আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

ইউসুফ

১১১ আয়াত

২১ ) মিসরে যে ব্যক্তি তাঁকে কিনেছিল ১৬ সে তার স্ত্রীকে ১৭ বললো, “একে ভালোভাবে রাখো, বিচিত্র নয় সে আমাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা আমরা তাকে পুত্র বানিয়ে নেবো।” ১৮ এভাবে আমি ইউসুফের জন্য সে দেশে প্রতিষ্ঠা লাভের পথ বের করে দিলাম এবং তাঁকে সমস্যা ও বিষয়াবলী অনুধাবন করার জন্য যথোপযোগী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলাম। ১৯ আল্লাহ্‌ তাঁর কাজ সম্পন্ন করেই থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।
وَقَالَ ٱلَّذِى ٱشْتَرَىٰهُ مِن مِّصْرَ لِٱمْرَأَتِهِۦٓ أَكْرِمِى مَثْوَىٰهُ عَسَىٰٓ أَن يَنفَعَنَآ أَوْ نَتَّخِذَهُۥ وَلَدًۭا ۚ وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِى ٱلْأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُۥ مِن تَأْوِيلِ ٱلْأَحَادِيثِ ۚ وَٱللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰٓ أَمْرِهِۦ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٢١
২২ ) আর যখন সে তাঁর পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাঁকে ফায়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম। ২০ এভাবে আমি নেক লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُۥٓ ءَاتَيْنَـٰهُ حُكْمًۭا وَعِلْمًۭا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُحْسِنِينَ ٢٢
২৩ ) যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, “চলে এসো।” ইউসুফ বললো, “আমি আল্লাহ‌র আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন (আর আমি এ কাজ করবো!)। এ ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।” ২১
وَرَٰوَدَتْهُ ٱلَّتِى هُوَ فِى بَيْتِهَا عَن نَّفْسِهِۦ وَغَلَّقَتِ ٱلْأَبْوَٰبَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ ۚ قَالَ مَعَاذَ ٱللَّهِ ۖ إِنَّهُۥ رَبِّىٓ أَحْسَنَ مَثْوَاىَ ۖ إِنَّهُۥ لَا يُفْلِحُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ٢٣
২৪ ) মহিলাটি তাঁর দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তাঁর রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো। ২২ এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি। ২৩ আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِۦ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَآ أَن رَّءَا بُرْهَـٰنَ رَبِّهِۦ ۚ كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلْفَحْشَآءَ ۚ إِنَّهُۥ مِنْ عِبَادِنَا ٱلْمُخْلَصِينَ ٢٤
২৫ ) শেষ পর্যন্ত ইউসুফ ও সে আগে-পিছে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো এবং সে পেছন থেকে ইউসুফের জামা (টেনে ধরে) ছিঁড়ে ফেললো। উভয়েই দরজার ওপর তার স্বামীকে উপস্থিত পেলো। তাকে দেখতেই মহিলাটি বলতে লাগলো, “তোমার পরিবারের প্রতি যে অসৎ কামনা পোষণ করে তার কি শাস্তি হতে পারে? তাকে কারাগারে প্রেরণ করা অথবা কঠোর শাস্তি দেয়া ছাড়া আর কি শাস্তি দেয়া যেতে পারে?”
وَٱسْتَبَقَا ٱلْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُۥ مِن دُبُرٍۢ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَا ٱلْبَابِ ۚ قَالَتْ مَا جَزَآءُ مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوٓءًا إِلَّآ أَن يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ٢٥
২৬ ) ইউসুফ বললো, “সে-ই আমাকে ফাঁসাবার চেষ্টা করছিল।” মহিলাটির নিজের পরিবারের একজন (পদ্ধতিগত) সাক্ষ্য দিল, ২৪ “যদি ইউসুফের জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি সত্য কথা বলেছে এবং সে মিথ্যুক
قَالَ هِىَ رَٰوَدَتْنِى عَن نَّفْسِى ۚ وَشَهِدَ شَاهِدٌۭ مِّنْ أَهْلِهَآ إِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن قُبُلٍۢ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ ٱلْكَـٰذِبِينَ ٢٦
২৭ ) আর যদি তাঁর জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে মহিলাটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে সত্যবাদী।” ২৫
وَإِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٍۢ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ ٢٧
২৮ ) স্বামী যখন দেখলো ইউসুফের জামা পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া তখন সে বললো, “এসব তোমাদের মেয়ে লোকদের ছলনা। সত্যিই বড়ই ভয়ানক তোমাদের ছলনা!
فَلَمَّا رَءَا قَمِيصَهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٍۢ قَالَ إِنَّهُۥ مِن كَيْدِكُنَّ ۖ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌۭ ٢٨
২৯ ) হে ইউসুফ! এ ব্যাপারটি উপেক্ষা করো। আর হে নারী! তুমি নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, তুমিই আসল অপরাধী।” ২৫(ক)
يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَـٰذَا ۚ وَٱسْتَغْفِرِى لِذَنۢبِكِ ۖ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ ٱلْخَاطِـِٔينَ ٢٩
৩০ ) শহরের মেয়েরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, “আযীযের স্ত্রী তার যুবক গোলামের পেছনে পড়ে আছে, প্রেম তাকে উন্মাদ করে দিয়েছে। আমাদের মতে সে পরিষ্কার ভুল করে যাচ্ছে।”
۞ وَقَالَ نِسْوَةٌۭ فِى ٱلْمَدِينَةِ ٱمْرَأَتُ ٱلْعَزِيزِ تُرَٰوِدُ فَتَىٰهَا عَن نَّفْسِهِۦ ۖ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا ۖ إِنَّا لَنَرَىٰهَا فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍۢ ٣٠
১৬.
বাইবেলে এ ব্যক্তির নাম লেখা হয়েছে “পোটীফর”। সামনের দিকে গিয়ে কুরআন মজীদ একে “আযীয” নামে উল্লেখ করেছে। তারপর আবার এক জায়গায় হযরত ইউসুফের জন্যও এ উপাধি ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন মিসরের কোন বড় অফিসার অথবা পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। কারণ “আযীয” মানে হচ্ছে এমন কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি যার ক্ষমতাকে প্রতিহত করা যেতে পারে না। বাইবেল ও তালমূদের বর্ণনা হচ্ছে, তিনি ছিলেন বাদশাহর রক্ষক সেনাপতি (দেহরক্ষী বাহিনীর প্রধান)। ইবনে জারীর হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে রেওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি ছিলেন রাজকীয় অর্থ বিভাগের প্রধান।
১৭.
তালমূদে এ মহিলাটিকে যালীখা (Zelicha) নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এখান থেকেই এ নামটি মুসলমানদের বর্ণনায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের এখানে সাধারণভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে যে, পরবর্তীকালে হযরত ইউসুফের সাথে মহিলাটির বিয়ে হয়ে যায়। একথাটির আসলে কুরআনে বা ইসরাঈলী ইতিহাসে কোন ভিত্তি নেই। একজন নবী এমন একটি মহিলাকে বিয়ে করবেন যার অসতিপনা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতায়ই ধরা পড়েছে--- এটা আসলে তাঁর নবী সুলভ মর্যাদার তুলনায় অনেক নিম্নমানের। কুরআন মজীদে এ ব্যাপারে যে সাধারণ নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যেঃ

الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ

“অসৎ মেয়েরা অসৎ পুরুষদের জন্য এবং অসৎ পুরুষরা অসৎ মেয়েদের জন্য আর পবিত্র মেয়েরা পবিত্র পুরুষদের জন্য এবং পবিত্র পুরুষরা পবিত্র মেয়েদের জন্য।”

১৮.
তালমূদের বর্ণনা মতে এ সময় হযরত ইউসুফের বয়স ছিল ১৮ বছর। পোটীফর তাঁর গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, এ যুবক গোলাম নয় বরং কোন অভিজাত পরিবারের আদরের দুলাল এবং অবস্থার আবর্তন তাঁকে এখানে টেনে এনেছে। তাঁকে কেনার সময়ই তিনি সওদাগরদের বলেনঃ এ ছেলে তো কোন গোলাম বলে মনে হচ্ছে না, আমার সন্দেহ হচ্ছে তোমরা একে কোথাও থেকে চুরি করে এনেছো এ কারণে পোটীফর তাঁর সাথে দাস সুলভ ব্যবহার করেননি। বরং তাঁর ওপর নিজের গৃহের এবং নিজের যাবতীয় সম্পদ-সম্পত্তি পরিচালনার একচ্ছত্র দায়িত্ব অর্পণ করেন। বাইবেলের বর্ণনা মতে “তিনি নিজের সবকিছু ইউসুফের হাতে ছেড়ে দেন এবং শুধুমাত্র খাবার রুটি টুকু ছাড়া নিজের আর কোন জিনিসেরই তাঁর খবর ছিল না।” (আদি পুস্তক ৩৯: ৬)
১৯.
এ পর্যন্ত হযরত ইউসুফের জীবন গড়ে উঠেছিল বিজন মরু প্রান্তরে আধা যাযাবর ও পশু পালকদের পরিবেশে। কেনান ও উত্তর আরব এলাকায় সে সময় কোন সংগঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল না এবং সেখানকার সমাজ-সংস্কৃতি তেমন কোন ধরনের উন্নতি লাভ করেনি। সেখানে ছিল কিছু সংখ্যক স্বাধীন উপজাতির বাস। তারা মাঝে মাঝে এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করতো। আবার কোন কোন উপজাতি বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে নিজেদের ছোট ছোট রাষ্ট্রও গঠন করে নিয়েছিল। মিসরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী এসব লোকের অবস্থা ছিল প্রায় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্বাধীন পাঠান উপজাতিদের মতো। এখানে হযরত ইউসুফ যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন তাতে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত ছিল বেদুইন জীবনের সৎগুণাবলী এবং ইবরাহিমী পরিবারের আল্লাহমুখী জীবন চিন্তা ও ধর্মচর্চা। কিন্তু মহান আল্লাহ সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে সুসভ্য ও উন্নত দেশ অর্থাৎ মিসরে তাঁর মাধ্যমে যে কাজ নিতে চাচ্ছিলেন এবং এ জন্য যে পর্যায়ের জানাশোনা, অভিজ্ঞতা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন ছিল তার বিকাশ সাধনের কোন সুযোগ বেদুইন জীবনে ছিল না। তাই আল্লাহ তাঁর সর্বময় ক্ষমতাবলে তাঁকে মিসর রাজ্যের একজন বড় সরকারী কর্মচারীর কাছে পৌঁছিয়ে দিলেন। আর তিনি তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা দেখে তাঁকে নিজের গৃহ ও ভূসম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব দান করলেন। এভাবে ইতিপূর্বে তাঁর যেসব যোগ্যতাকে কোন কাজে লাগনো হয়নি তা পূর্ণ বিকাশ লাভ করার সুযোগ পেয়ে গেলো। ছোট্ট একটি জমিদারী পরিচালনার মাধ্যমে তিনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করলেন তা আগামীতে একটি বড় রাষ্ট্রের আইন-শৃংখলা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল। এ আয়াতে এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
২০.
কুরআনের ভাষায় সাধারণভাবে এমন শব্দের মানে হয় “নবুওয়াত দান করা।” ফায়সালা করার শক্তিকে কুরআনের মূল ভাষ্যে বলা হয়েছে “হুকুম।” এ হুকুম অর্থ কর্তৃত্বও হয়। কাজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বান্দাকে হুকুম দান করার মানে হলো আল্লাহ তাঁকে মানব জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে ফায়সালা দান করার যোগ্যতা দান করেছেন আবার এজন্য ক্ষমতাও অর্পণ করেছেন। আর “জ্ঞান” বলতে এমন বিশেষ সত্যজ্ঞান বুঝানো হয়েছে যা নবীদেরকে অহীর মাধ্যমে সরাসরি দেয়া হয়।
২১.
সাধারণভাবে মুফাস্সির ও অনুবাদকগণ মনে করে থাকেন, এখানে “আমার রব” তথা আমার প্রভু শব্দটি বলে হযরত ইউসুফ সে সময় যার অধীনে চাকরি করতেন তার কথা বলতে চেয়েছেন। তারা মনে করেন, তাঁর এ জবাবের অর্থ ছিল এই যে, আমার মনিব তো আমাকে খুব যত্নের সাথেই রেখেছেন, এ অবস্থায় আমি তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করার মতো নিমকহারামী কেমন করে করতে পারি? কিন্তু এ অনুবাদ ও ব্যাখ্যার আমি কঠোর বিরোধিতা করছি। যদিও আরবী ভাষার দিক দিয়ে এ অর্থ গ্রহণ করারও অবকাশ আছে, কারণ আরবীতে “রব” শব্দটি প্রভু অর্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু একজন নবী একটি গুনাহ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে আল্লাহর পরিবর্তে কোন বান্দার প্রতি নজর দেবেন এটা তাঁর মর্যাদার তুলনায় অনেক নিম্নমানের। তাছাড়া কোন নবী আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কাউকে নিজের রব বলেছেন, কুরআনে এর কোন নজীরও নেই। সামনের দিকে ৪১, ৪২ ও ৫০ আয়াতে আমরা দেখছি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম বারবার তাঁর নিজের ও মিসরীয়দের মতবাদের মধ্যে এ পার্থক্যটি সুস্পষ্ট করে তুলে ধরছেন যে, তাঁর রব হচ্ছেন আল্লাহ‌ এবং মিসরীয়রা বান্দাকে নিজেদের রব বানিয়ে রেখেছে। কাজেই এখানে আয়াতের শব্দের মধ্যে যখন এ অর্থ গ্রহণ করার অবকাশ রয়েছে যে, হযরত ইউসুফ “রব্বী” বলে আল্লাহর সত্তা বুঝাতে চেয়েছেন তখন কি কারণে আমরা এমন একটি অর্থ গ্রহণ করবো যার মধ্যে দোষের দিকটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে?
২২.
মূল আয়াতে আছে “বুরহান।” বুরহান মানে দলীল বা প্রমাণ। রবের প্রমাণ মানে রবের দেখিয়ে দেয়া বা বুঝিয়ে দেয়া এমন প্রমাণ যার ভিত্তিতে হযরত ইউসুফের (আ) বিবেক ব্যক্তিসত্তার কাছ থেকে একথার স্বীকৃতি আদায় করেছে যে, এ নারীর ভোগের আহবানে সাড়া দেয়া তাঁর পক্ষে শোভনীয় নয়। এ প্রমাণটি কি ছিল? ইতিপূর্বে পিছনের বাক্যেই তা বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে বলা হয়েছেঃ “আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন আর আমি খারাপ কাজ করবো! এ ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।” এ অকাট্য যুক্তিই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে সদ্যোন্মিত যৌবনকালের এ সংকট সন্ধিক্ষণে পাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছিল। তারপর বলা হলো, “ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি তা তাঁর রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো।” এ থেকে নবীগণের নিষ্পাপ হবার (ইস্মতে আম্বিয়া) তত্ত্বের অর্ন্তনিহিত সত্য পুরোপুরি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। নবীর নিষ্পাপ হবার মানে এ নয় যে, তাঁর গুনাহ, ভুল ও ত্রুটি করার ক্ষমতা ও সামর্থ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, ফলে তাঁর দ্বারা গুনাহর কাজ সংঘটিত হতেই পারে না। বরং এর মানে হচ্ছে, নবী যদিও গুনাহ করার শক্তি রাখেন কিন্তু সমস্ত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হওয়া এবং যাবতীয় মানবিক আবেগ, অনুভূতি, ইচ্ছা-প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও তিনি এমন সদাচারী ও আল্লাহ ভীরু হয়ে থাকেন যে, জেনে বুঝে কখনো গুনাহ করার ইচ্ছা করেন না। তাঁর বিবেকের অভ্যন্তরে আল্লাহর এমন সব শক্তিশালী দলীল প্রমাণ তিনি রাখেন যেগুলোর মোকাবিলায় প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা কখনো সফলকাম হবার সুযোগ পায় না। আর যদি সজ্ঞানে তিনি কোন ত্রুটি করেই বসেন তাহলে মহান আল্লাহ তখনই সুস্পষ্ট অহীর মাধ্যমে তা সংশোধন করে দেন। কারণ তাঁর পদস্খলন শুধুমাত্র এক ব্যক্তির পদস্খলন নয় বরং সমগ্র উম্মতের পদস্খলনের রূপ নেয়। তিনি সঠিক পথ থেকে এক চুল পরিমাণ সরে গেলে সারা দুনিয়া গোমরাহীর পথে মাইলের পর মাইল চলে যায়।
২৩.
এ উক্তির দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, তাঁর রবের প্রমাণ দেখা ও গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া আমার দেয়া সুযোগ ও পথপ্রদর্শনের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। কেননা, আমি নিজের এ নির্বাচিত বান্দাটি থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করতে চাচ্ছিলাম। এর দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে এবং এটি অত্যন্ত গভীর অর্থবোধক যে, ইউসুফের সাথে এই যে ব্যাপারটি ঘটে গেলো এটি আসলে তাঁর প্রশিক্ষণ পর্বের একটি প্রয়োজনীয় পর্যায় ছিল। তাঁকে অসৎ প্রবণতা ও অশ্লীলতা মুক্ত করার এবং তাঁর আত্মিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেবার জন্য আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী অপরিহার্য ছিল যে, তাঁর সামনে গুনাহের এমনি একটি সংকটময় পরিস্থিতি আসুক এবং সেই পরীক্ষার সময় তিনি নিজের সমগ্র ইচ্ছাশক্তিকে তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির পাল্লায় রেখে দিয়ে নিজের নফসের অসৎ প্রবণতাগুলোকে চিরকালের জন্য চূড়ান্তভাবে পরাজিত করুন। বিশেষ করে তদানীন্তন মিসরীয় সমাজে যে নৈতিক পরিবেশ বিরাজিত ছিল তা দৃষ্টি সমক্ষে রাখলে এ বিশেষ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সহজেই উপলব্ধি করা যাবে। সামনের দিকে চতুর্থ রুকূ’তে এ পরিবেশের একটি সামান্যতম নমুনা দেখানো হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যাবে, তৎকালীন ‘সুসভ্য মিসরে’ সাধারণভাবে এবং বিশেষ করে সে দেশের উচ্চ শ্রেণীতে স্বাধীন যৌনাচারিতা প্রায় বর্তমান যুগে পাশ্চাত্য দেশসমূহে এবং আমাদের দেশের ফিরিংগী প্রভাবিত সমাজের সমমানে অবস্থান করছিল। এ ধরনের বিকৃত রুচিসম্পন্ন লোকদের মধ্যে হযরত ইউসুফকে কাজ করতে হবে। এ কাজ করতে হবে একজন সাধারণ লোক হিসেবে নয় বরং দেশের শাসনকর্তা হিসেবে। এখন একথা সুস্পষ্ট যে, একজন সুন্দর ও সুশ্রী গোলামের জন্য যেসব ভদ্র মহিলা নিজেদেরকে এভাবে বিলীন করে দিচ্ছিল তারা একজন যুবক বয়সের সুদর্শন শাসনকর্তাকে পথভ্রষ্ট করার ও ফাঁদে ফেলার জন্য কত কী-ইনা করতে পারতো। আল্লাহ এরই পথ বন্ধ করার জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন যে, প্রথমেই এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অগ্রসর করিয়ে হযরত ইউসুফকে পাকাপোক্ত করে দিয়েছে তারপর অন্যদিকে মিসরীয় মহিলাদেরকেও তাঁর ব্যাপারে হতাশ করে দিয়ে তাদের সমস্ত ছলনা ও কারসাজির দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।
২৪.
এ ব্যাপারটি মনে হয় এভাবে ঘটে থাকবে যে, গৃহকর্তার সাথে সংশ্লিষ্ট মহিলার আত্মীয়দের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তিও আসছিল। সে এ ঝগড়া শুনে হয়তো বলেছেঃ এরা দু’জনেই যখন পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করছে এবং উপস্থিত ঘটনার কোন সাক্ষীও নেই তখন পরিবেশগত সাক্ষ্যের সূত্র ধরে বিষয়টি সম্পর্কে এভাবে অনুসন্ধান চালানো যেতে পারে। কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে, একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু এ সাক্ষ্য পেশ করেছিল। শিশুটি ঐ ঘরে দোলনায় শায়িত ছিল। আল্লাহ‌ তাকে বাকশক্তি দান করে তার মুখ দিয়ে এ সাক্ষ্যের কথা উচ্চারণ করিয়েছিলেন। কিন্তু এ বর্ণনাটি কোন নির্ভুল সনদের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। আর তাছাড়া এ ব্যাপারে অযথা মু’জিযার সাহায্য নেয়ার কোন প্রয়োজন অনুভূত হয় না। সাক্ষ্যদাতা যে পরিবেশগত সাক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা ছিল যথার্থই যুক্তিসঙ্গত ব্যাপার এ সাক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি দিলে এক মুহূর্তেই বুঝা যায় যে, এ ব্যক্তি অতীব বিচক্ষণ, সূক্ষ্মদর্শী ও ব্যাপকতর অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিল। ঘটনার চিত্র তার সামনে এসে যেতেই সে তার গভীরে পৌঁছে গেছে। বিচিত্র নয় যে, উল্লেখিত ব্যক্তি কোন বিচারপতি বা ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারে। (উল্লেখ থাকে, মুফাস্সিরগণ দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাক্ষ্যদানের যে বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন তা ইহুদী বর্ণনা থেকে গৃহীত হয়েছে। দেখুন, তালমূদের নির্বাচিত অংশ, পল ইসহাক হিরশূন, লণ্ডন ১৮৮০, ২৫৬ পৃষ্ঠা)
২৫.
এর মানে হচ্ছে, ইউসুফের কাপড় যদি সামনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে ইউসুফের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং মহিলাটি নিজেকে বাঁচাবার জন্য ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয়েছিল, এটা হবে তার স্পষ্ট আলামত। কিন্তু যদি ইউসুফের কাপড় পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তাহলে স্পষ্ট বুঝতে হবে, মহিলাটি তাঁর পেছনে লেগেছিল এবং ইউসুফ তার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। এছাড়াও আর একটি বাস্তব সাক্ষ্যও এ সাক্ষ্যের মধ্যে লুকিয়েছিল। সেটি হচ্ছে, এ সাক্ষী শুধুমাত্র ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাপড়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছে। এ থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মহিলাটির শরীরে বা পোশাকে আদতে বল প্রয়োগের কোন আলামতই ছিল না। অথচ যদি এটা বলাৎকারজনিত মামলা হতো তাহলে মহিলাটির শরীরে ও পোশাকে এর পরিষ্কার আলামত দেখা যেতো।
২৫(ক).
বাইবেলে এ কাহিনীকে যে কদাকাররূপে চিত্রিত করা হয়েছে নিচের বর্ণনায় তা দেখা যেতে পারেঃ

“তখন সে যোসেফের বস্ত্র ধরিয়া বলিল, আমার সহিত শয়ন কর; কিন্তু যোসেফ তাহার হস্তে আপন বস্ত্র ফেলিয়া রাখিয়া বাহিরে পালাইয়া গেলেন। তখন যোসেফ তাহার হস্তে বস্ত্র ফেলিয়া রাখিয়া বাহিরে পলাইলেন দেখিয়া, সে নিজ ঘরের লোকদিগকে ডাকিয়া কহিল, দেখ তিনি আমাদের সাথে ঠাট্টা করিতে একজন ইব্রীয় পুরুষকে আনিয়াছেন, সে আমার সঙ্গে শয়ন করিবার জন্য আমার নিকটে আসিয়াছিল, তাহতে আমি চীৎকার করিয়া উঠিলাম, আমার চীৎকার শুনিয়া সে আমার নিকটে নিজ বস্ত্রখানি ফেলিয়া বাহিরে পলাইয়া গেল। আর যে পর্যন্ত তাহার কর্তা ঘরে না আসিলেন, সে পর্যন্ত সেই স্ত্রীলোক তাঁহার বস্ত্র আপনার কাছে রাখিয়া দিল। ........তাঁহার প্রভু যখন আপন স্ত্রীর একথা শুনিলেন যে, “তোমার দাস আমার প্রতি এরূপ ব্যবহার করিয়াছে”, তখন ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিলেন। অতএব যোসেফের প্রভু তাঁহাকে লইয়া কারাগারে রাখিলেন, যে স্থানে রাজার বন্দিগণ বদ্ধ থাকিত।” (আদি পুস্তক ৩৯: ১২-২০)

এ অদ্ভূত বর্ণনার সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে এই যে, হযরত ইউসুফ এমন ধরনের পোশাক পরেছিলেন যে, যুলাইখা তাতে হাত লাগাতেই সমস্ত পোশাকটাই খুলে তার হাতে এসে পড়লো! তারপর আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, হযরত ইউসুফ নিজে পোশাক তার কাছে রেখে দিয়ে একেবারে দিগম্বর হয়ে ভাগলেন এবং তাঁর পোশাক (অর্থাৎ তাঁর অপরাধের অনস্বীকার্য প্রমাণ) ঐ মহিলার কাছে রয়ে গেলো। এরপরে হযরত ইউসুফের অপরাধী হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে কি?

এতো গেলো বাইবেলের বর্ণনা। অন্যদিকে তালমূদের বর্ণনা হচ্ছে, পোটীফর যখন তার স্ত্রীর মুখ থেকে এ অভিযোগ শুনলেন তখন তিনি ইউসুফকে খুব মারধর করালেন। তারপর তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করলেন। আদলতে কর্মকর্তারা হযরত ইউসুফের পোশাক পরীক্ষা করে রায় দিল, “দোষ মহিলাটির, কারণ কাপড় সামনের দিক থেকে নয় বরং পেছনের দিক থেকে ছেঁড়া।” কিন্তু যে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সামান্য চিন্তা করলেই একথাটি বুঝতে পারে যে, কুরআনের বর্ণনা তালমূদের বর্ণনা থেকে অনেক বেশী যুক্তিসঙ্গত। একথা কেমন করে মেনে নেয়া যায় যে, এত বড় একজন মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ওপর নিজের দাসের তথাকথিত চড়াও হবার মামলাটি নিজেই আদালতে নিয়ে গেছেন? এটি কুরআন ও ইসরাঈলী বর্ণনার মধ্যে পার্থক্যের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত। এ থেকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাহিনীটি বনী ইসরাঈলদের থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন বলে পশ্চিমী প্রাচ্যবিদরা যে অভিযোগ আনেন তার অন্তঃসারশূন্যতা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সত্যি কথা হচ্ছে, কুরআন তাদের বর্ণনা সংশোধন করেছে এবং সঠিক সত্য ঘটনাটিই দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরেছে।

অনুবাদ: