আয়াত
৬১ ) আর গান-বাদ্য করে তা এড়িয়ে যাচ্ছো? ৫৪
وَأَنتُمْ سَـٰمِدُونَ ٦١
৬২ ) আল্লাহ্র সামনে মাথা নত কর এবং তাঁর ইবাদাত করতে থাকো। ৫৫
فَٱسْجُدُوا۟ لِلَّهِ وَٱعْبُدُوا۟ ۩ ٦٢
৫৪.
মূল আয়াতে سَامِدُونَ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ভাষাবিদগণ এ শব্দটির দু’টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। ইবনে আব্বাস, ইকরিমা এবং আবু উবায়দা নাহবীর মতে
سمود অর্থ গান বাদ্য করা। মক্কার কাফেররা কুরআনের আওয়াজকে স্তব্ধ করতে ও মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য জোরে জোরে গান বাদ্য শুরু করতো। এখানে সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ইবনে আব্বাস ও ইকরিমা এর আরেকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছেঃ
السمود البرطمة وهى رفع الراس تكبرا , كانوا يمرون على النبى صلى الله عليه وسلم عضابا مبرطمين
“অহংকার ভরে ঘাড় উঁচু বা বাঁকা করা। মক্কার কাফেররা রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্রোধে ঘাড় উঁচু করে চলে যেতো।”
রাগেব ইস্পাহানী তার ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থে এ অর্থটিই গ্রহণ করেছেন। এ অর্থ বিবেচনা করে কাতাদা ছামিদুন سَامِدُونَ শব্দের অর্থ করেছেন গাফিলুন غَافِلُوْن এবং সায়ীদ ইবনে জুবাইর অর্থ করেছেন মু’য়রিদুন مُعْرِضُوْن ।
৫৫.
ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী ও অধিকাংশ আলেমের মতে এ আয়াত পাঠ করে সিজদা করা অবশ্য কর্তব্য। ইমাম মালেক, এ আয়াত তিলাওয়াত করে যদিও সব সময় সিজদা করতেন (যেমন কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী আহকামূল কুরআন গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছে।) কিন্তু এখানে সিজদা করা জরুরী নয় বলে তিনি মত পোষন করতেন। তাঁর এ মতের ভিত্তি যায়েদ ইবনে সাবেতের এই বর্ণনা যে, “আমি রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর সামনে সূরা নাজম পাঠ করলে তিনি সিজদা করেননি।” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী)। কিন্তু উক্ত হাদীসটি এ আয়াত পাঠ করে সিজদা করার বাধ্যবাধকতা রহিত করে না। কারণ এক্ষেত্রে এরূপ সম্ভাবনা বিদ্যমান যে, কোন কারণে নবী ﷺ সে সময় সিজদা করেননি কিন্তু পরে করেছেন। এ বিষয়ে অন্য সব রেওয়ায়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় যে, এ আয়াত পাঠ করে সব সময় অবশ্যই সিজদা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও মুত্তালিব (রাঃ) ইবনে আবী ওয়াদা’আর সর্বসম্মত বর্ণনাসমূহ হচ্ছে, নবী ﷺ সর্বপ্রথম যখন হারাম শরীফে তিলাওয়াত করেন তখন তিনি সিজদা করেছিলেন। সে সময় মুসলমান ও কাফের সবাই তাঁর সাথে সিজদায় পড়ে গিয়েছিলো।” (বুখারী, আহমাদ, নাসায়ী)। ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, “নবী ﷺ নামাযে সূরা নাজম তিলাওয়াত করে সিজদা করেছেন এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত সিজদায় থেকেছেন।” (বায়হাকী, ইবনে মারদুইয়া)। সাবুরাতুল জুহানী বলেনঃ হযরত উমর (রাঃ) ফজরের নামাযে সূরা নাজম পড়ে সিজদা করেছেন এবং তারপর উঠে সূরা যিলযাল পড়ে রুকূ’ করেছেন।” (সা’য়ীদ ইবনে মানসুর)। ইমাম মালেক নিজেও মুয়াত্তা গ্রন্থের مَا جَاءَ فِى سُجُودِ الْقُرْآنِ অনুচ্ছেদে হযরত উমরের এ আমলের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।