلنَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌۭ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّمْلُ ٱدْخُلُوا۟ مَسَـٰكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَـٰنُ وَجُنُودُهُۥ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ١٨
১৯ ) সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসলো এবং বললো- “হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, ২৫ আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছো এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো।” ২৬
فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًۭا مِّن قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَـٰلِحًۭا تَرْضَىٰهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ ٱلصَّـٰلِحِينَ ١٩
২০ ) (আর একবার) সুলাইমান পাখিদের খোঁজ-খবর নিল ২৭ এবং বললো, “কি ব্যাপার, আমি অমুক হুদহুদ পাখিটিকে দেখছিনা যে! সে কি কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে?
وَتَفَقَّدَ ٱلطَّيْرَ فَقَالَ مَا لِىَ لَآ أَرَى ٱلْهُدْهُدَ أَمْ كَانَ مِنَ ٱلْغَآئِبِينَ ٢٠
১৪.
আরবী ব্যাকরণের সূত্র অনুসারে এ বাক্যাংশের দু’রকম অর্থ হতে পারে। প্রথম অর্থ হলো, ভয়ের কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ যদি থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে, রসূল কোন ভুল করেছেন। আর দ্বিতীয় অর্থ হলো, যতক্ষণ কেউ ভুল না করে ততক্ষণ আমার কাছে তার কোন ভয় নেই।
১৫.
অর্থাৎ অপরাধকারীও যদি তওবা করে নিজের নীতি সংশোধন করে নেয় এবং খারাপ কাজের জায়গায় ভাল কাজ করতে থাকে, তাহলে আমার কাছে তার জন্য উপেক্ষা ও ক্ষমা করার দরজা খোলাই আছে। প্রসঙ্গক্রমে একথা বলার উদ্দেশ্য ছিল একদিকে সতর্ক করা এবং অন্যদিকে সুসংবাদ দেয়াও। হযরত মূসা আলাইহিমুস সালাম অজ্ঞতাবশত একজন কিবতীকে হত্যা করে মিসর থেকে বের হয়েছিলেন। এটি ছিল একটি ত্রুটি। এদিকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়। এ ত্রুটিটি যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল তখন তিনি পরক্ষণেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এই বলেঃ

رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي

“হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমাকে মাফ করে দাও।”

আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে মাফ করে দিয়েছিলেনঃ فغفرله আল্লাহ‌ তাঁকে মাফ করে দিলেন। (আল কাসাস, ১৬) এখানে সেই ক্ষমার সুসংবাদ তাঁকে দেয়া হয়। অর্থাৎ এ ভাষণের মর্ম যেন এই দাঁড়ালোঃ হে মূসা! আমার সামনে তোমার ভয় পাওয়ার একটি কারণ তো অবশ্যই ছিল। কারণ তুমি একটি ভুল করেছিলে। কিন্তু তুমি যখন সেই দুষ্কৃতিকে সুকৃতিতে পরিবর্তিত করেছো তখন আমার কাছে তোমার জন্য মাগফিরাত ও রহমত ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন আমি তোমাকে কোন শাস্তি দেবার জন্য ডেকে পাঠাইনি বরং বড় বড় মু’জিযা সহকারে তোমাকে এখন আমি একটি মহান দায়িত্ব সম্পাদনে পাঠাবো।

১৬.
সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হয়েছে মূসাকে আমি সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এমন ধরনের নয়টি নিদর্শন تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ)) দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। সূরা আ’রাফে এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ (১) লাঠি, যা অজগর হয়ে যেতো (২) হাত, যা বগলে রেখে বের করে আনলে সূর্যের মতো ঝিকমিক করতো। (৩) যাদুকরদের প্রকাশ্য জনসমক্ষে পরাজিত করা (৪) হযরত মূসার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়া। (৫) বন্যা ও ঝড় (৬) পংগপাল (৭) সমস্ত শস্য গুদামে শস্যকীট এবং মানুষ-পশু নির্বিশেষে সবার গায়ে উকুন। (৮) ব্যাঙয়ের আধিক্য (৯) রক্ত। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আয্ যুখরুফ, ৪৩ টীকা)
১৭.
কুরআনের অন্যান্য স্থানে বলা হয়েছে যে, যখন মূসা আলাইহিস সালামের ঘোষণা অনুযায়ী মিসরের উপর কোন সাধারণ বালা-মুসীবত নাযিল হতো তখন ফেরাউন মূসাকে বলতো, আপনার আল্লাহর কাছে দোয়া করে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন তারপর আপনি যা বলবেন তা মেনে নেবো। কিন্তু যখন সে বিপদ সরে যেতো তখন ফেরাউন আবার তার আগের হঠকারিতায় ফিরে যেতো। (সূরা আ’রাফ, ১৩৪ এবং আয্ যুখরুফ, ৪৯-৫০ আয়াত) তাছাড়া এমনিতেও একটি দেশের সমগ্র এলাকা দুর্ভিক্ষ, বন্যা ও ঘূর্ণি কবলিত হওয়া, সারা দেশের উপর পংগপাল ঝাঁপিয়ে পড়া এবং ব্যাং ও শস্যকীটের আক্রমণ কোন যাদুকরের তেলসমাতি হতে পারে বলে কোনক্রমেই ধারণা করা যেতে পারে না। এগুলো এমন প্রকাশ্য মু’জিযা ছিল যেগুলো দেখে একজন নিরেট বোকাও বুঝতে পারতো যে, নবীর কথায় এ ধরনের দেশ ব্যাপী বালা-মুসীবতের আগমন এবং আবার তাঁর কথায় তাদের চলে যাওয়া একমাত্র আলাহ রব্বুল আলামীনেরই হস্তক্ষেপের ফল হতে পারে। এ কারণে মূসা ফেরাউনকে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেনঃ

لَقَدْ عَلِمْتَ مَا أَنْزَلَ هَؤُلَاءِ إِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ

“তুমি খুব ভালো করেই জানো, এ নিদর্শনগুলো পৃথিবী ও আকাশের মালিক ছাড়া আর কেউ নাযিল করেনি।” (বনী ইসরাঈল, ১০২)

কিন্তু যে কারণে ফেরাউন ও তার জাতির সরদাররা জেনে বুঝে সেগুলো অস্বীকার করে তা এই ছিলঃ

أَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُونَ -

“আমরা কি আমাদের মতই দু’জন লোকের কথা মেনে নেবো, অথচ তাদের জাতি আমাদের গোলাম?” (আল মু’মিনূন, ৪৭)

১৮.
অর্থাৎ সত্যের জ্ঞান। আসলে তাদের কাছে নিজস্ব কোন জ্ঞান নেই, যা কিছু আছে তা আল্লাহর দেয়া এবং তা ব্যবহার করার যে ক্ষমতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে তাকে আল্লাহর ইচ্ছা ও মর্জি অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। আর এ ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার ও অপব্যবহারের জন্য তাদেরকে প্রকৃত মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ফেরাউন যে মূর্খতায় নিমজ্জিত ছিল এ জ্ঞান তার বিপরীতধর্মী। ফেরাউনী অজ্ঞতা ও মূর্খতার ফলে যে চরিত্র গড়ে উঠেছিল তার নমুনা ওপরে আলোচিত হয়েছে। এ জ্ঞান কোন্ ধরনের নৈতিক চরিত্রের আদর্শ পেশ করে এখন তা বলা হচ্ছে। শাসন ক্ষমতা ধন-সম্পদ, মান-মর্যাদা, শক্তি দু’পক্ষেরই সমান। ফেরাউনও এগুলো লাভ করেছিল এবং দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালামও লাভ করেছিলেন। কিন্তু অজ্ঞতা তাদের মধ্যে কত বড় ব্যবধান সৃষ্টি করে দিয়েছে।
১৯.
অর্থাৎ অন্য মু’মিন বান্দাও এমন ছিল যাদেরকে খেলাফত দান করা যেতে পারতো। কিন্তু এটা আমাদের কোন ব্যক্তিগত গুণ নয় বরং নিছক আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের এ রাজ্যের শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করেছেন।
২০.
উত্তরাধিকার বলতে ধন ও সম্পদ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার বুঝানো হয়নি। বরং নবুওয়াত ও খিলাফতের ক্ষেত্রে হযরত দাউদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সম্পদ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার বলতে যদি ধরে নেয়াও যায় তা স্থানান্তরিত হয়, তাহলে তা এককভাবে হযরত সুলাইমানের দিকেই স্থানান্তরিত হতে পারতো না। কারণ হযরত দাউদের অন্য সন্তানরাও ছিল। তাই এ আয়াত দ্বারা নবী (সা.) এর নিম্নোক্ত হাদীস দু’টিকে খণ্ডন করা যায় নাঃ لَا نُوَّرَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ “আমাদের নবীদের উত্তরাধিকার বণ্টন করা হয় না, যা কিছু আমরা পরিত্যাগ করে যাই তা হয় সাদকা।” (বুখারী, খুমুস প্রদান করা ফরয অধ্যায়) এবং

إِنَّ النَّبِىَّ لاَ يُورَثُ وَإِنَّمَا مِيرَاثُهُ فِى فُقَرَاءِ الْمُسْلِمِينَ وَالْمَسَاكِينِ

“নবীর কোন উত্তরাধিকারী হয় না। যা কিছু তিনি ত্যাগ করে যান তা মুসলমানদের গরীব ও মিসকীনদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।” (মুসনাদে আহমাদ, আবু বকর সিদ্দিক বর্ণিত ৬০ ও ৭৮ নং হাদীস)।

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত দাউদের (আ) সবচেয়ে ছোট ছেলে। তাঁর আসল ইবরানী নাম ছিল সোলোমোন। এটি ছিল “সলীম” শব্দের সমার্থক। খৃস্টপূর্ব ৯৬৫ অব্দে তিনি হযরদ দাউদের স্থলাভিষিক্ত হন এবং খৃঃ পূর্ব ৯২৬ পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। (তাঁর বিস্তারিত জীবন বৃত্তান্ত জানার জন্য পড়ুন তাফহীমুল কুরআন আল হিজর, ৭ টীকা, আল আম্বিয়া ৭৪-৭৫ টীকা।) তাঁর রাজ্যসীমা সম্পর্কে আমাদের মুফাসসিরগণ অতি বর্ণনের আশ্রয় নিয়েছেন অনেক বেশী। তারা তাঁকে দুনিয়ার অনেক বিরাট অংশের শাসক হিসাবে দেখিয়েছেন। অথচ তাঁর রাজ্য কেবলমাত্র বর্তমান ফিলিস্তিন ও জর্দান রাষ্ট্র সমন্বিত ছিল এবং সিরিয়ার একটি অংশ এর অর্ন্তভুক্ত ছিল। (দেখুন বাদশাহ সুলাইমানের রাজ্যের মানচিত্র, তাফহীমুল কুরআন সূরা বনী ইসরাঈল)।

২১.
হযরত সুলাইমানকে (আ) যে পশু-পাখির ভাষা শেখানো হয়েছিল, বাইবেলে সে কথা আলোচিত হয়নি। কিন্তু বনী ইসরাঈলের বর্ণনাসমূহে এর সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (জুয়িশ ইনসাইকোপেডিয়া, ১১ খণ্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা)।
২২.
অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া সবকিছু আমার কাছে আছে। একথাটিকে শাব্দিক অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দেয়া ধন-দৌলত ও সাজ-সরঞ্জামের আধিক্য। সুলাইমান অহংকারে স্ফীত হয়ে একথা বলেননি। বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দান ও দাক্ষিণ্যের শোকর আদায় করা।
২৩.
জিনেরা যে হযরত সুলাইমানের সেনাবাহিনীর অংশ ছিল এবং তিনি তাদের কাজে নিয়োগ করতেন, বাইবেলে একথারও উল্লেখ নেই। কিন্তু তালমূদে ও রাব্বীদের বর্ণনায় এর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। (জুয়িশ ইনসাইকোপেডিয়া, ১১ খণ্ড, ৪৪০ পৃষ্ঠা।)

বর্তমান যুগের কোন কোন ব্যক্তি একথা প্রমাণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন যে, জিন ও পাখি বলে আসলে জিন ও পাখির কথা বুঝানো হয়নি বরং মানুষের কথা বুঝানো হয়েছে। মানুষরাই হযরত সুলাইমানের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিল। তারা বলেন, জিন মানে পার্বত্য উপজাতি। এদের উপর হযরত সুলাইমান বিজয় লাভ করেছিলেন। তাঁর অধীনে তারা বিস্ময়কর শক্তি প্রয়োগের ও মেহনতের কাজ করতো। আর পাখি মানে অশ্বারোহী সেনাবাহিনী। তারা পদাতিক বাহিনীর তুলনায় অনেক বেশী দ্রুততা সম্পন্ন ছিল। কিন্তু এটি কুরআন মজীদের শব্দের অযথা বিকৃত অর্থ করার নিকৃষ্টতম প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআন এখানে জিন, মানুষ ও পাখি তিনটি আলাদা আলাদা প্রজাতির সেনাদলের কথা বর্ণনা করছে এবং তিনের ওপর ال (আলিফ লাম) বসানো হয়েছে তাদের পৃথক পৃথক প্রজাতিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে। তাই আল জিন (জিন জাতি) ও আত্ তাইর (পাখি জাত) কোনক্রমেই আল ইনস (মানুষ জাতি)-এর অর্ন্তভূক্ত হতে পারে না। বরং তারা তার থেকে আলাদা দু’টি প্রজাতিই হতে পারে। তাছাড়া যে ব্যক্তি সামান্য আরবী জানে সে-ও কখনো এ কথা কল্পনা করতে পারে না যে, এ ভাষায় নিছক জিন শব্দ বলে তার মাধ্যমে মানুষদের কোন দল বা নিছক পাখি (তাইর) শব্দ বলে তার মাধ্যমে অশ্বারোহী বাহিনী অর্থ করা যেতে পারে এবং কোন আরব এ শব্দগুলো শুনে তার এ অর্থ বুঝতে পারে। নিছক প্রচলিত বাগধারা অনুযায়ী কোন মানুষকে তার অস্বাভাবিক কাজের কারণে জিন অথবা কোন মেয়েকে তার সৌন্দর্যের কারণে পরী কিংবা কোন দ্রুতগতি সম্পন্ন পুরুষকে পাখি বলা হয় বলেই এর অর্থ এই হয় না যে, এখন জিন মানে শক্তিশালী লোক, পরী মানে সুন্দরী মেয়ে এবং পাখি মানে দ্রুতগতি সম্পন্ন মানুষই হবে। এ শব্দগুলোর অসেব অর্থ তো তাদের রূপক অর্থ, প্রকৃত অর্থ নয়। আর কোন ব্যক্যের মধ্যে কোন শব্দকে তার প্রকৃত অর্থ বাদ দিয়ে রূপক অর্থে তখনই ব্যবহার করা হয় বা শ্রোতা তার রূপক অর্থ তখনই গ্রহণ করে যখন আশেপাশে এমন কোন সুস্পষ্ট প্রসঙ্গ বা পূর্বাপর সামঞ্জস্য পাওয়া যায় যার ভিত্তিতে এ ধারণা করা যেতে পারে যে, জিন ও পাখি শব্দ দু’টি তাদের প্রকৃত অর্থে নয় বরং রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? বরং সামনের দিকে ঐ দু’টি দলের প্রত্যেক ব্যক্তির যে অবস্থা ও কাজ বর্ণনা করা হয়েছে তা এ পেঁচালো ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ বিরোধী অর্থ প্রকাশ করছে। কুরআনের কথায় কোন ব্যক্তির মন যদি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারে, তাহলে তার পরিষ্কার বলে দেয়া উচিত এ কথা আমি মানি না। কিন্তু মানুষ কুরআনের পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন শব্দগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে নিজের মনের মতো অর্থের ছাঁচে সেগুলো ঢালাই করবে এবং এ কথা প্রকাশ করতে থাকবে যে, সে কুরআনের বর্ণনা মানে, অথচ আসলে কুরআন যা কিছু বর্ণনা করেছে সে তাকে নয় বরং নিজের জোর করে তৈরী করা অর্থই মানে--- এটি মানুষের একটি মস্তবড় চারিত্রিক কাপুরুষতা ও তাত্ত্বিক খেয়ানত ছাড়া আর কী হতে পারে?

২৪.
আজকালকার কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতটিরও পেঁচালো ব্যাখ্যা করেছেন। তারা বলেন, “ওয়াদী-উন্-নামল” মানে পিঁপড়ের উপত্যকা নয় বরং এটি ছিল সিরীয় এলাকায় অবস্থিত একটি উপত্যকার নাম। আর নামলাহ্ মানে একটি পিঁপড়ে নয় বরং এটি একটি গোত্রের নাম। এভাবে তারা এ আয়াতের অর্থ বর্ণনা করে বলেন, “যখন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নামল উপত্যকায় পৌঁছেন তখন একজন নামলী বললো, “হে নামল গোত্রের লোকেরা.......।” কিন্তু এটিও এমন একটি পেঁচালো ব্যাখ্যা কুরআনের শব্দ যার সহযোগী হয় না। ধরে নেয়া যাক, “ওয়াদিউন নামল” বলতে যদি ঐ উপত্যকা মনে করা হয় এবং সেখানে বনী নামল নামে কোন গোত্র বাস করতো বলে যদি ধরে নেয়া যায়, তাহলেও নামল গোত্রের এক ব্যক্তিকে “নামলাহ্” বলা আরবী ভাষার বাকরীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। যদিও পশুদের নামে আরবে বহু গোত্রের নাম রয়েছে। যেমন কালব (কুকুর), আসাদ (সিংহ) ইত্যাদি কিন্তু কোন আরববাসী কালব গোত্রের কোন ব্যক্তি সম্পর্কে قَالَ كَلْبٍ (একজন কুকুর একথা বললো) এবং আসাদ গোত্রের কোন ব্যক্তি সম্পর্কে قَالَ اَسَدٍ (একজন সিংহ বললো) কখনো বলবে না। তাই বনী নামলের এক ব্যক্তি সম্পর্কে এভাবে বলা, قَالَتْ نَمْلَةٌ (একজন পিঁপড়ে একথা বললো) পুরোপুরি আরবী বাগধারা ও আরবী বাক্য প্রয়োগ রীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তারপর নামল গোত্রের এক ব্যক্তির বনী নামলকে চিৎকার করে একথা বলা, “হে নামল গোত্রীয় লোকেরা! নিজ নিজ গৃহে ঢুকে পড়ো। এমন যেন না হয়, সুলাইমানের সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে এবং তারা জানতেও পারবে না,” একেবারেই অর্থহীন। কারণ মানুষের কোন সেনাদল মানুষের কোন দলকে অজ্ঞাতসারে পদদলিত করে না। যদি তারা তাদেরকে আক্রমণ করার সংকল্প নিয়ে এসে থাকে, তাহলে তাদের নিজেদের ঘরে ঢুকে পড়া অর্থহীন। আক্রমণকারীরা ঘরের মধ্যে ঢুকে তাদেরকে ভালোভাবে কচুকাটা করবে। আর যদি তারা নিছক কুচকাওয়াজ করতে করতে অতিক্রম করতে থাকে, তাহলে তো তাদের জন্য শুধুমাত্র পথ ছেড়ে দেয়াই যথেষ্ট। কুচকাওয়াজকারীদের আওতায় এলে মানুষের ক্ষতি অবশ্যই হতে পারে কিন্তু চলাচলকারী মানুষকে দলে পিষে রেখে যাবে এমনটি তো হতে পারে না। কাজেই বনী নামল যদি কোন মানবিক গোত্র হতো এবং তাদের কোন ব্যক্তি নিজের গোত্রকে সতর্ক করতে চাইতো, তাহলে আক্রন্ত হবার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে সে বলতো, “হে নামল গোত্রীয়রা! পালাও; পালাও; পাহাড়ের মধ্যে আশ্রয় নাও, যাতে সুলাইমানের সৈন্যরা তোমাদের ধ্বংস করে না দেয়।” আর আক্রমণের আশঙ্কা না থাকলে সে বলতো, “হে নামল গোত্রীয়রা! পথ থকে সরে যাও, যাতে তোমাদের কেউ সুলাইমানের সেনাদলের সামনে না পড়ে।” এ পেঁচালো ব্যাখ্যার মধ্যে আরবী ভাষা ও বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে তো এ ভুল ছিল। এখন নামল উপত্যকা এবং বনী নামল নামক একটি গোত্রের বাস সম্পর্কে বলা যায়, এটি আসলে একটি কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর পেছনে আদৌ কোন তাত্ত্বিক প্রমাণ নেই। যারা একে উপত্যকার নাম বলেছেন তারা নিজেরাই এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, পিঁপড়ের আধিক্যের কারণে একে এ নামে অভিহিত করা হয়েছিল। কাতাদাহ্ ও মুকাতিল বলেন, واد بارض الشام كثير النمل “সেটি সিরিয়া দেশের একটি উপত্যকা এবং সেখানে পিঁপড়ের আধিক্য রয়েছে। কিন্তু ইতিহাস ও ভূগোলের কোন বইতে এবং পুরাতত্ত্বের কোন গবেষণাও এ উপত্যকায় বনী নামল নামক কোন উপজাতির কথা উল্লেখিত হয়নি। এটি নিছক একটি মনগড়া কথা। নিজেদের কল্পিত ব্যাখ্যাকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

বনী ইসরাঈলের বর্ণনাসমূহেও এ কাহিনী পাওয়া যায়। কিন্তু তার শেষাংশ কুরআনের বর্ণনার বিপরীত এবং হযরত সুলাইমানের মর্যাদার বিরোধী। সেখানে বলা হয়েছে, হযরত সুলাইমান যখন এমন একটি উপত্যকা অতিক্রম করছিলেন যেখানে খুব বেশী পিঁপড়ে ছিল তখন তিনি শুনলেন একটি পিঁপড়ে চিৎকার করে অন্য পিঁপড়েদেরকে বলছে, “নিজেদের ঘরে ঢুকে পড়ো, নয়তো সুলাইমানের সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে।” একথা শুনে হযরত সুলাইমান (আ) সেই পিঁপড়ের সামনে বড়ই আত্মম্ভরিতা প্রকাশ করলেন। এর জবাবে পিঁপড়েটি তাঁকে বললো, তুমি কোথাকার কে? তুমি তো নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে তৈরী হয়েছো। একথা শুনে হযরত সুলাইমান লজ্জিত হলেন। (জুয়িশ ইনসাইকোপিডিয়া ১১ খণ্ড, ৪৪০ পৃষ্ঠা) এ থেকে অনুমান করা যায়, কুরআন কিভাবে বনী ইসরাঈলের বর্ণনাসমূহ সংশোধন করেছে এবং তারা নিজেদের নবীদের চরিত্রে যেসব কলঙ্ক লেপন করেছিল কিভাবে সেগুলো দূর করেছে। এসব বর্ণনা থেকে কুরআন সবকিছু চুরি করেছে বলে পশ্চিমী প্রাচ্যবিদরা নির্লজ্জভাবে দাবী করে।

একটি পিঁপড়ের পক্ষে নিজের সমাজের সদস্যদেরকে কোন একটি আসন্ন বিপদ থেকে সতর্ক করে দেয়া এবং এজন্য তাদের নিজেদের গর্তে ঢুকে যেতে বলা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোটেই অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এখন হযরত সুলাইমান একথাটি কেমন করে শুনতে পেলেন এ প্রশ্ন থেকে যায়। এর জবাবে বলা যায়, যে ব্যক্তির শ্রবণেন্দ্রিয় আল্লাহর কালামের মতো সূক্ষ্মতর জিনিস আহরণ করতে পারে তার পক্ষে পিঁপড়ের কথার মতো স্থুল (Crude) জিনিস আহরণ করা কোন কঠিন ব্যাপার হতে যাবে কেন?

২৫.
মূল শব্দ হচ্ছে رَبِّ أَوْزِعْنِي এখানে আরবী ভাষায় وزع এর আসল অর্থ হচ্ছে রুখে দেয়া। এ সময় হযরত সুলাইমানের একথা বলা ا أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ (আমাকে রুখে দাও, আমি তোমার অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো)। আমাদের কাছে আসলে এ অর্থ প্রকাশ করে যে, হে আমার রব! তুমি আমাকে যে বিরাট শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছো তা এমন যে, যদি আমি সামান্য গাফিল হয়ে যাই তাহলে নাজানি বন্দেগীর সীমানা থেকে বের হয়ে আমি নিজের অহংকারে মত্ত হয়ে কোথা থেকে কোথায় চলে যাই। তাই হে আমার পরওয়ারদিগার! তুমি আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, যাতে আমি অনুগ্রহ অস্বীকারকারীর পরিবর্তে অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীতে পরিণত হতে পারি।
২৬.
সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভূক্ত করার অর্থ সম্ভবত এ হবে যে, আখেরাতে আমার পরিণতি যেন সৎকর্মশীল লোকদের সাথে হয় এবং আমি যেন তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। কারণ মানুষ যখন সৎকাজ করবে তখন সৎকর্মশীল তো সে আপনা আপনিই হয়ে যাবে। তবে আখেরাতে কারো জান্নাতে প্রবেশ করা নিছক তার সৎকর্মের ভিত্তিতে হতে পারে না বরং এটি আল্লাহর রহমতের ওপর নির্ভর করে। হাদীসে বলা হয়েছে, একবার নবী ﷺ বলেন, لن يُدْخِلُ أَحَدَكُمُ الْجَنَّةَ عَمَلُهُ “তোমাদের কারো নিছক আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না।” বলা হলো, وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ “আপনার বেলায়ও কি একথা খাটে? ” জবাব দিলেন, وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِى اللَّهُ بِرَحْمَته “হ্যাঁ, আমিও নিছক আমার আমলের জোরে জান্নাতে প্রবেশ করবো না, যতক্ষণ না আল্লাহ‌ তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে নেবেন।”

যদি ‘আন নামল, মানে হয় মানুষের একটি উপজাতি এবং ‘নামলাহ্’ মানে হয় নামল উপজাতির এক ব্যক্তি তাহলে সুলাইমান আলাইহিস সালামের এ দোয়া এ সময় একেবারেই নিরর্থক হয়ে যায়। এক বাদশাহর পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীর ভয়ে কোন মানবিক গোত্রের এক ব্যক্তির নিজের গোত্রকে বিপদ সম্পর্কে সজাগ করা এমন কোন্ ধরণের অস্বাভাবিক কথা যে, এমন একজন সুমহান মর্যাদাশালী পরাক্রান্ত বাদশাহ এ জন্য আল্লাহর কাছে এ দোয়া চাইবেন। তবে এক ব্যক্তির দূর থেকে একটু পিঁপড়ের আওয়াজ শুনার এবং তার অর্থ বুঝার মতো জবরদস্ত শ্রবণ ও জ্ঞান শক্তির অধিকারী হওয়াটা অবশ্যই এমন একটি বিষয় যার ফলে মানুষের আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ ধরণের অবস্থায় হযরত সুলাইমানের এ দোয়া যথার্থ ও যথাযথ।

২৭.
অর্থাৎ এমনসব পাখিদের খোঁজ-খবর যাদের সম্পর্কে ওপরে বলা হয়েছে যে, জিন ও মানুষের মতো তাদের সেনাদলও হযরত সুলাইমানের সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত ছিল। সম্ভবত হযরত সুলাইমান তাদের মাধ্যমেই সংবাদ আদান-প্রদান, শিকার এবং এ ধরণের অন্যান্য কাজ করতেন।
অনুবাদ: