১১ ) এসব মিথ্যা আরোপকারী, সম্পদশালী লোকদের সাথে বুঝাপড়ার ব্যাপারটা তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও। ১২ আর কিছু কালের জন্য এদেরকে এ অবস্থায়ই থাকতে দাও।
وَذَرْنِى وَٱلْمُكَذِّبِينَ أُو۟لِى ٱلنَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيلًا ١١
১২ ) আমার কাছে (এদের জন্য) আছে শক্ত বেড়ি, ১৩ জ্বলন্ত আগুন,
إِنَّ لَدَيْنَآ أَنكَالًۭا وَجَحِيمًۭا ١٢
১৩ ) গলায় আটকে যাওয়া খাবার এবং যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
وَطَعَامًۭا ذَا غُصَّةٍۢ وَعَذَابًا أَلِيمًۭا ١٣
১৪ ) এসব হবে সেদিন যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা কেঁপে উঠবে এবং পাহাড় গুলোর অবস্থা হবে এমন যেন বালুর স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। ১৪
يَوْمَ تَرْجُفُ ٱلْأَرْضُ وَٱلْجِبَالُ وَكَانَتِ ٱلْجِبَالُ كَثِيبًۭا مَّهِيلًا ١٤
১৫ ) আমি তোমাদের ১৫ নিকট একজন রসূল পাঠিয়েছি তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ ১৬ যেমন ফেরাউনের নিকট একজন রসূল পাঠিয়ে ছিলাম।
إِنَّآ أَرْسَلْنَآ إِلَيْكُمْ رَسُولًۭا شَـٰهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَآ أَرْسَلْنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولًۭا ١٥
১৬ ) দেখো, ফেরাউন যখন সে রসূলের কথা মানলো না তখন আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলাম।
فَعَصَىٰ فِرْعَوْنُ ٱلرَّسُولَ فَأَخَذْنَـٰهُ أَخْذًۭا وَبِيلًۭا ١٦
১৭ ) তোমরা যদি মানতে অস্বীকার করো তাহলে সেদিন কিভাবে রক্ষা পাবে যেদিনটি শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে? ১৭
فَكَيْفَ تَتَّقُونَ إِن كَفَرْتُمْ يَوْمًۭا يَجْعَلُ ٱلْوِلْدَٰنَ شِيبًا ١٧
১৮ ) যেদিনের কঠোরতায় আকাশ মণ্ডল বিদীর্ণ হয়ে যেতে থাকবে? আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো পূর্ণ হবেই।
ٱلسَّمَآءُ مُنفَطِرٌۢ بِهِۦ ۚ كَانَ وَعْدُهُۥ مَفْعُولًا ١٨
১৯ ) এ একটি উপদেশ বাণী। অতএব যে চায় সে তার প্রভুর পথ অবলম্বন করুক।
إِنَّ هَـٰذِهِۦ تَذْكِرَةٌۭ ۖ فَمَن شَآءَ ٱتَّخَذَ إِلَىٰ رَبِّهِۦ سَبِيلًا ١٩
২০ ) হে নবী, ১৮ তোমার রব জানেন যে, তুমি কোন সময় রাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কোন সময় অর্ধাংশ এবং কোন সময় এক তৃতীয়াংশ সময় ইবাদতে দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দাও। ১৯ তোমার সঙ্গী একদল লোকও এ কাজ করে। ২০ রাত এবং দিনের সময়ের হিসেব আল্লাহই রাখেন। তিনি জানেন, তোমরা সময়ের সঠিক হিসেব রাখতে পারো না। তাই তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। এখন থেকে কুরআন শরীফের যতটুকু স্বাচ্ছন্দে পড়তে পারবে ততটুকুই পড়বে। ২১ তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যকার কিছু লোক হবে অসুস্থ, কিছু লোক আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে ভ্রমণরত, ২২ এবং কিছু লোক আল্লাহর পথে লড়াই করে। ২৩ তাই কুরআনের যতটা পরিমাণ সহজেই পড়া যায় ততটাই পড়তে থাকো। নামায কায়েম করো, যাকাত দাও ২৪ এবং আল্লাহকে “কর্জে হাসানা” দিতে থাকো। ২৫ তোমরা নিজের জন্য যে পরিমাণ কল্যাণ অগ্রিম পাঠিয়ে দেবে তা আল্লাহর কাছে প্রস্তুত পাবে। সেটিই অধিক উত্তম এবং পুরস্কার হিসেবে অনেক বড়। ২৬ আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
۞ إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَىِ ٱلَّيْلِ وَنِصْفَهُۥ وَثُلُثَهُۥ وَطَآئِفَةٌۭ مِّنَ ٱلَّذِينَ مَعَكَ ۚ وَٱللَّهُ يُقَدِّرُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ ۚ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلْقُرْءَانِ ۚ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ ۙ وَءَاخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِى ٱلْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ ۙ وَءَاخَرُونَ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ ۚ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَقْرِضُوا۟ ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًۭا ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا۟ لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍۢ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيْرًۭا وَأَعْظَمَ أَجْرًۭا ۚ وَٱسْتَغْفِرُوا۟ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۢ ٢٠
১২.
একথা থেকে এ মর্মে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মক্কায় যেসব লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মিথ্যা আরোপ করছিল এবং নানাভাবে ধোঁকা দিয়ে এবং নানা রকমের স্বার্থপ্রীতি সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষ উস্কে দিয়ে তাঁর বিরোধিতায় নামছিল তারা সবাই ছিল জাতির সচ্ছল, সম্পদশালী ও বিলাসপ্রিয় মানুষ। কারণ ইসলামের এ সংস্কার আন্দোলনের আঘাত তাদের স্বার্থের ওপর সরাসরি পড়ছিল। কুরআন আমাদের বলে যে, এ আচরণ শুধু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথেই ছিল না বরং যে গোষ্ঠী চিরদিনই সংস্কার ও সংশোধনের পথ রুদ্ধ করার জন্য জগদ্দল পাথরের মত বাধা সৃষ্টি করে এসেছে। উদাহরণ হিসেবে দেখুন, সূরা আল আরাফ, আয়াত ৬০, ৬৬, ৭৫, ৮৮; আল মু’মিনূন, ৩৩; সাবা, ৩৪ও ৩৫ এবং আয যুখরুফ, ২৩)
১৩.
জাহান্নামে পাপী ও অপরাধীদের পায়ে ভারী বেড়ী পরানো হবে। তারা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য এ বেড়ি পরানো হবে না, বরং তা পরানো হবে এজন্য যে, তারা যেন উঠতে না পারে। এ বেড়ি পালিয়ে যাওয়ার রোধ করার জন্য নয় বরং শাস্তি বৃদ্ধি করার জন্য।
১৪.
সে সময় পাহাড়সমূহের বিভিন্ন অংশকে পরস্পর সংযুক্ত রাখার কেন্দ্রীয় বল নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই প্রথমে তা মিহি বালুর স্তূপে পরিণত হবে। অতঃপর ভূমিকম্প গোটা পৃথিবীকে প্রবলভাবে কাঁপিয়ে তুললে বালুর স্তূপে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে এবং গোটা ভূপৃষ্ঠ একটা বিশাল প্রান্তরে রূপান্তরিত হবে। এ অবস্থার একটি চিত্র সূরা ত্বা-হার ১০৫ থেকে ১০৭ আয়াত পর্যন্ত এভাবে তুলে ধরা হয়েছেঃ “লোকেরা তোমাকে এসব পাহাড়ের অবস্থা কি হবে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, আমার প্রভু পাহাড়সমূহকে ধুলির মত করে ওড়াবেন এবং ভূপৃষ্ঠকে এমন সমতল বিশাল প্রান্তরে রূপান্তরিত করবেন যে, তুমি সেখানে উঁচু নিচু বা ভাঁজ দেখতে পাবে না। “
১৫.
মক্কার যেসব কাফের রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করেছিলো এবং তাঁর বিরোধিতায় অতি মাত্রায় তৎপর ছিল এখানে তাদের উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে।
১৬ .
লোকদের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাক্ষী বানিয়ে পাঠানোর একটি অর্থ হলো, তিনি দুনিয়ায় তাদের সামনে নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে সত্যের সাক্ষ্য পেশ করবেন। আরেকটি হলো, আখেরাতে যখন আল্লাহর আদালত কায়েম হবে সে সময় তিনি সাক্ষ্য দেবেন যে, এসব লোকের কাছে আমি সত্যের আহবান পৌঁছিয়ে দিয়েছিলাম। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন সূরা আল বাকারা, টীকা ১৪৪; আন নিসা, টীকা, ৬৪; আন নাহল, আয়াত ৮৪-৮৯; আল আহযাব, টীকা ৮২; আল ফাত্হ্ টীকা ১৪)
১৭ .
অর্থাৎ প্রথম তো তোমাদের এ ভয় করা উচিত যে, আমার প্রেরিত রসূলের কথা যদি তোমরা না মানো তাহলে এ একই অপরাধের কারণে ফেরাউন যে দুর্ভাগ্যজনক পরিণাম ভোগ করেছে অনুরূপ পরিণাম দুনিয়াতেই তোমাদের ভোগ করতে হবে। আর মনে করো, দুনিয়ায় যদি তোমাদের জন্য কোন আযাবের ব্যবস্থা নাও করা হয় তাহলেও কিয়ামতের আযাব থেকে কিভাবে নিষ্কৃতি পাবে?
১৮.
ইতিপূর্বে তাহাজ্জুদ নামাযের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এ আয়াতের মাধ্যমে তা শিথিল ও সহজ করা হয়েছে। এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার সময়-কাল সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়াত আছে। মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম ও আবু দাউদে এ রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে যে, তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে প্রথম নির্দেশের পর এ দ্বিতীয় নির্দেশটি এক বছর পর নাযিল হয়েছিল এবং রাতের বেলার ইবাদত-বন্দেগী ফরয পর্যায়ে না রেখে নফল করে দেয়া হয়েছিল। ইবনে জারীর এবং ইবনে আবী হাতেম হযরত আয়েশা (রা.) থেকেই আর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ নির্দেশটি প্রথম নির্দেশের আট মাস পরে দেয়া হয়েছিল। হযরত আয়েশা থেকে ইবনে আবী হাতেম তৃতীয় আরেকটি হাদীস বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। এতে পরবর্তী নির্দেশটি ষোল মাস পরে নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবু দাউদ, ইবনে জারীর এবং ইবনে আবী হাতেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এক বছর সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়েরের বর্ণনা হলো, নির্দেশটি দশ বছর পর নাযিল হয়েছিল। (ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতেম) আমাদের মতে এ বর্ণনাটিই অধিক বিশুদ্ধ। কারণ প্রথম রুকূ’র বিষয়বস্তু থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তা মক্কায় নাযিল হয়েছিল এবং মক্কী যুগেরও একদম প্রথম দিকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর তখন বড় জোর চারটি বছর অতিবাহিত হয়েছিল। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় রকূর বিষয়বস্তু স্পষ্ট বক্তব্য অনুসারে তা মদীনাতে নাযিল হয়েছিল বলে মনে হয়। তখন কাফেরদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং যাকাত ফরয হওয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছিল। তাই এ দু’টি রুকূ’র নাযিল হওয়ার সময়কালের মধ্যে অনিবার্যভাবে কম করে হলেও দশ বছরের ব্যবধান হওয়া উচিত।
১৯.
প্রাথমিক নির্দেশে যদিও অধিক রাত বা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশী সময় নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নামাযে নিমগ্নতার কারণে সময়ের আন্দাজ বা পরিমাপ ঠিক থাকতো না। আর সে সময় ঘড়িও ছিল না যে, সময় ঠিকমত পারিমাপ করা যাবে। সুতরাং কোন সময় দুই-তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত ইবাদতে কেটে যেতো আবার কোন সময় তা হ্রাস পেয়ে শুধু এক-তৃতীয়াংশের মত হতো।
২০.
প্রথম পর্যায়ে নির্দেশ দেয়ার সময় শুধু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই সম্বোধন করা হয়েছিল এবং তাঁকেই রাতে নামায পড়তে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় মুসলমানদের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ এবং নেকী অর্জনের যে অস্বাভাবিক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল সে কারণে অধিকাংশ সাহাবী এ নামাযকে গুরুত্ব দিতেন এবং তা পড়তেন।
২১.
কুরআন তেলাওয়াত দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণেই যেহেতু নামায দীর্ঘায়িত হয় সেজন্য বলেছেন যে, তাহাজ্জুদ নামাযে যতটা পরিমাণ কুরআন সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে পড়তে পার, ততটাই পড়। এভাবে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী নামায আপনা থেকেই হ্রাস প্রাপ্ত হবে। এ কথাটির শব্দমালা বাহ্যিক ভাবে যদিও নির্দেশের মত, কিন্তু এ বিষয়ে সবাই একমত, যে তাহাজ্জুদের নামায ফরয নয়, বরং নফল। হাদীসেও স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলে, রসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তোমাদের জন্য দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয। সে জিজ্ঞাস করলোঃ এছাড়া অন্য কিছু কি আমার জন্য অবশ্য করণীয়? জবাবে বলা হলো, “না।” তবে তুমি স্বেচ্ছায় কিছু পড়লে, তা ভিন্ন কথা। (বুখারী ও মুসলিম)।
এ আয়াত থেকে আরো একটি কথা জানা গেল যে, নামাযে রুকূ’ ও সিজদা যেমন ফরয তেমনি কুরআন মজীদ পড়াও ফরয। কারণ আল্লাহ তা’আলা অন্যান্য স্থানে যেমন রুকূ’ ও সিজদা শব্দ নামায অর্থে ব্যবহার করেছেন তেমনি এখানে কুরআন পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এর অর্থ নামাযে কুরআন পড়। এভাবে প্রমাণ পেশ করার ব্যাপারে কেউ যদি একথা বলে আপত্তি উত্থাপন করে যে, তাহাজ্জুদের নামাযই যখন নফল, তখন সে নামাযে কুরআন মজীদ পড়া ফরয হয় কি করে? এর জবাব হলো, কেউ যখন নফল নামায পড়বে তখন নফল নামাযেরও সব শর্ত পূরণ করা এবং তার সব রুকূন’ ও ফরয আদায় করা আবশ্যক। কেউ একথা বলতে পারে যে, নফল নামাযের জন্য কাপড় ও শরীর পবিত্র হওয়া, অযু করা এবং সতর ঢাকা ওয়াজিব নয় এবং নফল নামাযে দাঁড়ানো, বসা এবং রুকূ’ ও সিজদা করা সবই নফল।
২২.
হালাল ও বৈধ উপায়ে রুজি অর্জনের উদ্দেশে সফর করাকে কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর মেহেরবাণী ও করুণা অনুসন্ধান বলে আখ্যায়িত করেছে।
২৩.
এখানে আল্লাহ তা’আলা হালাল রুজি উপার্জন এবং আল্লাহর পথে জিহাদের উল্লেখ এক সাথে যেভাবে এবং অসুস্থতা জনিত অক্ষমতা ছাড়া এ দু’টি কাজকেও তাহাজ্জুদ নামায এবং অব্যাহতি লাভের কিংবা তা কিছুটা লাঘব করার কারণ হিসেবে গণ্য করেছেন তা থেকে বুঝা যায় যে, ইসলাম বৈধ পন্থায় রুজি উপার্জন করা কত বড় মর্যাদার কাজ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণীত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
ما من جالب يجلب طعاما الى بلد من بلدان المسلمين فيبيعه لسعر يومه الا كانت منزلته عند الله ثم قرا رسول الله صلى الله عليه وسلم واخرون يضربون فى الارض ....................
যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন শহর বা জনপদে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসে এবং সে দিনের বাজার দরে তা বিক্রি করে সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। এরপর রসূলুল্লাহ ﷺ এ আয়াতটি পড়লেন। واخرون يضربون فى الارض .................
হযরত উমর (রা.) বলেছেনঃ
ما من حال ياتينى عليه الموت بعد الجهاد فى سبيل الله احب الى من ان ياتينى وانا بين شعبتى جبل التمس من فضل الله وقرأ هذه الاية-
আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া আর কোন অবস্থায় প্রাণ দেয়া আমার কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় হয়ে থাকলে তা হলো এই যে, আমি আল্লাহর অনুগ্রহ বা মেহেরবানী অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে কোন গিরিপথ অতিক্রম কালে সেখানে মৃত্যু এসে আমাকে আলিঙ্গন করছে। তার পর তিনি এ আয়াতটি পড়লেন। (বায়হাকী ফী শু’আবিল ঈমান)
২৪.
এখানে নামায কায়েম করা এবং যাকাত দেয়া বলতে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায এবং ফরয যাকাত বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মুফাস্সিরগণ সবাই একমত।
২৫.
ইবনে যায়েদ বলেনঃ এর অর্থ যাকাত দেয়া ছাড়াও নিজের অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করা। এ খরচ আল্লাহর পথে জিহাদ করা, আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করা, জনকল্যাণমূলক কাজ করা কিংবা অন্যান্য কল্যাণকর কাজেও হতে পারে। আল্লাহকে কর্জ এবং উত্তম কর্জ দেয়ার অর্থ কি তার ব্যাখ্যা, আমরা ইতিপূর্বে বিভিন্ন স্থানে করেছি। (দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আল বাকারাহ, টীকা ২৬৭;আল মা-য়েদাহ, টীকা ৩৩ এবং আলহাদীদ, টীকা ১৬)।
২৬.
এর অর্থ হলো, আখেরাতের জন্য যা কিছু তোমরা আগেই পাঠিয়ে দিয়েছো তা তোমাদের ঐ সব জিনিসের চেয়ে অনেক বেশী উপকারী যা তোমরা দুনিয়াতেই রেখে দিয়েছো এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্ত কোন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করোনি। হাদীসে উল্লেখ আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেছেন যে, এক সময় রসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেনঃ
أَيُّكُمْ مَالُهُ أَحَبُّ إلَيْهِ مِنْ مَالِ وَارِثِهِ
"তোমাদের এমন কেউ আছে যার নিজের অর্থ-সম্পদ তার উত্তরাধিকারীর অর্থ-সম্পদের চেয়ে তার কাছে বেশী প্রিয়? জবাবে লোকেরা বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কেউ-ই এমন নেই যার নিজের অর্থ-সম্পদ তাঁর কাছে তার উত্তরাধিকারীর অর্থ-সম্পদ থেকে বেশী প্রিয় নয়। ” তখন তিনি বললেনঃ “তোমরা কি বলছো তা ভেবে দেখো। ” লোকেরা বললোঃ হে আল্লাহর রসূল, আমাদের অবস্থা আসলেই এরূপ। একথা শুনে নবী ﷺ বললেনঃ
إنَّمَا مَالُ أَحَدِكُمْ مَا قَدَّمَ وَمَالُ وَارِثِهِ مَا أَخَّرَ
তোমাদের নিজের অর্থ-সম্পদ তো সেই গুলো যা তোমরা আখেরাতের জন্য অগ্রিম পাঠিয়ে দিয়েছো। আর যা তোমরা রেখে দিয়েছো সেগুলো ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের অর্থ-সম্পদ। (বুখারী, নাসায়ী ও মুসনাদে আবু ইয়ালা)।