১১ ) যখন আকাশের পরদা সরিয়ে ফেলা হবে। ১০
وَإِذَا ٱلسَّمَآءُ كُشِطَتْ ١١
১২ ) যখন জাহান্নামের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হবে
وَإِذَا ٱلْجَحِيمُ سُعِّرَتْ ١٢
১৩ ) এবং জান্নাতকে নিকটে আনা হবে। ১১
وَإِذَا ٱلْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ ١٣
১৪ ) সে সময় প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে সে কি নিয়ে এসেছে।
عَلِمَتْ نَفْسٌۭ مَّآ أَحْضَرَتْ ١٤
১৫ ) কাজেই, না, ১২ আমি কসম খাচ্ছি
فَلَآ أُقْسِمُ بِٱلْخُنَّسِ ١٥
১৬ ) পেছনে ফিরে আসা ও অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তারকারাজির এবং রাত্রির,
ٱلْجَوَارِ ٱلْكُنَّسِ ١٦
১৭ ) যখন তা বিদায় নিয়েছে
وَٱلَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ ١٧
১৮ ) এবং প্রভাতের, যখন তা শ্বাস ফেলেছে। ১৩
وَٱلصُّبْحِ إِذَا تَنَفَّسَ ١٨
১৯ ) এটি প্রকৃতপক্ষে একজন সম্মানিত বাণীবাহকের বাণী, ১৪
إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍۢ كَرِيمٍۢ ١٩
২০ ) যিনি বড়ই শক্তিধর, ১৫ আরশের মালিকের কাছে উন্নত মর্যাদার অধিকারী,
ذِى قُوَّةٍ عِندَ ذِى ٱلْعَرْشِ مَكِينٍۢ ٢٠
১০.
অর্থাৎ এখন যা কিছু দৃষ্টির অগোচরে রয়ে গেছে তা সব সুস্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠবে। এখন তো আকাশ কেবল শূন্যই দেখা যায় এবং তার মধ্যে দেখা যায় মেঘ, ধুলিকনা, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ-তারকা। কিন্তু সেদিন আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব তার নিজস্ব ও আসল রূপে আবরণ মুক্ত হয়ে সবার সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে।
১১.
অর্থাৎ হাশরের ময়দানে যখন লোকদের মামলার শুনানী চলতে থাকবে, তখন জাহান্নামের উদ্দীপ্ত আগুনও সবাই দেখতে পাবে। জান্নাতও তার সমস্ত নিয়ামত সহকারে সবার সামনে হাযির থাকবে। এভাবে একদিকে অসৎলোকেরা জানতে পারবে তারা কোন্ ধরনের জিনিস থেকে বঞ্চিত হয়ে কোন্ দিকে যাচ্ছে এবং সৎলোকেরাও জানতে পারবে তারা কোন্ জিনিসের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কোন্ ধরনের নিয়ামত লাভ করতে যাচ্ছে।
১২.
অর্থাৎ তোমাদের এ ধারণা ঠিক নয় যে, কুরআনে যা কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে এগুলো কোন পাগলের প্রলাপ বা শয়তানের ওয়াস্ওয়াসাহ্ ও কুমন্ত্রণা।
১৩.
যে বিষয়ের ওপর এই কসম খাওয়া হয়েছে তা সামনের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধরনের কসমের অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ ﷺ অন্ধকারে কোন স্বপ্ন দেখেননি। বরং যখন তারকারা অস্তমিত হয়েছিল, রাত বিদায় নিয়েছিল এবং প্রভাতের উদয় হয়েছিল তখন উন্মুক্ত আকাশে তিনি আল্লাহর ফেরেশতাকে দেখেছিলেন। কাজেই তিনি যা কিছু বর্ণনা করছেন তা সবই তাঁর নিজের চোখে দেখা। সুস্পষ্ট দিনের আলোয় পূর্ণচেতনা সহকারে তিনি এসব দেখেছেন।
১৪.
এখানে সম্মানিত বাণীবাহক ( রসূল করীম ) বলতে অহী আনার কাজে লিপ্ত ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে। সামনের আয়াতে একথাটি আরো সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আর কুরআনকে “বাণীবাহকের বাণী” বলার অর্থ এই নয় যে , এটি ঐ সংশ্লিষ্ট ফেরেশতার নিজের কথা। বরং “বাণীবাহকের বাণী” শব্দ দু’টিই একথা প্রকাশ করছে যে , এটি সেই সত্তার বাণী যিনি তাকে বাণীবাহক করে পাঠিয়েছেন । সূরা “ আল হাক্কা’র ৪০ আয়াতে এভাবে কুরআনকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী বলা হয়েছে। সেখানেও এর অর্থ এই নয় যে, এটি নবী ( সা) নিজের রচনা। বরং একে “ রসূলে করীমের ” বাণী বলে একথা সুস্পষ্ট করা হয়েছে যে , আল্লাহর রসূল হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি পেশ করছেন , মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ হিসেবে নয়। উভয় স্থানে বাণীকে ফেরেশতা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সম্পর্কিত করার কারণ হচ্ছে এই যে , আল্লাহর বাণী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বাণীবহনকারী ফেরেশতার মুখ থেকে এবং লোকদের সামনে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল। ( আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য তাফহীমুল কুরআন সূরা আল হাক্কার ২২ টীকা দেখুন )
১৫.
সূরা আন নাজমের ৪-৫ আয়াতে এই বিষয়বস্তুটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى - عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى
“এ তো একটি ওহী, যা তার ওপর নাযিল করা হয়। প্রবল শক্তির অধিকারী তাকে তা শিখিয়েছেন।” জিব্রীল আলাইহিস সালামের সেই প্রবল ও মহাপরাক্রমশালী শক্তি কি? এটি আসলে “মুতাশাবিহাত”-এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ ছাড়া এ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য কারোর জানা নেই। তবে এ থেকে এতটুকু কথা অবশ্যি জানা যায় যে, নিজের অসাধারণ ক্ষমতার দিক দিয়ে তিনি ফেরেশতাদের মধ্যেও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মুসলিম শরীফে কিতাবুল ঈমানে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ আমি দু’বার জিব্রীলকে তার আসল আকৃতিতে দেখেছি। তাঁর বিশাল সত্তা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী সমগ্র মহাশূন্য জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও মুসনাদে আহমদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে ছ’টি ডানা সমন্বিত অবস্থায় দেখেছেন। এ থেকে তাঁর অসাধারণ শক্তির বিষয়টি কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে।