আয়াত
১৬১ ) হে মুহাম্মাদ! বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দ্বীন, যার মধ্যে কোন বক্রতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, ১৪২ যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
قُلْ إِنَّنِى هَدَىٰنِى رَبِّىٓ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ دِينًۭا قِيَمًۭا مِّلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًۭا ۚ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ١٦١
১৬২ ) বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, ১৪৩ আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য,
قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ١٦٢
১৬৩ ) যার কোন শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী।
لَا شَرِيكَ لَهُۥ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلْمُسْلِمِينَ ١٦٣
১৬৪ ) বলো, আমি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন রবের সন্ধান করবো অথচ তিনিই সকল কিছুর মালিক? ১৪৪ প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু উপার্জন করে সেজন্য সে নিজে দায়ী, কেউ কারো বোঝা বহন করবে না ১৪৫ তারপর তোমাদের সবাইকে তোমাদের রবের দিকে ফিরে যেতে হবে। সে সময় তোমাদের মত বিরোধের প্রকৃত স্বরূপ তিনি তোমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবেন।
قُلْ أَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْغِى رَبًّۭا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَىْءٍۢ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌۭ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ١٦٤
১৬৫ ) তিনিই তোমাদের করেছেন দুনিয়ার প্রতিনিধি এবং যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন তাতে তোমাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাউকে অন্যের ওপর অধিক মর্যাদা দান করেছেন। ১৪৬ নিঃসন্দেহে তোমার রব শাস্তি দেবার ব্যাপারে অতি তৎপর এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَكُمْ خَلَـٰٓئِفَ ٱلْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍۢ دَرَجَـٰتٍۢ لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ ۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ ٱلْعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۢ ١٦٥
১৪২.
“ইবরাহীমের পদ্ধতি” বলে এ পথকে চিহ্নিত করার জন্য তার আর একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একে মুসার পদ্ধতি বা ঈসার পদ্ধতিও বলা যেতো। কিন্তু লোকেরা ইহুদীবাদকে হযরত মূসার এবং খৃস্টবাদকে হযরত ঈসার আনিত বিধান বলে আখ্যায়িত করে রেখেছে। তাই বলা হয়েছে, “ইবরাহীমের পদ্ধতি।” ইহুদী ও খৃস্টান উভয় দলই হযরত ইবরাহীমকে সত্যানুসারী বলে স্বীকার করে এবং তারা উভয়ে একথাও জানে যে, ইহুদীবাদ ও খৃস্টবাদের উদ্ভবের অনেক আগেই হযরত ইবরাহীমের যুগ শেষ হয়েছিল। তাছাড়া আরবের মুশরিকরাও তাঁকে সত্যপন্থী বলে স্বীকার করতো এবং নিজেদের সকল প্রকার অজ্ঞতা সত্ত্বেও তারা অন্ততপক্ষে এতটুকু স্বীকার করতো যে, কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপনকারী পাক-পবিত্র ব্যক্তি মূর্তি পূজারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আল্লাহর অনুগত বান্দা।
১৪৩.
এখানে যে মূল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি হচ্ছেنسك এর অর্থ কুরবানীও হয়। আর ব্যাপক ও সাধারণভাবে এটিকে বন্দেগী ও পূজা-অর্চনার অন্যান্য বিভিন্ন অবস্থার জন্যও ব্যবহার করা হয়।
১৪৪.
অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের সমস্ত জিনিসের রব হচ্ছে আল্লাহ, কাজেই অন্য কেউ কেমন করে আমার রব হতে পারে? সমস্ত বিশ্ব-জাহান আল্লাহর আনুগত্য ব্যবস্থার অধীনে সচল রয়েছে এবং বিশ্ব-জাহানের একটি অংশ হিসেবে আমার নিজের অস্তিত্বও সে পথের অনুসারী। কিন্তু নিজের চেতনাসঞ্জাত ও নিজস্ব ক্ষমতা ইখতিয়ারের আওতাধীন জীবনের জন্য আমি অন্য কোন রবের সন্ধান করবো, এটা কেমন করে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে? সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক অবস্থার বিরুদ্ধাচরণ করে আমি একাই কি অন্যদিকে চলতে থাকবো?
১৪৫.
অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই নিজের কাজের জন্য দায়ী। একজনের কাজের দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপবে না।
১৪৬.
এ বাক্যটির মধ্যে তিনটি সত্য বিবৃত হয়েছেঃ এক, সমস্ত মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। এ অর্থে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিলোকের বহু জিনিস মানুষের কাছে আমানত রেখেছেন এবং তা ব্যবহার করার স্বাধীন ক্ষমতা তাকে দান করেছেন।
দুই, আল্লাহ নিজেই এ প্রতিনিধিদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন। কারোর আমানতের গণ্ডী ব্যাপক আবার কারোর সীমাবদ্ধ। কাউকে বেশী জিনিস ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়েছেন, কাউকে দিয়েছেন কম। কাউকে বেশী কর্মক্ষমতা দিয়েছেন, কাউকে কম। আবার কোন কোন মানুষকে কোন কোন মানুষের কাছে আমানত রেখেছেন।
তিন, এ সবকিছুই আসলে পরীক্ষার বিষয়বস্তু। সারা জীবনটাই একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। আল্লাহ যাকে যা কিছুই দিয়েছেন তার মধ্যেই তার পরীক্ষা। সে কিভাবে আল্লাহর আমানত ব্যবহার করলো? আমানতের দায়িত্ব কতটুকু অনুধাবন করলো এবং তার হক আদায় করলো? কতটুকু নিজের যোগ্যতা বা অযোগ্যতার স্বাক্ষর রাখলো? এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ।