আল ফাতিহা
৭ আয়াত
আল বাকারাহ
২৮৬ আয়াত
আলে ইমরান
২০০ আয়াত
আন্ নিসা
১৭৬ আয়াত
আল মায়েদাহ
১২০ আয়াত
আল আন'আম
১৬৫ আয়াত
আল আরাফ
২০৬ আয়াত
আল আনফাল
৭৫ আয়াত
আত তওবা
১২৯ আয়াত
১০
ইউনুস
১০৯ আয়াত
১১
হুদ
১২৩ আয়াত
১২
ইউসুফ
১১১ আয়াত
১৩
আর্ রাদ
৪৩ আয়াত
১৪
ইবরাহীম
৫২ আয়াত
১৫
আল হিজর
৯৯ আয়াত
১৬
আন্ নাহল
১২৮ আয়াত
১৭
বনী ইসরাঈল
১১১ আয়াত
১৮
আল কাহফ
১১০ আয়াত
১৯
মারয়াম
৯৮ আয়াত
২০
ত্বাহা
১৩৫ আয়াত
২১
আল আম্বিয়া
১১২ আয়াত
২২
আল হাজ্জ
৭৮ আয়াত
২৩
আল মুমিনূন
১১৮ আয়াত
২৪
আন্ নূর
৬৪ আয়াত
২৫
আল-ফুরকান
৭৭ আয়াত
২৬
আশ্-শু’আরা
২২৭ আয়াত
২৭
আন নামল
৯৩ আয়াত
২৮
আল কাসাস
৮৮ আয়াত
২৯
আল আনকাবূত
৬৯ আয়াত
৩০
আর রূম
৬০ আয়াত
৩১
লুকমান
৩৪ আয়াত
৩২
আস সাজদাহ
৩০ আয়াত
৩৩
আল আহযাব
৭৩ আয়াত
৩৪
আস সাবা
৫৪ আয়াত
৩৫
ফাতের
৪৫ আয়াত
৩৬
ইয়া-সীন
৮৩ আয়াত
৩৭
আস্ সা-ফফা-ত
১৮২ আয়াত
৩৮
সা-দ
৮৮ আয়াত
৩৯
আয যুমার
৭৫ আয়াত
৪০
আল মুমিন
৮৫ আয়াত
৪১
হা-মীম আস সাজদাহ
৫৪ আয়াত
৪২
আশ শূরা
৫৩ আয়াত
৪৩
আয্ যুখরুফ
৮৯ আয়াত
৪৪
আদ দুখান
৫৯ আয়াত
৪৫
আল জাসিয়াহ
৩৭ আয়াত
৪৬
আল আহক্বাফ
৩৫ আয়াত
৪৭
মুহাম্মদ
৩৮ আয়াত
৪৮
আল ফাতহ
২৯ আয়াত
৪৯
আল হুজুরাত
১৮ আয়াত
৫০
ক্বাফ
৪৫ আয়াত
৫১
আয যারিয়াত
৬০ আয়াত
৫২
আত তূর
৪৯ আয়াত
৫৩
আন নাজম
৬২ আয়াত
৫৪
আল ক্বামার
৫৫ আয়াত
৫৫
আর রহমান
৭৮ আয়াত
৫৬
আল ওয়াকি’আ
৯৬ আয়াত
৫৭
আল হাদীদ
২৯ আয়াত
৫৮
আল মুজাদালাহ
২২ আয়াত
৫৯
আল হাশর
২৪ আয়াত
৬০
আল মুমতাহিনা
১৩ আয়াত
৬১
আস সফ
১৪ আয়াত
৬২
আল জুমআ
১১ আয়াত
৬৩
আল মুনাফিকুন
১১ আয়াত
৬৪
আত তাগাবুন
১৮ আয়াত
৬৫
আত তালাক
১২ আয়াত
৬৬
আত তাহরীম
১২ আয়াত
৬৭
আল মুলক
৩০ আয়াত
৬৮
আল কলম
৫২ আয়াত
৬৯
আল হাককাহ
৫২ আয়াত
৭০
আল মাআরিজ
৪৪ আয়াত
৭১
নূহ
২৮ আয়াত
৭২
আল জিন
২৮ আয়াত
৭৩
আল মুযযাম্মিল
২০ আয়াত
৭৪
আল মুদ্দাস্সির
৫৬ আয়াত
৭৫
আল কিয়ামাহ
৪০ আয়াত
৭৬
আদ্ দাহর
৩১ আয়াত
৭৭
আল মুরসালাত
৫০ আয়াত
৭৮
আন নাবা
৪০ আয়াত
৭৯
আন নাযি’আত
৪৬ আয়াত
৮০
আবাসা
৪২ আয়াত
৮১
আত তাকবীর
২৯ আয়াত
৮২
আল ইনফিতার
১৯ আয়াত
৮৩
আল মুতাফফিফীন
৩৬ আয়াত
৮৪
আল ইনশিকাক
২৫ আয়াত
৮৫
আল বুরূজ
২২ আয়াত
৮৬
আত তারিক
১৭ আয়াত
৮৭
আল আ’লা
১৯ আয়াত
৮৮
আল গাশিয়াহ
২৬ আয়াত
৮৯
আল ফজর
৩০ আয়াত
৯০
আল বালাদ
২০ আয়াত
৯১
আশ শামস
১৫ আয়াত
৯২
আল লাইল
২১ আয়াত
৯৩
আদ দুহা
১১ আয়াত
৯৪
আলাম নাশরাহ
৮ আয়াত
৯৫
আত তীন
৮ আয়াত
৯৬
আল আলাক
১৯ আয়াত
৯৭
আল কাদ্‌র
৫ আয়াত
৯৮
আল বাইয়েনাহ
৮ আয়াত
৯৯
আল যিলযাল
৮ আয়াত
১০০
আল আদিয়াত
১১ আয়াত
১০১
আল কারি’আহ
১১ আয়াত
১০২
আত তাকাসুর
৮ আয়াত
১০৩
আল আসর
৩ আয়াত
১০৪
আল হুমাযা
৯ আয়াত
১০৫
আল ফীল
৫ আয়াত
১০৬
কুরাইশ
৪ আয়াত
১০৭
আল মাউন
৭ আয়াত
১০৮
আল কাউসার
৩ আয়াত
১০৯
আল কাফিরূন
৬ আয়াত
১১০
আন নসর
৩ আয়াত
১১১
আল লাহাব
৫ আয়াত
১১২
আল ইখলাস
৪ আয়াত
১১৩
আল ফালাক
৫ আয়াত
১১৪
আন নাস
৬ আয়াত

আল কিয়ামাহ

৪০ আয়াত

১১ ) কখ্খনো না, সেখানে কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না।
كَلَّا لَا وَزَرَ ١١
১২ ) সেদিন তোমার রবের সামনেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
إِلَىٰ رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ ٱلْمُسْتَقَرُّ ١٢
১৩ ) সেদিন মানুষকে তার আগের ও পরের কৃতকর্মসমূহ জানিয়ে দেয়া হবে।
يُنَبَّؤُا۟ ٱلْإِنسَـٰنُ يَوْمَئِذٍۭ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ ١٣
১৪ ) বরং মানুষ নিজে নিজেকে খুব ভাল করে জানে।
بَلِ ٱلْإِنسَـٰنُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ بَصِيرَةٌۭ ١٤
১৫ ) সে যতই অজুহাত পেশ করুক না কেন। ১০
وَلَوْ أَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُۥ ١٥
১৬ ) হে নবী, ১১ এ অহীকে দ্রুত আয়ত্ত করার জন্য তোমার জিহবা দ্রুত সঞ্চালন করো না।
لَا تُحَرِّكْ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِۦٓ ١٦
১৭ ) তা মুখস্ত করানো ও পড়ানো আমারই দায়িত্ব।
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُۥ وَقُرْءَانَهُۥ ١٧
১৮ ) তাই আমি যখন তা পড়ি ১২ তখন এর পড়া মনযোগ দিয়ে শুনবে।
فَإِذَا قَرَأْنَـٰهُ فَٱتَّبِعْ قُرْءَانَهُۥ ١٨
১৯ ) অতঃপর এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব। ১৩
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُۥ ١٩
২০ ) কখ্খনো না ১৪ আসল কথা হলো, তোমরা দ্রুত লাভ করা যায় এমন জিনিসকেই (অর্থাৎ দুনিয়া) ভালবাস
كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ ٢٠
৯.
মূল বাক্যটি হলো بِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ । এটা একটা ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক বাক্য। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে এবং সম্ভবত সবগুলোই এখানে প্রযোজ্য। এর একটি অর্থ হলো দুনিয়ার জীবন মানুষ মৃত্যুর পূর্বে কি কি নেক কাজ বা বদ কাজ করে আখেরাতের জন্য অগ্রিম পাঠিয়ে দিয়েছিল সেদিন তাকে তা জানিয়ে দেয়া হবে। আর দুনিয়াতে সে নিজের ভাল এবং মন্দ কাজের কি ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করে এসেছিল যা তার দুনিয়া ছেড়ে চলে আসার পরও পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত চলেছিল সে হিসেবেও তার সামনে পেশ করা হবে। দ্বিতীয় অর্থ হলো। তার যা কিছু করা উচিত ছিল অথচ সে তা করেনি আর যা কিছু করা উচিত ছিল না অথচ সে তা করেছে তাও সব তাকে জানিয়ে দেয়া হবে। তৃতীয় অর্থ হলো, যেসব কাজ সে আগে করেছে এবং যেসব কাজ সে পরে করেছে দিন তারিখ সহ তার পুরো হিসেব তার সামনে পেশ করা হবে। চতূর্থ অর্থ হলো, যেসব ভাল বা মন্দ কাজ সে করেছে তাও তাকে জানিয়ে দেয়া হবে। আর যেসব ভাল বা মন্দ কাজ করা থেকে সে বিরত থেকেছে তাও তাকে অবহিত করা হবে।
১০.
মানুষের সামনে তারা আমলনামা পেশ করার উদ্দেশ্য আসলে অপরাধীকে তার অপরাধ সম্পর্কে অবহিত করা নয়। বরং এরূপ করা জরুরী এই কারণে যে, প্রকাশ্য আদালতে অপরাধের প্রমাণ পেশ করা ছাড়া ইনসাফের দাবী পূরণ হয় না। প্রত্যেক মানুষই জানে, সে নিজে কি? সে কি, একথা তাকে অন্য কারো বলে দিতে হয় না। একজন মিথ্যাবাদী গোটা দুনিয়াকে ধোঁকা দিতে পারে। কিন্তু সে নিজে একথা জানে যে, সে যা বলছে ত মিথ্যা। একজন চোর তার চৌর্যবৃত্তিকে ঢাকার জন্য অসংখ্য কৌশল অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু সে যে চোর তা তার নিজের কাছে গোপন থাকে না। একজন পথভ্রষ্ট লোক হাজারো প্রমাণ পেশ করে মানুষকে একথা বিশ্বাস করাতে পারে যে, সে যে কুফরী, নাস্তিকতা ও শিরকের সামর্থ্যক তা তার মনের বিশ্বাসভিত্তিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার নিজের বিবেক একথা ভাল করেই জানে যে, সে ঐসব আকীদা-বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে আছে কেন এবং মধ্যকার ভুল বুঝতে ও মেনে নিতে কিসে তাকে বাধা দিচ্ছে? জালেম, অসচ্চরিত্র, দৃষ্কর্মশীল এবং হারামখোর মানুষ নিজের অপকর্মের পক্ষে নানা রকম ওজর-আপত্তি ও কৌশল পেশ করে নিজের বিবেকের মুখ পর্যন্ত বন্ধ করার চেষ্টা চালাতে পারে যাতে বিবেক তাকে তিরষ্কার করা থেকে বিরত থাকে এবং স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, সত্যিকারভাবেই কিছু বাধ্যবাধকতা, কিছু বৃহত্তর কল্যাণ এবং কিছু অনিবার্য প্রয়োজনে সে এসব করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সর্বাবস্থায় তার এটা জানা থাকে যে, সে কার প্রতি কতটা জুলুম করেছে, কার হক মেরে খেয়েছে, কার সতীত্ব নষ্ট করেছে, কাকে প্রতারণা করেছে এবং কোন অবৈধ পন্থায় কি কি স্বার্থ উদ্ধার করেছে। তাই আখেরাতের আদালতে হাজির করার সময় প্রত্যেক কাফের, মুনাফিক, পাপী ও অপরাধী নিজেই বুঝতে পারবে যে, সে কি কাজ করে এসেছে এবং কোন অবস্থায় নিজ প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
১১.
এখান থেকে শুরু করে “এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব” কথাটি পর্যন্ত পুরা বাক্যটি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গের বাক্য, যা মূল কথার ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। আমরা সূরার ভূমিকাতেই উল্লেখ করেছি যে, নবুয়তের প্রাথমিক যুগে-যে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অহী গ্রহণ করার অভ্যাস পুরোপুরি রপ্ত হয়নি-যখন তাঁর ওপর অহী নাযিল হতো তখন তিনিআশঙ্কা করতেন যে আল্লাহর বাণী জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে শুনাচ্ছেন তা হয়তো তিনি ঠিকমত স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারবেননা। তাই অহী শোনার সাথে সাথে তিনি তা মুখস্থ করার চেষ্টা করতেন। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যখন সূরা কিয়ামাহর এ আয়াতগুলো তাঁকে শুনাচ্ছিলেন তখনও ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই কথার ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে তাঁকে বলা হয় যে, আপনি অহীর কথা মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না, বরং গভীর মনযোগ সহকারে তা শুনতে থাকুন। তা স্মরণ করানো এবং পরবর্তী সময়ে আপনাকে তা পড়িয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। আপনি নিশ্চিত থাকুন, এ বাণীর একটি শব্দও আপনি ভুলবেন না এবং তা উচ্চারণ করা বা পড়ার ব্যাপারে আপনার কোন ভুল হবে না। এ নির্দেশনামা দেয়ার পর পুনরায় মূল কথার ধারাবাহিকতা “কখনো না, আসল কথা হলো” কথাটি দ্বারা শুরু হয়েছে। যারা এ পটভূমি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয় তারা এখানে এ বাক্যাংশ দেখে মনে করে যে, এখানে একথাটি একেবারেই খাপ ছাড়া। কিন্তুএ পটভূমি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর কথার মধ্যে কোন অসংলগ্নতা আছে বলে মনে হয় না। এর উদাহরণ এভাবে দেয়া যায়, একজন শিক্ষক পাঠদানের সময় হঠাৎ দেখলেন যে, তাঁর ছাত্রের মন অন্য কোন দিকে আকৃষ্ট। তাই তিনি পাঠ দানের ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে বললেনঃ “আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন।” এরপর তিনি পুনরায় নিজের কথা শুরু করলেন। এ পাঠ দান যদি হুবহু ছাপিয়ে প্রকাশ করা হয় তাহলে যেসব লোক এ ঘটনা সম্পর্কে ওয়াফিহাল নন তারা বক্তৃতার ধারাবাহিকতার মধ্যে একথাটিকে খাপছাড়া মনে করবেন। কিন্তু যে কারণে একথাটি বাক্যের মধ্যে সংযোজিত হয়েছে যে ব্যক্তি সে আসল ঘটনা সম্পর্কে অবহিত থাকবেন তিনি নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে, পাঠ দানের বক্তব্যটি আসলে হুবহু উদ্ধৃত করা হয়েছে। তা বর্ণনা বা উদ্ধৃত করতে কোন প্রকার কমবেশী করা হয়নি।

এসব আয়াতের মাঝখানে এ বাক্যাংশটির অপ্রাসঙ্গিকভাবে আনারও যে কারণ আমরা ওপরে বিশ্লেষণ করেছি তা শুধু অনুমান নির্ভর নয়। বরং নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতসমূহে তার এ একই কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। মুসনাদে আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে জারীর, তাবরানী, বায়হাকী এবং অন্যসব মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন সনদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের এ বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন যে, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কুরআন নাযিল হতো তখন পাছে তিনি ভুলে যান এ ভয়ে জিবরাঈল আলাইহিস সালামের সাথে কথাগুলো বার বার আওড়াতে থাকতেন। তাই বলা হয়েছেلَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ.................... শা'বী, ইবনে যায়েদ, দ্বাহ্হাক, হাসান বাসরী, কাতাদা, মুজাহিদ এবং আরো অনেক বড় বড় মুফাস্সির থেকেও একথাটিই উদ্ধৃত হয়েছে।

১২.
জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যদিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। কিন্তু যেহেতু তিনি নিজের পক্ষ থেকে তা শুনাতেননা, বরং আল্লাহ‌ তা’আলার পক্ষ থেকে পড়ে শুনাতেন। তাই একথাটিও আল্লাহ‌ তা’আলাই বলেছেনঃ “যখন আমি তা পাঠ করতে থাকবো। “
১৩.
এ থেকে ধারণা জন্মে যে, সম্ভবত নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগেই অহী নাযিল হওয়ার সময় রসূলুল্লাহ ﷺ কুরআনের কোন আয়াত অথবা কোন শব্দ অথবা কোন বিষয়ের অর্থ জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতেন। তাই তাঁকে শুধু এ নির্দেশই দেয়া হয়নি যে, যখন অহী নাযিল হতে থাকবে তখন নিরবে তিনি তা শুনতেন, কিংবা শুধু এ নিশ্চয়তা ও সন্ত্বনাই দেয়া হয়নি যে, অহীর প্রতিটি শব্দ তাঁর স্মৃতিতে অবিকল সংরক্ষিত করে দেয়া হবে এবং কুরআনকে তিনি ঠিক সেভাবে পাঠ করতে সক্ষম হবেন যেভাবে তা নাযিল হয়েছে। বরং সাথে সাথে তাঁকে প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ‌ তা’আলার প্রতিটি নির্দেশ ও বাণীর মর্ম এবং উদ্দেশ্যও তাঁকে পুরোপুরি বুঝিয়ে দেয়া হবে।

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত। এ আয়াত দ্বারা এমন কয়েকটি মৌলিক বিষয় প্রমাণিত হয়, যা কোন ব্যক্তি ভালভাবে বুঝে নিলে এমন কিছু গোমরাহী থেকে রক্ষা পেতে পারে যা ইতিপূর্বেও কিছুলোক ছড়িয়েছে এবং বর্তমানেও ছড়াচ্ছে।

প্রথমত, এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শুধু কুরআনে লিপিবদ্ধ অহী-ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিল হতো না। বরং এ অহী ছাড়াও তাঁর প্রতি আরো অহী নাযিল হতো এবং সে অহীর মাধ্যমে তাঁকে এমন জ্ঞান দেয়া হতো যা কুরআনে লিপিবদ্ধ নেই। তাই কুরআনের হুকুম-আহকাম ও নির্দেশাবলী, তার ইঙ্গিত, তার শব্দমালা এবং তার বিশেষ পরিভাষার যে অর্থ ও মর্ম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হতো তা যদি কুরআনের মধ্যেই সংযোজিত থাকবে তাহলে একথা বলার কোন প্রয়োজনই ছিল না, যে তার অর্থ বুঝিয়ে দেয়া বা তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেয়া আমারই দায়িত্ব। কারণ এমতাবস্থায় তা আবার কুরআনের মধ্যেই পাওয়া যেতো। অতএব, একথা মানতে হবে যে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের শব্দমালা বহির্ভূত অন্য কিছু। এটা “অহীয়ে খফীর” আরো একটি প্রমাণ যা খোদ কুরআন থেকেই পাওয়া যায়। (কুরআন মজীদ থেকে এর আরো প্রমাণ আমি আমার “সুন্নাত কি আইনী হাইসিয়াত” গ্রন্থের ৯৪-৯৫ এবং ১১৮ থেকে ১২৫ পৃষ্ঠায় তুলে ধরেছি।)

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ‌ তা’আলার পক্ষ থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআনের অর্থ ও মর্ম এবং হুকুম-আহকামের যে ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল তা তো এ জন্যই দেয়া হয়েছিল যে, তিনি তদনুযায়ী নিজের কথা ও কাজ দ্বারা মানুষকে কুরআন বুঝিয়ে দেবেন এবং তার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী কাজ করা শেখাবেন। একথার মর্ম ও অর্থ যদি তা না হয় এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যদি শুধু এ জন্য এ ব্যাখ্যা বলে দেয়া হয়ে থাকে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজের কাছেই সে জ্ঞান সীমাবদ্ধ রাখবেন তাহলে এটা হতো একটা অর্থহীন কাজ। কারণ, নুওয়াতের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে তা থেকে কোন সাহায্য পাওয়া যেতো না। সুতরাং কোন নির্বোধই কেবল একথা বলতে পারে যে, ব্যাখ্যামূলক এ জ্ঞানের শরীয়াতের বিধান রচনার ক্ষেত্রে আদৌ কোন ভূমিকা ছিল না। সূরা “নাহলের ৪৪ আয়াতে আল্লাহ‌ তা’আলা নিজেই বলেছেনঃ

وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ

"হে নবী, আমি তোমার কাছে এ “যিকির “নাযিল করেছি, এ জন্য যেন তুমি মানুষের জন্য নাযিলকৃত শিক্ষার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে থাকো। ” (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন নাহল টীকা ৪০)

কুরআন মজীদের চারটি স্থানে আল্লাহ‌ তা’আলা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাজ শুধু আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ শুনিয়ে দেয়াই ছিল না। বরং এ কিতাবের শিক্ষা দেয়াও ছিল তাঁর দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। (আল বাকারাহ, আয়াত ১২৯ ও ১৫১; আলে ইমরান, ১৬৪ এবং আল জুম’আ, ২। আমি “কি আইনী হাইসিয়াত, গ্রন্থের ৭৪ থেকে ৭৭ পৃষ্ঠায় এসব আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি।) এরপর কোন মানুষ কি করে একথা অস্বীকার করতে পারে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে কুরআনের যে, ব্যাখ্যা পেশ করেছেন তা-ই প্রকৃতপক্ষে কুরআনের সঠিক নির্ভরযোগ্য ও সরকারী ব্যাখ্যা। কেননা, তা তাঁর নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা নয় বরং কুরআন নাযিলকারী আল্লাহর বলে দেয়া ব্যাখ্যা। এ ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে কিংবা তা পাশ কাটিয়ে যে ব্যক্তিই কুরআনের কোন আয়াতের অথবা কোন শব্দের মনগড়া অর্থ বর্ণনা করে সে এমন ধৃষ্টতা দেখায় যা কোন ঈমানদার ব্যক্তি দেখাতে পারে না।

তৃতীয়ত, কেউ যদি সাধারণভাবেও কুরআন অধ্যয়ন করে থাকে তাহলেও সে দেখবে যে, তাতে এমন অনেক বিষয় আছে একজন আরবী জানা লোক শুধু কুরআনের শব্দ বা বাক্য পড়ে তার অর্থ বা মর্ম উদ্ধার করতে এবং তার মধ্যে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা কিভাবে মেনে চলবে তা জানতে পারবে না। উদাহরণ হিসেবে صلواة (সালাত) শব্দটির কথাই ধরুন। কুরআন মজীদে যদি ঈমানের পরে অন্য কোন আমলের ওপরে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে তবে তা হলো সালাত বা নামায। কিন্তু কেবল আরবী ভাষার সাহায্য কেউ এর অর্থ পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারতো না। কুরআন মজীদে এ শব্দটির বার বার উল্লেখ দেখে কেউ বড় জোর এতটুকু বুঝতে সক্ষম যে, আরবী ভাষার এ শব্দটিকে কোন বিশেষ পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর অর্থ সম্ভবত এমন কোন বিশেষ কাজ যা আঞ্জাম দেয়ার জন্য ঈমানদারদের কাছে দাবী জানানো হচ্ছে। কিন্তু শুধু কুরআন পাঠ করে কোন আরবী জানা লোক এ সিদ্ধান্ত পৌঁছতে সক্ষম হবে না যে, সে বিশেষ কাজটি কি এবং কিভাবে তা আঞ্জাম দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, কুরআন প্রেরণকারী যদি তাঁর পক্ষ থেকে একজন শিক্ষক নিয়োগ করে এ পারিভাষিক অর্থ তাঁকে যথাযথভাবে না বলে দিতেন এবং সালাত “আদায় করার নির্দেশ পালনের পন্থা-পদ্ধতি স্পষ্টভাবে তাঁকে না শেখাতেন তাহলে দুনিয়াতে দু’জন মুসলমানও এমন পাওয়া যেতো না যারা শুধু কুরআন পাঠ করে করে “সালাত” আদায় করার নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে কোন একটি পন্থা মেনে নিতে একমত হতে পারতো? দেড় হাজার বছর ধরে মুসলমানরা যে পুরুষাণুক্রমে একই নিয়ম ও পন্থায় নামায পড়ে আসছে এবং দুনিয়ার আনাচে-কানাচে কোটি কোটি মুসলমান একই নিয়ম-পন্থায় যেভাবে নামাযের হুকুম পালন করছে তার কারণ তো শুধু এই যে, ঐ সব শব্দ এবং বাক্যের অর্থ এবং মর্মও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পুরোপুরি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আর যারা তাঁকে আল্লাহর রসূল এবং কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন তিনি সেসব লোককেই এর অর্থ ও মর্ম শিক্ষা দিয়েছিলেন।

চতুর্থত, কুরআনের শব্দসমূহে যে ব্যাখ্যা আল্লাহ‌ তা’আলা তাঁর রসূলকে ﷺ বুঝিয়েছেন এবং রসূল ﷺ তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে উম্মতকে যে শিক্ষা দিয়েছেন, হাদীস এবং সুন্নাত ছাড়া তা জানার আর কোন উপায় আমাদের কাছে নেই। হাদীস বলতে বুঝায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজ সম্পর্কে যেসব বর্ণনা সনদসহ তৎকালীন লোকদের নিকট থেকে আমাদের কালের লোকদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর সুন্নাত বলতে বুঝায় সেসব নিয়ম-কানুন কে যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৌখিক ও বাস্তব শিক্ষার দ্বারা মুসলিম সমাজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে চালু হয়েছে, যার বিস্তারিত বিবরণ নির্ভরযোগ্য ও রেওয়ায়াতের মাধ্যমে পূর্ববর্তী লোকদের নিকট থেকে পরবর্তী লোকেরা লাভ করেছে এবং পরবর্তী যুগের লোকরা পূর্ববর্তী যুগের লোকদের মধ্যে তা কার্যকর হতে দেখেছে। জ্ঞানের এ উৎসকে যে ব্যক্তি অস্বীকার করে প্রকারান্তরে সে যেন একথাই বলে ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ বলে আল্লাহ‌ তা’আলা তাঁর রসূলকে ﷺ কুরআনের অর্থ ও মর্ম বুঝিয়ে দেয়ার যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তা পূরণ করতে (না’উযুবিল্লাহ) তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, শুধু রসূলকে ব্যক্তিগতভাবে কুরআনের অর্থ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়েছিল না। বরং এর উদ্দেশ্য ছিল রসূলের মাধ্যমে উম্মাতকে আল্লাহর কিতাবের অর্থ বুঝানো। হাদীস ও সুন্নাত আইনের উৎস একথা অস্বীকার করলে আপনা থেকেই তার অনিবার্য অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আল্লাহ‌ তা’আলা সে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। না’উযুবিল্লাহ! এর জবাবে যারা বলে যে, অনেক লোক তো মিথ্যা হাদীস রচনা করেছিল, তাকে আমরা বলবো, মিথ্যা, হাদীস রচনা করাই সর্বোপেক্ষা বড় প্রমাণ যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে গোটা মুসলিম উম্মাহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজকে আইনের মর্যাদা দান করতো। তা না হলে গোমরাহীর বিস্তারকারীদের মিথ্যা হাদীস রচনার প্রয়োজন হবে কেন? মুদ্রা জালকারীরা কেবল সে মুদ্রাই জাল করে যা বাজারে চালু থাকে। বাজারে যেসব নোটের কোন মূল্য নেই কে এমন নির্বোধ আছে যে, সেসব নোট জাল করে ছাপাবে? তাছাড়াও এ ধরনের কথা যারা বলে তারা হয়তো জানে না যে, যে পবিত্র সত্তার ﷺ কথা ও কাজ আইনের মর্যাদা সম্পন্ন তাঁর সাথে যাতে কোন মিথ্যা কথাসম্পর্কিত হতে না পারে প্রথম দিন থেকেই মুসলিম উম্মাহ গুরুত্বসহ সে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এ পবিত্র সত্তার ﷺ প্রতি কোন মিথ্যা কথা আরোপেরআশঙ্কা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছিল এ উম্মতের কল্যাণকামীরা তত অধিক মাত্রায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন সত্য ও মিথ্যাকে আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য। সত্যও মিথ্যা হাদীস পৃথকীকরণের এ জ্ঞান এমন একটি অত্যুচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান যা একমাত্র মুসলিম জাতি ছাড়া আজ পর্যন্ত পৃথিবীর আর কেউ আবিষ্কার করেনি। যারা এ জ্ঞান অর্জন না করেই শুধু মাত্র পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদদের প্রতারণা ও প্রলোভনের শিকার হয়ে হাদীস ও সুন্নাতকে অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করে এবং একথাও জানে না যে, তারা তাদের এ মূর্খতা নির্ভর ধৃষ্টতা দ্বারা ইসলামের কত মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে। তারা আসলেই বড় হতভাগা।

১৪ .
মাঝের অপ্রাসঙ্গিক কথাটির আগে বক্তব্যের যে ধারাবাহিকতা ছিল এখানে এসে আবার সে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। কখখনো না, অর্থ হলো, তোমাদের আখেরাতকে অস্বীকার করার আসল কারণ এটা নয় যে, বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টিকর্তা কিয়ামত সংঘটিত করতে কিংবা মৃত্যুর পর তোমাদেরকে আবার জীবিত করতে পারবেন না বলে তোমরা মনে করো বরং আসল কারণ হলো এটি।
অনুবাদ: