২১ ) তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী।
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍۢ مِّنْهُ وَرِضْوَٰنٍۢ وَجَنَّـٰتٍۢ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌۭ مُّقِيمٌ ٢١
২২ ) সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। অবশ্য আল্লাহর কাছে কাজের প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে।
خَـٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥٓ أَجْرٌ عَظِيمٌۭ ٢٢
২৩ ) যে ঈমানদারগণ! তোমাদের বাপ ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের ওপর কুফরীকে প্রাধান্য দেয় তাহলে তাদেরকেও নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারাই জালেম।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوٓا۟ ءَابَآءَكُمْ وَإِخْوَٰنَكُمْ أَوْلِيَآءَ إِنِ ٱسْتَحَبُّوا۟ ٱلْكُفْرَ عَلَى ٱلْإِيمَـٰنِ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ٢٣
২৪ ) হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর ২২ আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।
قُلْ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَٰنُكُمْ وَأَزْوَٰجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَٰلٌ ٱقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَـٰرَةٌۭ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَـٰكِنُ تَرْضَوْنَهَآ أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٍۢ فِى سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُوا۟ حَتَّىٰ يَأْتِىَ ٱللَّهُ بِأَمْرِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْفَـٰسِقِينَ ٢٤
২৫ ) এর আগে আল্লাহ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করছেন। এই তো সেদিন, হুনায়েন যুদ্ধের দিন (তাঁর সাহায্যের অভাবনীয় রূপ তোমরা দেখছো) , ২৩ সেদিন তোমাদের মনে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের অহমিকা ছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর এত বড় বিশাল পৃথিবীও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং তোমরা পেছনে ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে।
لَقَدْ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ فِى مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍۢ ۙ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْـًۭٔا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ ٱلْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ ٢٥
২৬ ) তারপর আল্লাহ তার প্রশান্তি নাযিল করেন তাঁর রসূলের ওপর ও মুমিনদের ওপর এবং সেনাদল নামান যাদেরকে তোমরা চোখে দেখতে পাচ্ছিলে না এবং সত্য অস্বীকারকারীদের শাস্তি দেন। কারণ যারা সত্য অস্বীকার করে এটাই তাদের প্রতিফল।
ثُمَّ أَنزَلَ ٱللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَعَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودًۭا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۚ وَذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلْكَـٰفِرِينَ ٢٦
২৭ ) তারপর (তোমরা এও দেখছো) এভাবে শাস্তি দেবার পর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাওবার তাওফীকও দান করেন। ২৪ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
ثُمَّ يَتُوبُ ٱللَّهُ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٢٧
২৮ ) হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন আর মসজিদে হারামের কাছে না আসে। ২৫ আর যদি তোমাদের দারিদ্রের ভয় থাকে, তাহলে আল্লাহ চাইলে তার নিজ অনুগ্রহে শীঘ্রই তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও তিনি প্রজ্ঞাময়।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْمُشْرِكُونَ نَجَسٌۭ فَلَا يَقْرَبُوا۟ ٱلْمَسْجِدَ ٱلْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَـٰذَا ۚ وَإِنْ خِفْتُمْ عَيْلَةًۭ فَسَوْفَ يُغْنِيكُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦٓ إِن شَآءَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ ٢٨
২৯ ) আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের ঈমান আনে না ২৬ যা কিছু আল্লাহ ও তার রসূল গণ্য করেছেন তাকে হারাম করো না ২৭ এবং সত্য দ্বীনকে নিজেদের দ্বীনে পরিণত করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা নিজের হাতে জিযিয়া দেয় ও পদানত হয়ে থাকে। ২৮
قَـٰتِلُوا۟ ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلْحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ حَتَّىٰ يُعْطُوا۟ ٱلْجِزْيَةَ عَن يَدٍۢ وَهُمْ صَـٰغِرُونَ ٢٩
৩০ ) ইহুদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র ২৯ এবং খৃস্টানরা বলে, মসীহ আল্লাহর পুত্র। এগুলো একেবারেই আজগুবী ও উদ্ভট কথাবার্তা। তাদের পূর্বে যারা কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল তাদের দেখাদেখি তারা এগুলো নিজেদের মুখে উচ্চারণ করে থাকে। ৩০ আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক তাদের ওপর, তারা কোথা থেকে ধোকা খাচ্ছে!
وَقَالَتِ ٱلْيَهُودُ عُزَيْرٌ ٱبْنُ ٱللَّهِ وَقَالَتِ ٱلنَّصَـٰرَى ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ ٱللَّهِ ۖ ذَٰلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَٰهِهِمْ ۖ يُضَـٰهِـُٔونَ قَوْلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَبْلُ ۚ قَـٰتَلَهُمُ ٱللَّهُ ۚ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ ٣٠
২২.
অর্থাৎ তোমাদের হটিয়ে দিয়ে সেখানে আল্লাহ অন্য কোন দলকে দ্বীনের নিয়ামত দান করবেন। তদেরকে দ্বীনের ধারক ও বাহক হবার মর্যাদায় উন্নীত করবেন। এ সঙ্গে মানুষকে সৎপথে পরিচালনা করার নেতৃত্বও তাদের হাতে সোপর্দ করবেন।
২৩.
দায়িত্ব মুক্তি ও সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা সম্বলিত ভয়ংকর নীতি কার্যকর করার ফলে সারা আরবে সর্বত্র যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠবে এবং তার মোকাবিলা করা অসম্ভব হবে বলে যারাআশঙ্কা করছিল তাদেরকে বলা হচ্ছে, এসব অমূলক ভয়ে ভীত হচ্ছো কেন? এর চাইতেও বেশী কঠিন বিপদের সময় যে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন তিনি এখনো তোমাদের সাহায্য করার জন্য রয়েছেন। এ কাজ যদি তোমাদের শক্তির ওপর নির্ভর করতো তাহলে এর আর মক্কা সীমানা পার হতে হতো না। আর না হোক, বদরের ময়দানেতো খতমই হয়ে যেতো। কিন্তু এর পেছনে তো রয়েছে স্বয়ং আল্লাহর শক্তি। আর অতীতের অভিজ্ঞতাসমূহ তোমার কাছে একথা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এখনো পর্যন্ত আল্লাহর শক্তিই এর উন্নতি ও বিকাশ সাধন করে এসেছে। কাজেই নিশ্চিত বিশ্বাস রাখো, আজো তিনিই একে উন্নতি ও অগ্রগতি দান করবেন।
এখানে হুনায়েন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এ যুদ্ধটি ৮ হিজরীর শওয়াল মাসে এ আয়াত গুলো নাযিলের মাত্র বার তের মাস আগে মক্কা ও তায়েফের মাঝখানে হুনায়েন উপত্যকায় সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে ছিল ১২ হাজার সৈন্য। এর আগে কোন যুদ্ধে মুসলমানদের এত বিপুলসংখ্যক সৈন্য জামায়েত হয়নি। অন্যদিকে কাফেরদের সৈন্য সংখ্যা ছিল এর তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এ সত্ত্বেও হাওয়াযিন গোত্রের তীরন্দাজরা যুদ্ধের মোড় ফিরিয়ে দিল। মুসলিম সেনাদলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তারা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পিছু হটতে লাগলো। এ সময় শুধুমাত্র নবী (সা.) এবং মুষ্টিমেয় কতিপয় মরণপণ সাহাবী যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়পদ ছিলেন। তাদের অবিচলতার ফলেই সেনাবাহিনী পুনর্বার সংগঠিত হলো এবং মুসলমানরা বিজয় লাভ করলো। অন্যথায় মক্কা বিজয়ের ফলে মুসলমানরা যে পরিমাণে লাভবান হয়েছিল হুনায়েনে তাদেরকে তার চাইতে অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতো।
২৪ .
হুনায়েন যুদ্ধে জয়লাভ করার পর নবী (সা.) বিজিত শত্রুদের সাথে যে সদয় ও সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করেন তার ফলে তাদের বেশীরভাগ লোক মুসলমান হয়ে যায়। এখানে মুসলমানদের যে কথা বলা উদ্দেশ্যে এ দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে তা এই যে, এখন সারা আরবের সমস্ত মুশরিককে ধ্বংস করা হবে, এ কথা তোমরা ভাবলে কেন? না তা নয় বরং আগের অভিজ্ঞতা থেকে তোমাদের আশা করা উচিত যে, যখন এ লোকদের মনে জাহেলী ব্যবস্থার বিকাশ ও স্থায়িত্বের আর কোন আশা থাকবে না এবং যেসব সহায়তা ও আনুকূল্যের কারণে এতদিন তারা জাহেলিয়াতকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে তা সব খতম হয়ে যাবে, তখন তারা নিজেরাই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেবার জন্য এগিয়ে আসবে।
২৫.
অর্থাৎ আগামীতে শুধু তাদের হজ্জ ও যিয়ারতই বন্ধ নয় বরং মসজিদে হারামের সীমানায় তাদের প্রবেশই নিষিদ্ধ। এভাবে শিরক ও জাহেলিয়াতের পুনরাবর্তনের কোন সম্ভাবনাই থাকবে না।
অপবিত্র, কথাটির মানে এই নয় যে, তারা নিজেরাই অপবিত্র বা নাপাক। বরং এর মানে হচ্ছে, তাদের আকীদা,-বিশ্বাস, নৈতিক, চরিত্র, কাজকর্ম এবং তাদের জাহেলী চালচলন ও সমাজ ব্যবস্থা অপবিত্র। আর এ অপবিত্রতার কারণে হারাম শরীফের চতুঃসীমায় তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইমাম আবু হানিফার মতে এর অর্থ শুধু এতটুকুই যে, হজ্জ ও উমরাহ এবং জাহেলী অনুষ্ঠানাদি পালন করার জন্য তারা হারাম শরীফের সীমানায় প্রবেশ করতে পারবে না। ইমাম শাফেয়ীর মতে এ হুকুমের অর্থ হচ্ছে, তারা (যে কোন অবস্থায়ই) মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না। ইমাম মালেক বলেন, শুধু মসজিদে হারামেই নয়, দুনিয়ার অন্য কোন মসজিদেও তাদের প্রবেশ জায়েজ নয়। তবে এ শেষোক্ত মতটি সঠিক নয়। কারণ নবী (সা.) নিজেই তাদের মসজিদে নববীতে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন।
২৬.
যদিও আহলি কিতাবরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখার দাবীদার কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা না আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, না আখেরাতের প্রতি। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ শুধুমাত্র আল্লাহ আছে একথা মেনে নেয়া নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ ও একমাত্র রব বলে মেনে নেবে এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলী, অধিকার ও ক্ষমতায় নিজেকে বা অন্য কাউকে শরীক করবেনা। কিন্তু খৃস্টান ও ইহুদীরা এ অপরাধে লিপ্ত। পরবর্তী পর্যায়ের আয়াতগুলোতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই তাদের আল্লাহকে মেনে নেয়ার কথাটা অর্থহীন। একে কোন ক্রমেই ঈমান বিল্লাহ বলা যেতে পারে না। অনুরূপভাবে আখেরাতকে মানার অর্থ মরে যাওয়ার পর আমাদের আবার উঠানো হবে, শুধু এতটুকু কথার স্বীকৃতি দেয়া নয় বরং এ সঙ্গে এ কথা মেনে নেয়াও অপরিহার্য হয়ে পড়ে যে, সেখানে কোন চেষ্টা-তদবীর ও সুপারিশ করা, জরিমানা দেয়া এবং কোন বুজর্গ ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ও বন্ধন কোন কাজে লাগবে না। কেউ কারোর পাপের কাফফারা হবে না। আল্লাহর আদালতে ইনসাফ হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন এবং মানুষের ঈমান ও আমল ছাড়া আর কোন জিনিসকে মোটেই মূল্য দেয়া হবে না। এরূপ বিশ্বাস ছাড়া আখেরাতকে মেনে নেয়া অর্থহীন। কিন্তু ইহুদী ও খৃস্টানরা এ দিক দিয়েই নিজেদের ঈমান আকিদা নষ্ট করে ফেলেছে। কাজেই তাদের আখেরাতের প্রতি ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়।
২৭ .
অর্থাৎ আল্লাহ তার রসূলের মাধ্যমে যে শরীয়াত নাযিল করেছেন তাকে নিজেদের জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে না।
২৮.
অর্থাৎ তারা ঈমান আনবে ও আল্লাহর সত্য দ্বীনের অনুসারী হয়ে যাবে, যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তা নয়। বরং যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছেঃ তাদের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য খতম হয়ে যাবে। তারা পৃথিবীতে শাসন ও কর্তৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে না। বরং পৃথিবীতে মানুষের জীবন ব্যবস্থা লাগাম এবং মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করা ও তাদের নেতৃত্ব দান করার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার সত্যের অনুসারীদের হাতে থাকবে এবং তারা এ সত্যের অনুসারীদের অধীনে অনুগত জীবন যাপন করবে।
জিম্মিদেরকে ইসলামী শাসনের আওতায় যে নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ দান করা হবে তার বিনিময়কে জিযিয়া বলা হয়। তাছাড়া তারা যে হুকুম মেনে চলতে এবং ইসলামী শাসনের আওতাধীনে বসবাস করতে রাজী হয়েছে, এটা তার একটি আলামত হিসেবেও চিহ্নিত হবে। নিজের হাতে জিযিয়া দেয় এর অর্থ হচ্ছে, সহজ, সরল আনুগত্যের ভঙ্গিতে জিযিয়া আদায় করা। আর পদানত হয়ে থাকে এর অর্থ, পৃথিবীতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের নয় বরং যে মু’মিন ও মুসলিমরা আল্লাহর খিলাফত ও প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করছে তাদের হাতে থাকবে।
প্রথমদিকে ইহুদী ও খ্রিষ্টানের কাছ থেকে জিযিয়া আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে নবী (সা.) নিজে মাজুসীদের (অগ্নি উপাসক) থেকে জিযিয়া আদায় করে তাদেরকে যিম্মী করেন। এরপর সাহাবায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে আরবের বাইরের সব জাতির ওপর সাধারণভাবে এ আদেশ প্রয়োগ করেন।
ঊনিশ শতকে মুসলিম মিল্লাতের পতন ও অবনতির যুগে এ জিযিয়া সম্পর্কে মুসলমানদের পক্ষ থেকে বড় বড় সাফাই পেশ করা হতো। সেই পদাঙ্ক অনুসারী কিছু লোক এখনো রয়েছে এবং তারা এখনো এ ব্যাপারে সাফাই গেয়ে চলেছে। কিন্তু আল্লাহর দ্বীন এসবের অনেক ঊর্ধ্বে।
আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহের ভূমিকায় অবতীর্ণ, তাদের কাছে কৈফিয়ত দান ও ওযর পেশ করার তার কোন প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার ও সোজা কথায়, যারা আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করে না এবং নিজেদের বা অন্যের উদ্ভাবিত ভুল পথে চলে, তারা বড় জোর এতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার রাখে যে, নিজেরা ভুল পথে চলতে চাইলে চলতে পারে, কিন্তু আল্লাহর যমীনে কোন একটি জায়গায়ও মানুষের ওপর শাসন চালাবার এবং নিজেদের ভ্রান্তি নীতি অনুযায়ী মানুষের সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা করার আদৌ কোন অধিকার তাদের নেই। দুনিয়ার যেখানেই তারা এ জিনিসটি লাভ করবে সেখানেই বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তাদেরকে এ অবস্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে সৎ ও সত্যনিষ্ঠা জীবন বিধানের অনুগত করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোই হবে মু’মিনদের কর্তব্য।
এখন প্রশ্ন থেকে যায়, এ জিযিয়া কিসের বিনিময়ে দেয়? এর জবাব হচ্ছে, ইসলামী শাসন কর্তৃত্বের আওতাধিনে নিজেদের গোমরাহীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য অমুসলিমদের যে স্বাধীনতা দান করা হয় এটা তারই মূল্য। আর যে সৎ ও সত্যনিষ্ঠা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা তাদের এ স্বাধীনতাকে কাজে লাগাবার অনুমতি দেয় এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে তার শাসন ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা পরিচালনায় এ অর্থ ব্যয়িত হওয়া উচিত। এর সবচেয়ে বড় ফায়দা হচ্ছে এই যে, জিযিয়া আদায় করার সময় প্রতি বছর জিম্মিদের মধ্যে একটা অনুভূতি জাগতে থাকবে। প্রতি বছর তারা মনে করতে থাকবে, তারা আল্লাহর পথে যাকাত দেবার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত আর এর পরিবর্তে গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাদের মূল্য দিতে হচ্ছে। এটা তাদের কত বড় দুর্ভাগ্য। এ দুর্ভাগ্যের কারাগারে তারা বন্দী।
২৯.
উযাইর বলা হয়েছে “আযরা"কে (EZRA) ইহুদীরা তাঁকে নিজেদের ধর্মের মুজাদ্দিদ বা পুনরুজ্জীবনকারি বলে মানে। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের কাছাকাছি সময়ের লোক ছিলেন বলে মনে করা হয়। ইসরাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী হযরত সুলাইমান (আ) এর পরে বনী ইসরাঈলের ওপর যে কঠিন দুর্যোগ নেমে আসে তার ফলে শুধু যে তাওরাত দুনিয়া থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল, তা নয়, বরং বেবিলনের বন্দী জীবন যাপন ইসরাঈলী জনগণকে তাদের শরীয়াত ঐতিহ্য এবং জাতীয় ভাষা ইবরানীর সাথে পর্যন্ত অপরিচিত করে দিয়েছিল। অবশেষে এ উযাইর বা আযরা বাইবেলের আদি পুস্তক সংকলন করেন। তিনি শরীয়াতকে পুনরুজ্জীবিত করেন এ কারণেই বনী ইসরাঈল তাকে অত্যধিক ভক্তি করে। এ ভক্তি এতদূর বেড়ে যায় যে, কোন কোন দল তাকে আল্লাহর পুত্র পর্যন্ত বানিয়ে দেয়। এখানে কুরআন মজীদের বক্তব্য এ নয় যে, সমস্ত ইহুদী জাতি একজোট হয়ে আযরাকে আল্লাহর পুত্র বানিয়েছে। বরং কুরআন বলতে চায় ইহুদীদের আল্লাহ সম্পর্কিত বিশ্বাসের এত বেশী গলদ দেখা দেয় যে, আযরাকে আল্লাহর পুত্র গণ্য করার মতো লোকও তাদের সমাজে পয়দা হয়ে যায়।
৩০.
অর্থাৎ মিসর, গ্রীস, রোম, ইরান এবং অন্যান্য দেশে যেসব জাতি আগেই পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাদে পৌরিনিক ধ্যান-ধারণা ও অলিক চিন্তা-ভাবনায় প্রভাবিত হয়ে তারাও তেমনি ধরনের ভ্রষ্ট আকীদা-বিশ্বাস তৈরী করে নিতো। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আল মায়েদাহ ১০১ টীকা)।