একঃ আল্লাহর প্রতিফল বিধান কোন জাতিকে ততদিন পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস করার ফায়সালা করে না যতদিন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন ভালো গুণ বিদ্যমান থাকে। খারাপ লোকদের সংখ্যাধিক্যের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক কিছু লোকও যদি অকল্যাণকে প্রতিরোধ করার এবং কল্যাণের পথের দিকে ডাকার জন্য তৎপর থাকে এবং তাদের কল্যাণকারিতা এখনো নিঃশেষ হয়ে না থাকে তাহলে তাদেরকে আরো কিছুকাল কাজ করার সুযোগ দেন এবং তাদের অবকাশকাল বাড়িয়ে দিতে থাকেন। কিন্তু অবস্থা যদিও এই দাঁড়ায় যে, কোন জাতির মধ্যে যৎসামান্য সদগুণও অবশিষ্ট না থাকে সেক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান হচ্ছে, উক্ত জনপদে যে দু’চারজন লোক অকল্যাণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়েছে, তিনি তার মহা ক্ষমতাধীনে কোন না কোনভাবে রক্ষা করে নিরাপদে বের করেন এবং অবশিষ্ট লোকদের সাথে ঠিক তেমনি আচরণ করেন, যে আচরণ একজন সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন লোক পঁচা ফলের সাথে করে থাকে।
দুইঃ ‘মুসলমান’ কেবল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের নাম নয়। তাঁর পূর্বের সমস্ত নবী-রসূল ও তাঁদের উম্মতও মুসলমান ছিলেন। তাঁদের দ্বীনও ভিন্ন ভিন্ন ছিল না যে, কোনটা ইবরাহীমের দ্বীন, কোনটা মূসার দ্বীন আবার কোনটা ঈসার দ্বীন বলে আখ্যায়িত হতে পারে। তারা সবাই ছিলেন মুসলমান এবং তাদের দ্বীনও ছিল এ ইসলাম। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ সত্যটি এমন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। উদাহরণস্বরূপ নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলো দেখুনঃ আল বাকারা, ১২৮, ১৩১, ১৩২ ও ১৩৩; আলে ইমরান, ৬৭; আল মায়েদা, ৪৪ ও ১১১; ইউনুস, ৭২ ও ৮৪ ; ইউসূফ, ১০১; আল আ’রাফ, ১২৬ ও আল নাহল, ৩১, ৪২ ও ৪৪।
তিনঃ ‘মু’মিন’ ও ‘মুসলিম’ শব্দ দু’টি এ আয়াতে সম্পূর্ণ সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ আয়াতটি যদি সূরা হুজুরাতের ১৪ আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়া যায় তাহলে সেসব লোকদের ধারণার ভ্রান্তি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যারা মু’মিন ও ‘মুসলিম’ শব্দকে কুরআন মজীদের এমন দু’টি স্বতন্ত্র পরিভাষা বলে মনে করে যা সবখানে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এও মনে করে যে, ঈমান ছাড়াই যে ব্যক্তি বাহ্যত ইসলামের গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করেছে সে-ই নিশ্চিত মুসলিম। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা হুজুরাতের ব্যাখ্যা, টীকা ৩১)।