আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল-ফুরকান

৭৭ আয়াত

৪১ ) তারা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। (বলে) , “এ লোককে আল্লাহ‌ রসূল করে পাঠিয়েছেন?
وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَـٰذَا ٱلَّذِى بَعَثَ ٱللَّهُ رَسُولًا ٤١
৪২ ) এতো আমাদের পথভ্রষ্ট করে নিজেদের দেবতাদের থেকেই সরিয়ে দিতো যদি না আমরা তাদের প্রতি অটল বিশ্বাসী হয়ে থাকতাম। ৫৫ বেশ, সে সময় দূরে নয় যখন শাস্তি দেখে তারা নিজেরাই জানবে ভ্রষ্টতায় কে দূরে চলে গিয়েছিল।
إِن كَادَ لَيُضِلُّنَا عَنْ ءَالِهَتِنَا لَوْلَآ أَن صَبَرْنَا عَلَيْهَا ۚ وَسَوْفَ يَعْلَمُونَ حِينَ يَرَوْنَ ٱلْعَذَابَ مَنْ أَضَلُّ سَبِيلًا ٤٢
৪৩ ) কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে? ৫৬ তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার?
أَرَءَيْتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُۥ هَوَىٰهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا ٤٣
৪৪ ) তুমি কি মনে করো তাদের অধিকাংশ লোক শোনে ও বোঝে? তারা পশুর মতো বরং তারও অধম। ৫৭
أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ ۚ إِنْ هُمْ إِلَّا كَٱلْأَنْعَـٰمِ ۖ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا ٤٤
৪৫ ) তুমি কি দেখ না কিভাবে তোমার রব ছায়া বিস্তার করেন? তিনি চাইলে একে চিরন্তন ছায়ায় পরিণত করতেন। আমি সূর্যকে করেছি তার পথ-নির্দেশক। ৫৮
أَلَمْ تَرَ إِلَىٰ رَبِّكَ كَيْفَ مَدَّ ٱلظِّلَّ وَلَوْ شَآءَ لَجَعَلَهُۥ سَاكِنًۭا ثُمَّ جَعَلْنَا ٱلشَّمْسَ عَلَيْهِ دَلِيلًۭا ٤٥
৪৬ ) তারপর (যতই সূর্য উঠতে থাকে) আমি এ ছায়াকে ধীরে ধীরে নিজের দিকে গুটিয়ে নিতে থাকি। ৫৯
ثُمَّ قَبَضْنَـٰهُ إِلَيْنَا قَبْضًۭا يَسِيرًۭا ٤٦
৪৭ ) আর তিনিই রাতকে তোমাদের জন্য পোশাক, ৬০ ঘুমকে মৃত্যুর শান্তি এবং দিনকে জীবন্ত হয়ে উঠার সময়ে পরিণত করেছেন। ৬১
وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيْلَ لِبَاسًۭا وَٱلنَّوْمَ سُبَاتًۭا وَجَعَلَ ٱلنَّهَارَ نُشُورًۭا ٤٧
৪৮ ) আর নিজের রহমতের আগেভাগে বাতাসকে সুসংবাদদাতারুপে পাঠান। তারপর আকাশ থেকে বর্ষণ করেন বিশুদ্ধ পানি ৬২
وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ ٱلرِّيَـٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ ۚ وَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ طَهُورًۭا ٤٨
৪৯ ) একটি মৃত এলাকাকে তার মাধ্যমে জীবন দান করার এবং নিজের সৃষ্টির মধ্য থেকে বহুতর পশু ও মানুষকে তা পান করবার জন্য। ৬৩
لِّنُحْـِۧىَ بِهِۦ بَلْدَةًۭ مَّيْتًۭا وَنُسْقِيَهُۥ مِمَّا خَلَقْنَآ أَنْعَـٰمًۭا وَأَنَاسِىَّ كَثِيرًۭا ٤٩
৫০ ) এ বিস্ময়কর কার্যকলাপ আমি বার বার তাদের সামনে আনি ৬৪ যাতে তারা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে কিন্তু অধিকাংশ লোক কুফরী ও অকৃতজ্ঞতা ছাড়া অন্য কোন মনোভাব পোষণ করতে অস্বীকার করে। ৬৫
وَلَقَدْ صَرَّفْنَـٰهُ بَيْنَهُمْ لِيَذَّكَّرُوا۟ فَأَبَىٰٓ أَكْثَرُ ٱلنَّاسِ إِلَّا كُفُورًۭا ٥٠
৫৫.
কাফেরদের এ দু’টি কথা পরস্পর বিরোধী। প্রথম কথাটি থেকে জানা যায়, তারা নবীকে ﷺ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে এবং তাঁকে বিদ্রূপ করে তাঁর মর্যাদা হ্রাস করতে চাচ্ছে। তারা যেন বলতে চাচ্ছে, নবী (সা.) তাঁর মর্যাদার চাইতে অনেক বেশী বড় দাবী করেছেন। দ্বিতীয় কথা জানা যায়, তারা তাঁর যুক্তির শক্তি ও ব্যক্তিত্বের ক্ষমতা মেনে নিচ্ছে এবং স্বতস্ফূর্তভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে যে, তারা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও হঠকারিতার আশ্রয় নিয়ে নিজেদের আরাধ্য দেবতাদের বন্দনায় অবিচল না থাকলে এ ব্যক্তি তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে নিতেন। ইসলামী আন্দোলন তাদেরকে কি পরিমাণ আতংকিত করে তুলছিল এই পরস্পর বিরোধী কথা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বেহায়ার মতো যখন তামাশা-বিদ্রূপ করতো তখন হীনমন্যতা বোধের পীড়নে অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের মুখ থেকে এমন সব কথা বের হয়ে যেতো যা থেকে এ শক্তিটি তাদের মনে কি পরিমাণ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে তা স্পষ্ট বুঝা যেতো।
৫৬.
প্রবৃত্তির কামনাকে মাবুদে পরিণত করার মানে হচ্ছে, তার পূজা করা। আসলে এটাও ঠিক মূর্তি পূজা করা বা কোন সৃষ্টিকে উপাস্যে পরিণত করার মতই শিরক। আবু উমামাহ রেওয়ায়াত করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

ما تحت ظل السماء من اله يعبد من دون الله تعالى اعظم عند الله عزوجل من هوى يتبع –

“এ আকাশের নীচে যতগুলো উপাস্যের উপাসনা করা হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপাস্য হচ্ছে এমন প্রবৃত্তির কামনা যার অনুসরণ করা হয়।” (তাবরানী) [আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আল কাহাফ ৫০ টীকা।]

যে ব্যক্তি নিজের কামনাকে বুদ্ধির অধীনে রাখে এবং বুদ্ধি ব্যবহার করে নিজের জন্য ন্যায় ও অন্যায়ের পথের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়, সে যদি কোন ধরনের শিরকী বা কুফরী কর্মে লিপ্ত হয়েও পড়ে তাহলে তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনা যেতে পারে এবং সে সঠিক পথ অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর তার উপর অবিচল থাকবে এ আস্থাও পোষণ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রবৃত্তির দাস হচ্ছে একটি লাগামহীম উট। তার কামনা তাকে যেদিকে নিয়ে যাবে সে পথহারা হয়ে সেদিকেই দৌড়াতে থাকবে। তার মনে ন্যায় ও অন্যায় এবং হক ও বাতিলের মধ্যে ফারাক করার এবং একটিকে ত্যাগ করে অন্যটিকে গ্রহণ করার কোন চিন্তা আদৌ সক্রিয় থাকে না। তাহলে কে তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনতে পারে? আর ধরে নেয়া যাক, যদি সে মেনেও নেয় তাহলে তাকে কোন নৈতিক বিধানের অধীন করে দেয়া কোন মানুষের সাধ্যায়ত্ত নয়।

৫৭.
অর্থাৎ গরু-ছাগলের দল যেমন জানে না তাদের যারা হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা তাদের চারণক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, না কসাইখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তারা কেবল চোখ বন্ধ করে যারা হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ইশারায় চলতেই থাকে, ঠিক তেমনি এ জনসাধারণও তাদের নিজেদের শয়তানী প্রবৃত্তি ও পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ইশারায় চোখ বন্ধ করে চলতেই থাকছে। তারা জানে না তাদের হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কল্যাণের দিকে, না ধ্বংসের দিকে। এ পর্যন্ত তাদের অবস্থা গরু-ছাগলের সাথে তুলনীয়। কিন্তু গরু-ছাগলকে আল্লাহ‌ বুদ্ধিজ্ঞান ও চেতনা শক্তি দান করেননি। তারা যদি চারণক্ষেত্র ও কসাইখানার মধ্যে কোন পার্থক্য না করে থাকে তাহলে এতে অবাক হবার কিছু নেই। তবে অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় একদল মানুষ যাদের আল্লাহ‌ বুদ্ধি-জ্ঞান ও চেতনা শক্তি দান করেছেন এবং তারপরও তারা গরু-ছাগলের মতো অসচেতনতা ও গাফলতির মধ্যে ডুবে রয়েছে।

কেউ যেন প্রচার-প্রচারণাকে অর্থহীন গণ্য করা এ ভাষণের উদ্দেশ্য বলে মনে না করেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে এ কথাগুলো এজন্য বলা হচ্ছে না যে, তিনি যেন লোকদেরকে অনর্থক বুঝাবার চেষ্টা ত্যাগ করেন। আসলে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যেই এ বক্তব্য রাখা হয়েছে, যদিও বাহ্যত সম্বোধন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আসলে তাদের এ কথা শুনানো উদ্দেশ্য যে, ওহে গাফেলরা! তোমাদের এ অবস্থা কেন? আল্লাহ কি তোমাদের বুদ্ধি-বিবেক এজন্য দিয়েছেন যে, তোমরা দুনিয়ায় পশুদের মতো জীবন যাপন করবে?

৫৮.
মূলে “দলীল” (دليل) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ঠিক এমন একটি অর্থে যে অর্থে ইংরেজী ভাষায় Pilot শব্দটির ব্যবহার হয়। মাঝি-মাল্লাদের পরিভাষায় “দলীল” এমন এক ব্যক্তিকে বলা হয় যে নৌকাকে পথ-নির্দেশনা দিয়ে চালাতে থাকে। ছায়ার উপর সূর্যকে দলীল করা অর্থ হচ্ছে এই যে, ছায়ার ছড়িয়ে পড়া ও সংকুচিত হওয়া সূর্যের উপরে ওঠা ও নেমে যাওয়া এবং তার উদয় হওয়া ও অস্তে যাওয়ার উপর নির্ভরশীল এবং তার আলামত।

ছায়া অর্থ আলোক ও অন্ধকারের মাঝামাঝি এমন অবস্থা যা সকাল বেলা সূর্য ওঠার আগে হয় এবং সারাদিন ঘরের মধ্যে, দেয়ালের পেছনে ও গাছের নিচে থাকে।

৫৯.
নিজের দিকে গুটিয়ে নেয়া মানে হচ্ছে, অদৃশ্য ও বিলীন করে দেয়া। কারণ যে কোন জিনিস ধ্বংস হয় তা আল্লাহরই দিকে ফিরে যায়। প্রত্যেকটি জিনিস তাঁর দিক থেকেই আসে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যায়।

এ আয়াতের দু’টি দিক। বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক। বাহ্যিক দিক থেকে আয়াতটি মুশরিকদের বলছে, যদি তোমরা পৃথিবীতে পশুর মতো জীবন ধারণ না করতে এবং কিছুটা বুদ্ধি-বিবেচনা ও সচেতনতার সাথে এগিয়ে চলতে, তাহলে প্রতিনিয়ত তোমরা এই যে ছায়া দেখতে পাচ্ছো এটিই তোমাদের এ শিক্ষা দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল যে, নবী তোমাদের যে তাওহীদের শিক্ষা দিচ্ছেন তা যথার্থই সত্য ও সঠিক। তোমাদের সারা জীবন এ ছায়ার জোয়ার-ভাটার সাথে বিজড়িত। যদি চিরন্তন ছায়া হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে কোন প্রাণী এমন কি উদ্ভিদও জীবিত থাকতে পারে না। কারণ সূর্যের আলো ও উত্তাপের উপর তাদের সবার জীবন নির্ভর করে। ছায়া যদি একেবারেই না থাকে তাহলেও জীবন অসাধ্য। কারণ সর্বক্ষণ সূর্যের মুখোমুখি থাকার এবং তার রশ্মি থেকে কোন আড়াল না পাওয়ার ফলে কোন প্রাণী এবং কোন উদ্ভিদও বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। বরং পানিও উধাও হয়ে যাবে। রোদ ও ছায়ার মধ্যে যদি হঠাৎ করে পরিবর্তন হতে থাকে তাহলে পৃথিবীর সৃষ্টিকূল পরিবেশের এসব আকস্মিক পরিবর্তন বেশীক্ষণ বরদাশত করতে পারবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী স্রষ্টা ও সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন সত্তা পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে এমন একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন যার ফলে স্থায়ীভাবে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ধীরে ধীরে ছায়া পড়ে ও হ্রাস-বৃদ্ধি হয় এবং রোদ ক্রমান্বয়ে বের হয়ে আসে এবং বাড়তে ও কমতে থাকে। এ ধরনের বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা কোন অন্ধ প্রকৃতির হাতে আপনা আপনি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অথবা বহুসংখ্যক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রভুও একে প্রতিষ্ঠিত করে এভাবে একটি ধারাবাহিক নিয়ম-শৃংখলা সহকারে চালিয়ে আসতে পারে না।

কিন্তু এসব বাহ্যিক শব্দের অভ্যন্তর থেকে আর একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে, বর্তমানে এই যে কুফরী ও শিরকের অজ্ঞতার ছায়া চতুর্দিকে ছেয়ে আছে এটা কোন স্থায়ী জিনিস নয়। কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকারে হেদায়াতের সূর্য উদিত হয়েছে। বাহ্যত ছায়া বিস্তার লাভ করেছে দূর দূরান্তে। কিন্তু এ সূর্য যতই উপরে উঠতে থাকবে ততই ছায়া সংকুচিত হতে থাকবে। তবে একটু সবরের প্রয়োজন। আল্লাহর আইন কখনো আকস্মিক পরিবর্তন আনে না। বস্তুজগতে যেমন সূর্য ধীরে ধীরে উপরে উঠে এবং ছায়া ধীরে ধীরে সংকুচিত হয় ঠিক তেমনি চিন্তা ও নৈতিকতার জগতেও হেদায়াতের সূর্যের উত্থান ও ভ্রষ্টতার ছায়ার পতন ধীরে ধীরেই হবে।

৬০.
অর্থাৎ ঢাকবার ও লুকাবার জিনিস।
৬১.
এ আয়াতের তিনটি দিক রয়েছে। একদিক থেকে এখানে তাওহীদের যুক্তি পেশ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিক থেকে নিত্যদিনকার মানবিক অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের সাহায্যে মৃত্যুর পরের জীবনের সম্ভাবনার যুক্তি পেশ করা হচ্ছে। তৃতীয় দিক থেকে যেভাবে সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে যে, জাহেলীয়াতের রাত শেষ হয়ে গেছে, এখন জ্ঞান, চেতনা ও হেদায়াতের উজ্জ্বল দিবালোকের স্ফূরণ ঘটেছে এবং শিগগির বা দেরীতে যেমনি করেই হোক নিদ্রিতরা জেগে উঠবেই। তবে যাদের জন্য রাতের ঘুম ছিল মৃত্যু ঘুম তারা আর জাগবে না এবং তাদের না জেগে ওঠা হবে তাদের নিজেদের জন্যই জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া, দিনের কাজ কারবার তাদের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে না।

৬২.
অর্থাৎ এমন পানি যা সব ধরনের পংকিলতা থেকেও মুক্ত হয় আবার কোন প্রকার বিষাক্ত পদার্থ ও জীবানুও তার মধ্যে থাকে না। যার সাহায্যে নাপাকি ধুয়ে সাফ করা যায় এবং মানুষ, পশু, পাখি, উদ্ভিদ সবাই জীবনী শক্তি লাভ করে।
৬৩.
উপরের আয়াতটির মতো এ আয়াতটিরও তিনটি দিক রয়েছে। এর মধ্যে তাওহীদের যুক্তি রয়েছে, পরকালের যুক্তিও রয়েছে এবং এ সঙ্গে এ সূক্ষ বিষয়বস্তুটিও এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন রয়েছে যে, জাহেলীয়াতের যুগ ছিল মূলত খরা ও দূর্ভিক্ষের যুগ। সে যুগে মানবিকতার ভূমি অনুর্বর ও অনাবাদী থেকে গিয়েছিল। এখন আল্লাহ‌ অনুগ্রহ করে নবুওয়াতের রহমতের মেঘমালা পাঠিয়েছেন। তা থেকে অহী জ্ঞানের নির্ভেজাল জীবনবারি বর্ষিত হচ্ছে। সবাই না হলেও আল্লাহর বহু বান্দা তার স্বচ্ছ ধারায় অবগাহন করতে পারবেই।

৬৪.
মূল শব্দগুলো হচ্ছে لَقَدْ صَرَّفْنَاهُ ---এর তিনটি অর্থ হতে পারে। এক, বারিধারা বর্ষণের এ বিষয়বস্তুটি আমি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বারবার বর্ণনা করে প্রকৃত সত্য বুঝাবার চেষ্টা করেছি। দুই, আমি বারবার গ্রীষ্ম ও খরা, মওসূমী বায়ু, মেঘ, বৃষ্টি এবং তা থেকে সৃষ্ট বিচিত্র জিবন-উপকরণসমূহ তাদের দেখাতে থেকেছি। তিন, আমি বৃষ্টিকে আবর্তিত করতে থাকি। অর্থাৎ সব সময় সব জায়গায় সমান বৃষ্টিপাত হয় না। বরং কখনো কোথাও চলে একদম খরা, কোথাও কম বৃষ্টিপাত হয়, কোথাও চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টিপাত হয়, কোথাও ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার আবির্ভাব হয় এবং এসব অবস্থায় বিভিন্ন বিচিত্র ফলাফল সামনে আসতে থাকে।
৬৫.
যদি প্রথম দিক থেকে (অর্থাৎ তাওহীদের যুক্তির দৃষ্টিতে) দেখা যায়, তাহলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়ঃ লোকেরা যদি চোখ মেলে তাকায় তাহলে নিছক বৃষ্টির ব্যবস্থপনারই মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর গুণাবলী এবং তাঁর একক রব্বুল আলামীন হবার প্রমাণ স্বরূপ এত বিপুল সংখ্যক নিদর্শন দেখতে পাবে যে, একমাত্র সেটিই নবীর তাওহীদের শিক্ষা সত্য হবার পক্ষে তাদের নিশ্চিন্ত করতে পারে। কিন্তু আমি বারবার এ বিষয়বস্তুর প্রতি তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করা সত্ত্বেও এবং দুনিয়ায় পানি বণ্টনের এ কার্যকলাপ নিত্য-নতুনভাবে একের পর এক তাদের সামনে আসতে থাকলেও এ জালেমরা কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না। তারা সত্য ও ন্যায়নীতিকে মেনে নেয় না। তাদের আমি বুদ্ধি ও চিন্তার যে নিয়ামত দান করেছি তার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে না। এমন কি তারা নিজেরা যা কিছু বুঝতো না তা তাদের বুঝাবার জন্য কুরআনে বার বার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে--এ অনুগ্রহের জন্য শোকর গুজারীও করে না।

দ্বিতীয় দিক থেকে (অর্থাৎ আখেরাতের যুক্তির দৃষ্টিতে) দেখলে এর অর্থ দাঁড়ায়ঃ প্রতি বছর তাদের সামনে গ্রীষ্ম ও খরায় অসংখ্য সৃষ্টির মৃত্যুমুখে পতিত হবার এবং তারপর বর্ষার বদৌলতে মৃত উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গের জীবিত হয়ে উঠার নাটক অভিনীত হতে থাকে। কিন্তু সবকিছু দেখেও এ নির্বোধের দল মৃত্যুর পরের জীবনকে অসম্ভব বলে চলছে। বারবার সত্যের এ দ্ব্যর্থহীন নিদর্শনের প্রতি তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয় কিন্তু কুফরী ও অস্বীকৃতির অচলায়তন কোনক্রমেই টলে না। তাদের বুদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তির যে অতুলনীয় নিয়ামত দান করা হয়েছে তার অস্বীকৃতির ধারা কোনক্রমে খতমই হয় না। শিক্ষা ও উপদেশ দানের যে অনুগ্রহ তাদের প্রতি করা হয়েছে তার প্রতি অকৃতজ্ঞ মনোভাব তাদের চিরকাল অব্যাহত রয়েছে।

যদি তৃতীয় দিকটি (অর্থাৎ খরার সাথে জাহেলীয়াতের এবং রহমতের বারিধারার সাথে অহী ও নবুওয়াতের তুলনাকে) সামনে রেখে দেখা হয় তাহলে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়ঃ মানবজাতির ইতিহাসে এ দৃশ্য বার বার সামনে এসেছে যে যখনই এ দুনিয়া নবী ও আল্লাহর কিতাবের কল্যাণসুধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তখনই মানবতা বন্ধ্যা হয়ে গেছে এবং চিন্তা ও নৈতিকতার ভূমিতে কাঁটাগুল্ম ছাড়া আর কিছুই উৎপন্ন হয়নি। আর যখনই অহী ও রিসালাতের জীবন বারি এ পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে তখনই মানবতার উদ্যান ফলে-ফুলে সুশোভিত হয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান মূর্খতা ও জাহেলীয়াতের স্থান দখল করেছে। জুলুম-নিপীড়নের জায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফাসেকী ও অশ্লীলতার জায়গায় নৈতিক ও চারিত্রিক মাহাত্মের ফুল ফুটেছে। যেদিকে তার দান যতটুকু পৌঁছেছে সেদিকেই অসদাচার কমে গেছে এবং সদাচার বেড়ে গেছে। নবীদের আগমন সবসময় একটি শুভ ও কল্যাণকর চিন্তা ও নৈতিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। কখনো এর ফল খারাপ হয়নি। আর নবীদের বিধান ও নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করে বা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবজাতি সব সময় ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। কখনো এর ফল ভালো হয়নি। ইতিহাস এ দৃশ্য বারবার দেখিয়েছে এবং কুরআনও বার বার এদিকে ইশারা করেছে। কিন্তু এরপরও লোকেরা শিক্ষা নেয় না। এটি একটি অমোঘ সত্য। হাজার বছরের মানবিক অভিজ্ঞতার ছাপ এর গায়ে লেগে আছে। কিন্তু একে অস্বীকার করা হচ্ছে। আর আজ নবী ও কিতাবের নিয়ামত দান করে আল্লাহর যে জনপদকে ধন্য করেছেন সে এর শোকর গুজারী করার পরিবর্তে উল্টো অকৃতজ্ঞ মনোভাব প্রকাশের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুবাদ: