১২১ ) সে ছিল আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী। আল্লাহ তাঁকে বাছাই করে নেন এবং সরল সঠিক পথ দেখান।
شَاكِرًا لِّأَنْعُمِهِ ٱجْتَبَىٰهُ وَهَدَىٰهُ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ ١٢١
১২২ ) দুনিয়ায় তাঁকে কল্যাণ দান করেন এবং আখেরাতে নিশ্চিতভাবেই সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
وَءَاتَيْنَٰهُ فِى ٱلدُّنْيَا حَسَنَةً وَإِنَّهُۥ فِى ٱلْءَاخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٢٢
১২৩ ) তারপর আমি তোমার কাছে এ মর্মে অহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইবরাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না। ১২০
ثُمَّ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ أَنِ ٱتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ١٢٣
১২৪ ) বাকী রইলো শনিবারের ব্যাপারটি, সেটি আসলে আমি এমনসব লোকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম যারা এর বিধানের মধ্যে মতবিরোধ করেছিল। ১২১ আর নিশ্চয়ই তারা যেসব ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তোমার রব কিয়ামতের দিন সেসব ব্যাপারে ফায়সালা দিয়ে দেবেন।
إِنَّمَا جُعِلَ ٱلسَّبْتُ عَلَى ٱلَّذِينَ ٱخْتَلَفُوا۟ فِيهِ وَإِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ١٢٤
১২৫ ) হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও ১২২ এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। ১২৩ তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে।
ٱدْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلْحِكْمَةِ وَٱلْمَوْعِظَةِ ٱلْحَسَنَةِ وَجَٰدِلْهُم بِٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعْلَمُ بِٱلْمُهْتَدِينَ ١٢٥
১২৬ ) আর যদি তোমরা প্রতিশোধ নাও, তাহলে ঠিক ততটুকু নাও যতটুকু তোমাদের ওপর বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। কিন্তু যদি তোমরা সবর করো তাহলে নিশ্চিতভাবেই এটা সবরকারীদের পক্ষে উত্তম।
وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا۟ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِۦ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّٰبِرِينَ ١٢٦
১২৭ ) হে মুহাম্মাদ! সবর অবলম্বন করো--- আর তোমার এ সবর আল্লাহরই সুযোগ দানের ফলমাত্র--- এদের কার্যকলাপে দুঃখ করো না এবং এদের চক্রান্তের কারণে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না।
وَٱصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِٱللَّهِ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِى ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ ١٢٧
১২৮ ) আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ। ১২৪
إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوا۟ وَّٱلَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ ١٢٨
১২০.
এটি হচ্ছে আপত্তিকারীদের প্রথম আপত্তিটির পূর্ণাংগ জবাব। এ জবাবের দু’টি অংশ। একটি হচ্ছে, আল্লাহর শরীয়াতে বৈপরীত্য নেই, যেমনটি তুমি ইহুদীদের ধর্মীয় আইন ও মুহাম্মাদী শরীয়াতের বাহ্যিক পার্থক্য দেখে ধারণা করেছো। বরং আসলে ইহুদীদেরকে বিশেষ করে তাদের নাফরমানীর কারণে কতিপয় নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এ নিয়ামতগুলো থেকে অন্যদেরকে বঞ্চিত করার কোন কারণ ছিল না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে পদ্ধতি অনুসরণের হুকুম দেয়া হয় তা হচ্ছে ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সালামের পদ্ধতি, আর তোমরা জানো ইহুদীদের জন্য যেসব জিনিস হারাম ছিল মিল্লাতে ইবরাহীমীর জন্য সেগুলো হারাম ছিল না। যেমন ইহুদীরা উটের গোশত খায় না। কিন্তু মিল্লাতে ইবরাহীমীর জন্য এ গোশত হালাল ছিল, ইহুদীদের শরীয়াতে উটপাখি, হাঁস, খরগোশ ইত্যাদি হারাম কিন্তু মিল্লাতে ইবরাহীমীতে এসব জিনিস হালাল ছিল। এ জবাবের সাথে সাথে মক্কার কাফেরদেরকে এ মর্মেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের যেমন ইবরাহীমের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, তেমনি ইহুদীদের সাথেও নেই। কারণ তোমরা উভয় দলই শিরক করছো। মিল্লাতে ইবরাহীমীর যদি কেউ সঠিক অনুসারী থেকে থাকে তবে তিনি হচ্ছেন এই নবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ। এদের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডে শিরকের নামগন্ধও নেই।
১২১.
এটি হচ্ছে মক্কার কাফেরদের দ্বিতীয় আপত্তির জবাব। শনিবার ইহুদীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এবং ইবরাহীমী মিল্লাতে শনিবারের কোন ধারণাই ছিল না, একথা বলার এখানে কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ মক্কার কাফেররাও একথা জানতো। তাই এখানে শুধুমাত্র এতটুকু ইঙ্গিত দেয়াই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, ইহুদীদের আইনে তোমরা যে কঠোরতা দেখছো তা তাদের প্রাথমিক বিধানে ছিল না বরং পরবর্তীকালে ইহুদীদের দুষ্কৃতি এবং আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণের কারণে তাদের ওপর এগুলো আরোপিত হয়েছিল। একদিকে বাইবেলের যেসব অধ্যায়ে শনিবারের বিধান বর্ণিত হয়েছে সেগুলো অধ্যয়ন না করা (যেমন যাত্রা পুস্তক ২০: ৮-১১, ২৩: ১২ ও ১৩, ৩১: ১২-১৭, ৩৫: ২ ও ৩, গণনা পুস্তক ১৫: ৩২-৩৬) এবং অন্যদিকে শনিবারের বিধি-নিষেধ ভাঙার জন্য ইহুদীরা যেসব অপচেষ্টা চালিয়েছিল সেগুলো না জানা পর্যন্ত (যেমন যিরমিয় ১৭: ২১-২৭ এবং যিহিষ্কেল ২০: ১২-২৪) কোন ব্যক্তি কুরআন মজীদের এ ইঙ্গিতগুলো ভালভাবে বুঝতে পারবেন না।
১২২.
অর্থাৎ দাওয়াত দেবার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং দুই, সদুপদেশ।
জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার মানে হচ্ছে, নির্বোধদের মত চোখ বন্ধ করে দাওয়াত প্রচার করবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন-মানস, যোগ্যতা ও অবস্থার প্রতি নজর রেখে এবং এ সঙ্গে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে। একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নেয়া যাবে না। যে কোন যুক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে তারপর এমন যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে যা তার মন-মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারে।
সদুপদেশের দুই অর্থ হয়। এক, যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তৃপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে। দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না বরং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে। ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সঙ্গত ও মহৎ গুণ, তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করলে চলবে না বরং সেগুলোর প্রতি আকর্ষণও সৃষ্টি করতে হবে। দুই, উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে যাতে আন্তরিকতা ও মঙ্গলাকাংখা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন একথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে। বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভাল চায়।
১২৩.
অর্থাৎ এটি যেন নিছক বিতর্ক, বুদ্ধির লড়াই ও মানসিক ব্যায়াম পর্যায়ের না হয়। এ আলোচনায় পেঁচিয়ে কথা বলা, মিথ্যা দোষারোপ ও রূঢ় বাক্যবাণে বিদ্ধ করার প্রবণতা যেন না থাকে। প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের গলাবাজী করে যেতে থাকা এর উদ্দেশ্য হবে না। বরং এ বিতর্ক আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যুক্তি প্রমাণ হতে হবে ন্যায়সঙ্গত ও হৃদয়গ্রাহী। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ, একগুঁয়েমী এবং কথার প্যাঁচ সৃষ্টি হবার অবকাশ না দেখা দেয়। সোজাসুজি তাকে কথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে এবং যখন মনে হবে যে, সে কূটতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে যাতে ভ্রষ্টতার নোংরা কাদামাটি সে নিজের গায়ে আরো বেশী করে মেখে নিতে পারে।
১২৪.
অর্থাৎ যারা আল্লাহকে ভয় করে সব ধরনের খারাপ পথ থেকে দূরে থাকে এবং সর্বদা সৎকর্মনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। অন্যেরা তাদের সাথে যতই খারাপ আচরণ করুক না কেন তারা দুষ্কৃতির মাধ্যমে তার জবাব দেয় না বরং জবাব দেয় সুকৃতির মাধ্যমে।