بَلْ كَذَّبُوا۟ بِٱلسَّاعَةِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لِمَن كَذَّبَ بِٱلسَّاعَةِ سَعِيرًا
আসল কথা হচ্ছে, এরা “সে সময়টিকে” ২০ মিথ্যা বলেছে ২১ এবং যে সে সময়কে মিথ্যা বলে তার জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন তৈরি করে রেখেছি।
২০
মূলে الْسَّاعَة শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ساعة
মানে মুহূর্ত ও সময় এবং তার সাথে ال সংযোগ করার ফলে এর অর্থ হয়, সেই নির্দিষ্ট সময় যা আসবে এবং যে সম্পর্কে আমি পূর্বাহ্ণেই তোমাকে খবর দিয়েছি। কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ শব্দটি একটি পারিভাষিক অর্থে এমন একটি বিশেষ সময়ের জন্য বলা হয়েছে যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, পূর্বের ও পরের সবাইকে নতুন করে জীবিত করে উঠানো হবে, সবাইকে একত্র করে আল্লাহ হিসেব নেবেন এবং সবাইকে তার বিশ্বাস ও কর্ম অনুযায়ী পুরস্কার ও শাস্তি দেবেন।
২১
অর্থাৎ তারা যেসব কথা বলছে তার কারণ এ নয় যে, সত্যি সত্যিই কোন সঙ্গত ভিত্তিতে তাদের মনে এ সন্দেহ জেগেছে যে, কুরআন অন্য কোথাও থেকে নকল করা বাণীর সমষ্টি অথবা যথার্থই ধারণা করে যেসব আজাদ করা গোলামের নাম তারা রটিয়ে থাকে তারাই তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেয় কিংবা তুমি আহার করো ও বাজারে চলাফেরা করো কেবলমাত্র এ জিনিসটিই তোমার রিসালাত মেনে নেবার ব্যাপারে তাদের জন্য বাঁধার সৃষ্টি করছে অথবা তোমার সত্যের শিক্ষা মেনে নিতে তারা তৈরিই ছিল কিন্তু তোমার সাথে আরদালী, হিসেবে কোন ফেরেশতা ছিল না এবং তোমার জন্য কোন অর্থভাণ্ডারও অবতীর্ণ করা হয়নি শুধুমাত্র এজন্যই তারা পিছিয়ে গিয়েছে। এগুলোর কোনটিই আসল কারণ নয়। বরং আখেরাত অস্বীকারই হচ্ছে এর আসল কারণ, যা হক ও বাতিলের ব্যাপারে তাদেরকে একেবারেই দায়িত্বহীন বানিয়ে দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে তারা আদতে কোন গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা অনুসন্ধানের প্রয়োজনই অনুভব করে না এবং তোমার যুক্তিসঙ্গত দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করার জন্য এমনই সব হাস্যকর যুক্তি পেশ করতে উদ্যত হয়েছে। এ জীবনের পরে আর একটি জীবনও আছে যেখানে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে তাদের সমস্ত কার্যকলাপের জবাবহিতি করতে হবে, এ চিন্তা তাদের মাথায় আসেই না। তারা মনে করে, এ দু'দিনের জীবনের পরে সবাইকে মরে গিয়ে মাটিতে মিশে যেতে হবে। মূর্তি পূজারীও যেমন মাটিতে মিশে যাবে, তেমনি আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং আল্লাহতে অবিশ্বাসীও। কোন জিনিসেরও কোন পরিণাম ফল নেই। তাহলে মুশরিক হিসেবে মরা এবং তাওহীদবাদী বা নাস্তিক হিসেবে মরার মধ্যে ফারাক কোথায়? তাদের দৃষ্টিতে সত্য ও অসত্যের মধ্যকার ফারাকের যদি কোন প্রয়োজন থেকে থাকে তাহলে তা থাকে এ দুনিয়ার সাফল্য ও ব্যর্থতার দিক দিয়ে, অন্য কোন দিক দিয়ে নয়। এখানে তারা দেখে, কোন বিশ্বাস বা নৈতিক মূলনীতিরও কোন নির্ধারিত ফলাফল নেই। প্রত্যেক ব্যক্তি এবং প্রতিটি মনোভাব ও কর্মনীতির ব্যাপারে পূর্ণ সমতা সহকারে এ ফলাফল প্রকাশিত হয় না। নাস্তিক, অগ্নি উপাসক, খৃস্টান, ইয়াহূদী ও নক্ষত্র পূজারী সবাই ভাল ও মন্দ উভয় ধরনের অবস্থার মুখোমুখী হয়। এমন কোন একটি বিশ্বাস নেই যে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এ কথা বলে যে, এ বিশ্বাস অবলম্বনকারী অথবা তা প্রত্যাখ্যানকারী এ জগতে চিরকাল নিশ্চিত সচ্ছল বা নিশ্চিত অসচ্ছল অবস্থায় থাকে। অসৎকর্মশীল এবং সৎকর্মশীলও এখানে চিরকাল নিজের কর্মকাণ্ডের একই নির্ধারিত ফল ভোগ করে না। একজন অসৎকর্মশীল আরাম-আয়েশ করে যাচ্ছে এবং অন্যজন শাস্তি পাচ্ছে। একজন সৎকর্মশীল বিপদ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে এবং অন্যজন সম্মানীয় ও মর্যাদাশালী হয়ে বসে আছে। কাজেই পার্থিব ফলাফলের দিক দিয়ে কোন বিশেষ নৈতিক মনোভাব ও কর্মনীতি সম্পর্কেও আখেরাত অস্বীকারকারীরা তার কল্যাণ বা অকল্যাণ হবার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে না। এহেন পরিস্থিতিতে যখন কোন ব্যক্তি তাদেরকে একটি বিশ্বাস ও একটি নৈতিক নিয়ম-শৃংখলার দিকে আহ্বান জানায় তখন সে যতই গুরুগম্ভীর ও ন্যায়সঙ্গত যুক্তির সাহায্যে নিজের দাওয়াত পেশ করুক না কেন একজন আখেরাত অস্বীকারকারী কখনো গুরুত্ব সহকারে তা বিবেচনা করবে না বরং বালকসুলভ ওজর-আপত্তি জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করবে।